শিক্ষাচার্য বিদ্যুৎকুমার মধ্যাহ্নের দিবাস্বপ্ন দেখছিলেন। এমন সময় প্রধানসেবক এসে কাঁচুমাচু মুখে জানালেন -- চারদিকে কি লেখা হচ্ছে জানেন স্যার? বিদ্যুতের বড্ড তেজ করে দেব লো ভোল্টেজ। শুনে বিদ্যুৎকুমারের স্থির ভ্রূ কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত হল। তিনি দাঁত খিঁচিয়ে বললেন, লো-ভোল্টেজ? দেখাচ্ছি তোদের। যন্ত্রবিদ, ইধার আও। আজ থেকে গোটা বিশ্বভারতীতে সারা রাত গনগন করে আলো জ্বলবে। কোথাও কোনো আলো নিভলেই, তোমার চাকরি নট। ... ...
সেখানে কামাল পাশার সঙ্গে আনোয়ার পাশার নামও উল্লেখ করেছেন। এই আনোয়ার পাশা কামাল পাশার আগে তুরস্ক জয় করতে গিয়ে হেরে গিয়েছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারান, তাঁর সংগ্রামের রাস্তা কামাল পাশার থেকে আলাদা ছিল। তবু তিনি আনোয়ার এর নাম রেখেছিলেন তাঁর কারণ তিনি দেশের জন্য লড়াই করেছেন যে বীরেরা, তাঁদের বন্দনা করেছেন, শুধু জয়ীদের নয়। এ কথাও সত্যি কবিতাটি তিনি যখন লেখেন তখনও কামাল পাশা জয়ী হয়ে উঠতে পারেন নি। জয়লাভ করেছিলেন পরে। তিনি এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে শুধু জয়ীকেই বন্দনা নয়, সংগ্রামীকে বন্দনা করা হবে। সংগ্রামী মানেই সম্ভাবনা। ... ...
এই ন্যারেটিভের প্রথম লক্ষণ হল, আফগানিস্তানকে আফগানিস্তান বানানোর জন্য পাকিস্তান, চিন এবং কখনও সখনও দুষ্টু রাশিয়াকে দায়ী করা। আর আমেরিকাকে স্রেফ একটু ব্যর্থতার জন্য সমালোচনা করা। আমেরিকা আফগানিস্তানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে লাট করেছে, সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু উদ্দেশ্য তো ভালোই ছিল, গণতন্ত্রই তো গড়তে গিয়েছিল। মানুষকে ধর্মান্ধতা থেকে স্বাধীনতা দিয়েছিল, মেয়েদের দিয়েছিল ওড়ার আকাশ। কাইট রানার সেই পশ্চিমী স্বাধীনতার প্রতীক, মালালা হল মুখ। এখন আমেরিকার পিছিয়ে আসায় সে আকাশ ভেঙে পড়ে যাচ্ছে, এবার অ্যাসিড বৃষ্টি আসন্ন -- এরকম একটা ভাব। তো, এ ন্যারেটিভ এতই মোটাদাগের, এবং এতটাই অলীক, যে, আলাদা করে সমালোচনা করার এমনি কোনো কারণই নেই। তবু লেখা যখন হচ্ছে, তখন সংক্ষেপে, স্পষ্ট করেই বলা যাক, বাস্তবতা থেকে এসব অনেক দূরে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আফগানিস্তান হয়ে আরব পর্যন্ত মৌলবাদীদের উত্থানে সক্রিয় ভূমিকা, মদৎ ছিল কাদের তা কোনো গোপন তথ্য নয়। আফগানিস্তানে মুজাহিদিনদের প্রশিক্ষণ, সৌদি আরবের অগাধ কনট্র্যাক্ট, এবং তালিবানদের সঙ্গে চলমান আলোচনা, এসব নিশ্চয়ই গণতন্ত্র এবং নারীর অধিকারের স্বার্থে করা হয়নি। বস্তুত জঙ্গী ইসলাম, মূলত প্রত্যক্ষভাবে পশ্চিমের তৈরি। ... ...
আমি আগ্রহ আরও হারিয়ে ফেললাম কারণ তিনি তখন মরিয়া হয়ে প্রথা ভাঙতে চাচ্ছেন। মৌলবাদের প্রতি প্রচণ্ড আক্রোশ তৈরি হয়েছে, ফলে ধর্মকে নানান ভাবে আঘাত করছেন, আঘাতের অস্ত্র সব সময় সুবিধার না। গাছে মাছে আক্রমণ চলছে তখন। এবং তখনই সম্ভবত দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ধর্মকে আক্রমণ করে এর আগেও অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। তাদের প্রতি মানুষ এই রকম বিরক্ত হয়নি। তাদের কথা পছন্দ হয়নি, হয়নি, চুপ করে থেকেছে। কারণ তাদের বলার ধরন অন্য রকম ছিল, তাতে সম্ভবত সাহিত্যের গুণাগুণ বেশি ছিল। তসলিমা নাসরিন কোনমতেই আহমেদ শরীফের চেয়ে বড় নাস্তিক ছিলেন না, হুমায়ুন আজাদের চেয়ে কঠোর কথা তিনি বলেন নাই তাও হয়ত বলা চলে। এরপরেও তাঁকে এঁদের চেয়ে বেশি গালাগালি শুনতে হয়েছে। এর কারণ এক যা বললাম, বলার ধরন অনেকের পছন্দ হয়নি আর দ্বিতীয়ত তিনি নারী! নারীর মুখে এই সব শুনতে আমরা রাজি না। ... ...
এই মরশুমের অন্য খেলাটি কৌতুহলোদ্দীপক। আফগানিস্তানের অর্থনীতি চলে আফিম, ফল ও বন্দুকের কুটির শিল্পের উপর। ফল ছাড়া দুটি পণ্যই আন্তর্জাতিক বাজারে বেআইনী। কিন্তু কিন্তু কিন্তু - আজারবাইজানের তেল করাচীর বন্দরে আনতে গেলে আফগানিস্তানের জমিনে কব্জা লাগবে। চীন-পাকিস্তান সেই কারনেই তালিবানের পাশে। করাচী থেকে রাস্তা তৈরীর কাজ বহুকাল ধরে চীন চালাচ্ছে। এই সাফল্য যতটা তালিবানেদের তার চেয়ে বেশী চীনের। ... ...
কামাখ্যার যোনিপূজার ধুপেরধোঁয়ার সঙ্গে আজকের সতীর যোনি থেকে টেনে বের করা অন্ত্রের কুন্ডলীতে স্বাধীনতা পরাধীনতা মিলেমিশে এক হয়ে যায়। এখনকার দুর্গার লড়াইটা সেখান থেকেই– ... ...
নায়িকা দুধে ধোয়া তুলশী পাতা? না, তা নাই হতে পারে। সমস্যা হচ্ছে কেউই দুধে ধোয়া তুলশী পাতা না। রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষ, শিরায় শিরায় দুর্নীতি। আপনে সব কিছু ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন নায়িকার উপরে। সমাজ নষ্ট করে দিচ্ছে, ছেলেপেলে উচ্ছন্নে যাচ্ছে সব। তরুণ সমাজকে উদ্ধার করতে নায়িকাকে বন্দী কর। নায়িকা বন্দী, এখন আর চিন্তা নাই, সমাজ রক্ষা পেল, দেশ উদ্ধার হয়ে গেল। দেশের আর কোন সমস্যা থাকল না, দুই তিনশ করে মানুষ এখন আর করোনায় মারা যাবে না, কালকে থেকে গণহারে সবাই টিকা পেয়ে যাবে, প্রতিটা হাসপাতালে আইসিউ বসে যাবে, অক্সিজেনের নহর বয়ে যাবে এখন থেকে। আমরা মূর্খ সুর্খ মানুষ, আমরা ভেদের খবর কি অত জানি? সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গেছে বাংলাদেশে, প্রতিটা নিউজ পোর্টাল ব্যস্ত নায়িকার বাসার ভিতরের ভিডিও নিয়ে, শোয়ার আর হাগার ঘরের ভিডিও নিয়ে! এমন সুযোগ বারেবারে আসে? এখন এইটাই খবর, বাকি সব ভুলে যাও। এক জিনিস বেশিদিন মনে রাখতে পারবেন না, তাই সামনে আরও নায়িকা, মডেল ধরা হবে। লকডাউন উপভোগ করতে থাকুন, আপনার বিনোদনের দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া হয়েছে। ... ...
বলপূর্বক টীকাকরণ সহ বলপূর্বক যে কোনও কিছু চাপিয়ে দেওয়ার "রাষ্ট্রীয় ইচ্ছা"টির সর্বৈব বিরোধিতা হওয়া প্রয়োজন; তা টীকা হোক কিংবা ভাষা অথবা মতাদর্শ। ... ...
বিদেশিদের ইতিহাসে তিনি ‘বিশে ডাকাত’ হলেও আমাদের শ্রদ্ধায় মুছে যাক সে ইতিহাস, অক্ষয় হোক শহিদ বিশ্বনাথ সর্দারের নাম স্বাধীনদেশের ইতিহাসের পাতায়। ... ...
কিউবার বিপ্লবকে নতুন আলোয় দেখার চেষ্টা করা আজ প্রয়োজন। তার বৈশিষ্ট্যকে অনুধাবন করে, তার প্রাণবস্তুকে আহরণ করে ভারতীয় বাস্তবতার সঙ্গে তাকে অন্বিত করার চেষ্টা খুব জরুরী। হয়তো সেই স্বপ্নসম্ভব রোমান্টিক আদর্শবাদের স্ফূরণের কাল আজ নেই, কিন্তু আদর্শবাদ আর শুদ্ধতার আবাহন, সংকীর্ণতার বিসর্জনের অনেক সম্ভাবনা রয়ে গেছে যার উৎসভূমিতে কিউবার সেই রূপকথাসম বিপ্লবের ইতিহাসমন্থন আমাদের ফিরে যেতে প্ররোচিত করে। ... ...
দানিশ সিদ্দিকির কাজ নিয়ে একটা লেখার কথা ভেবেছিলাম। হয়তো কয়েক বছর পর হত, আবার হয়তো কোনওদিনই হত না। স্বাধীন ভারতের একমাত্র পুলিৎজার জয়ী ফোটো জার্নালিস্ট, তাঁর কথা দেশের মানুষ জানল তালিবানের হাতে মারা যাওয়ার পর। দানিশের কেরিয়ার আর ছবি নিয়ে বিশেষ আলোচনাও হল না, ন্যারেটিভ ঘুরিয়ে দেওয়া হল অন্যদিকে। ... ...
কথা হচ্ছে একশ সত্তর বছর আগের এই নেতা কী লিখেছেন, সেটা কি এখনকার প্রজন্মকে, এখনকার বাস্তবকে কোনোভাবে প্রভাবিত করে? বিশেষ করে এমন কোনও ব্যাক্তির জীবনকে, যিনি স্প্যানিশ সাহিত্য বা মার্ক্সবাদী দর্শন নিয়ে আগ্রহী নন! ... ...
হাতে লেখা পান্ডুলিপির প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল ... ...
বিংশ শতাব্দীর ফলিত সমাজতন্ত্রের ধারণায় পরিবেশচিন্তার বিশেষ কোনো গুরুত্ব ছিল না। কিন্তু আজ যখন প্রজাতিগত সংকটের সামনে দাঁড়িয়ে পরিবেশচিন্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে তখন তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, উৎপাদন, প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার সবকিছুকে নতুন আলোয় দেখতে হচ্ছে। বহু বামপন্থী ধারণার পুনর্বিন্যাস তাই জরুরী হয়ে পড়েছে। পুঁজিবাদের অনুকরণ নয়, সম্পূর্ণ বিপরীত পথের সন্ধান না করতে পারলে পরিবেশ সংকট থেকে মুক্তির সন্ধান সম্ভব নয়। এর জন্য, মার্কস, বিশেষত পরিণত কার্ল মার্কসের লেখাপত্রের সন্ধান জরুরী। ... ...
সকলের এক একটি বহ্নি আছে। সকলেই সেই বহ্নিতে পুড়িয়া মরিতে চাহে। সকলেই মনে করে সেই বহ্নিতে পুড়িয়া মরার তার অধিকার আছে। “ কেহ মরে, কেহ কাঁচে বাধিয়া ফিরিয়া আসে”। ... ...
করোনা ভাইরাসকে শুধু একটা রোগের কারণ হিসেবে দেখলে, তাকে পরিবেশের সংকটের অংশ হিসেবে না দেখলে সমস্যাটির প্রতি সুবিচার করা হয় না। আবার পরিবেশের সংকটকে কাটিয়ে উঠতে গেলে পুঁজিবাদী ধ্যানধারণার বাইরে তাকানো একান্তই আবশ্যক। ... ...
ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএম নেতা মানিক সরকার যদিও প্রচারে এসে তাঁর বক্তব্যে বার বার সাবধান করেছেন যে, বিজেপির ক্ষমতায় আসার মারাত্মক ভুল যেন না করা হয়। কারণ, ত্রিপুরার মানুষ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন যে, বিজেপি ক্ষমতায় বসলে মানুষের কি পরিমান সর্বনাশ হয়। অমর্ত্য সেন সহ বহু বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞ পন্ডিত মানুষেরা সবাই বিজেপিকে প্রতিহত করাই প্রধান কর্তব্য বলে বার বার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ভবি যে ভুলবার নয় এবং চোরের সাক্ষী মাতালের মতো জুটে গেল রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব। ... ...