এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সুকি | 49.207.203.64 | ১১ জুলাই ২০২০ ০৮:৫১732368
  • খবরের বা বক্তব্যের সত্যতা নিজে যাচাই করে নিন - তা সে কাছের লোকের বক্তব্যই হোক আর করোনা, চীন সীমান্ত বা মানসিক অবসাদ যাই হোক না কেন!

    কেমন করে যাচাই করব - এটা কোন প্রশ্ন না, নিজের মত করে যাচাই করুন। যদি আপনার মেন্টর থাকে এই যাচাই করার ব্যাপারে, তাহলে তাকে অনুসরণ করুণ। বা ডাউট থাকলে তাকে প্রশ্ন করুন।

    এই যেমন আমাদের মেন্টর ছিল পচা মোড়লের নাতি আলম। পচা মোড়ল ছিল গিয়ে আমাদের গ্রামে চাল পোড়া, হাঁড়ি চালা, জল পোড়া, বাণ মারা – এই সব ব্যাপারে সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্ট। আলম দাদুর কাছ থেকে এই সব ডার্ক আর্টের ট্রেনিং নিচ্ছিল আমাদের ছোটবেলায়।

    পচা মোড়ল জীন, পরী, আধিভৌতিক ব্যাপার নিয়ে কারবার করত বলে ওদের বাড়িতে একটা ছমছমে ব্যাপার ছিল। এবং সেই জন্যই মনে হয় বাকি অনেক বিষয়ে ডাকাবুকো হলেও আলমের ভূতের ভয় ছিল প্রচুর।

    একদিন হয়েছে কি ভোররাতে বাড়ির সামনে দুটো তীব্র আলো জ্বলতে দ্যাখে আলমের মা। মনে হয় যেন ক্যায়ামত এসে গেছে - জীনের চোখ জ্বলছে। এটাতে হালকা ভয় খেয়ে আলমের মা জিনিসটা তলিয়ে দেখার জন্য আলমকে ঘুম থেকে ওঠাতে যায়। দরজার কাছে গিয়ে টুক-টুক করে কড়া নেড়ে, ফিস ফিস করে বলেঃ

    - এ্যাই আলম, আলম

    বেশ কিছু ক্ষণ ডাকাডাকির পর আলমের ঘুম ভাঙে। কিন্তু সেই ফিস ফাস ডাক শুনে আলমের হয়ে গ্যাছে

    - কে, কে ডাকছে
    - কে কি রে? আমি তোর মা – দরজা খোল, জরুরী দরকার আছে

    আলমের হয়ে গ্যাছে ভয়ে – এই ভাবেই নাকি ভোর রাতে নিশি ডাকে গলা নকল করে, দাদুর কাছে শুনেছে ট্রেনিঙ-এর সময়। কিন্তু যাচাই না করে তো আর দরজা খোলা যায় না। তাই আলম নিজের মত করে বুদ্ধি খাটালো কি করে ওটা অরিজিন্যাল মা সেটা যাচাই করা যায় - খানিক ভেবে জানতে চাইলঃ

    - তুমি যদি আমার মা হও, তাহলে বলতো মা আমি কি দিয়ে সন্ধ্যেবেলা ভাত খেয়েছিলাম?

    - রাতের বেলায় ফাজলামো হচ্ছে? ওই তো পুঁটি মাছ যেগুলো ধরে আনলি সেটা বাটি ভাজা করে দিলাম।

    আলমের ডাউট ক্লিয়ার হল - যাচাই হয়ে গেল ওটা অরিজিন্যাল মা। দরজা খুলে গিয়ে বাইরে দেখে এল ওই তীব্র আলো দুটি কোন জিনের চোখ জ্বলা নয়, ভোররাতে মাছ ধরতে আসার ছোটহাতির হেডলাইট দুটো।

    আমাদের এই ভাবেই আলম শিখিয়েছিল কিভাবে যাচাই করে নিতে হয়। আজ আলমের কথা খুব মনে আসছে।

  • সুকি | 49.207.203.64 | ১১ জুলাই ২০২০ ০৮:৫২732369
  • আজ খুব বড়-ভাই এর কথা মনে আসছে -

    বড়-ভাইয়ের ব্যাপারটা একটু খোলসা করা যাক। ‘বড়-ভাই’আমাদের দিকের খ্যাতনামা টেলার, আমাদের গুরু আলমের গুরু। আলম তাস-জুয়া-লটারী, মাছ ধরা এবং শীতের সিজিনে ক্রিকেট খেলা ছাড়া যে সময়টুকু হাতে পেত সেই সময়টুকুতে বড়-ভাই এর কাছে জামা প্যান্ট সেলাই করত।

    বড়-ভাই ই একমাত্র আমার দেখা টেলর যে দুর্গা-পুজার সময়েও ওভারটাইম করত না, সন্ধ্যে সাতটাতেই কারবার খতম। হাতের কাজের খ্যাতির জন্য অনেক উঠতি ছেলে পুলে নতুন কিছু স্টাইলে বানাবার জন্য আসত তার দোকানে। যখন আলম বড়-ভাইয়ের কাছে কাজ করতে ঢুকল, তখন জানতে পারলাম যে, দিনে পাঁচ -টা প্যান্ট কাটা হচ্ছে বড় ভাইয়ের লাইফের মন্ত্র। ফলে অনেকে লাইন দিয়েও প্যান্ট কাটাতে পারত না।

    একবার এক উঠতি ছেলে কিভাবে যেন বড়-ভাইকে পটিয়ে ফেলে নতুন স্টাইলে প্যান্ট কেটে দেবার জন্য পুজোর সিজিনে। এবার ফার্ষ্ট ফরোয়ার্ড পুজোর ঠিক আগে ষষ্ঠির দিন প্যান্ট ডেলিভারী নেবার মুহুর্তে। প্যান্ট দেবে, আর পাবলিক নিয়ে বাড়ি চলে যাবে, সেটাই রীতি বড় ভাইয়ের কাছে। তো সে ছেলে প্যান্টের ভাঁজ খুলে উলটে পালটে পরখ করে।

    প্যান্ট দেখতে দেখতে ছেলে খালি বলে বড়-ভাইকে,

    - “এই খানে প্লেট ঠিক আসে নি”
    - “এই খানে আরো দুটো ফলস্ বোতাম লাগানোর কথা ছিল”।
    - “যদি পা-দিয়ে মেশিনের বদলে ইলেকট্রিকে মেশিন কেনো, তা হলে সেলাই আরো ভালো এবং তাড়াতাড়ি হবে”।
    - “পুজোর সময় কম-খরচের কিছু লেবার নিলে আরো বেশী প্যান্ট কাটতে পারবে”
    - “নতুন যুগ এসেছে, এর সাথে মানিয়ে না নিতে পারলে তোমার ব্যাবসা উঠে যাবে”

    ইত্যাদি ইত্যাদি।

    বড়-ভাই শান্ত মনে সব কিছু শুনল, দিয়ে জানতে চাইল,

    “তুই প্যান্টের ছিটটা কোথা থেকে কিনেছিলি”? 

    ছেলে বলে, “ওই তো সুধীর বস্ত্রালয় থেকে ১৭০ টাকা দিয়ে”।
    বড়-ভাই আলতো করে টেবিলের উপর থেকে কাঁচিটা তুলে নিয়ে প্যান্টটা কুচি কুচি করে কেটে দিল। সেই ছেলের মুখ হাঁ হয়ে গ্যাছে। বড়-ভাই আরো শান্ত ভাবে ড্রয়ার থেকে ১৭০ টাকা বের করে ছেলেটিকে কুচো প্যাণ্টের সাথে দিয়ে বলল, “যা, অন্য কোথাও থেকে মন মত কাটিয়ে নিবি”।

    আজকাল ডিজিটালাইজেশন, ডাটা সায়েন্স, মেশিং লার্ণিং সংক্রান্ত মিটিং গুলোতে বসে মাঝে মাঝেই বড়-ভাইকে খুব মিস করি।

  • সুকি | 49.207.203.64 | ১১ জুলাই ২০২০ ০৮:৫৩732370
  • আজ দুলালের কথা মনে হচ্ছে খুব – এই দুলালের জন্যই সেই কোন ছোটবেলায় আমরা জেনে গিয়েছিলাম শুধু কথা বলে মানসিক রোগ সারানো যায় না! মানে মানসিক রোগ সংক্রান্ত জ্ঞান লাভে জন্য আমাদের ফেসবুকের জন্ম বা বিখ্যাত কারো মরে যাওয়া পর্যন্ত ওয়েট করতে হয় নি –

    দুলাল আমাদের থেকে বছর তিনেকের বড় ছিল বয়সে, সেই অর্থে ধরলে আমরা যখন ক্লাস সিক্স-এ পড়তুম, দুলালের তখন ক্লাস নাইন হবার কথা। হয় নি – সেই দোষটা দুলালের নয়, দোষ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের। তখনো কেন ওরা পাশ-ফেল তুলে দেয় নি!

    তো আমরা সবাই নিমো উন্নত অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যালামনি – সেই প্রাইমারী ইস্কুলে মাষ্টারি করত তখন পাশের গ্রামের রমেশ মাষ্টার। আর বাপের সাথেই ইস্কুল আসত ধান-আলু জমি পেরিয়ে পাপিয়া। কিভাবে যেন দুলাল মন প্রাণ সঁপে দেয় পাপিয়াকে, যার উৎপত্তি আমরা তো কোন ছাড়, দুলাল নিজেও মনে করতে পারে নি।

    দুলাল একদিন বিশাল ব্যস্ত হয়ে সাইকেল নিয়ে আসছে – ছেলে ছোকরার আড্ডা থামালো তাকে

    - দুলাল, দুলাল – এত তাড়াতাড়ি কোথায় যাচ্ছিস? বসে যা একটু
    - না গো, বসলে হবে না। শ্বাশুড়ি মা-র সাথে বাজারে যেতে হবে এক্ষুণি

    আড্ডায় যারা নতুন, তারা বুঝতে পারছে না শ্বশুড়ি মা কে! সেটা বুঝতে পেরে দুলাল ব্যখ্যা করল

    - আরে পাপিয়ার মা বাজার করতে যাচ্ছে, আমার সাথে রাস্তায় দেখা। আমাকে থামিয়ে বলল, “বাবা দুলাল, তুমি একটু আমার সাথে চলো না। পাপিয়ার একটা জামা কিনতে হবে। তুমি তো ভালো বুঝবে পাপিয়ার কি রঙ পছন্দের”। তাই আমাকে এখন বাড়ি গিয়ে চান-টান করে খেয়ে মেমারী যেতে হবে শ্বাশুড়ির সাথে।

    দুলাল চলে গেল – প্রাচীনরা রায় দিল, মাথাটা গেছে। আবার একদিন –


    - দুলাল, দুলাল – এত তাড়াতাড়ি কোথায় যাচ্ছিস? বসে যা একটু
    - না গো, বসলে হবে না। শ্বাশুড়ি মা-র সাথে বাজারে যেতে হবে এক্ষুণি
    - আজ আবার কি কিনবি?
    - ইস্কুলের নতুন জামা কিনতে হবে। রঙের ব্যাপার আছে – আমাকেই সেই ধরেছে আবার
    - ওই, ইস্কুলের জামার আবার রঙের ব্যাপার কি? বৈদ্যডাঙা ইস্কুলে তো জামার রঙ সাদা –
    - ওটাই তোমরা যদি বুঝবে, তাহলে এখানে বসে কি গুলতানি করতে!

    দুলাল চলে গেল - প্রাচীনরা রায় দিল, মাথাটা আরো গেছে মনে হচ্ছে। আবার একদিন –

    - দুলাল, দুলাল – এত তাড়াতাড়ি কোথায় যাচ্ছিস? বসে যা একটু
    - না গো, বসলে হবে না। শ্বাশুড়ি মা ডেকে পাঠিয়ে একটা বিশাল কাজ দিয়েছে
    - তা আমাদের বল না, জানলে আমরাও সাহায্য করব
    - আচ্ছা, বলো তাহলে – হরলিক্স আর কমপ্ল্যান এর মধ্যে কোনটা খাওয়া উচিত পাপিয়ার?
    - এটা আবার কি প্রশ্ন?
    - জানতাম তো পারবে না, ফালতু সময় নষ্ট
    - আরে খুলেই বল না, রাগছিস কেন?
    - আজকে শ্বাশুড়ি মা ডেকে পাঠিয়েছিল। আমি গেলে পরে আমাকে বলল – “বাবা দুলাল, পাপিয়ার শরীরের ব্যাপারটা তো তোমাকেই দেখতে হবে। তুমি একটু খোঁজ নিয়ে জানাও তো কমপ্ল্যান আর হরলিক্সের মধ্যে কোনটা ওকে দেব?” তো আমাকে এখন ঔষুধের দোকানে ছুটতে হবে। মনোহারী দোকানে ওরা কিছু বলতে পারছে না।

    দুলাল চলে যাচ্ছে - প্রাচীনরা রায় দিল, মাথাটা মনে হচ্ছে একদমই গেছে। মনে হচ্ছে কদিন পর ল্যাঙটো হয়ে রাস্তায় ঘুরবে!

    দুলাল সেটা শুনতে পায় – ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, “আমি কি পাগল নাকি? এই দুলাল কোনদিন ল্যাঙটো হয়ে ঘুরবে না”।

    তাই বলছিলাম সেই কোন ছোটবেলা থেকেই আমরা জানতাম পাগল আর মানসিক রোগী এক নয়! আর শুধু কথা বললেই মানসিক রোগ সারে না – কারণ আমরা যত কথা দুলালের সাথে বলতাম তাতে করে ওর চোদ্দ পুরুষের কারো মানসিক রোগ হবার চান্স ছিল না!

    আজ দুলালের কথা মনে হচ্ছে খুব -

  • সুকি | 49.207.203.64 | ১১ জুলাই ২০২০ ০৮:৫৪732371
  • মানিক-কাকা আমাদের পরিবারের সুখ-দুঃখের সাথী সেই কবে থেকে আমি মনে করতে পারি না।

    শনি-রবি নিয়ম করে, আর অন্য কোন দিনে নিজের দোকান বন্ধ থাকলে মানিক কাকা আসত আমাদের বাড়িতে গল্প করতে, বেশীর ভাগ গল্পই হত ঠাকুমার সাথে। সে যুগে কেবল তো দূরের কথা, বাড়ি বাড়ি টিভিই আসে নি গ্রামে।

    ডি ডি বাংলায় রবিবারের বিকেলের সিনেমার তখন বিশাল ডিম্যান্ড। মানিক কাকার একটা হালকা প্রবলেম ছিল এই যে সিনেমা কখন শেষ হল সেটা ঠিক বুঝতে পারত না। মোটামুটি একটা ধারণা ছিল যে সিনেমা মানেই দুই-ঘন্টা টেনে দেবে। তো দুই ঘন্টা টিভির সামনে মানিককা খুব মনোযোগ দিয়ে সিনেমা দেখত। কিন্তু দুই ঘন্টা পেরিয়ে গেলেই শুরু হত প্রবলেম - বিজ্ঞাপনের বিরতি এলেই -

    - যাই বলুন ন-মা, দারুন সিনেমা দেখলাম। এত ভালো সিনেমা অনেক দিন দেখি নি। চলুন বাইরের দুয়ারে গিয়ে গল্প করা যাক।
    - আরে সিনেমা এখনো শেষ হয়নি মানিক। বাকি আছে বেশ কিছুটা

    আবার শুরু হল, চা খাওয়া হচ্ছে - আবার বিজ্ঞাপনের বিরতি এল

    - আহা ন-মা, সিনেমাটা যে শেষটা এমন ঘুরিয়ে দেবে, বোঝা যায় নি আগে, বলুন?
    - মানিক, দাঁড়াও আর এক্টূ, মেয়েটাকে বাড়ি ফিরতে দাও
    - ও এখনো ফেরে নি? কতক্ষণ লাগবে ফিরতে?

    আবার শুরু হল সিনেমা -

    আজকাল এই নেটফ্লিক্স, আমাজন বা হটস্টারে কিছু কিছু ওয়েব সিরিজ দেখে মানিককার কথা খুব মনে আসে - আমার অবস্থা অনকেটা কাকার মতই হয় কিনা!

  • সুকি | 49.207.203.64 | ১১ জুলাই ২০২০ ০৮:৫৪732372
  • কোন একটা বিষয় নিয়ে তর্ক হচ্ছে – যেমনটা প্রায়ই হয় – এবং যে তর্ক না হলেও তেমন কিছু ক্ষতি হত না, সময় কিভাবে কাটবে সেই প্রবলেম ছাড়া।

    ছোটকাকা প্রায় কোনঠাসা যুক্তিতে – যেমনটা প্রায়ই হয় – এবং এর পরে কি হবে সেটাও জানা

    - তুমি আর কথা বলো না কালাম-দা! তুমি গার্ড করে না দাঁড়ালে, সেই পাল্লা মাঠে ফাইনালে আমাকে গোলটা খেতে হত না

    বলাই বাহুল্য সেই দিনের আলোচনার সাথে সম্পূর্ণ আন-রিলেটেড প্রসঙ্গ। সেই কবে ৩৫ বছর আগে পাল্লা মাঠে ফাইনালে নিমো হেরে গিয়েছিল, আর গোলে ছিল ছোটকাকা। কালাম-কা যথারীতি বিষ্মিত বরাবরেই মতই সেই যুক্তি শুনে –

    - সে কি রে ভদু, আমি তোকে কোথায় গার্ড করছিলাম? আমি তো খেলছিলাম মিডফিল্ডে! নিজে ডোবালি পুরো সেই দিন! আর এই আলোচনার সাথে ফুটবল খেলারই বা কি সম্পর্ক!

    - না, তুমি গার্ড করছিলে বৈকী – তার আগের কর্ণার কিক ওরা নিতে গেলে তুমি আমার গায়ের কাছে চলে এসেছিলে!

    - আরে সে তো ওদের স্ট্রাইকারকে ওয়ান-টু-ওয়ান গার্ড নিচ্ছিলাম বলে আমার নীচে নামা

    - তা যাই হোক, তুমি তখন গার্ড করেছিলে বলেই পরে গোলটা খাই!

    আজকাল বারবার কিছু জিনিস ডিফেন্ড করতে কিছু জনার যুক্তিজাল দেখে আমার ছোটকাকার কথাই মনে আসছে

  • সুকি | 49.207.203.64 | ১১ জুলাই ২০২০ ০৮:৫৫732373
  • প্রতিবছর দুর্গা পুজোর সপ্তমীর দিন বিকেলে নিমো বারোয়ারী তলায় ‘সাহিত্য সভা’ হত সেই সময়। এর মূল উদ্যোক্তা ছিল সামাদ সাহেব – সাহেব মারা যাবার পর শচীন জ্যাঠু কয়েক বছর চালায়। তার পর শচীন জ্যেঠুও মারা গেলে প্রায় ৬৫ বছর ধরে চলা সাহিত্য সভা বন্ধ হয়ে যায়।

    তো সেই সময় সাহিত্য সভার জন্য আমরা ছেলে ছোকরারা চাঁদা তুলতে বেরুতাম। খরচ বলতে ওই কিছু আবৃত্তি ইত্যাদি প্রতিযোগীতার জন্য উপহার, চা-জলখাবার, প্রধান অতিথি এদের আনার জন্য ব্যবস্থা ইত্যাদি। সামাদ সাহেব নিজেই দিতে পারত টাকা, এবং ইন ফ্যাক্ট বেশীর ভাগ টাকাটাই তার পকেট থেকেই আসত – কিন্তু ওই ‘ইনক্লুসিভ’ ব্যাপারটা আনার জন্য আমরা চাঁদা তুলতাম গ্রামে সবার কাছে।

    সেইদিন গেছি চাঁদা তুলতে – ইস্কুল ঘরের পাশে বাড়ির বারান্দায় বসে তখন বুড়ো-কাকা প্লাষ্টিকের মগে জল নিয়ে তাতে আয়না হেলান দিয়ে জুত করে বসে দাড়ি কামাচ্ছে। জানতে চাইল কিসের চাঁদা, বললাম যে সাহিত্য সভার। প্রধান অতিথি কে আসছে ইত্যাদি সব জিজ্ঞেস করল। সব শুনে বলল, “ঠিক আছে পরে আসিস, এখন আর দাড়ি কাটার মাঝখানে উঠতে পারছি না”

    আমরা চলে আসছি, বুড়োকা বলল,

    - যাবার একটা কথা বলে যা, এই সাহিত্য করে হবে টা কি?

    আমরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছি। এমন প্রশ্ন কেউ করে নি আমাদের – আর এর উত্তর জানার বয়স কি আমাদের হয়েছে তখনও সেটাও বুঝতে পারছি না। আমাদের চুপ থাকতে দেখে বুড়োকা বলল –

    - পারলি না তো! তোরা আর কি করে পারবি? সাহেব নিজেও এর উত্তর জানে না, আমি একদিন নিমো স্টেশনে দেখা হতে জিজ্ঞেস করেছিলাম

    আমরা চলে আসছি, বুড়োকা গালে রেজার চালাতে চালতে বলল,

    - সঠিক উত্তরটা শুনে যা আমার কাছ থেকে। সাহিত্য করে ঘোড়ার বাঁড়া হবে!

    আমি এর পরে সারা জীবন বুড়োকার কথাটা মনে রেখেছি সাহিত্য করা ব্যাপারে। আমার কিছু চেনা শুনা, বন্ধু, দাদা ইত্যাদিদের সাহিত্য করে সমাজ বদলে দেব, আগুন ছুটিয়ে দেব, ন্যায় এনে দেব – ইত্যাদি আস্ফালন শুনে মুচকি হাসি। নিমোতে জন্মালে এই ইল্যুউশন থাকত না এদের!

    তাহলে আমি সাহিত্য নিয়ে ভাবি না? ভাবি বৈকী – বুড়োকা যখন ওই মন্তব্য করেছিল তখনো ইন্টারনেট অনেক দূরে, অনলাইন সাহিত্য ম্যাগাজিন তো দূরের কথা। কেবল ছাপা সাহিত্য দেখেই সেই বলা।

    আমি খুব ভাবি আজকের ইন্টারনেট বা ফেসবুক সাহিত্য পড়লে বুড়োকা তাকে কোন প্রাণীর ইয়ের সাথে তুলনা করত!

  • b | 14.139.196.11 | ১১ জুলাই ২০২০ ১১:৩৪732375
  • হা হা, ভিন্টেজ সুকি।
  • সে | ১১ জুলাই ২০২০ ১৫:৪৬732379
  • রোববারের সকালটা সার্থক হলো এই লেখাগুলো পড়ে।

    কিপিটাপ সুকি।

  • শঙ্খ | 103.242.199.176 | ১১ জুলাই ২০২০ ১৯:২১732381
  • দারুণ দারুণ!
  • সুকি | 165.225.125.45 | ২০ অক্টোবর ২০২০ ০৮:৫১733031
  • কাল রাতে শিবতলায় রিন্টুর সাথে দেখা সে এক ফাইনান্স কোম্পানীর কার-লোন রিকভারী ডিপার্টমেন্টের রিজিওন্যাল হেড, অফিসের কাজে সিউড়ি থেকে ফিরল। বললাম কি খবর রে? কাজ কর্ম কেমন চলছে? রিন্টু জানাল আর বাঁড়া কাজ! লাইফ জ্বলে গেল। এই ফিরলাম অফিস থেকে, এবার চান-টান করে বসব যতক্ষণ না হিসেবের লিষ্ট পাঠাবো আমার পাগলাচোদা ম্যানেজার ফোন করে করে ব্যতিব্যস্ত করে দেবে। টার্গেট এখন আমাদের পিছন দিয়ে ঢুকছে!

     

    অনেকক্ষণ কথা হল রিন্টুর সাথে কিভাবে যে এই কার-লোন ফাইন্যান্স আর রিকভারী ব্যাপারটা চলছে, শুনলে আপনার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে! সে লিখতে গেলে ইতিহাস হয়ে যাবে তবে সময় করে লিখব।

     

    আমি রিন্টুকে জিজ্ঞেস করলাম

     

    -       আচ্ছা, এই যে রিকভারীতে যাস, কাষ্টমার গাল দেয় না?

    -       রিকভারীতে গেলেই নয় শুধু, বাঁড়া ফোনেও গালাগাল দেয়!

    -       ফোনে গালাগাল দেবে কেন?

    -       আর বলিস না, অফিসে ব্যবস্থা করেছে যে ই এম আই মিস হয়ে গেলে কাষ্টমারকে মেসেজ পাঠাচ্ছে  আপনার এই মাসের টাকা দেওয়া হয় নি অবিলম্বে ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করুন আর সাথে আমার মোবাইল নাম্বার। সেই ম্যাসেজ পাওয়া মাত্রই বুঝতে পারছিস ফোনে করে গালাগাল!

    -       কি গালাগাল দেয়?

    -       সে কাঁচা কাঁচা কিস্তি দেয়। সবচেয়ে মাইল্ড গালাগাল হল, এবার এদিকে রিকভারীতে এলে পিছন মেরে দেব। আবার কেউ ফোন করল ধর, আমি পিক আপ করলাম না সে আবার উলটে ম্যাসেজ করবে আপনি কি মোদী হয়ে গেছেন নাকি যে ফোন ধরছেন না!

    -       তা তোর ম্যানেজার কি বলে এই ব্যাপারে?

    -       ও বাল আর কি বলবে, খালি টার্গেট আর টার্গেট। আমি সেদিন ম্যানেজারকে বললাম, আমি পিছন ফিরে দাঁড়াচ্ছি, আপনিই মেরে দিন গ্রীজ দিয়ে। সেই শুনে ম্যানেজার বলে, রিন্টু, আমি তোমার ম্যানেজার মনে রাখবে এমন মুখ খারাপ করবে না। চাকুরী থেকে সরিয়ে দেব 

    -       তুই কি বললি?

    -       আমি বললাম, বাঁড়া আপনাকে সরাতে হবে না, আমি নিজেই সরে যাব। পারলে ফায়ার করে দিন।

     

    আরো অনেক গল্প হল একসময় রিন্টু বলল, তবে সবটাই খারাপ এমন নয়। সুখের সময় আসছে। বর্ধমানে একদিন এক এজেন্সীর ঘরে রিকভারীতে গেছি। সে মাল বিশাল ঘুঘু, তার গল্প অন্যদিন করব। তার সাথে কথা হচ্ছিল আমি বললাম দুঃখ করে যে এই ফিল্ডে কাজ করে পোষাচ্ছে না এদিকে বয়স হচ্ছে, নতুন কোম্পানীতে নেবে না কেউ। তা সেই শুনে সে মাল বলল,

     

    রিন্টু তুমি চিন্তা করো না, ২০২১ ক্ষমতায় আসছি তোমার কত বয়স কমাতে হবে বলবে শুধু। ৩২ চাও? চাইলে আঠেরো করে দেব আধার, প্যান সবেতে। এ দরজা দিয়ে ঢুকবে আর ওই দরজা দিয়ে ছোকরা হয়ে বেরোবে

     

    দেখা যাক একুশে রিন্টুর বয়স কমে কিনা!

     

  • সুকি | 157.43.238.207 | ২১ অক্টোবর ২০২০ ০৯:৫৬733032
  • দিন দুই খুব ব্যস্ততায় কাটল – অবশ্য আমি নিজে কিছু করি নি, অন্যেরা চূড়ান্ত দৌড়াদৌড়ি করছিল, সেটা দেখার মধ্যেই আমার ব্যস্ততা সীমাবদ্ধ ছিল।

    নিমো আদি অকৃত্রিম ঘটি সম্প্রদায়ের গ্রাম – ফলতঃ ছেলে পুলে প্রচন্ড কুঁড়ে। ছেলে আড্ডা মেরে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলে মা-রা এখনো মুড়ি মেখে দেয়। তাই যা হবার তাই হয় – সরকারী কোন ফেসিলিটি আমাদের গ্রাম পেয়ে ওঠে না – কারণ দরখাস্ত করার মত পরিশ্রমও আমরা কোন দিন করে উঠতে পারি নি।

    তবুও কয়েকজন ছেলেপুলে লেগে ছিল বলে এবারের দিদির কল্যাণে দুর্গাপুজো বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকা পাওয়া গেল। সেদিন রাতে বাইকের পিছনে বসে চেকটা ঘোরাতে ঘোরাতে “পাওয়া গেছে, পাওয়া গেছে” বলে হাজির হল জনতা শিবতলায়। চেক তো পাওয়া গেল, কিন্তু ভাঙানো হবে কি করে!

    সেই নিয়ে এবার বিশাল টেনশন – ব্যাঙ্কিং এর জটিলতা এবং আর বি আই-এর নিয়ম নিয়ে তুলকালাম আলোচনা শুরু হল। এই আলোচনা আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠল কারণ ছেলে পুলেদের কেউই এর বিন্দু বিসর্গ কিছু জানে না। কেউ বলছে আমার পিসির ছেলে বলছে এ চেক বাউন্স করবে – কেউ বলছে আমার সাথে ডেলিপ্যাসেঞ্জারী করে তাকে ফোন করেছিলাম, সে বাজী ধরে বলছে এ চেক বাউন্স করবেই! গ্রামের এল আই সি এজেন্ট বলল তাকে চেক ভাঙিয়ে দিন চালাতে হয়, তার মতেও এ চেক বাউন্স করবে।

    সিনিয়র হিসাবে আমি আর কতক্ষণ বসে থাকি আলোচনায় না ঢুকে! আসরে অবতীর্ণ হলাম আমার সুদূরপ্রসারী অর্থনীতি ফান্ডামেন্টাল জ্ঞান নিয়ে। ব্যাপারটা বোঝা গেল – যেই নামে চেক লিখে দিয়েছে, অর্থাৎ ‘বারোয়ারী পুজো কমিটি’ এমন নামে কোন অ্যাকাউন্ট নেই আমাদের। চেকের নাম পালটে আনার উপায় নেই – যদি আর না দেয়! তাই কাজ হল চেকে যে নাম দেওয়া আছে সেই নামে অ্যাকাউন্ট খোলা। যেহেতু পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট নয়, তাই একদিনে এমন অ্যাকাউন্ট কোন ব্যাঙ্ক খুলে দিতে পারবে না – গোটা দশেক ব্যাঙ্ককে ফোন করা হয়ে গেল।

    জটিলতা বলতে ওই – দেখা গেল যেদিন চেক ইস্যু হয়েছে সেদিন ওই নামে কোন অ্যাকাউন্ট ছিল না। তাই কিছু কিছু বিজ্ঞের মতে ইহা আইনত সিদ্ধ চেক নয়। কোন আইন অবশ্য সেটা কেউ বলতে পারছে না।

    আমাকে রাজু বলল তুমি একটা ক্যাড ড্রয়িং করে দাও – আমি বললাম আমার শিক্ষা-দীক্ষার দৌড় অতদূর নয়। ক্যাড ড্রয়িং এ দেখাতে হবে নিমো শিবতলা ভৌগলিক ভাবে ঠিক কেমন এঁটেছে গ্রামে। রাজুর কারখানার এক ছেলেকে দিয়ে ক্যাড ড্রয়িং বানানো হল – ঘোষ পাড়া যাবার রাস্তা, পাল পাড়া যাবার রাস্তা, এদিকে মনসা, ওদিকে বুড়োশিব পরিবেষ্টিত দুর্গা মন্দির। এবার সেই ড্রয়িং এ স্ট্যাম্প মারতে নিয়ে যাওয়া হল গ্রামের আমিনের কাছে। আমিন দেখে বলল, “ভাইপো, তুমি ড্রয়িং-এ দুর্গা মন্দিরের বারান্দা সাড়ে চোদ্দ ফুট দেখিয়েছো, কিন্তু আমার অনুমান মতে সেটা তো বারো ফুটের বেশী হবে না!” রাজু বলল, “কাকা তুমি কি চাও আড়াই ফুটের জন্য আমাদের পঞ্চাশ হাজার টাকা হাতছাড়া হোক?”

    যুদ্ধ কালীন তৎপরতায় রাবার স্ট্যাম্প, প্যাড ইত্যাদি সব বানানো হল – যে কোষাধ্যক্ষ হল বা যে সভাপতি তারা জানতে পারল তাদের পদলাভের কথা যখন আধার কার্ড আর এককপি ফটো নিয়ে তাদের ব্যাঙ্কে চলে যেতে বলা হল। মিটিং রেজ্যুলেশনের জাব্দা খাতায় অনেক মিটিং এ উপস্থিত সদস্যদের সই নেওয়া হল। লোহার বীম কিনতে এসেছিল কয়েকজন – তাদের বলা হল সই করে দাও – তারা বলল আমরা তো অন্য গ্রামের – জানানো হল তাতে কিছু প্রবলেম নেই।

    গাদা গুচ্ছের ডকুমেন্ট যোগাড় হল – থানার বড় বাবু নাকি বলে দিয়েছে যখনই পরিদর্শনে যাই, সে রাত বারোটা বা ভোর পাঁচটা, ফোন করলেই যেন পুজো কমিটির একজন কেউ হাজির থাকে পুজোর তলায়। আর পর্যাপ্ত স্যানিটাইজার এবং মাস্ক নাকি সাপ্লাই দিতে হবে!

    ফায়ার বিগ্রেডের স্ট্যাম্প এবং পার্মিশন নিতে দুটো অপশন – তেরোশো এবং পাঁচশো টাকা। পাঁচশো অপশনটাই চ্যুজ করা হল


    সব জমা দিয়ে দেওয়া হয়েছে – দেখা যাক চেক বাউন্স করে কিনা! টাকা জমা হলে তারপর ভাবা যাবে কি করা যাবে সেই টাকা দিয়ে!

  • সম্বিৎ | ২১ অক্টোবর ২০২০ ১০:৩৩733033
  • সুকি আর যে লেখায় ফাঁকি মার তো সয়ে নেব, নিমোর লেখায় ফাঁকি মারলে তোমারই একদিন কি আমারই একদিন। ইদানিং একটু দায়সারা ভাব দেখছি যেন। সামহালকে।

  • সুকি | 165.225.125.65 | ০৪ নভেম্বর ২০২০ ১৯:১২733146
  • ন্যাড়াদা, ঠিক দায়সারা ভাব নয় - আসলে নিমো নিয়ে বড় লেখার সময় পাচ্ছি না, তাই সংক্ষেপে লিখছি কয়েকদিন - পরে বড় করে লিখতে হবে। 

  • সুকি | 165.225.125.65 | ০৪ নভেম্বর ২০২০ ১৯:১৪733147
  • হাবলা মাছ চাষ করেছে হাজরাদের ভুলুর পুকুরে। ভুলুর পুকুর মানে ওর দাদু ভবানী হাজরার পুকুর। মাছ যে চাষ করে সাধারণত দায় দায়িত্ব তার থাকে দেখভাল করার। ভবানী হাজরার বেলায় কেস উল্টো। মনে হচ্ছে হাবলাই মালিক! ভবানী হাজরা জমি জায়গা এত বেশী ভালোবাসত যে হাবলার অকর্মণ্যতার উপর ভরসা না করে নিজেই সব কাজ করে নিত, আর হাবলাকে গাল দিত খুব।
    এই ভাবেই চলছিল - হাবলার নিজের খাটনি বা খরচ কিছুই নেই। জামাই বাবু মাস কতক আগে সিলভার কার্প ছেড়ে দিয়ে গিয়েছিল পুকুরে, খাবারও দিয়ে গেল, মাছ বাড়ল নিজের মত। হাবলা একদিন সব মাছ ধরে ভবানী হাজরাকে অর্দ্ধেক দিয়ে বাকি টাকায় ফুর্তি করতে চলে গেল।
    ইতিমধ্যে ভবানী হাজরা গেল মরে, পুকুর দেখার আর কেউ নেই। সেদিন হাবলা বলল রূপচাঁদা মাছ ছেড়েছি, এবার মন দিয়ে মাছের কাজ করব।
    বলার দুদিন পরেই ঘোষ পাড়ার মিলনের সাথে সাউন্ড সিষ্টেম ভাড়া দিয়ে কোন গ্রামে চলে গেল। মিলন মাইক ভাড়া দেয়, "মিলন সাউন্ড"
    পুজো কাটিয়ে আজ ফিরলে রাস্তায় দেখা হাবলার সাথে জনতার। সৈকত বলল, "তোর মাছ বিশাল বড় হয়ে গেছে, পুকুর পাড়ের বাতাবী লেবু খেয়ে জলে হাত ধুতে গিয়ে দেখলাম হাতে কিলবিল করে মাছ ঠেকছে"
    হাবলা বলল, হেই, কি যে বল। দুদিনে মাছ এত বাড়ে নাকি?
    পাশ থেকে উদয় বলল,
    "বাড়ে না মানে? বেড়ে গেছে অলরেডি। আজ তো মাঠে পায়খানা করে তোর পুকুরে জলছোচ করতে নেমেছিলাম। তা আমাকে তো হাত লাগাতেই হল না! জলে পিছন ঠেকাতেই তোর মাছ পোঁদের চেটে সাফ করে চলে গেল"
    এবার হাবলা দেখলাম বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলচালে ভুগছে। সত্যি জাল দেবে মনে হয় মাছ বড় হয়েছে কি দেখার জন্য।
  • সুকি | 165.225.125.65 | ০৪ নভেম্বর ২০২০ ১৯:১৭733148
  • অষ্টমীর দিন মদ খাওয়া নিয়ে শাস্ত্র মতে নাকি কোন বারণ নেই – কিন্তু মাংস খাওয়া নিয়ে আছে! সেই নিয়ে ছেলে পুলেদের মধ্যে প্রবল তর্ক। লুচি-ছোলার ডাল দিয়ে আর যাই হোক র‍্যয়েল স্ট্যাগ খাওয়া যায় না! রাজু বললে মাছ শুভ জিনিস – মাছ দিয়ে চিলি-চিকেন হোক!


    প্রশ্ন করতে পারেন মাছ দিয়ে চিলি-চিকেন কি করে হতে পারে! সব ব্যাপারে প্রশ্ন করতে নেই – বুঝে নিতে হয়। এক্ষেত্রে বোঝার ব্যাপার হল চিলি সস থাকবে এমন কোন ডিস।


    শেষ পর্যন্ত পনীরে দাঁড় করানো গেল ব্যাপারটা। পনীর রাঁধবে কে? এই খানেও নিমোর ছেলেদের ভাগ্য! পুজোর ছুটিতে বাড়ি এসেছে দক্ষিন ভারতের মহিশূর শহরের বিখ্যাত রিসর্টের ফ্রন্ট ডেস্কে কর্মরত ঘোষ পাড়ার ড্যানি। সে বলল হোটেলে থেকে থেকে বড় শেফের কাছ থেকে শিখে নিয়েছে রান্নার গোপন সব ট্রিকস। 


    ওভান জ্বেলে বসিয়ে দেওয়া হল মিঃ ড্যানিকে। ড্যানি বাইরে থেকে কি পরিমাণে আঁতেল হয়েছে – স্প্যাচুলা চাইবে নাকি, সেই নিয়ে আমার একটু চিন্তা থাকলেও দেখলাম ড্যানির তেমন কিছু চেঞ্জ হয় নি – বিড়ি মুখে দিয়েই পনীর রান্না করল।



    মদের চাট হিসেবে দেখা গেল পনীর খুব একটা বেমানান নয়!


  • সুকি | 165.225.125.65 | ০৪ নভেম্বর ২০২০ ১৯:১৯733149
  • সংসার সমুদ্রে নিমজ্জনের হাত থেকে কে আর রক্ষা পায়! তার পর বিয়ে করে ফেললে সেই সংসারের চাপ তো আরো বেড়ে যায়। ফলতঃ নিমোর বিবাহিত ছেলেদের সবাইকে নিয়ে পুজোর  ফিষ্টি করা দিন বের করা খুব চাপের হয়ে গেছে আজকাল। এ বলছে –  “একাদশীর দিন আমাকে শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে, শালা-সমন্ধী মালের প্রোগ্রাম করে রেখেছে – ক্ল্বাব ঘরে দুপুর নাগাদ ঢুকব, বেরোবো সেই রাত দশটার পর”। ও বলছে “দ্বাদশীর দিন আমার শালীর জন্মদিন – সেটা মিস করা মানে আমার ঘাড়ে মাথা থাকবে না”। সে বলছে ত্রয়োদশীর দিন মাছ ধরতে যাওয়া আছে বৈঁচিগ্রামের দিকে, টিকিট কাটা হয়ে গেছে।


    আমার চিন্তা ছিল তপনকে নিয়ে – ফিষ্টিতে তপন না থাকলে কেমন খালি খালি লাগে। সে ছুটি নিয়ে এসেছে পুলিশের কাজ থেকে পুজোর কদিন – কার সাথে আন্ডারস্ট্যান্ডিং করে। 


    বলল, “আমাকে আর তোরা থাকতে বলিস না – বাঁড়া ফিষ্টি করতে গিয়ে আমার চাকরিটা খাবি তোরা”। 


    বললাম, তপন, দেখ না একটু। তপন জানালো, “দাদা, হবে না গো , না হলে কি আর ফিষ্টি মিস করি আমি”। তবে যাই হোক হয়েছিল – মানে তপন তার উর্দ্ধতন কর্তাকে কথার জালে ফাঁসিয়ে আরো একদিন রয়ে গেল।


    একাদশীর দিন ফিষ্টি লাগিয়ে বসে আছে ছেলেরা। এই দিনই আবার আমাদের বাড়িতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কচি কাঁচা দের। কোনটাই মিস করা যায় না – উপায়ও হয়ে গেল। রাজু বলল, “খুব পোড়া চিকেন খেতে ইচ্ছে করছে আমার”। জিজ্ঞেস করলাম, “চিকেন তন্দুরী”? উত্তর এল, “পোড়ানো পোড়ানো খেতে হবে মাংসটা”। বললাম, ঠিক আছে তা হলে তন্দুরী করে দেব না হয়। মিঃ ড্যানি পাশে ছিল – ঘাড় নাড়ল। বললাম তুই তাহলে করে দিস তন্দুর চিকেন। কিন্তু একাদশীর দিন মিঃ ড্যানি মামার বাড়ি চলে গেলেন ঠাকুর বিসর্জনে নাচতে। ফলতঃ আমাকেই নিতে হল ভার।


    হালকা সমস্যা দুটো – মুরগীর ঠ্যাং কোথায় পাওয়া যাবে? তিরিশটি ঠ্যাঙ চাই – গ্রামের দিকের দোকানে চিকেন থাই বা চিকেন ব্রেষ্ট বলে আলাদা করে কনসেপ্ট নেই কিছু। মুরগীর মাথা নামাও – কচ কচ কচ। কিন্তু তাপস পাশ থেকে বলল, ঠ্যাঙের ভার আমার। মল্লিক পাড়া থেকে কাটিয়ে নেব। আর কি চাই তুমি বল। আমি ফর্দ দিলাম, বললাম যে সকালের দিকে মাংস মেরিনেট করে ফ্রীজে রেখে দিতে হবে। তাপস আশ্বাস দিল আমাকে।


    দ্বিতীয় সমস্যা তন্দুর ওভানের অনুপস্থিতি। জানালাম, বারবিকিউ সিষ্টেমে হয়ে যাবে। কয়লার আগুনের ব্যবস্থা কর, আর তার উপর তারের জালি। রাজুর ততক্ষণাৎ ফোন করে দিল তার হার্ডওয়ার্সের দোকানের ম্যানেজার ভুলুকে – “ভুলু, দোকান বন্ধ করে আসার সময় ওই এক ইঞ্চি বাই এক ইঞ্চি ফাঁকের তারের জালি দেড় ফুট বাই দেড় ফুট কেটে নিয়ে আয়।


    সন্ধ্যাবেলা গিয়ে দেখলাম সব ছেলে পুলে মদ খেতে বসে গেছে – তাপস ফ্রীজ থেকে মেরিনেট করা চিকেন নিয়ে চলে এল। আমি বললাম, উনুনটা জ্বেলে আগুনটা রেডি কর, আমি বাড়ি থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে আসছি খানিক। মিনিট ২০ পর এসে দেখলাম আগুন উঠে গেছে – একজন দেখিয়ে দিলাম যে কি ভাবে চিকেন গুলো সেঁকতে হবে – আমি তিন পিস নামিয়ে আবার বাড়ি গেলাম অনুষ্ঠান দেখতে।


    এবার মিনিট ২০ পরে ফিরে দেখি সব ফাঁকা! আমি অবাক – এত তাড়তাড়ি তন্দুরী হবার কথা নয়। যাকে ভার দিয়ে গিয়েছিলাম সে আমাকে জানালো যে, জনতার ধৈর্য্য আর মানে নি। মদের চাট ফুরিয়ে এসেছিল – তাই বাকি মেরিনেট করা ঠ্যাঙ নিয়ে গিয়ে কড়াইতে তেল ঢেলে ভেজে খেয়ে ফেলেছে!


    কি আর করা যাবে – ছবি তুললাম। একজন বলল, “দাদা, তুমি এই ছবি আর ফেসবুকে দিও না। আমার বউ তোমার লেখা পড়ে। ফালতু ক্যাঁচাল হবে”।


    তবে মূল ফিষ্টির মাংসটা অপূর্ব রান্না হয়েছিল – মেন দায়িত্বে যার ছিল তাপস, ভুলু আর দুই একজন। সিরিয়াসলি বলছি এমন মাংস অনেক দিন পরে খেলাম। সাথের ছবি সেই মাংস এবং হালুইকরের।



  • Abhyu | 47.39.151.164 | ০৫ নভেম্বর ২০২০ ০৫:৩৪733151
  • বাহ

  • সুকি | 146.196.45.87 | ২৯ নভেম্বর ২০২০ ১৮:৩৯733269
  • দুর্গা পুজোর নবমীর আরতি হয়ে গেছে, রাতের বেলা  দুর্গা দালানে বসে গল্প করতে করতে বাড়ির গুরুজনদের জিজ্ঞেস করলাম, এই যে ব্রাহ্মণ ঠাকুরের ফ্যামিলি আজ তিন পুরুষ ধরে আমাদের বাড়িতে পুজো করছে – এদের খোঁজ পাওয়া গেল কি করে প্রথমে? ব্যাস, ছোটকাকু, গদাকাকু, সেজকাকু সব পুরানো স্মৃতিচারণ শুরু করল


    ছোটকাকু বলল – বড়জ্যাঠামশাই যখন ঠিক করল যে বাড়িতে দুর্গা পুজো শুরু করতে হবে, তখন এদিক ওদিক খোঁজ লাগানো হল বামুন পাওয়া যায় কোথায়। তখন মেমারীর পি এন দে-র পেট্রোল পাম্পে (যাদের বাড়ির ছেলে দিলীপ দে বিশাল ডাক্তার) কাজ করত ভট্টচার্য মশাই। সে কি চেহারা, মাথায় ইয়াব্বড় জটা।


    সে গল্প অন্যদিন।


    গদাকাকু বলল – ভট্টাচার্য মশাইয়ের আরতি দেখতে সারা গ্রাম ভেঙে পরত। তখন আমাদের বাড়িতে ঢোল বাজাত সানুই গ্রামের লক্ষণ। একদিন ভট্টাচায মশাই বললেন – লক্ষণ, তুই যদি আমাকে নাচাতে পারিস ঢোল বাজিয়ে আরতির সময় –


    ছোটকাকু থামিয়ে দিয়ে বলল – গদা, আমাকে বলতে যে, তোর তখন বয়স কত যে মনে থাকবে?


    গদাকাকু ছাড়বার পাত্র নয় – বলল, আমার দিব্যি মনে আছে!


    ব্যাস, আলোচনার ফোকাস সরে গেল – গদাকাকু আর ছোটকাকুর মধ্যে তুমুল তর্ক শুরু হয়ে গেল লক্ষণের ঢোল বাজাবার ঘটনা মনে থাকতে পারে কিনা সেই নিয়ে।


    সেই গল্পও অন্যদিন বলব


    সেজকাকু বলল – তোরা ঢোলের ফালতু বকবক থামাবি! জয়া-দার চোখ দুটো যে ভট্টাচাযয মশাইয়ের জন্য ফিরে এল সেটা তো বলছিস না?


    শোনা হল – শিবতলায় বোম ফাটাতে গিয়ে দুচোখ পুরো ইনজিওরড হয়ে যায়, রক্তে ভেসে যাচ্ছে। বর্ধমানের ডাক্তার দেখতে রাজি হল না – বলে দিল, এ গন্‌ কেস। তখন দাদাকে এনে শোয়ানো হল ঠাকুর দোয়ারের মা-য়ের সামনে। ভট্টাচাযয মশাই – এই ইয়া ব্বড় চোখ করে মায়ের সামনে গিয়ে বলল –


    সেই গল্পও হবে ক্ষণ –


    তো বুঝতেই পারছেন – এই ভাবেই আমাদের বাপ-কাকা-জ্যাঠারা দিন কাটিয়েছে। আর আমার দ্বারা তো কিছুই হল না – এমত অবস্থায় বাড়ির ইয়ং জেনারেশন বলল, একাদশীর দিন বাড়ির ভিতর প্যান্ডেল খাটিয়ে – স্টেজ করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে! অবশ্য নাটক-যাত্রা আমাদের বাপ-কাকারা দেদার করেছে। কিন্তু রবীন্দ্রনৃত্য! আমি তো ভাবলাম বিশাল এক খোরাক হতে চলেছে!


    অনুষ্ঠানের দিন দুপুরে বোন ভাড়ির ভিতরে খুন্তি আনতে গিয়ে মেজ জ্যাঠার গল্পের চক্করে ঢুকে গিয়েছিল। তখন জ্যাঠা বলছে – “সে তো অজিতদা বলল আমার বয়স হচ্ছে, যুবরাজের রোল আমাকে করা আর মানায় না, ওই রোল গুলো তুই করবি এবার সুশীল। আমি বললাম, সুশীল কি বলছ অজিতদা? তুমি জান না, আশেপাশের গ্রামে সবাই আমাকে তাপস বলে একডাকে চিনে গেছে এতদিনে! আমার পার্ট দেখার জন্য সব ওয়েট করে থাকে”


    মেজজ্যাঠার অর্দ্ধেক গল্পের মাঝে, তেনার মনে হালকা ব্যাথা দিয়ে বোন যখন খুন্তি নিয়ে ফিরল তখন মাংস রান্না হয়ে বাচ্চাদের খাওয়া হয়ে গেছে প্রথম পাতে!


    তো যাই হোক – যেটা বলার, আমাকে ভুল প্রমাণিত করল ইয়ং জেনারেশন। খুব সুন্দর সব কিছু করল। বাচ্ছারা দু-খানা ছোট নাটকও করল দারুণ। আমাকে ধরেছিল কিছু একটা বলার জন্য – আমি বললাম, দ্যাখ আমি কিছুই পারি না। শেষে বাড়ির লোকের সামনে বলতে গিয়ে মুখ দিয়ে খিস্তি বেরিয়ে গেলে তোদের অনুষ্ঠানের বদনাম হয়ে যাবে। আমাকে আর ঘাঁটালো না ওরা।


    পরের বছর হবে আবার মনে হচ্ছে – অংশু হয়েছিল সঞ্চালক, ব্যাপক করল। নিমো গ্রামে এই প্রথম ঘোষণা শুনলাম যেখানে ঘোষক “আপনারা তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে যাত্রা তলায় চলে আসুন – না হলে যাত্রা শুরু এবং শেষ হতে অনেক রাত হয়ে যাবে। কাল সকালে আমাদের সবারই অনেক কাজ আছে” এই ছাড়াও অন্য কিছু বলছিল! স্ক্রীপ্ট নাকি আগে থেকে লিখেছিল বলছিল।


    ঘোষ বংশের মজ্জায় এরা সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে মনে হল। আমার তো ব্যাপক লাগল অনুষ্ঠান।


    আমাকে এক জামাই বাবু বলল – “দেখলে সুকান, কি পারফর্ম করল ছেলে-মেয়েগুলো। তোমার ওই ফালতু বোম-বাজী-এর থেকে এ অনেক ভালো জিনিস। আর এমনিতে তো কনস্ট্রাকটিভ কিছু করতে তো তোমাকে কোনদিন দেখি নি”।


    আমি আর কি বলি – হেঁ হেঁ করে সরে গেলাম। সংস্কৃতির সাথে বোম-বাজীর যে এক প্রবল সম্পর্ক আছে সেটা আর কাকে বোঝাই!


  • syandi | 2a01:c22:cc97:800:b4b2:a013:b85a:6f94 | ০১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:২৫733274
  • যা বুঝছি সেটা হল নিমো গ্রাম হল একটি তীর্থক্ষেত্র না হলে কি এর এমনি এমনি এইসব বাঁধিয়ে রাখার মত ঘটনাগুলো সব নিমোতেই ঘটে? খুব ভালো হচ্ছে বললে কিছুই বলা হয় না সুকি। আরো চাই।

  • সুকি | 165.225.112.205 | ১১ ডিসেম্বর ২০২০ ১২:১১733334
  • ছোটবেলায় আমাদের মধ্যে ইস্কুলের পরীক্ষায় বেশী নম্বর পাবার চল ছিল না – মানে দরকারই হত না। পাশ দিতে পারলেই সবাই খুশী। বিশেষ করে জি টি রোড দিয়ে সাইকেল চালিয়ে গ্রাম থেকে ইস্কুল আমরা যারা যেতাম, তাদের জন্য বেশী নম্বর বেশ কল্পনার জিনিস ছিল।
    কিন্তু আজকাল কেস শুনছি ঘুরে গেছে। ছেলে পুলে দেদার নম্বর পাচ্ছে – এমনকি মাধ্যমিকে র্যাঙ্কও নাকি করে ফেলছে! তা এমনিতে আজকাল ভাবার মত বেশী জিনিস হাতের কাছে পাই না বলে ভাবা প্র্যাকটিস করা হয় না। কিন্তু কাল রাতে এটা নিয়ে ভাবলাম খুব করে।
    ভেবে ভেবে “মেথড অফ এলিমি্নেশন” পদ্ধতি প্রয়োগ করে বুঝলাম এর মূলে আছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের বিশাল অবদান। আমাদের ছোট বেলায় ওই রাস্তা ছিল না – তাই কলকাতা থেকে বর্ধমান যেতে গাড়ি, বাস, লরি ইত্যাদি ইত্যাদি সবাই জি টি রোড ব্যবহার করত। এবার হত কি নিমো বটতলার খানিকটা দূরেই ছিল জি টি রোডের ধারে কদমের ধাবা। সেখানে সকালে রাজ্যের লরিওলা গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেষ্ট নেবার জন্য রেডি হত। সারা রাত লরি চালিয়ে ক্লান্ত – এই পর্যন্ত কোন কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেষ্ট নেই ড্রাইভার এবং আমাদের মধ্যে। কিন্তু সকালে না হেগে তো আর রেষ্ট নেওয়া যায় না!
    আমরা ইস্কুল বা পড়তে যাচ্ছি – সারি সারি লরির ড্রাইভার পাশের জমির আলে পোঁদ ঝুলিয়ে হাগছে! মানে হেগো পোঁদ না দেখে আমাদের পড়াশুনা করাই অসম্ভব ছিল! সকালে উঠেই ওই জিনিস দেখে কি আর ভালো রেজাল্ট করা যায়! জিনিস আরো খতরনাক হয়ে উঠত গঙ্গাসাগর মেলার সময়ে। শয়ে শয়ে তীর্থযাত্রী বোঝাই বাস তখনকার বিহার থেকে আসছে – মাঠে হাগার লোক সেই সময় দশ গুণ বেড়ে যেত, আর আমাদের হেগো পিছন দেখার সম্ভাবনা। আর যদি সেই সময় পরীক্ষা পরে যেত কোনভাবে – তো ব্যাস হয়ে গেল। পাশ করাই চাপের। জ্যামিতি বক্সের ভিতরে ঠাকুমার দেওয়া মা দুর্গার পুষ্প কিচ্ছু করতে পারত না হেল্প!
    আমাদের নম্বর না হয় খারাপ হয়েছে – কিন্তু কিছুই কি ভালো হয় নি নিমো গ্রামের! হয়েছে বৈকী – পুরোপুরি অর্গানিক ফসল বেচেছি আমরা। কৃত্রিম সার দিতেই হত না রাস্তাপারের জমি গুলোতে!
    দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে যাওয়াতে ছেলেদের নাম্বার বেড়েছে, কিন্তু কমেছে জমির উর্বরতা। কিছু পেতে গেলে তো কিছু হারাতেই হয় !
  • Amit | 120.22.88.47 | ১১ ডিসেম্বর ২০২০ ১২:৩৮733335
  • ওফফ। পরীক্ষায় নম্বরের সাথে এসব রেভলিউশনারী থিওরী কোরিলেট করা একমাত্র  সুকির মাথাতেই আসা সম্ভব। যুগ যুগ জিও। 

  • সুকি | 165.225.113.83 | ২৮ জানুয়ারি ২০২১ ১২:৫২733593
  • বহু বছর বাদে এবারে ভাই দ্বিতীয়া করতে গিয়েছিলাম নিমো-তে। বোন বাড়িতেই এসেছিল ফোঁটা দিতে আর এসেছিল ছোট-মামা মায়ের কাছে ফোঁটা নিতে। বেশ কিছু দিন পরে মামার সাথে সামনা সামনি দেখা হল। গল্প হচ্ছে, কি এক কথা প্রসঙ্গে ছোট মামা বলল,  

    শুধু চলা দেখে বলে দেব বাচ্চার কি রোগ হয়েছে, ইকোলাই, নাকি ফাপা পেট, নাকি পটাশিয়ামের অভাব - আর যা যা হয় আর কি"

    অবাক হয়ে বললাম, "বল কি মামা! ডাক্তারি আবার কবে থেকে শুরু করলে"?

    মামা দেখলাম ততোধিক অবাক, "কি বলছিস তুই, কতদিন এই লাইনে হয়ে গেল বলত? এ সব না জানলে চলে নাকি"?

    জিজ্ঞেস করলাম, "তা মামা, কোন রোগটা সব থেকে ভয়ঙ্কর"?

    - "ইকোলাই বুঝলি, একবার যদি ঢুকে যায়, ডেলি ছয় সাতটা বাচ্ছা তো মরবেই!"

    - ডেলি সাতটা বাচ্ছা মরে তোমার সামনে?

    - হামেশাই মরে, কেয়ারফুল থাকতে হয়

    - এমনিতে গ্রোথ কেমন?

    - ওই ধর চল্লিশ দিনে দুই কেজি আড়াইশো গ্রাম মত। তুই আয় না, পরের বার তোকে খাওয়াবো

    মনে হচ্ছে ফ্রায়েড রাইসের সাথে পরের বার হয়েই যাবে! এই সব হাবিজাবি গল্প করতে করতে ফোঁটা নেবার ডাক পরে গেল। প্রচুর মিষ্ট সমেত থালা সামনে নিয়ে খাবো না, খাবো না ন্যাকামো করছি দেখে ছোট মামা দিল দাবকানি - কি হবে গোটা দশেক মিষ্টি খেলে? আমি বললাম, গায়ে গতরে তো কিছু করছি না এখন, তাই মোটা হয়ে যাব

    মামা বলল তুই নবাকে দেখে শেখ। শেষ কবে দেখেছিস? এবারে গিয়ে দেখবি কি করেছে নিজেকে

    যা শুনলাম নবা বিশাল বপু করেছে খেয়ে খেয়ে। সেদিন মামা জমির ধারে নবা-কে দেখতে পেয়ে বলল, অনেক তো বয়স হল রে নবা, বিয়ে থা কর। নবা নাকি একগাল হেসে জবাব দেয়, ওটা আর হল না কাকা এ জীবনে। খেয়ে খেয়ে যা শরীর করেছি, কোন মেয়ে আমাকে আর পছন্দ করছে না। তবে এই ভালো, বিয়ে হলেই বউ সেই আবার কম খাও কম খাও করে ব্যতিব্যস্ত করবে সংসারে অশান্তি, খুব চাপ

    মামাকে জিজ্ঞাসিলাম, তাহলে নবা এখন কি পরিমাণে খাচ্ছে?

    মামা জানালো কয়েকদিন আগে রায়না-তে নাইট ফুটবল টুর্ণামেন্ট দেখতে গিয়েছিল সাথে নবা। সেমিফাইনাল চলার সময় নবা ১৫ টা আটার রুটি, ১ কিলো মুরগীর মাংস আর একটা ৩৭৫ মিলি মদ দিয়ে ডিনার সারল। তার খানিক পরেই ফাইনালের সময় নবা-কে নাকি ৫০০ চানাচুর আর ২০০ মত মুড়ি গামছায় নিয়ে খেতে খেতে কোন এক ক্লাব-কে ভোকাল সাপোর্ট দিতে দেখা গেল!

    আমার মনে হয় নবাকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া উচিত নয়। বিয়ে তো সবাই করে কিন্তু নবার মত খেতে পারে কয় জন?

     

    খেয়ে যা আনন্দ পাচ্ছে নবা সেই আনন্দ কি আর সংসার ধর্ম দিতে পারবে!

  • সুকি | 165.225.113.83 | ২৮ জানুয়ারি ২০২১ ১২:৫৫733594
  • সে অনেকদিন আগের কথা - কলকাতায় মল কালচার তখনো তেমন চালু হয় নি। এলগিন রোডের 'ফোরাম' মল-ই হাতের কাছে ছিল।

    একদিন ঢুকেছি ছেলেদের সেকশনে একটা জিনিস কিনতে, টুক করে কিনে নিয়েই বেরিয়ে যাব এমন প্ল্যান। ঢোকার সাথে সাথেই একজন ছেলে এসে ইংরাজীতে কথা বার্তা চালু করে দিল, "হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ স্যার" - ইত্যাদি ইত্যাদি কি সব। আমি যতই বলছি, দরকার নেই, নিজেই খুঁজে নিচ্ছি - কিন্তু সে কিছুতেই পিছু ছাড়ে না।

    অনেকক্ষণ খুঁজে পেলাম না বলে বাধ্য হয়ে পিছন পিছন ঘোরা ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম,

    "দাদা, আপনাদের এখানে জাঙ্গিয়া নেই"?

    সেই শুনেই ছেলেটি প্রায় চমকে নিজের ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে চুপ করার ইঙ্গিত করল। সিনেমায় যেমন মুখ চেপে কোণের দিকে টেনে নিয়ে যায়, প্রায় তেমন ভাবে আমাকে টেনে নিয়ে গেল লিভাইস আর র‍্যাঙ্গলার জিন্সগুলো যেখানে রয়েছে সেই কোণ-টাতে। দিয়ে কানের গোড়ায় মুখ এনে ফিসফিস করে বাঙলায় বলল, "কি চাই"?  

    আমি জানালাম জাঙ্গিয়া খুঁজছি - সে বলল, তা এমন ভাবে জিজ্ঞেস করলেন কেন অন্য খদ্দেরের সামনে?

    আমি জানতে চাইলাম, তা জাঙ্গিয়া-কে ইংরাজীতে কি ভাবে চাইব?

    সে ছেলে দেখলাম ঘাবড়ে গেল! তখনো ওদের মনে হয় এই ব্যাপারে ইংরাজী  বলার ট্রেনিং দেওয়া হয় নি।

    তো যাই হোক ছেলেটি জাঙ্গিয়ার জায়গা দেখিয়ে দিল - বলল, একটা বাকেট এনে দিচ্ছি তাতে নিয়ে কাউন্টারে চলে যান। বললাম, লাগবে না, এই তো ছোট একটা প্যাকেট! ছেলে নাছোড় বান্দা - হাতে করে এই প্যাকেট নিয়ে ঘোরা নাকি বেমানান।

    জানতে চাইলাম, "এটা কি স্কুল লাইফে 'দফা-৩০২' বই কিনছি নাকি যে কাগজে মুড়িয়ে নিয়ে যেতে হবে!"

    সে ছেলে আমার রসিকতা অ্যাপ্রেসিয়েট করতে পারল না। চলে আসছি যখন তখন শুনলাম সে তার সহকর্মী-কে বলছে,

    "আগের দিন তুই বলছিলি না বাবলু যে আমাদের ট্রেনিং দেয় কেন? ট্রেনিং ছাড়া এই মাল গুলোকে তুই হ্যান্ডেল করতে পারবি?

    বাবলু সহমত হয়েছিল কিনা শোনা হয় নি সেদিন।

  • সুকি | 165.225.113.83 | ২৮ জানুয়ারি ২০২১ ১২:৫৬733595
  • যোগাযোগ বা সমন্ধ করে বিয়ে্র ব্যাপারে স্থানীয় জায়গার চায়ের দোকানের অবদান নিয়ে বাংলায় বিশেষ কিছু লেখা হয় নি। কফি হাউসের থেকে বাঙলা সংস্কৃতিতে এদের অবদান কিছু কম নয়। তো সেই নিয়ে কিছু লেখার কথা ভাবছিলাম - তখনি মনে এসে গেল সেদিনের ঘটনা

    আমাদের নিমোর রেল গেটের কাছে নারাণ জামাইয়ের চায়ের দোকান বিখ্যাত এবং তার পাশেই খোকন-দার চুল কাটার সেলুন। মানে গুলতানি করার এর থেকে আর ভালো জায়গা হয় না যাকে বলে।

    সেদিন দেখলাম পাশের গ্রাম কোলেপাড়ার রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি বেশ জোরে আসছে। কিন্তু রেল গেট বন্ধ - তাই থামতেই হল গাড়িটিকে। তখনো ঘরে ঘরে এত বাইকের চল হয় নি - তাই একবার গেট পড়লে সেটা তোলার তেমন কারো তাড়া থাকত না। এখন তো পনেরো মিনিটের জন্য গেট বন্ধ থাকলে গোটা তিরিশেক বাইক জমা হয়ে হর্ণ বাজিয়ে নরক গুলজার করে দেয় ছোকরা গুলো।

    গেট পরে গেছে বলে গাড়ি থেকে লোকগুলো নেমে নারাণের দোকানে চা খেতে বসল। তিন জন বয়ষ্ক লোক দেখলাম মানসার মন্দিরের পাশে টিউবওয়েলে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিচ্ছে - আর একে আপরকে বলছে, "খুব বেঁচে গেছি বুঝলি! কি বাড়ি রে বাবা! এখানে বিয়ে দিলে তো ভাইপোকে রাঁচি পাঠাতে হবে কদিন পরেই"।

    জমাটি গল্পের গন্ধ পেয়ে দোকান থেকে বাকি লোকেরা - কি হল দাদা, কি হল দাদা - কেস কি?

    একজন বললেন, "আর বলবেন না দাদা, আপনাদের পাশের গ্রামে মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম। চা জল খাবার দিল - আমরা বললাম, এবার মেয়েকে আনুন। উনারা মেয়ে আনতে গেলেন - খানিক পরে দেখি তিনটি মেয়ে একসাথে ঘরে ঢুকে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল সার দিয়ে। আমার ভাইপোকে বলে - বিয়ে করতে হলে আমাদের তিনজনকে একসাথে করতে হবে!

    পাশের ভদ্রলোক বলে উঠলেন, "আরে আমি তো সবে সন্দেশটা মুখে ঢুকিয়েছি - সেই শুনে আমার গলায় সন্দেশ লেগে গেল। শুকনো জিনিস গলায় লেগে আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছিলাম"।

    দুনিয়ার খবর থাকে চুল কাটার সেলুনে - ভিতর থেকে কে বলে উঠল, ", আপনারা দুলাল-দার বাড়ি গিয়েছিলেন মেয়ে দেখতে! যাবার আগে এখানে থেমে জিজ্ঞেস করে নিলে আপনাদের অনেক সময় বাঁচত"!

    ছেলে চা খেতে নামে নি গাড়ি থেকে - আতঙ্কিত মুখে বসে আছে ভিতরে। এ যুগের ছেলে দ্রৌপদি হবার থেকে খুব বেঁচে গেছে।

    দুলাল আবার বাবাদের ব্যাচের - সব বন্ধু স্থানীয়। পরের দিন জিজ্ঞেস করা হল, "কি রে দুলাল, তোর মেয়েরা বিয়ের ব্যাপারে কি বলছে?"

    দুলালকা চিন্তিত মুখে জানালো, "আর বলিস না খুব চাপে আছি - মেয়েরা বলছে বিয়ে করবে না এখন। তাদের মায়ের সাথে রোজ ঝগড়া - তিন বোন মিলে কি প্ল্যান বের করেছে। কেউ মেয়ে দেখতে গেলেই তিনজনে একসাথে সামনে দাঁড়িয়ে বলছে বিয়ে করলে তিনজনকেই করতে হবে। আবার এক পক্ষকে সেদিন বলেছিল, দেখুন আমাদের মধ্যে কাকে পছন্দ হয়। যাই হোক সেই সব শুনে কেউ আর দাঁড়াচ্ছে না - দুরদার করে পালাচ্ছে"।

    আমি বুঝলুম শুধু চেঁচামেচী করলেই বিদ্রোহ হয় না! বুদ্ধি থাকলে নীরবেও বিপ্লব ঘটানো যায়!

  • সুকি | 165.225.113.83 | ২৮ জানুয়ারি ২০২১ ১২:৫৭733596
  • তখন প্রখর যৌবনকাল চারিদিকে প্রেম প্রেম এবং ঈষৎ সাহসীদের আউট-অব-দ-বক্স ইন্টুমিন্টু চলছে পুরোদমে।

    আমাদের গ্রামের এক জ্যাঠার ছেলের সাথে পাশের গ্রামের মেয়েদের কিছু তেমনই চলিতেছিল। তবে সেই ছেলে দারুণ করিৎকর্মা নানাদিকে নানা ভাবে নিজেকে লাইমলাইটে এনে ফেলেছিল। কিন্তু হালকা প্রবলেম হল শুধু নিজের গায়েই লাইম-লাইটের আলো না সীমাবদ্ধ রেখে পাশের গ্রামের এক মেয়েকেও হালকা শেয়ার দিয়ে ফেলেছিল।

    এমন ভাবে মেয়ের লাইমলাইটে আসা সেই মেয়ের বাপ সহ্য করতে পারল না। একদিন খুব রেগে গিয়ে আমাদের গ্রামে হাজির ছেলের বাপকে গিয়ে বলে, দাদা তুমি তোমার ছেলেকে সামলাও একটু। আমার মেয়েটার যে বদনাম হয়ে যাচ্ছে

    ছেলের বাপ, মানে আমাদের পাড়ার জ্যাঠা এমন অনুরোধ শুনে খাপ্পা হুঙ্কার দিল:

    আমার এঁড়ে খোলা ছাড়া থাকবে ময়দানে। তোর দরকার হলে তুই তোর গরু আটকে রাখ।

    পাড়ায় কাদের বাড়ি তখন এক কুটুম্ব এসেছে সেও শুনছে এই সব ডায়লগ। আমাদের তেমন কিছু চমক লাগে নাই আমরা অভ্যস্ত এমন হামেশাই হয়। কিন্তু সে ছেলে শহুরে বেশ জোরেই বলে ফেলল, এ সব তো মিসোজিনিষ্ট কথা বার্তা! বলা যায় নাকি এগুলো!

    জ্যাঠা শুনতে পেয়ে গেছে এদিকে ঘুরে বলল

    আচ্ছা, ওখানে বসে বসে মেসো কি জিনিস বলা হচ্ছে? আর আমি তোর মেসো হলাম কবে থেকে রে! আর যদি মেসোই বলতে চাস, তো শুনে নে যে মেসো এমনই জিনিস। কাউকে ভয় খাই নাকি আমি? আমার এঁড়ে ছাড়াই থাকবে –“

    ইত্যাদি ইত্যাদি

  • সুকি | 165.225.113.83 | ২৮ জানুয়ারি ২০২১ ১২:৫৮733597
  • গাঁজা খাবার জন্য এত সাধাসাধি আমাকে আগে কেউ করে নি! মানে করার দরকারই হত না! সেই হিসাবে আমি আমষ্টারডামে বেশ অ্যাট হোম ফিল করতাম। পার ক্যাপিটা গাঁজা কনজামশন হিসেব করলে আমাদের নিমো সেই সময় টেক্কা দিতে পারত আমষ্টারডামকে।

    নিমো ভারত সেবক সমাজ খুব পরিষ্কার থাকত তখন মানে গাঁজা খেয়ে নিলেই ফিনিস! গ্রামের ছেলেপুলে গাঁজা থেকে মদ-এ সিফট করে যাবার পর বিশাল প্রবলেম তৈরী হল। গাঁজাখোর-রা আর যাই হোক ফালতু বাওয়াল করত না, কিন্তু মদ খেতে এই জিনিসটা বেড়ে গেল। আর তা ছাড়া ভারত সেবক সমাজের ঘর খালি মদের বোতলে ভরে উঠল। অ্যাস-ট্রের কাজে লাগানো হচ্ছে খালি বোতল, ক্রিকেট মাঠে জল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মদের বোতল-এ ভরে, ওজন করা ভালোবাসা যাত্রা দিয়ে লাভের পয়সা থেকে যে টি ভি-টা কেনা হয়েছিল তার স্ট্যান্ড ভেঙে পরলে ঠেকনা দেওয়া হচ্ছে মদের বোতল দিয়ে, সরস্বতী পুজোর ডেকরেশন হচ্ছে বোতলের, সরকাঠি গাঁথার জন্য কেউ আর গোবর আনতে যাচ্ছে না, বোতলে সরকাঠি ভরে খাড়া করে পুজো হচ্ছে! একদিন তো দেখলাম একজন লাইব্রেরীর আলমারী থেকে উষাবালা দাসীর গিফট করা আশুতোষ রচনাবলীর খন্ড গুলো নিয়ে রশিদ চাচার বাঁশবাগানে ফেলতে যাচ্ছে! জিজ্ঞেস করলে জানালো, বাঁড়া বোতল রাখার জায়গা হচ্ছে না, আলমারীতে বই রাখবে! 

    তো যাই হোক মূল কথায় ফেরা যাক। আমষ্টারডামে তখন বেশ গরম পরে গেছে, মানে গ্রীষ্মকাল চলে এসেছে দোরগোড়ায়। খুব সকালে অফিস যাবার জন্য বেরিয়েছি ব্রাউজারগ্রাগট ক্যানালের ধারে ব্রীজটার কাছে একটা ছেলের সাথে দেখা এলোমেলো জামা কাপড় পরে আছে। আমাকে জানতে চাইলো কাছের পুলিশ স্টেশনটা ঠিক কোনদিকে আমি জানালাম ওই দিকেই যাচ্ছি, একসাথে হাঁটা যেতে পারে। সে ছেলে পাশে পাশে চলতে লাগলো জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার এতো সকালে পুলিশ স্টেশন কেন? বলল, সব কিছু চুরি হয়ে গেছে। কাল রাতে গাঁজা খেয়ে মনে আছে ওয়েষ্টার পার্কে গিয়েছিল ঘুরতে,ওখানেই শুয়ে পড়েছিল তার পর কিছু মনে নেই, সকালে উঠে দেখে কে যেন সব কিছু ঝেড়ে দিয়েছে পরনের কাপড় ছাড়া!  পাসপোর্ট ও চুরি হয়ে গেছে তাই এখন পুলিশ স্টেশন যাচ্ছে।

    এই বলে আমাকে সিগারেট ধরালো একটা আমাকে অফার করল। খাব না বললে জানালো সেগুলো শুধু সিগারেট নয়, তাতে গাঁজা ভরা আছে! বললাম, এখন তো অফিস যাচ্ছি, খাওয়া ঠিক হবে না। সে তখন বলে অফিসে গাঁজা খেয়ে গেলে কিচ্ছু হবে না, বরং হেল্প করবে টেনশন কমাতে। আমাকে জিজ্ঞেস করল, এই যে আমার কাছে কিচ্ছুটি নেই, পাসপোর্ট পর্যন্ত, কিন্তু টেনশন নিতে দেখছো আমাকে? সব এই গাঁজার জন্য

    বললাম, দেখো গাঁজার উপকারিতা নিয়ে আমাকে আর বোঝাতে হবে না। পাসপোর্ট আবার পেয়ে গেলে আমাদের নিমো ঘুরে যেও একদিন। সুবান-খুড়োর সাথে আলাপ করিয়ে দেব। খুব খুশী হবে।

    ইদানিং একটু টেনশনে ছিলাম, সুবান খুড়ো নাকি গাঁজা ছেড়ে দিয়েছে! শেষে বিদেশী ছেলেটা গ্রামে এলে কি ভাবে অভ্যর্থনা করব! কিন্তু এদিকে গ্রামে কেউ বিশ্বাসই করতে চাইছে না যে খুড়ো গাঁজা ছাড়তে পারে বলে! যদি কেউ বিশ্বাসই না করে, তাহলে আর কার জন্য গাঁজা ছাড়া এই ভেবে নাকি খুড়ো আবার ধরছে। অতিথির মান রক্ষার হয়েই যাবে মনে হচ্ছে এই যাত্রায়!

  • সুকি | 165.225.113.83 | ২৮ জানুয়ারি ২০২১ ১২:৫৯733598
  • সেবারে ছিঁচকে চোরের বেশ উৎপাত শুরু হল নিমোতে। থালা-বাটি থেকে শুরু করে বেশ কিছু জিনিস হাপিস হয়ে যাচ্ছে গেরস্থের বাড়ি থেকে। তাই গ্রাম কমিটির মাধ্যমে ঠিক হল রাতে পাহাড়া দেওয়া হবে -বাড়ি বাড়ি পালা পরবে পাহারা দেবার।

    সাধারণত বাড়ির বড় বা যৌবন প্রাপ্ত ছেলেরাই  পাহারা দিত। কিন্তু কিছু কিছু হালকা গোঁফ উঠছে ছেলেরও পুরকি ছিল রাতে পাহারের নামে ভাঁট মেরে ফুর্তি করার!

    সেদিন দলে তেমনি এক চিঙড়ি ঢুকে গেছে - রাত বেশ গভীর, কামার পাড়ার দিকে টহল চলছে। গ্রীষ্ম কাল বলে গ্রামের লোকজন জানালা খুলেই সব শুত। জামাই-এর বাড়ির কাছে গেলে শোনা গেল জানালা দিয়ে হালকা গোঙানির শব্দ আসছে। চিঙড়ি বেজায় উত্তেজিত - সে একটু আগে এগিয়ে গেছিল বলে শব্দটা শুনতে পেয়েছে। মূল দলে ফিরে রিপোর্ট করল সন্দেহজনক ব্যাপার বলে। দিলীপদা এগিয়ে গেল যাচাই করতে - হালকা পায়ে জানালার কাছ থেকে কান পেতে শুনে ফিরে এসে জানালো ফলস কল্‌ - তেমন কোন কেস নয়।

    চিঙড়ি ছাড়বে কেন - সে জিজ্ঞেস করেই চলে, "তাহলে গোঙানির শব্দটা কিসের"। প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে দিলীপদা বলল, "ও কিছু নয় - জামাই এখন রথে চড়েছে"।

    চিঙড়ি আরো কনফিউজড - কিসের রথ দিলীপদা - চড়লে শব্দ হবে কেন? দিলীপদা বলে - তুই বড় হলে বুঝবি।

    ছেলে ছাড়ে না - বিরক্ত হয়ে তাকে বলা হল, তুই নিজের বাপকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে নিস।

    পরের দিন শুভ ঠাকুরের দালানে দিলীপদা বসে আছে - চিঙড়ির বাবা সাইকেলে যেতে যেতে ব্রেক মেরে থামলো,

    "হ্যাঁরে দিলীপ - জামাই কাল রাতে রথে চেপেছিল? আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না! কিসের রথ অসময়ে - জামাইকে আবার ঠাকুরে পেল নাকি, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না"!

    দিলীপদা আর কি বলে - "কাকা এ রথ সে রথ নয়, তোমাকে আর কি বলি খুলে বলো তো -"

    কাকা, "ও বুঝেছি", বলে সাইকেল চালিয়ে চলে গেল

    কি বুঝেছিল কে জানে! আউট অব কনটেক্সেট-এ রথে চড়া ডিকোড করা সহজ জিনিস নয়!

  • সুকি | 49.207.219.172 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২৩:১১733649
  • আজকে একজন আমাকে বার খাওয়াবার চেষ্টা করছিল খুব – বেশ খানিক চেষ্টা করে রণে ক্ষান্ত হল। এমন নয় যে আমি বার খেতে চাই না, কিন্তু বার খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। অনেকটা টাকা-পয়সা করার মত – খুব চাই টাকা-পয়সা করে বিশাল বড়লোক হতে। কিন্তু হয়ে ওঠে না!


    বার কেন খাই না তার পিছনে অনেক কারণ আছে, তবে এক অন্যতম প্রধান কারণ হল আমাদের বাড়িতে মাঠে কাজ করার লোক বাউরিপাড়ার সুবলদা। সুবলদা যে কবে থেকে আমাদের বাড়িতে কাজ করছে জানতাম না – সুবলদার বাপও করেছিল, সুবলদার ছেলেও করেছে।  লোক খুব মাইডিয়ার ছিল, খালি বিকেলের দিকে মাল খেয়ে বেশ মাতলামো করত।  আমাদের বাড়িতে ঠাকুমার কাছে গিয়ে সুখ-দুঃখের গল্প করত।  নেশার ঘোরে মাঝে মাঝে ঠাকুমা বা অন্য সময় মা বলে ডাকত। ইংলিশেও কথা বলত, যেমন, “এ মা – গিভ মি এ গ্লাস অফ ওয়াটার”, কোথায় শিখেছিল জানি না।


    তখন ইংল্যান্ডে পড়াশুনা করি, ছুটিতে এসেছি বাড়িতে।  বিকেলে নিমো স্টেশনে আপ প্লাটফর্মে দেখা – তখনকার দিনে এম-২১৯ ট্রেন আসার সময় হয়ে গেছে, অনেক লোক ওয়েট করছে – আশেপাশের গ্রামের লোকজন সমেত।  মদে চুর হয়ে স্টেশনে বসে গুলতানি করছে সুবল-দা – আমাকে দেখতে পেল –


    - কি রে সুকান। অনেক দিন পরে। তোর বাপ বলল তুই নাকি ডাক্তার তৈরী হচ্ছিস!


    - ওই আর কি, ঠিক রুগী দেখার ডাক্তার নয় সুবলদা


    - কে জানে বাঁড়া কি হচ্ছিস! কয়েক বছর আগে তোর বাপ বলল ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে, আবার এখন বলছে ডাক্তার! 


    - আমি ইঞ্জিনিয়ার ই – এখন ডক্টরেট ডিগ্রী বলে, সেটা করছি


    - দেখ সুকান, মাল খেয়েছি বলে যা খুশী বোঝাতে আসিস না।  গিয়ে বাপের সাথে আলোচনা করে ঠিক কর লোককে কি বলবি! ছেলে বলছে ইঞ্জিনিয়ার, বাপ বলছে ডাক্তার – মান সম্মান তো রাখবি নাকি ঘোষ বাড়ির? যা বলবি সবাইকে এক বলবি!


    - সুবলদা, তুমি ভুল করছ।  আমি এখন বিলেতে ইঞ্জিনিয়ারিং-ই পড়ছি। তাছাড়া তুমি আমাদের বাড়িতে এত দিন কাজ করছ আর এটা জানো না?


    - তোদের বাড়িতে কাজ করি বলেই তো বাঁড়া সন্দেহটা হচ্ছে। ছোট থেকে তোর মুখে পড়াশুনা নিয়ে তো কথা শুনলাম না! গুলি, ক্রিকেট, নারকেল চুরি, খিস্তিই তো শুধু শুনেছি! হঠাৎ করে শুনলাম সেই সুকান নাকি বিলেত গ্যাছে!  পালপাড়ার ইয়ের ছেলের মত নার্সিং হোমের নাইট গার্ড দিস না তো? দু-চারটে ঔষুধের নাম শিখে নিয়েছিস, দিয়ে ডাক্তারি মারাচ্ছিস


    - না গো, তেমন নয় – আমি বিলেতেই থাকি সত্যি করে


    - আচ্ছা, বিলেতে থাকলে ইংরাজী শিখেছিস?


    - জানি বৈকী একটু আধটু


    - তাহলে বলতো, কচুপাতার ইংরাজী কি?


    বলাই বাহুল্য কচুপাতার ইংরাজী জানা ছিল না – পারি নি বলে সেই এক স্টেশন লোকের সামনে সুবল-দা কি হ্যাঠা করল। 


    অবশ্য এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় – এমন মাঝে মাঝেই আমার সাথে হয়। এই সব হবার পর কি বার খাওয়ানো অত সোজা!

  • সুকি | 49.207.219.172 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২৩:১২733650
  • “বাপি-মা, তোমাদের মুখে সামাজিক কালি লেপন হোক এমনটা আমি চাই নি বিশ্বাস কর! কন্যাশ্রী আর রূপশ্রী-র টাকার আমার খুব দরকার। তাই বাড়িতে প্যান্ডেল এবং কার্ড ছাপানো পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হলই! যে আত্মীয়রা বিয়ের জন্য বাড়িতে এসে গেছে তাদেরও এই ব্যাপারটা  বুঝিয়ে বলো”।


    আমাদের ওখানকার এক মেয়ের বিয়ের ঠিক হয়েছে, কিন্তু সে বাড়ি থেকে ভালোবাসার মানুষের সাথে পালিয়েছে বিয়ের ঠিক একদিন আগে। যাবার আগে মেয়ে ওই চিঠি লিখে গেছে। পাড়ার এবং বাড়ির আত্মীস্বজন হইচই শুরু করে দিয়েছে, 


    “মুখপুড়ি – পালাবিই যদি আগে গেলি না কেন? কার্ড ছাপিয়ে, প্যান্ডেল করে বাপের মুখ পোড়ানোর কিছু দরকার ছিল কি”?


    এটা আমরা সবাই জানি যে মেয়েরা আজকাল খুব স্বাধীন চেতা হয়ে উঠছে – যেটা সমাজ এগিয়ে যাবার লক্ষণ। ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দিতে চাইলেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছে ভালোবাসার মানুষের সাথে। এই পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু বড্ড দেরী করে বাড়ি থেকে পালাচ্ছে আজকাল।


    আপনিও হয়ত ভাবছেন তাইতো, আগে পালালেই পারতিস! 


    কিন্তু ব্যাপার অত সহজ নয়! মেয়ে বাড়ি ছাড়তে পারছে না যতক্ষণ না তার অ্যাকাউন্টে কন্যাশ্রী এবং রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা ঢুকছে। নতুন সংসার পাততে এই টাকা খুবই জরুরী।


    খুলে বলি তাহলে কেসটা – কন্যাশ্রী প্রকল্পের পঁচিশ হাজার টাকাটা মেয়ের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে কিছু ভেরিফিকেশনের পর। এই ভেরিফিকেশন করতে আসে স্থানীয় ব্লক ডেভলেপমেন্ট অফিস থেকে – মেয়ের যে বিয়ে হচ্ছে তার প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে নাকি বাড়ির প্যান্ডেল এবং বিয়ের কার্ড।


    মোদ্দা কথা হল এই দেরী করে ডিপারচারের পিছনে আছে কন্যাশ্রী এবং রূপশ্রী প্রকল্প। আজকের টাইমে কন্যাশ্রী বা রূপশ্রী প্রকল্প হয়ে মেয়েদের বাবাদের এমন প্রবলেম হয়েছে তা কে জানত! খুব চিন্তায় পড়ে সকালে বাড়িতে ফোন করলাম – শুনলাম শুধু একটা কেস নয়। এমন আরো হচ্ছে –


    আমারই এক প্রায় ভায়ের মতই বলা যেতে পারে, তার বিয়ের ঠিক হয়েছিল। অনেক দিন বিয়ে খাই নি বলে আশা করেছিলাম যে এবারে গিয়ে বিয়ে খাব গ্রামে – সব যখন ঠিকঠাক। সেই মেয়েও বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে – এবং ছেলের বাড়িতে উঠে প্রথম একসাথে বর-বউ এর দুপুরে খেতে বসার ছবি তুলে আমার ওই ভাইকে হোয়াটস্‌অ্যাপে পাঠিয়েছে 


    “চলে এলাম বুঝলে আমার নতুন বাড়িতে। এই দেখ আমার ভরা সংসার – আর আশীবার্দ করো আমাদের দুজনকে”।

  • সুকি | 49.207.219.172 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২৩:১৩733651
  • এই পাত্র পাত্রীর নাম বদল করে লেখা আমার পক্ষে চাপের।  নিমো নিয়ে লেখাতে সেই চাপ থাকে না, কারো নাম বদলের প্রয়োজন হয় না।  তারাও আমার লেখা পড়ে – দেখা হলে আবার বলে, “ওই, তুই তো ওটা লিখলি না যে কি ক্যালানি দিল আমায় সেদিন – তার আগেই গল্প শেষ করে দিলি”! কিন্তু স্কুল লাইফের অনেকে এখন কেউকেটা হয়েছে, ভর্তি সংসার। তাই সেফ সাইডে থাকার জন্য নাম বদল করে লেখাই ভালো। তাই আজকের গল্প সব পাত্র পাত্রীর নাম পালটে দিলাম – 


    আমার লেখা পড়ে নিশ্চয়ই এটা বুঝতে পারেন যে একদম চাষা টাইপের পাবলিক।  সারা স্কুল কাটিয়েছি চাষার মত ড্রেস পরে – একটা খাদিমের চপ্পল ছিল বর্ষার কমলা রঙের, সেটাই সব সিজিনে পড়তাম – আর তার সাথে ছিল ম্যাচিং করা একটা কমলা রঙের ব্যাগ – “পিউর লেদার হাউস” থেকে কেনা রেক্সিনের জালি মাল।    


    তো তখন ক্লাস নাইনে পড়ি, আমার প্রিয় বন্ধু, ধরা যাক তার নাম অরিন্দম – বলল, “ওই তুই কালকে মাঞ্জা দেওয়া ড্রেস পরে আসবি”।  আমি ঘাবড়ে গেলাম – অরিন্দম আবার ক্লাসের সেকেন্ড বয়, কথা ফেলেও দেওয়া যায় না।  পড়াশুনায় ভালো ছেলেদের গায়ে গায়ে লেগে থাকতে বলেছিল বাপ, যদি কিছু ভালো হয় আমার।  জিজ্ঞেস করলাম, “মাঞ্জা দেওয়া ড্রেস আবার কি? ওসব আমার নেই”।  অরিন্দম জানালো মাঞ্জা দেওয়া ড্রেস মানে কাচা জামাকাপড় – আর পায়ে বুট পরে আসতে হবে।  বাড়ি গিয়ে তোলপাড় করে বুট খুঁজছি – সেই বছর খানেক আগে পড়েছিলাম বুট – বারন্দার তক্তার তলা থেকে বেরুলো সে জিনিস – শুকনো নারকেলের আড়ালে লুকিয়ে ছিল। কিন্তু বুটের গায়ে দেখলাম পচা আলুর দাগ – সারা সন্ধ্যে সেই দাগ তুললাম ঘষে ঘষে।  ঠাকুমা কানের গোড়ায় বলেই চলেছে, “গোবর লেপে দে না একটু জুতোয়, ঠিক উঠে যাবে দাগ”।   ওদিকে তখনো জানি না কেন বুট পরে যাচ্ছি, ক্লাসিফায়েড ইনফরমেশন ছিল বলে আমাকে তখনো জানায় নি অরিন্দম।  


    পরের দিন সেজে গুজে, মানে আমার পক্ষে যতটা সাজা সম্ভব তেমন সেজে ইস্কুল গেলাম।  টিফিন বেলায় ব্যাপার ফাঁস করল অরিন্দম। বলল, ওই দিন বিকেলে নাকি প্রেম নিবেদন করতে যাবে সে, আমি তার উইংম্যান।  শুনে আমার বীচি শুকিয়ে গেল – অনেক কষ্টে জিজ্ঞেস করলাম, “আর কাউকে পেলি না! শেষে আমি”! উত্তরে এল, একজ্যাক্টলি – কাউকে পাই নি বলেই তো তোকে নিয়ে যাওয়া।  আর তা ছাড়া তোর মত ক্যাবলা টাইপের ছেলে সাথে থাকলে মেয়ের মাইন্ড ডাইভার্ট হবার চান্স নেই।


    প্রশ্ন করে জানতে পারলাম – আমাদের ইস্কুলের কিছু দূরে যে মেয়েদের ইস্কুলটা আছে – ধরা যাক তার নাম, ‘রসিকলাল বালিকা বিদ্যালয়’ সেখানকার একটা মেয়েকে অরিন্দমের খুবই পছন্দ হয়েছে।  একজন কমন বান্ধবী মারফত ট্রাই করে করে ম্যানেজ হয়েছে তার বাড়িতে আজ প্রথম প্রেম নিবেদন হবে।  সেদিন সেই কমন বান্ধবীর বাড়িতে কেউ থাকবে না।  মনে করে নেওয়া যাক সেই কমন বান্ধবীর নাম রঞ্জিতা – পুরানো পোষ্ট অফিস পাড়ায় বাড়ি।


    স্কুল থেকে বেরিয়ে যাবার পালা এবার ওদের বাড়িতে – আমার তো টেনশন হচ্ছেই, তার থেকেও বেশী টেনশন হচ্ছে দেখলাম অরিন্দমের।  প্রায় তিন-চারটে গোল্ডি সেন্ট লাগানো রুমাল ভিজিয়ে ফেলল ঘামে।  আমাকে একটা মিষ্টির দোকানে নিয়ে গিয়ে বলল, “যা খাবার এখানে পেট ভরে খেয়ে নে – রঞ্জিতার বাড়িতে গিয়ে খাই খাই করবি না, এটা আমরা কোন মেয়ে দেখতে যাচ্ছি না যে প্লেটে করে মিষ্টি এগিয়ে দেবে কেউ”।  আমি বিনা বাক্যব্যায়ে খেয়ে নিলাম। 


    পরের দৃশ্য রঞ্জিতার বাড়ির বসার ঘর – সেই মেয়েটির নামটাও পালটে দিই, ধরা যাক তার নাম শর্বরী।  আমি, অরিন্দম, শর্বরী – সবাই মাথা নীচু করে বসে আছি।  রঞ্জিতাই দেখলাম ফট ফট করছে – যা বুঝলাম এই বসার ঘরে আরো অনেক অনুরূপ প্রেম নিবেদন হয়েছে, পাত্র পাত্রী গুলোই যা আলাদা ছিল!  মাথা নীচু করে বসে থাকায় আমার কোন প্রবলেম নেই – পুরো অভ্যাস আছে – ক্লাসে পড়া না পেরে এইভাবে বসে থাকাটাই রেওয়াজ ছিল।  ওদিকে সন্ধ্যে হয়ে আসছে, রঞ্জিতা তাগাদা দিচ্ছে, “কি রে কিছু কথা বল তোরা নিজেদের মধ্যে”।  দিয়ে ওদের ঠেলে পাশের ঘরে পাঠিয়ে দিল প্রাইভেসির জন্য। 


    এর পরে সেই বসার ঘরে আমি আর রঞ্জিতা – কি বলব ভাই কি র‍্যাগিং করল আমায়! পরে কলেজ হোষ্টেল লাইফেও এত র‍্যাগিং-এর সম্মুখিন হতে হয় নি আমাকে! আমি হাত জোড় করে রঞ্জিতা-কে বললাম, “আমাকে ছেড়ে দাও দিদি – সেকেন্ড বয় ডেকেছে বলে সাথে এসেছি, আমার আর কিছু ইচ্ছা, অভিপ্রায়, আকাঙ্খা – কিচ্ছু নেই। অরিন্দম আমাকে আসার আগে খাইয়েও এনেছে, তাই তোমাকে চা-ও করে দিতে হবে না। প্লীজ আমাকে ছেড়ে দাও”।


    ওদিকে অরিন্দম আর শর্বরী কি কথা বলল জানি না – দেখলাম বেরিয়ে আসছে ওরা। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।  বাইরে এসে জুতো পড়ছি দুজনে হেঁট হয়ে – আমি ফিসফাস করে অরিন্দম-কে জিজ্ঞেস করলাম, “কেমন গেল রে?” বলল, “মনে হচ্ছে পজেটিভ”।   শুনে খুব আনন্দ হল – তারপরেই সেই ঐতিহাসিক ভুলের সূত্রপাত। আমাকে বলল, “তুই এক মিনিট দাঁড়া, একটা চিঠি এনেছিলাম শর্বরীর জন্য, দিয়ে আসি।  তুই ব্যাগটা ধর”।


    দেখলাম সেই ব্যাগ থেকে অরিন্দম একটা লেফাফা বের করছে প্রেমপত্রের। তার সাইজ দেখে আমার হয়ে গেল! এ টি দেবের ডিক্সেনারীর মত মোটা করেছে সেই চিঠি ভর্তি খাম।  আমি খুব উত্তেজিত হয়ে ওর হাতটা চেপে ধরলাম – বললাম, “এটা তুই দিস না অরিন্দম।  সর্বনাশ হয়ে যাবে – চিঠির ভারে প্রেমের রস নিঙড়ে বেরিয়ে যাবে।  আমি চাষা হতে পারি – কিন্তু এটা ভালো বুঝি – জমিতে বীজ বুনেই সঙ্গে সঙ্গে সার ছড়াতে নেই। একটু সবুর কর”।  কিন্তু অরিন্দম শুনল না আমার কথা –


    এই প্রেমের পরিণতি কি হয়েছিল? এ টি দেবের ডিক্সেনারীর সাইজের প্রেমপত্র হ্যান্ডওভার করলে যা হবার সেটাই -

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন