এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের কাহিনিগুলো

    সৈকত
    অন্যান্য | ২৮ জুন ২০১৯ | ৩৮০০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • সৈকত | 236712.158.782323.47 | ২৮ জুন ২০১৯ ১৩:১৫383184
  • গত কয়েকদিন ধরে এমন ঘটছে যে আমি প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের 'ফ্দারোগার দপ্তর'-এর কাহিনিগুলির মধ্যে ক্রমাগত ঘুরপাক খাচ্ছি,। ইদানীং সাধারণতঃ এমন হয়্ন কোন একটি বই নিয়ে, কোন বই পড়তে শুরু করে কিছুটা পড়ে রেখে দিয়ে হয়ত অন্য বই তুলে নিই, কিছু পরে ফিরে যাই প্রথম বইটিতে বা যাইনা। আংশিক পঠিত অবস্থাতেই থেকে যাই। কিন্তু দারোগার দপ্তরের এই সংকলনটি নিয়ে - দু'খন্ডের, পুনশ্চ প্রকাশিত, শ' খানেক কাহিনি ছাপা আছে - সেরকম হল না। প্রতিদিনই পড়ে গেলাম আমি ঐ কাহিনিসমষ্টি, সূচীক্রম অনুযায়ী বা সেই ক্রম ভেঙে দিয়ে। গুছিয়ে উঠতে পারলে, কিছু কারণ বের করা যায়, কি সেই আকর্ষণ যার জন্য আমি কাহিনিগুলো পড়ে যাচ্ছি, কিন্তু একটা কারণ থাকেই যে এই দারোগার দপ্তরের মাধ্যমে,প্রিয়নাথ মুখোপাধায়, হয়ত নিজেরই অজান্তে উনিশ শতকের শেষ দুই দশক আর বিংশ শতকের প্রথম দশকের অন্তত, কলকাতা কেন্দ্রিক এক সামাজিক ইতিহাস লিখে উঠতে পেরেছিলেন।

    সমসময়েই ঘটে যাওয়া আলোকপ্রাপ্তির তলায় তলায় অন্য এক সামাজিক বর্তমান, শুধু অপরাধকেই কেন্দ্র করে যা; রাঁড়, ভাঁড় আর জুয়াচুরি/এই তিন নিয়ে কলিকাতা বা জাল, চুরি,জুয়াচুরি/এই তিন নিয়ে কলিকাতা, প্রচলিত এই বচনদুটিকে সত্যি করেই হয়ত।
  • সৈকত | 236712.158.782323.47 | ২৮ জুন ২০১৯ ১৪:৩০383195
  • তো, দুই খণ্ড মিলিয়ে শেষ যে কাহিনিটি, "চূর্ণ প্রতিমা (পাগলের অদ্ভুত পাগলামি)" যার নাম, সেইটি পড়তে গিয়ে মনে হতে থাকে, এই গল্পের প্লটটি তো পরিচিত। বুঝতে পারি, যে শার্লক হোমসের, "অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্য সিক্স নেপোলিয়ন' গল্পটি থেকে প্রিয়নাথের কাহিনির প্লটটি নেওয়া হয়েছে !

    এইটি উল্লেখ করলে, তার সাথে প্রসঙ্গক্রমে বেশ কিছু দিক এসে যায়-

    যেমন জানা আছে, যে প্রিয়নাথের সব কাহিনিগুলোই তাঁর পুলিশ জীবনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লেখা হয়নি। মোটামুটি প্রথম থেকেই, লেখাগুলোতে ওনার অভিজ্ঞতা আর বিদেশী গল্পের প্লট, দুইই থাকত। অর্থাৎ কোন কোন লেখা এমনই ছিল যে সেইটি বিদেশী গল্প থেকেই নেওয়া, কিন্তু এই ব্যাপারটি কিছু কনফিউশনের সৃষ্টি করছিল। দারোগার দপ্তর তো প্রকাশের প্রথম থেকেই খুবই জনপ্রিয়, পাঠক পঠিত, গ্রাহক সংখ্যা কম নয় এবং কলকাতা থেকে ডাকযোগে বাংলার বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, ফলতঃ যে লেখাগুলো শুধুই 'গল্প' সেগুলিকেও পাঠকেরা সত্যি ঘটনা বলেই মনে করতে শুরু করে এবং কিছু ক্ষেত্রে অখুশী হয়ে পুলিশ দপ্তরের প্রতি ক্ষোভও জানাতে থাকে। এই অবস্থা থেকে বেরোনোর জন্য, প্রিয়নাথবাবু দুটি উপায় করেন। সব লেখাগুলিকেই গল্প না বলে (যা শুরুতে বলা হত), যেগুলো সত্য ঘটনা সেগুলিকে 'প্রবন্ধ' নামে অভিহিত করতে থাকেন, আর দ্বিতীয়তঃ, এইরকম মন্তব্য করেন যে, যে লেখাগুলিতে তিনি সরাসরি উপস্থিত নেই, সেগুলিকে তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা হিসেবে গণ্য না করতে। দ্বিতীয় ধরণের এরকম বেশ কিছু লেখা আছে যেগুলো হয়ত অন্য পুলিশ কর্মচারীর থেকে শোনা অথবা বানানো, ছায়া অবলম্বনে অথবা কিছু ক্ষেত্রে বর্তমানের সত্য ঘটনাকে ভিত্তি করেই।

    কিন্তু এই 'চূর্ণ প্রতিমা' গল্পটিতে দেখি যে এই দুটি নিয়ম ভেঙে গেছে, গল্পে একটি আমি আছে যে প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ই, আবার এটাও বোঝা যায়, অন্তত এখন তো বোঝাই যায় যে গল্পটি শার্লক হোমসের গল্পের আদলে। প্রিয়নাথবাবু কাহিনিটি লিখছেন ১৩১৩ সালে অর্থাৎ ১৯০৬-০৭ সাল নাগাদ, শার্লক হোমসের গল্পটি বইতে সংকলিত হচ্ছে ১৯০২-০৩ সাল নাগাদ, অনুমান করে নেওয়া যায় স্ত্র্যাণ্ড ম্যাগাজীনে প্রকাশিত হয়েছে আরোও কিছু আগে, কিন্তু মোটামুটি বিলেতে গল্পটি প্রকাশের কয়েক বছরের মধ্যেই লেখাটি নিস্চয় প্রিয়নাথবাবু পড়ে ফেলতে পারছেন, ম্যাগাজীনে না বই থেকে অথবা ঐ সময়ে বিদেশী বইপত্রের এদেশে আসার ব্যাপারটি কেমন ছিল, কত তাড়াতাড়ি আসত, সেসব অবশ্যই গবেষণার বিষয়। কিন্তু বেশ বুঝে নেওয়া যায়, যে শার্লক হোমসের গল্পটিতে যেমন নেপোলিয়নের ছটি মুর্তি,লুকোন মুক্তো আর মূর্তিগুলিকে ভেঙে ফেলা ঐ মুক্তোর খোঁজে, এই প্লটটি প্রিয়নাথের গল্পে দেশীয়করণ হচ্ছে, মুক্তোর বদলে বড় হিরে থাকছে, শিব-শ্যামার মুর্তি থাকছে, ঐ ছ'টি (যার শেষটি আমি/প্রিয়নাথ খরিদ করবেন), আর গল্পটির পরিপ্রেক্ষিত রচনা করছে কুমোরটুলি-কলকাতা-পুর্ববঙ্গের জমিদার যার মেয়ের গলার ধুকধুকিতে ঐ হীরেটি ছিল-শিকদারবাগান আর উত্তর কলকাতার মধ্যে গল্পের চরিত্রদের দৈনন্দিন।
  • সৈকত | 236712.158.782323.47 | ২৮ জুন ২০১৯ ১৭:৫২383206
  • এই দেশীয়করণ ব্যাপারটি, আমার ধারনা, শুধুই দেশীয় পরিবেশে গল্পটিকে হাজির করলেই বা স্থানিক চরিত্র নিয়ে এলেই ঘটে ওঠে না। কিছু পরিমানে লেখকের আত্মপ্রক্ষেপ না হলে সেই জিনিসটি পুরোপুরি হয়ন।

    সেই সংক্রান্ত, দুটি দিক এই 'চূর্ণ প্রতিমা' গল্পটিতে চোখে পড়ে। প্রথমতঃ, তদন্তের জন্য যখন আমি/প্রিয়নাথ কুমোরটুলিতে যায় - কারন হীরেটি হারিয়ে গেছিল ঐখানে একটি দোকানেই - সেখানে সে সুন্দর কিছু শিব ও শ্যামামুর্তি দেখেছিল। দোকানটি যার, সেই নফরচন্দ্র পালের সাথে এই মুর্তিগুলি নিয়ে কথা হয়, শেষ পর্যন্ত এক জোড়া সেরকম মুর্তি কিনেও ফেলে (যার মধ্যে হিরেটি রয়ে গেছিল)। তো এই অংশটিতে এই মুর্তিগুলির বর্ণনা আছে, নিঁখুত ও সৌষ্ঠবময়, কৃষ্ণনগরের পুতুলের মতই নিঁখুত দেখে কথক চরিত্রটি অবাক হয়ে যায়, রঙ আর রেখার ব্যবহার নিয়েও দু'লাইন লেখাটিতে ঢুকে আসে। আপাতভাবে মনে হয় অপ্রাসঙ্গিক, লেখার মধ্যে প্রক্ষিপ্ত বা বাহুল্য, কিন্তু আমি ধারণা করি, প্রিয়নাথ যেন এইসবের মাধ্যমেই, একটি বিদেশী গল্পের প্লট নিয়েও তার মধ্যে আত্মপ্রক্ষেপ ঘটাচ্ছেন। যেন প্রিয়নাথের এই অভিজ্ঞতা ছিল, ঐ আর্টের রসিক তিনি, সেই অভিজ্ঞতাই বা ভাললাগাটাই মনে হয় লেখার এই অংশে, কাহিনিটিতে ব্যবহৃত হয়। তার ফলে, দেশীয় এই যে শিল্প তার গুণাগুণ সম্বন্ধে, কুমোরটুলি সম্বন্ধে, কিভাবে সেখানে মুর্তি/পুতুল তৈরী হয় অথবা কিভাবেই বা সেই দক্ষতা নফরচন্দ্রর থেকে অন্য কারিগরদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সেসকল সম্বন্ধে কিছুটা ধরা থাকে একটা ক্রাইম কাহিনিতে, ধারণা গড়ে ওঠে পাঠকের কাছে, তদন্তসূত্রেই।

    দ্বিতীয় যে ব্যাপারটি, সেটি হল পাগল/পাগলামি সংক্রান্ত; প্রথম থেকেই গল্পের নামের মধ্যেই যা ছিল, উপনাম হিসেবে এবং যা হোমসের গল্পেও ছিল যেখানে প্রথমে মনে করা হয়েছিল ঘটনাটি কোন পাগলের কীর্তি। বাংলা গল্পটিতে, পাগলের প্রসঙ্গটি অনেক বড় আকারে রাখা হয়। যে কারিগরটি, জহর, মাটিতে পড়ে যাওয়া হিরেটি মুর্তি তৈরীর মাটির মধ্যে লুকিয়ে ফেলেছিল - যা দিয়ে মুর্তিও গ'ড়ে ফলে এবং পরে ঐ হিরের খোঁজেই ঐ মুর্তির গ্রাহকদের বাড়িতে ঢুকে মুর্তিগুলোকে ভাঙতে থাকে - তাকে আরও কর্মচারী এবং নফরচন্দ্রর সাথে পুলিশ জেরার জন্য থানায় নিয়ে গিয়েছিল; প্রিয়নাথ তখনও এই তদন্তে যুক্ত হননি। থানায় 'উৎপীড়ন' হয়েছিল লোকগুলির সাথে যদিও পুলিশ কোন সুরাহাই করে উঠতে পারেনি এবং সবাই এক রাতের পরে ছাড়া পায়। জহর বাড়ী ফেরে কিন্তু পাগলের মত আচরন করতে থাকে, তার বাবাকে আক্রমন করে, বাড়িতে বেঁধে রাখা হয় কিন্তু পরবর্তীতে ঐ অবস্থা থেকে বেরিয়েই বিভিন্ন বাড়িতে মুর্তি খুঁজতে থাকে। সন্দেহ ছিল পাগালামিটা জহরের অভিনয় কিনা, কিন্তু প্রিয়নাথ যখন সাধুর ছদ্মবেশে তার সাথে দেখা করেছিল (ওসুধ দিয়ে পাগলামি সারিয়ে তুলবে, এই বলে) তখন কিন্তু জহর বলেছিল যে প্রায়ই তার মাথার মধ্যে কিরকম একটা ঘটে, সে যেন দেখে যে তাকে কেউ তাড়া করছে বা তাকে মারধর করছে ! আবার ঐ সাধু/প্রিয়নাথের সামনে হীরের কথা উঠলে সে 'অজ্ঞান' হয়ে যায় কিংবা শেষ যে বাড়িতে সে মুর্তির খোঁজে গেছিল সেখানেই প্রিয়নাথকে দেখেও অজ্ঞান হয়ে যায়, অর্থাৎ যখনই তার ধরা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় তখনই সে পাগলামি বা অসুস্থতার আশ্রয় নিয়েছিল। ক্রমে, মামলায় সাজা হওয়ার পরে, তাকে ডাক্তার দেখানো হয়, ডাক্তার পাগল বলে রায় দেন এবং জেলে যাওয়ার বদলে সে পাগলা গারদে যায়। প্রিয়নাথ এবং অন্য পুলিশ কর্মচারীরা সিদ্ধান্ত করেছিল যে পাগলামির মধ্যেও যখনও সে ঠিকঠাক চিন্তা করতে পারত, তখনই সে ছক করেই ঐ মুর্তিগুলি এবং হিরেটি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করত।

    আমি এখানেই অন্য কিছু খুঁজে পাই, বা অতিকল্পনা হয়ত।

    খুঁজে পাই কারণ, জহর সত্যি পাগল হয়েছিল, তার মাথার ভেতরে 'কেমন' একটা হত, অন্যদের দ্বারা 'উৎপীড়নের' ছবিগুলিই তার মাথায় আসত - কিন্তু এসবই ঘটতে থাকে পুলিশের উৎপীড়ন থেকেই ছাড়া পাওয়ার পরে। এই উৎপীড়ন তো টর্চারই, পুলিশ ব্যবস্থার মধ্যে যা ছিল সমসময়েই এবং যার ফলে সত্যি সত্যি কোন মানুষ পাগল হয়ে যেত হয়ত। অথবা প্রিয়নাথের এরকম ঘটনার কথা জানা ছিল তার চাকরীর অভিজ্ঞতা থেকেই কিন্তু সরাসরি সেই ব্যবস্থার প্রচলনকে তিনি দায়ী করেননা কাহিনিটিতে, ইঙ্গিতে রেখে দেন। তো আমার বক্তব্য যে এই অত্যাচার/পাগলামির বিষয়টির মাধ্যমে প্রিয়নাথ আবারও আত্মপ্রক্ষেপ ঘটান কাহিনিটিতে, বিদেশী গল্পটি আর বিদেশী থাকে না, সমসময়ের দু'চারটে জিনিস ঢুকে পড়ে আর সেরকম হলে কাহিনি লেখা সংক্রান্ত নিজের নিয়মকে অস্বীকার করলেও শেষ পর্যন্ত প্রিয়নাথ নিজেই এ কাহিনির মধ্যে থেকে যান, তার চারপাশের কলকাতা শহর আর ব্যবস্থাগুলো নিয়ে।
  • সৈকত | 236712.158.782323.33 | ০১ জুলাই ২০১৯ ১৭:০৬383217
  • সেখ মনিরুদ্দিনের কাহিনি ছিল এরকম,

    যে তার জন্ম হয়েছিল যশোর জেলায় একটি ছোট মুসলমান পল্লিতে, যে পল্লীর লোকজন তার বাবাকে মাণ্য করত খুবই। ধর্ম ব্যাপারে, সামাজিক ক্রিয়াকর্ম অথবা বিবাদ নিষ্পত্তি ইত্যাদি কাজের জন্য মনিরুদ্দিনের বাবা ছিলেন প্রধান ব্যক্তি। কিন্তু এরকম পিতার পুত্র হয়েও মনিরুদ্দিন অল্প বয়স থেকেই চৌর্য্যবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েছিল। অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরই তার বাবা-মা মারা যয়, সে চলে আসে কাছেই তার স্বশুরবাড়ীতে। ১৫ টাকার মাহিনার একটি চাকরি পায়, কিন্তু ক্রমশঃ বন্ধুদের সাথে ঐ অঞ্চলেই সে কুপথে চালিত হয়। বারবধূদের সঙ্গ মুলতঃ ফলে তার টাকার দরকার হয়ে পড়ত প্রায়ই। ক্রমে এক্মন ঘটে যে সেখানেই কৃষ্ণলাল নামে এক ব্যক্তির সাথে আলাপ হয়ে এবং মনিরুদ্দিন বুঝতে পারে যে কৃষ্ণলালের ব্যব্সা ছিল চুরি করা, উপ্রন্তু মনিরুদ্দিনের বলে দেওয়া বিভিন্ন বাড়ী সম্বন্ধে জেনেই কৃষ্ণলাল সেসব বাড়ীতে চুরি করত এবং মনিরুদ্দিন সাহায্য করেছিল বলে, পরিবর্তে চুরির জিনিস বিক্রী করে পাওয়া টাকার ভাগও পেতে থাকে। মনিরুদ্দিন নিজের চাহিদা মেটাবার জন্য কৃষ্ণলালের কাছ থেকে চুরির কৌশল শিখতে থাকে, অর্থাৎ সিঁদেল চুরি। পাঁচিল কেটে, বাড়ীর দেওয়াল কেটে তারা চুরি করেই অর্থ উপার্জন করতে থাকে। পরবর্তীতে, হ্ঠাৎই রোগগ্রস্ত হয়ে কৃষ্ণলালের মৃত্যু ঘটে, মনিরুদ্দিন চুরির সুবিধের জন্য সরে আসে নদীয়া/কৃষ্ণনগরে, সেখানেও উপার্জনের সুবিধা না হওয়ায় চলে আসে কলকতায় !! মেছুয়া অঞ্চলে থাকা শুরু করে সে এবং ওমদা বিবি নামে এক মুসলমান বারবিলাসীনির সাথে তার সম্পর্ক তৈরী হওয়ার পরে, মনিরুদ্দিন মেছুয়া থেকে ওমদা বিবির সাথেই থাকা শুরু করে (ইতিমধ্যে সে জানে যে তার স্ত্রী অন্য একজনকে বিববাহ করেছে)। বাল যায় ওমদা বিবির সাথে তার ভালবাসাই তৈরী হয়, মনিরুদ্দিন বুঝতে পারে না এরকম কেনই বা হয়েছিল, ওমদা বিবির মনও কেনই বা এক চোরকে ঘিরে ধরল, এক খোদা ছাড়া কেউই বা তার উত্তর জানে না।

    কলকাতায় তার পরিচয় হয় কৃষ্ণপ্রসন্নর সাথে, সেও যশোরেরই লোক এবং কলকাতায় তার বৃত্তিও চুরি করা। একই সাথে কাজ শুরু করার পরে, পুলিশের তদন্ত অনুসারে তারা দু'জনেই ধরা পড়ে। পুলিশ কায়দা করে কৃষ্ণপ্রসন্নের কাছ থেকে সবই জানতে পারে কিন্তু দু'জনকে আলাদা রাখে করে যে কৃষ্ণপ্রসন্নর মনে হয়েছিল মনিরুদ্দিনই সবই আগেই বলে দিয়েছে, যদিও সেরকম ঘটেনি। রেগে গিয়ে কৃষ্ণপ্রসন্ন মনিরুদ্দিনকে কাফের বলে গালিও দেয়। কোর্টে কেস ওঠে এবং মনিরুদ্দিনের জেলও হয়; কিন্তু জেল হওয়ার পর থেকেই একাধিকবাব মনিরুদ্দিন জেল থেকে পালাতে থাকে, গায়ের জোরে হাতকড়ি ভেঙেও, কিন্তু প্রতিবারই সে ওমদা বিবির কাছেই পৌছয়, অতএব কিছুদিনের মধ্যে ধরাও পড়তে থাকে। প্রতিবারই ধরা পরার পরে তার জেলের মেয়াদ বাড়তে থাকে, অন্যদিকে জেলকর্তা যখন জানতে পারেন যে মনিরুদ্দিন শুদুই ওমদা বিবির সাথে দেখা করার জন্যই জেলে থেকে পালায়, তখন তিনি এই ব্যবস্থা করেন যে মনিরুদ্দিন প্রতি দুইমাস অন্তর ওমদা বিবির সাথে দেখা করতে যেতে পারবে এবং কিছুদিন পরে ফিরেও আসবে !! ক্রমে এমনদিন আসে যখন মেয়েটি মারা যায়, মনিরুদ্দিন আর জেল পালানোর চেষ্টা করে না, ভাল ব্যবহারের জন্য সে পুরো মেয়াদের আগেই ছাড়া পায়। ছাড়া পাওয়ার পরই সে আবার অপরাধীসঙ্গে যুক্ত হয়, বিষ খাওয়ানো মামলায় সে পাকুড় থেকে ধরা পরে এবং এইবার তার যাবজ্জীবন দীপান্তর হয়।

    যশোরের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে, মনিরুদ্দিনের জীবন কাহিনি শেষ হয় দ্বীপান্তরে। প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ে, মনিরুদ্দিন সম্বন্ধে এই যে কাহিনিটি লেখেন সেটির নাম রেখেছিলেন -

    সিঁদেল চোর (এক প্রসিদ্ধ মুসলমান চোরের জীবন কাহিনি)

    প্রিয়নাথাবাবু তদন্তসূত্রে মনিরুদ্দিনের সাথে যুক্ত ছিলেন না অর্থাৎ মনিরুদ্দিনের কেসটি তিনি সামলাননি, ১৮৯০ সাল নাগাদ যখন পূর্ণ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে মনিরুদ্দিন ছাড়া পায়, তখন প্রিয়নাথের থানায় তাকে দিন কয়েক থাকতে হয়েছিল, কিছু সরকারি কাজ সম্পূর্ন হয়ে যাওয়া অবধি। তার সাথে কথা বলে প্রিয়নাথা তার জীবন সম্বন্ধে জানতে পারেন, এবং ১৮৯২ সাল নাগাদ যখন মনিরুদ্দিন শেষ বারের মত ধরা পরে, তখন প্রিয়নাথ জেল কর্তৃপক্ষর অনুমতি নিয়ে মনিরুদ্দিনের কাহিনিটি লিখে ফেলেন এবং মনিরুদ্দিন মত দিয়েছিল যে দু'এক জায়্গা বাদ দিয়ে বাকি লেখাটি ঠিকই আছে, অর্থাৎ তার জীবন যথাযথাভাবে যেন ফুটে উঠেছে ! তো, প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় লিখিত এই চরিত কাহিনিটিতে কয়েকটি দিক চোখে পড়ে-

    প্রথমতঃ, কলকাতার স্থান সংক্রান্ত। মূলতঃ কলকাতার মধ্যে কিছু বিশেষ জায়্গাই কাহিনিগুলিতে ঘুরেফিরে আসে, উত্তর কলকাতাকেন্দ্রিক চোরবাগান, শিকদারবাগান, মাণিকতলা, আরও এগিয়ে মধ্য কলকাতার কাছাকা্ছি চিৎপুর, মেছুয়া, মেছুয়ার কাছে জেলেটোলা নামী একটি স্থান, সোনাগাছি, দক্ষিন দিকে গেলে ভবানীপুর, টালিগঞ্জ অথবা সন্তোষপুর গ্রামের নামও, ইংরেজ চরিত্রদের উপস্থিতি থাকলে মধ্য কলকাতার কিছু ইংরেজ অধ্যুষিত স্থান। মনিরুদ্দিন যে কলকাতায় এসে মেছুয়াতেই পৌঁছবে সেটা স্বাভাবিকই ছিল কারণ মনিরুদ্দিন যেসময় কলকাতার থাকছে,১৮৭০-৮০ নাগাদ তার অনেক আগে থেকেই, একদিকে বড়বাজার আর অন্যদিকে মেছুয়াবাজার, এই দুই স্থানের মধ্যে বাংলার বাইরে থেকে আসা হিন্দু ও মুসলমানেরা ছড়িয়ে পড়েছে, বিবিধ পেশা, ব্যবসা আর কাজের সূত্রে। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, উপরন্তু গুজরাট বা আরোও পশ্চিমের লাহোর ইত্যাদি জায়্গা থেকে বিভিন্ন জাতির মানুষ, কলকাতার বৃদ্ধির সাথে সাথে এই শহরে এসে মূলতঃ বড়বাজার-মেছুয়া অঞ্চলে ঘাঁটি করছে, হয়ত ব্যবসারই সুবিধের জন্য কারণ একদিকে গঙ্গা, তার জলপথ, অন্যদিকে চিৎপুরের প্রধান রাস্তা; ফলে নতুন যারা কলকাতায় আসছে মইনুদ্দিনের মতই তারাও তাদের জাত-ধর্ম অনুযায়ী হয়ত তাদের থাকার জায়্গা খুঁজে নিচ্ছিল, ব্যবসা আর কাজের সাথে সাথেই এই দুটী জায়গা অপরাধেরও ঘাঁটি হয়ে ঊঠেছিল কিছুটা, মেছুয়াবাজারের নেশাখানা-পানওয়ালী-নর্তকী ইত্যাদি নিয়ে বিশেষ এই স্থানের বিবরণ প্রিয়নাথেরই কিছু কাহিনিতে আছে, কামতাপ্রসাদ নামে ধুরন্ধর এক বড় চোরের কর্মস্থল ছিল বড়বাজারেই, উনবিংশ শতকের শেষ থেকে বিংশ শতকের কুড়ি-তিরিশ অবধি এই জায়গা আর কিছু পরিমানে আরও মধ্য কলকাতার দিকে থাকা চীনেপাড়াও লেখাপত্রে উঠে আসবে, রাতের কলকাতা আর অপরাধের কলকাতার প্রতিভূ হয়ে, প্রিয়নাথেরও বেশ পরে, হেমেন্দ্রকুমার রায় এই সব অঞ্চলে অভিজ্ঞতার সন্ধানেই রাতচরা হবেন ! আর একটি ব্যাপার থাকে, যা স্পষ্ট করে বলা নেই, ওমদা বিবির ঠিকানা কোথায় ছিল। কিন্তু অনুমান করতে পারি সে হয়ত চিৎপুর অঞ্চলেত্র কোথাও, মুসলমান বাঈজীদের ঠিকানা সেখানে, যেমন প্রিয়নাথেরই আবীর-জান গল্পের মতই অনেকেই এসেছিল পশ্চিমের থেকে, যথা লখনৌ, সিপাহী বিদ্রোহের পরে পরে মুসলামান মানুষের কলকাতার দিকে সরে আসার সাথে যা হয়ত যুক্ত ছিল।

    দ্বিতীয় যে ব্যাপারটি উল্লেখনীয় এই কাহিনিটিতে, সেটি হল মনিরুদ্দিনের চরিত্র সংক্রান্ত, অর্থাৎ প্রেমের সম্পর্কে ওমদা বিবির সাথে তার জড়িয়ে পড়া। সে খোদার কাছে প্রশ্ন রেখেছিল যে কেনই বা এরকম সম্পর্কে সে বা তার প্রেয়সী জড়িয়ে পড়ল, কিন্তু মনে হয় মনিরুদ্দিনের জীবনে এটা ছিল এক খুঁটি বিশেষ। বিয়ে করার স্ত্রীর সাথে তার কোনই সম্পর্ক হয়নি, নিজের ইচ্ছাকে চরিতার্থ করার জন্য সে অপরাধের দিকে গেছে কিন্তু এটাও ঠিক, যতবারই সে জেল থেকে পালিয়েছে, ততবারই সে ওমদা বিবিরই কাছে চলে গেছে এবং অবধারিতভাবে পুলিশের কাছে আবার ধরা পড়েছে। চুরি করার জন্য সে জেল পালায়নি এবং নিজের এই চাহিদার কথাও সে জেল প্রধানকে বলে উঠতে পেরেছিল এবং সেই অনুযায়ী সে কিছু সুবিধেও পায়। তার প্রেমিকা মারা যাওয়ার পরে সে জেলেই থেকে যায়, খাওয়া-পড়ার জন্য তার কিছু সুবিধেই হয়, কিন্তু ছাড়া পাওয়ার পরে সে আবারও অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে, মনে হয় ওমদা বিবির অনুপস্থিতি যেন তার শ্থিরতা নষ্ট করে দিয়েছিল ! প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় যে বার বার মনিরুদ্দিনের সাথে সাক্ষাৎ ক'রে তার জীবনের কথা লিখে ফেলবেন - যাকে এই কাহিনিটির প্রথম পরিচ্ছেদে উল্লেখ করবেন 'জীবন চরিত' হিসেবে, দ্বিধায় থাকবেন এইটুকু নিয়ে যে জীবিত মানুষের চরিতকথা লেখা উচিত কিনা - সেই লেখার মুল হয়ত ইংরেজ প্রশাসন বা নিজেরও একটা চাহিদা থেকে যে এইরকম অপরাধী লোকজনের কাহিনিটুকু লিখে রাখা, পরে কাজে আসবে ভেবে; কিন্তু সে কী এইজন্যও নয় যে মনিরুদ্দিন আর ওমদা বিবির জীবনের তথাকথিত পাপকর্ম ছাপিয়ে এই প্রেমপর্ব প্রিয়নাথ লক্ষ্য করেছিলেন বলেই ? প্রিয়নাথের সকল কাহিনিগুলোই মূলতঃ বর্ণনা, হয় চরিত্রদের অতীত বা বর্তমানের বর্ণনা, (যেমন, ত্রৈলক্য নাম্নী গ্রাম থেকে আসা রমণীটি যে ক্রমশঃ কলকাতা শহরে ঐ ১৮৮০-৯০ এর দশকে হয়ে উঠবে 'সিরিয়াল কিলার', সারভাইভালের জন্যই) অথবা ঘটনার তদন্ত এবং অনুসন্ধানের বর্ণনা (হিলি ও ওয়ার্ণার নামে দুই ইংরেজকে ধাওয়া করা, বর্ধমান ও বাঁকুরা জেলা জুড়ে); ফলতঃ চরিত্রদের মনস্তত্ব অনথা অনুভূতি সেভাবে আসেনা (বাংলা ভাষার লেখালেখিতেও কিছুটা বঙ্কিম বাদে সেরকম লেখা তখনও বিশেষ পাওয়া যায় না আর বঙ্কিম তো অতি ক্ষমতাসম্পন্ন ঔপন্যাসিক), সেই জন্যই মনিরুদ্দিনের নিজের অনুভূতির কথা এই লেখাটিতেও সেরকম আসেনা, অনুচ্চকিতভাবেই তার 'জীবন চরিতট'-এর ইঙ্গিতগুলি থেকে যায় মাত্র।
  • সৈকত | 236712.158.782323.33 | ০২ জুলাই ২০১৯ ১৬:৪৭383218
  • প্রিয়নাথ লিখিত সেখ মনিরুদ্দিনের এই যে কাহিনি, সেটির প্রধান প্রকরণই হল অপরাধীটির জীবনী রচনা করা, অনুপস্থিত যেটি সেটি হল অপরাধের অনুসন্ধানের বর্ণনা। জীবনীটির অংশ হিসেবে সেটি অল্প কিছুটা এসেছে কিন্তু মূলতঃ এই যে অতীতের ঘটনার বিবরণ, দারোগার দপ্তরের কাহিনিগুলিতে সেরকম লেখার পরিমাণ কম। কিছু আছে, বেশ মনে রাখার মতই আছে, একটি যেমন পূর্ণানন্দ নামে চরিত্রটি যে যেন উনিশ শতকের বাঙালীর বই আর পত্রিকা প্রকাশ ও পাঠের গুরুত্বকেই ব্যবহার করেছিল জুয়াচুরির জন্য (এই চরিত্রটিকে নিয়ে স্বতন্ত্র একটি লেখা উচিত) অথবা দুর্ধষ ডাকাত কৃষ্ণ চৌধুরীর ডাকাত জীবনের বর্ণনা। এইসব লেখাগুলিতে অপরাধীটিকে কীভাবে ধরা হল তার চেয়ে বেশী গুরুত্ব পেয়েছে সে কী করেছিল তার বিস্তারিত বর্ণনা।

    বেশীরভাগ কাহিনিগুলিতে যা ধরা থাকে সেগুলি হল, কোন একটি ঘটনা ঘটে গেছে বা ঘটছে (চুরি, খুন অথবা ঠকানো), তার অনুসন্ধান ও অপরাধীটিকে আটক করা (অতএব সূত্র খোঁজা, বিভিন্ন মানুষকে জেরা করা, ঘটনার একাধিক সম্ভাব্য কারনগুলিকে পরিহার করা) এবং শেষে অপরাধীর স্বীকারোক্তি আদায় করা যাতে মামলাটিকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অথবা দায়রা আদালতে পোক্তভাবে হাজির করা যায়। পুলিশ কর্মচারী হিসেবে প্রিয়নাথের এইসব ধাপগুলিতে অভিজ্ঞতা ছিল এবং অধিকাংশ লেখাতেই এইগুলি গুরুত্ব পেয়েছে। এই বিষয়গুলির বিস্তারিত বিবরণের ফলেই লেখায় যে রোমাঞ্চ তৈরী হত অথবা এইগুলি সত্যি ঘটনা বলেই পাঠকদের কাছে যা বিশেষ রূপে হাজির হত (কারণ পাঠকদের সেইসকল অভিজ্ঞ্তা নেই, অথচ অপরাধ যে কতরকমের হতে পারে, তার ধারণা তারা লেখাগুলি থেকে করছে), সেই জন্যই হয়ত লেখাগুলির তুমুল পাঠকপ্রসার ঘটেছিল। কিন্তু, পাঠকদের অভিজ্ঞতার বাইরের ঘটনা এনে রোমাঞ্চ তৈরী করাই কাহিনিগুলোর উদ্দেশ্য ছিল না, আর একটি উদ্দেশ্যও ছিল যে কলকাতা শহরটি, সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় শহরটি বিবিধ অপরাধের কারণেই কী পরিমাণে বা বিপদসঙ্কুল , তাও পাঠকের সামনে আনা, বিশেষ করে মফস্বলের বা জেলার পাঠকদের কাছে। এই প্রবণতাটি একেবারে নতুন ছিলনা বলেই মনে হয়; ১৮২০-র দশকেই ভবানীচরণ যখন 'কলিকাতা কমলালয়' লিখবেন, সেই লেখাতেই কলকাতা শহরটিকে সমুদ্রের সাথে তুলনা করা হবে, আর সমুদ্রের মতই বিবিধ প্রাণী সেখানে বিচরণ করে, এরকম বলা হবে।

    যদিও বলা হয়েছে প্রিয়নাথের লেখাগুলিই বাংলা ক্রাইম ফিকশনের শুরু, অথবা বাঁকাউল্লাহর দপ্তরের কথা এই প্রসঙ্গে, কিন্তু ক্রাইম ফিক্শন বলে যদি পরবর্তীকালের গোয়েন্দা সাহিত্য বুঝি, তাহলে তার সাথে এইসব লেখাগুলির প্রধান পার্থ্ক্য যেটি, সেটি হল, এক্সেন্ট্রিক বা অতি ক্ষমতাসম্পন্ন গোয়েন্দা চরিত্রটির অনুপস্থিতি। যেহেতু সেরকম গোয়েন্দা চরিত্রটি নেই এবং লেখকেরা পুলিশ ব্যবস্থার সাথে যুক্ত, ফলে লেখাগুলি হয়ে দাঁড়াচ্ছে মুলতঃ police procedural, যেটিও ক্রাইম ফিকশনেরই একটি ধারা কিন্তু যা পশ্চিমের গোয়েন্দা সাহিত্যেও খুব ভালভাবে গড়ে উঠবে অনেক পরে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ঘটে যাওয়ার পরবর্তী দশক্গুলিতে, তার আগে পর্যন্ত পুলিশ চরিত্রগুলি গোয়েন্দা গল্পে মূলতঃ বোকা এবং ডিটেকশনে অপারগ। প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় অন্তত যখন লিখছেন, সেই সময়েই বিলেতে 'মডেল' অ্যামেচার গোয়েন্দা চরিত্রটি গড়ে উঠছে, সেইসব লেখাগুলি হয়ত প্ররোচিত করছে বাংলায় ঐ আদলে ক্রাইম গল্প লেখার, কিন্তু প্রিয়নাথের নিজের অভিজ্ঞ্তাই আলাদা করে দিচ্ছে লেখার ধরণ, শার্লক হোমসের নকল বিশেষ ঘটছে না, না গোয়েন্দা চরিত্রটিতে অথবা অপরাধ ও তদন্তের তৈরী করা জটিলতায়; মিল যদি কিছু থাকে বিদেশের লেখার সাথে, হয়ত সেটা ঢের বেশী থাকছে ১৮২০-৩০ নাগাদ ফ্রান্সে প্রকাশিত, প্রাক্তন অপরাধী এবং পরে ফ্রান্সের গোয়েন্দা দপ্তরটি যিনি তৈরী করবেন সেই ভিদচ-এর মেমোয়ার্সের সাথে !
  • সৈকত | 237812.68.121223.51 | ০৮ জুলাই ২০১৯ ২৩:৩৯383219
  • মনিরুদ্দিনের প্রসঙ্গে পূর্নানন্দ নামে একটি চরিত্রের উল্লেখ করেছিলাম। কারন এরকম-

    ১৮৬৭ সালে বৃটিশ সরকার, প্রেস অ্যান্ড বুক রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট নামে একটি আইন প্রণয়ন করেন যার ফলে ভারতে প্রকাশিত যে কোন সংবাদপত্র বা বইয়ের প্রকাশক বাধ্য হয় তার প্রকাশকর্মটির তিন কপি রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দিতে, এর বিনিময়ে সে ছাপা বস্তুটির মূল্য সরকারের কাছ থেকে পেত। এই সমগ্র ক্রিয়াটির একটি অতীত আছে যেখানে কোম্পানী আমল থেকে চেষ্টা করা হয়েছিল, ভারতে প্রকাশিত যেকোন বই বা সংবাদপত্রের কপি যেন ইংল্যন্ডে পৌছয়। উদ্দেশ্যটা বোঝাই যায় যে দেশীয় প্রজাকে নিয়ন্ত্রনের জন্য এবং দেশের লোকজনের চিন্তাভাবনাকে বোঝার জন্যই। কিন্তু কোম্পানী আমলে, এই বই সংগ্রহের ব্যাপারটি বাধ্যতামূলক ছিল না , ফলে স্বাভাবিকভাবে সেরকম কাগজপত্র জমা পড়ত না। ১৮৬৭-র আইনে, ব্যাপারটি বাধ্যতামূলক হয় এবং পরিবর্তে প্রকাশক বিনিময় মুল্যটি পেতে থাকে।

    তো দারোগার দপ্তরে দেখছি, আষাড়, ১৩০১, অর্থাৎ ১৯৮৪ সাল নাগাদ একটি কাহিনি প্রকাশ হচ্ছে, নামঃ

    বাঃ গ্রন্থকার
    (অর্থাৎ পুস্তক-প্রণেতার অদ্ভুত জুয়াচুরি রহস্য)

    কাহিনিটির তৃতীয় অনুচ্ছেদে লেখক লিখছেন - "আমি যে সময়ের কথা বলিতেছি, সে অধিক দিবসের কথা নহে। তথাপি এখন রেজেস্টারী আফিসের যেরূপ নিয়ম হইয়াছে,সেরূপ নিয়ম তখন ছিল না। তখন নিয়ম ছিল, এতদ্দেশে যে কোন পুস্তক প্রকাশিত হইবে, প্রকাশক তাহার তিনখানি রেজেস্টারী আফিসে প্রদান করিবেন। সেই পুস্তকের উপর যে মূল্য লিখিত থাকিবে, গবর্ণমেন্ট তাহা প্রকাশককে প্রদান করিবেন; এখনও প্রকাশককে তাঁহার প্রকাশিত সমস্ত পুস্তক পূর্ব্বের মত অর্পণ করিতে হয় সত্য, কিন্তু গবর্ণমেন্ট এখন আর তাহার মূল্য প্রদান করেন না। যে ঘটনা অবলম্বনে আমাকে এই প্রবন্ধ লিখিতে হইতেছে, উক্ত ঘটনা ঘটিবার পর হইতেই গবর্ণমেন্ট এক নূতন আইন পাশ করেন। সেই সময় হইতেই প্রকাশকদিগকে প্রদত্ত পুস্তকের মূল্য পাইতে বঞ্চিত হইতে হয়।"

    ১৮৬৭ সালের আইন অন্তত দুবার পরিবর্তিত হয়েছিল, একবার ১৮৯০ এবং একবার দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে, ১৯৫৫-তে (মাঝখানের বছরগুলিতেও কয়েকবার পরিবর্তিত হয়েছিল), এবং এখনও এদেশে যে আইনটি সংবাদপত্র রেজিস্ট্রেশন, প্রচার সংখ্যা জানানো ইত্যাদি ব্যাপার নিয়ন্ত্রন করে, তার শুরুটা ঐ ১৮৬৭-র আইনটি। কিন্তু প্রিয়নাথ যে আইন বদলের কথা লিখছেন যার ফলে প্রকাশক আর মূল্য পেত না, সেটি, আমার অনুমান, ঘটেছিল ঐ ১৮৯০-র আইন বদলের মারফৎ, যা প্রিয়নাথেরই কথামত - সাল উল্লেখ না করলেও (যদিও লিখছেন, অধিক দিবসের ঘটনা নহে) - তার তদন্তের ফলেই ঘটে !! আমি আসল ১৮৬৭র আইনটি বা ১৮৯০-র আইনের বয়ানটি এখনও খুঁজে পাইনি, কিন্তু বর্তমানের যে আইন , সেখানে বিনামূল্যে তার কাজটি জমা দিতে প্রকাশক যে বাধ্য সেটি লেখা আছে।

    কিন্তু এই আইন বদলের পেছনে, প্রিয়নাথই প্রধান চরিত্র নয়, আসল নায়ক পূর্ণানন্দ যাকে গ্রন্থকার বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং যাকে নিয়ে এই পাঁচ পরিচ্ছেদের রসালো কাহিনিটি লুকিয়ে আছে দারোগার দপ্তরের মধ্যে !!
  • সৈকত | 890112.162.561223.51 | ০৯ জুলাই ২০১৯ ০০:২৮383220
  • কাহিনিটির পুরোটাই পুর্ণানন্দের বয়ানে, শেষ বারের জুয়াচুরির পরে য্খন সে ধরা পরে (১৮৯০-র আগে বা সমসময়ে), এবং প্রিয়নাথকে তার কাজের কথা জানায়, তারই বিবরণ। প্রথম পরিচ্ছেদে আছে তার রেজেস্ট্রারী আফিসের সাথে জালিয়াতির ঘটনার বিবরন, যেটি তার শেষ লোক ঠকানোর(গবর্ণমেন্টকে ঠকানো যদিও) কীর্তি। পুর্ণানন্দের কথামত, সে যখন তার সংসার নির্বাহের আর উপায় করতে পারছে না তখন সে "নূতন জুয়াচুরির এক অপুর্ব্ব উপায় বাহির' করল যেহেতু সে পুস্তক জমা দেওয়ার নিয়মগুলো জানত। টাকাপয়সা শূন্য অব্স্থায় কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর সময়ে, সে নিমতলা স্ট্রীটে রেপার বিক্রেতা এক কাবুলির দেখা পায়, যার কাছ থেকে সে দু-তিনটি রেপার নেয় এই বলে যে কাছের বড়মানুষের বাড়ীতে সেগুলি বিক্রীর জন্য দেখিয়ে আসবে। কিন্তু শরিকবিভক্ত সেই বাড়ীতে ঢুকে, অনেক লোকের আনাগোনার মধ্যে, বৈঠকখানা-বারান্দা পেরিয়ে পাসের গলিতে পৌছয় এবং কাবুলিকে বাড়ীর সামনে বসিয়ে রেখেই এক বাজারে গিয়ে রেপারগুলিকে সাড়ে চার টাকায় বিক্রি করে সে নতুন ব্যবসার মূলধন যোগাড় করে। পরের দিন বটতলায় গিয়ে, 'বটতলার দরে' পাঁচ টাকার দামের তিনটি বড় বই পাঁচ আনায় খরিদ করে, অর্থাৎ সর্বসমেত তার পনেরো আনা খরচ হয়। পরের দিন ছাপাখানায় গিয়ে নতুন মলাট ছাপায় দেড় টাকা দিয়ে, বইয়ের নাম হিসেবে নতুন নাম দেয় ও গ্রন্থকার হিসেবে নিজের নাম দিয়ে পনেরো আনা মূল্যে কেনা বটতলার বই তিনটের মলাট ছিঁড়ে, নতুন মলাট লাগিয়ে প্রত্যেক পুস্তকের দাম ধার্য করে দশ টাকা। এই তিনটি বই সে রেজিস্ট্রী আফিসে গিয়ে জমা দেয়, এবং তার ফলে দেড় টাকা খরচ করে সে 'অসৎ' উপায়ে তিরিশ টাকা লাভ করে !!

    বহুদিন সে এই উপায়ে টাকার ব্যবস্থা করতে থাকে, মাস গেলে তিরিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা অন্তত, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে ধরা পড়ে। কার অভিযোগের ফলে সে ধৃত হয় সে সেটা বোঝেনি কিন্তু এই কথাটি পুর্ণানন্দ প্রিয়নাথকে বলেছিল যে তদন্তকার্যে প্রিয়নাথের বিশেষ কষ্ট হয়নি, কারণ সব বইতেই পুর্ণানান্দের নাম ও ছাপাখানার নাম ছিল !

    তো এই ছিল পুর্ণানন্দের কীর্তি যা প্রিয়নাথের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার পরে, ইংরেজ সরকার তার বই জমা দেওয়ার আইনটি কিছুটা বদলে ফেলে, ১৮৯০-তে !!
  • সৈকত | 237812.69.3434.136 | ০৯ জুলাই ২০১৯ ০১:১৭383221
  • কিন্তু পুর্ণানন্দ চেয়েছিল লেখক হ'তে, সাহিত্য সমাজে প্রবেশ করে সে অনেকদিন সেখানে 'বিচরণ' করে, বঙ্গভাষার সেবা করেই সে জীবন কাটাবে ভেবেছিল কিন্তু অনটন তার মেটেনা। ইতিমধ্যে সে চিরণ্মদা নামে একটি উপন্যাস লিখেছে, সেখানে বন, উপবন, নদ, নদী, পদ্ম,উদ্যান, দেবস্থান, পাপিয়া, কোকিল, যুবক-যূবতীর প্রণয় সবই আছে কিন্তু সেই উপন্যাসের পাঠক জোটেনা, ফলে বইগুলি বিক্রী হয়না। উপায় হিসেবে, সে 'চিরণ্মদা' উপন্যাসের বিজ্ঞাপন দেয় মাসাধিক কাল ধরে, এবং তার পরে কর্ণওয়ালিস স্ট্রীটের এক প্রসিদ্ধ পুস্তক বিক্রেতার কাছে গিয়ে নিজের পরিচয় দেয় ঢাকা থেকে আগত এক পুস্তক বিক্রেতা হিসেবে যে কিছু বই কেনার জন্য কলকাতায় এসেছে। বইয়ের তালিকাটি আকর্ষণীয়, সমসময়ের পাঠকরা, বাঙালী পাঠকরা যা পড়ছে, উঁচু দরের সাহিত্য বলে যেসব বই গন্য হচ্ছে তার সংকলন, একটি বই বাদে। সেখানে ছিলঃ

    বিদ্যাসাগরের প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ (১০০ ও ৫০ খন্ড),
    বঙ্কিমের দুর্গেশনন্দিনী ও বিষবৃক্ষ (৫ খণ্ড),
    রমেশচন্দ্র দত্তের মাধবী-কঙ্কন (৮ খন্ড),
    মধুসূদনের মেঘনাদ-বধ (৩ খন্ড),
    রবীন্দ্রনাথের মালিনী (৩ খন্ড),
    তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বর্ণলতা (২ খন্ড),
    প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যয়ের তান্তিয়া-ভীল (২ খণ্ড) (!!)
    দামোদর মুখোপাধ্যায়ের মৃন্ময়ী (৩ খন্ড)
    ইন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের ভারত-উদ্ধার(৩ খন্ড)
    এবং
    পূর্ণানন্দ ভক্ত প্রনীত চিরণ্মদা (১০০ খন্ড) !!!

    দোকানদার সব বইই দিতে পারে কিন্তু অবশ্যই চিরণ্মদা বাদে কারণ স্বভাবতই সে বইটির নাম শোনেনি। পুর্ণানন্দ তার বিজ্ঞাপনটি ব্যবহার ক'রে বইটির কাটতি সম্বন্ধে দোকানদারকে নিঃসন্দেহ করে এবং সে পুর্ণানন্দের বাড়ী থেকেই নিজেই বইটি সংগ্রহ করবে বললে, দোকানাদার না জানি বইটি কত বিখ্যাত ভেবে নিজেই জোগাড় করে রাখবে বলে। পুর্ণানন্দ নিজের বাড়িতে ফিরে যায়, দোকানদার লোক পাঠালে সে নিজে লুকিয়ে থেকে অন্য এক পরিচিতের মাধ্যমে চিরণ্মদার সব খন্ডই বিক্রী করে দেয়। যথারীতি সে দোকানদারের কাছে আর যায়ই না, দোকানদার অন্য বইগুলি বিক্রী করতে পারে কিন্তু অত কপি চিরন্মদা যথারীতি বিক্রী হয় না। পুর্নানন্দ হিসেব করে দেখেছিল যে ২০০০ খণ্ড বই ছাপাতে তার খরচ হয়েছিল ১৭৫ টাকা আর এই জুয়াচুরিটি করে সব বইই বিক্রী করে দেওয়ার পরে সে লাভ করেছিল ১৫০০ টাকা। তো মনে করি, পুর্ণানন্দর এই কীর্তিটির মধ্যে লুকিয়ে আছে উনবিংশ শতকের বাংলা সাহিত্য গ'ড়ে ওঠার কাহিনি - পাঠকরা কীরকম বই পছন্দ করছে, সেসব বই কিভাবে ছড়িয়ে পড়ত কলকাতা থেকে ঢাকা অবধি কলকাতার বড় পুস্তক বিক্রেতা আর অন্য শহরের পুস্তক বিক্রেতাদের চুক্তি মারফৎ, বিজ্ঞাপন কীভাবে বইয়ের প্রসার ঘটাচ্ছে বা প্রভাবিত করছে পাঠক ও বিক্রেতাদের, আর কীভাবেই বা একজন লেখক হয়ে উঠতে চাইছে, কিন্তু সৃষ্টির ক্ষমতাহীন সে অসফল হয়ে কীভাবেই বা এই সব কিছুকেই ব্যবহার করছে অর্থ রোজগারের জন্য - তার বিবরণ !

    আর, উচ্চ ভাবের সাহিত্য রচনার সাথে সাথে উনবিংশ শতকে তো আরও অন্তত তিন রকমের লেখা প্রচুর ছাপা হয়েছে - সংবাদপত্র, জীবনচরিত আর অশ্লীল সাহিত্য - এবং শিক্ষিত পাঠকেরা এর সবগুলিরই উপভোক্তা হয়ে উঠেছে, পুর্ণানন্দ তার জীবনে জুয়াচুরির জন্যই এইসবের প্রসারকেও ব্যবহার করেছিল !!
  • সৈকত | 237812.68.6745.10 | ০৯ জুলাই ২০১৯ ০১:২৪383222
  • ১১ঃ৩৯-এর পোস্টে,

    * ১৯৮৪ নয়, ১৮৯৪

    বাক্যটি,

    * তো দারোগার দপ্তরে দেখছি, আষাঢ়, ১৩০১, অর্থাৎ ১৮৯৪ সাল নাগাদ একটি কাহিনি প্রকাশ হচ্ছে, নামঃ
  • সৈকত | 236712.158.782323.33 | ১২ জুলাই ২০১৯ ১৭:৩৪383185
  • পূর্ণানন্দ ভক্তর বাকি কীর্তিগুলিতে যাওয়ার আগে, ঢাকার বই বিক্রেতা সেজে বই কেনার জন্য যে তালিকাটি সে বানিয়েছিল, সেটি আর একবার লক্ষ্য করি। তালিকাটিতে, প্রিয়নাথ নিজেই উপস্থিত ! একে নিয়তির কৌতুকই বলব যে পূর্নানন্দ পরবর্তীতে প্রিয়নাথের হাতেই ধরা পড়বে, তদুপরি প্রিয়নাথ তাকে নিয়েই একটি কাহিনি লিখে ফেলবেন, ঐ তালিকাটি সমেত ! প্রিয়নাথ ঠিক কখন জানতে পেরেছিলেন তাঁর নিজের নামের উল্লেখ, পূর্নানন্দের কীর্তিতে ? জেরা করার সময়ে ? তখন কি তাদের মধ্যে এই অদ্ভুত সমাপতন নিয়ে কথা হয়েছিল ? অথবা সেরকম কিছুই ঘটেনি, বিশেষ কারণেই।

    তো তালিকাটিতে প্রিয়নাথের উল্লেখ নিয়ে কয়েকটি কথা বলার থাকে, তান্তিয়া ভীল বইটির সূত্র ধরেই।

    'দারোগার দপ্তর' ছাড়াও, প্রিয়নাথ ১৮৮০ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে আরও কয়েকটি বই লিখেছিলেন - ১৩০৭ (১৯০০) সাল নাগাদ প্রকাশ হয়েছিল 'বুয়র ইতিহাস' যে সময়টায় দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্বিতীয় বুয়র যুদ্ধ চলছিল; ১৩০২ (১৮৯৫) সাল নাগাদ 'পারসিক গল্প' নামে একটি বই যেখানে পারস্যে প্রচলিত কিছু গল্পকে নেওয়া হয়েছিল যদিও এটি এই প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়েরই লেখা কিনা একটু সন্দেহ থাকে, হলেও অনুমান করা যায় এটি অনুবাদকর্ম; ১৮৮৭ সাল নাগাদ 'আদরিণী' নামে সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখিত একটি উপন্যাস। ঠগী কাহিনি নামেও একটি বই প্রিয়নাথই লিখেছিলেন এরকমই জানা থাকলেও
    তান্তিয়া ভীল বইটির সম্বন্ধে ইন্টার্নেটেই গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়ে শ্রাবণ, ১৩০১ সালে চুঁচুড়া থেকে প্রকাশিত 'বাসনা' নামে পত্রিকাতে 'ঠগী কাহিনি' বইটির উল্লেখ পাই। পত্রিকা সংখ্যাটিতে ' দারোগার দপ্তর'-এর এক অনুচ্ছেদের এক বিজ্ঞাপন আছে; বলা হয়েছে যে 'দারোগার দপ্তরের তৃতীয় বৎসর আরম্ভ হয়েছে, ডাকমাশুল বার্ষিক ১৪০ টাকা (খুবই অন্তর্দৃষ্টিমূলক ভাবে বইটিকে মহাভারতের সাথেও তুলনা করা হয়েছে ) এবং সেই সময়ে দারোগার দপ্তরের গ্রাহকেরা আরও দুইটাকা দিলেই সারবান ও মূল্যবান তিনটি বই উপহার হিসেবে দেওয়া হবে তাও বলা হয়েছে। এই উপহারের মধ্যে দু'খণ্ড ঠগী কাহিনি আছে যা ঠগী সর্দার মহম্মদ আলির জীবন চরিত যে ৭৯১-টি নরহত্যায় লিপ্ত ছিল। বিজ্ঞাপনটি থেকে স্পষ্ট হয়না যে এই 'ঠগী কাহিনি' প্রিয়নাথেরই লেখা কিনা, অনুমান করা যেতে পারে যে সেরকমই, সেই জন্যই হয়ত দারোগার দপ্তরের সাথে এই বইটিও দেওয়া হচ্ছে যা দেড় টাকা মুল্যের। (প্রিয়নাথের 'ঠগী কহিনি' ফিলিপ টেলরের ১৮৩৯ সালের উপন্যাসকে ভিত্তি করে লিখিত নাকি স্লিম্যানের মূল রিপোর্ট বা লেখার ওপর ভিত্তি করে রচিত, সেটা জানিনা। টেলরের লেখাও স্লিম্যানের লেখা থেকে অনেক কিছুই নিয়েছিল এবং খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল আবার অন্যদিকে এও হতে পারে প্রিয়নাথ তাঁর পুলিশে চাকরি সূত্রে হয়ত স্লিম্যানের লেখার সাথে সরাসরি পরিচিত ছিলেন এবং নিজের বইয়ের জন্য স্লিম্যানের লেখাকেই ভিত্তি করেছিলেন যদিও স্লিম্যানের লেখায় ঠগী সর্দার হিসেবে বেহরামের নাম ছিল যে ৯০০-র ওপর খুনের সাথে যুক্ত ছিল, নিজের হাতে খুন করেছিল অন্তত শ'দেড়েক।) বিজ্ঞাপনটিতে তিনটি বই উপহার হিসেবে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। 'ঠগী কাহিনি' ছাড়াও অন্য বইটি ছিল 'পঞ্চস্ত্রোত্র' যা শঙ্করাচার্য্য লিখিত পাঁচটি স্তবের মূল ও বাংলা অনুবাদ, আরও আট আনা দিলে, এই বইটিও গ্রাহকেরা পেয়ে যাবেন। এই বইটিও কি প্রিয়নাথেরই লেখা ? স্পষ্ট নয়।

    'বাসনা' পত্রিকাটির সূত্রে 'ঠগী কাহিনি'-র প্রসঙ্গ যেমন আসে, তেমনি এও দেখি যে এই পত্রিকা সংখ্যাটিতেই, বাবু তুলসীদাস মুখোপাধ্যায় বি.এ দ্বারা ইংরেজীতে লিখিত 'তান্তিয়া ভিল' নামে একটি বইয়ের ছোট সমালোচনা আছে। বলা হয়েছে যে তান্তিয়া ছিল মধ্য ভারতের রবিনহুড সদৃশ চরিত্র এবং 'আমাদের জাতীয় গৌরবের কারণ'। সুতরাং ১৩০১/১৮৯৪ সাল নাগাদ প্রকাশিত পত্রিকায় যে এই ইংরেজী 'তান্তিয়া ভিল' বইয়ের উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে, হতে পারে প্রিয়নাথ তার অনুবাদ করেছিলেন অথবা নিজেই তথ্য সংগ্রহ ক'রে নিজের বইটি লিখেছিলেন। কিন্তু যাই হোক না কেন, প্রিয়নাথের বইটি অন্তত ১৮৯০-র আগেই তো প্রকাশিত হতে হবে কারণ পুর্ণানন্দ ভক্ত ধরাই পড়ছে অন্তত ১৮৯০-র আগে তার শেষ অপরাধের ফলবশতঃ এবং যে কারণে ইংরেজ শাসনের একটি আইনের বদল ঘটছে, ১৮৯০-তে। সেরকম হলে আমি একটু ধন্দে পড়ি যে প্রিয়নাথ কি ১৮৯০ র আগেই অতখানি জনপ্রিয় যে তাঁর বই বঙ্কিম, বিদ্যাসাগর বা মধুসূদনের সাথে একই তালিকাভুক্ত হয়ে যেতে পারে ? এটা বক্তব্য নয় যে প্রিয়নাথের লেখা এঁদের লেখার সাহিত্যমূল্যের সাথে তুলনীয় কিনা, তুলনাটা মূলতঃ জনপ্রিয়তার। কারণ এই তালিকাটি শেষ পর্যন্ত ঐ সময়ে প্রচলিত 'জনপ্রিয়' আর পাঠকপ্রিয় লেখারই একটি তালিকা, গল্প-উপন্যাস-কাব্য মিলিয়ে। বঙ্কিম তো বাংলা ভাষার প্রথম ও প্রধান ঔপন্যাসিকই শুধু নন, তিনি প্রথম 'জনপ্রিয়' ঔপন্যাসিকও , তদুপরি 'বঙ্গদর্শন' পত্রিকাও সাড়া ফেলে দেওয়া। মধুসূদনের কাব্যও সম্পূর্ন অন্য ধারার হয়েও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে কিংবা তাঁর নাটকগুলোও, কিন্তু এঁদের সাথে প্রিয়নাথ কি তুলনীয় ? প্রিয়নাথের 'দারোগার দপ্তর' প্রকাশিত হওয়া শুরু হচ্ছে ১৮৯১-৯২ সাল নাগাদ, চলবে পরবর্তী বারো-তের বছর, ১৮৯০-র সময় প্রিয়নাথ তাহলে সেরকম জনপ্রিয়তা পেয়েছেন কি যে পূর্ণানন্দ ঐ তালিকায় প্রিয়নাথের বইকে রাখছে, দুই খণ্ড হলেও ?

    নাকি এই সম্ভাব্যতাটি ঠিক যে হয়ত পূর্ণানন্দর তালিকায় প্রিয়নাথ ছিলেনই না এবং 'তান্তিয়া ভিল' বইটি লিখছেন ১৮৯০-র পরেই (অনুবাদ বা নিজকৃতি)। কিন্তু 'দারোগার দপ্তর'-এ ১৮৯৩-৯৪ সাল নাগাদ যখন পূর্নানন্দের কাহিনিটি লিখছেন - পুর্ণানন্দকে গ্রেপ্তারের তিন-চার বছর পরে - যখ্ন তাঁর 'দারোগার দপ্তর' জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তখন তাঁর ইচ্ছে হয়েছিল অন্য জনপ্রিয় ও সৃষ্টিশীল লেখকদের সাথে - যারা বাংলা ভাষা আর বাঙালীর রুচি গড়ে তুলছেন, লেখায় নতুন যুগ এনেছেন - সাহিত্যসভায় সমান আসন অধিকার করার ? ফলতঃ নিজেকে এবং নিজের বইকে ঐসব লেখকদের সাথে - পূর্নানন্দরই মারফৎ - একই তালিকাভুক্ত করার ? এটা পুরোটাই অনুমান, তথ্য জোগাড় করতে পারলে এই সম্ভাব্যতাটি ভেঙে পড়তে পারে কিন্তু অবাক না হয়ে যদি মেনে নিই এরকমই ঘটেছিল, তাহলে প্রিয়নাথ (পুলিশ) একভাবে পুর্ণানন্দেরই (অপরাধী) দোসর হয়ে ওঠেন কারণ পুর্ণানন্দও চেয়েছিল সাহিত্য সমাজে জনপ্রিয়তা পেতে, ঐসব লেখকদের মতই বড় লেখক হয়ে উঠতে এবং তাঁদের সাথেই গণ্য হতে !!
  • ইন্টার্নেটে গোয়েন্দাগিরি | 236712.158.897812.124 | ১২ জুলাই ২০১৯ ১৯:৪৮383186
  • Reference | 237812.68.345623.178 | ১২ জুলাই ২০১৯ ১৯:৫৮383187
  • সৈকত | 236712.158.566712.143 | ১২ জুলাই ২০১৯ ২০:৪২383188
  • গোয়েন্দা মশাই, প্রথম বিজ্ঞাপনটি কোন সালের জানা আছে ? আমার ধারণা, অন্তত ১৩০৫/১৮৯৮-৯৯ এর, কারণ ৬ সংখ্যা দপ্তরের উল্লেখ করা হয়েছে। এর এক-দু বছরের মধ্যেই বাণীনাথ নন্দী বদলে গিয়ে নতুন প্রকাশক আসেন।

    * বাজে ভুল করেছি, আগের লেখায়, ডাকমাশুল ১৪০ টাকা লিখে, ওটা দেড় টাকা।
  • dc | 236712.158.895612.210 | ১২ জুলাই ২০১৯ ২১:০২383189
  • আমার একটা কৌতূহল আছে, সেটা ঠিক লেখা নিয়ে নয়, সৈকতবাবুর লেখার স্টাইল নিয়ে। প্রসঙ্গের বাইরে মন্তব্য করার জন্য আগেই সরি চেয়ে নিলাম।

    অনেক জাগাতেই দেখছি অতীত আর বর্তমান কাল মেশানো হয়েছে, যেমন "গল্পটি প্রকাশের কয়েক বছরের মধ্যেই লেখাটি নিস্চয় প্রিয়নাথবাবু পড়ে ফেলতে পারছেন" আর "শার্লক হোমসের গল্পটি বইতে সংকলিত হচ্ছে ১৯০২-০৩ সাল নাগাদ"। যেহেতু এগুলো অতীতের ঘটনা, তাই এমনিতে লেখা উচিত "গল্পটি প্রকাশের কয়েক বছরের মধ্যেই লেখাটি নিস্চয় প্রিয়নাথবাবু পড়ে ফেলতে ফেলেছিলেন" আর "শার্লক হোমসের গল্পটি বইতে সংকলিত হয়েছিল ১৯০২-০৩ সাল নাগাদ"।

    এরকম লেখার স্টাইল আরও দুয়েকজনের লেখায় দেখেছি, যেমন খ দা। কিন্তু মাইরি বলছি খ দার লেখার একটা সেনটেন্সও ঠিকমতো বুঝতে পারিনা, তাও খ দা কে একবার জিগ্যেস করেছিলাম, বোধায় খ দা দেখতে পায়নি বা ইগনোর করে গেছে। আমার কৌতূহল যে আপনারা এভাবে অতীত আর বর্তমান মিশিয়ে দেন কেন? এটা কি গুরুর নিজস্ব স্টাইল, যেমন কিনা আবাপর নিজস্ব বানান? আমার এরকম লেখার স্টাইল বেশ উদ্ভট লাগে, পড়তে গিয়ে হোঁচট খাই। তবে এটা একেবারেই আমার নিজস্ব অবসার্ভেশান, প্রত্যেকের নিজের মতো করে লেখার স্বাধীনতা আছে, সে নিয়ে কোন মন্তব্য নেই ঃ-)
  • গোয়েন্দা | 237812.68.565623.145 | ১২ জুলাই ২০১৯ ২১:১২383190
  • ডিসি,
    পাস্ট পারফেক্ট কন্টিনিউয়াস টেন্স জানা আছে?

    ঠগী কাহিনী
    সংকলক: প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়
    ৩০০.০০
    অরুণা প্রকাশন
    ১৮৩৫-এ উইলিয়াম হেনরি স্লিম্যান এক কুখ্যাত ঠগিকে গ্রেফতার করেন এবং তাকে রাজসাক্ষী হতে রাজি করান। তার সাক্ষ্যের সূত্র ধরেই ঠগিদের নির্মূল করা সম্ভব হয়। ১৮৩৯-এ স্লিম্যান যখন ‘কমিশনার ফর দ্য সাপ্রেশন অব ঠগি অ্যান্ড ডেকয়টি’ পদে নিযুক্ত হচ্ছেন, সেই বছরেই ইংল্যান্ডে প্রকাশিত হল ঠগিদের নিয়ে ফিলিপ মেডোজ টেলরের লেখা উপন্যাস কনফেশনস অব আ ঠগ। এ কাহিনিতে আমির আলি নামে এক ঠগি লেখকের কাছে তার জীবনবৃত্তান্ত বর্ণনা করে এবং ঠগিদের নানা ভয়ংকর অভিযানের খুঁটিনাটি বিবরণ দেয়। প্রকাশিত হওয়ার পরই টেলরের উপন্যাস অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং সত্যি ঘটনার মতোই গুরুত্ব পায়। বাংলায় গোয়েন্দা গল্প রচনার অন্যতম পথিকৃৎ প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৫৫-১৯১৭) যিনি নিজে পুলিশে চাকরি করতেন এবং ‘দারোগার দপ্তর’ নামে মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন, তিনি টেলরের বইটি থেকে সংকলন করে প্রকাশ করেন ঠগী কাহিনী। তাঁর মতে, ‘ঠিক অনুবাদ নহে, তথাপি তদবলম্বনে লিখিত’। পুনর্মুদ্রিত বইটির নতুন ভূমিকার প্রয়োজন ছিল।

    --- পুস্তক পরিচয়
    আবাপ
    ২৬ নভেম্বর, ২০১৭
  • গোয়েন্দা | 237812.68.565623.145 | ১২ জুলাই ২০১৯ ২১:১৯383191
  • এটা পিডিএফের ওসিয়ার তাই কিছু গন্ডোগোল আছে, যেমন, Bengahs = Bengalis ইত্যাদি। তবু এত ছবিপত্র দেওয়ার সময় নেই, তাই টেকস্ট কপি করলাম, মোদ্দা বিষয় প্রিয়নাথের জনপ্রিয়তা।

    Though Nagendranath Gupta (1861-1940) wrote "Churi Na
    Bahaduri" ("Theft or an Act of Bravado?") in the April 1886-edition of Bharati, a monthly
    literary magazine edited by Swamakumari Debi (1855-1932), the history of Bengali detective
    ficfion formally began in April 1892, with the publication of "Banomah Daser Hatya" ("The
    Murder of Banomali Das"), the first story of the 206-tale-strong Darogar Daftor ('The Office
    of the Officer-in-Charge">-series written by Priyanath Chattopadhyay (1855-1947), an
    employee with the detective department of Calcutta Police (started in 1868) between 1878 and
    1911. In Sangshad Bangla Sahityasangi. Sisir Kumar Das observes, "Priyanath Mukhopadhyay
    first started [the] trend [of detective fiction] in BengaU literature" (96). In its review of the
    thirteenth, fourteenth and fifteenth volumes of Darogar Daftor. the June 1893-issue of Bharati
    wrote, "What Mukhopadhyay is trying to do is noble to us" that echoed Damodar Debshanna's
    observation, "We can easily count Babu Priyanath Mukhopadhyay's detective narratives as
    highly original sensational novels" (Mukhopadhyay, Darogar 5-7). The first book of the series,
    which ran for twelve years, was pubUshed by Baninath Nandi on behalf of M/s. Sikdarhagan
    Bandhob Pustakalaya O Sadharan Pathagar, Calcutta, though he was later succeeded by
    Upendrakishore Choudhury.
    The first formal Bengali detective fiction introduced a
    police officer-in-charge working under the British administration against the colonised
    members of his own community, and Mukhopadhyay's very conception of the protagonist
    pointed to an overwhelming influence of the imperial canon. The stories were based on the
    real-life experiences of the author, who, being an administrator and the receiver of British titles
    and honours, regarded the Indians as dangerous thieves and necessarily malignant. In his other
    novels, Tantia Bhil. Detective Police. Thagi Kahmi ("The Thagis"), Boer Yuddher Itjfaash
    ("The History of the Boer War") and the autobiographical Tetrish Bathshorer Pohce Kahini.
    ba, Priyanath Jeevani ("Police Tales of Thirty-three Years, or, Priyanath's Autobiography"),
    Mukhopadhyay points out to the various aspects of "superb governance" by the English
    colonisers. Ranojit Chattopadhyay and Siddhartha Ghosh write, "Priyanath was just a story
    teller, not a litterateur per se. He simply chronicled his experiences in contemporary Bengali
    language." (748). But his anti-colonised ideology received a wide readership "among the
    Bengahs, the Assamese, the Hindustanis, the Oriyas, the Maharastrians, the Sikhs and the
    EngUshmen" (Mukhopadhyay 8). The 30 April 1893-issue of Hope commented, "Babu
    Priyanath Mukherjee is well-known to the public as a writer of popular detective fiction, and
    his latest volume, Kulsam, sustains his previous reputation" (Mukhopadhyay, Darogar 6). It
    was only in Ingrej Dakat ('The Englishman Dacoit") that he obliquely hinted at the evil in the
    colonisers' psyche. That Mukhopadhyay was an employee of the Calcutta Police, an institute
    founded in 1856 to control and obliterate the Bengali nationalists, was itself an assertion of his
    ignoble collaboration with the imperialists. In "About KoUcata Police: the Empire at its
    Zenith", the official website of the police branch informs:
    "In 1856 the Govemor-General promulgated an Act treating Calcutta Police as
    a separate organization and S. Wauchope, who was then the chief magistrate
    of Calcutta, was appointed as the first commissioner of police. He had to face
    difficult days because of the Sepoy Mutiny of 1857, the first upsurge against
    British rule. He handled the situation ably (italics mine) and was knighted for
    his achievement. During the incumbency of his successor V.H. Schalch the
    Calcutta Police Act and the Calcutta Suburban Police Act, which are still in
    force, were enacted in 1866. Two years earlier (1864) the Commissioner of
    Police had become the Chairman of the Justices as well and a Deputy
    Commissioner was appointed to look after the executive police. It was Sir
    Stuart Hogg who first set up the Detective Department in Calcutta Police in
    November 1868 with A. Younan as the superintendent and R. Lamb as the
    first-class inspector..." ^^.

    প্রথম বিজ্ঞাপনের সাল জানা নেই, কারণ DSPACE এত বাজে ভাবে সার্চ রেজাল্ট দেয়, আরেকটু ঢুকে খুঁজলে পাওয়া যাবে হয়তো। এটা থেকে --
    http://dspace.wbpublibnet.gov.in:8080/jspui/bitstream/10689/22657/8/Appendix.pdf
  • গোয়েন্দা | 236712.158.9007812.111 | ১২ জুলাই ২০১৯ ২১:২৮383192
  • শরৎচন্দ্র ভট্টাচার্যের ১৩৬ পাতা-র তান্তিয়া ভিল নাটক ছাপা হচ্ছে ১৮৯৩ সালে।
    উইকিসোর্স বলছে প্রিয়নাথের আদরিনী ১৮৮৭ তে প্রকাশিত।
    বুয়র ইতিহাস ১৩০৭

    প্রথম বিজ্ঞাপনের লিস্টের ক্রম যদি কালানুসারে হয়, তাহলে ১৮৮৭-১৮৮৮ সালেই "তান্তিয়া ভিল" বই প্রকাশের সময় হওয়া উচিত। পরে আরেকটু খুঁজব।
  • dc | 236712.158.565612.163 | ১২ জুলাই ২০১৯ ২২:৩৭383193
  • গোয়েন্দাকে ধন্যবাদ, কিন্তু এটা কি ঠিক পাস্ট পারফেক্ট কন্টিনিউয়াস টেন্স এর উদাহরন? সেরকম হলে তো লেখা হয় was being compiled বা এক্ষেত্রে হয়তো "শার্লক হোমসের গল্পটি বইতে সংকলিত হচ্ছিল ১৯০২-০৩ সাল নাগাদ"। তার বদলে "সংকলিত হচ্ছে" তো একেবারে প্রেসেন্ট টেন্স! অবশ্য জানিনা ঠিক লিখলাম কিনা, গ্রামারে আমি ভয়ানক কাঁচা ছিলাম। আরেকটা কথা হলো, এক্ষেত্রে পাস্ট পারফেক্ট কন্টিনিউয়াস টেন্স ব্যবহার করা হবেই বা কেন, যখন "হয়েছিল" লিখলে বা অতীত কাল ব্যবহার করলে আরও সহজে বোঝানো যায়? (আরও একবার ডিসক্লেমার দিয়ে দি, সৈকত কিভাবে লিখবেন সেটা একেবারেই তাঁর ব্যপার। আমিই বোধায় বাজে হ্যাজ দিচ্ছি।)
  • b | 236712.158.9007812.111 | ১২ জুলাই ২০১৯ ২৩:২৭383194
  • ডিসির শেষ সেন্টেন্সে বড় করে ক দিলাম।
  • dc | 236712.158.676712.162 | ১২ জুলাই ২০১৯ ২৩:৩৩383196
  • বুঝেছি :d এই আলোচনা তাহলে আর না।
  • সৈকত | 237812.69.3434.136 | ১২ জুলাই ২০১৯ ২৩:৫৩383197
  • গোয়েন্দা - সূচীটা কালামুক্রমিক নয় মনে হয়। ডাক্তারবাবু গল্পটি ১৩০৪-এর, রাজাসাহেব আর টিকেন্দ্রজিৎকে গল্পগুলি ১৩১১ সালের। অর্থাৎ এই তিনটে লেখা ১৮৯৭ থেকে ১৯০৪-এর মধ্যে। এর মধ্যে আদরিণী ১৮৮৭ সালের ! খুঁজে পেলে জানিও।

    ডিসি - আপনি লেখার যে জায়্গাটা উল্লেখ করেছেন, সেখানে এইভাবে লেখাই যেত - প্রিয়নাথবাবু কাহিনিটি লিখেছিলেন ১৩১৩ সালে অথবা শার্লক হোমসের গল্পটি বইতে সংকলিত হয়েছিল ১৯০২-০৩ সাল বা কয়েক বছরের মধ্যেই লেখাটি নিস্চয় প্রিয়নাথবাবু পড়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু আমি ঐ সময়টা জুড়ে একটা কন্টিনিউটি আনতে চাইছি, কয়েক বছরের ব্যবধানে বিলেতে বা এখানে যা ঘটছে, সেসবের মধ্যে। ক্রিয়ার কালগুলোকে অতীতেই রেখে দিলে বা শেষ করে দিলে সেটা ঘটেনা বলে মনে করি।
  • সৈকত | 237812.68.121223.51 | ১৩ জুলাই ২০১৯ ০১:৩৪383198
  • সব অপরাধীই তার সমসময়ের পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে, সেই সময়ের ফা`ক ও ফাঁকিগুলিকে, পুর্ণানন্দও তাই করেছিল। বার বারই ঘুরে ফিরে আসে এই কথাটিই এবং যার জন্য এই কাহিনিটি অত্যন্ত স্বাদু হয়ে ওঠে, যে সে একজন উনলেখ হিসেবে বইয়ের হগত আর বই ব্যবসাকে, যা তার চেনা, তাকেই ব্যবহার করেছিল। বই ব্যবসার তো দুটি দিক, ক্রেতা আর বিক্রেতা। নিজের লেখা চিরন্মদা বই নিয়ে সে যা করেছিল অথবা জীবনীচরিতটি লিখে, তার মধ্যমে সে বিক্রেতাদের ঠকিয়েছিল, তারা যেভাবে ব্যবসা করত অথবা তাদের যা আকর্ষণ করত,সেগুলিকে ব্যবহার করে। আর সংবাদপত্র প্রকাশের কথা বলে অথবা আদিরসাত্মক বইয়ের সুত্রে সে ব্যবহার করেছিল ক্রেতা অর্থাৎ পাঠকদের ইচ্ছেকে। যতদিন পর্যন্ত সেই ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে তার লোক-ঠকানো কারবারকে সীমিত রেখেছিল ততদিন সে তার 'ব্যবসা' চালিয়ে যেতে পেরেছিল, পুস্তক বিক্রেতারা ঠকে গিয়েও বেশী ঝামেলা করেনি অথবা পাঠকেরাও বিশেষ করে মফস্বলের পাঠকরা যাদের সে নিশানা করেছিল। আইনের আওতায় সে বিশেষ আসেনি যদিও আদিরসাত্মক বইয়ের ক্ষেত্রে কিছু কোর্ট-কাছরি হয়েছিল, কিন্তু লক্ষ্যণীয় যে এই কাজগুলি করতে করতেই যখন তার সুযোগের ক্রমশঃ অভাব ঘটছিল, জুয়াচুরি আর চালানো যাচ্ছিল না আবার সাহসও বেড়ে যাচ্ছিল, ফলতঃ সরকারী ব্যবস্থার ফাঁককে ব্যবহার করা শুরু করে, তখনই সে ধরা পড়ে এবং শাস্তিপ্রাপ্ত হয়।

    চার-পাঁচদিন পরিশ্রম করে সে 'চতুর্দ্দশরত্ন' নামে একটি পুস্তক সংকলন করে জাতে ১৪ জন প্রসিদ্ধ ব্যক্তির জীবনীচরিত বর্ণিত হয়। সে নিজে কিছু লেখেনা বা তথ্য জোগাড় করে না, '১৪ খানি ভিন্ন ভিন্ন গ্রন্থ হইতে' সে এই বইটি তৈরী করেছিল। ছাপাখানার অভাব ছিল না, সে যে জায়গায় কারবার চালাচ্ছে সেটা তো উত্তর কলকাতা, বটতলারই কাছকাছি জায়্গাগুলো, যেখানে সেই উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে তার সময়কাল পর্যন্ত ছাপাখানার অভাব নেই। অতএব কিছু বই ছাপিয়ে সে এক পুস্ত্ক বিক্রেতাকে তার এই বইয়ের কথা জানায় এবং ধার্য হয় যে ঐ বিক্রেতার দোকান থেকেই বইগুলি বিক্রে হবে, পরিবর্তে বিক্রেতাটি শতকরা ২৫ তাকা কমিশন পাবেন। এই সিদ্ধান্ত হয় যে ঐ বিক্রেতার নামে বইটির বিজ্ঞাপন হবে এবং সেটা হলে ঐ বিক্রেতাটি জে অন্য দোকানদারের থেকে বেশী বিক্রী করতে পারবে সে ব্যাপারে পুর্ণানন্দের সন্দেহ নেই। দোকাননদার সম্মত হয়, কারন সে খোস্সমোদপ্রিয় তদুপরি কোন কমিশন সেলে বই বিক্রে করলে কোন দোকানদারেরই ক্ষতি হয়না। পুর্ণানন্দ অতএব যেভাবে এই ক্ষেত্রে ঠকানোর কাজটি করেছিল সেটি বই ব্যবসার এই বিশেষ দিকটি, অর্থাৎ কমিশন সেলের লোভ। এর পর থেকে পূর্নানন্দ করে সে সবই মিথ্যে, বিজ্ঞাপন বেরোয়, নিজেই বিভিন্ন ভুয়ো ঠিকানা থেকে দোকানদারের ঠিকানায় গ্রাহক হওয়ার চিঠি পাঠাতে থাকে; কিছুদিন পরে দোকানদারের কাছে গিয়ে চিঠিগুলি দেখে কিন্তু গল্প ফাঁদে যে তার অতি শীঘ্রই টাকার দরকার হয়ে পড়েছে, বই বিক্রীর জন্য অপেক্ষা করলে তার অসুবিধেই হবে, অতএব আর একজন বিক্রেতার সাথে কথা হয়েছে যে তখনই সব বইগুলি কিনে নিতে চায়। প্রথম দোকানদারটি চিঠির পরিমাণ দেখে লোভে পড়ে গেছে, অন্য কেউ টাকা দিয়ে পুর্ণানন্দের বইগুলি কিনে নিলে তার ক্ষতিই হবে ভেবে, সে পুর্ণানন্দের কথামত পাঁচশো পঞ্চাশ টাকায় প্রথম দুশো কপি বই কিনে নেয় এবং ছাপাখানা থেকে বাকি বইগুলিও আনিয়ে নেবে, এরকমই বলে। এর পরে স্বাভাবিকভাবেই যা হওয়ার তাই হয়, গ্রাহকের ভুয়ো ঠিকানায় দোকানদারটি বই পাঠাতে থাকে পরিবর্তে টাকা পাবে ভেবে কিন্তু সব বইই ফিরে আসতে থাকে, দোকানাদারটি সাড়ে পাঁচশো টাকা ঠকে যায়। ক্রমশঃ দোকানদারটি এক বন্ধুর সাহায্যে পুরো ব্যাপরটি বুঝতেও পারেম যে বইয়ের কাটতির লোভ আর কমিশন সেলের লোভ দেখিয়েই পূর্নানন্দ জুয়াচুরিটি করেছে, পুর্নানন্দকে উকিলের ভয়ও দেখায় কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই করে উঠতে পারে না ও চুপ করে যায়।

    সংবাদপত্র ছাপা নিয়ে সে যা করেছিল সেই পুরো ব্যবস্থাটি আরো একটু জটিল। মনে হয়, ক্রমশঃ পুর্নানন্দের লোভ বেড়ে যাচ্ছিল অথবা ছোটখাটো জুয়াচুরির উপায়টি কমে আসছিল, বড় দাও মারতে চেয়েছিল সে। এখানে সে কিছুই ছাপায়নি পর্যন্ত, বিজ্ঞাপন দেয় এই মর্মে যে একটি নতুন সাপ্তাহিক সংবাদ্পত্র প্রকাশিত হবে যেখানে রাজনীতি, সমাজনীতি, সাহিত্য, সংবাদ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে লেখা থাকবে, উপরন্তু যে লেখক যে বিষয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ তাঁরাই সেখানে লিখবেন। উপরন্তু গবর্নমেন্টে কর্মরত 'বর্তমানের সুপ্রসিদ্ধ লেখকদিগের' মধ্যে অনেকেই লিখবেন যদিও সংবাদপত্রে তাদের লেখা নিষিদ্ধ। কিন্তু এইটি সামান্য। বিজ্ঞাপনে বলা হয় যে এই সংবাদপত্রটি চালানোর জন্য বিভিন্ন রাজা-রাজড়ারা পঞ্চাশ হাজার টাকা শহরের প্রধান ও বিশ্বস্ত ব্যাঙ্কে জমা রেখেছেন এবং উৎসাহী গ্রাহকরা ডাকমাশুল বাবদ পাঁচ টাকা করে পাঠালে, তারা ঐ টাকাটি পেতে পারেন; আগে গ্রাহক হওয়ার ভিত্তিতে কোন গ্রাহক দশ হাজার টাকা পর্যন্ত পেতে পারে। টাকা বিলি করার প্রক্রিয়াটি হবে লটারী মারফৎ এইরকম বলেও আসলে পুর্ণানদের ইচ্ছে ছিল, যারা টাকা পাঠাবে তাদের টাকা সে সরাতে থাকবে, বিশেষ করে মফস্বলের গ্রাহকদের টাকা, লটারী বা সুরতি খেলাটি সে আর করবে না। কিন্তু লোক জানাজানি হওয়া শুরু হলে সে খেলাটি সংগঠিত করে, কিন্তু ভুয়ো কিছু গ্রাহকদের নামে টাকা পাঠাচ্ছে বলে সে আসল গ্রাহকদের প্রতারণা করে এবং শেষ পর্যন্ত কোন সংবাদ্পত্রই না ছাপিয়ে সে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করে। প্রতারনাটি শেষ করে এই বলে যে গবর্নমেন্ট চৈত্র মাস অবশি লটারী খেলার অনুমতি দিয়েছিল এবং সেই সময় শেষ হয়ে যাওয়াতে কাগজটিই আর বেরোবে না !

    দুটি ঘটনার ক্ষেত্রেই সে বিজ্ঞাপনকে যারপারনাই ব্যবহার করেছিল। উনিশ শতকের বিজ্ঞাপনের প্রসার, বৈচিত্র আর চীৎকৃত মন্তব্য মারফৎ লোক আকর্ষণের যে উপায়টি চলত, পেছনে থাকত নিত্যনতুন সামাজিক ঘটনা আর উদ্ভাবনের মদত, ব্যবসাবৃত্তির এই দিকের সাথেই সে যোগ করেছিল ভাল লেখা পড়ার বা বড় লেখকদের লেখা পড়ার লোভ, বিশেষ করে মফস্বলের মানুষরা যারা কলকাতা থেকে দূরে থাকার জন্যই এইসব থেকে বঞ্চিত অথচ অন্যদিকে এইসব জুয়াচুরিও তাদের অজানা, তাদের সে আকৃষ্ট করতে পেরেছিল। এবং সবকিছুর ওপরে সে রেখেছিল টাকার লোভকে; কিছু না করেই বিনা আয়াসে টাকা রোজগার করে ফেলা যাবে, তার বুদ্ধির উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে সে এই ইচ্ছেটিকেও ব্যবহার করেছিল।

    মনে হয়, পূর্ণানন্দ শুধু তার সময়কে শুষে নিয়েছিল।
  • গোয়েন্দা | 236712.158.895612.132 | ১৩ জুলাই ২০১৯ ০৩:২১383199
  • তাঁতিয়া ভিল প্রকাশিত হয় ১৮৮৯ সালের ২২শে নভেম্বর। নিচের ছবিটার লাস্ট বাট ওয়ান এন্ট্রি।
    ছবি অস্পষ্ট মনে হলে গুগুল ড্রাইভের লিংক দিলাম সেখান থেকে পিডিএফ নামিয়ে নিন।

    এবার বলুন এই সাড়েতিনঘন্টা ব্যাপী ঘুম নষ্ট করা বেগার খাটুনির রিটার্ন কি?



    https://drive.google.com/open?id=1DTSaKj9MOYrWCxjyZykaCBdlDs8cw-Tp
  • dc | 124512.101.89900.213 | ১৩ জুলাই ২০১৯ ০৭:৩৮383200
  • সৈকতকে ধন্যবাদ, কিছুটা বুঝলাম।
  • - | 236712.158.895612.132 | ১৩ জুলাই ২০১৯ ০৯:২২383201
  • পুনশ্চ কি ২০৬ টি গল্পই রিপ্রিন্ট করতে পেরেছে? সূচীপত্রগুলোর ছবি তুলে এখানে পোস্ট করা যাবে?
  • lcm | 237812.68.344512.125 | ১৩ জুলাই ২০১৯ ০৯:৫৬383202
  • দুরন্ত! পূর্ণানন্দ তো নাইজেরিয়া স্ক্যাম (ইমেইল) ইন্টারনেট/ইমেইল যুগের অনেক আগেই করেছে !
  • সৈকত | 236712.158.566712.61 | ১৩ জুলাই ২০১৯ ১০:১২383203
  • ডার্ক ওয়েব থেকে ক্যাটালগটি তুলে আনার জন্য গোয়েন্দাকে নেটবাহাদুর উপাধি দেওয়া হল। প্রিয়নাথ যেমন রায়বাহাদুর উপাধি পেয়েছিলেন
  • সৈকত | 237812.69.3434.136 | ১৩ জুলাই ২০১৯ ২২:৫৫383204
  • পুনশ্চ-র বইয়ের সূচীপত্র।

    ১ম খন্ড, এপিঠ-ওপিঠ।





    ২য় খন্ড, এপিঠ-ওপিঠ।



  • সুকি | 237812.68.786712.15 | ১৪ জুলাই ২০১৯ ১০:১৫383205
  • খুব ভালো হচ্ছে এটা।

    আচ্ছা, ঠগী কাহিনী কি প্রিন্টে পাওয়া আচ্ছে? আমি এই নিয়ে এখন কিছু পড়ছি - অভিযান থেকে বেরোনো 'সপ্তরিপু' বলে বইটি শেষ করলাম। এখন পড়ছি Mike Dash এর লেখা "THUG - The True Story of India's Murderous Thug". বাংলায় এই নিয়ে কি কি ভালো বই আছে খোঁজা হয় নি, আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে ভালো বই নেই, এখন এটার খোঁজে পেয়ে ভালো লাগল।
  • b | 236712.158.891212.97 | ১৪ জুলাই ২০১৯ ১৩:০৫383207
  • ইয়ে, ঠগী/পিন্ডারী সম্পর্কে পড়তে হলে সিপাহি থেকে সুবাদার পড়ে ফেলুন।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন