সেই ১৮৩২ সাল নাগাদ ফ্যারাডে যখন ইলেক্ট্রোমেকেষ্ট্রির জনক হতে যাচ্ছেন তখন তিনি লণ্ডন রয়েল ইনষ্টীটিউটশনে – নিজের প্রথাগত শিক্ষা না থাকায় আত্মবিশ্বাস কিছু কম। তাই তিনি চিঠি লিখছেন হুইওয়েল-কে এই জানতে যে অথোরিটি এই ব্যাপারে কি মনে করে। ফ্যারাডে পজিটিভ এবং নেগেটিভ দিকের জন্য ঠিক কি নাম ব্যবহার করা ঠিক হবে সেই বিষয়ে পরামর্শ চাইছেন। এই সব চিঠি বাইরে রাখা থাকে না পাবলিক প্রদর্শনীর জন্য। আমাদের প্রোফেসর ট্রিনিটি কলেজের লাইব্রেরীয়ানকে বলে বিশেষ ব্যবস্থা করেছিলেন। লাইব্রেরীয়ান ভল্ট থেকে আসল চিঠি পত্র নিয়ে সে দেখালেন – সে অনেক চিঠি, সুন্দর করে রাখা আছে। বাঁধানো বইয়ের মত করে পাতায় পাতায় চিঠি গুলো আটকানো আছে। প্রথম দিকে ফ্যারাডের চিঠি এবং শেষের দিকে সেই চিঠির প্রেক্ষিতে হুইওয়েল এর উত্তর। এই চিঠি সব ব্যাখা করছিলেন লাইব্রেরীয়ান, কারণ সেই হাতের লেখা পড়া খুব দুঃষ্কর। এই ভাবেই দেখা গেল ১৮৩৪ সাল নাগাদ প্রথম প্রস্তাব করলেন হুইওয়েল ‘ক্যাথোড’ এবং ‘অ্যানোড’ শব্দের ব্যবহার। আরো বেশ কিছু ক্ষণ সময় কাটালাম – ... ...
লকডাউন উঠে গেলেই কি করোনা ফিনিশ? স্পষ্ট করে প্রথমেই বলে নেওয়া দরকার, না। এই ধুন্ধুমার লকডাউন উঠে গেলে পৃথিবী আদপেই পৃথিবী করোনামুক্ত হবেনা। একবার যখন এসে পড়েছে, ভাইরাসটি আছে এবং থাকবে। নির্মূল হবেনা। সে চেষ্টাও পৃথিবীর কোনো দেশের কোনো স্বাস্থ্যসংস্থা বা সরকার করছেনা। অতএব, যদি নেহাৎই প্রশান্ত মহাসাগরের কোনো দ্বীপে গিয়ে একাকী বসবাস না করতে পারেন, আজ হোক বা ছমাস পরে, এর সংস্পর্শে আপনি আসবেনই, যদি না ইতিমধ্যেই এসে গিয়ে থাকেন। তার মধ্যে কোনো টিকা বেরিয়ে যাবার সম্ভাবনা খুবই কম। (যখন বেরোবে তার পরেও, ফ্লুয়ের মতোই ভাইরাসের নতুন কোনো গোষ্ঠী সম্ভবত উদয় হবে, টিকা যার কোনো প্রতিষেধক নয়।) ফলে ভাইরাস নাকের ডগায় এলে আপনার ভরসা আপনার প্রতিরোধক্ষমতা। কোনো লকডাউন, কোনোভাবেই আপনাকে তার থেকে বাঁচাবেনা। ... ...
অথচ, প্রশ্ন ছিল অনেক। প্রশ্নগুলো যেভাবে এবং যতোখানি জোরের সাথে উঠে আসার কথা ছিল, সবই পটকার আওয়াজে ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। যেমন, দেশে প্রথম করোনা রোগীর খোঁজ পাওয়ার পরেও সরকার হাত গুটিয়ে বসেছিলেন কেন? যেমন, প্রথমদিকের সব আক্রান্তই বিলেতফেরত জেনেও, আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কেন? যেমন, খবর পাওয়ার পরেও আন্তর্জাতিক উড়ান থেকে যাঁরা নামলেন, তাঁদের নজরে রাখা এবং পরীক্ষার বন্দোবস্ত হল না কেন? যেমন, সারা বিশ্ব যখন করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত, তখনও স্বাস্থ্যদপ্তর কোন আক্কেলে জানালেন, যে, করোনা কোনো এমার্জেন্সি পরিস্থিতি নয়? কিন্তু, সেসব এখন অতীত। যা ঘটে গিয়েছে, সে নিয়ে দোষারোপ করে গায়ের ঝাল মেটানো যেতে পারে - পরিস্থিতির মোকাবিলায় এগোনো যাবেনা তেমন। অতএব, মোমবাতি জ্বালানোর যুক্তি ছিল কি ছিল না, অত্যুৎসাহীর দল পটকা ফাটিয়ে বিপর্যয়ের মুখে অশ্লীল আমোদ প্রকাশ করেছে কি করেনি - এসব প্রশ্ন ছেড়ে আসল প্রশ্নগুলোর কথা বলা যাক। ... ...
