“কেন?” প্রশ্ন করা মানেই হল এর পেছনে কী উদ্দেশ্য আছে তা জানতে চাওয়া। এই মহাবিশ্বের চলন গমনের পেছনে কোনও উদ্দেশ্য আছে ভাবার অন্তর্নিহিত অর্থ এই যে এই সৃষ্টি কারওর পরিকল্পনাপ্রসূত, অর্থাৎ এই সৃষ্টি পরিকল্পনা করার কেউ আছে। এই ভাবনা বিজ্ঞানের প্রমাণ তথা গণ্ডীর বাইরে। কোনও সৃষ্টিকর্তা (বা কর্ত্রী) আছেন কি নেই, এই প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানের আওতায় পড়ে না। বিজ্ঞানের আওতায় পড়ে “কীভাবে” প্রশ্নের উত্তর। শোওয়া থেকে হঠাৎ উঠলে যে অনেক সময় মাথা ঘোরে, তা কীভাবে হয়, তার পেছনে কী কী শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া আছে, তার বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া বিজ্ঞানের আওতায় পড়ে। কিন্তু সেই বিবরণের পুরোটাই “হাউ”-এর উত্তর, “হোয়াই”-এর নয়। ... ...
এই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮২৩-২৪ সালে দেশে কলের সুতো এল। হাতে বোনা সুতোর থেকে তার দাম কম। ধীরে ধীরে বাজার ছেয়ে গেল কলের সুতোয়। টিঁকে রইল শুধু খুব মিহি সুতো আর খুব মোটা সুতো, যা পরে দেশের গরীরগুর্বোরা। সেই সময়ে ১৮২৮ সালের সমাচার দর্পনে এক সুতাকাটুনির দুঃখভরা চিঠি বেরোল, তিনি দৈনিক দুই তোলা সুতো কেটে দিনে এক টাকা আয় করতেন। এই কাজ করে তিনি সাত গন্ডা টাকা দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, এগার গন্ডা টাকা দিয়ে শ্বশুরের শ্রাদ্ধ করেছেন, ভাত কাপড়ের কোন চিন্তা ছিল না। কিন্তু কলের সুতো এসে তার আয়ের উপায় কেড়ে নিয়েছে। তাঁর দৈনিক কাটা সুতোর পরিমাণ আর আয়ের হিসেব দেখে অবশ্য একটু অবাকই লাগে। কারণ ১৮২২-২৩ সালেও নাকি ক্ষীরপাই, রাধানগরে কোম্পানির কাটুনিদের মাসিক আয় ছিল ৩ টাকা আর মালদহে ২টাকা ৮ আনা। অসামান্য দক্ষতা ছাড়া এই আয় সম্ভব না। তাই আমরা ব্যক্তির দুঃখে দুঃখিত হই, কিন্তু সামগ্রিক ভাবে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জয়গান গাইব নাকি মেয়েদের আয়-হরণের দুঃখে কাতর হব তা ঠিক বুঝে উঠি না। ... ...
বিজ্ঞান গবেষণার অন্তর্লীন সুরটাই হল ক্রমাগত আত্মসংশোধন। বিজ্ঞান নিজের ভুল নিজেই শুধরে চলে। তাতে তার মহত্ব খর্ব হয় না, বরং আরও বাড়ে। আমরা যারা এই প্রসেসটার বাইরে তারা মধ্যে মধ্যে বিরক্ত হই। এ কি রে বাবা, আজ বলে ডিম খেও না, কাল বলে খাও। আজ বলে মানুষ থেকে মানুষে করোনা ছড়ায় না, কাল বলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখো।এরা বৈজ্ঞানিক না পাগল! আসলে এই ক্রমসংশোধনের নামই বিজ্ঞান। যদি পরিবর্তিত, সংশোধিত না হত, তবে সে আর স্বচ্ছতোয়া স্রোতস্বিণী থাকত না, সংস্কারের বদ্ধ জলায় পরিণত হত। ... ...
বিজ্ঞান গবেষণার আলোচনায় যে কয়েকটা শব্দ খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাদের মধ্যে একটা হল এই হাইপোথিসিস। বেশীরভাগ গবেষণাই শুরু হয় এই হাইপোথেসিস নামক আমড়াতলার মোড়ের থেকে। তবে শুধু বিজ্ঞান গবেষণাই বা বলি কেন, আমাদের জীবনের প্রতিটা পদেই মিশে রয়েছে এই হাইপোথিসিস। ব্যপারটা কী রকম একটু বিশদে বলি। ধরুন, গতকাল রাত্রে আপনি আপনার সোনামনা বা সোনামণির সাথে মেসেজ চালাচালি করছিলেন। উনি আপনাকে ভালোবেসে লিখলেন “আমার সোন্টুমনা বিড়ালছানাটা ডিনারে কি খেয়েছে?” আপনারও মনে হল এর একটা সমান ভালোবাসাভরা উত্তর দেওয়া দরকার। আপনি লিখলেন, “আমি ভাত খেয়েছি। আমার গুল্লুগাল্লু হিপোর ছানা কি খেয়েছে?” তারপর এক চরম নৈশব্দ্য। সারা রাতে আর কোনও মেসেজ এল না। এমন কি সকালের গুড মন্নিং মেসেজও নয়। এইবার আপনি ভাবলেন যে আপনার গুল্লুসোনা হয়তো আপনার ওই হিপোর ছানা বলাটা খুব একটা ভালোভাবে নেন নি। এই যে আপনি ভাবলেন বা অনুমান করলেন, এটা হল আপনার হাইপোথিসিস। এখানে দুটো জিনিষ লক্ষ্য করার আছে। ... ...
বিজ্ঞানকে পছন্দ করি বা না করি, একে ছেড়ে থাকা আমাদের কারওর পক্ষেই সম্ভব নয়। সকালের ব্রেকফাস্ট থেকে রাতের ঘুম, বারেবারেই আমাদের বিজ্ঞানের শরণাপন্ন হতে হয়। বিজ্ঞানের শরণাপন্ন বলতে আমি মাইক্রোওয়েভ টেকনোলজি বা স্মার্টফোন টেকনোলজির কথা বলছি না। আমি বলছি রোজকার জীবনের নানা সিদ্ধান্তের কথা, যার পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে বিজ্ঞানের নানা অন্ধিসন্ধি। কী রকম? ধরা যাক, আপনি সকালে জ্যাম-পাঁউরুটির বদলে ওটমিল খান। কেন? না, ছোটকাকুর ডাক্তার বন্ধু বলেছেন ময়দার জিনিষ না খেতে। কিন্তু তিনি এটা জানলেন কী করে যে ময়দা খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর? কী করে আবার, ডাক্তার মানুষ, তাই জানেন। উঁহু, উত্তরটা হল না। তিনি জানেন, কেন না, কেউ কোথাও এটা নিয়ে গবেষণা করে উত্তরটা খুঁজে বার করেছেন। ডাক্তারকাকু সম্ভবত কোনও জার্নালে পড়ে এটা জেনেছেন। ... ...
কেউ কোভিড আক্রান্ত হয়ে হেল্পলাইনে ফোন করলে, সরকারি এম্বুলেন্স পৌঁছে যাচ্ছে বাড়িতে,আগে থেকে ড্রাইভারের নাম্বার এসে যাচ্ছে এসএমএসে ,তারপর অসুস্থ মানুষটিকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেওয়া, সম্পূর্ণ নিখরচায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা করানো এবং অবশেষে ছুটির পর বাড়ি পৌঁছে দেওয়াও হচ্ছে ! কোনো প্রথম বিশ্বের দেশ নয়, এই আপাত অবিশ্বাস্য ঘটনাগুলো ঘটছে আমাদের দেশে, আমাদের রাজ্যে ! ... ...
রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ সহ যে সর্বব্যাপী অডিওভিস্যুয়াল এফেক্ট তৈরী হয় তাঁর লেখার ছত্রে ছত্রে, যেভাবে সন্ধ্যে নামে, বর্ষা আসে, ফুলের গর্ভাধান হয়, মাটির গন্ধ, ঘামের গন্ধ মিশে যায় মুলারি বাইয়ের রূপ বর্ণনায়, পৃথিবীর কোন ক্যামেরার ক্ষমতা আছে তাকে তুলে ধরে? ... ...
-এ মা ! তুমি টি শার্ট পরে আছো কেনো ? রাতুলের রিনরিনে গলার খিল খিল হাসি যেন একটা পাহাড়ি ঝর্ণার মত উপচে বেড়িয়ে এলো কম্পিউটার স্ক্রিনথেকে ! আর সে হাসির ছোঁয়াচ লেগে গেলো আমার পেশাদারিত্বের মুখোশ পরা আপাত গোমড়া মুখেও ! ... ...
ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি আমাদের দেশ নাকি স্বাধীন,গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র । তা বড় হবার সময়ে এই সব শব্দ গুলির অর্থ ই কেমন যেন গুলিয়ে যেতে লাগল। কেউ শেখালেন ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়, তো অন্য কেউ বোঝালেন,এর চেয়ে ইংরেজরা নাকি ঢের ভালো ছিল! স্বাধীনতা ধুয়ে কি জল খাব, ইত্যাদি। ... ...
ক্লাব থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, রাজনৈতিক নেতা থেকে সমাজসেবী -অনেকের ধারণা প্রতিবন্ধী মানুষদের কিছু দান করলে করলে পরমকরুণাময় ঈশ্বর খুশি হয়ে থাকেন তাই ‘পূণ্য’ লাভ সম্ভব হয়। সেই চেতনা প্রবল হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসে। রাজা আসে রাজা যায়, মন্ত্রী আসে মন্ত্রী যায়, প্রতিবন্ধী মানুষদের অবস্থার পরিবর্তন আদতে সোনার পাথর বাটি। তবে হেলেন কেলারে’র মত প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষ যখন বলেন ‘আমার প্রতিবন্ধকতার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ’। তখন মনে হয় প্রতিবন্ধী মানুষদের জীবনে কিছু তো আছে গর্ব করার মত। প্রতিবন্ধকতার জন্য মানুষগুলো হয়ত প্রতি মুহুর্তে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারে। প্রতিবন্ধকতার জন্য জগতকে অন্যভাবে দেখতে পারে কিছুটা আলাদা করে!! ... ...
আমার আগের ব্লগ "কয়েক দশকে সঙ্ঘ ভেঙ্গে যায়?" এর সূতোয় পাঠক রমিত প্রশ্ন করেছিলেন আজকাল সেভাবে তারকা আর দেখা যায় না কেন? ওনাকে জানিয়েছিলাম এ বিষয়ে আমার কিছু চিন্তাভাবনা আছে যা নিয়ে পরবর্তী ব্লগে লিখব। সেই বিষয় নিয়েই আমার ভাবনা চিন্তাকে সংহত করার প্রয়াস রাখলাম এই কিস্তিতে। রমিতকে ধন্যবাদ বিষয়টি উস্কে দেওয়ার জন্য। ... ...
এই মধ্যবিত্ত থেকে ক্রমশঃ তলিয়ে যেতে থাকা মানুষগুলোকে না রিপাব্লিকান, না ডেমোক্র্যাট - কোন পলিটিকাল এস্ট্যাব্লশমেন্টই নিজেদের ভাবেনি। এর সঙ্গে আর একটা জিনিস বুঝতে হবে। অ্যামেরিকানরা ধর্মভিরু লোক। তারা চার্চে যায়। তাদের সবাই যে ইভেঞ্জেলিকাল তা নয়, কিন্তু বহু অংশই। আবার তারা ইউনিয়নেও চাঁদা দেয়। এরাই সুইং ভোটার। এদের ইভেঞ্জেলিকাল টাল্লি দেখে ডেমোক্র্যাটরা ধরে নেয় এর রিপাব্লিকানদের ভোটার। আবার রিপাব্লিকানরা ধরে নেয় এরা তো ঘরের লোক, ভোট দেবেই। এদের নিয়ে ভাবার কিছু নেই। ঠিক সময়ে প্রো-লাইফের কলকাঠি নাড়লেই হবে। ... ...
সাধারণ চরিত্র অভিনয়ের থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার চরিত্র অভিনয়ে কতটা নিষ্ঠা ও পরিশ্রম লাগে তার সার্থক দৃষ্টান্ত হতে পারেন সৌমিত্রবাবু। ২০১২ সালে ২৫শে জুলাই সৌমিত্রবাবুর গলফগ্রীনের বাড়িতে নেওয়া এক সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বর্তমান আলোচনা। ... ...
পাঁচটি চেনা গল্প, বিভিন্ন জনের রচনা, রঙ-রসও তাদের আলাদা। মিল একটাই, অন্তিম পংক্তিগুলি যেন কবিতার মত ডানা মেলে, গল্পের আওতায় আটকে থাকতে চায় না। আর সেই শেষ শব্দগুলির মধ্যে দিয়েই তাদের অন্তরে পৌঁছনোর চেষ্টা। ... ...
কিন্তু এটা কি করে হল? রবীন্দ্রনাথের গান এরকম একজন অন্য ভাবে অন্য কথায় অন্য সুরে বেমালুম গেয়ে দিলেন ! ... ...
কোম্পানির খাস-নিয়ম, যেখানেই আস্তানা গাড়বে সেখানেই যাজক আর স্কুলমাস্টার থাকতে হবে। তাই কোম্পানির কলকাতায় আছেন রেভারেন্ড বাটলার আর রেভারেন্ড কেপ। কিন্তু কলকাতায় তখন গির্জা কোথায়? একটা ঠেকনা-দেওয়া আস্তানায় প্রভু যীশুর ভজন-পূজন চলছে। সেও আবার আদতে পর্তুগীজদের গির্জা। মুর্গিহাটার আওয়ার লেডি অব দ্য রোজারি। কোম্পানির এলাকায় ফ্রেঞ্চ বা পর্তুগীজ পাদ্রীদের ঢোকা মানা। আর্মেনিয়ান চার্চ আছে একটা। কলকাতার প্রথম চার্চ। কিন্তু প্রটেস্টান্ট ইংরেজ সাহেবরা সেখানে যান কি করে? এর আগে লোকজনের থেকে চাঁদা তুলে একখানা গীর্জা বানানো হয়েছিল বটে, আজকের রাইটার্স বিল্ডিং এর জায়গাতেই। পর পর দুটো বিপর্যয়, ১৭৩৭ সালের বিধ্বংসী ঝড় আর বন্যা আর ১৭৫৬ য় সিরাজ-উদ-দৌলার আক্রমণে সে গির্জা আর নেই। ... ...
আমার আগের ব্লগ আয় তবে বেঁধে বেঁধে থাকি'র সুত্রে আসা কিছু ভাবনা আরেকটু বিশদে। মুলতঃ আমাদের জীবন থেকে ক্রম-অপসৃয়মান যুথবদ্ধতার ছায়া এবং সেই প্রক্রিয়াতে প্রযুক্তি কীভাবে ব্যক্তিযাপনকে করে তুলছে আরো সহনীয় তারই সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ। সেই প্রসঙ্গেই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সামাজিক মূল্যবোধের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে দু-চার কথা। ... ...