দক্ষিণ পশ্চিম ইউক্রেনের ঝাপোরিঝিয়াতে আছে ইউরোপের সবচেয়ে বড়ো পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। পৃথিবীর দশটির একটি। তেরো বছরের মেয়ে একাতেরিনাকে (ক্যাথরিন) নিয়ে অলিয়েনা ঝাপোরিঝিয়া থেকে ট্রেনে দু রাত্তির কাটিয়ে পোল্যান্ড পৌঁছেছিলেন। একটি ক্যাথলিক গিরজেতে তিন রাত্তির বাসের অনুমতি পাওয়া গেছিল। কিন্তু ব্রিটিশ ভিসার খোঁজ নেই। এবার কোথায় যাবেন? কিছু বন্ধু বান্ধবের সূত্রে খবর পান সুইডেনের গোয়েটেবর্গে সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা আছে। ... ...
পোল্যাণ্ডের প্রথিতযশা চলচ্চিত্র পরিচালকদের অন্যতম আন্দ্রে ভাইদার দীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবনের শেষ দুটি ছবি ছিল বায়োপিক। প্রথমটি পোল্যাণ্ডের বিখ্যাত সলিডারিটি আন্দোলনের নেতা লেখ ওয়ালেসাকে নিয়ে। দ্বিতীয়টি পোল্যাণ্ডের আভাঁ গার্দ চিত্রশিল্পের এক পুরোধা ব্যক্তিত্বকে নিয়ে। এই দুটি ছবি শুধু সময়ের দলিল নয়-- জীর্ণ , প্রাণহীন এবং মানবিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক তথাকথিত সমাজতন্ত্রের ধারণার বিরুদ্ধে মানুষের যুদ্ধ ঘোষণার পক্ষেও বটে। একুশ শতকের সমাজতন্ত্রের নির্মাণ যদি ঘটাতে হয় তাহলে এই ভুলগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া, তাদের ধিক্কার জানানো ঠিক ততটাই জরুরী ,যতটা জরুরী এই মুহূর্তে বিকল্প সমাজব্যবস্থা নির্মাণের পথে যাত্রা। আন্দ্রে ভাইদার এই ছবি দুটি আমাদের সেই সুযোগ করে দেয়। ... ...
কেবল সিরিয়া ইরাক আফঘানিস্তান নয়, আপন দেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে উৎপীড়িত অন্য অনেক দেশের মানুষজন ব্রিটেনে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন। এঁদের মধ্যে কিছু এসেছেন এল সালভাদোর থেকে। বিগত তিরিশ বছর যাবত সেদেশে চলেছে গ্যাং ওয়ারফেয়ার, বিভিন্ন দলের মধ্যে সশস্ত্র লড়াই। শাসন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। সে দেশের সঙ্গিন আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সালভাদোরিয়ান শরণার্থীদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেবার কথা ব্রিটিশ সরকার বিবেচনা করছেন। ইতিমধ্যে তাঁদের বসবাসের ব্যবস্থা হচ্ছে দেশের নানা জায়গায়। তাঁদের কেস খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। ... ...
প্রথম দলকে আপনি রোজ চোখে দেখেন, মুখ চেনেন, কিন্তু প্রায় কারোরই নাম জানেন না। দ্বিতীয় দলকে আপনি প্রায় কখনোই দেখতে পান না, জীবনে কখনো পাবেনও না – কিন্তু তাদের নাম আমি, আপনি সবাই জানি। কারণ, এই এক শতাংশ দেশবাসীর হাতে আছে দেশের মোট সম্পদের ৭০ শতাংশ। আর তার পরের ধাপের কুড়ি শতাংশ ভাগ্যবানের হাতে আছে প্রায় উনিশ শতাংশ সম্পদ। তাহলে হাতে রইল কি? পেনসিল? না দাদা – এগারো শতাংশ। ভাগীদার কজন? দেশের প্রায় আশি শতাংশ মানুষ ... ...
তেমনই আমরা জানতে পারব না এলেন কেন উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হলেন। কেন আর দশটা ইউরেশিয়ান মেয়ের মত একটু পড়তে শেখা, একটু সেলাই-ফোঁড়াই , একটু নাচতে শেখা এই যা সব নিয়ে সাধারণ ইউরেশিয়ান মেয়েরা সন্তুষ্ট থাকত,এলেন কেন তার সীমানা ছাড়িয়ে বাইরে তাকাতে চাইলেন? তখনকার সাধারণ চাকুরিজীবি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বাড়িতে কি খুব পড়াশোনার চর্চা ছিল, বিশেষত মেয়েদের মধ্যে? ১৮৮২ সালের তথ্য থেকে পাই তার থেকে দেখা যায় যে ইউরোপিয়ান আর ইউরেশিয়ানদের মধ্যে, অন্তত কলকাতায়, প্রাইমারি বিভাগে মেয়েদের ভর্তির হার ছেলেদের প্রায় দ্বিগুণ। খুবই আশ্চর্য তথ্য। তবে মিডল স্কুলে গিয়েই এই অনুপাত উলটে যাচ্ছে। বিভিন্ন আংলো-ইন্ডিয়ান স্মৃতিকথার টুকরো-টাকরা যা হাতে এসেছে, তার থেকে এও ধারণা করা যায় যে ইউরেশিয়ান মেয়েদের অক্ষরজ্ঞান দরকার এই অবধি ঠিক আছে, তবে তার থেকে খুব বেশি শিক্ষার দরকার বলে কেউ ভাবেন নি সেই সময়। ওই প্রাইমারি স্কুলই ঢের। অবশ্য এই জনগোষ্ঠীর ছেলেরাও যে খুব বেশি দূর পড়াশোনা করতেন এমন তো নয়। আলাদা করে শ্রেণিবিভাগ করা থাকত না বলে একদম সঠিক করে বলা শক্ত, তবে এলেন যে বছর এন্ট্রান্স বা এফ এ পাস করেছেন সেই সেই বছরের তার সহপাঠীদের তালিকায় কিন্তু সাহেবি নামের ছাত্রের সংখ্যা নেহাতই হাতে গোণা। ... ...
দুটো জিনিস নিয়ে আজকাল খুব কনফিউশন। এক, গুডি পাড়বার দিন অনেকে বাংলা হরফে হিন্দু নববর্ষ উইশ করছেন। দুই, বাংলাদেশের ১৪ই এপ্রিলটা সঠিক পয়লা বৈশাখ না পশ্চিমবঙ্গের ১৫ই এপ্রিল, সেই নিয়ে বিবাদ। সেখানেও হিন্দু মুসলমান চলে আসছে। ... ...
কোনো দেশ দখলের মহান ব্রতে যখন সৈন্য বাহিনী পথে নামে তাদের পিছু পিছু চলে সরবরাহ বাহিনী – রাঁধুনি খানসামা থেকে আরম্ভ করে মুচি মেথর। সৈন্যরা যেমন যেমন দুর্বার বেগে এগিয়ে যায় তার সঙ্গে তাল রেখে ডাল ভাত এমনকি দাঁত খোঁটার খড়কে কাঠিটি পর্যন্ত যোগান দেবার কনভেয়র বেল্টটি চালু থাকে। অভুক্ত সৈন্য বাহিনী যুদ্ধ জেতে না। আপন আপন রাশিয়া অভিযানের কালে নাপোলেওঁ এবং হিটলার এই সার সত্যটি অনুভব করেছিলেন। ১৯৪২ সালের ডিসেম্বরে শূন্যের পনেরো ডিগ্রি নিচে নেমে যাওয়া ঠাণ্ডায় যে জার্মান বাহিনী স্টালিনগ্রাদে লড়াই করছিল, তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনের দশ শতাংশ পৌঁছে দিতে অক্ষম হয় গোয়েরিঙের লুফতভাফে । ফলাফল আমাদের জানা। ... ...
বাংলায় যদি একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে, তাহলে সমাজমাধ্যমে কী হয়? এখন যা হচ্ছে। সরকারপক্ষ, হয় চেপে যায়। নইলে বলে, দোষ আমাদের কেন হবে? মদ খেয়ে যদি কেউ খুন-ধর্ষণ কিছু একটা করে, তাহলে দোষ তো তাড়ির, তাড়ির না হলে নির্ঘাত খেজুর গাছের। পুলিশ তো আর গাছকে গ্রেপ্তার করতে পারেনা, ভারতীয় দন্ডবিধিতে তেমন ধারা নেই, তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল। যদি প্রশ্ন করেন, কিন্তু খুনটা তো আর গাছ এসে করে দেয়নি, খুনিকে ধরলেন না কেন? তখন তাঁরা অম্লানবদনে বলবেন, আরে খুন হয়েছে জানবে, তবে তো। আইন আইনের পথে চলবে। আগে অভিযোগ, তারপর তদন্ত। খুন হবার আগে, সেই বেটি থানায় এসে অভিযোগ করেনি কেন? কোথাও কেউ প্রপার প্রসিডিওর ফলো করবেনা, আর সব দোষ হবে প্রশাসনের? মামার বাড়ি? সংখ্যাগুরু বিরোধীরা, সেই শুনে বলবেন, দেকেচ, আগেই বলেছিলাম, হিন্দু খতরেমে। খেজুর গাছের দোষ সরকার তো দেখতে পাবেইনা, ও গাছ তো আরব থেকে এসেছে। এরা সমুদ্রের নাম দিয়েছে, আরব সাগর, এদের পুলিশ আরবী ঘোড়া চড়ে, এদের একমাত্র দাওয়াই হল কেন্দ্র। কেন্দ্র থেকে তিনশছাপ্পান্ন লাও, দিল্লি থেকে সিবিআই। মারবে এখানে, বডি পড়বে তিহারে। জ্যায় শ্রীরাম। যদি মিনমিন করে প্রশ্ন করেন, কিন্তু এদিকে তো বঙ্গোপসাগর, তাছাড়া ওদিকেও তো হাথরাস-টাথরাস কীসব হয়েছে, তখন সিবিআই ঠিক কী করছিল? রেডিমেড জবাব, বড়-বড় কথা বলবেন না, আপনি কি সেকু-মাকু না লিবারবাল? কাশ্মীরে যখন পন্ডিতদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখন আপনি কোথায় ছিলেন? যখন আফগানিস্তানে বুদ্ধমূর্তি ভাঙা হচ্ছিল, আপনি কী করছিলেন? যখন নাইন-ইলেভেন হল, তখন... ইত্যাদি প্রভৃতি। ... ...
আমার বাবাকে শেরপুরের মানুষ ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বলে মনে করতেন। সাধারণ মানুষ আব্বাকে চিনত এমন না, কিন্তু যারা এই ধারায় আছে তারা সবাই এক নামেই চিনত। শহরের বড় বড় মসজিদের ইমাম, ইসলাম বুঝে জানে এমন লোকজন আব্বাকে মান্য করত। আব্বার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করতে দেখেছি অনেকেই। কোন মসজিদ বা মাদ্রাসায় আব্বার নাম বললে উনার নাম শুনা মাত্র নড়েচড়ে বসত সকলেই। আব্বা আমাদের এলাকার মসজিদে নামাজ পড়তেন না, কারণ এখানে যে নামাজ পড়ায় তিনি অল্প বয়সই, আব্বা তৃপ্তি পেতেন না তার পিছনে নামাজ পড়ে। হেঁটে দূরের এক মসজিদে যেতেন শুধু মাত্র সেই ইমাম সাহেবকে আব্বার মনে হত উনার মাপের, যার সাথে কথা বলা যায়, আলাপ করা যায়। সেই ইমাম সাহেব আমাকে অনেকবার আমার কাছে আব্বার প্রাণ খোলা প্রশংসা করেছেন। এক বাক্যে স্বীকৃতি দিছেন যে আব্বার মত ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানী মানুষ তিনি খুব কমই দেখেছেন। তিনি পরে শেরপুরের সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা ও মসজিদের ইমাম হয়ে ছিলেন, এবং তখনও উনার আব্বার প্রতি মুগ্ধতা কাটেনি। আব্বা যখন অসুস্থ, বিছানায় পড়ে গেছেন। তখনও আমি দেখতাম কোথা থেকে কোথা থেকে মানুষ আসত, উদ্দেশ্য আব্বার সাথে দেখা করা আর একটু আলোচনা, ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে গল্প। আমি আব্বার এই দিকের কথা কেন বলছি? কারণ আমি আব্বাকে কোনদিন নববর্ষের বিরোধিতা করতে দেখি নাই। আব্বা নিশ্চয়ই মঙ্গল শোভা যাত্রায় অংশ নেয় নাই। কিন্তু মেজোপা যখন নববর্ষ উপলক্ষে একটা পাঞ্জাবি বা ফতুয়া এনে দিত তখন তিনি আগ্রহ নিয়েই পরতেন, খুশিতে চোখ নেচে উঠত উনার। বাব্বাহ! আমার জন্য আনছ, বলে হাতে নিতেন, হাসতেন। আমি যখন ঢাকায় ছিলাম তখন ফোন দিয়ে বলতাম, আব্বা, শুভ নববর্ষ, তিনিও সাথে সাথেই শুভেচ্ছা জানাতেন নববর্ষের। নববর্ষ উপলক্ষে ভাল মন্দ রান্না হয়েছে কি না তার খোঁজ নিতেন, আগ্রহ নিয়ে খেতেনও। আমি আমার সমস্ত জ্ঞান বাজি রেখে আপনাদের বলতে পারি যে কাঠ মোল্লা জাহান্নাম যাওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন গলা ফাটাইয়া, আমার বাবা তার চেয়ে বেশি জানতেন, ধর্ম, ইসলাম, সমাজ, দেশ, রাষ্ট্র সম্পর্কে। ... ...
যে দেশে কিছু না করেই অল টাইম দৌড়ের উপরে থাকতে হয় হিন্দুদের, যে দেশে তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবে পরিকল্পিত ভাবে ম্যাসাকার করা হয় এবং যার কোন বিচার হয় না ,যে দেশে নিয়ম করে প্রতিমা ভাঙা হয়, যে দেশে গুজবের উপরে ভর করে পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয় কোন বিচার হয় না, সেই দেশে কেউ হিজাব পরার অপরাধে মারছে! কোন মাপের মগজহীন মানুষ হলে এইটা বিশ্বাস করা সম্ভব? ... ...
মার্চের মাঝে কলকাতা থেকে ফিরে দেখি আমাদের বাস ভবন ত্রাণ সামগ্রীর বৃহৎ গুদামে পরিনত হয়েছে। বাড়িতে তিল ধারণের জায়গা হয়তো আছে কিন্তু আমার নিজের স্থান অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ। চতুর্দিকে ছড়ানো কালো প্লাস্টিকের ব্যাগ, পেল্লায় সুটকেস। এখানে ওখানে শুকনো খাবারের প্যাকেট এমনকি দশ কিলো বাসমতী চালের বৃহৎ ব্যাগ! প্রতিদিন আসেন আরও মানুষ, দিয়ে যান ত্রাণ সামগ্রী। এখুনি নিকটবর্তী গ্রাম অ্যাশ ভেল থেকে দুজন এলেন – বব এবং পলিন, এখানে ত্রাণ সংগ্রহ হচ্ছে খবর পেয়েছেন কোথাও থেকে। ববের বয়েস আশি, ছিলেন ব্রিটিশ আর্মিতে (মালয়, সাইপ্রাস, জার্মানি) পলিন আটাত্তর, আর্মিতে নার্স। তাঁদের বিয়ে হয় হানোভারে, পুরনো আউডি চালিয়ে হনিমুনে গেছেন জালতসবুরগ। ... ...
সঠিক সংজ্ঞা গুলি মেনে নিলে আধুনিক সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম গণহত্যার কৃতিত্ব জার্মানদের প্রাপ্য। স্থান জার্মান দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা, আজকের নামিবিয়া, কাল ১৯০৪। হেরেরো নামের স্থানীয় উপজাতির বিরোধিতায় ক্ষিপ্ত জার্মান সেনাপতি লোথার ফন ত্রথা নামের এক সেনাপতি লিখিত আদেশ দেন – "হেরেরো জাতিকে সমূলে বিনাশ করতে হবে, শুধু বন্দুকের গুলিতে নয়, তাদের ঠেলে পাঠাতে হবে এমন অঞ্চলে যেখানে জল নেই। "আশি হাজার হেরেরো নিধনের সা পরে জার্মান কাইজারকে লিখলেন, "যেসব পুরুষ নারী ও শিশুকে পেয়েছি তাঁদের নির্মমভাবে (গ্নাদেনলোস) হত্যা করেছি। এদের কারো কাছে অস্ত্র ছিল না।" ফিল্ড মার্শাল আলফ্রেড ফন শ্লিফেন সমর্থনে বলেন, "একটা জাতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই – তাদের বিনাশ আমাদের লক্ষ"। হিটলারের বয়েস তখন পনেরো, গোয়েরিঙের এগারো, দুনিয়ার আলো দেখতে আইখমানের দু বছর বাকি। ... ...
অমরদার পুরস্কার তো আমাদেরই পুরস্কার। যখন রিয়েলিটি শোতে ঢেকে যাচ্ছে দুনিয়া, লেখা-টেখা যা হচ্ছে, তাও বেশিরভাগই ভূত-প্রেত-তন্ত্র-মন্ত্র, যখন বিকট উচ্চকিত আলোর দুনিয়ায় শিল্পীরা ক্রমশ ব্রাত্য হয়ে যাচ্ছেন, তখন যেকোনো সৃষ্টিশীল মানুষ স্বীকৃতি পেলেই মনে হয়, নিজেদের স্বীকৃতি। তার উপর এ তো অমরদা। এই তো সেদিনই গুটিগুটি স্টলে এসে চেয়ারে বসলেন, দুচারটি বাক্যবিনিময় হল। ফিল্মফেয়ার পাওয়া শিল্পী এলে ভিড় জমে যেত, অকাদেমী পাওয়া লেখক হলে, তেমন হয়না, কী আর করা যাবে। বুকার-টুকার পেলে হয়। অরুন্ধতী রায় কি ঝুম্পা লাহিড়ি এলে ভিড়ের সঙ্গে দুচাট্টি ক্যামেরাও কি আসতনা? এবার অমরদা এলেও হবে নির্ঘাত। তাতে যে অমরদার দুটি নতুন হাত গজাবে তা নয়। উনি যা লিখেছেন, তা তো আর একটা পুরস্কারে বদলে যাবেনা। এবং এ মোটেই আনন্দের ব্যাপারও না, যে বিদেশী পুরস্কার পেলে তবেই আমরা টের পাব ঘ্যাম কিছু একটা হচ্ছিল বটে। কিন্তু ও আমাদের ঐতিহ্য। রবীন্দ্রনাথও, শুনেছি, বিশ্বভারতীর খাটা-পায়খানার জন্য পয়সা তুলতে কলকাতায় মুখের ফেনা তুলে ফেলেছিলেন, তারপর যেই নোবেল পেলেন, ট্রেন রিজার্ভ করে আস্ত কলকাতাই বোলপুরে হাজির। নোবেল বাবা, ইয়ার্কি না। ... ...
গতকাল হাঙ্গেরিতে ভিকতর অরবান এবং সার্বিয়াতে আলেকজান্দার ভুচিচ যথাক্রমে প্রধান মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হলেন। এই সেই অরবান যিনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সকল আইনকে কলা দেখিয়ে আপন রাজনীতি করেন। আলেকজান্দার ভুচিচ রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোন স্যাঙ্কশনের বিরোধী , যদিও তিনি ইতিমধ্যে ই উ তে ভর্তি হবার দরখাস্ত করেছেন। তাঁর মতে এ দুটি স্বতন্ত্র ব্যাপার। এঁরা শ্রী পুতিনের প্রিয়জন - তিনি দুজনকেই আজ সকালে আশীর্বাদ জানিয়েছেন। তারতুর ক্রিসটা, কাউনাসের এভেলিনার কাছে শুনি আগামী মে মাসের ন তারিখে একটি সংঘর্ষের বিপুল সম্ভাবনা। সোভিয়েত আমল থেকে প্রতিবছর সেই দিনটি পালিত হয় মহান দেশপ্রেমিক জনযুদ্ধের বিজয় দিবস রূপে। ইউক্রেনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বালটিক দেশগুলির সরকার এই দিবসটিকে পূর্ণ সমারোহে উদযাপন করার অনুমতি নাও দিতে পারেন। তখন কি হবে? রাশিয়ানরা প্রবল বিক্রমে পথে নামবেন ইউক্রেনে যুদ্ধের সমর্থনে। এই জল তরঙ্গকে রুধিবে কে? ... ...
চোখ বন্ধ করে ভাবি এই রাতের অন্ধকারে ট্রেন ভর্তি বাবা মায়েরা শিশুদের নিয়ে মুক্তির সন্ধানে দীর্ঘ যাত্রায় চলেছেন। লভিভ পৌঁছুলে বাবা ফিরে যাবেন পূব দিকের কোন শহরে গ্রামে যেখানে তাঁদের সুখের সংসার চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে আছে। ছোট মেয়ে হয়তো বলবে, বাবা কখন আসবে গো? ছটা একুশে? ... ...
পাহাড়ে শীতের আয়ু দীর্ঘ। আরও একমাস এই পাহাড় পর্বত জনপদ বরফে ঢাকা থাকবে। মঠের সন্ন্যাসী ফাদার সোকা ফাদার সোফিয়ান তাঁবু খাটিয়েছেন, ত্রাণ সামগ্রী যোগাড় করছেন। গিরজের উপাসনায় যোগ দিয়েছেন ইউক্রেনের নারী ও শিশু তাঁরাও অর্থোডক্স। তাঁদের মধ্যে একজন, ইরিনা বাবিচ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন। তবু বললেন আজ আমি গিরজেয় পুতিনের স্বাস্থ্য ও সুবিবেচনার আশায় প্রদীপ জ্বালিয়েছি। ... ...
আটের দশকে ইউরোপের পক্ষে একজোট হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণ বৈষম্য বাদী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবসা বাণিজ্যে প্রতিবন্ধ সৃষ্টি করা শক্ত হয়েছিল। মিসেস থ্যাচার বললেন ‘ তাতে করে মূল সমস্যার কোনো সমাধান হয় না। আমাদের উচিত দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের সঙ্গে কথা বলা, আলোচনা করা, তাদের বুঝিয়ে মত পরিবর্তন করা, স্যাঙ্কশন নয়’। স্বভাবতই তিনি শেল বা ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের ব্যবসার ক্ষতি করতে অনিচ্ছুক ছিলেন।সোয়েতো বা আলেকজান্দ্রার কালো মানুষদের কথা ভেবে কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে চায়। ... ...
আরেক শঙ্কিত দেশ ফিনল্যান্ড। তাঁদের অবশ্য বাঙ্কার আছে। খবর পাই সেখানে, বিশেষ করে পূর্ব অঞ্চলে, মানুষজন অস্ত্র সংগ্রহ করছেন। ১৯৩৯ সালের শীতকালীন যুদ্ধে ( উইন্টার ওয়ার) ফিনরা সোভিয়েত ইউনিয়নের আক্রমণ কেবল ঠেকান নি, কষে কয়েক ঘা দিয়েছিলেন। এবার স্থিতি বেশ জটিল। রাশিয়ান মতিগতির সম্বন্ধে সন্দিহান ফিনল্যান্ড ন্যাটোর দ্বারস্থ হবে – এটি সেই লাল শালু যা দেখলে শ্রী পুতিন উচ্চকিত হয়ে ফিনল্যান্ডে হানা দিতে পারেন। শোনা যাচ্ছে সুইডেনও নিজেকে বিপন্ন বোধ করছে। শিগগির ন্যাটোর দুয়োরে করা নাড়তে পারে। ... ...
যে সমস্ত প্রবলেম সলভিং মডেল নিয়ে কাজ করেছি তার মধ্যে সিক্স-সিগমা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত DMAIC খুব কাজের মনে হয়েছে প্ল্যান্ট বা ফিল্ডে প্রয়োগ করতে। D = Define, M = Measure, A = Analuze, I = Improve, C = Control ব্যাপারটা অনেকটা “চক্রাকার পরিবর্তন্তে সুখানি চ সুখানি চ” কেস। দেখা গেছে আমরা অনেক সময় ছাড়াই ‘কনট্রোল’ স্টেপটায়। এই স্টেপটা সিরিয়াসলি না নিয়ে, এক বার কিছুর একটা সমাধান বা আপাত উন্নতি করেই আমরা হাল ছেড়ে দিই। ফলে এই সমগ্র চক্রটায় একটা বিচ্ছেদ চলে আসে। ... ...