সেকাল থেকে আজ পর্যন্ত, তীর্থে-তীর্থে এবং কলকাতা বা যে কোন বড়ো শহরের রত্নব্যবসায়ীদের চেম্বারে প্রায়ই স্বঘোষিত সিদ্ধ সাধকদের দেখা যায়। তাঁদের অনেকে আবার স্বর্ণপদক প্রাপ্ত – এই পদক কোন প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে জানা যায়না। তবে এঁরা বশীকরণ করতে পারেন, আপনাকে যে কোন কাজে সার্থক করে তুলতে পারেন। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হল বৈদেশিক আক্রমণের সময় এঁদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যোদ্ধাদেরই সীমান্তে লড়তে হয়ে। তাঁরা বশিত্ব দিয়ে বিপক্ষ সৈন্য বা সেনাপতিদের বশ করে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতেন, কিন্তু কোনদিন করেননি। অথবা সাধারণ আকৃতির সাধক মহিমা সিদ্ধি দিয়ে হঠাৎ বিশাল শরীর বানিয়ে, গরিমা সিদ্ধিতে তাঁদের পায়ের তলায় পিষে একজন শত্রুকেও বিনাশ করতে পেরেছেন - এমন শোনা যায় না। ... ...
পাকিস্তান আমলে বামপন্থি একটা সাংস্কৃতিক সংগঠন ছিল, নাম ক্রান্তি। ক্রান্তি দল একবার টাঙ্গাইলে গান গাইতে যায়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে সবাই মিলে হায়দার আকবর খান রনোকে বলে যে তারা মাওলানা ভাসানির সাথে দেখা করতে চায়। রনো সাহেব তাদের নিয়ে চলে যান সন্তোষে মাওলানা ভাসানির সাথে দেখা করতে। মাওলানাকে ঘিরে সবাই বসে আবার গান গাওয়া শুরু করে। মাওলানা মনোযোগ দিয়ে শুনে সব গুলা গান। পরে তিনি সবাইকে চা নাস্তা দিয়ে আপ্যায়ন করেন। গান নিয়েই আলোচনা চলতেছিল। আলোচনার এক পর্যায়ে ভাসানি তাদের বলেন, গান তো ভালই, মুশকিল হচ্ছে এই গান বুঝতে হলে তো কৃষকের বিএ পাস করতে হবে আর না হয় রনোকে যেতে সব জায়গায় এই গানের অর্থ বুঝিয়ে দিতে! এই উদাহরণটা দিলাম কারণ আমাদের প্রায় সব ক্ষেত্রেই এখনও একই অবস্থা। বিপ্লব করব কী। আমরা তো ভাষাই জানি না কৃষকের! প্রচুর প্রগতিশীল মানুষ, সৎ মানুষ, আক্ষরিক অর্থেই ভাল মানুষ, মানুষের ভাল চায় এমন মানুষ জানেই না সাধারণ মানুষের ভাষা! ঢাকা কেন্দ্রিক সব, এখন আরও বিপদ হচ্ছে অনলাইন বা ফেসবুক কেন্দ্রিক কাজকাম! মানুষ ভুলেই গেছে ফেসবুক বাংলাদেশ না। ফেসবুকের বাহিরে পুরো বাংলাদেশই পরে আছে, যাদের নিয়ে কারও কোন মাথা ব্যথা নাই। যারা এর বাহিরে কাজ করতে চায় তারা সাধারণ মানুষের ভাষাই বুঝে না, কাজ কী করবে? এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে কুসংস্কারে খাচ্ছে, ধর্মান্ধতা খাচ্ছে, অশিক্ষায় খাচ্ছে, অপসংস্কৃতি খাচ্ছে। আমাদের ঢাকা কেন্দ্রিক নেতৃত্ব শাহবাগে মানব বন্ধন করে কর্তব্য পালন করছে। আমরা এদিকে হারিয়ে যাচ্ছি অতলে। ... ...
গোদার নিয়ে বঙ্গীয় সিনেফিলদের আকুল হবার কোনো কারণ নেই, কারণ গোদার আমাদের রক্তে, একদম হিমোগ্লোবিনে ঢুকে ছানা কেটে দিয়েছেন। মারাদোনার বাঁ পা যেমন আমাদেরই বাঁ পা, চিনের চাউমিন যেমন আমাদেরই চাউমিন, বিলেতের কোহিনুর যেমন আমাদেরই কোহিনুর, গোদার তেমনই আমাদেরই ফরাসি আতর। প্যারিসে নাকি প্রবাদ আছে, "জনপ্রিয়তায় হাঁদাভোদার, পরেই আছেন জাঁ লুক গোদার"। গোদার আমাদের যৌবনের উপবন, বার্ধক্যের বৃদ্ধাবাস, গোদার আমাদের আরামের পান্তাভাত, গোদার আমাদের বাড়ি ফেরা। গোদারের বাড়িই আমাদের বাড়ি, গোদার বাড়ি। ... ...
নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্যে হুজুগ করে এসব না খাওয়াই ভালো, জীবনে কখন কী যে হয় কে বলতে পারে? ... ...
এই ডবল ডোজের গোবর খেয়ে মহাভারতের শুদ্ধতা না হয় ফিরিয়ে আনা গেল, কিন্তু বাংলার পোড়া পেটের শুদ্ধতা বাঁচে কি করে? অফিসের ক্যান্টিনের খাবার টিফিন হিসেবে চলতে পারে, কিন্তু কালা ছোলে (আলকাতরার মধ্যে চাট্টি সেদ্ধ ছোলা ফেলে দিলে যেমন দেখায়) দিয়ে লাঞ্চ? অনেকে যেমন খায়, তেমনি পেপসি বা কোকাকোলা সহযোগে? নাঃ, অমন সাঙ্ঘাতিক ফিউশন আমার চলবে না। অতএব তিন কোর্সের লাঞ্চ চালু করলাম – ভাত, ডাল আর অমলেট। আমার আর তথাগতর সঙ্গেই এই অফিসে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতার এক বাঙালি – দাশগুপ্ত। কালা ছোলে দিয়ে লাঞ্চ করতে বিরক্তি প্রকাশ করায় তাঁকে আমার মেনু সাজেস্ট করেছিলাম। তিনি নাক সিঁটকে বললেন, “অমলেট! সেটা তো লোকে ব্রেকফাস্টে খায়”। ... ...
আমি শুরুতে ছিলাম, বুর্জোয়া চলচ্চিত্র পরিচালক, তারপর প্রগতিশীল পরিচালক, তারপর এখন আর চিত্র পরিচালক নই; বিপ্লবী, চলচ্চিত্র কর্মের কর্মী বিশেষ, যখন কর্তব্য-কর্ম হিসাবে রাজনৈতিক কর্ম শিখতে হয়েছে ... ...
এমন খবরের আগমনী নানা জায়গায় নানা সুরে বাজে, কিন্তু বস্তুত তার শরীরটি এই তিন শব্দেই গড়া, সর্বত্র - তিনি আর নেই। জানান দিয়ে, সে ইতস্তত করে একটু, দাঁড়ায়। চারদিক দ্যাখে, মাটি দ্যাখে, আর সবশেষে মানুষ দ্যাখে। ওই, দূরে দাঁড়িয়েই। কাছে এসে, ঝুঁকে পড়ে খবরের চ্যানেলের মতো জিজ্ঞেস করে না, "আপনার প্রতিক্রিয়া কী এতে?" ... ...
এটা ছোটদের গল্প নয়। এটা একজন ছোট্ট মানুষের গল্প। নাম তার সাবু। সাবুকে আমরা এই ৫ পর্বের খুদে গল্পে খুঁজে পাই বয়ঃসন্ধির গোড়ায়। তার পৃথিবী বদলে যেতে দেখি আকস্মিক পরিবর্তনের ঝড়ে। তার কিশোর হৃদয়ে জাগতে দেখি নতুন অনুভুতি - হারানোর নীরব বেদনা, হেরে যাওয়ার ভয়, ক্ষোভ, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। কিন্তু সব ছাড়িয়ে দেখিয়ে সাবুর কোমল মনে জীবনের প্রতি ভালবাসা। ... ...
কোথায় ভয়? কোথায় উদ্বেগ? কিসের চিন্তা? দুটোয় মিলে সে কী সাঙ্ঘাতিক লুটোপুটি খেলা মাঝ আকাশে – এই ধাওয়া করছে একে অন্যকে, এই পাল্টা আক্রমণ, এই দু'দিকে ছুটে গিয়ে আবার একে অন্যের গায়ে এসে ধাক্কা খাওয়া। ... ...
দেবরাজ ইন্দ্র অসুর ও দৈত্যদের সঙ্গে যুদ্ধে প্রায়শঃ পরাজিত ও স্বর্গ থেকে বিচ্যুত হয়ে পরিত্রাণের জন্য ত্রিদেবের শরণ নিয়ে থাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে দেবী পার্বতীর কোলে থাকা একটি শিশুকে বধ করার জন্য তাঁকে প্রথমেই হাতে বজ্র তুলে নিতে হল! আবার শিশুরূপী দেবাদিদেবের হাতের ইশারায় তিনি একেবারে জড়বৎ পুতুল হয়ে গেলেন! দেখা যাচ্ছে ভাগবত এবং শৈব - উভয় পুরাণকারই সুযোগ পেলে বৈদিক দেবরাজ ইন্দ্রকে অপদস্থ করতে দ্বিধা করেননি। ... ...
আন্দালীব কত বড় কবি সেই হিসেব কোনদিন করতে বসি নি – কারণ তার থেকেও বড় অজুহাত আমার কাছে ছিল তার কবিতার নিয়মিত পাঠক হবার। ভাবতাম মাঝে মাঝেই – আহা, এমন যদি লিখতে পারতাম! সেই ছিল আমার কাছে আমাদের সেই সময়ের কবিতার ‘কমলকুমার’ যেন। তুলনাটা হয়ত ক্লীশে হয়ে গেল, কিন্তু এমন সাযুজ্যের তুলনা আর মাথায় আসছে না এই মুহুর্তে। বলতে দ্বিধা নেই যে এমন সময়ও গেছে যে আন্দালীবের কোন কবিতা প্রথমবার পড়ছি, কেবল কবিতা পড়ার ঘোরেই – সে এক প্রবল আকর্ষণ, কত অজানা শব্দের ঝঙকার, কত চেনা শব্দের অচেনা প্রয়োগ – বিমুগ্ধ করে রাখত আমাকে। ... ...
তাঁরা দুঃখেষু অনুদ্বিগ্নমনা সুখেষু বিগতস্পৃহঃ। চা খেতে খেতে তাদেরই এক জন বললেন, "ইহার পূর্বে কি কোনও কেলেংকারি ঘটে নাই এই দেশে ? রাজনীতিকরা কি অভিযুক্ত হন নাই পূর্বে ? সে সকল লইয়া প্রবল তদন্ত হইয়াছে এবং তাহা যে অতি বৃহৎ গ্রিন ব্যানানা ব্যতীত অন্য কিছু প্রসব করে নাই, তাহা বুঝিতে চিন্তন বৈঠক নিষ্প্রয়োজন। অতয়েব, হে অর্বাচীন, তুমি নিশ্চিন্তে পানভোজনে নিরত থাক এবং বাহুমূলকে বাদ্যযন্ত্র রূপে ব্যবহার কর।’’ ... ...
কিভ নগরীর উত্তর পশ্চিমে একটি শহরতলির নাম ইরপিন । সেখান থেকে আর পাঁচ কিলোমিটার গেলেই বুচা । আমরা জানি ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম দিকে এই অঞ্চলে রাশিয়ান সৈন্যরা নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপরে অকথ্য অত্যাচার, বলাৎকার এবং লুণ্ঠন চালিয়েছে । বুচার রাজপথ ভরে গেছে শবে। মহামান্য লাভরভ বলেছেন ইউক্রেনের মানুষ নিজেদের লোককে মেরে আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে । আমাদের সৈন্য ভদ্র শিক্ষিত মার্জিত। রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে এ আরেকটি পশ্চিমি চক্রান্ত।রাশিয়ানরা এই রণক্ষেত্র ত্যাগ করে আজ অনেকটা পুব দিকে চলে গেছে। রেখে গেছে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরবর্তী কালে ইউরোপের মাঝে অনুষ্ঠিত ক্রুরতম ধ্বংস ও হত্যালীলার ইতিহাস। ... ...
আজকে শিক্ষক দিবসে ... ...
ঠাকুরের কথা, "মানবগুরু মন্ত্র দেন কানে, জগৎগুরু মন্ত্র দেন প্রাণে।" সেই সকল মানুষ – যাঁদের মধ্য দিয়ে কথায়, লেখায়, সুরে, কাজে জগৎগুরু, পরম আমাদের প্রাণে সৃষ্টির বার্তা পাঠিয়ে চলেছেন – সব্বাইকে আমার শ্রদ্ধা জানাই আজকের দিনে। ... ...
ব্রজরাজ নন্দ, তাঁর দুই রাণি – রোহিণী ও যশোদা, বলরাম (যিনি বিষ্ণুর অংশ-অবতার) এবং ব্রজের সকল গোপ ও গোপীগণ স্বর্গ থেকে আবির্ভূত, তাঁরা কৃষ্ণের আগে জন্ম নিয়েছিলেন, শিশু ও বালক কৃষ্ণকে লালন-পালনের জন্য। রাজা কংসের চোখে ধুলো দিতে, কৃষ্ণের সঙ্গে একই সময়ে আবির্ভূতা হয়েছিলেন, দেবী যোগমায়া। দেবরাজ ইন্দ্র স্বর্গের এই সব সংবাদ কিছুই জানতেন না? কেমন দেবরাজ তিনি? নাকি পুরাণকারেরা কাহিনী কল্পনার সময়, এই দিকটি খেয়াল রাখেননি? নাকি অনার্য বা হিন্দু দেবতার কাছে বৈদিক দেবরাজের লাঞ্ছনার ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত ভাবেই উপস্থাপিত করেছেন? ... ...