'মৃত্যু এবং সুযোগ- মানে মৃত্যু এবং জীবন'। "সময়ের স্তব"-এ পড়ছিলাম উরসুলা লে-গ্যিন কে। বলছিলেন তিনি- মৃত্যু এবং সুযোগ কী-ভাবে খেলা করে- মহাশূন্য ও গ্যালাক্সির মধ্যে। মৃত্যুর চেতনার মধ্যে স্পেকট্যাকল কখনও হয়ে ওঠে জীবন হারানোর একটা রিলে রেস। মন্থর সে দৃশ্য-গতি। পৃথিবীর এই কালান্তক সময়ে সমবেত দেখে যাওয়া এই লঙ মার্চের স্পেক্ট্যাকল অতএব আমাদের জন্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে থাকল। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার কথা বলছি। দৃশ্যগুলি ভারত দেশের ও বাংলাদেশের। যেখানে সারা রাজপথে, নগরের রাস্তায়, হাইওয়ে জুড়ে কেবলই দৃশ্যের জন্ম হচ্ছে। খুব দ্রুতই কিছু দৃশ্যের জন্ম হচ্ছে।মাত্র চার ঘন্টার নোটিশে ভারতে লকডাউন করা হল। মাইগ্র্যান্ট শ্রমিকরা যথেষ্ঠ সময়ই পেলেন না, তার আগেই কাজ খোয়ালেন, আস্তানা খোয়ালেন ও পরিবহন হীন দেশে, ভুখা পেটে মাইল, মাইল হাঁটতে বাধ্য হলেন। একই চিত্র বাংলাদেশেও। আগাম সতর্কতা, পরিকল্পনা ছাড়াই লকডাউনে হঠাৎ চালু হয়ে গেল কারখানা।একটা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান লকডাউন-কে কার্ফিউ বলে। এই মারী’র কালে রাস্তায় মরতে থাকা মানুষ-কে ভাত দিলনা- কোটি কোটি টাকার অস্ত্র কিনল। আদ্যোপান্ত মিলিটারি নয়, বলুন বেলাগম জ্ঙ্গী প্যাকেজ।একে টেররিজম বলে। আমরা সাক্ষী থাকছি। মন্থর দিনাবলী, স্লো ক্যামেরা, এপিক্যাল প্লট, দার্শনিকের কথামালা এবং খন্ড স্পেক্টাক্যাল এর । ... ...
কিঞ্চিৎ চিন্তাগ্রস্তই ছিলেন শিবু, ওরফে শিবানন্দ। যামিনী গতপ্রায়, পূর্ব দিগন্ত হইতে চন্দ্রকলাখানি পাড়িয়া, ঝাড়িয়া ঝুড়িয়া নিজের জটায় লাগাইয়া দিলেন। যাক, অদ্যকার মতো কাজ শেষ। এবং সেখানেই প্রকৃত ভাবনার আরম্ভ। সামনে এক্কেবারে আস্ত একটি দিন পড়িয়া আছে, অথচ করিবার কিছু নাই। সে এক কাল ছিল বটে। ছিলিমে সুখটান দিতে দিতে আর আকুল ভক্তগণের প্রার্থনা শুনিতে শুনিতে সময় যে কোথা হইতে মাখনের ন্যায় গলিয়া যাইত। ... ...
অথচ দরজাটা খোলাই ছিল। ছাদ আশ্রয়, দেওয়াল সুরক্ষা দিলে দরজা দিয়েছে গোপনীয়তা। আর সেই সূচনা থেকেই জানালার সাথে মিথ্ হয়ে গেছে অজস্র অলিখিত ও কিছু লিখিত পঙতিমালা। বলা হয় এক ছাদের নীচে বসবাস করলে নাকি সম্পর্ক দানা বাঁধে। সেই পরিবর্তনশীল সম্পর্কের সাথে মানবিক বিক্রিয়ায় কিছু মুহুর্ত তৈরী হয়। তেমনি কিছু মুহুর্ত কবিতার আকারে – যেখানে কাঠের সিঁড়ির সাথে নুপূরধ্বনি অজান্তেই মিশে গেছে ... ...
আচ্ছা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সভ্যতার এ' রকম বিপর্যয় কি ইতিহাসে আগে হয়েছে? না বলেই মনে হল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চোটে জীবনযাত্রা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ঠিক কথা। বুদ্ধদেব বসুর মেমোয়ারে পড়েছি, ট্রাম বাদে কোনও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট যেত না তখন, সন্ধে নামলে এক কাঠি ওপরে বিদ্যুৎ অফ– মাঝেমধ্যে জনশূন্য রাসবিহারীর মোড়ে ট্রামের ইতস্তত ধাতব মর্মর, আর পূর্ণিমার চাঁদ গলে গলে ট্রামলাইনে পড়ছে। ... ...
পণ্ডিত রবিশংকর কে, এমন প্রশ্ন যদি তাঁর শতবর্ষে নিক্ষিপ্ত হয়, আমার উত্তর হবে: এক সেতার-বাজিয়ে প্রেমিক পুরুষ৷ নারীবাদীরা হয়তো অভিধার দ্বিতীয় শব্দটিতে কিঞ্চিৎ গোলমাল খুঁজে পাবেন, কিন্তু পৌরুষ ছাড়া রবিশংকরের বাজনাকে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। সেই পৌরুষ, আশ্চর্যজনক ভাবে, উদগ্র ম্যাসকিউলিনতার কোনও ইস্তেহার নয়, বরঞ্চ প্রতি পলে ভারতীয় পৌরুষের ধারণাকে সে ভেঙেছে, গুঁড়ো করেছে, সাজিয়ে নিয়েছে নতুনতর কোনও ক্যালাইডোস্কোপে। ... ...
আমি মরে গেলে, আপনি মরে গেলে এভাবেই নিঃশব্দে নিঃসঙ্গতম অন্ধকারে হারিয়ে যাব। কিন্তু যদি কোনোক্রমে বেঁচে যাই, মহামারি থেকে শিক্ষা নেব তো? ভেবে দেখা যাক। ... ...
আচ্ছা, এই হাতে হ্যারিকেন ধরিয়ে দেওয়াতে ক'টা কথা মনে হল। মোদীজির সবই মাস্টারস্ট্রোক, তাই তেনার অসীম ক্ষেমতায় মেরা দিমাগ কি বাত্তি জ্বল হি গ্যয়া। ... ...
তিনটি হাসপাতাল ছাড়া দেশের আর কোনো হাসপাতালে করোনা শনাক্তের ল্যাব নেই। চিকিৎসক-নার্সদের করোনা সুরক্ষা ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত মেডিকেল কিট ইত্যাদি অল্প কয়েকটি হাসপাতাল ছাড়া আর কোথাও নেই। ঢাকা মেডিকেলসহ অধিকাংশ হাসপাতালই এখনো করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতই নয়। যে ১০ টি হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, তার সবই আবার ঢাকাতেই। করোনা ভীতির কারণে দেশের অধিকাংশ হাসপাতালই সীমিত করেছে চিকিৎসা সেবা। সাধারণ রোগিরা বিপাকে। এই বাস্তবতায় দ্রুত করোনার বিস্তার হতে থাকলে কী আছে আগামীতে? … ... ...
১৯৭১ এ স্বাধীনতার পর উর্দূভাষী আটকে পড়া পাকিস্তানীরা, যারা ‘বিহারী’ নামে এখনো পরিচিত, অনেকেই দেশবিভাগের সময় বিহার থেকে উদ্বাস্তু হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারা ঘোলকে বলতেন ‘মাঠা’। তো মোহাম্মাদপুরে বিহারী বসতিপূর্ণ এলাকায় বাসার গলির মুখে খুব ভোরে বিশাল এলমুনিয়ামের হাড়ি নিয়ে গাল ভাঙা, খোঁচা খোঁচা কাঁচাপাকা দাঁড়ির বিহারী ঘোলওয়ালা বসতেন। তার হাড়িতে থাকতো ঘরে তৈরি ঘোল। হাড়ির মুখটি কাঁচের চৌকা টুকরো দিয়ে ঢাকা থাকতো। ওপরে বসানো থাকতো ছোট ছোট কাঁচের গ্লাস। মাঝারি মাপের এলমুনিয়ামের মাগ দিয়ে ক্রেতাদের ওইসব সব গ্লাসে ঢেলে দেওয়া হতো সুস্বাদু ফেনা ওঠা ঘোল। আর উঁকি দিলে হাড়িতে দেখা যেত ঘোলের ওপর বিস্কুট মাপের হলুদাভ মাখন ভাসতে। প্রতি গ্লাস দুই সিকি (তখনো একে ‘চার আনা’ বলা হতো) বা পঞ্চাশ পয়সা (‘আট আনা’) মাত্র। ঘোল ওয়ালা মাঝে মাঝে হাঁকতেন, ‘এই মাট্টঠাআআআআ…’! ... ...
পরমাণুর ধারণা থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রন-প্রোটন-নিউট্রন হয়ে কোয়ার্ক-লেপ্টনের যুগ পেরিয়ে হিগ্স বোসন ঃ কণিকা জগতের এই চার প্রজন্মের কথা সংক্ষেপে ধরা হয়েছে এই প্রবন্ধে। বলা বাহুল্য পত্র-পত্রিকা ও গবেষণাপত্রে প্রকাশিত তথ্যকে কিছুটা নিজের বিবেচনামত সরল করে পরিবেশন করা হয়েছে। ... ...
জাপানী কথাকার হারুকি মুরাকামি বর্তমান বিশ্বের বিশিষ্ট ও জনপ্রিয়তম ঔপন্যাসিকদের অন্যতম। তাঁর লেখা উপন্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে হিয়ার দ্য উইন্ড সিং, পিনবল ১৯৭৩, আ ওয়াইল্ড শিপ চেজ, হার্ড বয়েলড ওয়ান্ডারল্যান্ড অ্যান্ড দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড, নরওয়েজিয়ান উড, ড্যান্স ড্যান্স ড্যান্স, সীমান্তের দক্ষিণে সূর্যের পশ্চিমে, দ্য উইন্ড আপ বার্ড ক্রনিকল, স্পুটনিক স্যুইটহার্ট, কাফকা অন দ্য শোর, আফটার ডার্ক ইত্যাদি। এছাড়া হাতি গায়েব, আফটার দ্য কোয়েক, ব্লাইন্ড উইলো স্লিপিং উওমেন, নারী বিবর্জিত পুরুষেরা ইত্যাদি নামের বেশ কিছু জনপ্রিয় গল্পগ্রন্থও তিনি লিখেছেন। কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সহ এপার বাংলা ওপার বাংলা মিশিয়ে বিভিন্ন প্রকাশনসংস্থা থেকে মুরাকামির বেশ কিছু উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের অনুবাদও প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা মুরাকামির ওপর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। তাঁকে নিয়ে দুই বাংলাতেই চর্চা ক্রমবর্ধমান। ... ...
এই ব্লগটি ডিলিট করা হয়েছে ... ...
দুরিয়ান কাঁঠাল প্রজাতির ফল, আর দেখতেও অনেকটা কাঁঠালের মতই। দুরিয়ান খাবার জন্য মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, থাইল্যান্ডের কিছুটা, কিছু ইন্দোনেশিয়া – এরা সব পাগল। সেই উন্মাদনার কাছাকাছি বাঙালীর কোন কিছু খাবার বিষয়ক উন্মাদনা আসতেই পারে না, বাজারে হিমসাগর উঠলে আমরা এই ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা ভাবতে পারি না। কথিত আছে যে প্রাক মোবাইল যুগে বাজারে দুরিয়ান ওঠার খবর রেগুলেট করা হত সরকারী অফিস বা হাসপাতালে, বা ব্যাঙ্কে বা স্কুল-কলেজে। ডাক্তার নাকি অপারেশন থামিয়ে দুরিয়ান কিনতে ছুটছে যেই শুনেছে বাজারে দুরিয়ান উঠেছে – স্কুল-কলেজে টিচার হাওয়া! এখন হোয়াটঅ্যাপ এসে যাওয়ায় আর রেগুলেট করা যাচ্ছে না খবর চাওড় হওয়া। তাই সরকার নাকি ভাবছে কেবলমাত্র ওয়ার্কিং-আওয়ারসের বাইরের দুরিয়ান বিক্রী করতে দেওয়া হবে ওপেন মার্কেটে! ... ...