সাঁঝবাতি আর রূপকথার মধ্যে নাড়ির টান। সন্ধেবেলায় যখন ঘরের আঙিনায় ছায়ারা গাঢ় হয়ে আসে, জ্বলে ওঠে সাঁঝবাতি, একের পর এক, তখনই জন্ম নেয় রূপকথারা। জন্ম নেয় ঠাকুরমার কাঁপা-কাঁপা গলার ওঠাপড়ায়। আর খোকাখুকুরা শোনে,চোখের পাতায় নেমে আসা ঘুমের ঢেউকে তাড়িয়ে দিয়ে। চোখের মণি বড় বড়, বেড়ে গেছে বুকের ধুকপুকুনি। রূপকথা ভয় পাওয়ায়। ঠাকুমা দেখেন নাতিনাতনির চোখে ভয় ঠাঁই করে নিয়েছে। রাক্ষস - খোক্কসের দল ঘিরে ফেলেছে বাড়ি। এবার ঠাকুমা গলার ... ...
খণ্ডিত বঙ্গের দুই অংশ – ছোট ভাই পশ্চিমবঙ্গ ও বড় ভাই পূর্ব্ববঙ্গ। এই দুই বঙ্গ মিলেই আবহমানকালের বাংলাদেশ – যদিও ১৯৭১-এর পর তা মূলতঃ পূর্ব্ববঙ্গের জাতিরাষ্ট্রের‘অফিসিয়াল’ নামে পরিণত হয়েছে। নিজেকে বাংলাদেশ নামে ডাকার অধিকার পশ্চিমবঙ্গের বড় অংশই ছেড়ে দিয়েছে। সেটা দুঃখজনক। নিজের নাম স্বেচ্ছায় কেন কেউ নিজে থেকেই ভুলে যাবে, তা আমার বোধগম্য নয়। তো সে যাই হোক, এতটাই আত্মবিস্মৃত আমরা যে বাংলাদেশ নামটির পুরো অধিকারটাই আমরা তুলে দিয়েছি পূর্ব্ববঙ্গের হাতে। খন্ড-বঙ্গের ছোট খন্ড আমরা। এই খন্ড ভাব আর ... ...
যদি গুগুল সার্চ করেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ – তো মনে হয় না প্রথম দশে আপনি মলটা দেশের নাম পাবেন – সেখানে দেখবেন ফিনল্যান্ড এবং অন্যান্য স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলিরই আধিক্য। কিন্তু এই সুখীর সংজ্ঞার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ বা আমরা যাকে বলি ‘আনন্দে’ বেঁচে থাকা তা ঘুলিয়ে ফেললে চলবে না। তেমন লিষ্টী বানাতে হলে প্রথম বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে মলটার নাম একেবারে প্রথম দিকে থাকবে। বিশাল আনন্দে এবং টেনশন ফ্রী জীবন কি ভাবে কাটাতে হয় এদের কাছ থেকে শেখা যেতে পারে। ... ...
পুঁটির বিয়ের আগে শাশুড়িমা বললেন যে, ওবাড়ি গিয়ে পুঁটিকে কাজকম্মো বিশেষ করতে হবে না। ওমা! তাও আবার হয় নাকি! গিয়ে কিন্তু দেখা গেল, সত্যিই তাই। পুঁটি সপ্তাভর আপিস করে আর সপ্তাহান্তে মাসতুতো-মামাতো দেওর-ননদ জুটিয়ে দিনভর আড্ডা- অন্তাক্ষরী-তাস খেলা এ সব করে। শখের রান্না বা ঘর গোছানো এসব করতে ইচ্ছে হলে করে, আর কিছু না। যা করে, তার আবার বিস্তর প্রশংসা পায়! শান্ত পরিবারটি হইচইবাজ পুঁটিকে পেয়ে বেশ খুশি হয়ে উঠল।শাশুড়িমা যেমন ভালোমানুষ, তেমন কর্মঠ। তাঁর সাথে ঘরের কাজ করার জন্য দুই বোন আছে। ছোট বোন ... ...
রেললাইনের পাশে পাহাড়ি ফুলের ঝোপঝাড়। ভিজে ভিজে ভাব হাওয়ায় ভাসছে। পাহাড়ের কোলে ছোট ছোট ব্রিজ আর সুড়ঙ্গ দিয়ে ট্রেন এগিয়ে যাচ্ছিল। দেড়ঘন্টা মত সময় লাগবে উধাগামান্ডালাম পৌঁছতে। লাভডেল ইত্যাদি ছোট ছোট স্টেশনও রাস্তায় পড়ে এবং সেখানে স্থানীয় লোকজনরা ওঠানামাও করে। ... ...
কোন এক পড়ন্ত বিকেলে আমরা ঢাকার রাস্তায় কণিকা নামের একটা বাড়ি খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। অনেকক্ষণ ধরে। আসলে আমরা খুঁজছিলাম একটা ফেলে আসা সময়কে। একটা পরিবারকে। যে বাড়িটা আসলে ব্লাইন্ড লেনের এক্কেবারে শেষ সীমায়। যে বাড়ির গলি আঁধার রাতে ভারী হয়েছিল পাকিস্তানী মিলিটারী বুটের আওয়াজে। যে বাড়িতে এক মা অপেক্ষা করে গেছেন ছেলের জন্যে। স্বামীর জন্যে। কিন্তু তাঁরা আর কেউ ফিরে আসেননি কোন দিন। দোতলায় উঠতে ঢুকেই একটা প্রশস্ত ঘর। একটা খাট। রেফ্রিজারেটার। বইয়ের আলমারী। গানের ক্যাসেট। দেওয়াল জুড়ে মিষ্টি হাসির রুমী। তার জা ... ...
আগামী কাল, ১২ই মার্চ, ২০১৪ বেলা ৩টায় মেডিকাল কলেজ ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্টস' এসোশিয়েসনের ডাকে ডা সমীর বিশ্বাসের মুক্তির দাবীতে সভা মেডি্কাল কলেজ জেনেরাল লেকচার থিয়েটারে।বক্তাঃ ডা সঞ্জীব মুখার্জী, ডা মুক্তেশ ঘোষ, সুজাত ভদ্র। সভায় যোগ দিন।১৭ই জানুয়ারী স্টুডেন্টস' হলে অনুষ্ঠিত গণ-কনভেনশনের আগে প্রকাশিত প্রচার-পত্র নীচে দেওয়া হলঃডা সমীর বিশ্বাসের মুক্তি চাই,অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসা করার অধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই। ডা বিনায়ক সেনের পর ডা সমীর বিশ্বাস—মাওবাদীদে ... ...
আজ থেকে তেত্রিশ চৌত্রিশ বছর আগে উমেরিয়ার একটা লোক আমার মাথায় মধ্যপ্রদেশ ঢুকিয়ে দিয়েছিল আর বুকে ঢুকিয়ে দিয়েছিল ভালবাসা। লোকটার নাম জানিনা, সে একজন ময়রা, অবশ্য মধ্যপ্রদেশের মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারকদের ‘ময়রা’ বলে কিনা আমার জানা নেই। ... আমাদের বাংলার নিখুঁতি টাইপের একটা মিষ্টি খেয়েছিলাম তার দোকানে। খুব ভাল লেগেছিল। ভাবলাম জঙ্গল টঙ্গলে খাবার জিনিষ পাওয়া যাবেনা, কিলো ... ...
ছ্যাঁচড়াকোন এক বর্ষার সকালে জন্ম হয়েছিল ইন্দুবালার। কোন এক মাঘের কুয়াশা ভরা ধান ক্ষেতের আল দিয়ে হেঁটে বাবার হাত ধরে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। শুধু এইটুক মনে আছে ফুল ফুল ছাপ একটা ফ্রক পড়েছিলেন। গায়ে ছিল মায়ের বোনা সোয়েটার। মাথায় উলের টুপি। ঠাম্মার কাছে শোনা রূপকথার রানী বলে মনে হচ্ছিল সেদিন নিজেকে। ঠাকুরদার টোলটা তখনও চলছে টিম টিম করে। সেই টোলে বর্ণপরিচয়, ধারাপাত এইসব টুকটাক শিখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু বেশি দিন সেখানে পড়া হলো না। আমের গাছে মুকুল ভরিয়ে, সরস্বতী পুজোয় হাতে খড়ি দিয়ে দাদুর বড্ড তাড় ... ...
