ওনাকে ভারতের Commercial Art এর জনক বলে গিয়েছেন সত্যজিৎ রায়। মানুষটি ছিলেন স্বদেশীয়ানার "ফ্লেভারে" ভরপুর। Lipton Co. র কাজ হাতে নিয়েছিলেন এই শর্তে -- " আমি কিন্তু স্বদেশী চা বাগানের মালিকের বিজ্ঞাপনও বানাবো সাহেব ! ইচ্ছে হয় আমায় রাখো, নয়ত চল্লুম। " দেশের মানুষের জন্য বিজ্ঞাপন করতেন বিনা পারিশ্রমিকে। ... ...
আরজামাস বলে একটা শহর ছিল। ছোট্ট শহর, অনেক দূরের, অন্য মহাদেশে। অনেক ছোটবেলায় চিনে ফেলেছিলাম। ভৌগোলিক দূরত্ব টের পাইনি।টের পেতে দেননি আর্কাদি গাইদার নামের এক রুশ লেখক। মেদিনীপুর জেলার আদি ও অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির নেতা, কিংবদন্তীপ্রতিম দেবেন দাস, আমার দিদিকে ছোটবেলায় একটি বই উপহার দিয়েছিলেন। বইটির নাম- 'ইশকুল'। লেখকের নাম আর্কাদি গাইদার ... ...
কিছু দিন আগে ‘বেণীমাধব যখন আলিমুদ্দিন: একটি প্যারোডি’ নামে একটি প্যারোডি কবিতা লিখেছিলাম। সেটি নিয়ে কেউ কেউ উচ্ছ্বাস দেখানোয় উৎসাহিত হয়ে (খাঁটি ভাষায় বলতে গেলে বার খেয়ে) ফের আরেকটি প্যারোডি কবিতা। মূল কবিতা সেই আগেরটাই। জয় গোস্বামীর ‘মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়’। এখানে বেণীমাধব হল কিছু বুদ্ধিজীবি। যারা এক সময় বাম অপশাসনের বিরুদ্ধে পরিবর্তন চেয়ে পথে নেমেছিলেন। শাসকের পরিবর্তন এলো। কিন্তু অপশাসনের কোনও পরিবর্তন এলো না। খুন, ধর্ষণ, বিরোধীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, হুমকি, শাসকদলের বিরোধিতা করলে তাকে হে ... ...
গাড়ি ভীমতাল দাঁতের কাছে ছেড়ে দিল। সামনেই তালের মাঝে দ্বীপে একোয়ারিয়াম। এখানেই ভীমতালের প্রধান ঘাট। নানা রকম বোটিং করার জায়গা। রথের মেলার মত ভিড়। পড়ন্ত বেলায় মহিলারা আর বাচ্চারা দলবেঁধে স্কুপ আইসক্রিম খাচ্ছে আর লোকেরা গিয়ে বোটিংয়ের জন্য দরাদরি করছে। উত্তরাখণ্ডে কাফাল বলে একরকম লাল রঙের বেরিজাতীয় ফল পাওয়া যায়। ছোট ছোট লাল লিচুর মত কিন্তু খোসা ছাড়াতে হয় না। ছোট ছোট কাগজের প্লেটে এক এক মুঠো করে সাজিয়ে বিক্রি হচ্ছে। খুমানি [এপ্রিকট], হিসালু [কাফালের মত কিন্তু হলুদ রঙের থোকাথোকা] এসব ফলও সাজিয়ে নিয়ে বসেছে স্থানীয় লোকজন। ... ...
পায়ের নিচে মাটি তোলপাড় হচ্ছিল প্রফুল্লর— ভূমিকম্পর মত। পৃথিবীর অভ্যন্তরে যেন কেউ আছাড়ি পিছাড়ি খাচ্ছে— সেই প্রচণ্ড কাঁপুনিতে ফাটল ধরছে পথঘাট, দোকানবাজার, বহুতলে। পাতাল থেকে গোঙানির আওয়াজ আসছিল। ঝোড়ো বাতাস বইছিল রেলব্রিজের দিক থেকে। প্রফুল্ল দোকান থেকে বেরিয়ে নেতাজি মূর্তির দিকে দৌড়ল। চশমা চোখে টুপি মাথায় ফ্যাটফ্যাটে সাদা নেতাজি সেই কবে থেকে চৌমাথার মোড়ে— হাত, পা, ঘোড়াবিহীন। ছোটবেলায় প্রফুল্ল আর হেমন্ত বাবার হাত ধরে মূর্তির সামনে পতাকা তোলা দেখত; উঠো গো ভারতলক্ষ্মী গান হত। পুনঃ কনক-কমল-ধন-ধান্যে গ ... ...
আমার ডায়াবেটিস নেই। শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে (যদি কখনো ধরা পড়েও বা, আমি আর প্যাথোলজিস্ট ছাড়া কাকপক্ষীতেও টের পাবে না বাওয়া হুঁ হুঁ! ) হ', ওজন কিঞ্চিত বেশী বটেক, ডাক্তারে বকা দিলে দুয়েক কেজি কমাইও বটে, কিঞ্চিত সম্মান না করলে চিকিচ্ছে করবে কেন!! (তারপর যে কে সেই) তবে কিনা আনন্দের কথা, 2009 সালের থেকে সেই যে এবেলা-ওবেলা হাই প্রেসারের ওষুধ আর কখনো সখনো ডাক্তারবাবুর লিখে দেয়া ওয়াটার পিল (ডাইইউরেটিক) , সে পাপচক্রব্যূহকে, এ যুগের অভিমন্যু আমি, ভেঙ্গেছি। গত জুলাই মাসে, শরীর চলে না, ... ...
বিচ্ছিন্নভাবে র্যাগিং হয়না। এবং কলেজের প্রতিটি ছাত্র সংগঠন ব্যাপারটা জানে। হ্যাঁ, প্রতিটা ঘটনা জানেনা, অংশগ্রহণ বা এনডোর্স করেনা, সবই সম্ভব, কিন্তু জানেনা, এটা হয়না। যদি কেউ বলে, জানতামনা, তাহলে হয় সেই সংগঠনটা নেই, অথবা গুল দিচ্ছে। বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। আর যদি কোনো সংগঠন বলে, জানেনা, কারণ এটা "বিচ্ছিন্ন ঘটনা", তাহলে সেটাও গুল। "বিচ্ছিন্ন র্যাগিং" হয়না। বিচ্ছিন্ন খুন-জখম-রাহাজানি-গুন্ডামি-শ্লীলতাহানি সবই হতে পারে, কিন্তু র্যাগিং না। কারণ, আপনি কল্পনা করে দেখুন, অন্য একটা ছেলেকে আপনি বলছেন, "এই, প্যান্ট খুলে রাত বারোটায় ইন্ট্রো দিয়ে যাবি" - এটা চুপি-চুপি হয়না, এবং এটা আপনার মাথাতেই আসবেনা, যদি না একটা কালচার চালু থাকে, এবং সেটার একরকম মান্যতা থাকে। ... ...
'গহনারবাক্স' বিরতির আগে পর্যন্ত দারুণ ছিল। হুট করে সেখানে 'বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ' টেনে আনা এবং কিছু আরোপিত বিষয় খানিকটা জোর করে গুঁজে দেবার কারণে ভালো হতে হতেও শেষ পর্যন্ত সেটা ভালো লাগেনি তেমন। পরেরটা ছিল 'আরশিনগর'। ওফফ! বার বার নিশ্চিত হওয়ার আর্জি জেগেছিল 'আরশিনগর' দেখতে দেখতে, সিনেমাটা কি আসলেই অপর্ণা সেনের! পরেরটা নিয়ে আমার ব্যাপক ব্যাকুল প্রতিক্ষা আর আশা ছিল। 'সোনাটা(Sonata)'। ভাগ্যিস শাবানা আজমি ছিলেন এটাতে। নইলে পর্দার অরুণা চরিত্র, যেটা পরিচালক স্বয়ং করেছিলেন, সে চরিত্রের আরোপিত কাঠিন্য দর্শক হিসেবে এই নাদানকে কেমন একটা দমবন্ধের অনুভূতি দিয়েছে সারাক্ষণ। অথচ অপর্ণা কত পছন্দের একজন! শাবানা আজমির চরিত্রটা 'সোনাটা'র প্রাণভোমরা বিশেষ। যাঁর উপস্হিতি দর্শকের জন্য স্বস্তিময় ছিল। ... ...
কালো একটা ছায়া পড়ে আছে গোটা উপত্যকা জুড়ে। প্রতি মুহূর্তে বন্দুকের নল ক্রূঢ় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে মানুষের দিকে। তুমি আতঙ্কবাদী, তুমি ভারতবিরোধী, তুমি ভারতের পক্ষে, তুমি দেশদ্রোহী, তুমি পাকিস্তানের পক্ষে, তুমি পাকিস্তানবিরোধী, তুমি দেশদ্রোহী, তুমি আমার শত্রু। তোমাকে শায়েস্তা রাখতে হবে। ভূস্বর্গের অসামান্য নৈসর্গিক সৌন্দর্য ম্লান হয়ে থাকে ভীতির বাতাবরণে। শুধু প্রহরীদের নয়, তথাকথিত জঙ্গিদেরও কম ভয় পায় না মানুষ।আমার খেরোর খাতার মূল বিষয় থেকে একটু সরে এসে লিখছি এটা। অল্প ক’টা কথা।আমি এ ... ...
