হ্যাঁ হ্যাঁ বুয়েছি, আপনি বলছেন এ চাপ তো রাবণের মায়ের, ছেলের কোথায়? আরে মশায়, দশ খানা মাথায় ঘুম আসাটা কি চাট্টিখানি কথা? এক মাথা চ্যাঁ ভ্যাঁ করলে পাশের জনের, থুড়ি, পাশের মাথার কানে চলে যাবে, ব্যাস, যেটুকু ঘুম এসেছিল তার বারোটা।... আবার কী বলছেন? রাবণের কান কটা? কেন, কু---- না না, ঠিকই তো বলেছেন। মাথাগুলো তো সবকটাই পাশাপাশি আটকানো, কানের জন্য কোনও অ্যালাউন্স তো নেই। তাহলে বোধহয় দুটোই কান -- ফার ইস্টের একটা আর ফার ওয়েস্টের একটা। এতে অবশ্য একটা সুবিধে -- কান বেশি থাকলে কামমলাও বেশি খেতে হত। ... ...
দীপাঞ্জন খয়েরি টাই বেঁধে দিল ঝড়ের বেগে, আর মুখ চালাল আরও স্পিডে। এই রকম বোতামওয়ালা সোয়েটার নাকি বয়স্ক লোকেরা পাঞ্জাবির সঙ্গে পরে, ইয়ং ছেলেরা ইন্টারভিউ দিতে গেলে পরে না, আর টাই-এর সঙ্গে তো নয়ই, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিছু করার নেই, মুখের ভেতর থেকে কথা আর বাড়ির ভেতর থেকে সোয়েটার একবার বেরিয়ে গেলে আর পালটানো যায় না। আয়নায় এক ঝলক নিজের “স্মার্ট” চেহারাখানার দিকে তাকালাম, খুব একটা ইম্প্রেসিভ লাগল না। সত্যিই ওই সোয়েটারের সাথে টাইটা ম্যাচ করছে না। মোদ্দা কথা হল, বুঝে গেলাম চাকরি যদি আমার না হয় তা হলে ওই সোয়েটারের জন্যই হবে না। ... ...
সেদিন ক্রিস আমাকে ওয়ার্ডেন অফিসে ডেকে পাঠালে ঢুকে দেখলাম বাকি কথাবার্তা প্রায় শেষ, ক্রিস এবার ফেঁদেছে তার সেই বিখ্যাত প্রশ্ন নতুন বোর্ডারের সামনে – “ক্লজ নাম্বার ৮টা ঠিক বুঝে নিয়েছো তো?” বলাই বাহুল্য আমাদের প্রত্যেককে, মানে যারা এই বাড়িতে থাকতে এসেছিলাম, তাদের সকলকেই এই প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছিল প্রথম দিন। সেই ক্লজ্টা ছিল এই মর্মে যে ওই বাড়িতে থাকাকালীন বিবাহ সম্পর্কহীন শারীরিক ইন্টু-মিন্টুতে জড়ানো যাবে না! এবার প্রশ্ন উঠতে পারে যে ক্রিস আমাকে ডেকে পাঠাতো কেন আর এমন অদ্ভূত ক্লজেই সই করতে হত কেন সেই বাড়িতে থাকতে হলে! এটা জানতে গেলে একটু হালকা ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নিতে হবে বাড়িটির সম্পর্কে। ... ...
হারান যেন এল হড়পা বানের মত। আগল ছিঁড়ে। বাঁধন উপড়ে। রসিক ভেসে গেল সে বানের জলে! বিজলিকে হারান কেশবতী নাচনির গল্প বলে। অত যে বিখ্যাত রসিক বাউরীবন্ধু মাহাত, তাকে ছেড়ে, তার দলকে ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল না কেশবতী। তবে? বার বার শুনে শুনে মনে বল আসে। তারপর একদিন দুজন মিলে বাসে চেপে কাশীপুর টাউন। পিছনে পড়ে রইল রসিকের পুঁজি হারানোর হাহাকার, আঙ্গুল মটকানি, অভিশাপ। ... ...
আমি এক ঝটকায় সব ছেড়ে দিলাম। সোজা আব্বার পাশে। শুরু হল আমার সংগ্রাম। আমার মনে হয়েছে আমি লোক রেখে আমার মন মত সেবা আমার বাবাকে দিতে পারব না। আমার মনে হয়েছে এখন আমার বাবা উনার পাশে উনার কাছের একজনকে খুঁজবে। এখানে বলে রাখা ভাল যে আমার মা মারা গেছেন ২০১২ সালে। এবং তখন থেকেই আমি বুঝতেছিলাম যে আমাদের এই বিশাল ভাই বোনের পরিবারে আমি আর আমার বাবা এখন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। দুইজনই ব্যাচেলর। সবাই যার যার সংসারের নানান সমস্যায় জর্জরিত। তাদের চিন্তার, তাদের কাজের সেন্টার অফ গ্রেভেটি পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাদের বৃত্তের কেন্দ্র এখন আমার বাবা না। সন্তান, স্বামী তারপরে হয়ত শ্বশুরবাড়ি তারপরে আব্বা। কাজেই চাইলেও তারা পারবে না পুরোপুরি সময় দিতে। কাজেই এ কাজ যে আমার তা আমি পরিষ্কার বুঝতে পারেছিলাম। ... ...
কোম্পানির খাস-নিয়ম, যেখানেই আস্তানা গাড়বে সেখানেই যাজক আর স্কুলমাস্টার থাকতে হবে। তাই কোম্পানির কলকাতায় আছেন রেভারেন্ড বাটলার আর রেভারেন্ড কেপ। কিন্তু কলকাতায় তখন গির্জা কোথায়? একটা ঠেকনা-দেওয়া আস্তানায় প্রভু যীশুর ভজন-পূজন চলছে। সেও আবার আদতে পর্তুগীজদের গির্জা। মুর্গিহাটার আওয়ার লেডি অব দ্য রোজারি। কোম্পানির এলাকায় ফ্রেঞ্চ বা পর্তুগীজ পাদ্রীদের ঢোকা মানা। আর্মেনিয়ান চার্চ আছে একটা। কলকাতার প্রথম চার্চ। কিন্তু প্রটেস্টান্ট ইংরেজ সাহেবরা সেখানে যান কি করে? এর আগে লোকজনের থেকে চাঁদা তুলে একখানা গীর্জা বানানো হয়েছিল বটে, আজকের রাইটার্স বিল্ডিং এর জায়গাতেই। পর পর দুটো বিপর্যয়, ১৭৩৭ সালের বিধ্বংসী ঝড় আর বন্যা আর ১৭৫৬ য় সিরাজ-উদ-দৌলার আক্রমণে সে গির্জা আর নেই। ... ...
আমি খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছিলাম পৃথিবীর কোন দেশের টুরিষ্টদের সবচেয়ে বদনাম – কিন্তু সমস্যা হল এই র্যাঙ্কিং এর তো কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই, আর তা ছাড়া নিজের দেশকে কে আর খারাপ বলতে চায়! তবুও দেখেছিলাম যে শিষ্টাচার বিহীন টুরিষ্ট কিছু কিছু দেশের নামের পুনরাবৃত্তি হয়েছে – যেমন ইংল্যান্ডের ছেলে ছোকরাদের। যারা ফুটবল নিয়ে মাথা ঘামান তাঁরা জানেন যে সেই ফুটবল ফলো করতে গিয়ে নানা দেশে ঘুরে এই ভাবে এরা হুজ্জুত বাধিয়ে বেড়ায়! এদের তো ‘ফুটবল হুলিগান’ ও বলা হয়। এছাড়া আছে রাশিয়ান টুরুষ্ট – এদের ব্যবহার নাকি খুব খারাপ – জার্মান টুরিষ্টদের নাম আছে, অষ্ট্রেলিয়ানদের নাম আছে তালিকায় – চাইনীজ টুরিষ্টরা তো আছেই - এবং বেশ কিছু তালিকায় ভারতীয় টুরিষ্টদের নামও আছে শিষ্টাচার মেনে চলে না বলে। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। ... ...
বিজ্ঞান ও যুক্তির সত্যসন্ধানী ভাবমূর্তিতে নাকি আজকাল একটু কালির ছিটে লেগেছে, ও সব নাকি আসলে ততটা ‘সত্য’ নয়, যতটা পশ্চিমী মগজ-ধোলাই । ও হচ্ছে এশিয়া, আমেরিকা আর আফ্রিকার প্রাচীন জ্ঞানকে দাবিয়ে রাখা আর অস্বীকার করবার হাতিয়ার, পশ্চিমী জ্ঞানকেই একমাত্র জ্ঞান বলে বাকি পৃথিবীর ওপর চাপিয়ে দেবার ষড়যন্ত্র । এই কারণেই নাকি আধুনিক যুক্তিবাদ, বিজ্ঞান আর তারই উপজাত আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগে যুদ্ধ-বিগ্রহে, মানুষকে দমিয়ে রাখতে, নির্বিচারে পরিবেশ ধ্বংস করতে । কাজেই, এ হেন খারাপ জিনিসের জন্ম ও বাড়বৃদ্ধি যে এশিয়া আর আফ্রিকার উপনিবেশগুলোকে শোষণ না করে সম্ভব হতে পারত না, তাতে আর সন্দেহ কী ? আধুনিকতা ও পাশ্চাত্যের রোমান্টিক বিরোধিতার এই ফ্যাশনেব্ল্ বয়ানটি বিশ শতকের সাত থেকে নয়ের দশক পর্যন্ত অ্যাকাডেমিক্স-এ খুব চলত । আজ তার সুদিন গিয়াছে, তবু আজও অনেকে নিয়মিতই এ নিয়ে ফেসবুকে চর্বিতচর্বণ করে থাকেন । ভারতের মত এক সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ইংরেজের হাতে দখল হয়ে যায়, আর, মোটামুটি ওই একই সময় থেকে ব্রিটেন-এ শুরু হয় শিল্প-বিপ্লব, অতএব সেটা নিশ্চয়ই ভারত থেকে লুঠ করা টাকাতেই সম্ভব হয়েছিল, এ রকম একটা ধারণা অ্যাকাডেমিক পণ্ডিত থেকে শুরু করে সাধারণ পড়ুয়া মানুষ অবধি অনেকেই পোষণ করে থাকেন । কিন্তু, কথাটা কি সত্যি ? মানে, যে ভাবে বলা হয় ওভাবেই সত্যি ? ... ...
কিন্তু এটা কি করে হল? রবীন্দ্রনাথের গান এরকম একজন অন্য ভাবে অন্য কথায় অন্য সুরে বেমালুম গেয়ে দিলেন ! ... ...
lekha ... ...
খুনির আর ধর্ষকামীর মন, মানসিকতা একই পাড়াতে বাস করে সামান্য দূরত্বে দুটো আলাদা রাস্তায়। আত্মগোপন করে থাকতে থাকতে প্রায়ই এরা ভুলে যায় এদের আত্মপরিচয়। অথচ ভদ্রপাড়ায় বাস করবার জন্য যে পরিচয়েই এরা বাসা ভাড়া নিক না কেন, ফেক আত্মপরিচয় বহন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে এরা এমন কিছু করে বসে বা এমন কিছু বলে বসে যে একটু চেষ্টা করলেই এদের আইডেন্টিফাই করা যায়। এই বিশেষ মানসিক গঠনই সংখ্যাগুরু। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই, এরা অপোনেন্টকে রেপ করতে চায়, শেষ করে করে দিতে চায়। বিরাট এই সংখ্যাগুরু 'হতাশ' মানুষের দল, একদল সত্যিই ডিপ্রাইভড, আর অন্য এক দল, যাদের সেই অর্থে কোনো বিপক্ষকে চিহ্নিত না করতে পারাতেই হতাশ হয়ে সম্ভবত বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংখ্যালঘুকে বেছে নিয়ে এক কল্পিত যুদ্ধের অবতারণা করে, এবং সেই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে চায়। ... ...
খেলা নিয়ে টুকিটাকি, সেই শৈশবের। ভুলে থাকা – এক লহমার। ... ...
জ্ঞানউপুড় পোস্ট ঢালি আমরা।রাষ্ট্রব্যবস্থা সমাজব্যবস্থা সব নিয়েই কী অগাধ পাণ্ডিত্য! আদালতের ভারডিক্ট, তার ঠিক ইন্টারপ্রিটেশন ভুল ইন্টারপ্রিটেশন...সমীহ জাগে আর তখনই জেগে ওঠে শাঁখা সিঁদুরজনিত অন্য অন্ধকার। হ্যাঁ। আমাদের আলো-পাওয়া চোখ, ইন্টেলেকচুয়াল বিভা,বন্ধনমুক্তির জন্য কোমরের জোর, শাঁখা সিঁদুর ইত্যাদি বিবাহচিহ্ন মুছে ফেলার জোর যোগায় বই কী! ... ...
এই লেখার শুরুর আগে শুরুর গল্প বলে কিছু নেই। কিংবা আছে, কে জানে! পাই বলল একটা নিয়মিত কলাম লিখতে। ব্যাপারটা একটু ভীতপ্রদ, কারণ নিয়মমাফিক লেখা চাপ। আর তাছাড়া আজকাল গুরুতে অন্য বাকি সব লেখা বা কলামের সমাজচেতনা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, অ্যানালিসিসের তীব্রতা – এর সবকটাই আমার নাগালের বাইরে। কিন্তু পাই-য়ের রিকোয়েষ্ট ফেলা চাপের – তো যেটা ঠিক হল, আমার যা খুশী লেখার লাইসেন্স থাকবে। এটুকু বলার, যাদের ব্রেন সারাদিন জটিলতার চাপ না নিয়ে রাতের বেলা রেষ্ট নিতে পারে না – যাদের ব্রেন তত্ত্ব এবং তথ্যের ভারে নিমজ্জিত না হলে হা-হুতাশের ফীডব্যাক লুপে ঢুকে করে – তাঁরা স্বচ্ছন্দে এই লেখা এড়িয়ে যেতে পারেন। এই কলামের অনেক লেখা হয়ত মায়ের কাছে মাসির গল্পের মত হয়ে যাবে – তাঁরা আমাকে নাদান এবং চাষার ছেলে বলে অ্যাডজাষ্ট করে নেবেন। তো কি দিয়ে শুরু করা যায়? ঠাকুমা বলত শুভ দিনে নাকি মাছ পয়া জিনিস – ছোটবেলায় পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট হলে তার পিছনে পুকুরের কাতলা মাছের অবদান যে অর্ধেকের বেশী সেই বিষয়ে ঠাকুমা আমার পুরো কনভিন্সড ছিল। তাই মাছের গল্প দিয়েই শুরু হোক। লেখা ভালো লাগলে, বেল আইকনে চাপ দেবেন। ও, এখানে তো আবার বেল আইকন নেই! বাট ইউ নো, হোয়াট আই মিন। কিছু একটাতে চাপ দেবেন। ... ...