“ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের রাজত্বকালে …” ফ্ল্যাশব্যাক! ক্লাস সিক্স, প্রাচীন যুগের ইতিহাস পড়াচ্ছেন শঙ্করবাবু, তাঁর উদ্যত ডানহাতের তর্জনী আর মধ্যমার সঙ্গে হাই পাওয়ারের চশমার আড়ালে ঘোলাটে চোখ ঘুরে চলেছে ঘরের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত, বাঁহাতে ধরা বই যা তাঁর তেমন কোনো কাজে আসে না সিলেবাস মিলিয়ে নেওয়া ছাড়া, সবই যেন তাঁর কন্ঠস্থ! আমাদের উৎসুক মনের সঙ্গে পরিচয় করাচ্ছেন সাড়ে চার হাজার বছরের পুরনো এক সভ্যতার, মিশর নামের দেশে যার উৎপত্তি। খুফু, সেতি, রামেসিস, নেফারতিতি, হ্যাৎসেপশুট নামগুলোর সঙ্গে পরিচয় ঘটছে, পরিচয় ঘটছে অদ্ভুত এক লিপির, ফুল, পাখি, সূর্য এসব দিয়েই যার অক্ষর, শব্দ, বাক্য গড়ে ওঠে! তার নাম হায়রোগ্লিফ! ক্লাস শেষ হতে লাইব্রেরী তন্ন তন্ন করে রেফারেন্স বই ঘেঁটে চলেছি যদি কোথাও কোনো সূত্র পাওয়া যায় এই লিপি শেখার আর নিজের নাম লিখে ফেলার, সাংকেতিক অক্ষরে! হায় রোসেটা পাথর, তোমার নাম সে বালখিল্যরা তখনও শোনে নাই, শোনে নাই শাম্পোলিয়ন বা থমাস ইয়াং-এর নাম! তার জন্যে অপেক্ষা আরও প্রায় বিশটা বছর! আর সামনে থেকে সত্যিকারের সেই দেওয়াল-ভরা রঙচঙে লিপি দেখা – আরও বছর দশ! ইতিহাস বই-এর পাতা থেকে সারি দিয়ে তিনটে পিরামিডের সামনে মধ্যমণি হয়ে বসে থাকা স্ফিঙ্কস স্বপ্নের জাল ছিঁড়ে কোনোদিন ঘোর বাস্তবে নেমে এসে চোখের সামনে ধরা দেবে, ছুঁয়ে দেখবো তাদের, ভাবিনি তো! ... ...
স্রোংচান গামপোর সময় তিব্বত সাম্রাজ্য সবচেয়ে বড় আকার ধারণ করে। নেপালের রাজকুমারী ভৃকুটি এবং চীনের রাজকুমারী ওয়েনচেঙের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক তিব্বতের সাথে এই দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ককে দৃঢ় করে। আর এই দুই রাণীর হাত ধরে তিব্বতে প্রবেশ করে বৌদ্ধ ধর্ম। ... ...
Love Soniyaনন্দন টুতে তখন পর্দাজোড়া একটা নিষ্পাপ বালিকামুখ, যে দেখছে উর্দিপরা পুলিশের সঙ্গে ব্রথেল মালিকের দোস্তির কারণে পালিয়ে গেলেও আবার পুলিশ তাকে ফিরিয়ে এনেছে সেই নরকেই। ।গায়ের রঙ কালো ব'লে প্রথমে তাকে শিখতে হয় ওরাল সেক্সের নানা রকম, যার ফলে ঠাকুর্দার বয়সী একজন ঘরে এসে দাঁড়ালে সে রিফ্লেক্সজনিত কারণে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে মেঝেতে। 'সিল' ইন্ট্যাক্ট, এই আনন্দে কৃষ্ণত্বকের দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে প্রথমে তাকে মুম্বাই থেকে পাচার করা হয় হংকং, তারপর লস এঞ্জেলস। হাজার হাজার মাইল সে পাড়ি দেয় আক্ষরিক অর ... ...
দুরিয়ান কাঁঠাল প্রজাতির ফল, আর দেখতেও অনেকটা কাঁঠালের মতই। দুরিয়ান খাবার জন্য মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, থাইল্যান্ডের কিছুটা, কিছু ইন্দোনেশিয়া – এরা সব পাগল। সেই উন্মাদনার কাছাকাছি বাঙালীর কোন কিছু খাবার বিষয়ক উন্মাদনা আসতেই পারে না, বাজারে হিমসাগর উঠলে আমরা এই ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা ভাবতে পারি না। কথিত আছে যে প্রাক মোবাইল যুগে বাজারে দুরিয়ান ওঠার খবর রেগুলেট করা হত সরকারী অফিস বা হাসপাতালে, বা ব্যাঙ্কে বা স্কুল-কলেজে। ডাক্তার নাকি অপারেশন থামিয়ে দুরিয়ান কিনতে ছুটছে যেই শুনেছে বাজারে দুরিয়ান উঠেছে – স্কুল-কলেজে টিচার হাওয়া! এখন হোয়াটঅ্যাপ এসে যাওয়ায় আর রেগুলেট করা যাচ্ছে না খবর চাওড় হওয়া। তাই সরকার নাকি ভাবছে কেবলমাত্র ওয়ার্কিং-আওয়ারসের বাইরের দুরিয়ান বিক্রী করতে দেওয়া হবে ওপেন মার্কেটে! ... ...
তখন আমি ছিলাম দারুণ গরীব এবং দারুণ সুখী, হেমিংওয়ের মতো বলতে পারলে ভালো হতো; কিন্তু সত্যিটা এটাই, পকেটে পয়সা না থাকাটা বেশ কষ্টকর ব্যাপার। তখন আমি থাকতাম ডাউনটাউন ব্রুকলিনের একটা বেসমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টে। আমার বাথরুমটা ছিল নিজস্ব আর শুধু এইটুকুর জন্যে আমি ঐ ঘুপচি অ্যাপার্টমেন্টটা ছাড়িনি। অনেকরকম ছোটখাটো কাজ করতাম আমি, যার মধ্যে রেস্তোরাঁয় বাসন ধোয়া থেকে শুরু করে ডেলিভারি সবই ছিল। কখনও কখনও বেশ অদ্ভুত কাজে জড়িয়ে পড়তাম। ... ...
ফলত, এই ২০১১ থেকে আফগানিস্তানের দুর্গম গ্রামগঞ্জ ভরে যেতে শুরু করে খোঁড়া, কানা, বিকলাঙ্গ মানুষে। এছাড়াও মাটির নিচে জমতে থাকে লাশ। আর কচি কচি বাচ্চারা ফুঁসতে থাকে প্রতিশোধের আকাঙ্খায়। তালিবান এদের হাতে অস্ত্র দিয়েছিল। মার্কিন বাহিনীর প্রতিটি বন্দুকের গুলি, প্রতিটি খুন, প্রতিটি সম্পত্তি নষ্ট, প্রতিটি ড্রোন আক্রমণ, এভাবেই জন্ম দিতে থাকে আরও অনেক অনেক তালিবানের। তারা তখন লড়ছিল প্রতিশোধের লড়াই। আর মার্কিনীরা কোনোক্রমে স্থিতাবস্থা বজায় রাখছিল। ... ...
রোপ (১৯৪৮) ফিল্ম শুরু হয় একটি খুনের মাধ্যমে। ব্র্যান্ডন শ এবং ফিলিপ মর্গান নামের দুই যুবক তাদের সাবেক এক সহপাঠীকে গলায় দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে। তাদের এই খুনের কারণ একটাই। তারা মনে করে তারা আলাদা। পৃথিবীর সব নৈতিকতার বাইরে। এবং তারা এই খুনকে মনে করে পারফেক্ট মার্ডার এবং তাদের খুনের উদ্দেশ্য পারফেক্ট মার্ডার সম্পন্ন করে পার পেয়ে যাওয়া। ব্র্যান্ডনের মতে মার্ডার একটা আর্ট তাদের জন্য, তারা অন্যদের চাইতে সুপিরিয়র এবং ইনফিরিয়রদের তারা এভাবে খুন করতেই পারে ... ...
একদিকের সবুজ ঘাসেভরা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ভাই অনেকটা উঠে গিয়েছিল, পেছন পেছন আমিও। মা নীচ থেকে আমাদের নাম ধরে পরিত্রাহী চীৎকার শুরু করে নেমে আসার জন্য। সেজমামার হইহই হাসি, ছোট্ট বোনটার একদিকে আমাদের সাথে যাবার ইচ্ছে আরেকদিকে বাবা মা’কে ছেড়ে উপরে ওঠার দ্বিধা, প্রথম বরফ দেখার উচ্ছাসে কলকল করে সবাই মিলে একসাথে কথা বলা। দুপুর পার করে মানালি ফিরে কোথাও ভাত না পেয়ে হোটেলের দোতলার বারান্দার গা লাগোয়া আপেলগাছ থেকে আপেল পেড়ে কচমচিয়ে খেয়ে ফেলা, গোল্ডেন আপেলও সেই প্রথম চেনা ...চৌত্রিশ বছর আগের দিনটা তার তীব্র ঠান্ডা হাওয়া, ঝলমলে রোদ্দুর, সরুমোটা গলার আওয়াজ, হইহই হাসি, সব সঅব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আজ। ... ...
ভাষাদিবসের দিনে এক পুরোনো গালগপ্পো ... ...
অমৃতকুম্ভের সন্ধানে' ঝুমা সমাদ্দার ১"বিরিয়ানি ? সেটা কি বস্তু হে দেবরাজ ?" "আরে, 'পলান্ন' রে, 'পলান্ন', পুরনো বোতলে নতুন মদ ।"ইন্দ্রের রাজসভায় মেনকার প্রশ্ন শুনে শুরুতেই এক দাবড়ানিতে থামিয়ে দিলেন দেবাদিদেব মহাদেব । অমনি লাফিয়ে উঠেছেন নারদ ।"না না, প্রভু, বিরিয়ানি অতি উপাদেয়, একটি অতি অভাবনীয় স্বাদের খাদ্যবস্তু । "" হয়েছে রে বাপু, হয়েছে । ওই একই হলো । যাঁহা বাহান্ন, তাঁহাই তিপ্পান্ন । সেই মাংস মেশানো ভাতই তো ! "" তাই ... ...
আমাকে অংক করাতেন মনীশবাবু। গল্পটা ওনার কাছে শোনা। সত্যিমিথ্যে জানিনা, তবে মনীশবাবু মনে হয়না মিছে কথা বলার মানুষ। ওনার বয়ানেই বলি।তখনও আমরা কলেজ স্ট্রীটে থাকি। নকশাল মুভমেন্ট শেষ। বাংলাদেশ যুদ্ধও শেষ হয়ে গেছে। শহর আবার আস্তে আস্তে স্বভাবিক হচ্ছে। লোকজন একটু-আধটু রাত করে ফিরতে শুরু করেছে। সিনেমা হলে নাইট শোয়ে আবার লোক হচ্ছে। আর এদিকে লোডশেডিং বেড়েই চলেছে। আমরা বলতাম ব্ল্যাকাউট। যুদ্ধের ভাগশেষ। আর সেই সঙ্গে জলের হাহাকার। সকালে ঘন্টাখানেক আর সন্ধ্যেয় ঘন্টাখানেক জল আসে। সেই জমিয়ে সারাদিন চা ... ...
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আসলে কে দায়ী? এইটা আসলেই রয়ের মাস্টার প্ল্যান ছিল? পাকিস্তান সদলবলে ঢুকে পড়েছিল রয়ের চালে? রয়ের নীল নকশা হলে মকবুল বাটের সমর্থনের যুক্তি কী? তিনি খুবই সুপরিচিত নেতা ছিলেন। ১৯৭৬ সালে কাশ্মীরে ঢোকার সময় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। আট বছর ধরে বিচার চলে, তিহার জেলে ফাঁসি হয় মকবুল বাটের। কাশ্মীরিদের কাছে মকবুল বাট এখনও শ্রদ্ধেয়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত নাম। কাজেই এই দিক দিয়েও আসলে প্রমাণ করার উপায় নাই যে এইটা রয়ের পরিকল্পনা। পরবর্তীতে কেউ কেউ বলেন যে হাসিম কুরেশি মূলত ডাবল এজেন্ট, তিনি মকবুলের সাথে বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে ভারতে প্রবেশ করে এবং ধরা খান। তিনি তখন দল বদল করে ভরতের পক্ষে কাজ করে। এবং রয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী গঙ্গার মত পুরান একটা বিমান নিয়ে লাহোর নামে। এখানে প্রশ্ন থাকে যে তখন হাসিম কুরেশির বয়স কত? ১৬/১৭ বছরের একটা বাচ্চা ছেলের উপরে রয়ের মত গোয়েন্দা সংস্থা নির্ভর করবে? বিশ্বাসযোগ্য না। আবার রয়ের বেশ কিছু সাবেক কর্মকর্তা পরবর্তীতে দাবী করেছেন পুরোটাই তাদের পরিকল্পনায় হয়েছে, পাকিস্তানকে ঘোল খাইয়েছে বলে দাবী করে! পাকিস্তান তাদেরকে রয়ের সদস্য বলে বিচার করলেও একজনকে শাস্তি দিয়ে বাকিদের ছেড়ে দেয় কেন জানা যায় না, একজনকেও কয়দিন পরে কেন ছেড়ে দিল কেন তারও কোন উত্তর নাই। দেশদ্রোহীদের এত সহজে কেউ মুক্তি দেয়? তাহলে সত্য কী? কোন দাবীই আসলে নিরঙ্কুশ ভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। ... ...
অনেকদূরের ইতিহাসের গল্প যেন ঝাপসা পর্দার ওপারের অপসৃয়মাণ ছবির মতন, এই কেউ একটু পর্দাটা তুলে ধরলো আর অমনি হাজার-হাজার ঝালর, চৌকি, পাইক-বরকন্দাজ, রাজারাণীর এক অদ্ভুত জগতের একটা টুকরো ঠিক চোখের সামনে। তখন মনে হবে যেন আসলেতে কিছুই অতীত নয়, সময় যেন বিশাল একটা মানচিত্র, এই মুহূর্তটুকু যেন তাতে একটা নিকোনো ঠাকুরদালান, নাটক হবে বলে সেজেগুজে উঠেছে সকাল থেকে। সেই বিস্তীর্ণ রঙ্গমঞ্চে আজকের নাটকঃ ক্যারেনসেবিসের যুদ্ধ। ... ...
যখনই এমন মাধুর্য এসে হানা দেয় জীবনে... তখনই আমরা ভেসে চলি আনন্দে। ... ...
খুকীর বছর পাঁচেক বয়স পর্যন্ত ওরা ছিল কটকে। অধিকাংশ সময় বাবা থাকত না বাড়ী। কোথায় কোথায় সব ট্যুর করে বেড়াত। ট্যুর শব্দটাকে ভারী অপছন্দ করত ও। বাড়ীর খুব কাছে ছিল কাটজুড়ি নদী। বিকেল বেলা পরমেশ দাদা খেলতে নিয়ে যেত সেখানে। বাড়ীতে কেউ এলে সেখানে একটা পিকনিক মত হত। কাটজুড়ি নদীতে চরা-ই বেশী। খুকীর কির’ম ধারণা হয়ে গেছিল নদীর থেকে পুকুরে বেশী জল থাকে। সেই যে সেবার কোন্নগরে বেড়াতে গিয়ে পুকুর দেখতে চাইল আর ... ...
ফাটাও বিষ্টুএবার ফাটাও বিষ্টু, সামনে ট্রেকার,পেছনে হাঁ হাঁ করে তেড়ে আসছে দিঘাগামী সুপার ডিলাক্স।আমাদের গন্তব্য অন্য কোথাও,নন্দকুমারে গিয়ে এক কাপ চা,বিড়িতে দুটান দিয়ে অসমাপ্ত গল্প শোনাব সেই মেয়েটার, সেই যারজয়া প্রদার মত ফেস কাটিং, রাখীর মত চোখ।বাঁয়ে রাখো, বিষ্টুপদ, মেজাজ হারিও না,যতক্ষন হারু আছে জমিয়ে চালাও,সঙ্কেত শুনে নিও, কখন বলছি, 'আস্তে, লেডিজ'এখন দুধারে ধানক্ষেত, পাগলা হাওয়া...তোমার জন্য চালিয়ে দিচ্ছি, ' কি আশায় ... ...
আজ সন্ধ্যার ঝোঁকে মেঘ করে এসেছিল। চৈতালী মেঘ। সঙ্গে এক পশলা ভিজে বাতাস। গ্রীন-ভার্জের আধা শুকনো নারকেল গাছের টঙে বাসা বেঁধেছিল এক গর্ভিণী চিল। ডিম ফুটে কয়েকটা বাচ্চা বেরিয়েছে কিছুদিন হলো । সন্ধ্যেবেলা মা ফিরে না আসা অবধি উদগ্রীব হয়ে থাকে তারা। জীবনের প্রথম ঝোড়ো বাতাসের ছোঁয়া আজ লেগেছিল তাদের ছোট্ট পাঁজরাগুলিতে। ভয়ে জড়সড় হয়ে ক্রমাগত ডেকে যাচ্ছিল সোনালী কিংবা কালো কিংবা বাদামী ডানার মা- চিলটিকে। কেন জানি রহস্য-রোমাঞ্চর কথা মনে পড়ল আজ। ... ...