"মানুষের মেহনতের গন্ধ এরকমই হয়। আমি চাই বড় হলে তোর গা থেকেও যেন এই গন্ধটাই বেরোয়"--- বাবা বলেছিল হালকা গর্বের সুরে। আমার গায়ে এখন ঘামের গন্ধ নেই কোনও। আমি টাটাদের কিনে নেওয়া বিগবাস্কেট অথবা জেফ বেজোসের আমাজন কোম্পানির কাছ থেকে অফারে ডিওডোরেন্ট কিনি। ... ...
শনিবার সকালে কলকাতার একটি ইংরেজি কাগজের ভাঁজ খুলতেই পাতাজোড়া রঙিন ঝকঝকে বিজ্ঞাপন দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। উত্তরবঙ্গের অরণ্যময় ডুয়ার্সের লাটাগুড়িতে উচ্চবিত্ত শহুরে নাগরিকদের ভোগবাদকে উস্কে দিতে ২০ একর জমিতে বিলাসবহুল আবাসন তৈরি হচ্ছে। দুপুরে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কাগজের অনলাইন এডিশনে দেখলাম, ফরিদাবাদের বনভূমিতে বন কেটে বসত তৈরির উদ্যোগ নেওয়ায় ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (এন জি টি) সেই রিয়ালটারকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। অসাধু ব্যবসায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাঁচ একর জমিতে অন্তত ৫০০ গাছ কেটে ফেলেছে। প্রতিটি গাছ কাটার জরিমানা দু' লাখ টাকা। ফরিদাবাদের ঘটনায় এন জি টি-র নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে স্মরণ করা যেতে পারে, প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রে প্রকৃতি সংরক্ষণের গুরুত্ব প্রচার করা হয়েছিল। সনাতন হিন্দু ধর্মে বৃক্ষ ও প্রকৃতি বন্দনার প্রশস্তির প্রকৃত লক্ষ্য হল, মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা জাগিয়ে তোলা। আমাদের পূর্বপুরুষেরা গাছ রক্ষা করা তাঁদের আবশ্যিক কর্তব্য বলে বিবেচনা করতেন। আর সে কারণেই প্রতিটি গাছের প্রতি তাঁরা আরোপ করতেন ধর্মীয় পবিত্রতা। তাই সমাজে খুব সহজেই গাছ হয়ে উঠেছিল ধর্মীয় আরাধনার বস্তু। এর দৃষ্টান্ত রয়েছে লোকাচারেও। নগরায়ণের বেপরোয়া দাপটে বোঝা যায়, প্রকৃতিকে লালন করার যে সহজাত নীতিবোধ অতীতে ছিল তা থেকে বর্তমান সমাজ পুরোপুরি বিচ্যুত। ... ...
হাংরি আন্দোলনকারীদের ছবি আঁকা ... ...
কবিতা ... ...
আজ পিডিএফ, জিফ ফাইল - ফোল্ডারে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে গিয়ে জগজিৎ-জি কে পেলাম। কি করে উনি সবার ভেতরকার খবর ঠিক ধরে ফেলতেন, দ্যাখো... “বাত্ নিকলেগি তো ফির দূর তলক যায়েগি / লোগ বেবযহ উদাসী কা সবাব পুছেঙ্গে ইয়ে ভি পুছেঙ্গে কে তুম ইৎনা পরেশান কিউ হো...” কিউ হো? ?? এর উত্তর শুধু উনিই জানতেন...তাই শেষে বলেও দিলেন... “চাহে কুছ ভি হো সওয়ালাত ন করনা উনসে / মেরে বারে মেঁ কোই বাৎ ন করনা উনসে… ” ... ...
সাধারণত অর্থনীতির নোবেল শুনলেই মনে হয় খুব জটিল কোন তত্ত্বকথা অথবা লম্বা লম্বা অংক। অংক ছাড়া অর্থনীতি হয় না এ কথা ঠিক। তবুও কিছু কিছু অর্থনীতির তত্ত্ব যা কিনা ভবিষ্যতে নোবেল পাবে, তার সাথে আমাদের দৈনন্দিন অর্থনৈতিক জীবনের টুকটাক যোগাযোগ আছে। অংক না কষেও সেগুলোর একটা ধারণা করা যায় বৈকি। এরকমই একটা বিষয় ব্যাংক ফেল করে সঞ্চিত টাকা খোয়া যাওয়ার সম্ভাবনা এবং তার থেকে পরিত্রানের উপায়। এই বিষয়ে কাজ করার জন্য ইকোনমিক সায়েন্সে ২০২২ সালে নোবেল মেমোরিয়াল পুরস্কার দেওয়া হল দুইজন বিশিষ্ট অধ্যাপক এবং প্রাক্তন ফেডারেল রিজার্ভ প্রেসিডেন্টকে। ... ...
হাসিমুখে তাকে বলে ফেলার সময়ই আমরা বুঝতে পারি যেন একটা জলাজমি চাপা পড়ে যাচ্ছে বুকের ভেতরে। তার উপরে হু হু করে বহুতল উঠে যাবে শীঘ্রই। এতগুলো বছরের বর্ষার কচুপাতায় জমে থাকা জল, নেউলের দৌড়, ইঁদুরের ডাক; --- এসবের আর কোনও সাক্ষী থাকবে না। জীবিতের শোক যে মৃত বহন করে না সে তো আমরা বহুকাল আগেই জেনেছি! জীবিতের ভেতরে মরে যাওয়া এই ছোট্ট অংশটিকেও জীবিত একাই বহন করে চলে আজীবন ... ...
পুজোর উৎসবের আতিশয্যে ভুলে না যাই, আজ গান্ধী জয়ন্তী। আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারাবার পরে গান্ধীজির প্রথম জন্মদিনটি পালিত হয়েছিল স্মরণে। আজ এত দশক বাদে জনচেতনার পরিসরে গান্ধী কি ধীরে ধীরে প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছেন? সরকারি-বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে গান্ধী-চর্চা কি তেমনভাবে কোথাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে? খবরের কাগজে চোখে পড়ল, কেন্দ্রীয় সরকারি তরফে গান্ধী এবং সঙ্গত কারণেই লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন মারফত শ্রদ্ধা নিবেদন। রয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। আকাশবাণীর প্রভাতী অনুষ্ঠান 'প্রত্যহিকী'তে দিনটির বিশেষ তাৎপর্যের উল্লেখ, 'মৈত্রী' প্রচারতরঙ্গে 'সুচিন্তন' অনুষ্ঠানে গান্ধিবাণী এবং 'সঞ্চয়িতা' প্রচারতরঙ্গে রিলে করা হয়েছে দিল্লির হিন্দি অনুষ্ঠান। ওই পর্যন্ত। ইঙ্গিত স্পষ্ট, অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় গান্ধী আজ কার্যত ফিকে। ... ...
১৯৪৭ সালের ১৩ অক্টোবর সোমবার ছিল মহালয়া আর ২১ তারিখ মঙ্গলবার ছিল মহাসপ্তমী। দেশ যখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, সমাজে যখন পারস্পরিক অবিশ্বাস আর বিভেদের রেশ, সেই মুহূর্তে উৎসবের সুর কেমন ছিল এই কৌতূহল তো স্বাভাবিক। আজ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও যখন নানা প্রান্তে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প থেকে থেকেই মাথাচাড়া দেয় তখন আমরা দেখি, পারস্পরিক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজি নজরুল ইসলামের কলমে ফুটে উঠেছে দুর্গা-বন্দনা। নজরুল-রচিত অনেক শ্যামাসঙ্গীত সুপরিচিত। কিন্তু আগমনীর আগমনে ১৯৪২ সালে নজরুলের লেখা গান ততটা পরিচিত নয়। অল ইন্ডিয়া রেডিওর কলকাতা কেন্দ্র থেকে সেই বছর সপ্তমীর দিন সকাল সওয়া সাতটায় 'আগমনী' অনুষ্ঠানে সে যুগে ভক্তিগীতির জনপ্রিয় শিল্পী মৃনালকান্তি ঘোষের কণ্ঠে সম্প্রচারিত হয়েছিল এই নজরুলগীতি। স্বাধীনতা লাভের বছরে পুজোর সূচনায় যে গানটি বাজানোর জন্যে রেডিও চয়ন করেছিল আজ সকলের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতির ভাব গড়ে তুলতে মন্ডপে মন্ডপে আবার বেজে উঠুক নজরুলের সেই বিখ্যাত গান। ... ...
২০১৪ সালে তখনও মূলত ফিল্মমেকারদের যুগ চলছে। সেখানে আজকের এই পোস্ট-ফিল্ম জমানায় বরঞ্চ কন্টেন্ট প্রোডিউসারের সংখ্যাই বেশি। আর সবচেয়ে মজার কথা এই যে গত পাঁচ বছরে প্রোডিউসড সবচেয়ে পপুলার কন্টেন্টটা কিন্তু আবার ইন্ডাস্ট্রি-র বানানো নয়, কনফিউজড পিকচার নামে একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রোডাকশন হাউজ তথা নেহাতই আমাদের অরিজিৎ সরকারের বানানো। ... ...
কত গল্প করতো বুড়ো -- ঘুড়ি তো ছিল ছুতো ! মেটেবুরুজ-কলুটোলা - রাজাবাজার - গ্যাস স্ট্রীটের দোকানগুলোর মাঞ্জা ছিল লা-জবাব কিন্তু কোন কথা জিজ্ঞেস করলে জবাব পাওয়া যেত না ! জনাবের মুখভর্তি যে পান -জর্দা- সূর্তি ! ... ...
কোথায় ভয়? কোথায় উদ্বেগ? কিসের চিন্তা? দুটোয় মিলে সে কী সাঙ্ঘাতিক লুটোপুটি খেলা মাঝ আকাশে – এই ধাওয়া করছে একে অন্যকে, এই পাল্টা আক্রমণ, এই দু'দিকে ছুটে গিয়ে আবার একে অন্যের গায়ে এসে ধাক্কা খাওয়া। ... ...
#JusticeForAsifa ... ...
সেই পুরোনো লোক, আম্বেদকর। সেই পুরোনো দল, আরএসএস। নতুন সাল, ২০১৬। নতুন মতামত — ‘মেলাবেন, তিনি মেলাবেন’। ২০১৬-র এপ্রিলে সে-ই অর্গানাইজার-এরই সংখ্যায় প্রচ্ছদ হল — “Ultimate Unifier”। সঙ্গে ছবি — না, মৈত্রেয় বুদ্ধের নয় — আম্বেদকরের। স্তুতির বন্যা বয়ে গেল। ‘গোটা দেশকে জুড়ে রাখার ফেভিকল তিনি সাপ্লাই করেছেন’ থেকে শুরু করে, ‘ব্রাহ্ম-প্রার্থনা-আর্য – সমস্ত সমাজের ভাল ব্যাপারগুলোই তাঁর চিন্তাধারায় বর্তমান’ হয়ে, ‘মোটেই তিনি ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে ছিলেন না, ব্রাহ্মণ্যবাদের শ্রেণীবিভাগের বিরোধী ছিলেন’ পর্যন্ত। ... ...
১৯৩৪ সালে উপন্যাসের শুরুতেই নায়কের ভূমিকায় 'বঙ্গ ব্যায়ামাগারে'র প্রতিষ্ঠাতা আলোকনাথ সেনের চরিত্র অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। "পায়ের ধূলো" নামে উপন্যাসটি লিখেছিলেন "আবার যকের ধন"-খ্যাত হেমেন্দ্র কুমার রায়। বার্মিংহামে সদ্য কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়ন অচিন্ত্য শিউলি, তাঁর দাদা অলোক বা আট বছর আগে গ্লাসগো কমনওয়েলথে আর এক সোনাজয়ী সুখেন দে-র রোমাঞ্চকর কাহিনীর সূত্রেই আজ থেকে ৮৮ বছর আগে লেখা হেমেন রায়ের এই রচনার কথা মনে পড়ে যায়। উপন্যাসের নায়ক আলোকনাথের মতো চরিত্র কিন্তু মোটেও কাল্পনিক নয়। বাংলা ও বাঙালির অবক্ষয় এখন সর্বস্তরে। তবু তারই মধ্যে কেউ কেউ নেহাত ব্যতিক্রম হিসেবে নিজের উদ্যমে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অচিন্ত্য বা সুখেনের মতো দেশের পতাকা সবার উঁচুতে তুলে ধরে প্রচারের আলোয় উঠে আসেন। আমাদের তখন স্মরণ করা দরকার, একদা বাংলার ঘরে ঘরে দেশ বিদেশ কাঁপিয়ে দেওয়া এমন পালোয়ানের কোনও অভাব ছিল না। সাহসে, বীর্য্যে, সহ্য ক্ষমতায় ও আত্মরক্ষার শক্তিতে বাঙালি যুবকদের বাহুবলে বলীয়ান করে তুলতে পাড়ায় পাড়ায় তখন 'বঙ্গ ব্যায়ামাগারে'র মতো জিমন্যাস্টিক ও কুস্তির আখড়া গড়ে উঠেছিল। বাংলা তার শরীরচর্চার সেই ধারাটি বজায় রাখতে পারলে এবং সেই সব ব্যায়ামাগার থাকলে হাওড়ার অষ্টম দাসকে আর মরচে ধরা সরঞ্জাম নিয়ে গাছতলায় অচিন্ত্যের মতো যুবকদের অনুশীলন করাতে হত না। আর কীর্তিমান সেই পালোয়ানদের যোগ্য উত্তরসূরিরা থাকলে এশিয়াড, কমনওয়েলথ বা অলিম্পিকসে সোনার মেডেলের ভিড়ে বাংলার সিন্দুক ভরে উঠত। সেকালের শৃঙ্খলা, নীতিবোধ, দেশপ্রেম আর সাহস থাকলে আজকের সমাজও এমন মূল্যবোধহীন দুর্নীতির পাঁকে ডুবে যেত না। ... ...