অন্ধকার রাতে পাঁচিল টপকে কারো বাসায় অনধিকার প্রবেশ ভালো কথা নয়। হীন কোন উদ্দেশ্য থাকলে তো নয়ই। জয়ন্তবাবুর উদ্দেশ্যটা কী, তা বলা যাচ্ছে না, এমনকী তার নিজেরও এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোন ধারণা নেই। যে তীব্র মনোবেদনা, অভিমান, লাঞ্ছনা গঞ্জনার সার তার হৃদয়ের গহীনে জমে আছে পলির মত, সেগুলোই যে তাকে এখানে টেনে এনেছে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কিন্তু তিনি কী উদ্দেশ্যে এসেছেন, কী করবেন বা করতে যাচ্ছেন তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। স্মৃতিশক্তি যতদূর যায়, যতদূর স্মৃতির দূরবীনে চোখ রেখে ফেলে আসা দিনগুলিকে দেখা যায়, তার ... ...
কাঁচির ক্যাঁচক্যাঁচ শুনতে শুনতে আমি খালি ভেবে যাচ্ছি কত গুণতে হবে, আর হেব্বি টেনশন হচ্ছে, যদিও যথেষ্ট টাকা এনেছি সাথে। টেনশন কাটাতে টেনিদার ‘দি গ্রেট ছাঁটাই’ গল্পের সেলুনের নামগুলো মনে করার চেষ্টা করলাম - ওঁ তারকব্রহ্ম সেলুন, বিউটি-ডি-সেলুনিকা, সুকেশ কর্তনালয় – শেষেরটার একটা ইংরেজী নামও ছিল, সেটা মনে পড়ল না। ... ...
২২ মার্চ, ২০২০-র প্রতীকী জনতা কার্ফু (যা আসলে প্রয়োজনীয় লকডাউনের মহড়া ছিল) এবং ২৩ মার্চ থেকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সহ ২২টি রাজ্যের ৭৫টি জেলায় পূর্ণ লকডাউন একান্ত প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ। এর জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাবো। সর্বেশেষ খবর অনুযায়ী, শেষ অব্দি সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ লকডাউনের আওতায় চলে। ১৯ মার্চ গুরুচণ্ডালীর পাতায় আমি করোনাভাইরাস নিয়ে যে লেখাটি লিখেছিলাম সেখানে সামাজিকভাবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার চেইনটি কেটে ফেলার জন্য (অর্থাৎ স্টেজ ২ থেকে স্টেজ ৩-এ যাওয়া) ব্যক্তিদের গৃহবন্দী করে রাখা এবং “সেলফ-আইসোলেশন”-এর কথা উল্লেখ করেছিলাম। সরকারের এই উদ্যোগ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক বিপর্যয়কে মোকাবিলা এবং এড়ানোর জন্য একটি কার্যকরী পদক্ষেপ হবে ভরসা রাখছি। গতকালের (২২ মার্চ, ২০২০, হু-র সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে – ২৯২,১৪২ জন সংক্রমিত (নতুন সংক্রমণ ২৬০৬৯), মৃত্যু ১২,৭৮৪ জনের। হু-র বয়ানে - Four new countries/territories/areas from the African Region have reported cases of COVID-19. একই সাথে হু-র বয়ানে - There has been a rise in criminals disguising themselves as WHO to steal money or sensitive information. একে আমরা কোল্যাটারাল ড্যামেজ বলেও ধরতে পারি। ... ...
পাকিস্থানের লাহোরে জঙ্গীদের দ্বারা সংগঠিত আরেকটি বড় মাপের জঙ্গীহানা সারা বিশ্বের মানুষকে বেদনায় বিষ্ময়ে হতবাক করে দিয়েছে। ঘটনার প্রাথমিক বিহ্বলতার ধাক্কা সামলে বিভিন্ন মহল থেকে এই নারকীয় ঘটনাকে নানাভাবে বোঝা, বিশ্লেষণ করার চেষ্টা চলছে। এই ধরণের নারকীয় সন্ত্রাসের সমাধান কীভাবে হতে পারে তা নিয়ে আলাপ আলোচনা তর্ক বিতর্কও জারী আছে। কেউ তালিবানদের মৌলবাদী কট্টর শরিয়তি আইন নির্ভর ইসলামিক রাষ্ট্র স্থাপনের জন্য মরীয়া চেষ্টাকে এই ঘটনার কারণ হিসেবে বুঝতে চেয়েছেন, কেউ বা ধর্মীয় দিকটিকে তুলনায় গৌণ মনে করে পা ... ...
পাঞ্জাবের শহীদ নকশাল কবি অবতার সিংহ সন্ধু 'পাশ' - এর দু-টুকরো অসামান্য কবিতার বঙ্গানুবাদ। ... ...
কোন পুরুষ যদি প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়েই দ্বিতীয় বিয়ে করে, মদ বা জুয়ার নেশায় নিমজ্জিত হয়, যৌনরোগে আক্রান্ত হয়, পুরুষত্বহীন হয়ে পড়ে বা সাংসারিক খরচাদি মেটাতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে সংক্ষুদ্ধ স্ত্রীটি যেন তার স্বামীর বিরুদ্ধে সরাসরি ও স্বাধীনভাবে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন শুরু করতে, সেই সুযোগ আদর্শ বিবাহ চুক্তিটিতে রাখা হয়েছিল। মেয়েদের জন্য মুখলিসার এই সংগ্রামকে নিশ্চিতভাবেই প্রভাবিত করেছে তার নিজের জীবন। , নিজের মোল্লা স্বামীর সাথে কিছুতেই বনিবনা হচ্ছিল না। অথচ প্রায় বিশ বছর তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল বিচ্ছেদ কার্যকর করতে, অনিচ্ছা সত্বেও করতে হয়েছে স্বামীর ঘর। ... ...
অরিন্দম দেখে, মাওবাদী কমান্ডোদের জংলা পোশাক, কালো টুপি পরা এক যুবক কাঁধে এক সেল্ফ লোডেড রাইফেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই যুবকই সিংরাই মান্ডি ওরফে জয়ন্ত ওরফে ফড়িং! হাঁ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে অরিন্দম। কানে আসতে থাকে রাজ্য পুলিশের ডিজির কথা, ‘তিন রাজ্য মিলে খুন, নাশকতা সহ অন্তত ৫০ টি মামলা রয়েছে সিংরাইয়ের নামে। তাকে গ্রেফতারের জন্য বাংলা এবং ঝাড়খন্ড সরকার মিলিয়ে ৪০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এই রাজনীতির ভুল বুঝতে পেরেছে সে। তাই সে সমাজের মূলস্রোতে ফিরে এসেছে...।’ ... ...
ঘরে ঢুকে দেখি নীচু হয়ে পায়ের পাতায় কী একটা লাগাচ্ছেন। সামনে হোমিওপ্যাথির বাক্স খোলা। জিগেস কল্লাম, "পায়ে কী হল?"- আর বোলোনা। কাল জন্মদিন ছিল। এত লোক এসে প্রণাম করেছে যে পায়ের পাতা ছড়ে গেছে। ওষুধ লাগাচ্ছি।- কেক খেলেন জন্মদিনে?- কেক? না না। কেক-টেক নয়। বউমা পায়েস করেছিল, তাই একটু খেয়েছি।- আর কে এল?- কে এলনা সেটা জিগেস কর।আমি ইতস্ততঃ করছিলাম। একশ সাতান্ন বছর তো পূর্ণ করলেন, বয়েসে অনেকটাই বড়। কী বলে ডাকব? দাদু? কীরকম যেন চ্যাংড়া চ্যাংড়া শোনায়। গুরুদেব? বললেই ... ...
রবীন্দ্রে গদগদ নজরুলে থতমত #প্রয়াত গায়ক ভুপেন হাজারিকার একটি গানের কথা খুব মনে পড়ে। না পড়লেও চলত, তবে মনে পড়ে। খুব সম্ভবত শিবদাস বন্দোপাধ্যায়ের লিরিক। 'সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ চেতনাতে নজরুল'। এটা বাংলা আধুনিক গান হিসেবে শুনতে মধুর।রবীন্দ্রনাথকে অ্যাসেট বানিয়ে ফেলেছিল আমবাঙালি নিজের মানসিকতার স্বার্থে। রবীন্দ্রনাথের কেবল বহুমুখী প্রতিভা ছিল, আর সমসময়ে তেমন কারুর ছিল না, এই বিভ্রান্তিকর ভাবনা ছিল বাঙালির প্রতিষ্ঠান ভজনার চিরন্তন রীতি ও প্রীতি। রবীন্দ্রনাথ নিজে এ ব ... ...
শুনছি খবরের কাগজ করোনা ভাইরাস ঘরে এনে দিতে পারে। কিন্তু যিনি আছেন তার রোজ সকালে চা এবং পাঁচটি খবরের কাগজ নিয়ে না বসলে জীবন অপূর্ণ থাকে। আমার কথায় অনেক কিছু ছেড়েছেন, এটা ছাড়লে ওঁর চলবে না। ... ...
নেতি, একটি অবস্থান। যা দার্শনিকও বটে। কখনও কখনও তা অতি জরুরি অবস্থান, ও রাজনৈতিক ভাবে যথাযথ। কেবলমাত্র বিরোধিতার মধ্যে সুপ্ত থাকে অসংখ্য ইতিবাচক সম্ভাবনার ইঙ্গিত। সেই সম্ভাবনাগুলিকে ছুঁয়ে থাকার জন্য রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। অতিক্রম করতে হয় ক্ষুদ্রতর প্রেক্ষিতের সীমানা। ... ...
আমি বাচ্চাদের খুব ভালোবাসি,স্ট্যালিন কে যেরকম ক্রুশ্চেভ ভালোবাসতেন,ঠিক সেই রকম।আমার অভিজ্ঞতা বলে যে বাচ্চারা আদতে দুরকমের হয়,একদল বাচ্চা যারা অনায়াসে অন্যের কোলে উঠে পড়ে এবং বেশ শান্ত শিষ্ট থাকে।আরেকদল শিশু,যারা গর্ভাবস্থায় সানি দেওলের সিনেমা দেখে জন্মায়,তারা হাতের কাছে কাউকে পেলেই খামচে দেয়।আমার কপালে এই দ্বিতীয় শ্রেণীর বাচ্চাই বেশী জুটেছে।আমার আবার একটি বদ অভ্যেস আছে,সেটি হল বাচ্চা দেখলেই তাকে সূযোগমত মুখ ভ্যাংচানো। এবং এই মুখ ভেংচে আমি এক ধরণের জাতিগত প্রতিশোধের তৃপ্তি অনুভব করে থাকি,বাঙাল কে ... ...
খুব শান্তি পাই, যখন দেখি কালচারগুলো মিলে যাচ্ছে।বিধর্মী ছেলের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছো শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত। দুটি হাত ছোঁয়া সংবেদী বিন্দুতে ঘটে যাচ্ছে বনমহোৎসব। দুটি ভিন্ন ধর্মের গাছ ভালোবাসার অক্সিজেন ছড়িয়ে দিচ্ছে। যেন খেজুর বটের অপার আত্মীয়তা।মায়ের শাড়ি পরে এসেছো তুমি। ব্রাক্ষ্মণ রমনীর খুঁতখুঁতে গন্ধ লেগে আছে তাতে। সেই শাড়ি বারবার ছুঁয়ে যাচ্ছে আমার পাঞ্জাবির হাতায়। তোমার মায়ের মুসলিম বিদ্বেষে সন্তানসুলভ শ্রদ্ধা রেখে যাচ্ছে আমার নাজুক মুসলমানি...।লেকের একটুকরো ... ...
অনতিদূরে দেখতে পেলাম, মিন্টু ভাইয়ের বাইক। গ্রামের একটি স্কুলের একুশ না, বরং ঐ বাইকটি আমায় আগ্রহী করে তুলল। তো সেই ভাঙ্গাচোরা স্কুলে গিয়ে যা ভেবেছিলাম, তা-ই দেখতে পেলাম- কোন শহীদ মিনার নাই। সাজসজ্জা নাই। মঞ্চ নাই। মনে মনে একটু হাসলামও। শহরের সেই বক্র হাসি, যা একান্ত স্বভাবজাত ও চিরাচরিত। ... ...
রাত বারোটা আটাশ মিনিট এবং আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় একটি অর্ধ নির্মিত, ভগ্ন দশাগ্রস্ত চেহারার বহুতল ভবনের পাশে। তখন বৃষ্টি নামল আকাশ ভেঙ্গে। বড় বড় ফোঁটায় নামল ঝমঝম করে। আমি দৌড়ে গিয়ে বিল্ডিংটার বারান্দায় আশ্রয় নিলাম। শহর যেন থেমে গেছে আমার মনে হলো। বৃষ্টির বড় ফোঁটাগুলিকে আমি রাস্তায় পড়তে দেখছিলাম। ছোটবেলা থেকেই আমার মনে হয় প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা মানুষকে স্পর্শ করার জন্যই আসমান থেকে লাফ দেয়। এর মাত্র ক্ষুদ্র একটি অংশ তাদের উদ্দেশ্যে সফল হয়। আর বাকীরা স্থলে পড়ে, ... ...
ঈশ্বরী আমাদের মধ্যেই মিশে থাকেন। ঘরের কাছে আরশিনগরে তাঁকে ধরি ধরি ধরিতে না পারি, শুধু আঁচলের আভাসুটুকু রয়ে যায় মানসপটে। ... ...
অবশ্য শুধু রান্না কেন, জুঁইএর শেখা সেলাই ফোড়াই-ই বা কোন কাজে লাগল! বিয়ের পরের অনেকগুলো দুপুর না ঘুমিয়ে ফ্রেঞ্চ নটের গোলাপফুলে সাজিয়ে তোলা বিছানার চাদর বিছিয়ে সবাইকে চমকে দিতে চেয়েছিল একবার। শুনেছিল, "ভালোই, তবে এ ঘরের মিনিম্যালিস্ট ডেকরের সঙ্গে যাচ্ছে না।" উলের কাঁটা, কুরুশের সুতোর গুলি এরপর আর বাক্স থেকেই বেরোয় নি। বাবুই এর ঈষৎ অনিচ্ছুক মুখটার দিকে তাকায় জুঁই। ভাবে, আমি ওকে যা শেখাব, সেগুলো ওর ও কি কোনদিনই কাজে লাগবে? ... ...
বাঁশের তীর ধনুক দিয়ে পাখি মারার পর্যায়ের বয়সটা সবে শেষ করে মোড়লদের বাগানে নেউল কামারের তৈরী কাঠের ব্যাট নিয়ে ক্রিকেট খেলায় ঢুকেছি আর ঠিক তখনই প্রথম ঝটকাটা লাগল। সেই তখনও পর্যন্ত আমার মূল কৌতূহল সাধারণত খাদ্য বস্তুর ভিতরেই সীমাবদ্ধ ছিল। আনন্দমার্গ স্কুল থেকে সুবল কাকা সাইকেলে করে বাড়ি নিয়ে আসার সময় খালের মিষ্টির দোকানে পেটা সন্দেশ আমার বরাদ্দ ছিল। তৎকালীন বয়েসে আমি বেশীর ভাগ ভাবনাটাই কেন্দ্রীভূত করেছিলাম এটা বের করার জন্য যে পেটা সন্দেশ এ্যাতো ভালো খেতে হয় কেন! জ্যাঠা কলকাতা থেকে হালখাতার সময় মহা ... ...
পুলিশ ! ওরে পুলিশ! (শেষ কিস্তি) ৩১ ডিসেম্বরের রাত। মাঝরাতে নববর্ষ বরণ। মোবাইলে নেমন্তন্ন পেয়ে গি্ন্নি ও বাচ্চাদের চোখ এড়িয়ে ঠিক সময়ে পৌঁছেচি গজ্জুশেঠের হোটেলে।প্রায় সমবয়সী শেঠজি আমার বন্ধু। জড়ো হয়েছি আমরা ক’জন, প্রায় জনাদশেক; কেউ ফক্কড়কবি বাবা নাগার্জুনের চেলা, তো কেউ কবি সম্মেলন আলো করা গোপালদাস নীরজের। তবে সবকটাই একলব্য–শিষ্য; গুরুর সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচয় নেই কিন্তু শিষ্য বটেক, খানিকটা বিদ্রোহী নাগাদের স্বঘোষিত কম্যান্ডারের মত। একটা হলঘরের মেজেতে গদির ওপর বিছানা পাতা।হেলান দ ... ...