এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সুকি | 90045.205.012323.46 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:২৫381853
  • পাই আদেশ দিল যে একটা টই করে নিমো গ্রামের গল্পগুলো লিখে রাখতে। পাই-য়ের আদেশ তো আর ফেলা যায় না!
  • সুকি | 90045.205.012323.46 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:২৬381921
  • ল্যান্ডমার্ক
    --------------------------------------------------

    সেদিন HDFC ব্যাঙ্ক যা দাগা দিল আমায়, এমন যাতনা, বেদনা, দুঃখ আমায় বহু দিন কেউ দেয়নি! ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য আমি কাগজ পত্র সব ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে এলাম – ওদের সিষ্টেমে এবার আমার নিমো গ্রামের ঠিকানা থাকবে। বাড়ি ফিরে আসার পর বিশাল এক কাজ করে এসেছি ভেবে খেয়ে দেয়ে একটু ন্যাপ নিতে গেছি, ওমা দেখি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ফোন করেছে। জিজ্ঞেস করে কি, “আচ্ছা, আপনার নিমো-র বাড়ির ঠিকানাটায় ‘ল্যান্ডমার্ক’ কি লিখব ?”

    আমি বাকরুদ্ধ! নিমো গ্রামে ঢুকে সুকান্ত ঘোষের বাড়ি যাব, এটা সাফিসিয়েন্ট না? আমার বাড়ি বোঝাতে ‘ল্যান্ডমার্ক’ লাগবে? আমার কাছ থেকে এটুকুও তুমি কেড়ে নিলে! এই গরীবের আর বিশেষ কিছু ছিল না, গ্রামে এক ডাকে সবাই চেনে এই প্রাইড ছাড়া। অবশ্য এই একডাকে সবাই চেনে ব্যাপারটা নিমোতে শুধু আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এমন নয় – ভেলু বাপন, তবলা, পালেদের গণশা জ্যাঠা, মোটা শৈলেন, সুমন কুমার সহ আমরা প্রায় সবাই নিজেরা নিজেদের ল্যান্ডমার্ক! আমি এই কথোপকথন ভাবছিঃ

    - দিদি, সুকান্ত ঘোষের বাড়ি যাব – কোনদিকে বলতে পারেন?

    জেলেদের জয়ন্তী ঘুঁটে দিতে গিয়ে থেমে গিয়ে প্রশ্নকর্তাকে জিঞ্জেস করছে

    - কোন সুকান্ত ঘোষ? ‘ল্যান্ডমার্ক’ জানা আছে বাড়ির?

    এটা ভেবে আমার ঘুম এল না দুপুরে – খুব মন খারাপ করে শুয়ে রইলাম। চিরকাল চিঠি এসেছে, “সুকান্ত ঘোষ, নিমো, বর্ধমান, ওয়েষ্ট বেংগল” এই ঠিকানায়। সেই বিশে হালদার পোষ্টমাষ্টার – মিতা ময়রার চিঠি বিলি – আর গোষ্ট হালদারের ডাক নিয়ে আসা কম্বিনেশন থেকে ইদানিং সৃষ্টির পোষ্টমাষ্টার বউ আর সৃষ্টির নিজের চিঠি বিলি করা – এর কোন কিছুর মাঝেই তো ‘ল্যান্ডমার্ক’ আসে নি!

    সুকান্ত ঘোষের চিঠি আসবে নিমো গ্রামে আর তাতে ‘ল্যান্ডমার্ক’ লেখা! এমন দিনও দেখতে হল প্রভু!
  • সুকি | 90045.205.012323.46 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:২৮381932
  • বিট্টুর ভ্যালেনটাইন
    ----------------------------------------------------------------

    নিমো গ্রামের পাবলিক আলাদা করে ভ্যালেনটাইন দিবসে বিশ্বাস রাখে না – আমরা বিশ্বাস রাখি যখন তখন জীবনে প্রেমের প্রবেশে এবং ঝুট ঝামেলা এমব্রেস করে প্রেমাকাঙ্খী দুরন্ত যৌবনকে পথ দেখাতে

    এই মাত্র গত সপ্তাহের কথা বলছি, সরস্বতী পূজোর একদিন আগের ব্যাপার। আমাদের গ্রামের কলঘরের বিট্টু-এর বাড়িতে সকাল সকাল চলে এ্সেছে পাশের মেমারী থেকে তার প্রেমিকা। সেই মেয়ের মতে এ চলে আসা যাকে বলে পার্মানেন্ট চলে আসা! কারণ তার নাকি বিয়ের ঠিক করেছে তার বাবা।

    বিট্টু-এর বাবার জিনিস চরমে উঠে গ্যাছে। একে তো ছেলে প্রেম করছে জানা ছিল না – তার পর সকালে বিড়ি ধরিয়ে ঠিক ঠাক পায়খানা নামাবার আগেই জলজ্যান্ত বৌমা বাড়িতে হাজির – সে এক জটিল অবস্থা। মেয়ে বসে আছে বাড়ির দুয়ারে – ইনিশিয়াল ডিল করছে ছেলের বাবা।

    - ও মেয়ে, তুমি কি দেখে এই ত্যাঁদড় ছেলেকে পছন্দ করলে মা?

    মেয়ে উত্তর দেয় না। এদিকে খবর চলে গ্যাছে ততক্ষণে মেয়ের বাবার কাছে – মেয়ের বাবা পাকা লোক, নিজে ঝটপট করে না এসে একটু খুঁজে পেতে সাথে করে মেমারীর এক পার্টির নেতাকে সাথে করে নিয়ে এসেছে।

    মেয়েকে বোঝানো হচ্ছে –

    - তুই বাড়ি চল এখন। ঠিক আছে রে তোর বিয়ে এখন দেব না। তুই আগে পাড়াশুনা শেষ কর, তারপর যদি এই ছেলেকেই বিয়ে করতে চাস, তাই না হয় হবে।

    মেয়ে তো আর হিন্দী/বাঙলা সিনেমা কম দ্যাখে নি! রঞ্জিত মল্লিক টাইপ আচরণও তার জানা – পাখি একবার খাঁচায় ঢুকে গেলে, কন্ট্রোল চলে যাবে খাঁচাওয়ালার হাতে। মেয়ে বলে একবার যখন বেরিয়ে এসেছি, বিয়ে করে এই ছেলের বাড়িতেই থাকব। না হলে বাড়ি ফিরে সুইসাইড!

    পাশ থেকে সুইসাইড শব্দটা শুনেই বিট্টু-র বাবার হয়ে গ্যাছে – সাথে দেখেছে মেয়ের বাপের সাথে পার্টির নেতা। এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে পারে একজনই – সুমন কুমার ওরফে রাজু। রাজু হল গিয়ে আমাদের গ্রামের প্রথম এবং একমাত্র শিল্পপতি – অগুনতি ছেলের অন্নদাতা, নিমো গ্রামের পার্টির স্তম্ভ এবং ইয়ং ছেলেদের এনজয়মেন্টের পথ প্রদর্শক। খবর পেতেই রাজু চলে এল তার বুলেটে করে। এখন বিট্টুর কেসে রাজুরও একটু ভেষ্টেট ইন্টারেষ্ট আছে – কারণ রাজুর কারখানাতেই বিট্টু কাজ করে। কিন্তু আত্মিক সম্পর্কর অজুহাতে কর্তব্যে অবহেলা করা রাজুর রুল বুকস্‌-এ নেই। ফলতঃ স্থানে পৌঁছে প্রথমে ব্যাপারটা বুঝে নি রাজু – এর পর প্রশ্ন শুরু হল মেয়েকে

    - এই তোর বয়স কত হয়েছে এখন?
    - কুড়ি
    - কিসে পড়ছিস?
    - ম্যাথ অনার্স সেকেন্ড ইয়ার
    - বলিস কি! তা তুই জানিস বিট্টু কি পাস?
    - জানি
    - কি বলেছে তোকে? কোন ক্লাস পাশ বলেছে?
    - মাধ্যমিক ফেল।
    - অ – তা হলে অন্তত একটা সত্যি কথা বলেছে তোকে!

    রাজু সেই একই রিকোয়েষ্ট করল মেয়েকে যা এর আগে বিট্টুর বাবা এবং মেয়ের বাবা দুজনাই করেছে। মেয়ের সেই এক গোঁ – একবার যখন বেরিয়ে এসেছি, বিয়ে করেই থামব! আর বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেলে সুইসাইড

    রাজু এবার বিট্টুকে জিজ্ঞেস করল – “কি রে বিট্টু, তুই কি বিয়ে করতে চাস”? যেভাবে মাথা নাড়ল বিট্টু তাতে ঠিক ক্লিয়ার হল না যে বিয়ে করলে সে বেশী খুশি নাকি মেয়ে বাড়ি ফিরে গেলে! রাজু সব কিছু মেপে নিয়ে মেয়ের বাবাকে ভারডিক্ট দিল –

    - দেখুন আপনি যদি মেয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে চান তাহলে বলুন, আমি পুরো রাস্তা ক্লিয়ার করে দিচ্ছি। কেউ আপনাকে আটকাবে না। কিন্তু ওই যে বাড়ি ফিরে গেলে মেয়ের একটা সুইসাইডের চান্স থেকেই যাচ্ছে!

    মেয়ের বাবা আর কি বলে! বিজবিজ করতে করতে – “আপনারা যা ভালো বোঝেন করুন” বলে বিদায় নিল।

    তার মানে কেস এবার পুরো নিমোর পাবলিকের হাতে। বিট্টু বলল বিয়ে করতে হলে সে শিমলাগড় কালীবাড়ি নয়ত বর্ধমান সর্বমঙ্গলা তলা – যেকোন এক জায়গাতে যাবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, উক্ত দুই ঠাকুর বাড়ি হল আমাদের ওদিকে প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করার সেফেষ্ট বেট – ওতে নাকি বিয়ে বেশী দিন টিকে থাকে, ঠাকুর জাগ্রত।
    রাজু জিজ্ঞেস করল বিট্টু-কে

    - তোর পকেটে ক টাকা আছে?
    - সাড়ে ছয়শো
    - এই টাকা দিয়ে তুই শিমলাগড় – বর্ধমান যাবি? গাড়ি ভাড়া দেবে কে? সাড়ে তিন হাজার আছে আমার পকেটে, এর বেশী তোর বিয়েতে আমি এক পয়সাও খরচা করব না।

    পাশ থেকে বিট্টুর বাবা জানিয়ে দিল, এই বিয়েতে তিনি এক পয়সাও কনট্রিবিউট করবেন না – ফিলসফিক্যালি তিনি এই বিয়ে মেনে নিতে পারছেন না।

    তাহলে ঠিক হল বিয়ে হবে নিমো শিবতলায়। বিয়ে করে বাড়ি ঢোকার আগে সবাই একবার নিমো শিবতলায় প্রণাম করে গেলেও, শিবতলাতেই বিয়ে হয়েছে এমন উদাহরণ বেশী নেই। তাই সে এক প্রবল হই হই ব্যাপার। প্রথম প্রাকটিক্যাল প্রবলেম হল, ছেলে-মেয়ে কি করে শিবতলায় যাবে? মানে যেখানে আলোচনা হচ্ছিল সেখান থেকে শিবতলা প্রায় ১ কিলোমিটার – নতুন হোনেবালা বউ হেঁটে যাবে সেটা তো আর হতে পারে না! এমন ত্রাতা হয়ে দেখা গেল আমাদের গ্রামেরই ড্রাইভার মুকুলকে! সে সবে কার যেন ভাড়া খেটে গ্রামে ফিরছিল! ব্যাস মুকুলকে অর্ডার দেওয়া হল যে বিট্টু এবং তার ভাবী বৌকে নিয়ে শিবতলা যাও।

    গাড়িতে উঠে বিট্টু জিজ্ঞেস করল রাজুকে, “বিয়ে তাহলে কোন বামুন দেওয়াবে?” আমাদের নিমো সোনার বাংলা ক্লাবের স্ট্যান্ডবাই বামুন হচ্ছে সম্রাট – কলেজে পড়া ভদ্র সভ্য নোয়াপাতি ভুঁড়ি নামানো বাচ্চা ছেলে। বিট্টুকে বলা হল, কে আবার সম্রাট-ই বিয়ে দেওয়াবে! বিট্টু বলল, “পায়ে পড়ছি তোমাদের, ভালো বামুন এনে দাও। কি উল্টোপাল্টা মন্ত্র বলে দেবে – যদি বিয়ের পরে প্রবলেম দেখা দেয়!” ঠিক হল তাহলে লাল্টুর বাবা গদা বামুন-ই বিয়ে দেবে – গদা বামুন অথেন্টিক। চৈত্রে গাজনে ওই গদা বামুন-ই শিবের মাথা থেকে ফুল পড়ায়! মানে শিবতলায় ওর থেকে অথেন্টিক আর কিছু হতেই পারে না। গদা বামুন কাদের বাড়ি ব্রাহ্মণ ভোজন করতে গিয়েছিল – তাকে জরুরী তলব দিয়ে আধ-খাওয়া অবস্থায় তুলে নিয়ে বিয়ে দিতে আনা হল।

    ছেলে-মেয়ে যতক্ষণে নিমো শিবতলায় পৌঁছল, ততক্ষণে সে জায়গা লোকে লোকারন্য – পাবলিকের ডোনেশনে বিয়ের জিনিস পত্র পুরো প্রস্তুত। রাজুর দেওয়া সাড়ে-তিন হাজার দিয়ে বেনারসী এসেছে (জানি না সে কেমন বেণারসী – চায়না মেড মনে হয়), কেউ মিষ্টীর ভার নিয়েছে, কেউ ফুলের। হই হই করে বিয়ে হয়ে গেল – বাড়িতে অনুষ্ঠান করে বিয়েতে অত শাঁখ বাজাবার আর উলু দেবার লোক পাওয়া যায় না, বিট্টুর বিয়েতে এত শাঁখ আর উলু পড়েছিল!

    বিয়ের পরে আমাদের দিকে করতে হয় গিয়ে দীন – মানে দীন করা বাবা-মা পাতাতে হয়। এবার কেস হল, এমন জটিল কেসে কে আর বাবা-মা হতে চায়! পঞ্চায়েত সদস্য মজনুদা বলল, “নিতাই, তুমি এদের দীন করা বাবা হবে। যাও বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে এসে আশীর্বাদ কর”। নিতাই আর কি করে, সদস্যর কথা তো আর অমাণ্য করা যায় না। বাড়ি গিয়ে দুটো- একশো টাকার নোট নিয়ে এসে একশো বিট্টুর বুক পকেটে গুঁজে আর একশো বউ-এর হাতে দিয়ে আশীর্বাদ সারল।

    সেই টাকা দেখে মুকুল ড্রাইভারের মাথায় টাকার কথা চেগে উঠল। সে গিয়ে রাজুকে কানের কাছে ফিসফাস করে বলে, “রাজু, দেখিস আমি যেন গাড়ী ভাড়া বাবদ কিছু পাই”।

    বিয়ে শেষ হয়ে বিট্টু বৌ নিয়ে শিবতলা থেকে গাড়ী চাপল বাড়ি ফিরবে বলে। রাজুর গাড়ির জানলার কাঁচের কাছে গিয়ে বিট্টু-কে ফিসফাস করে বলল যে, “তোর বুক পকেটে নিতাই-য়ের দেওয়া যে একশো টাকাটা আছে, ওটা নামার সময় মুকুলকে দিয়ে দিস”!

    মাধ্যমিক ফেল ম্যাথ অনার্সের হাত ধরে গাড়িতে চেপে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল।
  • dd | 670112.51.8912.149 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:০৩381943
  • বিউটিফুল হচ্ছে।

    মানুষজন ছাড়াও, নিমোর বিখ্যাতো কুকুর, ষাঁড়, ব্যারাল,কাগ ও ভুতেদের গল্পোও শুনতে চাই।
  • ন্যাড়া | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:৫৯381954
  • বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নিমোর জায়গা পাকা। এর আগে যেগুলোতে নিমো ব্যাকাগ্রাউন্ডে ছিল, সেগুলোও তোলা হউক।
  • San | 015612.242.5667.236 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১০:০৩381965
  • এই নিমো গ্রামের গল্প পড়ে পড়ে কেমন বেশ চেনা জায়গা হয়ে গ্যাছে :) :)
  • সুকি | 90045.205.012323.46 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:৫৯381976
  • আইনষ্টাইন যে সব কিছুই ঠিক ঠাক প্রেডিক্ট করে গিয়েছিলেন এমনটা মোটেও পুরোপুরি সত্যি খবর নয়। ইনফ্যাক্ট ওই শক্তির নিত্যতা সূত্র নিয়ে যা বলে গিয়েছিলেন তাতে তো আমার সলিড ডাউট আছে – কি করে জানলাম? কেন এই নিজেকে দেখে!

    হয়ত আপনারা আজকাল আর বিশ্বাস করবেন না – কিন্তু এককালে আমারও পোটেনশিয়াল ছিল। অন্য কেউ না বুঝতে পারলেও, আমি নিজে টের পেতাম। নিজের গা, হাত পায়ের দিকে তাকালেই শিউড়ে উঠে পোটেনশিয়াল নিয়ে কি করব ঘুলিয়ে ফেলতাম। কিন্তু কালে কালে সেই পোটেনশিয়াল তাহলে কিসে কনভার্ট হল? ত্যাঁদরামো, ছ্যাঁচরামো এবং হারামিগিরি ছাড়া অন্য কিছুতে কনভার্ট হবার কোন প্রমানই আমি পাই নি এখনো।

    দিন ভালোই চলছিল – নিমো গ্রামের কোন পাবলিক আশেপাশের হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে ফার্ষ্ট হয় নি! মানে ফার্ষ্ট হবার দরকারই ছিল না। আমি গেলাম ফেঁসে সেই ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সে উঠার সময় ফার্ষ্ট হয়ে! মেমারী থেকে ট্রেনে করে বাড়ি ফিরছি প্রচন্ড টেনশন নিয়ে – শালা, এই ফার্ষ্ট হবার চক্করে বন্ধুমহলে আমি একঘরে হয়ে যাব না তো! কি করে কি ট্যাকেল করব ভাবছি – আর ভাবছি আমি ফার্ষ্ট হলামটা ঠিক কি করে! আর এতো মেমারীর ছেলে রয়েছে, সবাইকে বাদ দিয়ে আমাকেই ফার্ষ্ট করার কি দরকার ছিল স্যারদের!

    যাই হোক গ্রামে পৌঁছে দেখলাম, টেনশনের কিছু নেই। ট্রেন থেকে নেমে গ্রামে ঢুকে প্রশ্ন এল, “পাশ করেছিস”? আমি বললাম, ‘হ্যাঁ’। ব্যাস – কেস খতম! এর পর তো আর বেশী কিছু কথা হতে পারে না। কত ভাগ মার্কস পেয়েছিস, ক্লাসে ফার্ষ্ট হল কার ছেলে – এই সব প্রশ্ন আমাদের বাল্য জীবনে অজানা ছিল। বাড়ি ফিরে বাবা-মাকে মার্কসিট দ্যাখানো, সে প্রস্তাবনা তো এক অবাস্তব ব্যাপার! অবশ্য একবার নাকি এই সাম্য অবস্থার বিচ্যুতি হয়েছিল পালপাড়ায় – কেলো দালাল নাকি তার ছেলে মানু পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে বাড়ি ফিরলে মার্কশিট দেখতে চায়। বলাই বাহুল্য কেলো দালাল ইংরাজী জানে না – আর মার্কশিট চাইবার আগে তার জানাও ছিল না যে মার্কস গুলো ইংরাজী হরফে লেখা থাকতে পারে! কিন্তু কেলো দালাল দমবার পাত্র নয় – মার্কশিট হাতে নিয়ে তার ডায়লগ এখনো আমাদের পাড়ায় ফেমাস হয়ে আছে –

    -“হুম, তাহলে মানু এতে এতো ”

    এমন ভাবে ভালোই চলছিল – মেমারী বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দির উচ্চবিদ্যালয়ে বছর বছর ফার্ষ্ট হচ্ছি, কিন্তু গ্রামে কেউ জানে না বা কেয়ার ও করে না – সে এক আনন্দময় জীবন। কিন্তু সব আনন্দেরই পরিসমাপ্তি হয় এক সময়। আমার জীবনে সেই আনন্দের পরিসমাপ্তি ঘটালো, স্কুলের শতবর্ষ উদযাপন। কথিত আছে বিদ্যাসাগর মারা যাবার আগের বছর নাকি আমাদের স্কুলের ভিত্তিস্থাপন করে যান। তো সেই হিসাবে ১৯৯১ সালে আমাদের স্কুলের শতবর্ষ হবার কথা। কিন্তু যা হয় আর কি – পাবলিক ১৯৯১ সাল থেকে চাঁদা তুলতে শুরু করল বিশাল অনুষ্ঠান হবে বলে। বার্ষীক পুরষ্কার বিতরণ বন্ধ হয়ে গেল তিন বছর, বলল যবে শতবর্ষ হবে, সেই ফাংশানে নাকি বড় কারো হাত দিয়ে আমাদের পুরষ্কার দেওয়া হবে! এই করতে করতে শেষ পর্যন্ত ১৯৯৩ সালে সেই অনুষ্ঠান হল এবং আমার লাইফে শান্তির পরিসমাপ্তি।

    তখন যতদূর মনে পড়ছে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন সত্যসাধন চক্রবর্তী – তো তাঁর হাত থেকে পুরষ্কার-টুরষ্কার নিয়ে ট্রেনে করে ফুরফুরে মনে ফিরছি। ফুরফুরে ভাবটা সত্যসাধনের জন্য বা পুরষ্কার পাবার জন্য নয় – সত্যসাধনের দৌলতে টিফিনটা জবরদস্ত দিয়েছিল! আমাদের লাইফে টিফিনের গুরুত্ব পরের কোন একবার লিখব। তো, বড় বড় দুটো ব্যাগ হয়ে গ্যাছে – এই এক গাদা বই পেয়েছি। নিমো ষ্টেশনে রাত আট-টার ট্রেনটায় নেমে ব্যাগ নিয়ে স্ট্রাগল করতে করতে বাড়ি ফিরছি – আমাদের বাড়ি যেতে হয় নিমো শিবতলা পেরিয়ে। আর সেই শিবতলায় তখন তাস খেলা বা বয়ষ্কদের গুলতানি চলে। আমার হাতে দুটো বড় বড় ব্যাগ দেখে, শিবে জ্যাঠা বলল –

    -বাঃ, ভালো করেছিস। এই ফালতু ইস্কুলে গিয়ে সময় নষ্ট না করে ব্যবসায় ঢুকে পড়েছিস। তোর কাকা আর কতদিন টানবে দোকানটা একা একা। তা কি মাল আনলি কলকাতা থেকে ব্যাগে করে?

    প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মেমারী ষ্টেশন বাজাদের আমাদের স্টেশনারী, ঔষূধ এবং কাপড়ের দোকান ছিল। আমি শিবে জ্যাঠাকে বললাম,

    -না গো জ্যাঠা, ব্যাগে বই আছে
    -বই? আবার ফালতু বই ব্যবসায় নামলি কেন?
    -আরে ব্যবসায় নামি নি জ্যাঠা – এগুলো প্রাইজের বই।
    -তা লোকের প্রাইজের বই তুই রাতের বেলায় বইছিস কেন?
    -লোকের নয় গো, আমি প্রাইজ পেয়েছি।

    শিবে জ্যাঠা নড়ে চড়ে উঠল – ক্রিকেট খেলায় জিতলে আবার কবে থেকে বই দিতে শুরু করল!

    -কিসে প্রাইজ পেয়েছিস বই?
    -ওই তো ইস্কুলে ফার্ষ্ট হয়েছি বলে প্রাইজ দিল!

    শিবে জ্যাঠা পুরো স্তব্ধ – মুখ দেখে মনে হল হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে। আমার দিকে আর তাকাল না, আকাশের দিকে মুখটা তুলে একট দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। দিয়ে কাঁধের গামছাটা দিয়ে বুড়োশিবের দুয়ারটা ঝেড়ে শোবার তোড়জোড় করতে করত বলল –

    -তুইও ক্লাসে ফার্ষ্ট হচ্ছিস! দেশটার কালে কালে কি অবস্থা হল!

    শিবে জ্যাঠার উপরের ডায়লগ আমার জীবনে বোধিজ্ঞান লাভের মত। ওই পরবর্তী কালে জেনেছি, একে লাইফের টিপিং পয়েন্ট বলে। আমি ভাবতে শুরু করলাম – সত্যিই তো, শিবে জ্যাঠা ঠিকই বলেছে – আমি ফার্ষ্ট হওয়া মানে দেশের অবস্থা প্রকৃতই খারাপ!

    আমি সেদিন, সেই মুহুর্ত থেকেই আর মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।

    বইয়ের ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ঢুকে বুঝলাম, আমার পড়াশুনা আর না করার সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক। অত বই দেখে বাবা বলল, “এতো বই পাবার কি দরকার ছিল! এখন বেচা কামারকে ডেকে আবার আলমারী করাও!”

    শিবে জ্যাঠাকে আমি আর বেশী ঘাঁটাই নি – আমার পরবর্তী ইস্কুল কলেজের গতিবিধির ব্যাখ্যা জ্যাঠা নিজের মত করে নিয়েছিল। আমি বি ই কলেজ থেকে মাজে মাজে শনিবার হাওড়া থেকে যে মেন লাইন লোকালটা ২.২০ তে ছাড়ে, সেটায় ফিরতাম। আর সেই ট্রেনেই আমার সাথে কলকাতায় চামড়া কারখানায় কাজ করা ঘোষ পাড়ার পাপাই ফিরত। তা দেখে শিবে জ্যাঠার সিদ্ধান্ত ছিল যে আমি পাপাইয়ের সাথে চামড়ার কারখানায় কাজ করতে ঢুকে গেছি! তারপর যখন জ্যাঠা জানতে পারল যে আমি কানপুর গেছি, তখন বুঝে নিল যে আমি আরো বড় চামড়ার কারখানাতে কাজ পেয়েছি!

    একটাই শান্তি যে শিবে জ্যাঠাকে আমার তরফ ইংল্যান্ডে যাবার খবরটা দিতে হয় নি – কারন সেটা ব্যাখা করা হয়ত একটু চাপের হত। বৃটিশ আমলের লোক হবার জন্য ইংরাজদের প্রতি শিবে জ্যাঠার এক সম্ভ্রম, ভয়, শ্রদ্ধা – এই সব ছিল। আমাকে বিলেতের ইস্কুল থেকে স্কলারশিপ দিয়ে পড়ার জন্য ডেকেছে এবং তার পর এটা সেটা পুরষ্কারও দিয়েছে – এটা দেখে ইংরেজদের অবক্ষয় নিয়ে আক্ষেপ এবং মানসিক যন্ত্রনা ভোগ করার আগেই শিবে জ্যাঠার জীবনবাসনা হয়। আমার কাছ থেকে জ্যাঠা ওই একবার ছাড়া আর কোনদিন কষ্ট পায় নি।
  • | 230123.142.560112.254 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:৩৮381987
  • টোটাল টোটাল
  • সিকি | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩০381998
  • এটা চ্রম! শিবেজ্যাঠার শান্তিকামনা করি আর সুকিকে আশীর্ব্বাদ করি।
  • সুকি | 90045.205.012323.46 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:২২381854
  • রব উইন্সলি-কে নিমো গ্রামের গল্প শোনানোই আমার মস্ত ভুল হয়ে গিয়েছিল! সে ব্যাটা জাত ইংরেজ, ওই হ্যারী পটার সিনেমায় যে স্কুল বিল্ডিং-গুলো দেখায় সেগুলোরই কোন একটা থেকে পড়াশুনা করে তার পর আবার কেমব্রীজ! নীরদ সি এই জাতীয় ছেলে দেখলে খুব খুশী হত মনে মনে। সে ব্যাটা বাঁধাকপি যে জমির উপরে একফুট উচ্চতার মধ্যে হয় সেটাই জানত না! একদিন কি যেন এক সিরিয়াস আলোচনা হচ্ছিল – ও হ্যাঁ, জন পল ল্যাবে আলোচনা শুরু করেছিলাম কেন ইংরেজ সার্জেন্ট-দের বন্দুক ক্যারী করতে দেওয়া হবে না! ইংল্যান্ডে স্ট্রীট ক্রাইম খুব বেড়ে যাচ্ছে – আর তার পরে জন পলের বোন পুলিশে চাকুরী করতে ঢুকেছে! তার প্রবল চিন্তা যে রাতের বেলায় ব্রড স্ট্রীটে মাতাল-জাত ক্রাইম সামলাতে ওই লঙ্কা গুঁড়ো স্প্রে কতটা কার্যকারী হবে!

    আমাকে রব জিজ্ঞেস করল যে, আমাদের দিকে এমন ক্রাইম আছে কিনা। আমি বললাম, “দ্যাখ, আমি তো নিমো গ্রামের ছেলে। তারপর আমাদের দাদুরা গান্ধী-র সময়ে অসহযোগ আন্দোলন করে স্বাধীনতার পরে কি সব পদক টদক পয়েছিল সরকারের কাছ থেকে। তাই আমাদের গ্রাম মূলত অহিংসার পূজারী”। মূল কথাটা আর বললাম না – আমাদের দাদু গুলো বেশীর ভাগই প্রবল ভীতু ছিল – তাই সহিংস জিনিসটা ওরা ভাবতেই পারত না! রব জিঞ্জেস করল, “তাহলে তোদের গ্রামে কারো উপর রেগে গেলে কি করিস তোরা?” আমি বলললাম, “কেন, আমরা অহিংস ভাবে প্রতিশোধ নিতাম”!

    অহিংস ভাবে প্রতিশোধ নেওয়া কি জিনিস সেই কনসেপ্টে রব ঘাবড়ে গেল – এ যেন অনেকটা চীনে কমিউনিজমের মত! ফলত উদাহরণ দিয়ে হল – যেমনটা বায়োলজির আনোয়ার স্যার বলে গিয়েছিলেন, ‘সর্বদা উদাহরণ দিয়ে কথা বলবে”। আমি রব-কে বোঝালাম, “দ্যাখ – আমাদের গ্রামে প্রায় সবাই তো চাষা। ধর এমন একজনের সাথে ঝামেলা হল যে তখন জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছে। তো আমরা মাঠে গিয়ে, হালকা করে বাঁধাকপির পাতার ভাঁজগুলো সরিয়ে হেগে দিয়ে এলাম এমন ভাবে যে চট করে হাগাটা পাতার ফাঁকে দেখা যায় না! এবার সে জমিতে বাঁধাকপি তুলতে গিয়ে যেই টান মারবে – হেঁ, হেঁ বুঝতেই পারছিস গু-টা কেমন ছড়িয়ে পড়বে তার গায়ে”।

    এটা একটা নিরীহ গল্প – মানে এতে হাসির কিছুই থাকতেই পারে না! কিন্তু ওই যে বলে গোরা-দের মনের কথা বোঝা ভার! কি থেকে যে কে আনন্দ পায়! এই রিভেঞ্জের গল্প শুনে রব হেসে কুটোকুটি! আমাকে জিঞ্জেস করল – “এটা কি ট্রু স্টোরী”? ট্রু-স্টোরী কি জিনিস আমি স্বভাবতই জানতাম না – আমাদের কাছে বক্তব্য দুই প্রকার – গুলতাপ্পি নয়ত ঘটনা। তখন আবার রব আমাকে ঘটনা – প্রকৃত ঘটনা – স্টোরী – ট্রু-স্টোরী – এই সবের ইংরাজী সংজ্ঞা নিয়ে কিছু ফান্ডা দিল।

    এর পর থেকে রব আমাকে মাঝে মাঝেই নিমো গ্রামের গল্প বলতে অনুরোধ করত। আমিও বলতাম, কি করব – যতই হোক তিনশো বছর আমাদের প্রভুত্ব করেছে। গল্প গুলোর মধ্যে যেটা হিট করেছিল সেটা হল আমার বড় জ্যাঠার বাঘ মারার গল্প! ভাবা যায় এক প্রবল অভিজাত ইংরাজের বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে নিমো উন্নত অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইংরাজী শিক্ষা প্রাপ্ত এই আমি রব-এর গোটা পরিবার-কে আমার জ্যাঠার বাঘ মারার গল্প শোনাচ্ছি!

    নিমো গ্রামে একবার বাঘ এসে নাকি আশ্রয় নিল গ্রামের পশ্চিম দিকের তালপুকুরের জঙ্গলে। তালপুকুর এবং তার চারপাশের জঙ্গল ছিল আমাদের ঘোষ বাড়ির পাশে ষষ্ঠি ডাঙা মাঠ, বনধারা-র পাড় এবং তার ঠিক পরেই তালপুকুর। আমাদের বাড়িতে দুটো আগ্নেয়াস্ত্র – একটা রাইফেল এবং একটা দো-নলা বন্দুক। গ্রামের লোক যখন শব্দ করে, পটাকা ফাটিয়ে – টিন বাজিয়ে বাঘ তাড়াবার ব্যবস্থা করছে, তখন বড় জ্যাঠা বলল সে বন্দুক নিয়ে বাঘ মারতে যাবে! জ্যাঠার হাতের টিপ নিয়ে কেউ আর কিছু বলতে চায় না – আর গ্রামের বা বাড়ির কেউই জ্যাঠার সাথী হতে রাজী হল না। জ্যাঠা বলছে, “কেউ আমার সাথে গিয়ে শুধু বাঘটা স্পটিং-এ হেল্প করে দাও, বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি”!

    জ্যাঠার ‘দেখে নেওয়া-তে’ কারো বিশ্বাস ছিল না – কারণ কিছু দিন আগেই জ্যাঠা পানকৌড়ি মারতে গিয়ে রামাশীষের পাছায় ছড়রা ঢুকিয়েছে। আমাদের বাড়ির কংগ্রেস আমলের গোল্ডেন সময়ের গল্প অন্য একসময় করব – সেই আমলে জ্যাঠারা ছিল প্রায় বিনতুকলঘের সমতূল্য। আমার মেজ পিসেমশাই আবার জ্যাঠার বয়সী বলে সেই সময় দুজনে নিমোতে ফালতু তাহেলকা মাচাত প্রচুর। একদিন মেজ পিসে কলকাতা থেকে ছড়রা বন্দুক কিনে এনে বলল – “বড়দা চল বালি হাঁস আর পানকৌড়ি মেরে আনি”। বড় জ্যাঠা তো একপায়ে খাড়া – দুজনে পাখি মারতে বেরোল গ্রামের পাশে যে এক বিশাল পুকুর বা দীঘি টাইপের আছে সেখানে। চুপিচুপি দুজনে গিয়ে পুকুর পাড়ে ঘাসের উপর শুয়ে পাখির জন্য ওয়েট করছে – পাখি এসে বসবে পুকুরের মাঝেখানের রাখা কোন এক ‘পালা-এ’। পুকুরে যাতে যে কেউ জাল টেনে না নেয় বা মাছেরা খেলা করে – এই সব কি আলবাল কারণে মরা গাছের ডাল পুকুরে ছড়ানো থাকত সেই সময়ে আমাদের দিকে – তাকেই বলত ‘পালা’। সেই গাছের ডাল কিছুটা জলের থেকে উপরে উঠে থাকত। জ্যাঠাদের ওয়েটের শেষ করিয়ে পানকৌড়ি এসে বসল সেই পালাতে। বড় জ্যাঠা তাক লাগাল বন্দুক দিয়ে।

    দূর্ভাগ্য বশত পুকুরের ওপারে খেজুর গাছে তখন রস পাড়তে উঠেছিল রামাশীষ। বড় জ্যাঠার ফায়ার করা ছড়রা পানকৌড়ির গায়ে না লেগে গিয়ে ঢুকলো রামাশীষের পাছায়। যাঁরা জ্যামিতি বোঝেন তারা খুব সহজেই খেজুর গাছের উচ্চতা ‘ধরে’ নিয়ে, জ্যাঠা মাটিতে শুয়ে ফায়ার করেছে এটা কনসিডার করে পুকুরের প্রস্থ বের করে ফেলবেন! পাছায় ছড়রা ঢুকিয়ে রামাশীষ বর্ধমান হাসপাতালে। প্রশ্ন করতে পারেন পুলিশ কেস হয় নি? কংগ্রেস পিরিওডে ঘোষ বাড়ির পাবলিকের বিরুদ্ধে পুলিস কেস হবে এ প্রস্তবনা এতোই অবাস্তব যে আমি এমন প্রশ্ন কেবল ফেসবুকেই সম্মুখীন হতে পারি!
    তো রামাশীষের টাটকা ঘটনা মনে রেখে গ্রামের কেউ তো আর জ্যাঠার সাথে বাঘ মারতে যেতে রাজী হল না। জ্যাঠা তখন সাঁওতাল পরগণা থেকে আমাদের জমিতে ধানের সিজনে কাজ করতে আসা রাম-কে নিয়ে রওনা দিল। জ্যাঠার হাতে বন্দুক আর রামের হাতে লাঠি। দুজনে গেল তালপুকুরে। তারপরে প্রকৃত কি হয়েছিল সেটা জানা যায় তিন মাস পর পি জি হাসপাতাল থেকে রাম ছাড়া পাবার পর। রাম জানায় যে, দুজনে তো তালপুকুরের পাড়ে বাঘ খুঁজতে উঠল – বাঘ খুঁজছে, বাঘ খুঁজছে। বেশ কিছু পরে এক বিকট হালুম শব্দ কাছে পিঠে। সেই শব্দ শুনেই বড় জ্যাঠা বন্দুক ইত্যাদি ফেলে দিয়ে তালপুকুরের জলে ঝাঁপ! রাম খেল ঘাড়ের পিছনে কাঁধের কাছে এক থাবা। ভাগ্য ভালো যে সে থাবা ঠিক যুতসই হয় নি! বর্ধমান হাসপাতাল রেফার করল কলকাতায় পিজি তে। সেখান থেকে তিনমাস পরে রাম নিমো ফিরল এবং সেখান থেকে নিজের বাড়ি। চাতাগ্নি গিয়ে গেল যে ‘বড়দা’ জমির আশেপাশে গেলে পরের বছর থেকে আর কেউ কাজ করতে আসবে না ওরা জমিতে।

    তো জ্যাঠার বাঘ মারার গল্প হল এই – এতে হাসার কি আছে আমি জানি না। কিন্তু রব এবং এবং তার পরিবার এই গল্প শুনে হেসে কুটোপুটি! এবং তার পরের তিন বছর রবের রিকোয়েষ্টে এই গল্প আমি অনেক পরিবারকে শুনিয়েছি, এমন কি কনফারেন্স ডিনারেও। সব সাহেব হেসে অস্থির - সাহেব জাতের মতি গতি বোঝা যায়!

    তবে বড় জ্যাঠার ইন্ডিয়ান স্ট্যানডার্ডের ঘটনা প্রচুর – সে গল্প অন্য কোন এক সময়!
  • Ruchira | 900900.67.3423.127 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১২:৩৮381865
  • এই গল্প ইঙ্গরিজিতে বলা খুব চাপ - এইসব চাতাগ্নি ফাতাগ্নি ... নাহ মশায়, আপনি ফার্স্ট বয়-ই বটে
  • ন্যাড়া | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:১৩381876
  • নিমোর গল্প একেবারে মর্দওয়ালি হিট।
  • sm | 2345.110.785612.195 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৫:৪৮381887
  • নিমোর গপ্পো গুলো এক একটা আবার খাবো সন্দেশ!তা, ন্যাড়া র গপ্পো গুলো ও তো বেশ তারিয়ে উপভোগ করছিলাম।
    আর আসছেনা কেন?
  • | 230123.142.560112.254 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:২০381898
  • এ মানে ছদ্মবেশী জেরোম।☺☺☺☺☺☺☺, লব লব লব লব
  • গবু | 2345.110.015612.152 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:৩১381909
  • দুর্দান্ত, দুষ্টুমীভরা, ইত্যাদি সব দুঃ যা হতে পারে! চলুক, চলুক!
  • I | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:৪০381917
  • আমি রুচিরা র সাথে একমত।এই গল্প ইংরেজিতে বলতে হলে তো শেক্ষপীড় হয়ে জন্মাতে হবে!
  • I | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৭381918
  • সুকি আমাদের অলরাউন্ডার।জিতা রহো বেটা।
  • সুকি | 90045.205.012323.46 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৬:৫৩381919
  • যারা লেখা পড়ছেন সবাইকে ধন্যবাদ।

    ডিডিদা, আস্তে আস্তে সব হবে।

    ন্যাড়াদা, তোমার গল্প কই। হেবি হচ্ছিল তো?

    হনুদা, ভালো থেকো। লেখা ভালো লেগেছে জেনে আমি আপ্লুত।

    রুচিরা, আমি এই গল্পই বলে ছিলাম ইংরাজী তে, আর আমার ইংরাজী তো বুঝতেই পারছেন! এখন আপনাদের কথা শুনে মনে হল সাহেব গুলো গল্প নয়, আমার ইংরাজী বিদ্যার বহর দেখেই হাসত মনে হ্য!

    বড় I কি ইন্দোদা? প্রণাম নেবেন।

    গবু, sm কেও সুক্রিয়া
  • Atoz | 125612.141.5689.8 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৬:৫৫381920
  • না না, আইনস্টাইন ভুল করেন নি। ওই পোটেনশিয়াল এখন কাইনেটিক হয়েছে। ঃ-)
  • dd | 670112.51.90012.46 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৮:১১381922
  • না, না, তাড়া কিসের। এই ত্তো বাঘ,হাঁস পানকৌড়ি এসে গ্যাছে। এবারে দু একটা জলোহস্তী আর খ্যাঁকশ্যাল এলেও খুব জমবে।

    তবে যেটা মিস করছি, নিমো গ্রামে কোনো নদী টদী নেই? একটাও না? নদী ছাড়া গ্রামের গপ্পো ক্যামন একটু ফ্যাকাশে লাগে। আমি বলি কি, বাঁকা নদীটাকে টেনে টুনে নিমো গাঁএর পাশে নিয়ে এলেই সবার মংগল হয়।
  • সিকি | 562312.19.4534.88 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৮:৪৭381923
  • এমনকি সী বীচও নেই। সেটাকেও একটু টেনে আনা যায় না?
  • amit | 340123.0.34.2 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৮:৫৭381924
  • বর্ধমানে সী- বিচ ? বলি হচ্ছেটা কি ?
  • সিকি | 562312.19.4534.88 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:০১381925
  • কোন্নগড়ে থাগলে বদ্ধোমান কী দোষ করল শুনি?
  • কুমু | 127812.79.3434.27 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১০:০১381927
  • সুকি,গল্পগুলো খুবি এনজয় করছি।অনেক লিখুন।
    রামাশীষের প্রতি ক্রিয়া কী ছিল?
  • কুমু | 127812.79.3434.27 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১০:০১381926
  • সুকি,গল্পগুলো খুবি এনজয় করছি।অনেক লিখুন।
    রামাশীষের প্রতি ক্রিয়া কী ছিল?
  • সুকি | 566712.225.450112.90 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১০:২৩381928
  • আপনারা এই ভাবে নদী, সী-বিচ এই সব গল্পে ঢুকিয়ে আমাকে সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত হতে বলবেন না প্লিজ! কারণ একবার যদি ইমাজিনেশন ব্যবহার করতে শুরু করি তা হলে কোথায় থামব নিজেই জানি না! হিমালয় থেকে সমুদ্র সব গল্প চলে আসবে।

    তবে ডিডি-দার কথার সূত্র হতে বলি - একটা 'নদীর ধার' ছিল বা আছে তো এখনো আমাদের গ্রামের পশ্চিম দিকে। সেই নদীর ধারে তো আবার আমাদের কয় বিঘে জমি আছে এখনো!

    কুমু-দি, রামাশীষের কোন বক্তব্য ছিল না। মানে সেই সময়ে বড় দাদুর কাছে গিয়ে বক্তব্য পেশ করার মত ক্ষমতা রামাশীষ বা তার বাপ-মায়ের কারোই ছিল না!
  • | 453412.159.896712.72 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১০:৪২381929
  • অ্যাই অ্যাই! কোন্নোগড়ের সিবিচ নিয়ে টানাটানি করবে না বলে দিচ্ছি। নিজেদের সিবিচ নিজেরা বানিয়ে নাও।

    হ্যাঁ নিমোর ভুতেদের কথা জানতে চাই।
  • kumu | 127812.79.3434.27 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১১:০৬381930
  • সুকি আমাকে চেনে দেখে যারপরনাই প্রীত হলাম।
    হ্যাঁ,কোন্নগরের সীবীচ নিয়ে টানাটানি করবার আগে দমু,কুমু ইত্যাদিদের শ্রীমুখ মনে রাখা ভাল।
  • Suhasini | 90045.206.4512.103 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১১:১৮381931
  • পাইয়ের এই আইডিয়া খুবই ভালো। এই সিরিজটা দারুণ প্রিয় - যে কোনও সময়ে মন ভালো করে দ্যায় শুধু নয়, রীতিমতো চাঙ্গা করে দ্যায়।
  • সুকি | 90045.205.012323.46 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:৩৪381933
  • অপারেশন থিয়েটার, মানে বারান্দার শেষের ওরই মধ্যে একটু বড় রুমে ঢুকে যাবার আগে মুকুল এক ফিলসফিক্যাল প্রশ্ন নিক্ষেপ করল ডাক্তারের দিকে –

    -ডাক্তার বাবু, আমি অপারেশনের পর আর বাবা হতে পারব তো?

    আধ ঘন্টা দরাদরি করে যে আপারেশনের রেট ঠিক হয়েছে সেই রুগীর প্রতি ডাক্তারবাবুর দরদ কতটা থাকতে পারে সেটা তাঁর উত্তর শুনে আপনার ডিসাইড করে ফেলুন

    -একটা থাপ্পড় লাগাবো চড়াম করে, বাবা হওয়া বেরিয়ে যাবে!

    আমি কিন্তু হলফ করে বলতে পারি মুকুলের সেই কনসার্ণ প্রচন্ড জেনুইন ছিল। আমি ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখেছি, আবার মুকুলকেও দেখছি সেই মুহুর্তে। ‘দাদা আমি বাঁচতে চাই’ বলে সুপ্রিয়ার সেই আকুতি জাষ্ট মুকুলের ধারেকাছে আসে না! মেজ-বড়-ছোট বৌ সিরিজ সিনেমার কালী ব্যানার্জী? বা যে কোন সিনেমার সুখেন দাস? নাঃ, তারাও আসবে না তুলনায়।

    ঘটনা ঘটছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পাশের একটা ‘নার্সিংহোমে’। কলকাতা থেকে বর্ধমানের দিকে যাবার সময় এক জাংশান আসবে যার বাঁদিকে যাওয়া যায় মশাগ্রাম এবং ডানদিকে গেলে মেমারী। আর সেই সংযোগ স্থলেই এই বিখ্যাত নার্সিং হোম।
    রোগের নাম ‘একশিরা’ – যার ইংরাজী নাম নাকি ‘হাইড্রোসিল’ – গোদা বাংলায় বলতে গেলে অন্ডকোষে জল জাতীয় কিছু জমে যাওয়া। এমন নয় যে নিমোর ছেলেদের কারো একশিরা হয় নি আগে বা নিমোর ছেলেদের অন্ডকোষে আগে ডাক্তারের হাত পড়ে নি। মূলত ক্রিকেট বা ফুটবল খেলতে গিয়ে বল লেগে আমাদের অন্ডকোষ মাঝে মাঝে আউট অব্‌ সেপ হয়ে যেত – তবে বেশীর ভাগ সময়েই কিছুদিন নিজেরাই টেপাটিপি করলে অন্ডকোষেরা নিজেরাই আবার তাদের আকার ফিরে পেত!

    কিন্তু মুকুলের কি করে একশিরা হল কে জানে! খেলাধূলা থেকে তার স্থান বহুদূরে – মনে হয় বেশী সাইকেল বা ভ্যান চালিয়ে সেই রোগ বাধিয়েছিল – স্ট্যাটিসটিক্যালি স্পিকিং কলকাতার বুকেও বেশীর ভাগ রিকাশা চালকের অন্ডকোষেও একশিরা জাতীয় রোগ হয়। তা যাক হোক ডাক্তার দেখানোর পর নিদেন এল যে মুকুলের অন্ডকোষে অপারেট করতে হবে। মুকুলের বাপ সীতা হালদারের কাছে খবর গেলে সীতা জানিয়ে দিল এই জাতীয় ফালতু রোগের অপারেশনের পিছনে সে পয়সা খরচ করতে রাজী নয়! তা যতই মুকুল নিজের ছেলে হোক না কেন! তেনার মতামত হল অন্ডকোষের তেজ দেখালেই তো হবে না সব সময় – তার সাইড এফেক্টও সহ্য করতে হবে!

    কিন্তু বন্ধুর অন্ডকোষ আউট অব শেপ দেখে নিমো সোনার বাংলার ছেলেরা কতদিন আর চুপ থাকে। খোঁজ নিতে বের হল পাবলিক যে কোথায় সস্তায় অপারেশন করা যায়। খবর এল ওই উপরিউক্ত নার্সিংহোমটি সস্তায় নাকি দেদার একশিরা অপারেশন করিয়ে দিচ্ছে। দুনিয়ার রিক্সা, ভ্যান চালক ইত্যাদিরা ওখানে ভিড় জমাচ্ছে। চাঁদা তোলা শুরু হল মুকুলের একশিরা অপারেশনের জন্য। শুধু বন্ধু মহলে নাকি নিমো গ্রাম জুড়ে চাঁদা তোলা হবে সেই নিয়ে এক প্রস্থ আলোচনা হয়ে গেল – কেউ একজন বলল যে দ্যাখ যেখানে মুকুলের নিজের বাপই ছেলের অন্ডকোষকে তেজ্য করেছে যেখানে গ্রামের লোক ওই অন্ডকোষের জন্য মায়া দেখাতে নাও পারে – সে যতই ফুলে থাকুক! ফলতঃ ঠিক হল শুধুমাত্র বন্ধুমহলে চাঁদা তুলেই মুকুলের অপারেশন হবে। সেই চাঁদা তুলে গুচ্ছ ছেলে পুলে নিয়ে যাওয়া গেল নার্সিংহোমে। ডাক্তার – নার্স ভাবল আমরা তাদের ক্যালাতে এবং ভাংচুড় করতে গেছি – কিন্তু চাঁদা তুলে একশিরা অপারেশনের প্রস্তাব শুনে তার থেকেও বেশী অবাক হল। তার থেকেও বেশী অবাক বাকি ছিল যখন নিমোর ছেলেরা অপারেশনের জন্য দরদাম করা শুরু করল!

    তো আপনাদের আর টেনশনে রাখব না – একবারে শেষে গিয়ে ক্লাইমেক্স দিয়ে শেষ করা – এসব আমাদের ধাতে নেই। তাই বলেই দিই যে মুকুলের অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছিল – এখন সে এক ছেলের বাপও বটে!

    অন্য কেউ হলে হয়ত অন্ডকোষ শেপে চলে আসার আনন্দে প্রেম বিতরণের ধান্দায় বেরিয়ে পড়ত – কিন্তু মুকুলই একমাত্র অন্ডকোষের প্রকৃত কারণ বুঝেছিল, তা সে ডারউইন বিবর্তন না পড়ে থাকলেও! পুত্র উৎপাদন করা যাবে কিনা এবং প্রেম হলে তা বিয়েতে কনভার্ট হবে কিনা সেই নিয়েই তার ফোকাস ছিল। তাই নিমো গ্রামে মোবাইলের আগমণ এবং ফ্রী টক টাইম যখন আমাদের জীবনের ইকুইলিব্রাম নষ্ট করে দিচ্ছিল প্রায় – তখন একমাত্র মুকুলই ছিল অবিচলিত! নিমো বারোয়ারী তলায় বসে বসে গেঁজানো পাবলিক যারা সন্ধেবেলা সামনের মোড়লদের ড্রেন-এ ছড়ছড় করে প্রসাব করত তারা এই মোবাইল জামানায় দূর দূর প্রসাব করতে যেতে লাগল। রাত আটটার পর সব পাবলিকের একসাথে প্রসাব পাচ্ছে! সে এক জটিল কেস – আসলে সবাই নাকি তখন নাকি মোবাইলে প্রেম করতে ব্যস্ত – ওদিকে মেয়ে প্রাইভেট পড়া শেষ করে বাড়ি ঢুকবে সেইটুকু উইন্ডোতেই ফোন করতে হবে – মানে রাত আটটা থেকে সাড়ে-আটটার মধ্যে।

    সবাই প্রেম করছে, কিন্তু মুকুল অবিচলিত – শেষ পর্যন্ত আমাদেরই একজন কেউ তার তখনকার বান্ধবীকে ধরে তার বান্ধবীর সাথে মুকুলের লাইন লাগানোর ব্যবস্থা করল। আমাদেরই কারো মোবাইল ধার দেওয়া হল মুকুল-কে কথা বলতে। তাকে বলা হল তুই পাশে গিয়ে কথা বল। কিছুদিন পর দেখা গেল, মুকুলের বেশ ইন্টারেষ্ট এসেছে – নিজেই বলছে, ওই দে না একবার ফোনটা লাগিয়ে! স্বাভাবিক ভাবেই ছেলেদের ঔৎসুক্য জাগল যে পাশে মোবাইল নিয়ে গিয়ে মুকুল কি প্রেমের কথা বলছে! আড়ি পেতে নিন্মলিখি বার্তালাপ শোনা গেল –

    -তুমি ছাগলের দুধ দুইতে পারবে?
    --------------------------
    -আরে না না, আমার তো পনেরোটা মত ছাগল – চারটে দুধ দিচ্ছে এখন
    ---------------------------
    -আচ্ছা, তুমি গরুকে জাব দিতেও পারবে?
    --------------------------
    -ও গোবর নেদ দিতেও পার?

    এই ফালতু টাইপের প্রেমালাপ শোনার ধৈর্য কারো ছিল না বলাই বাহুল্য!

    এক সময় মুলুকের বিয়েও হয়ে গেল। একত্রিশে ডিসেম্বর নিমো গেছি – সন্ধ্যেবেলা পিকনিক হবে তার তোড়জোড় হচ্ছে। মুকুলকে দেখলাম বৌ-বাচ্চা নিয়ে কোথা থেকে ফিরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি রে মুকুল, থাকবি তো সন্ধ্যেবেলা?” পাশ থেকে রাজু হাঁসফাঁস করে উঠল, “আরে সুকান্তদা কর কি, কর কি – মুকুলের সাথে এখন কথা বল না!” আমি গেলাম ঘাবড়ে! মুকুল না থাকলে মদের চাট বানাবে কে আর মাল খাবার ঝাল ঝাল ‘চিলি পিস’ চিকেনটাই বা কে রান্না করবে! যা বোঝা গেল, এখন মুকুলের বাড়িতে বউ ফতোয়া জারি করেছে যে, সোনার বাংলার ছেলেদের সাথে নাকি মুকুলের মেশা যাবে না! এ এক অবাস্তব দাবী! আমাদের গ্রামের ছেলেরা বিয়ে করার আগেই (প্রেম বা সমন্ধ যা করেই হোক না কেন বিয়ে) মেয়ের সাথে ক্লীয়ার করে নেয় যে, সোনার বাংলার সাথে বরের ইন্টারেকশন নিয়ে কোন প্রকার নাক যেন গলানো না হয়।

    মুকুলের বউ নাকি ওকে বলেছে, “আমি একা একা রাস্তা দিয়ে গেলে সোনার বাংলার ছেলেরা কেমন ভাবে তাকায়”! সোনার বাংলার ছেলেদের নানা প্রবলেম থাকলেও দুশ্চরিত্র এমন অববাদ কেউ দিতে পারবে না তেমন! মুকুল সেটা গর্ব করে বৌকে জানালে ব্যাপার টুইষ্ট হয়ে গেল – বৌ বলল “তাহলে তুমি আমাদের নিজেদের মধ্যে যা কথা হয় সেই সব কিছুই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো! আর সেই জন্যি তোমার বন্ধুরা আমার দিকে তাকিয়ে হাসে-টাসে মনে হয়”! মুকুল সাধাসিধে মানুষ, বলে ফেলল, “যা বাবা, সুখ দুঃখের কথা বন্ধুদের ছাড়া আর কাকে বলব”! ব্যাস, এই কনফেশনের পর মুকুলের হয়ে গেল – বৌ পুরো থ্রেট দিয়ে রেখেছে, সোনার বাংলার ছেলেদের সাথে দেখলেই সেদিন বাইররের বাদান্দায় শুতে হবে!

    মুকুলের কথা ভেবে কষ্ট হল – বেচারা ছেলেটা পুরো শুকিয়ে গেছে। এই সব ভাবতে ভাবতে ৩১ ডিসেম্বরের ফিষ্টির মাংসটা কষতে চাপিয়েছি, এমন সময় অন্ধকারে বৌকে লুকিয়ে মুকুল এসে হাজির পিকনিক স্পটে। আমাকে বললঃ

    -কিছু মনে কর না সুকান্তদা, আজকে আর ফিষ্টি করতে পারব না।

    সবাই পাশ থেকে বলে উঠল, “মুকুল – মরদ হ, মরদ – তুই দিন দিন ম্যাদা মেরে যাচ্ছিস। আর আজকে পিকনিক করলে কি করবে তোর বৌ? বড় জোর ঘরে ঢুকতে দেবে না – তাই তো? তুই আমাদের কারো ঘরে শুয়ে পড়বি”। মুকুল বললঃ

    -মাগী কি কম চালাক নাকি! আমি বেরোবার আগে ছেলেটার মাথায় হাত দিয়ে দিব্বি দিয়ে নিল যেনো আমি ফিষ্টি না করি
    এ ‘মাগী’ উচ্চারণ কোন ফেমিনিষ্ট টাইপের ব্যঙ্গ নয় – এ হল বঙ্কিম চন্দ্রীয় ‘মাগী’ – ভালোবেসে উচ্চারিত। আমি বললামঃ
    -তা তোর বউয়ের প্রবলেমটা কোথায় তুই আমাদের সাথে মিশলে?
    -*ড়া সেটা আর কে বলে! আমাকে বলবে তুমি সোনার বাংলায় গিয়ে ফুর্তি করবে, আর আমি বাড়িতে বসে থাকব সেটা হবে না!
    -তা তুই বউকে নিয়ে ঘুরে আয় এদিক সেদিক
    -সে কি আর বাকি রেখেছি? নিমো গ্রামের কোন ছেলে বউকে নিয়ে পাঁচ দিন ঠাকুর দেখতে গেছে? আমি সেই শালা ষষ্ঠির দিন থেকে বউকে নিয়ে ঘুরছি। তাতেও ভবি ভোলবার নয়। এই রাজু, তুই পার্টি থেকে কিছু একটা কর – আমি না হলে মরে যাব এবার।

    রাজু বলল – “তোর বউ তো এমন ছিল না আগে! অন্য কেউ মাথায় বুদ্ধি দিচ্ছে নাকি?”

    -সেটা *ড়া বলতে – ওই *লের সয়ম্ভর গোষ্টি নাকি কি হয়েছে নিমো পঞ্চায়েতে মেয়েদের, সেখানে গিয়ে গুজুর গুজুর, ওরাই সব প্ল্যান দিচ্ছে। রাজু তুই কিছু কর। ওরে বাবা, দশটা বেজে গ্যাছে – এর পর গেলে বাইরে শুতে হবে – আমি চললাম সুকান্তদা।
    আমি রাজুকে বললাম, “তুই পঞ্চায়েত থেকে বিচার করতে গেলে কি করবি এই কেসটায়”?

    রাজু বলল, “দ্যাখো সুকান্তদা – মুকুল আফটার অল আমাদের গ্রামের ছেলে – ওর দিকটা তো দেখতে হবে। ওদের বাড়ি গিয়ে হালকা ভয় দেখাতে হবে এই বলে বৌমাকে যে বেশী বাড়াবাড়ি করলে বাপের বাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আসা হবে। আর মুকুলকে বলব যে – তুই বৌমার খেয়াল রাখবি – কোথায় বেড়াতে যেতে চায় নিয়ে যাবি”।

    কিছুদিন পরে নিমো যাব আবার – মুকুলের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে নাকি আপডেট দেব ফিরে এসে!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন