এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • গুরুচণ্ডা৯ | 2345.110.784512.22 | ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ২৩:২২380703
  • "এ এক অন্য জগৎ। এখানে ফরেস্ট বাংলাের চৌকিদারের ছেলের বউ বেহুলা, স্বামীর নাম লখিন্দর। এখানে মেথর কোয়ার্টারের যাত্রাপালায় রাবণের বৌ হয় সীতা। ভিখিরিরা গেয়ে ওঠে একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি। এখানে বিহার থেকে সোনাগাছি ঘুরে আসা মেয়ের নাম গঙ্গা। এখানে সকাল অন্য রকম। রাত অচেনা। অজনা মানুষ, অচেনা গল্প, অপরের জগৎ। অন্য ভাষা অন্য সুরে এই অনন্য উপাখ্যানগুলি গেঁথেছেন তন্বী হালদার।

    বিরাট বিরাট প্রতীকি বিপ্লব নয়।রকেট বিজ্ঞান বা বিমান চালনা নয়। ছোটো ছোটো পেশা, তেমন কোনো বাধাও নেই ঢুকে পড়তে তবু যেন মেয়েদের জন্য অনধিগম্য। সেইসব এলাকায় চুপচাপ ঢুকে পড়ছেন মেয়েরা। কোনো প্রচার, গৌরবগাথা, এবং সর্বাপেক্ষা যা গুরুত্বপূর্ণ, সমাজ-সংসারের প্রতি বিরাট কোনো অভিযোগ ছাড়াই, স্রেফ নিজের জোরে। পাড়া-প্রতিবেশি-আত্মীয়-স্বজনরা কখনও সাহায্য করছেন, কখনও করছেননা। কিন্তু বাধা হয়েও দাঁড়াচ্ছেননা কোথাও। কোনো বিজয়কেতন, কোনো প্রচারের দামামা ছাড়াই মেয়েরা দাঁড়াচ্ছেন নিজের পায়ে। বলছেন নিজেদের জীবিকার গল্প। জীবনের কথা। এ বই তাঁদেরই নিজের ভাষায়, তাহাদেরই কথা।"

    সংকলন ও সম্পাদনা: জিনাত রেহেনা ইসলাম, ফেমিনিজম ডট কমের পক্ষে।

    প্রচ্ছদ: চিরঞ্জিত সামন্ত

    আর যাঁদের আংশিক দত্তক নেওয়ায় সম্ভব হচ্ছে এই বই করা, সেই তিতি রায়, মীনাক্ষী মণ্ডল, অভিরূপ গাঙ্গুলিকেও অনেক ধন্যবাদ!

  • pi | 2345.110.784512.246 | ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৮380714
  • তৃণা লাহিড়ির কাগজ কাটিং থেকে প্রচ্ছদ করেছেন, সায়ন কর ভৌমিক।

  • pi | 785612.40.128912.69 | ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ২৩:৪৯380725
  • কীভাবে করা, অনুমান করা যায়? শিল্পীর নাম, আসছে।

  • pi | 785612.40.128912.69 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:২৩380734
  • সিজনস অব বিট্রেয়াল – দময়ন্তী
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    ইতিহাস শুধু বইয়ে লেখা থাকেনা, গণস্মৃতিতেও ধরা থাকে ইতিহাসের উল্টে আসা পাতা। দেশভাগ সংক্রান্ত এই বইটি তেমনই এক গণস্মৃতির আর্কাইভ। দেশভাগের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাগুলিকে লেখিকা তুলে এনেছেন পারিবারিক অ্যালবাম থেকে। এ একেবারেই কোনো কল্পকাহিনী নয়, বরং স্মৃতিতে থাকা দেশভাগের আখ্যান, যার সঙ্গে ওতঃপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে সেই বাস্তবতা, যাকে ইতিহাস বলা হয়ে থাকে। এই বইয়ের প্রতিটি অনুচ্ছেদে ফুটনোট হিসেবে তাই জুড়ে দেওয়া আছে এতাবৎকালের লিখিত ইতিহাস ও পারিবারিক স্মৃতির রেফারেন্স। ব্যক্তির স্মৃতি এখানে ইতিহাস হয়ে উঠেছে, আর ইতিহাস হয়ে উঠেছে গণস্মৃতির উপজীব্য। বাংলায় দেশভাগ নিয়ে লেখা এবং স্মৃতিকথন, কারোরই কোনো অভাব নেই। কিন্তু এ দুটিকে পরতে পরতে জুড়ে দিয়ে ইতিহাসের কঠিন বাস্তবতা আর টানটান মানবিক ফিকশনের অনন্য এক যুগলবন্দী গুরুচণ্ডা৯ থেকে প্রকাশিত এই বই।
    ~~~~~~~~~~
    পাওয়া যাবে বইমেলায়

    গুরুচণ্ডা৯ র ২৯৩ নং স্টলে।
  • de | 4512.139.9001212.173 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:৪৯380735
  • অসামান্য প্রচ্ছদ্গুলো -
  • pi | 7845.29.782323.38 | ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৮380736
  • pi | 7845.29.121223.179 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১৪:৩৪380737
  • pi | 7845.29.454523.39 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১৫:৫২380738
  • প্রচ্ছদ : সায়ন কর ভৌমিক

  • pi | 2345.110.454512.132 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ ১৪:২৫380739
  • এখন, জোড়াসাঁকো মেলায়। কল্লোলদা, পার্থদা, ইন্দ্রাণীদি, মিতুলদির হাতে আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন হয়ে গেল মলয় রায়চৌধুরী, অমর মিত্র, বিপুল দাস ও আসামের ডিটেনশন ক্যাম্প নিয়ে দেবর্ষি দাস, স্বাতী রায়, সোমনাথ রায়ের সম্পাদনায় সংকলন।
    ছবির জন্য মণ্টু দেকে ধন্যবাদ!
    ছবি দিচ্ছি এক এক করে।
  • i | 342323.191.5656.150 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ ১৬:০৬380704
  • আজ জোড়াসান্কোয় চারটি বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটল জাহিরুল হাসানের হাতে। সঙ্গে ছিলেন মিতুল দত্ত। গুরুচন্ডালির তরফে কল্লোলদা, পার্থপ্রতিম মৈত্র, অরুণকুমার, মন্টু দে আর আমি উপস্থিত ছিলাম। মন্টু দে ছবি তুললেন , অরুণ স্টলের দায়িত্বে। তাই স্টেজে উঠলাম কল্লোলদা, পার্থপ্রতিম ও আমি।
  • pi | 2345.110.673412.215 | ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ ২০:০৬380705









  • pi | 7845.29.6790012.16 | ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:২৮380706
  • প্রচ্ছদ: দেবরাজ গোস্বামী
    নামানকন: চিরঞ্জিত সামন্ত
    প্রচ্ছদ সহায়তা: সায়ন কর ভৌমিক

  • pi | 7845.29.012323.35 | ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৫৫380707
  • ২০০২ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি, রবিবারের প্রতিদিন পত্রিকায় অমিয় দেব লিখেছিলেন। সেই বই নতুন অবতারে, আরো কিছু গল্প সহ।