আলাস্কা পার্ট ওয়ানঃ উইন্টার ২০১৫।স্থান, কাল, ইত্যাদিঃফেয়ারব্যাঙ্কস। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ (২৪-২৮)। উদ্দেশ্যঃ মূলত অরোরা বোরিয়ালিস খুঁজে দেখা, পারলে ছবি তোলা, এবং আর্কটিক সার্কল পর্যন্ত রোডট্রিপ। চেনা হট স্প্রিং, নর্থ পোল বলে একটা গ্রামে সাজিয়ে রাখা স্যান্টার বাড়ি এগুলো ফাউ।---------------------------------(১)অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো আলাস্কা যাব। বাঘার যেমন ছেলেবেলার সাধ ছিলো রাজকন্যা বিয়ে করবে, সেরকম। কিন্তু রাজকন্যা কিনা গুলিসুতো খেয়ে ফেলেছে, সেই ইস্তক তার দেখা পাওয়া ভ ... ...
আপনার নির্বাচিত সরকার। আপনার দ্বারা, আপনার জন্য আপনার সরকার। আপনি আমি আলাদা কেউ নই, ভীড়ের একজন মাত্র। দায় কি নেব আমরা? ... ...
কিছু কালো গড়িয়ে পড়ে, পড়তে পড়তে ভাবে এতক্ষণ কেউ ছিলনা এইখানে, রাজা-টাজা, রবীন্দ্রনাথ, গান গায় বাথটবে। কিছু পাতা উড়ে গেলে হইহই করে স্কুলছুটির কিশোরীরা মিশে যায় মাঠে, সেইসব উপেন্টি বায়োস্কোপ লিখতে কেটে যায় তিরিশটি বছর, কয়েকটি সাদা পাতা তুলেই রেখে দেব পরিবর্তনের হলুদে আশা, বার্ষিক স্পোর্টসের স্মৃতির কমলালেবু চুনদাগে। কিছু দাগ টানা, মিউজিক স্কোর হয়ে ট্রামটারে কাকেরা আর খেলার কোর্টগুলি জুড়ে উড়ে উড়ে পাতারা দিনশেষে হারমোনিয়াম রীড কিছু ফ্ল্যাট বাড়ি হয়ে যায়,কিছু প্লট, কিছু জট, চল্লিশের নিয়মিত জীবন। চোখ গে ... ...
এটি একটি পূর্ব-প্রকাশিত গল্প। ‘নবান্ন’ পত্রিকায়। সনতারিখ মনে নেই। এই মুহূর্তে দরকারও নেই। অবশ্য এটাকে শুধু ‘গল্প’ বললে ভুল হবে হয়ত। যা ঘটেছিল (বা বলা ভালো, যা ঘটেছিল ত্তার যতটা আমার মনে আছে) তাই লিখেছিলাম। মাঝে মাঝে ফাঁকফোকর ভরে দিয়েছিলাম কল্পনা থেকে। নামগুলো পাল্টে নিয়েছিলাম। তাছাড়া, ঘটনা যেমন ঘটে তেমন লিখে ফেললে কেমন যেন ম্যাড়মেড়ে লাগে। ঘটনা তো শিল্প মেনে ঘটে না। তাই রংগুলোকে একটু চড়িয়ে নিতে হয়, একটু সীবনশিল্পের আশ্রয় নিতে হয়। এখানেও তাই করা হয়েছে। তবে তেমন বেশি নয় সেই মিশ্রণের পরিমাণ। আর একটা ... ...
একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে ... ...
হেনরি কিসিঞ্জারের মতো যুদ্ধাপরাধী গণহত্যাকারীকে মার্কিন মিডিয়া "বিতর্কিত এক মহানায়ক" বলে অবিচুয়ারি সাজিয়েছে। ... ...
তিনটি হাসপাতাল ছাড়া দেশের আর কোনো হাসপাতালে করোনা শনাক্তের ল্যাব নেই। চিকিৎসক-নার্সদের করোনা সুরক্ষা ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত মেডিকেল কিট ইত্যাদি অল্প কয়েকটি হাসপাতাল ছাড়া আর কোথাও নেই। ঢাকা মেডিকেলসহ অধিকাংশ হাসপাতালই এখনো করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতই নয়। যে ১০ টি হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, তার সবই আবার ঢাকাতেই। করোনা ভীতির কারণে দেশের অধিকাংশ হাসপাতালই সীমিত করেছে চিকিৎসা সেবা। সাধারণ রোগিরা বিপাকে। এই বাস্তবতায় দ্রুত করোনার বিস্তার হতে থাকলে কী আছে আগামীতে? … ... ...
ইরমের আড়ালে কা তব কান্তা কস্তে পুত্র - কাফি কান্ড আছে মেড়া জানে সূত্র। পাঠান বা জওয়ান - কেবল ফাইটিং, ওড়াউড়িং, ল্যান্ডিং, কামানিং, ট্রাকিং, হেলিকপ্টিং - নতুন আমদানি মেট্রো হাইজ্যাকিং। ... ...
দিল ক্যা করে যব কিসিসে কিসিকো প্যার হো গ্যয়া - হয়ত এই রকমই কিছু মনে হয়েছিল ওয়াজিদ আলি শাহের। মা জানাব-ই-আলিয়া ( বা মালিকা কিশওয়ার ) এর জাহাজ ভেসে গেল গঙ্গার বুকে। লক্ষ্য দূর লন্ডন, সেখানে রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে সরাসরি এক রাজ্যচ্যুত সন্তানের মায়ের আবেদন জানাতে চললেন তিনি। সঙ্গে আরেক ছেলে সিকন্দর হাশমত। অথচ যার জন্য করা, সেই নবাবই রয়ে গেলেন কলকাতায়। সাল ১৮৫৬। আসলে নবাবটি একটু অন্য ধাতের - যুদ্ধ বিগ্রহ রাজ্য শাসনের থেকে তাঁর মন বেশি গান- নাচ- কবিতা-প্রেম এই সবে।সে বছরই রাজ্য হাতছাড়া হবার প ... ...
আগে যদি কোন ফিলিপিনো-র (ফিলিপিন্স দেশের লোকজন) সাথে আলাপ থাকত, তা হলে আর কলেজ বেলায় আমাদের মেদিনীপুরের বন্ধুদের ইয়ার্কির ছলেও তাদের ভাত খাওয়া নিয়ে কিস্যু বলতাম না। আমরা বন্ধুদের বলতাম, তোরা এত ভাত খাস যে পাতের উপর দিয়ে বেড়াল ডিঙোতে পারবে না! তো সেই হিসাবে ফিলিপিনো-দের ভাত খাওয়ার পরিমাণ দেখলে বলতে হয়, পাতের উপর দিয়ে বিড়াল তো কোন ছাড়, ঘোড়া পর্যন্ত ডিঙোতে পারবে না! আমি নিজে বর্ধমানের ছেলে – আমরাও ভাত খেতাম। কিন্তু মেদিনীপুর আমাদের টেক্কা দিত এই ব্যাপারে। বর্ধমান এগিয়ে মুড়ি খাওয়ায়! তবে শুধু ফিলিপিন্স কেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় সব দেশেরই মূল খাদ্য – ভাত। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কাম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া যাই হোক না কেন। এরা অনেকেই দিন রাত ভাত খায় – ব্রেকফাষ্টে ভাত, দুপুরে ভাত, রাতে ভাত – মানে ভাতই ভাত। ... ...
ফুটবল শিখতে চাওয়া সেই প্রথম নয় কিন্তু। পাড়ার মোড়ে ছিল সঞ্জুমামার দোকান, ম্যাগাজিন আর খবরের কাগজের। ক্লাস থ্রি কি ফোর থেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়তাম হি-ম্যান আর চাচা চৌধুরীর কমিকস আর পুজোর সময় শীর্ষেন্দু-মতি নন্দীর শারদীয় উপন্যাস। সেখানেই একদিন দেখলাম ফুটবলের ওপর বই, অমল দত্তের “ফুটবলের অ-আ-ক-খ”, খুব ভুল না হলে নামটা তাই ছিল। কিনে ফেলা হল। ছোট্ট বই, একদিনেই শেষ করা গেল। ঐ বয়েসে মাঠে যাওয়ার অনুমতি বিকেলে এক ঘণ্টার বেশি ছিল না। তাই যা পড়লাম, তা প্র্যাকটিস করার জায়গা ছিল আমাদের ছোট্ট ঘরটাই। ... ...