চাকরি করার সময়, অফিসে ফ্ল্যাগ তুলে একটু সিঙ্গাড়া মিষ্টি খেয়েই প্রশাসক হিসেবে দেশভক্তির যথেষ্ট প্রমান দেওয়া যেত। চাকরির একটা নির্দিষ্ট ধাপের পর থেকে স্বাধীনতা দিবসে বিকেলে মাননীয় রাজ্যপাল চা পানের নিমন্ত্রণের একটা কার্ড পাঠাতেন, তবে ঐ অত আমলার ভীড়ে এক আধজন কে দেখা না গেলে বুঝতে পারবেন না বলে অনেক সময়েই…বুঝলেন না ……হে…… হে । বছর ষোল আগে হঠাৎ নেমন্তন্য করলেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষকরা, ওঁদের আচার্য পল্লীর আবাসনে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে। এটা এড়ানো মুশকিল, আমার পুত্র তখনো মিশ ... ...
দ্য সাইলেন্ট ক্রাই -- কিছুটা আকস্মিক ভাবে হাতে এসে পড়া একটি বই পাঠের এক অত্যাশ্চর্য অনুভব। নোবেলজয়ী জাপানী উপন্যাসিকের এই লেখা পাঠের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল যে তা শুধুমাত্র একটি ভাল বই পড়ার অভিজ্ঞতা হয়েই থাকে না। আমার স্থান আর কালের বাস্তবতায় জারিত হয়ে, কী এক অদ্ভুত ম্যাজিকে ১৯৬৭ সালে লেখা এক জাপানী উপন্যাস হয়ে ওঠে আমারই শহরের গল্প, যা দেশ-কালের ব্যবধান কে উড়িয়ে দিতে পারে ফুৎকারে, মিলিয়ে দিতে পারে আমার ইতিহাসের সাথে আমার ভবিষ্যৎকেও। ... ...
পূর্ণেন্দু পত্রী মশাই মার্জনা করবেন - তোকে আমরা কী দিইনি নরেন? আগুন জ্বালিয়ে হোলি খেলবি বলে আমরা তোকে দিয়েছি এক ট্রেন ভর্তি করসেবক। দেদার মুসলমান মারবি বলে তুলে দিয়েছি পুরো গুজরাট। তোর রাজধর্ম পালন করতে ইচ্ছে করে বলে পাঠিয়ে দিয়েছি স্বয়ং আদবানীজীকে, কড়ি নিন্দার সাথে আশীর্বাণী পাঞ্চ করিয়ে খাইয়েছি তোকে। সমস্ত বিরোধী দল, বিরোধী জাতকে বলেছি সরে যাও, নরেন এখন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার খেলা খেলবে। তোকে আমরা কী দিইনি নরেন? মঞ্চে আদবাণী, মুরলী মনোহরদের সাইড করে ... ...
ফাউয়ের দুনিয়া - আমার ছোটবেলার প্রথম স্কুলে আমার সবচেয়ে প্রিয় দিনটি ছিল ১৫-ই আগস্ট। সকালবেলায় স্কুলে যাওয়া হত। কিন্তু তারপর কোন ক্লাস হত না। ছোট ছোট পতাকা হাতে নিয়ে ছেলে-মেয়ে সবাই মিলে-মিশে বেড়িয়ে পড়তাম মিছিল করে। প্রভাতফেরী। ... ...
সে ছিল এক রংদার কফি হাউসের দুনিয়া– এক টেবলে ভাগাভাগি করে পাশাপাশি বসে সত্যজিৎ রায়, চিদানন্দ দাশগুপ্ত, কমলকুমার মজুমদার, মৃণাল সেন, সমর সেন, ও পাশের টেবলে গর্জন করছে সদ্য-ছাপা কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর প্রথাচ্যুত জোয়ান কবিদের দঙ্গল! এই ধরতাইটুকু, এই দীপ্ত আধুনিকতা এবং পঞ্চাশের দশকের কলকাতার প্রেক্ষাপট বুঝে না-থাকলে আজকের কবরখানা কলকাতায় দাঁড়িয়ে সত্যজিতের শতবর্ষ-সেলিব্রেশন অর্থহীন হয়ে যায়। ... ...
ধারাবাহিক - ওয়ার্ক ফ্রম হোম ইজ ওভারওয়ার্ক অ্যাকচুয়ালি। সকাল। দুপুর। রাত। যে কোনো সময় মিটিং বসছে। অ্যাকাউন্টস। মার্কেটিং । ম্যানেজমেন্ট । সকাল। দুপুর । রাত। অন্তহীন মিট টু প্রোমোট কনসিউমারিজম। ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছেন ত্রিদিব । ... ...
ঝাড়খন্ডের আদিম জনজাতির 'হাজারিবাগ চিত্রশৈলী' কে বিপন্নতা থেকে বাঁচিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন একজন মানুষ--তাঁর কথা ... ...
ডায়রিটা পড়ে ছিল একটা স্পটলাইটের মধ্যে। মেঝের রঙ কালো। যদিও স্বপ্নে আসলে রঙ হয় না বলে লোকে। তবে বোঝা তো যায়। অথবা স্বপ্নের যে স্মৃতি তাতে তো অন্তত মনে হয় যে সবকিছুরই যেন রঙ ছিল একটা। এটা সেই স্বপ্নের স্মৃতির বিবরণ। ব্রতীশঙ্কর ভাবছিল ডায়রিটা সে এগিয়ে গিয়ে তুলবে কিনা। ওই তো, 'অংশুমানের ডায়রি', যা কিনা তার এত পছন্দের। ডায়রিটা তুলে নিয়ে খুললেই পড়ে ফেলা যাবে যা যা গল্পে ছিল না। অংশুমান কে, কি হয়েছিল তার শেষ অবধি; সবটাই জেনে ফেলা যাবে। হয়তো তার নিজের ভবিষ্যৎ পরিণতির সঙ্গে খানিক মিলও থাকবে সেটার। এইসব ভাবছিল ব্রতী। আর তখনই ... ...
বোলানিও, যিনি সারা পৃথিবীর পাঠকদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত নাম হয়ে উঠেছেন, 'দ্য রিটার্ন' ইংরেজিতে অনূদিত তাঁর একটি গল্প সংকলন; ২০১০ সালে প্রকাশিত, লেখকের মৃত্যুর সাত বছর পরে। ২০০৬ সালে প্রকাশিত 'লাস্ট ইভনিংস অন আর্থ' বইটিতে যে গল্পগুলি ছাপা হয়েছিল, তার বাইরেও বোলানিওর বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গল্প রয়ে গেছিল; সেগুলি এই বইটিতে স্থান পেয়েছে। ... ...
এই একটি ক্ষমা যার কাছে মৃত্যুও মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। এই একটি ক্ষমা, যা মৃত্যুকে অতিক্রম করে অমরত্ব স্পর্শ করে। ... ...
আমার চরে;তোমার চরণ পড়েছিল একদিন।আকাশে ছিল না মেঘ,না বৃষ্টি, ।তবুও আম ... ...
ইদানিং মাঝেমাঝেই দেখি সোশ্যাল মিডিয়ায় মৃত্যুশয্যায় শায়িত এক দাড়িওয়ালা বৃদ্ধ মানুষের ছবির নিচে লিখে দেওয়া হয় ‘উইলিয়াম রোদেনস্টাইন অঙ্কিত মৃত্যুশয্যায় রবীন্দ্রনাথের বিরল ছবি’। স্বভাবতই এ ছবি দেখে বাঙ্গালী আবেগের স্রোতে ভেসে পড়েন, হাজারে হাজারে ‘লাইক’ দেন আর শয়ে শয়ে শেয়ার করে একটি অদ্যন্ত ভুল তথ্যকে চক্রবৃদ্ধি হারে মহামারীর মত ছড়িয়ে দেন দেশে দেশে, দিশে দিশে। অথচ তাঁরা একবারও ভেবে দেখেন না কলকাতায় রবীন্দ্রনাথ যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন চিত্রকর রোদেনস্টাইন রয়েছেন ইংল্যান্ডে, কিভাবে তিনি এমন একটি ছবি আঁকতে পারেন? ... ...
এটা আরো আগে লেখা যেত, আরো পরেও কোন সময়ে লেখা যেত - সত্যি বলতে কি, আদৌ না লিখলেও হত। কারণ এটা নেহাৎই একটা ব্যক্তিগত গপ্প। তবুও লিখছি - গেছোদাদা, মারিয়া আর পাই এর চক্করে। মূল গপ্পটা খুব ছোট, তাই একটু ভূমিকা টুমিকার গোঁজামিল দিয়ে বড় করতেই হচ্ছে আর কি।সময়টা ২০০৯। আমি তখন একটা বীমা কোম্পানিতে অপারেশনস ম্যানেজারের কাজ করতাম। এখানে একটু এই কাজের বিষয়টা সামান্য বিস্তার করি - ডাইনামিক্সগুলো বুঝতে। আমার ডেজিগনেশন ছিল "অ্যাসিস্টান্ট ব্রাঞ্চ সার্ভিস ম্যানেজার" বা এবিএসেম, যদিও ওই "অ্যাসিস্ট্যান্ট" ... ...
“কারণ এলিয়েনেশন এই পৃথিবীতেই হয়!” এবার নিজের জায়গা ছেড়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় অপরাজিতা, “আপনি যেমন করেছেন আপনার গপ্পে…”“আমি এলিয়েনেশন করেছি?”“করেননি? রাজপুত্র থেকে কেরাণীপুত্রের বৃত্তের বাইরে সবাইকে?” ... ...
করোনাকালীন ধারাবাহিক - সাদাটে একটা আলো ঘুরছিল। গোল করে ঘুরতে ঘুরতে মিলিয়ে যাচ্ছে।কোথা থেকে শুরু কোথা থেকে শেষ, কিছুই বোঝা যায় না। তীব্রতা মাঝেমাঝেই বেড়ে যাচ্ছে ।আবার খুব কমে যাচ্ছে।একটা ঝিঁঝির ডাকের মত যেন।সামনে কী ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।মাঝেমাঝে বিদ্যুতের চমক যেন।চিড়িক দিচ্ছে মাথার ভিতর। সঙ্গে সঙ্গে চোখে যন্ত্রণা ।হাত পায়ে জোর নেই কোনো। পাশ ফেরার ক্ষমতাহীন। ... ...
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কথাটা বললে অনেকের রাগ হতে পারে। তবু ক্লাস সেভেনে পড়া ভাইকে পুলিশের রেইডের থেকে বাঁচাতে গিয়ে স্কুল-পড়ুয়া সোলিহা জান পেটে বুটের লাথি খেলেন। তারপর রক্ত বমি, জ্ঞান হারানো। হাসপাতাল বাস। দুসপ্তাহ লাগল শারীরিক সুস্থ হতে। মনের ভয় কাটে নি এখনো। আরেক কন্যা জানিয়েছেন, সকালবেলা উঠে তার দিন শুরু হয় সেনাদের উঁচানো বন্দুকের নল দেখে। বাড়ির পাশেই সেনা ছাউনী। তারপর সারাদিন বাড়ী থেকে যেতে-আসতে প্রতি বার জিজ্ঞাসাবাদ, খানাতল্লাশি। নোংরা দৃষ্টিও বাদ যায় না। এটাই তাঁদের নিউ নর্মাল। ... ...
পাশের টেবিলে তিনজন বসে গল্প করছিল। আমি আড়ি পেতে শুনছিলাম। আড়ি পেতে ঠিক নয়, কানে আসছিল। অসমবয়েসী তিনজন। একজন বছর পঁচিশেকের, একজন বছর পঁয়তিরিশের, আর অন্যজন আমার বয়েসী হবে। বছর পঞ্চাশেক। পানভোজনের মাঝারি মানের রেস্তোঁরা। আমি অনেকদিন থেকে এখানে আসি। পান আর আহার দুইই ভাল। অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাম যেমন বদলেছে, আমার রুচিও। এদেরও দেখলাম রুচির তফাত। ছোটজন নিয়েছে বিয়ার। মেজোজন রেড ওয়াইন। বড়জন শুনলাম সিঙ্গল মল্ট হুইস্কি অর্ডার দিল। খাবারেও তিনজন ভিন্নপন্থী। ছোটজন অর্ডার করল ঝাল চিকেন উইংস। দ্বিতীয়জন চাইল নিউজিল্যান্ডের আমদানী ল্যাম্ব শ্যাংক। বুড়োজন নিল রেয়ার-মিডিয়াম ফিলে মিনিয়ন। আট আউন্সের। মানে খুবই ছোট। ... ...
হাজংদের ‘প্যাঁক খেলার’ মতো কক্সবাজার-পটুয়াখালির রাখাইনদের রয়েছে আরেক ঐতিহ্যবাহী পানি-খেলা উৎসব-- সাংগ্রেং। পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমারাও পানি খেলার আয়োজন করেন, তারা একে বলেন-- সাংগ্রেই পোয়ে। সেটি অবশ্য বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণের ভিন্ন এক উৎসব। আর বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলে বসবাসকারী গারো বা মান্দি জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে বীজ বপনের উৎসব ‘রঞ্চুগালা’ ও নবান্ন উৎসব ‘ওয়ানগালা’। আর চাকমাদের বর্ষ বরণ ও বর্ষ বিদায় উৎসবের নাম ‘বিঝু’। ত্রিপুরারা তাদের চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবকে বলেন ‘বৈসুক’। সাঁওতাল আদিবাসীর রয়েছে নবান্ন উৎসব ‘সোহরাই বাহা’ ও বৃক্ষ বন্দনা ‘কারাম’ উৎসবের ঐতিহ্য। ... ...
নবনীতা দেবসেনের মতো করে বলতে আর পারলুম কই – “হালের কাছে মাঝি আছে – এটা অস্থি-মজ্জায় জানি” (গৌরচন্দ্রিকা, ট্রাকবাহনে ম্যাকমাহনে)? তাই প্রতিমুহূর্তের মৃত্যু জানান দেয় এখনো বেঁচে আছ। এমনটাই হয় হয়ত আমাদের সাধারণের ঘরকন্নার সাথে। যা নেই, তাই দিয়েই বুঝি কী ছিল। পায়েতে বেড়ি যতদিন না পড়ল, ততদিন ভুলেও ভাবিনি যে ছাড়া আছি। আজ যখন শারীরিক দূরত্বের সাথে সাথে মনে বাসা করেছে সন্দেহ, সংকোচ আর ভয়ের অগুণতি ঠাণ্ডা রক্তের পোকা, তখন বুঝতে পারলাম ভালোবাসার জন্য পড়েছিল এই অপার পৃথিবী। তবু তেমন করে ভালোবাসতে পারি নি। ... ...
আতংকিত, মানুষ অসহায়। যেন এক যুদ্ধ পরিস্থিতি! যেকোন মুহূর্তে সব তছনছ হয়ে যেতে পারে। আমার এতদিনের সযত্নে লালিত সংসার এক মুহুর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারে। এখন শত্রু আর ওইখানে কোথাও নেই, শত্রু আছে আকাশে-বাতাসে, মানুষের মধ্যে মিশে! তাই মানুষ মানুষকে সন্দেহ করছে। সামাজিক দূরত্ব রাখতে মানুষ মানুষের থেকে দূরে থাকতে চাইছে। সন্দেহ হলেই অপরকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছে। করোনা-কেন্দ্রিক এক জীবন গড়ে উঠেছে আমাদের। এক মৃত্যু-মুখী চেতনার জীবন। ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া জীবন। "এরা ভিড় বাড়াচ্ছে, ওরা মাস্ক পরছে না" – এইসব নিয়ে অপরকে দোষারোপ করা একাকীত্ব যাপন। ... ...