    আগের প্রচ্ছদ অনেক যত্ন নিয়ে করেছিলেন দেবরাজ গোস্বামী, ক্যাথে কলভিসের ছবির ছায়ায়, সেই ছবি দিয়েওছিলাম, কিন্তু ক'দিন আগে দেখা গেল প্রায় একইরকম প্রচ্ছদ আরেক প্রকাশনীর। তাই নতুন প্রচ্ছদ। চিরঞ্জিত সামন্তের।
    -------------------------+++---------------------------+++
    শুধু কাহিনি নয়, ভুঁইফোঁড় নগরায়নেরও বয়ান
    অমিয় দেব
    ১০৪ পৃষ্ঠার বই, একবার বসলেই পড়া হয়ে যায়। আর পড়তে গিয়ে একটি ঘটনার কথাও মনে পড়ে যায় যা কয়েক বছর আগে খুব আলোড়ন তুলেছিল। এবং পড়তে পড়তে একটু দূরের আরও দুটি ঘটনার কথা মনে পড়ে— কী করে এক রাতে অনেক তরুণের লাশ গঙ্গার ঘাটে নিকেশ করা হয়েছিল, ও কী করে চোখে অ্যাসিড ঢেলে কয়েকজন হাজতবাসীকে অন্ধ করে পরে লাশ বানিয়ে রাতারাতি গোর দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর তখন বোঝা যায় কেন বইটির উৎসর্গ—
    যাঁর হাতে দিতে চেয়েছিলাম
    সপ্রণাম নিবেদন,
    মৃত্যুঞ্জয়ী গৌরকিশোর ঘোষ
    চিরস্মরণীয়েষু।
    লেখা মাত্রেই বয়ান, তার কোনওটা ভাবায় না, কোনওটা ভাবায়। ‘নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান’-এর উৎসর্গলিপি তার বয়ানের অংশ।
    বইটি একটি মামলার কাঠামোতে নিবদ্ধ। বাদী নিরুদ্দিষ্টের পিতা ও পত্নী, বিবাদী পুলিশ। বাদীদের আর্জি— একদিন মাঝরাতে চড়াও হয়ে ঘুম ভাঙিয়ে নিরুদ্দিষ্টকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ, সেই থেকে সে নিখোঁজ। পুলিশ তাকে ফেরত দিক, অন্তত আদালতে হাজির করুক। পুলিশের সত্যাখ্যান— এই ঘটনা ঘটেনি, তারা নিরুদ্দিষ্টকে তুলে নিয়ে যায়নি, তুলে নিয়ে যাওয়ার কোনও কারণও ছিল না, কেউ নালিশ করেনি তার নামে। সত্যি সত্যিই সেই রাতে পুলিশ নিরুদ্দিষ্টকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল কিনা তা খুঁজে বের করবার জন্যে এক নিরপেক্ষ সত্যান্বেষীকে নিয়োগ করে আদালত। বাকি কাহিনি এই সত্যান্বেষীর অভিজ্ঞতা নিয়ে। অবশ্য বাদীদের আর্জিপত্র থেকে আমরা আগেই জেনেছি, নিরুদ্দিষ্ট এক কাচকলের শ্রমিক। কাচকল হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাবার পর সে বাজারে সবজি নিয়ে বসেছিল বটে, কিন্তু তার বিশ্বাস ছিল তাদের কাচকল আবার খুলবে। এবং এই বিশ্বাসের টানেই সে একদিন গিয়ে হাজির হয়েছিল পাথরে-বাঁধানের আলিপুরে তাদের কাচকল-মালিকের কুঠিতে। তবে তাকে ঢুকতে দেয়নি দারোয়ান, গেট থেকেই তাড়িয়ে দিয়েছিল। তাতেও তার বিশ্বাস উবে যায়নি, কিন্তু হঠাৎ একদিন দেখা গেল— সেই দেখল প্রথম কাচকলের জমিতে এক আবাসনের সাইনবোর্ড। তাতে উত্তেজনা ছড়াল শ্রমিকদের মধ্যে, প্রোমোটার প্রহৃত হল, তার গাড়ির কাঁচ ভাঙল, এই নিয়ে সে কয়েকজনের নামে এফ আই আর করল, পুলিশ কিছু ধরপাকড়ও করল, তবে তারা জামিনে খালাস পেয়ে গেল, এবং শেষ পর্যন্ত প্রোমোটারের.................................
    ....................................................বকেয়া মিটিয়ে দেবে, কিন্তু সেই টাকার লাইন যেদিন পড়ল সেদিন খাতায় কার নাম আছে আর কার নাম নেই তা নিয়ে বেজায় হুজ্জোত হল, পুলিশ এল ও পুলিশ পাহারাতে কিছু লোক টাকাও পেল, আর সেই রাত্তিরেই আমাদের নিরুদ্দিষ্ট, নাম বৈরাগী মণ্ডল, সাকিন ২২ নম্বর বস্তি, যে লাইন দিয়েছিল কিন্তু টাকা পেয়েছিল না পায়নি নাকি পেয়েও নেয়নি তা বলেনি, পুলিশ কর্তৃক প্রহৃত হতে হতে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। সারারাত সারাদিন ছুটোছুটি করল মদনমোহন মণ্ডল, বৈরাগীর পিতা, কিন্তু পুত্রকে সে ফেরত পেল না। তাই অনন্যোপায় হয়ে সে তার পুত্রবধূ, সহচরী মণ্ডলকে নিয়ে পুত্রকে ফেরত পাবার আশায় মহামান্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
    এই পর্যন্ত আমরা জেনে নিয়েছি। এবার আদালত নিযুক্ত নিরপেক্ষ সত্যান্বেষী অখিল শ্রীবাস্তবের চোখ দিয়ে, রোমকূপে, রোমকূপে, বাকি ঘটনার সাক্ষী হয়ে উঠি। প্রথম দেখি বৈরাগীদের বাসস্থান ২২ নম্বর বস্তির হতোচ্ছড়া চেহারা। তার বাসিন্দারা একদা প্রভুদয়াল রোলিং মিল কি শ্রীরাম গ্লাস ফ্যাক্টরিতে কাজ করত, এখন উঞ্ছবৃত্তি করে দিন গুজরান করে। যা ছিল রোলিং মিল তা এখন ঝকঝকে তকতকে আকাশদীপ আবাসন, ২২ নম্বরের বিপরীত। তবে তার নির্মাণকালে কেউ কেউ মুটে-মজুর-মিস্ত্রির কাজ পেয়েছিল, এখন তাদের বৌ-ঝিরা সেখানে দাসীগিরি করে— ফ্ল্যাটের বাবুদের কাছে ইজ্জত যেতে পারে জেনেও উঞ্ছ কুড়োয়, ভয়ে পিছিয়ে এলে খাবে কী! যা ছিল শ্রীরাম কাচকল তাই এবার হতে যাচ্ছে শ্রীরামচন্দ্র আবাসন। এবং প্রোমোটার একই, যেমন উৎক্ষিপ্ত শ্রমিকদের চেহারাও আসলে একই, কেউ নিরুদ্দিষ্ট কেউ নিরুদ্দিষ্ট নয় এখনো, এইটুকু তফাত। ছোটো কলকারখানাগুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেই জায়গায় তৈরি হচ্ছে বহুতল আবাসন, একে কেউ কেউ উন্নয়ন বলতে চান (প্রোমোটার বলে সে ডেভেলাপারও), কেন না অঞ্চলের চেহারা পাল্টাচ্ছে, নতুন রাস্তাঘাট হচ্ছে, বসছে দোকানপাট, চলছে নতুন নতুন গাড়ি, আরও কত কী— কিন্তু যারা এখনো ভেতরে ভেতরে কারখানার ভোঁ শোনে, আওয়াজ পায় রোলিং মিলের যাদের নাকে ভেসে আসে অনেক আগে কাটা নিমগাছের নিমফুলের গন্ধ (শব্দগন্ধ তো সবই থাকে ঈথারে), তারা তো সামিল নয় এই উন্নয়নে! এবং এই তথাকথিত উন্নয়নের প্রহরায় যদি থাকতে হয় পুলিশকে তাহলে তো মাঝে মাঝে কারখানার ভোঁ শোনা নিমফুলের গন্ধ পাওয়া কাউকে না কাউকে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে হতে পারে, যদি সে টাকার লাইনে দাঁড়িয়েও টাকা নেয় না, কারণ সে কারখানার এই আবাসন হয়ে যাওয়া মানে না, আর যদি সে পুলিশের বুট শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে না পারে। এবং পুলিশের পায়ে বুট থাকলে তো সে বুট অমন পোষ না মানা ‘উন্নয়ন’ বিরোধী ‘পাগলা’-র পাঁজর ভেঙে দিতেই পারে। আর কেউ লাশ হয়ে গেলে কী করা যায়, নিকেশের জন্যে তো খুনের ঘাট আছেই।
    ইত্যাদি ইত্যাদি সব ক্রমে সত্যান্বেষীর কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তার পাশে পাশে হাঁটে, রিকশায় তার পাশে বসে থাকে, কখনো শরীরী কখনো অশরীরী, নিরুদ্দিষ্ট। বুঝতে বাকি থাকে না সত্যান্বেষীর সে নিরুদ্দেশের মানে একটাই, নিরুদ্দিষ্টের একটাই ঠিকানা। অন্য যে-এক মানে দেবার চেষ্টা করে পুলিশ তিরিশ বছর আগেকার এক অন্য নিরুদ্দিষ্টের কথা তুলে, বর্তমান নিরুদ্দিষ্টের সেই পিতামহের বেলাও ছিল না কোন উদ্দেশ্যহীনতা। দেশভাগে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে চলে আসা ননীগোপাল মণ্ডল তার ছোটো ছেলে মদনমোহনের সকল স্নেহ-ভালবাসা সত্ত্বেও একসময় তার বড় ও মেজো ছেলের অভাবে খুব কাতর হয়ে উঠেছিল। মেজো ছেলে পূর্ববঙ্গের ভিটে ছেড়ে আসেনি, তার কাছে যাবার কোনও উপায় নেই। কিন্তু বড় ছেলে তো শরণার্থী হয়ে আছে দণ্ডকারণ্যে, তার কাছে হয়তো পৌঁছনো যায়। তাই একদিন স্বপ্নে বড় ছেলের কাছে শেষ (!) জলের অভিলাষ ব্যক্ত করে সে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল এবং কোরাপুট জেলায় বড় ছেলের কাছাকাছি পৌঁছে আর এগোতে পারেনি, মাটিতে শুয়ে পড়েছিল ও খোলা আকাশের তলায় শেষ নিঃশ্বাস (ফেলেছিল)। আর সেই রাত্তিরেই, বছরজোড়া খরার অন্তে, দণ্ডকারণ্যে বৃষ্টি নেমেছিল, প্রবল বৃষ্টি। জল চাইতে গিয়ে জল নামিয়ে দিয়ে ননীগোপাল হয়ে উঠেছিল ওই অঞ্চলের এক প্রিয় অতিকথা। তার সঙ্গে কী সম্পর্ক পুলিশ-প্রস্তাবিত মস্তিষ্কবিকৃতির, ঠাকুর্দার, ফলে নাতিরও? সবই হৃদয়ংগম হয় সত্যান্বেষীর। এবং এও বুঝতে পারে যে, রোজ সন্ধ্যেয় যে শ্বশুর-পুত্রবধূ বৈরাগী মণ্ডলের খোঁজে হেঁটে বেড়ায় তাও আসলে তাকে বাঁচিয়ে রাখার ও নিজেদের বেঁচে থাকবার এক অছিলা। অন্য কারোর জন্যে না হলেও তার অসহায় চাঁদবেনে শ্বশুরের জন্যেই তো এই ২২ নম্বরে বেহুলাটি তার স্বামীর মড়া আগলে ভাসতে থাকবে। আর এই দেখে নিয়ে, এই শ্বশুর-পুত্রবধূর চাঁদবেনে-বেহুলা সত্তায় প্রত্যয়াপন্ন হয়ে, কী উপায় আছে নিরপেক্ষ সত্যান্বেষীর তাদের পক্ষ না নিয়ে! ইতিহাস কাউকে নিরপেক্ষ থাকতে দেয় না। অথচ কোনও প্রমাণ নেই তার, মর্মভেদী সত্যস্ফুটন তো আর দিবালোকতুল্য সত্যকথন নয়! তার আছে কেবল অনুকম্পা। তাই এ মামলা চলতে থাকে, নিজের নিজের মতো করে নিরুদ্দেশের সমার্থ জেনে নিয়েও শ্বশুর-পুত্রবধূ হাজিরা দিতে থাকে আদালতে— বাদী এক ও বাদী দুই। ইতিমধ্যে নতুন আবাসন তৈরি হয়ে যাক, কিন্তু ধমনীতে, চৈতন্যে কারখানার শ্রমিক যেন শ্রমিকই থেকে যায়, পুরোপুরি দাস বনে না যায়, কিংবা খোঁচড়। (আচ্ছা, এই নব্য উন্নয়নের স্বার্থে কি ২২ নম্বর গুঁড়িয়ে দেওয়া যায় না? কিন্তু ২২ নম্বর গুঁড়িয়ে দিলে বহুতল আবাসনগুলো বনবে কার শ্রমে আর চলবেই বা কার শ্রমে?) নিরুদ্দিষ্টের শিশুপুত্র এবার নিমফুলের গন্ধ পেতে শুরু করুক। তারও তো সেই একই ঠিকানা!
    উপাখ্যানকে উল্টেপাল্টে এই কথাগুলো বললাম এটা বোঝাতে যে অমর মিত্র কেবল এক টানটান কাহিনি মাত্র লেখেননি, চতুর্দিকে শ্রমের অপচয় ও ক্ষয় ঘটিয়ে যে ভুঁইফোঁড় নগরায়ণ চলছে তা নিয়ে এক বয়ানও রচনা করেছেন। তাই তাঁর সাধুবাদ শুধু মুনশিয়ানার জন্যে নয়, নয় আর্ত মানুষের প্রতি অনুকম্পার জন্যেও, তাঁর সাধুবাদ সত্যান্বেষণের জন্যেও। তিনিই আমাদের সত্যান্বেষী, অখিল শ্রীবাস্তব (নামটার কি কোনও মানে নেই?), ‘যাহা কহিয়াছেন সত্য কহিয়াছেন’। মুম্বাইয়েই গিরনগাঁওয়ের একদা ঘর্ঘরিত কাপড়ের কলগুলি এখন শ্মশানতুল্য। সেই জায়গায় উঠছে বহু বহুতল বাড়ি। সেই বস্ত্র শ্রমিকদের অতীত-বর্তমান বিষয়ে একটি দলিল-সাপেক্ষ পুস্তক শুনেছি প্রকাশের পথে। অমর মিত্রের এই উপাখ্যানের সঙ্গে একই তাকে তার অবস্থান হোক।
    (রবিবারের প্রতিদিন, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০০২)

