কথাটা বলা গেলে তার নিজের সম্বন্ধে নিজের ধারণাগুলো আরেকটু স্পষ্ট করে তুলে ধরা যেত সঙ্ঘমিত্রা-র কাছে। বলা যেত, আমি এই! এর বাইরে আমি অন্য কিছু নই। বাদবাকি যা তুমি বুঝেছো সেসব তোমার ধারণা মাত্র। তার সাথে আমার ভিতরের প্রকৃত আমি-টার কোনও সম্পর্ক নেই। সঙ্ঘমিত্রা-ও কিছু একটা বলতেই যাচ্ছিলো, কথার পৃষ্ঠে কথা যেমন হয়। সেই কথাটা শোনাও প্রয়োজন ছিল। সেই কথাটার প্রেক্ষিতে আরেকটু গুছিয়ে বলে ওঠা যেত তাহলে নিজের কথাগুলো। অথচ, সেরকমটা হলো না। অবশ ভাবটা ক্রমশ ঠোঁট থেকে গালের দিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো ... ...
ফাউয়ের দুনিয়া - আমার ছোটবেলার প্রথম স্কুলে আমার সবচেয়ে প্রিয় দিনটি ছিল ১৫-ই আগস্ট। সকালবেলায় স্কুলে যাওয়া হত। কিন্তু তারপর কোন ক্লাস হত না। ছোট ছোট পতাকা হাতে নিয়ে ছেলে-মেয়ে সবাই মিলে-মিশে বেড়িয়ে পড়তাম মিছিল করে। প্রভাতফেরী। ... ...
অনিন্দ্য সেন, শিলচরের অসম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরিজির মাস্টারমশাই, এখন জেলে বন্দি। তাঁর অপরাধটা, অনেকে হয়তো বলবেন, নিতান্তই নির্বিষ। ৫ অগস্ট, অযোধ্যায় রামমন্দির-স্থাপনার পুণ্যমুহূর্তে, একটি বেচাল টিপ্পনি কেটেছিলেন এই ধৃত অধ্যাপক: 'এত হুলস্থূল কাকে নিয়ে, যিনি তাঁর বউকে ছেড়ে এসছিলেন– লোকলজ্জার ভয়ে?' গুয়াহাটির অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের এক মাতব্বর পোস্টটির বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করে, এবং অনিন্দ্যকে গ্রেফতার করা হয়। হুড়কো দেওয়া হয় তিনটি লাগসই ধারা: ২৯৪ (জনপরিসরে অশ্লীল কাজকারবার), ২৯৫এ (সোজা কথা: ধর্ম নিয়ে ব্লাসফেমি), ৫০১ (অবতারের মানহানি)। আজ হপ্তাদেড় কেটে গেল, অনিন্দ্য সেন জেলবন্দি। ... ...
লোকটা বললো, "কীভাবে বুঝবো সেখানে পৌঁছে? কীভাবে বুঝবো যে এখানেই আমার আসার ছিল?" ঈশ্বর এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন। লোকটা দাঁড়িয়ে রইলো খানিক থতমত হয়ে। তারপর, "যাই হোক, একটা ন্যারেটিভ তো পাওয়া গেছে অন্তত" ভেবে হাঁটতে লাগলো ঈশ্বরের রেখে যাওয়া রাস্তা বরাবর ... ...
করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত কনস্পিরেসি থিওরি ও সেই সংক্রান্ত ডিসকাশন! একদিন আপনি, মানে সুধী পাঠক, দীনের কুটিরে পদার্পণ করলেন এবং ড্রাগন-দর্শনের অভিলাষ প্রকাশ করলেন | আমি আপনাকে গ্যারাজে নিয়ে গেলাম, আপনি বললেন, "ড্রাগন কই?" আমাদের বাড়ির গ্যারাজে একটা ড্রাগন আছে ... ...
ঝাড়খন্ডের আদিম জনজাতির 'হাজারিবাগ চিত্রশৈলী' কে বিপন্নতা থেকে বাঁচিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন একজন মানুষ--তাঁর কথা ... ...
এই একটি ক্ষমা যার কাছে মৃত্যুও মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। এই একটি ক্ষমা, যা মৃত্যুকে অতিক্রম করে অমরত্ব স্পর্শ করে। ... ...
গুয়াহাটি-শিলং যাত্রাপথ তখন কাঁচা রাস্তা। পায়ে হেঁটে যেতে সময় লাগে তিনদিন। অন্যথায় গরুর গাড়ি, সময় সেই তিনদিন। পথে দস্যুদের উৎপাত। সেই সময়ে এই পথে যাত্রার সময় একদিনে নামিয়ে আনলেন কশিমুদ্দিন। তাকেই এখন মনে করা হয় আধুনিক শিলংয়ের পথপ্রদর্শক। হাজি কশিমুদ্দিন মোল্লা জন্মগ্রহণ করেন ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের শেষ দিকে, জনাই হাটপুকুর অঞ্চলে। পিতা গোলাম হায়দার। জীবন ও জীবিকার সন্ধানে গোলাম হায়দার কিশোর পুত্র কশিমুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে পূর্ববঙ্গের ছাতক (সিলেট) হয়ে জঙ্গলে ভরা দুর্গম পথ পায়ে হেঁটে পৌঁছন চেরাপুঞ্জিতে। ১৮৪৯ সালে। ... ...
