কবিতা কৃষ্ণনের ট্যুইটে শেয়ার হওয়া সেই ভিডিওর নীচে যে শেষমেশ রাজনীতি, পুলিশের আসল উদ্দেশ্য, পুলিশের নিজেকে রক্ষা করার উচিত কিনা – এসব নিয়ে জলঘোলা করা হবে, তাতে কারুর কোনো সন্দেহ ছিল না। কেন উচ্ছেদ করা হচ্ছে, কতদিন ধরে, উচ্ছেদ কতটা ন্যায়সঙ্গত, কোনো মূল্যেই – নাগরিক, পুলিশ – কারুর জীবনের বিনিময়েই কি মন্দির বানানোর নামে উচ্ছেদ করা দরকার – এ সব প্রশ্ন ছাপিয়ে উঠে আসবে, ভিডিওতে দেখানো একটিমাত্র লোককে অনেক পুলিশ মিলে নৃশংসভাবে মেরে ফেলা ছাড়াও কোনো ‘বৃহত্তর’ ছবি ছিল কিনা। কেউ আর একটা ভিডিও শেয়ার করে দেখাবে, ‘আহা, পুলিশ বলে কি মানুষ নয়?’ মুখ্যু-মন্ত্রী হিমন্ত শর্মা এরই প্রতিধ্বনি করে বলবেন, ‘পুলিশ তো নিজের কাজ করছিল, ওই লোকগুলোই লাঠিসোটা নিয়ে ওদের মেরেছে।’ ... ...
রঙের চেতনা, চেতনার রঙ ... ...
ছোটবেলায় মোটা বেতের ঝুড়ি মাথায় ফেরিওয়ালারা হেঁকে যেত “হরেএএএক মাল পাঁসসিকে”, এখন যায় তাদেরই আধুনিক সংস্করনরা, রেকর্ড করা গলায় বলে “আমাদের প্রচার গাড়িতে পাবেন নানা ধরনের জিনিস”। ‘প্রচার গাড়ি’ শব্দগুচ্ছ অনেকটা ‘সৌন্দর্য সাবান’-এর মত, কী যে তার মানে কেউ জানে না। যাই হোক, সেই পায়ে চালানো গাড়িতে যা যা থাকে তার প্রায় সবই ভেসে যেতে দেখলাম বারান্দা থেকে - ছোট গামলা, বাটি, খেলার বল, বোতল, ক্যারি ব্যাগ, দড়ি ইত্যাদি। গাড়িতে যা থাকে না তাও দেখলাম - ধবধবে সাদা টগর ফুল, সবুজ রঙের বাঁশ, গাছের পাতা, এমনকি এক পাটি জুতোও। ... ...
আরে দাদুভাই, আর কইয়ো না। আজ এক্কেরে বেকুব বইনা গেসি। বিকাল বিকাল লেকে যাইতাসি। ওই সাদার্ণ এভেনিউয়ের মাঝের ঘাসের বুলেভার্ডে পোলাপানরা তো ঘুড্ডি উড়াইতাসে। তা উড়াক যত ইচ্ছা। হঠাৎ দেখি গোল পার্কের দিক থিকা একখান কাটা ঘুড্ডি, সঙ্গে অনেক মাঞ্জাসুতা, ভাসতে ভাসতে আইতাসে এদিকে। ব্যাবাক পোলাপান লাগাইলো দৌড় ! তাগো সব্বাইরে পিছনে ফেইল্যা আগে আগে আইতাসে একটা কালা ভূশন্ডি ছ্যামরা -- খালি গা আর দড়ির হাফ-প্যান্টুল পরা ! সে যে কি ছুট -- কি কমু ! ... ...
জীবনীশক্তির কথা। কীভাবে এই সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশ সঙ্কটের মধ্যে স্যানিটি বজায় রাখা যায়, আর দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়। কী করে এই ভীষণ যুদ্ধ করা যায় -- নিজের মনের বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে। অথবা, ঘৃণা হিংসার রাস্তায় না গিয়ে। আত্মহত্যার রাস্তায় না গিয়ে। ... ...
১৮৩৬ সালের ১০ই জানুয়ারি (মতান্তরে ২৮ অক্টোবর) সমগ্র মেডিক্যাল কলেজ ভেঙে পড়েছে মর্গের সামনে, তিল ধারণের জায়গা নেই। কিন্তু কেন এই জনসমুদ্র? কারণ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই মধুসূদন গুপ্তের হাত ধরে কল্লোলিনী তিলোত্তমা সাক্ষী থাকবে এক নতুন ইতিহাসের। ভারতের মধ্যে কলকাতার বুকেই প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ তৈরি করবে এক অনন্য ইতিহাস। ... ...
…ঝটিকা হ্রদ-পাহাড়-অরণ্যের দেশ রাঙামাটি ভ্রমণ। আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে নিছকই ব্যক্তিগত অন্তর্দশন। ভেতরে অশান্ত পার্বত্যাঞ্চলের স্মৃতির ঢেউ তোলপাড়। ব্যাগপ্যাকে চণ্ডালের সদ্য প্রকাশিত বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ ‘পাহাড়ে বিপন্ন জনপদ (সাংবাদিকের জবানবন্দীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের অকথিত অধ্যায়)’, যেন গোটা পাঁচেক আর্জেস গ্রেনেড। সঙ্গ দেন কয়েক গুণীজন… ... ...
এখনও ভোর হয়নি বোধহয়। কিন্তু আমার বড্ড শীত করছে। পা দিয়ে লেপ বা কম্বল টানতে গিয়ে দেখছি পা অবশ, নড়ছে না। ঝিঁঝিঁ ধরেছে। সেটা হতেই পারে। ছোটবেলা থেকেই আমার এই রোগটা রয়েছে — অবশ্য যদি এটাকে কোন রোগ বলা যায়। ... ...
এর কিছুদিনের মধ্যেই দিগম্বরী দেবীর মৃত্যু ঘটে। দিগম্বরী বেঁচে থাকতেই যে সম্পর্কে ভাটার টান লেগেছিল, তাঁর মৃত্যুতে সে সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে নিশ্চিতভাবেই। তারপরও কি দ্বারকানাথ তাঁর অভ্যাস বদলেছিলেন একটুও? ইতিহাস জানান দেয় – না। সম্পর্কের দীর্ঘশ্বাস এভাবেই পাক খেয়েছিল সেবার, ঠাকুরবাড়ির দেওয়ালে-দেওয়ালে। ... ...
আমাদের পরিবারের সাথে এখন খুব ঘুলেমিলে গেছে সোনামণি। ইচকি পিচকিও খুব খুশি তাদের নতুন মামি পেয়ে। এদিকে আমিও ওর হাতে দুজনকে সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্ত। মা এখন হরিপদবাবুদের পুরনো কুলারে আমাদের থাকার জায়গা করে দিয়েছেন, আর মেয়েটাও অল্প কদিনে ঐ খুপচিটাকে কেমন ঘর বানিয়ে ফেলেছে। ... ...
এবার একজোট হয়েছেন শ্রীরামপুর শহরের সাংস্কৃতিক কর্মী, নাট্যকর্মী থেকে কবি, সাহিত্যিক, সমাজকর্মী সকলেই। লক্ষ্য একটা অভিন্ন মত নির্মাণ করে শ্রীরামপুরের সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্রগুলোর আধুনিকীকরণ এবং মুক্তমঞ্চ ও আধুনিক মঞ্চ তৈরির উদ্যোগে প্রশাসনকে সামিল করা। এমনতর উদ্যোগ এর আগে কোনও শহরে হয়েছে বলে শোনা যায় নি। ... ...
দুটো রোমান মিথকে একসঙ্গে করে, দু'বছর আগে লিখেছিলাম গল্পটা। এই গল্পে ব্যবহৃত ঘরবাড়ি, খাবার, জীবনযাত্রা, কবিতা সবই ইতিহাস থেকে নেওয়া। বানাইনি। এমনকি, পাস্তুমিয়ার চুটকিটাও দু'হাজার বছর আগেকার! যাঁর কবিতা অনুবাদ করেছি, সেই অসামান্য ক্ষমতাশালিনী, সাফো সমপ্রেমী ছিলেন। ... ...
সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগেও দুর্গাকে মা রূপে পুজোর প্রচলন ছিল। সেই সময় থেকেই দুর্গা হয়ে ওঠেন একপ্রকার 'গার্ল নেক্সট ডোর' অর্থাৎ পাশের বাড়ির মেয়ে। ইংরেজ শাসনকালে পরিবর্তন এল দুর্গাপুজোয়। দুর্গাপুজো ব্যবহৃত হতে থাকল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে। এমনকি ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপুজো এর ব্যতিক্রম ছিল না। মুর্শিদাবাদ বা লখনৌ থেকে নাচিয়েরা এসে আসর জমিয়ে গেছেন, ঠাকুরবাড়িতে রয়েছে এমন উদাহরণও। তবে ইংরেজদের চাটুকারিতার উদ্দেশ্যে আয়োজিত দুর্গাপুজোর ইতিহাসে যবনিকা পড়ল ঊনবিংশ শতকের উত্তাল সময়ে। দুর্গা তার চিরাচরিত মাতৃরূপ থেকে হয়ে উঠলেন ইংরেজ বিতাড়নের অন্যতম অস্ত্র। ... ...
ভাবনার মৌলবাদ শুরু হয় কোত্থেকে? ... ...
আচ্ছা, বয়স্ক লোকগুলো কি একটু বোকা হয়? সবার কথা বলছি না, আমার বাবা মোটেই বোকা ছিলেন না। মঙ্গলা পঞ্চায়েতের কত লোকজন ওনার কাছে পরামর্শ নিতে আসে। কিন্তু যারা একটু ফ্রাস্টু গোছের? যেমন ধরুন গ্রামীণ ব্যাংকের সকরী শাখার হেড ক্যাশিয়ার বিনোদ আংকল? ... ...
যদুনাথ সরকারের লেখা থেকে উপাদান নিয়ে, ইতিহাসের কিছু ঘটনা আর কল্পনা মিশিয়ে লেখা গল্প। শাজাহানের সময় নগ্ন সাধক সারমাদ সত্যিই গান আর কবিতার মাধ্যমে, তাঁর নিজস্ব দর্শন (যার খানিকটা গল্পে বলা আছে) প্রচার করতেন। তবে, এই গল্পে সারমাদের গানটা আমার লেখা। দশম শতকের পারসিক মনীষী মনসুর আল হাল্লাজের আনাল হক (সো অহং) বাণী সারমাদ ব্যবহার করতেন বলে জানা যায় না। আবার করতেন না, সেটাও জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। ... ...
কিন্তু সবথেকে আশ্চর্য লাগতো এইটা দেখে যে বাকি সব পুজো-পার্বণ এদিক-ওদিক গড়াগড়ি খায়, কিন্তু ওই এক বিশ্বকর্মা পুজো নট-নড়নচড়ন, ফি বচ্ছর ১৭-ই সেপ্টেম্বর বাঁধা। সেই দমদম জংশনের প্ল্যাটফর্মে যেমন সদর্পে ঘোষণা থাকতো, 'সব জ্যোতিষী বারবার, অমৃতলাল একবার!' (বলাই বাহুল্য, অমৃতলালের কেরিয়ার নিয়ে সেই থেকে কিছুটা সংশয় এযাবৎ রয়েই গেছে)। তো এবারের গল্প, থুড়ি, রচনা আমাদের সেই 'নিষ্পাপ' ছোটোবেলার একমাত্র ফিক্সড পয়েন্ট নিয়ে, যার নাম ১৭-ই সেপ্টেম্বরের আকাশ, ধারকাছ দিয়ে গেলে সাবধান, এই বয়সে ভোঁকাট্টা হলে দায়িত্ব কিন্তু কর্তৃপক্ষের নয়। ... ...
কবিতা ... ...