  • pi | 7845.29.012323.35 | ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৫৫380709
  • ২০০২ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি, রবিবারের প্রতিদিন পত্রিকায় অমিয় দেব লিখেছিলেন। সেই বই নতুন অবতারে, আরো কিছু গল্প সহ।

    আগের প্রচ্ছদ অনেক যত্ন নিয়ে করেছিলেন দেবরাজ গোস্বামী, ক্যাথে কলভিসের ছবির ছায়ায়, সেই ছবি দিয়েওছিলাম, কিন্তু ক'দিন আগে দেখা গেল প্রায় একইরকম প্রচ্ছদ আরেক প্রকাশনীর। তাই নতুন প্রচ্ছদ। চিরঞ্জিত সামন্তের।
    -------------------------+++---------------------------+++
    শুধু কাহিনি নয়, ভুঁইফোঁড় নগরায়নেরও বয়ান
    অমিয় দেব
    ১০৪ পৃষ্ঠার বই, একবার বসলেই পড়া হয়ে যায়। আর পড়তে গিয়ে একটি ঘটনার কথাও মনে পড়ে যায় যা কয়েক বছর আগে খুব আলোড়ন তুলেছিল। এবং পড়তে পড়তে একটু দূরের আরও দুটি ঘটনার কথা মনে পড়ে— কী করে এক রাতে অনেক তরুণের লাশ গঙ্গার ঘাটে নিকেশ করা হয়েছিল, ও কী করে চোখে অ্যাসিড ঢেলে কয়েকজন হাজতবাসীকে অন্ধ করে পরে লাশ বানিয়ে রাতারাতি গোর দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর তখন বোঝা যায় কেন বইটির উৎসর্গ—
    যাঁর হাতে দিতে চেয়েছিলাম
    সপ্রণাম নিবেদন,
    মৃত্যুঞ্জয়ী গৌরকিশোর ঘোষ
    চিরস্মরণীয়েষু।
    লেখা মাত্রেই বয়ান, তার কোনওটা ভাবায় না, কোনওটা ভাবায়। ‘নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান’-এর উৎসর্গলিপি তার বয়ানের অংশ।
    বইটি একটি মামলার কাঠামোতে নিবদ্ধ। বাদী নিরুদ্দিষ্টের পিতা ও পত্নী, বিবাদী পুলিশ। বাদীদের আর্জি— একদিন মাঝরাতে চড়াও হয়ে ঘুম ভাঙিয়ে নিরুদ্দিষ্টকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ, সেই থেকে সে নিখোঁজ। পুলিশ তাকে ফেরত দিক, অন্তত আদালতে হাজির করুক। পুলিশের সত্যাখ্যান— এই ঘটনা ঘটেনি, তারা নিরুদ্দিষ্টকে তুলে নিয়ে যায়নি, তুলে নিয়ে যাওয়ার কোনও কারণও ছিল না, কেউ নালিশ করেনি তার নামে। সত্যি সত্যিই সেই রাতে পুলিশ নিরুদ্দিষ্টকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল কিনা তা খুঁজে বের করবার জন্যে এক নিরপেক্ষ সত্যান্বেষীকে নিয়োগ করে আদালত। বাকি কাহিনি এই সত্যান্বেষীর অভিজ্ঞতা নিয়ে। অবশ্য বাদীদের আর্জিপত্র থেকে আমরা আগেই জেনেছি, নিরুদ্দিষ্ট এক কাচকলের শ্রমিক। কাচকল হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাবার পর সে বাজারে সবজি নিয়ে বসেছিল বটে, কিন্তু তার বিশ্বাস ছিল তাদের কাচকল আবার খুলবে। এবং এই বিশ্বাসের টানেই সে একদিন গিয়ে হাজির হয়েছিল পাথরে-বাঁধানের আলিপুরে তাদের কাচকল-মালিকের কুঠিতে। তবে তাকে ঢুকতে দেয়নি দারোয়ান, গেট থেকেই তাড়িয়ে দিয়েছিল। তাতেও তার বিশ্বাস উবে যায়নি, কিন্তু হঠাৎ একদিন দেখা গেল— সেই দেখল প্রথম কাচকলের জমিতে এক আবাসনের সাইনবোর্ড। তাতে উত্তেজনা ছড়াল শ্রমিকদের মধ্যে, প্রোমোটার প্রহৃত হল, তার গাড়ির কাঁচ ভাঙল, এই নিয়ে সে কয়েকজনের নামে এফ আই আর করল, পুলিশ কিছু ধরপাকড়ও করল, তবে তারা জামিনে খালাস পেয়ে গেল, এবং শেষ পর্যন্ত প্রোমোটারের.................................
    ....................................................বকেয়া মিটিয়ে দেবে, কিন্তু সেই টাকার লাইন যেদিন পড়ল সেদিন খাতায় কার নাম আছে আর কার নাম নেই তা নিয়ে বেজায় হুজ্জোত হল, পুলিশ এল ও পুলিশ পাহারাতে কিছু লোক টাকাও পেল, আর সেই রাত্তিরেই আমাদের নিরুদ্দিষ্ট, নাম বৈরাগী মণ্ডল, সাকিন ২২ নম্বর বস্তি, যে লাইন দিয়েছিল কিন্তু টাকা পেয়েছিল না পায়নি নাকি পেয়েও নেয়নি তা বলেনি, পুলিশ কর্তৃক প্রহৃত হতে হতে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। সারারাত সারাদিন ছুটোছুটি করল মদনমোহন মণ্ডল, বৈরাগীর পিতা, কিন্তু পুত্রকে সে ফেরত পেল না। তাই অনন্যোপায় হয়ে সে তার পুত্রবধূ, সহচরী মণ্ডলকে নিয়ে পুত্রকে ফেরত পাবার আশায় মহামান্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
    এই পর্যন্ত আমরা জেনে নিয়েছি। এবার আদালত নিযুক্ত নিরপেক্ষ সত্যান্বেষী অখিল শ্রীবাস্তবের চোখ দিয়ে, রোমকূপে, রোমকূপে, বাকি ঘটনার সাক্ষী হয়ে উঠি। প্রথম দেখি বৈরাগীদের বাসস্থান ২২ নম্বর বস্তির হতোচ্ছড়া চেহারা। তার বাসিন্দারা একদা প্রভুদয়াল রোলিং মিল কি শ্রীরাম গ্লাস ফ্যাক্টরিতে কাজ করত, এখন উঞ্ছবৃত্তি করে দিন গুজরান করে। যা ছিল রোলিং মিল তা এখন ঝকঝকে তকতকে আকাশদীপ আবাসন, ২২ নম্বরের বিপরীত। তবে তার নির্মাণকালে কেউ কেউ মুটে-মজুর-মিস্ত্রির কাজ পেয়েছিল, এখন তাদের বৌ-ঝিরা সেখানে দাসীগিরি করে— ফ্ল্যাটের বাবুদের কাছে ইজ্জত যেতে পারে জেনেও উঞ্ছ কুড়োয়, ভয়ে পিছিয়ে এলে খাবে কী! যা ছিল শ্রীরাম কাচকল তাই এবার হতে যাচ্ছে শ্রীরামচন্দ্র আবাসন। এবং প্রোমোটার একই, যেমন উৎক্ষিপ্ত শ্রমিকদের চেহারাও আসলে একই, কেউ নিরুদ্দিষ্ট কেউ নিরুদ্দিষ্ট নয় এখনো, এইটুকু তফাত। ছোটো কলকারখানাগুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেই জায়গায় তৈরি হচ্ছে বহুতল আবাসন, একে কেউ কেউ উন্নয়ন বলতে চান (প্রোমোটার বলে সে ডেভেলাপারও), কেন না অঞ্চলের চেহারা পাল্টাচ্ছে, নতুন রাস্তাঘাট হচ্ছে, বসছে দোকানপাট, চলছে নতুন নতুন গাড়ি, আরও কত কী— কিন্তু যারা এখনো ভেতরে ভেতরে কারখানার ভোঁ শোনে, আওয়াজ পায় রোলিং মিলের যাদের নাকে ভেসে আসে অনেক আগে কাটা নিমগাছের নিমফুলের গন্ধ (শব্দগন্ধ তো সবই থাকে ঈথারে), তারা তো সামিল নয় এই উন্নয়নে! এবং এই তথাকথিত উন্নয়নের প্রহরায় যদি থাকতে হয় পুলিশকে তাহলে তো মাঝে মাঝে কারখানার ভোঁ শোনা নিমফুলের গন্ধ পাওয়া কাউকে না কাউকে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে হতে পারে, যদি সে টাকার লাইনে দাঁড়িয়েও টাকা নেয় না, কারণ সে কারখানার এই আবাসন হয়ে যাওয়া মানে না, আর যদি সে পুলিশের বুট শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে না পারে। এবং পুলিশের পায়ে বুট থাকলে তো সে বুট অমন পোষ না মানা ‘উন্নয়ন’ বিরোধী ‘পাগলা’-র পাঁজর ভেঙে দিতেই পারে। আর কেউ লাশ হয়ে গেলে কী করা যায়, নিকেশের জন্যে তো খুনের ঘাট আছেই।
    ইত্যাদি ইত্যাদি সব ক্রমে সত্যান্বেষীর কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তার পাশে পাশে হাঁটে, রিকশায় তার পাশে বসে থাকে, কখনো শরীরী কখনো অশরীরী, নিরুদ্দিষ্ট। বুঝতে বাকি থাকে না সত্যান্বেষীর সে নিরুদ্দেশের মানে একটাই, নিরুদ্দিষ্টের একটাই ঠিকানা। অন্য যে-এক মানে দেবার চেষ্টা করে পুলিশ তিরিশ বছর আগেকার এক অন্য নিরুদ্দিষ্টের কথা তুলে, বর্তমান নিরুদ্দিষ্টের সেই পিতামহের বেলাও ছিল না কোন উদ্দেশ্যহীনতা। দেশভাগে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে চলে আসা ননীগোপাল মণ্ডল তার ছোটো ছেলে মদনমোহনের সকল স্নেহ-ভালবাসা সত্ত্বেও একসময় তার বড় ও মেজো ছেলের অভাবে খুব কাতর হয়ে উঠেছিল। মেজো ছেলে পূর্ববঙ্গের ভিটে ছেড়ে আসেনি, তার কাছে যাবার কোনও উপায় নেই। কিন্তু বড় ছেলে তো শরণার্থী হয়ে আছে দণ্ডকারণ্যে, তার কাছে হয়তো পৌঁছনো যায়। তাই একদিন স্বপ্নে বড় ছেলের কাছে শেষ (!) জলের অভিলাষ ব্যক্ত করে সে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল এবং কোরাপুট জেলায় বড় ছেলের কাছাকাছি পৌঁছে আর এগোতে পারেনি, মাটিতে শুয়ে পড়েছিল ও খোলা আকাশের তলায় শেষ নিঃশ্বাস (ফেলেছিল)। আর সেই রাত্তিরেই, বছরজোড়া খরার অন্তে, দণ্ডকারণ্যে বৃষ্টি নেমেছিল, প্রবল বৃষ্টি। জল চাইতে গিয়ে জল নামিয়ে দিয়ে ননীগোপাল হয়ে উঠেছিল ওই অঞ্চলের এক প্রিয় অতিকথা। তার সঙ্গে কী সম্পর্ক পুলিশ-প্রস্তাবিত মস্তিষ্কবিকৃতির, ঠাকুর্দার, ফলে নাতিরও? সবই হৃদয়ংগম হয় সত্যান্বেষীর। এবং এও বুঝতে পারে যে, রোজ সন্ধ্যেয় যে শ্বশুর-পুত্রবধূ বৈরাগী মণ্ডলের খোঁজে হেঁটে বেড়ায় তাও আসলে তাকে বাঁচিয়ে রাখার ও নিজেদের বেঁচে থাকবার এক অছিলা। অন্য কারোর জন্যে না হলেও তার অসহায় চাঁদবেনে শ্বশুরের জন্যেই তো এই ২২ নম্বরে বেহুলাটি তার স্বামীর মড়া আগলে ভাসতে থাকবে। আর এই দেখে নিয়ে, এই শ্বশুর-পুত্রবধূর চাঁদবেনে-বেহুলা সত্তায় প্রত্যয়াপন্ন হয়ে, কী উপায় আছে নিরপেক্ষ সত্যান্বেষীর তাদের পক্ষ না নিয়ে! ইতিহাস কাউকে নিরপেক্ষ থাকতে দেয় না। অথচ কোনও প্রমাণ নেই তার, মর্মভেদী সত্যস্ফুটন তো আর দিবালোকতুল্য সত্যকথন নয়! তার আছে কেবল অনুকম্পা। তাই এ মামলা চলতে থাকে, নিজের নিজের মতো করে নিরুদ্দেশের সমার্থ জেনে নিয়েও শ্বশুর-পুত্রবধূ হাজিরা দিতে থাকে আদালতে— বাদী এক ও বাদী দুই। ইতিমধ্যে নতুন আবাসন তৈরি হয়ে যাক, কিন্তু ধমনীতে, চৈতন্যে কারখানার শ্রমিক যেন শ্রমিকই থেকে যায়, পুরোপুরি দাস বনে না যায়, কিংবা খোঁচড়। (আচ্ছা, এই নব্য উন্নয়নের স্বার্থে কি ২২ নম্বর গুঁড়িয়ে দেওয়া যায় না? কিন্তু ২২ নম্বর গুঁড়িয়ে দিলে বহুতল আবাসনগুলো বনবে কার শ্রমে আর চলবেই বা কার শ্রমে?) নিরুদ্দিষ্টের শিশুপুত্র এবার নিমফুলের গন্ধ পেতে শুরু করুক। তারও তো সেই একই ঠিকানা!
    উপাখ্যানকে উল্টেপাল্টে এই কথাগুলো বললাম এটা বোঝাতে যে অমর মিত্র কেবল এক টানটান কাহিনি মাত্র লেখেননি, চতুর্দিকে শ্রমের অপচয় ও ক্ষয় ঘটিয়ে যে ভুঁইফোঁড় নগরায়ণ চলছে তা নিয়ে এক বয়ানও রচনা করেছেন। তাই তাঁর সাধুবাদ শুধু মুনশিয়ানার জন্যে নয়, নয় আর্ত মানুষের প্রতি অনুকম্পার জন্যেও, তাঁর সাধুবাদ সত্যান্বেষণের জন্যেও। তিনিই আমাদের সত্যান্বেষী, অখিল শ্রীবাস্তব (নামটার কি কোনও মানে নেই?), ‘যাহা কহিয়াছেন সত্য কহিয়াছেন’। মুম্বাইয়েই গিরনগাঁওয়ের একদা ঘর্ঘরিত কাপড়ের কলগুলি এখন শ্মশানতুল্য। সেই জায়গায় উঠছে বহু বহুতল বাড়ি। সেই বস্ত্র শ্রমিকদের অতীত-বর্তমান বিষয়ে একটি দলিল-সাপেক্ষ পুস্তক শুনেছি প্রকাশের পথে। অমর মিত্রের এই উপাখ্যানের সঙ্গে একই তাকে তার অবস্থান হোক।
    (রবিবারের প্রতিদিন, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০০২)

  • pi | 7845.29.012323.35 | ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৫৫380708
  • ২০০২ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি, রবিবারের প্রতিদিন পত্রিকায় অমিয় দেব লিখেছিলেন। সেই বই নতুন অবতারে, আরো কিছু গল্প সহ।

    আগের প্রচ্ছদ অনেক যত্ন নিয়ে করেছিলেন দেবরাজ গোস্বামী, ক্যাথে কলভিসের ছবির ছায়ায়, সেই ছবি দিয়েওছিলাম, কিন্তু ক'দিন আগে দেখা গেল প্রায় একইরকম প্রচ্ছদ আরেক প্রকাশনীর। তাই নতুন প্রচ্ছদ। চিরঞ্জিত সামন্তের।
    -------------------------+++---------------------------+++
    শুধু কাহিনি নয়, ভুঁইফোঁড় নগরায়নেরও বয়ান
    অমিয় দেব
    ১০৪ পৃষ্ঠার বই, একবার বসলেই পড়া হয়ে যায়। আর পড়তে গিয়ে একটি ঘটনার কথাও মনে পড়ে যায় যা কয়েক বছর আগে খুব আলোড়ন তুলেছিল। এবং পড়তে পড়তে একটু দূরের আরও দুটি ঘটনার কথা মনে পড়ে— কী করে এক রাতে অনেক তরুণের লাশ গঙ্গার ঘাটে নিকেশ করা হয়েছিল, ও কী করে চোখে অ্যাসিড ঢেলে কয়েকজন হাজতবাসীকে অন্ধ করে পরে লাশ বানিয়ে রাতারাতি গোর দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর তখন বোঝা যায় কেন বইটির উৎসর্গ—
    যাঁর হাতে দিতে চেয়েছিলাম
    সপ্রণাম নিবেদন,
    মৃত্যুঞ্জয়ী গৌরকিশোর ঘোষ
    চিরস্মরণীয়েষু।
    লেখা মাত্রেই বয়ান, তার কোনওটা ভাবায় না, কোনওটা ভাবায়। ‘নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান’-এর উৎসর্গলিপি তার বয়ানের অংশ।
    বইটি একটি মামলার কাঠামোতে নিবদ্ধ। বাদী নিরুদ্দিষ্টের পিতা ও পত্নী, বিবাদী পুলিশ। বাদীদের আর্জি— একদিন মাঝরাতে চড়াও হয়ে ঘুম ভাঙিয়ে নিরুদ্দিষ্টকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ, সেই থেকে সে নিখোঁজ। পুলিশ তাকে ফেরত দিক, অন্তত আদালতে হাজির করুক। পুলিশের সত্যাখ্যান— এই ঘটনা ঘটেনি, তারা নিরুদ্দিষ্টকে তুলে নিয়ে যায়নি, তুলে নিয়ে যাওয়ার কোনও কারণও ছিল না, কেউ নালিশ করেনি তার নামে। সত্যি সত্যিই সেই রাতে পুলিশ নিরুদ্দিষ্টকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল কিনা তা খুঁজে বের করবার জন্যে এক নিরপেক্ষ সত্যান্বেষীকে নিয়োগ করে আদালত। বাকি কাহিনি এই সত্যান্বেষীর অভিজ্ঞতা নিয়ে। অবশ্য বাদীদের আর্জিপত্র থেকে আমরা আগেই জেনেছি, নিরুদ্দিষ্ট এক কাচকলের শ্রমিক। কাচকল হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাবার পর সে বাজারে সবজি নিয়ে বসেছিল বটে, কিন্তু তার বিশ্বাস ছিল তাদের কাচকল আবার খুলবে। এবং এই বিশ্বাসের টানেই সে একদিন গিয়ে হাজির হয়েছিল পাথরে-বাঁধানের আলিপুরে তাদের কাচকল-মালিকের কুঠিতে। তবে তাকে ঢুকতে দেয়নি দারোয়ান, গেট থেকেই তাড়িয়ে দিয়েছিল। তাতেও তার বিশ্বাস উবে যায়নি, কিন্তু হঠাৎ একদিন দেখা গেল— সেই দেখল প্রথম কাচকলের জমিতে এক আবাসনের সাইনবোর্ড। তাতে উত্তেজনা ছড়াল শ্রমিকদের মধ্যে, প্রোমোটার প্রহৃত হল, তার গাড়ির কাঁচ ভাঙল, এই নিয়ে সে কয়েকজনের নামে এফ আই আর করল, পুলিশ কিছু ধরপাকড়ও করল, তবে তারা জামিনে খালাস পেয়ে গেল, এবং শেষ পর্যন্ত প্রোমোটারের.................................
    ....................................................বকেয়া মিটিয়ে দেবে, কিন্তু সেই টাকার লাইন যেদিন পড়ল সেদিন খাতায় কার নাম আছে আর কার নাম নেই তা নিয়ে বেজায় হুজ্জোত হল, পুলিশ এল ও পুলিশ পাহারাতে কিছু লোক টাকাও পেল, আর সেই রাত্তিরেই আমাদের নিরুদ্দিষ্ট, নাম বৈরাগী মণ্ডল, সাকিন ২২ নম্বর বস্তি, যে লাইন দিয়েছিল কিন্তু টাকা পেয়েছিল না পায়নি নাকি পেয়েও নেয়নি তা বলেনি, পুলিশ কর্তৃক প্রহৃত হতে হতে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। সারারাত সারাদিন ছুটোছুটি করল মদনমোহন মণ্ডল, বৈরাগীর পিতা, কিন্তু পুত্রকে সে ফেরত পেল না। তাই অনন্যোপায় হয়ে সে তার পুত্রবধূ, সহচরী মণ্ডলকে নিয়ে পুত্রকে ফেরত পাবার আশায় মহামান্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
    এই পর্যন্ত আমরা জেনে নিয়েছি। এবার আদালত নিযুক্ত নিরপেক্ষ সত্যান্বেষী অখিল শ্রীবাস্তবের চোখ দিয়ে, রোমকূপে, রোমকূপে, বাকি ঘটনার সাক্ষী হয়ে উঠি। প্রথম দেখি বৈরাগীদের বাসস্থান ২২ নম্বর বস্তির হতোচ্ছড়া চেহারা। তার বাসিন্দারা একদা প্রভুদয়াল রোলিং মিল কি শ্রীরাম গ্লাস ফ্যাক্টরিতে কাজ করত, এখন উঞ্ছবৃত্তি করে দিন গুজরান করে। যা ছিল রোলিং মিল তা এখন ঝকঝকে তকতকে আকাশদীপ আবাসন, ২২ নম্বরের বিপরীত। তবে তার নির্মাণকালে কেউ কেউ মুটে-মজুর-মিস্ত্রির কাজ পেয়েছিল, এখন তাদের বৌ-ঝিরা সেখানে দাসীগিরি করে— ফ্ল্যাটের বাবুদের কাছে ইজ্জত যেতে পারে জেনেও উঞ্ছ কুড়োয়, ভয়ে পিছিয়ে এলে খাবে কী! যা ছিল শ্রীরাম কাচকল তাই এবার হতে যাচ্ছে শ্রীরামচন্দ্র আবাসন। এবং প্রোমোটার একই, যেমন উৎক্ষিপ্ত শ্রমিকদের চেহারাও আসলে একই, কেউ নিরুদ্দিষ্ট কেউ নিরুদ্দিষ্ট নয় এখনো, এইটুকু তফাত। ছোটো কলকারখানাগুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেই জায়গায় তৈরি হচ্ছে বহুতল আবাসন, একে কেউ কেউ উন্নয়ন বলতে চান (প্রোমোটার বলে সে ডেভেলাপারও), কেন না অঞ্চলের চেহারা পাল্টাচ্ছে, নতুন রাস্তাঘাট হচ্ছে, বসছে দোকানপাট, চলছে নতুন নতুন গাড়ি, আরও কত কী— কিন্তু যারা এখনো ভেতরে ভেতরে কারখানার ভোঁ শোনে, আওয়াজ পায় রোলিং মিলের যাদের নাকে ভেসে আসে অনেক আগে কাটা নিমগাছের নিমফুলের গন্ধ (শব্দগন্ধ তো সবই থাকে ঈথারে), তারা তো সামিল নয় এই উন্নয়নে! এবং এই তথাকথিত উন্নয়নের প্রহরায় যদি থাকতে হয় পুলিশকে তাহলে তো মাঝে মাঝে কারখানার ভোঁ শোনা নিমফুলের গন্ধ পাওয়া কাউকে না কাউকে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে হতে পারে, যদি সে টাকার লাইনে দাঁড়িয়েও টাকা নেয় না, কারণ সে কারখানার এই আবাসন হয়ে যাওয়া মানে না, আর যদি সে পুলিশের বুট শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে না পারে। এবং পুলিশের পায়ে বুট থাকলে তো সে বুট অমন পোষ না মানা ‘উন্নয়ন’ বিরোধী ‘পাগলা’-র পাঁজর ভেঙে দিতেই পারে। আর কেউ লাশ হয়ে গেলে কী করা যায়, নিকেশের জন্যে তো খুনের ঘাট আছেই।
    ইত্যাদি ইত্যাদি সব ক্রমে সত্যান্বেষীর কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তার পাশে পাশে হাঁটে, রিকশায় তার পাশে বসে থাকে, কখনো শরীরী কখনো অশরীরী, নিরুদ্দিষ্ট। বুঝতে বাকি থাকে না সত্যান্বেষীর সে নিরুদ্দেশের মানে একটাই, নিরুদ্দিষ্টের একটাই ঠিকানা। অন্য যে-এক মানে দেবার চেষ্টা করে পুলিশ তিরিশ বছর আগেকার এক অন্য নিরুদ্দিষ্টের কথা তুলে, বর্তমান নিরুদ্দিষ্টের সেই পিতামহের বেলাও ছিল না কোন উদ্দেশ্যহীনতা। দেশভাগে উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে চলে আসা ননীগোপাল মণ্ডল তার ছোটো ছেলে মদনমোহনের সকল স্নেহ-ভালবাসা সত্ত্বেও একসময় তার বড় ও মেজো ছেলের অভাবে খুব কাতর হয়ে উঠেছিল। মেজো ছেলে পূর্ববঙ্গের ভিটে ছেড়ে আসেনি, তার কাছে যাবার কোনও উপায় নেই। কিন্তু বড় ছেলে তো শরণার্থী হয়ে আছে দণ্ডকারণ্যে, তার কাছে হয়তো পৌঁছনো যায়। তাই একদিন স্বপ্নে বড় ছেলের কাছে শেষ (!) জলের অভিলাষ ব্যক্ত করে সে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল এবং কোরাপুট জেলায় বড় ছেলের কাছাকাছি পৌঁছে আর এগোতে পারেনি, মাটিতে শুয়ে পড়েছিল ও খোলা আকাশের তলায় শেষ নিঃশ্বাস (ফেলেছিল)। আর সেই রাত্তিরেই, বছরজোড়া খরার অন্তে, দণ্ডকারণ্যে বৃষ্টি নেমেছিল, প্রবল বৃষ্টি। জল চাইতে গিয়ে জল নামিয়ে দিয়ে ননীগোপাল হয়ে উঠেছিল ওই অঞ্চলের এক প্রিয় অতিকথা। তার সঙ্গে কী সম্পর্ক পুলিশ-প্রস্তাবিত মস্তিষ্কবিকৃতির, ঠাকুর্দার, ফলে নাতিরও? সবই হৃদয়ংগম হয় সত্যান্বেষীর। এবং এও বুঝতে পারে যে, রোজ সন্ধ্যেয় যে শ্বশুর-পুত্রবধূ বৈরাগী মণ্ডলের খোঁজে হেঁটে বেড়ায় তাও আসলে তাকে বাঁচিয়ে রাখার ও নিজেদের বেঁচে থাকবার এক অছিলা। অন্য কারোর জন্যে না হলেও তার অসহায় চাঁদবেনে শ্বশুরের জন্যেই তো এই ২২ নম্বরে বেহুলাটি তার স্বামীর মড়া আগলে ভাসতে থাকবে। আর এই দেখে নিয়ে, এই শ্বশুর-পুত্রবধূর চাঁদবেনে-বেহুলা সত্তায় প্রত্যয়াপন্ন হয়ে, কী উপায় আছে নিরপেক্ষ সত্যান্বেষীর তাদের পক্ষ না নিয়ে! ইতিহাস কাউকে নিরপেক্ষ থাকতে দেয় না। অথচ কোনও প্রমাণ নেই তার, মর্মভেদী সত্যস্ফুটন তো আর দিবালোকতুল্য সত্যকথন নয়! তার আছে কেবল অনুকম্পা। তাই এ মামলা চলতে থাকে, নিজের নিজের মতো করে নিরুদ্দেশের সমার্থ জেনে নিয়েও শ্বশুর-পুত্রবধূ হাজিরা দিতে থাকে আদালতে— বাদী এক ও বাদী দুই। ইতিমধ্যে নতুন আবাসন তৈরি হয়ে যাক, কিন্তু ধমনীতে, চৈতন্যে কারখানার শ্রমিক যেন শ্রমিকই থেকে যায়, পুরোপুরি দাস বনে না যায়, কিংবা খোঁচড়। (আচ্ছা, এই নব্য উন্নয়নের স্বার্থে কি ২২ নম্বর গুঁড়িয়ে দেওয়া যায় না? কিন্তু ২২ নম্বর গুঁড়িয়ে দিলে বহুতল আবাসনগুলো বনবে কার শ্রমে আর চলবেই বা কার শ্রমে?) নিরুদ্দিষ্টের শিশুপুত্র এবার নিমফুলের গন্ধ পেতে শুরু করুক। তারও তো সেই একই ঠিকানা!
    উপাখ্যানকে উল্টেপাল্টে এই কথাগুলো বললাম এটা বোঝাতে যে অমর মিত্র কেবল এক টানটান কাহিনি মাত্র লেখেননি, চতুর্দিকে শ্রমের অপচয় ও ক্ষয় ঘটিয়ে যে ভুঁইফোঁড় নগরায়ণ চলছে তা নিয়ে এক বয়ানও রচনা করেছেন। তাই তাঁর সাধুবাদ শুধু মুনশিয়ানার জন্যে নয়, নয় আর্ত মানুষের প্রতি অনুকম্পার জন্যেও, তাঁর সাধুবাদ সত্যান্বেষণের জন্যেও। তিনিই আমাদের সত্যান্বেষী, অখিল শ্রীবাস্তব (নামটার কি কোনও মানে নেই?), ‘যাহা কহিয়াছেন সত্য কহিয়াছেন’। মুম্বাইয়েই গিরনগাঁওয়ের একদা ঘর্ঘরিত কাপড়ের কলগুলি এখন শ্মশানতুল্য। সেই জায়গায় উঠছে বহু বহুতল বাড়ি। সেই বস্ত্র শ্রমিকদের অতীত-বর্তমান বিষয়ে একটি দলিল-সাপেক্ষ পুস্তক শুনেছি প্রকাশের পথে। অমর মিত্রের এই উপাখ্যানের সঙ্গে একই তাকে তার অবস্থান হোক।
    (রবিবারের প্রতিদিন, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০০২)

  • | 230123.142.670112.236 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১০:১৩380711
  • অতি বিখ্যাত নন যারা, যাদের প্রথম এক দুটি বই বেরিয়েছে বা বেরোবে গুরুচন্ডালি থেকে, তাদের সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন।
    যাঁরা বিখ্যাত , সিনিয়র লোক জন কিন্তু গুরুচন্ডালি বা তদরুপ ছোটো ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাবলিশার দের বেছে নেন নিজের কাজের প্রকাশের জন্য, তাঁদের ও অভিনন্দন। মোনোপলি বিজনেস দের কাছে বই ছাপুন, পারলে ফর্মাল কন্ট্রাক্টে ঢুকুন, কিন্তু অপেক্ষাকৃত ছোটো প্রকাশক দের উৎঅসাহ দিন। এবং ফরমাল কন্ট্রাক্টে উৎঅসাহিত করুন।
    যাঁরা রইলেন না, কি আর বলবো, তাঁদের জন্য একটু অভিমান ই রইলো।

    বাংলা প্রকাশনা , প্রকাশ, বিক্রেতা লেখক লেখিকা সম্পর্ক অসংগঠিত শ্রমক্ষেত্রের মত একটা ব্যতিগত মহানুভবতা , ব্যক্তিগত সম্পর্কের নানা সমীকরণ, আর বাতেলা , পাতি চুরি আর লোক ঠকানির মিলনক্ষেত্র না থাকলেই মংগল। আমাদের দেশে বিচিত্র ঘটনা হল, সারকারী সামাজিক সুরক্ষা যখন থেকে আক্রান্ত ঠিক প্রায় তখন থেকেই , পি এফ স্কিমে এম্প্লয়ার পার্টিসিপেশন ঊর্ধগামী, ফাঁকি দেবার জন্য পন্থাও ঊর্ধগামী, তবু পি এফ এ লোকের সঙ্খ্যা বেড়েছে, পি এফ ডিসবার্সমেন্ট কতটা সোজা হয়েছে, এই মুহুর্তে কোন রিলায়েবল সোর্স মনে পড়ছে না যদিও। উদা টার মোদ্দা হল, নানা কনফ্লিক্ট সত্ত্বেও ফর্মালাইজেশন অফ দ্য ট্রেড টা জরুরী এবং হবে আশা রাখি।
  • pi | 7845.15.892312.208 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:০৭380712
  • আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ নলিনী বেরা, অমর মিত্র জয়ন্ত দের হাতে ইন্দ্রাণীদির পাড়াতুতো চাঁদ ও এককের অতিনাটকীয়র আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন।
  • | 2345.110.673412.178 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:১৫380713
  • ইন্দ্রাণী দি কে অনেক শুভেচ্ছা, ব ই বেরিয়েছে বলে খুব খুশি আমরা।
  • প্রেসপক্ষ | 232312.172.2356.250 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১১:০৯380715
  • বইয়ের প্রোডাকশন কোয়ালিটি, স্টলের ব্যাবস্থাপনা, পাঠকের রেসপন্স ও ইন্টার্য্যাকশন ইত্যাদি নিয়ে লেখক লেখিকাদের ভাবনা, নির্মোহ ব ইত্যাদি পেলে খুব ভালো হয়। কতটা ভালো কোনটা মন্দ আরো ভালো কী করে করা যায় এইসব জানতে চাই। আপাতত নাগালের মধ্যে ছোটাইদি আর দমদি। ভুবনের ভার রইলো।

    অন্যদের মতামত জানতেও আগ্রহী, তবে সাইটে নিত্য আসা যাওয়া যাঁদের তাঁদের নামই নিলাম শুধু।

    একক তো বই দেখতে পায়নি এখনো তাই পেছনে বেঞ্চিতে।
  • | 2345.106.673423.207 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৩:৫২380716
  • আমি এটাকে প্রেমপক্ষ পড়ে ভাবলাম আবার সেই লাভগুরুরা স্প্যামাতে এসেছে
  • গুরুচণ্ডা৯ | 785612.40.6734.88 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:৩৮380717
  • স্টল ভরা গ্রন্থশোভা, সঙ্গীত সম্মুখে।
    সরস্বতীর মনোপলি গ্রন্থমেলার বুকে ।।
    লক্ষ্মীর বাহন স্বয়ং গুরুর লোগোতে ।
    বিদ্যাদেবীর মনোপলি দেখে এ জগতে।।
    শোকে প্যাঁচা খুলে গুরু চণ্ডা৯ ডট কম।
    খোঁজে লক্ষ্মী-পাঁচা৯র কাটতি কেন কম।।
    গুরুজন হেসে বলে পাঁচা৯ ফিনিশ।
    কে পড়িবে আদ্যিকালী রাবিশ জিনিস।।
    মনস্তাপে প্যাঁচা ভাবে সুখৈশ্বর্য যত।
    এভাবে সকলই কি হবে তিরোহিত।।
    নবান্নের পরে আর উত্তরয়ায়ন।
    থাকবেনা, থাকবেনা লক্ষ্মী নারায়ণ।।
    অশ্রুজলে ডুবুডুবু মেলা ভেসে যায়।
    অবশেষে কবিকূল হলেন সহায়।।
    নতুন স্টাইল খুঁজে নব্য কবিগণ।
    লক্ষ্মীর পাঁচা৯ করে পুনর্লিখন।।
    নতুন বয়ানে কাব্য হয় নবীকৃত।
    সে পাঁচা৯ গুরুবারে হয় প্রকাশিত।।
    গুরুবারে সন্ধ্যাকালে গুরুজন সাথে।
    গলবস্ত্রে পাঠ হয় গুরুর স্টলেতে।।
    কলিকালী ছোঁড়াছুঁড়ি শুদ্ধ করি মন।
    অবশ্যই সেই পাঠ করিও শ্রবণ।।

    এই অখাদ্য পদ্যের মানে কী? অন্য কিছু না, পাপ। গুরুচণ্ডা৯ একটি পাপকার্য করেছে। আদ্যিকালের লক্ষ্মীর পাঁচালি স্রেফ ট্রেনে আর দশকর্মা ভাণ্ডারে বিক্রি হত, বইমেলায় কদাচ নয়। আঁতেলরা একে দেখলেই নাক কোঁচকান, কারো বাড়িতে এই বস্তু আছে জানলে হ্যাহ্যা করে হাসা হয়। কোনো আধুনিকা পড়েন জানতে পারলে তো নির্ঘাত একঘরে। একমাত্র পিএইচডি টিএইচডি করতে গেলে চুপিচুপি দু-চার কপি কিনে ফেলে থিসিসের সঙ্গে জলাঞ্জলি দিতে হত, আলোকপ্রাপ্ত সমাজে এইটুকুই ছিল পাঁচালির উপযোগিতা। সভ্যতায় পাঁচালির অবদান লিখতে হলে রচনা বইতে এইটুকুই লেখা হবে। তা, হঠাৎ হয়েছে কী, কোথাও কিছু নেই, একদল কবি জুটে গিয়ে সাহিত্যের জগতে একেবারে জল-অচল এই বস্তুটির পুনর্লিখন করেছেন। তাঁদের যুক্তি হল, খামোখা ঐতিহ্যটিকে বানের জলে ভাসিয়ে লাভ কী, বরং জিনিসটাকে পুনর্লিখনই করা যাক। গুরুর পাপ হল গুরু 'লক্ষ্মীর পাঁচালি' নামের সেই পুস্তকটি ছেপেও ফেলেছে। শুধু পুনর্লিখনই নয়, বস্তুত ভাব ও বিষয়বস্তুতে লক্ষ্মীর পাঁচালি জিনিসটির পুনর্নবীকরণ করা হয়েছে এই বইয়ে, যা প্রকাশিত হবে আজ। বৃহস্পতিবার, ৭ তারিখ। আর পাপকর্ম যখন একবার হয়েছে, তখন বাকিটুকুই বা বাদ থাকে কেন। যাঁরা এই পুনর্লিখনের অপকর্ম বা সাহসী কাজটি করেছেন, তাঁদেরই কেউ-কেউ উদ্বোধনের শুভলগ্নে গলবস্ত্র হয়ে বা না হয়ে পাঠ করবেন নতুন পাঁচালি। দুলে-দুলে করবেন, পাঠান্তে প্রণাম করবেন কিনা অপাতত জানার কোনো উপায় নেই। দেখার জন্য উপস্থিত থাকতে হবে গুরুর স্টলে (২৯৩) । সময়ঃ সন্ধ্যা ছটা। ওই একই সময় আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ হবে আরও দুটি বইয়েরও। 'সিজনস অফ বিট্রেয়াল' এবং 'তাহাদের কথা'। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা ঠিক কী দাঁড়াবে (আমরাও জানিনা), জানতে হলে অবশ্যই আসুনl

    - Saikat Bandyopadhyay
  • pi | 2345.110.125612.174 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:১৩380718
  • বইপ্রকাশের ছবিগুলো কেউ আলবাম থেকে এখানে দেবে? আমার নেট সময় শরীর কিছুই ঠিকঠাক নেই :(
  • pi | 2345.110.9004512.63 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৩:২৬380720
  • স্বাতী রায় লিখলেন,

    #সিজনস_অব_বিট্রেয়াল- পাঠ-প্রতিক্রিয়া
    লেখাঃ : দময়ন্তী ( প্রকাশক : গুরুচন্ডা৯)

    ( ঘড়িতে রাত দুটো পনের. ফেসবুকে পোস্ট লিখতে বসার জন্য একটু বেশিই রাত নিঃসন্দেহে, তবু না লিখতে বসে পারা গেল না. বইটা পড়া শেষ হল একটু আগে. )

    এ গল্প ভাঙনের গল্প. রাজনৈতিক হিসাব যখন ব্যক্তিজীবনের উপর তীব্রতম আঘাত হানে , সেই বিভীষিকার গল্প. বার বার অনেক ফর্মে ফিরে এসেছে বাংলা সাহিত্যে. তবু সে কথা ৫০-৬০-৭০ র দশকের. আজকের ২০১৯ সালে যখন সে গল্প ফিরে আসে পরের প্রজন্মের হাত ধরে, তখন তাতে মিশে থাকে ভবিষ্যৎ জেনে যাওয়ার নৈর্ব্যক্তি.

    তবু কি আশ্চর্য ! মোচড়গুলো লাগে একদম ঠিক তারে ! হয়তো আমাদের. কারোর ব্যক্তিগত জীবনও সে বিষাদ-আঁধার পেরিয়ে এসেছে, কেউ বা এক ফাঁকে ছোঁয়া বাঁচাতে পেরেছেন , তবু মনে হয় যে কোন সংবেদনশীল মানুষই একটা দেশ-ভরা মানুষের সেই অকূল খাদে গড়িয়ে পড়ার বিপন্নতাটুকু কল্পনা করতে পারেন.

    খানিকটা পারিবারিক ইতিহাসের ছায়ায় লেখা বই, যেখানে ইতিহাস আর গল্পগাথা মিলে একটা যৌথবাদ্য তৈরী হয়েছে. এখানে হঠাৎ- উদ্বাস্তু বাঙালী পরিবারের কষ্টের সঙ্গে মিশে যায় প্রতিবেশী শিখদের মর্মন্তুদ বেদনার কথা. ছোট্ট জামুর কথা পড়তে পড়তে বইটা একসময় শেষ না করেই উঠে যেতে ইচ্ছে করে, এতটাই মন-ভার-করা কথা !

    একটা ঘোরের মধ্যে বইটা পড়ছিলাম - মনে হল বইটার শেষটা বড্ড যেন তাড়াতাড়ি হল. অবশ্য বিট্রেয়ালের পর্ব তখন শেষ, তবু একটা কৌতূহল চারিয়ে গেল, কি হল এরপর যুঁই এর ? কেমন চলল তার আর তার বাড়ির সকলের জীবন ? প্রমদাকান্তের পরিবারেরই বা কি হল ? এমন যদি হত যে এই বইটি একটি একাধিক পর্বের এপিকের প্রথম পরেব মাত্র - বইএর চলনও কিন্তু তেমনই দাবী করে!

    সাধারণ পাঠক হিসেবে মনে হয়েছে যে প্রতি পরিচ্ছদের শেষে ফুটনোট না থেকে একেবারে বইএর শেষে একসঙ্গে থাকলেই হয়তো ভাল হত. কেজো ফুটনোট পড়তে গিয়ে ঘটনার আমেজে একটু ঘা পড়েছে বলে মনে হয়েছে. তবে সবার এমন মনে নাও হতে পারে.

    এক কলমের আঁচড়ে নিজের দেশকে বিদেশ বলে মেনে নেওয়ার প্রজন্মগত ক্ষত যারা বয়ে নিয়ে চলেছেন, বা যারা পাশেই বসত করা মানুষদের সেই ব্যথার জায়গাটা বোঝেন, এই বই তাদের মনে নতুন করে কষ্ট জাগানোর বই. হয়ত প্রায় সত্তর বছরের ব্যবধানে কষ্টটা মেনে নিতে শেখা গেছে, তবু কষ্টটা কষ্টই , তাই না ?
  • pi | 2345.110.9004512.63 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৩:২৬380719
  • এখনি অনেকে নানা জায়গায় পাঠপ্রতিক্রিয়া বা টুকটাক মতামত দিচ্ছেন। কত আর তুলি। সব নজরেও আসছেনা।
    এইমাত্র নজরে এল, ইন্দ্রজিত খান লিখেছেন,
    তন্বী হালদারের বইটা উল্টেপাল্টে দেখছিলাম ় খুব ভালো লেখা ় এই লেখিকার লেখা আগে কোনদিন পড়িনি ় খুবই শক্তিশালী লেখা ়

    সায়ন্তী ঘোষ লিখলেন, শব্দের জারিজুরি বাদ দিয়ে, নিজেকে গৌন করে মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে গড়ে তোলেন রূপকথা, সেই মানবকথার বেদনার রেশ দীর্ঘস্থায়ী, বোধ, চেতনা সবকিছু কে নাড়া দেয় তাঁর লেখা।।। প্রিয় মানুষ, দাদা।।। Amar Mitra নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান পড়লাম রুদ্ধশ্বাসে!
  • pi | 7845.15.346712.39 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:৫৩380721
  • ডা: শর্মিষ্ঠা দাস লিখলেন, 'তাহাদের কথা ' নিয়ে। বইটি কিনে পড়লাম । অনবদ্য সংগ্রহ । স্যালুট !
  • pi | 2345.110.894512.189 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১১:১৬380722
  • এটাও নিশ্চায় দিইনি সেদিন।
    সৈকতদার লেখা।

    স্টল ভরা গ্রন্থশোভা, সঙ্গীত সম্মুখে।
    সরস্বতীর মনোপলি গ্রন্থমেলার বুকে ।।
    লক্ষ্মীর বাহন স্বয়ং গুরুর লোগোতে ।
    বিদ্যাদেবীর মনোপলি দেখে এ জগতে।।
    শোকে প্যাঁচা খুলে গুরু চণ্ডা৯ ডট কম।
    খোঁজে লক্ষ্মী-পাঁচা৯র কাটতি কেন কম।।
    গুরুজন হেসে বলে পাঁচা৯ ফিনিশ।
    কে পড়িবে আদ্যিকালী রাবিশ জিনিস।।
    মনস্তাপে প্যাঁচা ভাবে সুখৈশ্বর্য যত।
    এভাবে সকলই কি হবে তিরোহিত।।
    নবান্নের পরে আর উত্তরয়ায়ন।
    থাকবেনা, থাকবেনা লক্ষ্মী নারায়ণ।।
    অশ্রুজলে ডুবুডুবু মেলা ভেসে যায়।
    অবশেষে কবিকূল হলেন সহায়।।
    নতুন স্টাইল খুঁজে নব্য কবিগণ।
    লক্ষ্মীর পাঁচা৯ করে পুনর্লিখন।।
    নতুন বয়ানে কাব্য হয় নবীকৃত।
    সে পাঁচা৯ গুরুবারে হয় প্রকাশিত।।
    গুরুবারে সন্ধ্যাকালে গুরুজন সাথে।
    গলবস্ত্রে পাঠ হয় গুরুর স্টলেতে।।
    কলিকালী ছোঁড়াছুঁড়ি শুদ্ধ করি মন।
    অবশ্যই সেই পাঠ করিও শ্রবণ।।

    এই অখাদ্য পদ্যের মানে কী? অন্য কিছু না, পাপ। গুরুচণ্ডা৯ একটি পাপকার্য করেছে। আদ্যিকালের লক্ষ্মীর পাঁচালি স্রেফ ট্রেনে আর দশকর্মা ভাণ্ডারে বিক্রি হত, বইমেলায় কদাচ নয়। আঁতেলরা একে দেখলেই নাক কোঁচকান, কারো বাড়িতে এই বস্তু আছে জানলে হ্যাহ্যা করে হাসা হয়। কোনো আধুনিকা পড়েন জানতে পারলে তো নির্ঘাত একঘরে। একমাত্র পিএইচডি টিএইচডি করতে গেলে চুপিচুপি দু-চার কপি কিনে ফেলে থিসিসের সঙ্গে জলাঞ্জলি দিতে হত, আলোকপ্রাপ্ত সমাজে এইটুকুই ছিল পাঁচালির উপযোগিতা। সভ্যতায় পাঁচালির অবদান লিখতে হলে রচনা বইতে এইটুকুই লেখা হবে। তা, হঠাৎ হয়েছে কী, কোথাও কিছু নেই, একদল কবি জুটে গিয়ে সাহিত্যের জগতে একেবারে জল-অচল এই বস্তুটির পুনর্লিখন করেছেন। তাঁদের যুক্তি হল, খামোখা ঐতিহ্যটিকে বানের জলে ভাসিয়ে লাভ কী, বরং জিনিসটাকে পুনর্লিখনই করা যাক। গুরুর পাপ হল গুরু 'লক্ষ্মীর পাঁচালি' নামের সেই পুস্তকটি ছেপেও ফেলেছে। শুধু পুনর্লিখনই নয়, বস্তুত ভাব ও বিষয়বস্তুতে লক্ষ্মীর পাঁচালি জিনিসটির পুনর্নবীকরণ করা হয়েছে এই বইয়ে, যা প্রকাশিত হবে আজ। বৃহস্পতিবার, ৭ তারিখ। আর পাপকর্ম যখন একবার হয়েছে, তখন বাকিটুকুই বা বাদ থাকে কেন। যাঁরা এই পুনর্লিখনের অপকর্ম বা সাহসী কাজটি করেছেন, তাঁদেরই কেউ-কেউ উদ্বোধনের শুভলগ্নে গলবস্ত্র হয়ে বা না হয়ে পাঠ করবেন নতুন পাঁচালি। দুলে-দুলে করবেন, পাঠান্তে প্রণাম করবেন কিনা অপাতত জানার কোনো উপায় নেই। দেখার জন্য উপস্থিত থাকতে হবে গুরুর স্টলে (২৯৩) । সময়ঃ সন্ধ্যা ছটা। ওই একই সময় আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ হবে আরও দুটি বইয়েরও। 'সিজনস অফ বিট্রেয়াল' এবং 'তাহাদের কথা'। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা ঠিক কী দাঁড়াবে (আমরাও জানিনা), জানতে হলে অবশ্যই আসুনl
  • স্বাতী রায় | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:১৩380723
  • কলকাতা বইমেলা ২০১৯

    ২৯৩ নং স্টল. নতুন পুরোন বইএ মিলেমিশে , সেজেগুজে বসে আছে আপনার প্রতীক্ষায়. আর দেরী নয়, আসুন, দলে দলে চলে আসুন বইমেলায় - স্টল নং ২৯৩.

    নতুন বইও তো একরাশ, কাকে ছেড়ে কাকে দেখি ! এককের অতিনাটকীয়, সংকলিত বই তাহাদের কথা, তন্বী হালদারের মজুররত্ন, দময়ন্তীর সিজনস অব বিট্রেয়াল, ইন্দ্রাণীর পাড়াতুতো চাঁদ, অমর মিত্রের নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান, মলয় রায়চৌধুরীর নিজের বাছাই , বিপুল দাসের তোমার সঙ্গে খেলা, সংকলিত বই নাগরিকপঞ্জি ও ডিটেনশন ক্যাম্প ইত্যাদি ইত্যাদি অপেক্ষা করছে আপনাদের জন্য, কিছুদিন আগে বেরোন মোদীকেয়ার, নৈঃশব্দের পত্রগুচ্ছ আর শাক্যজিতের কুরবানি ও কার্নিভালের হাত ধরে. কাজ চলছে হিরণ মিত্রের বইর. বইমেলা শেষের আগেই এসে যেতে পারে.

    তবে এই ফাঁকে কয়েকজন মানুষের কথা না বললেই নয়. গুরুর বই এর দত্তক নেওয়ার ব্যাপারটা অনেকেই জানেন. এবারেও নতুন বইগুলি আংশিক দত্তক নিয়ে যাঁরা বইগুলিকে পাঠকের হাতে কমদামে তুলে দিতে সাহায্য করেছেন, তাদের কয়েকজন হলেন ইন্দ্রাণী , বিশ্বরূপ ঘোষ, সুকান্ত ঘোষ, জয়দীপ জানা, সুদীপ্ত পাল, বিমান চট্টোপাধ্যায়, বিপুল দাস , অন্বেষা, সোমশুভ্র, অভিরূপ গাঙ্গুলী, দময়ন্তী, তিতি রায়, শ্রাবণী রায়, শুচিস্মিতা সরকার, ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার, সোমনাথ রায়, মীণাক্ষী দত্ত মন্ডল, সৌম্যদীপ, সৈকত চট্টোপাধ্যায় - অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে. এঁরা ছাড়াও আছেন কয়েকজন শুভানুধ্যায়ী যাঁদের নাম বলা মানা, কিন্তু ধন্যবাদ জানাতে তো মানা নেই , তাই সেটুকুই জানাই. আর হ্যাঁ, বস্টনে বঙ্গের Born Free, সর্ষেদানায়, ইচ্ছেডানায়, লা জবাব দিল্লির অচল সিকি, কাঠপাতার ঘরের কুলদা রায়, ঘেন্নাপিত্তি, রেলিং জড়িয়ে প্লাস্টিকের কলম যার সেই সোমনাথ রায় - আপনাদের কথাও তো বলতেই হয় এই সময়.

    আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাতে পেরে আমরাই ধন্য.
  • pi | 2345.110.564512.221 | ০৯ মার্চ ২০১৯ ১৪:১৫380726
  • 'সিজনস অব বিট্রেয়াল ' নিয়ে লিখলেন অদিতি কবীর,

    দেশভাগ, পার্টিশান বা বাটওয়ারা- শব্দগুলো আজ আমাদের কাছে নিছক শব্দ মনে হলেও বহু মানুষের কাছে নিজ বাসভূমে পরবাসী হয়ে সব ফেলে বিদেশে চলে যাবার দুঃখের কথা। এই দেশভাগ নিয়েই দময়ন্তীর (Damayanti Talukdar) লেখা ডকু-ফিকশন ‘সিজনস অব বিট্রেয়াল’। এটি যখন গুরুচণ্ডালীতে বেরোচ্ছিল, আমি ২/১টা পর্ব পড়লেও, ভুলে যেতাম পরের পর্ব পড়তে। এবার কলকাতা বইমেলা যাবার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল এটাকে বই আকারে পাওয়া। আনন্দের ব্যপার হচ্ছে বইটা আমি শুধু কিনিনি, লেখিকার অটোগ্রাফও পেয়েছি!

    ‘সিজনস অব বিট্রেয়াল’- এর কাহিনী বোনা হয়েছে ১৯৩০ থেকে ১৯৫০-এর নানান সময়ের নানা ঘটনা দিয়ে। ডকু-ফিকশনের কেন্দ্রে আছে কিশোরগঞ্জের একটি পরিবার, যারা দেশভাগের পরে চলে আসে ভারতে, কিন্তু এই ‘চলে আসা’টুকু অত্যন্ত ঘটনাবহুল। কাহিনী শুরু হয় ১৯৫০ সালে, কিশোরী যুঁইয়ের এক কাপড়ে নিজভূমি ছেড়ে বান্ধবীর আত্মীয়দের সাথে কলকাতায় চলে যাওয়া দিয়ে। দেশভাগের পরপরই পূর্ব পাকিস্তানে আসতে থাকে মোহাজিররা। এরা উর্দুভাষী ভারতীয়, এবং অত্যন্ত লোভী। অপরের বাড়ি ও নারীর প্রতি সীমাহীন লোভ এদের (আমরা জানি, এই সম্প্রদায় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও লুন্ঠনের দোসর ছিল)। কিশোরগঞ্জে আসা বিহারীরা কুমতলব আঁটে যুঁই সহ তিন কিশোরীকে অপহরণ করার, ঘটনাক্রমে তা জানতে পেরে তিনটি কিশোরীর পরিবার তাদের পাঠিয়ে দেয় ঐ পাড়ে। যুঁইয়ের প্রথম ঠাঁই হয় ছোটমাসীর বাড়িতে।

    মাত্র চার বছর আগে ঘটে গেছে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। দ্বি-জাতিত্ত্বের মত অদ্ভুত একটি তত্ত্ব মোতাবেক একটি দেশ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে, একভাগ ‘শ্যাখেগো দ্যাশ’, আরেক ভাগ ‘মালাউনগো দ্যাশ’। উল্লিখিত পরিবারটির বাবা যোগেশ এবং আসন্ন প্রসবা মা লাবণ্য রয়ে যান কিশোরগঞ্জ। ১৯৫০-এর দাঙ্গার পর পরিস্থিতি আরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতাদের ইশারায় “হিন্দুগো কম দামে জিনিষ ব্যাচন” পর্যন্ত নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় যোগেশ কলকাতায় চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।

    যোগেশের তিন ছেলে- সুহাস, প্রভাস এবং ভানু কলকাতায় পড়ে। তারা যে মেসে থাকে সেখানে যে আলোচনা চলে, সেটা বেশ পরিচিত- গান্ধী গান্ধী কর এই এত লোক মরল, এত লোকের ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেল, কই গান্ধী তো অনশনে বসল না? হ্যাঁ, একেবারে প্রাণে মেরে ঠিক করেনি, কিন্তু এগুলোও তো দেখবে। কিছুদিন আগে ব্লগার হত্যায় অনেককে এমন ভ্যালিডেট করতে দেখেছি। এই বই থেকে আমি একটা আইনের কথা জানতে পারলাম- Abducted Persons (Recovery & Restoration) 1949. এ বিষয়ে আরও জানার প্রচেষ্টা জারী থাকবে আমার।

    কাহিনীতে দু’টি চরিত্র আছে – অমরিন্দর এবং জামু, চরিত্র দু’টির ব্যপ্তি সংক্ষিপ্ত হলেও, আমার মনে অভিঘাত অনেক বেশি। অমরিন্দর শিখ, পাকিস্তান থেকে দেশত্যাগের সময় তাদের পরিবারস্থ নারী ও শিশুদের শিখখি রক্ষার্থে হত্যার বিবরণটা পড়ার সময় বাইরে ছিলাম, আমি এত জোরে হিঁইইই করে উঠেছিলাম যে আশেপাশের সবাই তাকিয়েছিল। অন্যদিকে জামু হিন্দীভাষী অনাথ বালক, কলকাতায় এসেছে দিল্লী থেকে। পেটচুক্তিতে কাজ করতে যাবার সময় একদিন অমরিন্দর তাকে পথে ধরে তার যৌনাঙ্গটি দেখতে চায়। জামু দৌড়ে সরলাদের বাড়িতে ঢোকে, অমরিন্দর তার পিছু ধাওয়া করে সে বাড়িতে আসে, হাতে তার খোলা কৃপান। সরলার দৃঢ়তায় জামু বেঁচে যায়। পুরো ঘটনাটা পড়ে বিশ্বাস করবেন আমি প্রায় মূর্ছা যাচ্ছিলাম। একটা বয়স্ক মানুষ প্রতিশোধের নেশায় এমনই উন্মাদ যে একটি ছোট্ট ছেলে মুসলমান প্রমাণিত হলে তাকে হত্যা করবে!

    খুশবন্ত সিংয়ের ট্রেন টু পাকিস্তান বইয়ে দিল্লী থেকে আগত ট্রেন ভর্তি লাশের কথা পড়েছিলাম। আর ‘সিজনস অব বিট্রেয়াল’ বইয়ে ছোট্ট জামুর বয়ানে দিল্লীতে পাকিস্তান থেকে আগত ট্রেন ভর্তি লাশের কথা পেলাম। আরও পেলাম একটি ভয়ানক খবর ১২ ফেব্রুয়ারী ১৯৫০ সালে ভৈরব-আখাউড়া লাইনের ট্রেন মেঘনার ওপর দাঁড় করিয়ে সমস্ত হিন্দু যাত্রীকে হত্যা করা হয়, যারা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন প্রাণ বাঁচাতে, তাদের মাথায় ইঁট ছুঁড়ে হত্যা করা হয়! এই নিহতদের মধ্যে ছিলেন যুঁইয়ের কাকা মনীশও।

    পুরো বইটাই আসলে একটি ভয়াবহ সময়ের প্রামাণ্য দলিল। এর প্রতিটি পাতাতেই কোন না কোন তথ্য আছে। আরেকটা দারুণ ব্যপার হচ্ছে বইয়ে আছে প্রচুর বইয়ের রেফারেন্স, যা অনুসন্ধিৎসু পাঠকের জন্য সোনার খনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে লাজবন্তী কাউরের বয়ানটি পড়তে উৎসুক, যিনি শিখখি রক্ষায় কুয়োতে ঝাঁপিয়ে পড়েও বেঁচে গেছেন।

    দ্বি-জাতিত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের চরম মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের ১৯৪৬ এবং ১৯৫০ সালে। সে বিষবাষ্প রয়ে গেছে আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সাম্প্রদায়িকতার যে নিদর্শন পাই বাংলাদেশের বিভিন্ন নিউজ পোর্টালের মন্তব্যঘরে, ভারতের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে এবং আমাদের আশেপাশে- তা এই বিষবাষ্পেরই ফল।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন