১৯৭৪। এপিডিআর থেকে মিছিল করে এসেছি এসপ্ল্যানেড ইস্টে, রাজনৈতিক বন্দিমুক্তির দাবিতে। মনে আছে, হাওড়ার ছেলে, বনবিহারীবাবুদের গ্রুপে ছিল সঞ্জীবদা, একটা বাসের মাথায় চড়ে বক্তৃতা করছিল। আমি আর জয় কৌটো ঝাঁকিয়ে পয়সা তুলছিলাম। সেদিন ওখানে ওয়েবকিউটার জমায়েতও ছিল। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম মনোভাবাপন্ন মাস্টারমশাইরা ওঁদের নানান দাবি দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। আমিই প্রথম দেখি আমাদের কলেজের সলিলদা (ইংরাজি পড়াতেন) আর হিতেনদা (বাংলা পড়াতেন) দাঁড়িয়ে আছেন। সদ্য কৈশোরের অ্যাডভেঞ্চার পোকা নেচে উঠল। জয়কে বললাম - চল যাই। ওঁরা সেই আমলে দশ টাকা দিয়েছিলেন। আর সলিলদা বলেছিলেন কলেজে দেখা করতে। ... ...
মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে বাংলা হারাল প্রমিথিউসের মশালধারী দুই আলোকযাত্রীকে। একজন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা চিকিৎসক স্মরজিৎ জানা ও অন্যজন মরণোত্তর দেহ ও অঙ্গদান আন্দোলনের পথিকৃৎ ব্রজ রায়। ... ...
শিক্ষিত মধ্যবিত্তের তাহলে কী হবে? অ্যাবানডানড? যারা এই দুঃসময়েও পার্টিকে ভোট দিল, পাশে দাঁড়াল, তারা অপাংক্তেয়? তা অবশ্যই নয়। কমিউনিস্ট পার্টির প্রাথমিক অভিমুখ অবশ্যই গরীব, মেহনতি মানুষ - কৃষক, শ্রমশিল্পী - কিন্তু মধ্যবিত্ত মানুষ তার বাইরে পড়ে না। বহু মধ্যবিত্ত পরিবার আসলে নামেই মধ্যবিত্ত, শ্রেণীগতভাবে তাদের অবস্থান নিম্নবিত্তের থেকে খুব একটা ভাল নয় - এটা ভুললে চলবে না। কিন্তু "শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ" না হলে এই মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ কোথায়? এই প্রশ্নটাও, আবারও, প্রশ্নটা যত কঠিন, উত্তরটা তত নয়। বৃহৎ শিল্প মধ্যবিত্তের কর্মসংস্থান বাড়ায় বলে যে মিথ প্রচলিত আছে, সেই মিথ বার্স্টিং করার সদিচ্ছের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এই প্রশ্নের সহজ উত্তর। ... ...
এবারের ভোট শুধুমাত্র পার্টি, দলীয় কর্মী, সমর্থক আর কিছু সুবিধেবাদীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এবারের ভোটে বিপুল ভাবে সামিল হয়ে পড়েছিল সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজ।বিজেপির মত আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদী শক্তিকে রুখে দেওয়ার প্রয়োজনটা অনুভূত হয়েছে সেই সিভিল সোসাইটির অন্দর থেকেই। ... ...
যেটা চিন্তার সেটা হলো এই দর্শন, এই রাজনীতি। ইরাক যুদ্ধের সময় বুশ সিন্ড্রোম বলে কুখ্যাত হয়েছিলো যে উক্তিটি – “যদি তুমি আমার বন্ধু না হও, তবে তুমি আমার শত্রু”। এক সাম্যাজ্যবাদীর যে দর্শন মানায়, তাতে যদি বামপন্থী বলে দাবী করা কেউ আস্থা রাখে, তবে বুঝতে হবে সমস্যা গভীরে। এ দর্শন সাম্রাজ্যবাদ তথা ফ্যাসীবাদের দর্শন, যে তার মদমত্ত অহংকারে বন্ধু চিনতে ভুল করে, বা বলা ভালো বন্ধু চিনতে অস্বীকার করে। এ দর্শন বাম বলে কথিত পরিসরে জোরেশোরে মান্যতা পাচ্ছে মানে এ রাজ্যে বিজেপি ভোটে যতই হারুক, সে তার “কার্বন ফুটপ্রিন্ট” ছেড়ে গেছে। আজ না হলে তা বিষবৃক্ষ হয়ে ওঠার আগেই তাকে নির্মূল করে ফেলার কাজে সচেষ্ট হতে হবে। ... ...
অনিশ্চিত ছোট অন্যান্য উদ্যোগের মতন এখানেও অনিশ্চিত অংশটুকু সমাজ না দেখলে মানুষ সেটা সামলে উঠে উৎপাদনের সামাজিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন কী করে? সরকার সমাজের হয়ে সেই ভূমিকাটা একটা মাত্রা নিচ্ছেন বলেই মনে হয়। অর্থাৎ, আমরা দেখলাম এই রাজ্যে সাধারণ মানুষের রোজগার নেই এরকম না। কিন্তু সেই রোজগার নিশ্চিত করতে সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন, যার মধ্যে বিভিন্ন ভাতা অনুদানও এসেছে। ... ...
অতএব পেনসিল কী বলে দেখা যাক। পেনসিলের কাজ হিসাব করা - সেই কারণে সাট্টার হিসাবরক্ষককে পেনসিলার বলা হয়। তা পশ্চিমবঙ্গে যে সাট্টা খেলাটা হল, তার হিসাব তাহলে কী দাঁড়াল? নাটশেলে - ১। তৃণমূল কংগ্রেস সমস্ত অ্যান্টি ইনকাম্বেন্সির প্রেডিকশন তুচ্ছ করে বিপুল ভোটে জয়ী; ২। বিজেপি প্রবলভাবে পরাজিত হয়েও প্রধান বিরোধী শক্তি, বস্তুত একমাত্র বিরোধী শক্তি (বিধানসভায়); ৩। বামেরা, সিপিএম এবং জোটসঙ্গীরা আরও একবার প্রত্যাখ্যাত - এবারে সম্পূর্ণভাবে। অঙ্ক সহজ এবং ম্যান্ডেট এতটাই স্পষ্ট যে মেনে না নিয়ে আমার মত ঘোর সিপিএম সমর্থকেরও উপায় নেই। ... ...
ভারতে এই মুহূর্তে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। কি উপায়ে একে প্রতিহত করা যায়? সামান্য একটি পেনসিল আর ডাইরি কি কাজে লাগতে পারে? ... ...
বি ... ...
রেমডেসিভির বিষয়ক দু-একটি কথা। দেখা যাচ্ছে যে ধরণের প্রমাণের ভিত্তিতে রেমডেসিভিরকে আমেরিকার এফ ডি এ ছাড়পত্র দিয়েছেন, সেই সমস্ত প্রমাণ খুব জোরালো নয়। এতৎসত্ত্বেও ভারতে রেমডেসিভির নিয়ে এক ধরণের উন্মাদনা তৈরী হয়েছে কি? ... ...
সরকারের দায়িত্বহীনতায় এখনো যদি ধর্মীয় দলাদলির উর্ধ্বে উঠে প্রশ্ন না তোলা হয় নাগরিক সমাজ থেকে, সামনে দুঃসহ দিন অপেক্ষা করছে। বেঁচে থাকার তাগিদে সরকারকে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য বাধ্য করতে হবে। এভাবে নাগরিকদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার অধিকার কোনো নির্বাচিত সরকারের নেই। ... ...
রাম রাজনীতির উত্থানের পেছনে বাম ভোটের ভূমিকা ... ...
আমরা গত এক বছরে জেনেছি যে কোভিড শুধু থুতু শ্লেষ্মা কফ ইত্যাদির বড় কণা থেকেই ছড়ায় না, সে অতি সূক্ষ্ম কণাবাহিত হয়ে বাতাসে বিশেষ করে বদ্ধ ঘরে, প্রায় কিছু না হলেও ঘন্টাতিনেক কাটিয়ে দেয়। ওই সময়ের মধ্যে সে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে, এবং সেই ব্যক্তি যদি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে বা পুরনো ইনফেকশনের প্রভাবে ইমিউন থাকেন তাহলে এক কথা, না হলে মানুষটি কোভিড পজিটিভ হবেন। অতএব বদ্ধ ঘর, ভিড় ঠাসা ঘর, যেখানে ঠিকমতন ভেন্টিলেশনের অভাব, জানলা দরজা বন্ধ, সেই রকম একটি জায়গায় কোভিড আক্রান্ত কোন মানুষ মাস্ক না পরে যদি চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা বলেন, ঝেড়ে কাশেন, তাহলে তাঁর চারপাশের অনেকেই আক্রান্ত হবেন, ও শুধু তাঁরাই নন, কোভিড যেহেতু ঘরে দীর্ঘক্ষণ ক্ষুদ্র কণাবাহিত হয়ে অবস্থান করতে পারে, সেই জন্য অন্যেরাও আক্রান্ত হবেন। এই ধরণের ঘটনাক্রম ও মানুষজনকে পরিভাষায় হাইপারস্প্রেডার বলে অভিহিত করা হয়। মূলত এঁদের মাধ্যমেই কোভিড দ্রুত ছড়ায়, কাজেই যে ভাবেই হোক, এই সুপারস্প্রেড ঘটনাগুলোকে যদি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তাহলে কোভিড নিয়ন্ত্রণ করা খুব সমস্যার নয়। এই নিয়ে এবারের আলোচনা। ... ...
এবারের বিষয়বস্তু দুদফা মাস্ক পরা ও আরো কয়েকটি বিষয় নিয়ে এই লেখা ... ...
করোনাভাইরাস হাওয়ায় যে ভাসমান খুব ক্ষুদ্র কণিকা দিয়ে ছড়ায়, এ নিয়ে প্রথম থেকেই বহু বৈজ্ঞানিক বলে এসেছেন, তবুও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য দেশজ স্বাস্থ্য এজেনসির চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রথম দিকে বলতেন যে করোনা "মূলত" বড় ড্রপলেট দিয়েই ছড়ায়, এবং দু-মিটার বা ছ'ফুটের দূরত্ব বজায় রাখা, ইত্যাদি অধিক প্রয়োজনীয়। সম্প্রতি একটি লেখাকে কেন্দ্র করে করোনার হাওয়ায় ভাসমান হওয়া নিয়ে কয়েকটি বক্তব্য বেরিয়েছে, তাই নিয়ে কয়েকটি বিষয়ের অবতারণা। এক, বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা ("বিস্বাস") এর বক্তব্য ছিল যে যেহেতু করোনা ভাইরাস এর প্রাথমিক সংক্রমণ ক্ষমতা কম (আর_শূন্য = ২ দশমিক ৫ এর কাছাকাছি), অতএব হাম বা সমগোত্রীয় জীবাণুর মত সে নয়, কাজেই সে যে হাওয়ায় ছড়ায়, এমনটা না ভাবলেও চলবে। এ ধারণা নানা কারণে অমূলক | এছাড়াও প্রাণী গবেষণা, হাসপাতালে কোভিড সংক্রমণ, নিউজিল্যাণ্ডের মতন দেশে যেখানে সাধারণভাবে জনসমাজে কোভিড নিয়ন্ত্রিত, সেখানে হোটেলে কোয়ারানটাইনড হওয়া লোকের মধ্যে সংক্রমণের আধিক্য, মেলা/কনসার্ট থেকে ছড়ানো, ইত্যাদি নানান সূত্র ধরে বলা যায় যে কোভিড কিন্তু হাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। কি করে এবং কি করা উচিৎ সেই বিষয়গুলো এই লেখাটিতে কিছুটা লেখা হয়েছে। ... ...
একটা ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে বাংলার সাথে একসূত্রে বাঁধা পাঁচটি থেরবাদী বৌদ্ধ প্রধান দেশ- মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কাম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, আর ভারতীয় উপমহাদেশের অনেকগুলি অঞ্চল- আসাম, ওড়িশা, মিথিলাঞ্চল, নেপাল, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, কেরল। এদের সবার নববর্ষ একসঙ্গে হয়- পয়লা বৈশাখ। ... ...
"উঠোন পেরিয়ে বিষন্ন বদন যে ভবনটির সামনে এসে সাধনার আপিস বাড়ি। ভয়ে ভয়ে দরজা পেরিয়ে ঘরে ঢুকলাম। চোখে সবকিছু ধাঁধা ঠেকল। অন্ধকার যেন ঝাঁপিয়ে পড়ল। আর সেই আধার সাঁতরে যখন চোখটা একটু সয়ে আসল, দেখি, চৌকোনো এক মস্ত ঘর, চারধারে টেবিলের সারি। তাতে কর্মচারীরা নিবিষ্ট মনে কাজ করছেন। ওই মস্ত ঘরে সাকুল্যে দুটি ৪০ পাওয়ারের বাতি। বাইরের আলো থেকে ঘরে ঢুকলে হঠাৎ কিছু চোখে পড়বে না। তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। নিমে তথা ফতুয়াধারী লোকগুলোকে কেন যেন জ্যান্ত লাশ মনে হচ্ছিল - নড়াচড়া নেই, কথা নেই, ঘাড় খুঁজে কী সব আঁকিবুকি কষছে! আর একেবারে সামনে নড়বড়ে টেবিলে নিমে গায়ে যিনি বসে, বিজ্ঞাপনে তার চেহারা এত সহস্র বার দেখেছি যে তাকে চিনতে কষ্ট হলো না মোটে।" ... ...