হারানো স্মৃতি ... ...
বসে বসে ফাইন্যাল পরীক্ষার খাতা দেখছি আর মাঝে মাঝে ফেসবুক খুললেই দাদুকবি সপাটে আছড়ে পড়ছেন, এই দুর্বিষহ অবস্থায় একটা ছোটোবেলার গল্প মনে পড়ে গেলো ... ... ...
মুসলিমদের আজান এসেছে বেদুইনদের সঙ্গীতের ভিতর দিয়ে। সেই ১৯৫০-৬০ এর দশকে জর্ডনের মরু অঞ্চলে বেদুইনদের রহস্যময় জগতের সঙ্গে পরিচিত হবার সূত্রে এবং বেদুইনদের গান-বাজনা শোনা ও রেকর্ড করার পর সঙ্গীত- সংগ্রাহক দেবেন ভট্টাচার্যের এমনটিই মনে হয়েছিল। ঈদের আগে রমজান মাসের এক সকালে এমন এক উপলব্ধির কথা জানতে পেরে বেশ চমকিত হলাম। বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাট্য পরিচালক ও অভিনেতা আলি জাকেরের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গের অবতারণা। জাকেরও বলেছিলেন, আজানের সুরের ভিত্তি আহির ভৈরবী। সেই সময় দেবেন ভট্টাচার্যের রেকর্ড করা বেদুইন সঙ্গীতের একটি অংশ পেলাম ইন্টারনেট আর্কাইভে। সেটি শুনলে ভ্রম হয় যেন আজানের ধ্বনি। ১৯৫৫ সালের গ্রীষ্মে বিবিসির-র এক কমিশনড প্রোগ্রামে ইউরোপ থেকে প্রায় লঝ্ঝড়ে একটি মিল্কভ্যানে এক বাঙালি যুবক যুগোস্লাভিয়া, গ্রিস, ইতালি, তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, জর্ডন, ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান হয়ে ১২ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ছ' মাস বাদে ভারতে আসেন বিভিন্ন দেশের গান রেকর্ড করতে করতে। সঙ্গী ছিলেন আর্কিটেকচারের ইংরেজ ছাত্র কলিন গ্লেনি আর ফরাসি সাংবাদিক হেনরি অ্যানভিল। দেবেনের রেকর্ডিংয়ের বিচিত্র সম্ভারের কিছু নমুনা শুনলেই বোঝা যায়, জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি সারা বিশ্বের খ্যাত-অখ্যাত শহর, গ্রাম, পাহাড় বা মরুপ্রান্তরে কাটিয়েছেন। এভাবেই আন্তর্জাতিক স্তরে দেবেনের পরিচিতি গড়ে ওঠে এথনোমিউজিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে। বিশ্বের বৈচিত্র্যপূর্ণ সঙ্গীতের অপূর্ব ঐতিহ্যের হদিস প্রকৃতপক্ষে দেবেনই প্রথম দুনিয়ার মানুষকে দিয়েছিলেন। তার আগে নানা দেশের লোকসঙ্গীতের সমৃদ্ধ ভান্ডারের অস্তিত্ব সম্পর্কে আন্তর্জাতিক স্তরে কার্যত কোন ধারণাই ছিল না। যাঁকে নিয়ে আজও সমান ভাবে গর্ব করার কথা আমাদের দুই বাংলার মানুষেরই, ভাবতে অবাক লাগে এমন এক আশ্চর্য বাঙালিকে নিয়ে হাল আমলে কোন চর্চা নেই। ... ...
আমি ভারতীয় কমিউনিস্টদের অবিমৃষ্যকারিতার ঘোর বিরোধী। কিন্তু আমি আমার জীবনের অভিজ্ঞতায় মার্কিন মডেলের পুঁজিবাদের সম্পূর্ণ উল্টো মেরুর মানুষ। এই পুঁজিবাদ মানবসভ্যতাকে শেষ করে দেবে। শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষ কর্পোরেট বিশ্ব ও তাদের দালাল শাসকশ্রেণীর ক্রীতদাসে পরিণত হবে। ... ...
আমি ভারতীয় কমিউনিস্টদের অবিমৃষ্যকারিতার ঘোর বিরোধী। কিন্তু আমি আমার জীবনের অভিজ্ঞতায় মার্কিন মডেলের পুঁজিবাদের সম্পূর্ণ উল্টো মেরুর মানুষ। এই পুঁজিবাদ মানবসভ্যতাকে শেষ করে দেবে। শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষ কর্পোরেট বিশ্ব ও তাদের দালাল শাসকশ্রেণীর ক্রীতদাসে পরিণত হবে। ... ...
পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির খবরকেও ছাপিয়ে দেশজুড়ে এখন লোকজনের প্রাত্যহিক চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে লেবুর অস্বাভাবিক দাম। গতমাসেও যেখানে কুড়ি টাকায় অন্তত ছটি লেবু পাওয়া যেত, সেই লেবুই এখন অবিশ্বাস্য ভাবে বিকোচ্ছে আক্ষরিক অর্থে সোনার দামে। একে তো গত ১২১ বছরে এত গরম নাকি মার্চ মাসে পড়েনি, তাই তৃষ্ণায় ছাতি ফাটা ধনী-দরিদ্র সব মানুষের সামান্য চাহিদা একটু লেবু জল। চাহিদা যখন আকাশচুম্বী লেবুর যোগান তখনই অন্যান্যবারের তুলনায় সবচেয়ে কম। লেবু এখন রাতারাতি বিলাস সামগ্রী। লেবুর দাম কমানো এখন বুঝি কেবল ভগবানেরই হাতে! সেই বিশ্বাস সম্বল করে বারাণসীতে তন্ত্র সাধনার জাগ্রত দেবী আদিশক্তির মন্দিরে তাই এগারোটি লেবু বলি দেওয়া হয়েছে। আজ হঠাৎ লেবু বিলাসিতার পর্যায়ে চলে যাওয়ায় স্মরণ করা দরকার, একেবারে গোড়ার দিকে রোমে লেবু ছিল ধনীদের কাছে বিরাট মর্যাদার প্রতীক। ঐতিহাসিক পম্পেই শহরের নানান মন্দির, প্রাসাদ, বাড়ি ও স্থাপত্যের দেওয়ালে খচিত ফ্রেস্কো পেইন্টিংয়ে লেবু চিত্রিত আভিজাত্যের চিহ্ন হিসেবেই। প্রাচীন গ্রিসে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে লেবুর ব্যবহার ছিল। গুপ্তচরবৃত্তি, অবৈধ প্রণয় বা যুদ্ধের ক্ষেত্রেও লেবুর ভূমিকা চাঞ্চল্যকর। প্রবাদ প্রতিম প্রেমিক ক্যাসানোভা ও তাঁর শতাধিক প্রণয়ীর সম্ভোগে জন্মনিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার ছিল লেবু। কিংবদন্তিতুল্য জেনেরাল টমাস 'স্টোনওয়াল' জ্যাকসন রণক্ষেত্রে যাবার আগে লেবু চুষতেন। সেই থেকে তাঁর পরিচিতি বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান লেবু-প্রেমিক হিসেবে। ... ...
ক্ষমতায় পুরোপুরি গেঁড়ে বসার পর এই মানসিকতাটা আসে। আমার রাজ্যে ক'রে খাচ্ছিস যখন আমার কথা অনুযায়ী চলবি, নইলে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো! এগুলো সবই আমরা আগেও দেখেছি। কিন্তু এরপর একটা সময় আসে যখন একসপ্তাহ আগে একসঙ্গে মিছিলে হেঁটে যাওয়া লোকটা বুথে গিয়ে অন্য বোতাম টিপে দেয়। অপশন না থাকার পরও টিপে দেয়। কাউন্টিং-এর দিন বর্ষীয়ান নেতারা গণনাকেন্দ্রের বাইরে বসে শোনে সাম্রাজ্যপতনের শব্দ। ... ...
নগ্নতাকে গিন্সবার্গ বরণ করে নিয়েছিলেন জীবনবোধ হিসেবে। আক্ষরিক অর্থেও যেমন, কবিতায়-শিল্পেও ঠিক তেমন-ই। লিখেছিলেন, “Scribble down your nakedness. Be prepared to stand naked because most often it is this nakedness of the soul that the reader finds most interesting”। সত্যিই তো, নিজেকে সম্পূর্ণ উন্মোচন না করলে সত্যিই কি পড়া যায় প্রত্যেকটি বলিরেখা? পুরোপুরি সৎ হওয়া যায় শিল্পের কাছে? গিনসবার্গ সত্যিসত্যিই বিশ্বাস করতেন, “Candor ends paranoia”! ... ...
মঙ্গলবার সকালে গাড়িতে পেট্রোল ভরলাম ১১৪ টাকা ২২ পয়সা দরে। আজ সকালে দেখলাম কলকাতায় পেট্রোলের লিটার আরও বেড়ে ১১৫ টাকা ১২ পয়সা। খবরের কাগজ বলছে, "এখনও পর্যন্ত এটাই তার সর্বোচ্চ দর"। এই পর্যবেক্ষণ বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নেহাতই অসার। সংসদে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার গলা টিপে দেওয়া হচ্ছে। তবু এই পরিস্থিতেও জনজীবনে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সোচ্চার প্রতিবাদ টের পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যক্তিগত অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মরীয়া তাগিদে বিনা প্রশ্নে, বিনা প্রতিবাদে, পরিস্থিতির সঙ্গে আপস করে সব কিছু মেনে নেওয়াই বোধ হয় ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে বা যাঁরা এই পরিস্থিতির জাঁতাকলে পড়ে সহ্যের শেষ সীমায় চলে যাচ্ছেন, তাঁরা মর্মান্তিক ভাবে চরম পদক্ষেপ বেছে নিচ্ছেন। সস্তা-গন্ডার দিনকালের কথা পাওয়া যায় সুরসিক যম দত্তের রম্যরচনাতে -- "আশু মুখুজ্জে মহাশয় যখন ভীমনাগের দোকান হইতে রোজ রোজ করিয়া সন্দেশ খাইতে আরম্ভ করেন, তখন সন্দেশের সের চোদ্দ আনা দাঁড়ায় আর এখন?... " সন্দেশের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তিনি বাঙালির মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তির চূড়ান্ত চাঞ্চল্যকর তুলনা করেছেন। তাঁর ভাষাতেই ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করা যাক -- "যখন সন্দেশের সের দুই আনা তিন আনা তখন দেশে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত জন্মাইয়াছেন, যখন সন্দেশের দর চার আনা ছয় আনা তখন দেশে বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ জন্মাইলেন, যখন সন্দেশের সের এক টাকা, দেড় টাকা তখন দেশে সুনীতি চাটুজ্জে, সত্যেন বসু, মেঘনাদ সাহা জন্মাইয়াছেন; যখন সন্দেশের সের দুই টাকা, আড়াই টাকা তখন শ্যামাপ্রসাদ, সুভাষ বসু জন্মাইয়াছেন। আর এখন ছয়, সাত টাকা সের সন্দেশ কয়জনেই খাইবে?...বাঙালি মরিয়া গেল।" ... ...
কর্পোরেট মিডিয়াতে বিশ্লেষণ থাকেনা। আমার সামান্য জ্ঞানবুদ্ধিতে যা মনে হলো, তাই লিখলাম। কারণ, আজ শ্রীলঙ্কা, কাল ভারত ও বাংলা। ... ...
স্যাক্রামেন্টো আর শ্রীলঙ্কা ধরনের ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। এখানে বন্দুকবাজি ও প্রকাশ্য রাস্তায় হত্যা। ওখানে অর্থনৈতিক মহাসঙ্কট এবং অদৃশ্য গণহত্যা। ... ...
যত বেশি যুদ্ধ, তত বেশি এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স। যত বেশি জেল, তত বেশি সল্ট লেকে জমি। সে নোনা হ্রদ বা নিউ টাউন পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় হতে পারে। ... ...
এক কালুয়া আর এক কালুয়াকে অস্কার হলিউডে চড় কষিয়েছে। সেই নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড। ছি ছি কী লজ্জা! ... ...
ব্যতিক্রম বাদ দিলে মোটামুটি এই হলো আমেরিকা। "উই আর দ্য বেস্ট, এন্ড নো কোয়েশ্চেনস অ্যাস্ক্ড।" ... ...
রামপুরহাট বগটুই বীরভূমের হত্যার রাজনীতি নিয়ে দু একটা ব্যক্তিগত কথা। ... ...
আপাত কঠিন মানুষগুলোও একা একা পথ চলতে চলতে, স্বাবলম্বীতার আড়ালে কোনও কোনও ঘটনায় বড্ড ক্লান্তি অনুভব করে .. কোথাও যেন একটা স্নেহবহূল স্পর্শের চাহিদা সবসময়ই রয়ে যায় তাদের মনের গভীরে... ... ...
ঊনিশশো একাত্তরের মার্চ থেকে আজ এই দুহাজার বাইশ সালের মার্চ পর্যন্ত পৃথিবীতে কতগুলো যুদ্ধ হয়েছে? ... ...
তিনি মধুপ্রিয়। তাঁর পছন্দ নীল। তাই রুপোলি বুটিদার নীল রেশমের কাপড়ের পশ্চাৎপটে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত গৌরবর্ণ সুস্মিত দারুবিগ্রহের বুকের কাছে ধরা বাম হাতটিতে মধুর বাটি। হাতের ফাঁকে গোঁজা রয়েছে একটি হল। মাথার উপরে অনন্তনাগের প্রসারিত ফনার নিচে ডান হাতের মুঠিতে ধরা মুষল। তিনি বিষ্ণুর বাহন সর্পরাজ শেষাবতার। তিনি শ্রীকৃষ্ণের দাদা বলদেব। তিনিই তো হলধর কিংবা হলায়ুধ, বলরাম বা সঙ্কর্ষণ অথবা পুরীর মন্দিরে জগন্নাথদেবের পাশে বসা বলভদ্র। তিনি এক তবু অনন্য। বর্ধমানের রায়না থানার বোড়ো গ্রামে দশ হাত উঁচু, চোদ্দটি হাতের অনার্য-পূজিত প্রাচীন বলরাম মন্দির রয়েছে। যার উল্লেখ পাওয়া যায় ধর্মমঙ্গল কাব্যে -- "বোড়ো গ্রামের বলরামে নত কৈনু শির।" উত্তর কলকাতার রাজবল্লভ পাড়ার কাছে 'হারানো বলাই' মন্দিরও আছে। কিন্তু বেলেঘাটার শুঁড়া অঞ্চলে ইতিহাস-প্রসিদ্ধ রাজাবাহাদুরের গৃহদেবতা বলদেব ও শেষজায়া অর্থাৎ রেবতীরানির এই বিশেষ মূর্তি ভূ-ভারতে আর দ্বিতীয়টি নেই। বিভিন্ন মন্দিরে বা পারিবারিক দেবালয়ে রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ সুপরিচিত ও জনপ্রিয় হলেও বলদেব ও রেবতীরানির ঠাকুরবাড়ি একেবারেই ব্যতিক্রমী। শ্রীকৃষ্ণের দাদা, তাই পরিবারের ভক্তহৃদয়ে এই কুলবিগ্রহের মৌখিক পরিচিতি একান্ত আপনার 'দাদা-বৌদি' হিসেবেই। আর এই দারুবিগ্রহের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে বঙ্গীয় এশিয়াটিক সোসাইটির প্রথম ভারতীয় প্রধান, বাংলার রেনেসাঁসের পুরোধা ব্যক্তিত্ব রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্রের নাম। রবীন্দ্রনাথ 'জীবনস্মৃতি'তে লিখেছিলেন, "রাজেন্দ্রলাল মিত্র সব্যসাচী ছিলেন। তাঁহার সঙ্গে পরিচিত হইয়া আমি ধন্য হইয়াছিলাম। রাজেন্দ্রলালের স্মৃতি আমার মনে যেমন উজ্জ্বল হইয়া বিরাজ করিতেছে, এমন আর কাহারো নহে।" তাঁর দ্বিশতজন্মবার্ষিকী উদযাপন হচ্ছে চলতি বছরেই। ... ...