পবিত্রতা, সারল্য, অহিংসা, সত্যাশ্রয়, ত্যাগ, দয়া, মৃদুস্বভাব, তেজস্বিতা, ক্ষমা, ধৈর্য্য, মঙ্গলাচরণ, এবং অবশ্যই আত্মশ্রদ্ধা ও আত্মজ্ঞান – রবীন্দ্রনাথ তার প্রতিটিই প্রায় কর গুনে তুলে এনেছেন তাঁর এই রচনায়। আমরা যে দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করলাম, তার মধ্যে আজ কি এই গুণাবলী পাই আমরা? ... ...
জামাত বিএনপি বা উগ্র ধর্মান্ধ মুসলমানদের সঙ্গে আরএসএস বিজেপি বিশ্ব হিন্দুদের আমি প্রচুর মিল খুঁজে পাই। যা তেমন কেউ জানেনা, কারণ তেমন কেউ আরএসএসকে আমার মতো এতো কাছ থেকে দেখেনি। এই মিলগুলো সংক্ষেপে বলা খুব দরকার। ... ...
না, হাত দিয়ে গোল তার নিন্দুকেরা করেনি নি, বলা ভালো, ওই জায়গা অবধি পৌঁছনর হিম্মত হয় না তাদের, হয়নি। আগুয়ান বিখ্যাত গোলকীপার পিটার শিলটনের মুখোমুখি দৌড়ে নিজের পাঁচ ফুট পাঁচের শরীর নিয়ে লাফ দিতে গেলে হাত নয়, লাগে দম। ধক। হিম্মত। ... ...
ডিপ্রেশন মানেই জীবন শেষ করে দেওয়া নয়। বিশ্বাস করুন, পৃথিবীতে এমন কেউ আছেন যিনি আপনার কথা শুনতে যান, কথা বলতে চান। তাই হয়তো নতুন এক শব্দের কয়েনেজ “4 a.m friend”… হ্যাঁ, এমন একজনকেই চাই যাকে রাত বিরেতে উঠিয়ে বলতে পারি, হ্যালো, আমি আজ ভালো নেই। কথা বলতে পারি… হয়তো তাহলে ডিপ্রেশন কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারব। সুশান্তের পাশে কাল কেউ ছিলনা…তাই হয়তো ওকে এভাবেই চলে যেতে হলো… ... ...
২ - - “ফুল বলে” “ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া” উনি আসেন নি কখনো নিজে ফুল কিনতে। তাঁর বাড়ি থেকে সোজা রাস্তায় দক্ষিণ দিকে মিনিট দশেক হাঁটলেই তো সার দেওয়া ফুলের দোকান সব। তাই ফুলের দোকানেরা বুঝি বড় আবর্জনাময়। কিন্তু হাওড়া হাটের পাইকারি বাজারের তুলনায় তা নস্যি। সে এক নরককুণ্ড, গোড়ালি অবধি কাদায় মাখামাখি হয়ে আছে রজনীগন্ধার ডাঁটি, এক গোছা গোলাপফুলের নিচের ডালগুলো পাতা কাঁটা সমেত যা কিনা এখনো সুতো দিয়ে বাঁধা অকারণ। পচে যাওয়া কুঁচোফুল বেশিরভাগই যারা দোপাটি কাদামাটি মেখে একশা হয়ে শুয়ে আছে। আর সে ... ...
কালী ঠাকুরে আমার খুব ভয়। গলায় মুন্ডমালা,হাতে একটা কাটা মুন্ডু থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে, একটা হাড় জিরজিরে শেয়াল তা চেটে চেটে খাচ্ছে, হাতে খাঁড়া, কালো কুস্টি, এলো চুল,উলঙ্গ দেহ, সেই ছোট বেলায় মন্ডপে দেখে এমন ভয় পেয়েছিলাম সেই ভয় আমার আজও যায়নি। আর আমার এই কালী ভীতির কথা আমার পরিবারের সবাই জানতো। ছোটবেলায় খুব জলে তেলাতাম- আপনাদের ভাষায় সাঁতার কাটতাম।আমি সুন্দরবনের মেয়ে,পেটের থেকে সাঁতার শিখে আমাদের জন্ম হয় তার ওপর বাড়ির লাগোয়া বড় খাল- পারলে সারাদিন সেখানেই থাকি। এদিকে বাড়ির বড় মেয়ে,মা জনমজুর খ ... ...
মৌসুমী বিলকিসমেয়েরা হাসছে। মেয়েরা কলকল করে কথা বলছে। মেয়েরা গায়ে গা ঘেঁষটে বসে আছে। তাদের গায়ে লেপ্টে আছে নিজস্ব শিশুরা, মেয়ে ও ছেলে শিশুরা। ওরা সবার কথা গিলছে, বুঝে বা না বুঝে। অপেক্ষাকৃত বড় শিশুরা কথা বলছে মাঝে মাঝে। ওদের এখন কাজ শেষ। ওদের এখন আড্ডা দেওয়ার সময়। সূর্য এখন ডুবু ডুবু। কয়েকজন মেয়ে আদিগন্ত মাঠের দিকেও তাকিয়েছে। আখার মধ্যে কাঠের আগুন ফিকে হয়ে যায় যেমন, আকাশটাকে তেমনই মনে হয়েছে কারো কারো। আ! কেমন জ্বলছে কিন্তু তাপ উত্তাপ নেই। মেয়েরাও কেমন আগুন পেতেছে। এক চিলতে মাটির বারান্ ... ...
এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত স্কুলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তৈরি হয় শ্যামবাজারে লিভারপুল স্কুল, এন্টালিতে সালেম স্কুল, চিৎপুরে বার্মিংহাম স্কুল ( ১৮২২ জানুয়ারি ) , কাশীপুরের গ্লাসগো স্কুল ( ১৮২২ ডিসেম্বর) , মেজ পন্ড স্কুল ( ১৮২৩ জানুয়ারি), ব্রডমীড স্কুল( ১৮২৩ অক্টোবর) ইত্যাদি। স্কুলের নাম পৃষ্ঠপোষকদের বাসস্থান অনুসারে। ১৮২৩ সালের রিপোর্টে পাওয়া যায়, সাতটি স্কুল আর সব মিলিয়ে ১৬০ জন ছাত্রীর দায়িত্বে ছিল সোসাইটি। পড়তে শেখা, লিখতে শেখার পাশাপাশি অভিভাবকদের অনুরোধে সেলাই শেখানোও শুরু হয়। প্রথম থেকেই রাজা রাধাকান্ত দেব প্রমুখেরা এই প্রয়াসের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন । রাজার অনুপ্রেরণায় গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কার লিখলেন স্ত্রীশিক্ষাবিধায়ক, নারী শিক্ষার গুণ গেয়ে। ১৮২২ সালে সকলের সামনে দেশি ছাত্র ছাত্রীদের পরীক্ষা নেওয়া হল। মেয়েদের বই পড়ে শোনানো আর বানানজ্ঞান দেখে রাজা রাধাকান্ত দেব এবং আরও উপস্থিত মান্যগণ্যরা খুব খুশিও হলেন। ... ...
১ আমি চারপাশ থেকে জড়ো করি চুল দড়িদাড়া ভিটভিটে আলো জ্বলা সন্ধে লাল ঝুটি চাওয়া পাখিরূপ দীর্ঘসুত্রতা। নিজের কাছ থেকে নিভে যেতে চাই আমি অনেক দূর থেকে মেল ট্রেনখানি আসে মাঝে মাঝে আমাদের কাছে, জানো? এমনিতে ঘাসফড়িং দেখি আমি ওড়াউড়ি করে। কখনো কখনো অন্য পোকামাকড় দেখে ভাবি এরাও ঘাসফড়িং হতে পারত। আমি দেখি সরু সরু নীল সুতো কখনো আড়াআড়ি কখনো বা লম্বালম্বি ভাবে সরে সরে যায়। বাক্স বাক্স ঘরে বাক্স জমা হতে হতে মানুষজন মহানন্দে বাক্স রহস্যের সিনেমা দেখে ফেলে। আমি সিনেমাটা দেখি না তবে নিজের বাক্স নজরে ... ...