রবীন্দ্রসাহিত্যে যে ফুলের নাম আছে তার সঙ্গে পরিচয় না থাকলে নতুন প্রজন্মের কাছে বার্তা সঠিক ভাবে পোঁছাবে কি ? তাই এই লেখার অবতারণা ... ...
ঈশ্বরী আমাদের মধ্যেই মিশে থাকেন। ঘরের কাছে আরশিনগরে তাঁকে ধরি ধরি ধরিতে না পারি, শুধু আঁচলের আভাসুটুকু রয়ে যায় মানসপটে। ... ...
রাস্তাটার একদম শেষে একটা পুকুর, টলটলে। দুইপাশে জংলা ঘাস, কুচো কুচো তারা ফুল। পুকুরটাকে জাপটে ধরে আরেকটা রাস্তা, রাস্তার শেষে নিমোর বাড়ি। আমি তাই জানি, কারণ ঐ রাস্তা দিয়েই লাফাতে লাফাতে আসে। আমাদের পুকুর এক , শুধু রাস্তা আলাদা। ... ...
ডায়রিটা পড়ে ছিল একটা স্পটলাইটের মধ্যে। মেঝের রঙ কালো। যদিও স্বপ্নে আসলে রঙ হয় না বলে লোকে। তবে বোঝা তো যায়। অথবা স্বপ্নের যে স্মৃতি তাতে তো অন্তত মনে হয় যে সবকিছুরই যেন রঙ ছিল একটা। এটা সেই স্বপ্নের স্মৃতির বিবরণ। ব্রতীশঙ্কর ভাবছিল ডায়রিটা সে এগিয়ে গিয়ে তুলবে কিনা। ওই তো, 'অংশুমানের ডায়রি', যা কিনা তার এত পছন্দের। ডায়রিটা তুলে নিয়ে খুললেই পড়ে ফেলা যাবে যা যা গল্পে ছিল না। অংশুমান কে, কি হয়েছিল তার শেষ অবধি; সবটাই জেনে ফেলা যাবে। হয়তো তার নিজের ভবিষ্যৎ পরিণতির সঙ্গে খানিক মিলও থাকবে সেটার। এইসব ভাবছিল ব্রতী। আর তখনই ... ...
দু হাজার কুড়ির শুরুর থেকে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস অতিমারির তাণ্ডব চলছে। এখন অবধি ২০ মিলিয়ন (১৯৮ লক্ষ) লোক আক্রান্ত, ৮ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ মারা গেছে (৪% মৃত্যুহার)। এর মধ্যে খোদ ভারতেই সরকারী হিসেব অনুযায়ী ২১ লাখ লোক আক্রান্ত, সাড়ে ৪৩ হাজার মানুষ মারা গেছেন, ছ'মাস বড়জোর অতিক্রান্ত হয়েছে। ... ...
নামটা ছিল একটা মাত্র শব্দে, যার মানে করতে গেলে এরকম একটা মানে দাঁড়াতো। কিন্তু সেই ভাষা জানতো যারা তাদের কেউ আজ আর বেঁচে নেই। ফলে শব্দটা ঠিক কি ছিল আজ আর জেনে উঠতে পারা যাবে না। গ্রামের বাইরে ছিল শুধু জঙ্গল জঙ্গল আর জঙ্গল। যতদূর চোখ যায় আর যতদূর মানুষ যেতে পারে। মানুষের তো স্বভাব হেঁটে দেখা কতদূর যাওয়া যায়। তা, সেরকম মানুষ সব সময়েই থাকে। যারা ছিল সেরকম সেদিন, তারা যদি কেউ সেই জঙ্গলের শেষ দেখেও থাকে, গ্রামে আর ফেরেনিকো তারা। ... ...
আপাতত মাথায় রাখা যাক যে, ফ্রিজ থেকে বেরিয়ে সেই পচে-যাওয়া-রোগ ড্রয়িংরুমের চেয়ারটাকেও খেতে শুরু করেছিল। আর বইয়ের তাকটাও সেখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। তাছাড়া গোটা ড্রয়িংরুমের মেঝে পাঁকের মতো আঠালো হয়ে আসছে ক্রমশ। ঘরে হাঁটা দায়। সেন্টার টেবিল থেকে ডাইনিং টেবিলে পৌঁছতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লেগে যাচ্ছিলো প্রতিবার। এই ঘরটা শেষ হলে বাকি থাকবে বেডরুম আর বাথরুমগুলো খাওয়া। ... ...
রাম মন্দির আর বাবরি মসজিদ সংক্রান্ত মামলায় অযোধ্যার নাম সারা ভারতবর্ষ জানে। এমনকি ভারত ছাড়িয়ে পৃথিবীতেও খ্যাতি হোক বা কুখ্যাতি হোক ছড়িয়ে পড়েছে। এখন যে অযোধ্যার কথা বলব সে এক অন্য অযোধ্যার কথা। সেই অযোধ্যার নাম ছিল তখন আওধ। হ্যাঁ এই সেই ওয়াজেদ আলি শাহ'র আওধ। যে ওয়াজেদ আলি শাহ্ কে মেটিয়াবুরুজে নির্বাসন দিয়েছিল ব্রিটিশরা। আওধের রাজ্য জোর করে কেড়ে নিয়ে ওয়াজেদ আলি শাহ্ কে বার্ষিক পেনশনের বিনিময়ে মেটিয়াবুরুজে নির্বাসিত থাকতে বাধ্য করেছিল। কোম্পানির রাজ্য দখলের খাই তখন এমন বেড়ে গেছিল, চোখের সামনে যে দে ... ...
জাতীয় পতাকার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়েছিল স্কুলের গন্ডীতে। খুব ছোটবেলায়। তখনো ইতিহাস বা সিভিকসের বইএর পাতায় জাতীয় পতাকার ইতিহাস পড়া হয়ে ওঠে নি। অথচ পনেরই আগস্ট এসে গেছে মহা সমারোহে। চার্ট তৈরির পরব। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস। আবার করে ঝালিয়ে নেওয়া, " মুক্তির মন্দির সোপানতলে যত প্রাণ হল বলিদান লেখা আছে অশ্রুজলে"। তারপর পনেরই আগস্ট ভোর ভোর স্কুলে যাওয়া, আলপিন পড়লে শোনা যায় এমন শান্ত পরিবেশে তেরঙ্গার মাথা ঝাঁকানি দিয়ে ওঠা, ফুল ছড়াতে ছড়াতে আকাশে পৌঁছে যাওয়া , তারপর গঙ্গার হাওয়া গায়ে মেখে পতপতিয়ে ওড়া। ন ... ...
আমাকে যখন উদ্যোক্তারা নারায়ণ চৌবে স্মারক বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রণ করলেন, আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম। আমি কীভাবে এই বক্তৃতা দেওয়ার যোগ্য বিবেচিত হলাম, তা আমি বুঝতে পারছিলাম না। বক্তৃতাটি যাঁর স্মৃতিতে তিনি শ্রমিক-উৎপাদক মানুষের মঙ্গলকামনায়, তাঁদের পাশে থেকে জীবন উৎসর্গ করেছেন। নারায়ণ চৌবে এরকম অসংখ্য মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যাঁরা আজীবন অশেষ আত্মত্য্যগ স্বীকার করছেন, যাতে আমাদের চারপাশ সুরক্ষিত থাকে, আমাদের সন্তান দুধেভাতে থাকে। আজকের মঞ্চে নারায়ণ চৌবে স্মারক পুরষ্কার পাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্য ... ...
মিছিল শুরুর তাড়া ছিল, কিন্তু কাজ সারতে বেলা গেল দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম যাদবপুরে গিয়ে মিছিল ধরব। চায়ের দোকানে প্রায় একঘন্টা উসখুস করার পর দূর থেকে দেখি শীত এলে বসন্ত কী কাছে না এসে পারে, এই কবিবাক্য মনে করিয়ে দিয়ে, এগিয়ে আসছে কলকাতা পুলিশের গাড়ি আর পুলিশ। পেছনে ম্যাটাডোরে মুহুর্মুহু শ্লোগান, গান। দুরন্ত ঝড়ের মতো রাজপথের দখল নিয়ে নিলো এনার্সি বিরোধী, সিএএ বিরোধী মিছিল। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সামিল অজস্র মুখ। মাথার ওপর আন্দোলিত জাতীয় পতাকা।থেকে থেকে তরুণরা ছুটে যাচ্ছে ... ...
আমাদের বাড়িতে চারটে প্রাণী... অনমিত্র(যিনি এখানে দুধভাতের রোল প্লে করবেন), আমি(যে এখানে গল্পগুলো বলবে), আর আমাদের দুটো অত্যাচারী ছানা...একজনের নাম কাজু, আরেকজনের সুফি.. কাজুর একটা ল্যাজ আছে। সুফিরও আছে। যদিও সেটা অদৃশ্য..কাজু প্রথম আমার কাছে আসেন ৮ই জুন, ২০১৫। তখন ওনার বয়স ছিল ৩৪দিন। সেরেল্যাক খেতেন.. চার ঘন্টা পরপর আড়াই চামচ করে..কোলে ঘুমোতেন... আমি ওনাকে কোলে নিয়ে রান্না করতাম। উনি কাঁধের জামা আঁকড়ে ধরে থাকতেন... নিজের কাজকম্মো বাদে আমার আর কাজুর মধ্যে কিছু ধরাবাঁধা নিয়ম ছিল। যেমন গাছে জ ... ...