সেদিনের অনুষ্ঠানে শচীন দেব গান গাইতে উঠলেন। রবি বাবুর ততক্ষণে চলে যাবার কথা, আর শচীন দেব সরাসরি গ্রীন রুম থেকে এলেন বলে তিনি আর খেয়াল করেন নি শ্রোতাদের মধ্যে রবি ঠাকুর বসে আছেন। গান শুরু হল – শচীন দেব সেদিন গাইলেন ঠুমরি। সেই কি গাইলেন – পুরো অনুষ্ঠান শেষ হলে শচীন দেব পেয়েছিলেন গোল্ড মেডেল। রবি বাবু খুব মন দিয়ে গান শুনছিলেন – মজে গিয়েছিলেন, একসময় জিজ্ঞেস করলেন, " হ্যাঁরে, দিনু, ছেলেটা কে রে? ভারী সুন্দর গাইছে তো।" ... ...
সেই হিসেবে দেখলে সুভাষ শেষ দিন পর্যন্ত মোটামুটি ফিট ছিলেন গড়পড়তা বাঙালির থেকে। তার পিছনেও ছিল বিধান রায়ের তৈরী করে দেওয়া ডায়াট চার্ট। বিধান রায় বুঝিয়েছিলেন যে সুভাষ যদি ওই সেনার পোষাক পরে ইমেজ গড়ে তুলতে চান, তাহলে নিজের ভুঁড়ির ব্যাপারটা কন্ট্রোলে রাখতে হবে। কারণ ভুঁড়িওলা যুদ্ধ সেনা প্রধান খুব এক দৃশ্য সুখকর নয়। বিধে-দার সেই পরামর্শ মেনে চলেছিলেন আজীবন সুভাষ। কেবল সেবারে এমিলি-র সাথে বিয়ের পর অষ্ট্রিয়াতে যে দুই মাস ছুটি কাটিয়ে এলেন তখন বেশ খানিকটা ওজন বেড়ে গিয়েছিল। ... ...
এইচ আই ভি সংক্রণ হলে এন্টি রেট্রোভাইরাল চিকিৎসায় সুস্হ স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। একবার এন্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপির ওষুধ চালু হলে যত অসুবিধাই হোক নির্দিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করা উচিত নয়। ... ...
সত্যেন বোসের এস্রাজ শুনে বাবা খুব খুব খুশী। বললেন, “তুমি আমার সাথে মাইহার চলে আইসো। শিখাবো যত্ন করে”। সত্যেন বোস বললেন, একটু ভেবে জানাবেন। এবার এই খবর কি করে যে রবীন্দ্রনাথের কানে চলে যায়। সত্যেন বোসের মতন ছেলে বিজ্ঞান চর্চা ছেড়ে সংগীত চলে যাবে পুরোপুরি, এটা তাঁর কেমন যেন লাগলো। জগদীশের কাছে তিনি শুনেছিলেন যে সত্যেনের ভিতরে পোটেনশিয়াল কি রকম। আর সত্যেন যত ভালোই এস্রাজ বাজান না কেন, তার থেকেও বেশী ভালো অঙ্ক আর ফিজিক্স করতেন। রবি ঠাকুর তাই সরাসরি বাবা আলাউদ্দিনের সাথে দেখা করে সব খুলে বললেন, "দেখুন আপনি হয়ত সত্যেনের থেকে আরো ভালো সংগীতের ছাত্র খুঁজে পাবেন, কিন্তু ওর থেকে ভালো বিজ্ঞানী এই বাংলা হয়ত পাবে না" ... ...
১৯১২ সালে তৃতীয় বারের জন্য ইংল্যান্ড যান প্রফুল্ল রায়। এডিনবাবা ইউনিভার্সিটি-তে কি সব সেমিনার এবং আলোচনা ছিল। সেদিন কাজ শেষ করে বেরিয়ে খুব চা তেষ্টা পেয়ে গেল প্রফুল্ল রায়ের। এডিনবারাতে শুধু চায়ের দোকান পাওয়া খুব চাপের – সামনের এক বার-এ ঢুকে জিজ্ঞেস করলেন সেখানে কফি সার্ভ করে কিনা ওরা। হ্যাঁ বললে, তিনি তখন জিজ্ঞেস করলেন কফি পাওয়া গেলে, চা-ও পাওয়া যাবে কিনা? ইংল্যান্ডে তখন চা পান বেশ বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেছে। প্রফুল্ল রায়কে অবাক করে এই পাব মালিক বলল চা পাওয়া যাবে। পাবে বসে প্রফুল্ল রায় তাঁর ব্যাগ থেকে বের করলেন ড্যানিয়্যাল অলিভারের ১৮৬৯ সালে লেখা বই “ফার্ষ্ট বুক অফ ইন্ডিয়ান বোটানি” – কারণ তিনি তখন হাত দিয়েছেন ভারতীয় ভেষজ ইত্যাদি নিয়ে কিছু গবেষণায়। একমনে পড়তে পড়তে চা-য়ে চুমুক দিচ্ছেন, এমন সময় শুনলেন এক সাহেব জিজ্ঞেস করছে, “উড ইউ মাইন্ড ইফ আই জয়েন ইউ”। ... ...
দিনে দিনে ক্রমশ: অসামাজিক হয়ে যাচ্ছি বলে নিজের আত্মচেতনা সজাগ হচ্ছে এই বলে যে কিছুটা অন্তত এফর্ট দেওয়া দরকার আমার তরফে যাতে করে একদম বিচ্ছিন্ন না হয়ে যাই - তা এফর্ট দিচ্ছি আজকাল। আর সেই এফর্টের আগে-পরে যা হচ্ছে সেগুলো ডকুমেন্টেড করে রাখাই এই লেখার উদ্দেশ্যে ... ...
তখন দক্ষিণ কোলকাতায় একটা বড় ক্লাবের প্রথম শীতের সময়ে ফাংশন। অনেকের সাথে টেক্কা দেবার চেষ্টা এদের – কিন্তু পয়সা থাকলেই তো হবে না, বনেদীয়ানা দেখাতে হলে ভালো শিল্পী-কে এনে আর্ট-কালচার লাইনে নাক গলাতে হবে। এই ক্লাবের একজনের সাথে হেমন্ত মুখার্জী-র চেনাশুনা। সেই ভদ্রলোক গিয়ে হেমন্ত-বাবুকে ধরলেন – বোম্বে থেকে লতা-দিদিকে বলে কয়ে আনতেই হবে ফাংশনে। হেমন্ত বাবু আবার এমন অনুরোধ ফেলতে পারেন না। লতাকে ফাংশানে আনবেন বলে কথা দিলেন। ... ...
সেদিন খুব ভোর ভোর সৌমিত্র হাজির হলেন উত্তমকুমারের বাড়ি। সেখান থেকে দুজনে গড়ের মাঠে যাবেন উত্তমকুমারের গাড়িতে করে। এমনটাই চলছিল বেশ কয়েকদিন। এমনিতে উত্তমকুমার আর সৌমিত্র দুইজনাই একদম সাহেবী টাইম মেনটেন করতে ভালোবাসেন। সৌমিত্র পৌঁছালে দুজনে এককাপ করে চা খেয়েই বেড়িয়ে যেতেন গাড়ি নিয়ে। অন্যদিনের মত বাড়ি ঢুকেই সৌমিত্র হাঁক দিলেন, “বৌদি, চা দাও”। কিন্তু সেদিন আশেপাশে উত্তমকুমারকে দেখা গেল না। বরং বাড়ির ভিতর থেকে দাদার আওয়াজ ভেসে এল, “পুলু, তুই খানিক বসে চা খা – আমি আসছি”। ... ...
তখন সারা ভারত জুড়ে চলছে ডিস্কো জ্বর, ফলতঃ বিডিও-কে ঘেরাও করা হল একদিন এই দাবী জানিয়ে যে বোম্বে থেকে বাঙালীর ছেলে ডিস্কো সম্রাট বাপ্পি লাহিড়ি-কে আনা হোক। সে সব দাবী শুনে বিডিও তো কোন ছাড়, স্থানীয় হোমড়াচোমড়া ব্যক্তিদের মাথায় হাত পড়ে গেল! আমাদের দৌড় বলতে হাওড়া ব্রীজ পেরিয়ে চিৎপুরে যাত্রা পার্টি খুঁজতে যাওয়া পর্যন্ত! এখন বোম্বে থেকে আর্টিষ্ট কিভাবে আসবে কেউ বুঝতে পারছে না! ... ...
এই ধরুণ যেমন আমরা সবাই জানি নায়ক সিনেমায় উত্তমকুমারকে হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনের খন্যান স্টেশনে চা-খেতে নামিয়ে মাষ্টার স্ট্রোক দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনদিন ভেবে দেখেছেন কি এত স্টেশন থাকতে খন্যান কেন? এখনকার খন্যান স্টেশন আর সেই ১৯৬৫-৬৬ সালের খন্যান স্টেশনের মধ্যে যদিও অনেক পার্থক্য, কিন্তু তখনো খন্যান স্টেশনের একদিকে ছিল তালান্ডু আর অন্যদিকে পান্ডুয়া। তাহলে খন্যান কেন? ... ...
হোটেলের রেষ্টুরান্টের বোরিং মাপাজোপা খাবার খেতে খেতে ক্লান্ত হয়ে এই ভাবেই একদিন ধর্মতলার ছোলে-বাটোরা-র প্রেমে পড়ে গেল রাসেল। হয়েছে কি একদিন বিকেলে প্র্যাক্টিস থেকে ফিরে হোটেলের বাইরে একটু ঘুরতে বেরিয়েছে, একটা দোকানে দেখে লোকজন বিশাল ফুলো ফুলো বান্-এর মতন কি খাচ্ছে! ইন্টারেষ্ট লেগে গেল রাসেলের – জয় মা বলে ঢুকে পড়ল দোকানে, আঙুল দিয়ে দেখালো যে ওই খাবার তার চাই। দোকানে যে ক্যাশে বসেছিল সে অনেক কষ্টে ভাঙা ভাঙা ইংরাজীতে জানালো যে ওই খাবারের নাম “ছোলে-বাটোরে”। ব্যাস, সেই খাবার খেয়ে রাসেল ফিদা! নামটা মুখস্ত করে নিল কয়েকবার আউড়ে নিজের মনে মনেই। ... ...
হাঁটতে হাঁটতে তিনি পোঁছে গেলেন সেই জায়গাটায় এখন যেখানে গেলে গঙ্গার উলটোদিকে মেটিয়াবুরুজের ফেরিঘাট দেখা যাবে। আর বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতরে তখন এই পাশের পুরো জায়গাটা জুড়ে চাষ হত গাঁজার। হাঁটতে হাঁটতে জগদীশ বসু ভাবতেও পারেন নি সেদিনের থেকে প্রায় ১২০ বছর পরে এই বোটানিক্যাল গার্ডেন তাঁর নামেই নামাঙ্কিত হবে। আগেকার দিনের শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন এখন পরিচিত “আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোস ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন”। ভারতের সবচেয়ে বড় বোটানিক্যাল গার্ডেনের নাম ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত বোটানিষ্টের নামে হবে সে আর আশ্চর্য কি! তবে হালকা আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে বোটানিক্যাল গার্ডেনে জগদীশ বসু-র প্রথম পদার্পণ কোন স্পেশাল গাছ গাছালি দেখতে নয় – গাঁজার চাষ দেখতে! গাঁজার চাষ এবং গাঁজা গাছের ব্যাপারে আলোচনার জন্যই কিউরেটর ডেভিড প্রেইন ডেকে পাঠিয়েছিলেন জগদীশ বোস-কে। একদম সরাসরি তাঁর অফিসে চলে যেতে বলেছিলেন, কিন্তু জগদীশ বোস ভাবলেন আলোচনায় ঢোকার আগে নিজের মত করে গাঁজা গাছগুলিকে দেখে নেওয়া যাক! ... ...
সেদিন নৈহাটি থেকে বেশ দেরী করেই আনন্দবাজারের অফিসে ঢুকলেন সমরেশ বসু। দেশ পত্রিকার সেকশনে ঢুকতেই সাগরময় ঘোষের সাথে দেখা। সাগরবাবু মাত্র কিছু দিন আগেই দেশ-এর সাব-এডিটরের দায়িত্ব থেকে প্রধান সম্পাদক হয়েছেন। তবে সাব-এডিটর থাকা কালীনও দেশ-র বেশীর ভাগ সিদ্ধান্তের পিছনে সাগরবাবুই ছিলেন শেষ কথা। সমরেশ বাসুর সাথেও তাঁর চেনা শুনে বহু বছর ধরেই – আজ পুরী, কাল কুম্ভ মেলা, পরশু কেঁদুলি – এই সব জায়গায় সমরেশ বাবুকে ঠেলেঠুলে তিনিই পাঠাতেন লেখা বের করার তাগিদে। ... ...
নীলরতন বাবু বয়েসে প্রায় বছর কুড়ি বড় ছিলেন বিধান রায়ের থেকে। ভালোবেসে তিনি বিধান রায়কে ‘বিধে’ বলে ডাকতেন আর একদম ভাইয়ের মত ভালোবেসে তুই বলেই সম্বোধন করতেন। সেই ভালোবাসা ছিল রেসিপ্রোক্যাল – কুড়ি বছরের বড় হওয়া সত্ত্বেও বিধান রায় ডাকতেন ‘নীলুদা’ বলে। প্রথম থেকে আলাপের পরেই নীলরতন বাবু বুঝে গিয়েছিলেন যে বিধান রায় খুবই প্রতিশ্রুতিবান ছাত্র এবং কালে কালে খুব নামকরা ডাক্তার হবে যদি ঠিক ঠাক গাইড করা যায়। তাই তিনি নিজে থেকেই বলেছিলেন, “বিধে, সময় পেলেই বিকেলের দিকে আসিস হাসপাতালে আমার রুমে। রাউন্ড দেবার আগে তোর সাথে চা খেতে খেতে বিশেষ কেস গুলো নিয়ে আলোচনা করব”। তা এমন সুযোগ কি আর হাতছাড়া করেন বিধান রায়! তাঁরও শেখার আগ্রহ প্রচুর, প্রায় প্রতিদিন সময় পেলেই ছুটতেন ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল কলেজে – যাকে আপনারা আজকে নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ বলে চেনেন। ... ...
তা ব্রজেন বাবু হেল্প করলেন। উনার কথাতেই অন্নপূর্ণা যাত্রা অপেরা ডেকে পাঠালো অরুণ কুমারকে একদিন। অরুণকুমার গিয়ে দেখলেন একদমই নতুন ধরণের যাত্রা – নাম “শের আফগান”। সেখানে আলি কুলী খাঁ-য়ের চরিত্রে অভিনয় করছে কম বয়সী, কিন্তু তুখড় একজন ছেলে। সেই ছেলেই পরে শান্তিগোপাল নামে বাংলার ঘরে ঘরের নাম হয়ে ওঠে। অরুণের জন্য ওঁরা ভেবেছিলেন কুতুবউদ্দিন কোকা-র চরিত্র। তবে চরিত্রে ফাইন্যাল করার আগে যাত্রার পরিচালক অরুণকুমারকে টেষ্ট করে নিতে লাগলেন – একটা অন্য কোন যাত্রাপালা থেকে বড় ডায়লগ তাঁকে পড়তে দিলেন, আরো বললেন অভিনয় করে দেখাতে। ... ...
কুরোসাওয়া ক্রমশঃ মানিক বাবুর পারিবারিক বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। উনি বিজয়া রায়-কে ডাকতেন “জয়া – সান” বলে। ‘সান’ হল জাপানী ভাষায় এক সম্ভ্রম সূচক সম্বোধন – পুরুষ, মহিলা দুই দলকেই বলা যায়। যেমন প্রথম প্রথম কুরোসাওয়া সত্যজিৎ রায়কে ডাকতেন “মাষ্টার-সান” বলে। কিন্তু মানিক বাবু বেশ অপ্রস্তুত হয়ে একদিন বললেন, “আপনি আমাকে প্লীজ এই ভাবে মাষ্টার বলে ডাকবেন না সবার সামনে – বেশ লজ্জা লাগে”। তারপর থেকে কুরোসাওয়া উনাকে সবার সামনে ‘মিঃ রায়’ আর একান্তে ‘মাষ্টার-সান’ বলে ডাকতেন। ... ...
এই আধ্যাত্মিকতা এদেশের মানুষের নিজস্ব জীবনবোধ, ভারতের জাতীয়তাও এই চেতনাই। কাউল-সেন দম্পতির উদাহরণ এইজন্য প্রাসঙ্গিক ছিল এই লেখায়। গান্ধীজি মানুষকে মানুষের সমাজকে রাজনীতির থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। গান্ধীজি বিভিন্ন আন্দোলন যখন উঠিয়ে নিয়েছেন, সেইসব পদক্ষেপ নিয়ে কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মীরা ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কিন্তু, দেশবাসীর বিরাট অংশের কাছে তারপরও গান্ধীজির জনপ্রিয়তা হ্রাস হয় নি। এবং আমরা দেখতে পাই, অসহযোগ থেকে আইন অমান্য, সবকটি ক্ষেত্রেই আন্দোলন তুলে নেওয়ার কারণ রাজনৈতিক নয়, সামাজিক। রাষ্ট্রনীতি রূপায়ণের থেকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন সমাজের ক্ষমতায়নকে, সাম্যের লক্ষ্যে সমাজসংস্কারকেও। ... ...
আমাদের একটা আস্ত সমুদ্র ছিল – ছিল সমুদ্র সৈকত। ঘরে থেকে বেরোলেই ঢেউ আছড়ে পড়ার শব্দ শুনতে পেতাম ঝাউগাছের তলায় আর কখনও কখনও প্রবল তাপদগ্ধ অলস দুপুর কাটাতে কাটাতে বারান্দায় বসে অপেক্ষা করতাম বিকেলের ভেজা বালির। আমরা তখনও কেবল দুজন মাত্র। হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই ঢেউ পেরিয়ে পেরিয়ে – কখনও দেখা হয়ে যায় পাশের বাড়ির কুকুর নিয়ে ঘুরতে বেরোনো মালকিনের সাথে, কখনও দেখা হয় কাঁকড়া খুঁজতে আসা সেই স্থানীয় লোকেদের সাথে। কখনও দেখি এক পুরো পরিবার চিঙড়ি মাছ ধরছে জাল দিয়ে ছেঁকে – বাচ্চাদের উৎসাহ অবশ্যই মাছ ধরার থেকে জলে হুটোপুটিতেই বেশী। এক সময় গোধূলি নেমে আসে – এত রঙ আমরা আর কোথাও দেখি নি। জলের সাথে ভেসে আসা কাঠের গুঁড়ির উপর বসে সূর্যের ডুবে যাওয়া দেখি। ঢেউ দেখি – শব্দের সাথে মিশে যায় দিগন্তে আকাশের শত রঙ। ধর আজকে মেঘ করেছে – এমন মেঘের ফাঁক দিয়েও আলো চুঁইয়ে পড়বে জানি অনভ্যাসের আলতা পায়ে। লাল মুছে নিয়ে যাবে ক্রমাগত আর ফিরে না আসা ঢেউ। আমি তখন দূরে ছোটার ক্লান্তি নিয়ে তাকিয়ে আছি একে একে জ্বলে ওঠা জলের ওধারে জাহাজের আলোর দিকে। আলো স্পষ্ট হয়ে আসে, ঢেউ এগিয়ে এসেছে অনেক – আমরা হাতের আঙুল নিয়ে খেলতে খেলতে ফিরে আসি কাঠের বাড়িতে। ... ...