সিনেমা হলের আলো যেমন এক এক করে নিভে গিয়ে অন্ধকার হয়, তারপর বিজ্ঞাপন, ফিল্ম ডিভিসনের তথ্যচিত্র শেষ করে সিনেমা, লীলাময়ীর চোখের সামনে তেমনি অল্প অল্প করে বসুশ্রীর স্ক্রীন ফিরে আসছিল - বাড়িওলা ঘর থেকে বেরোতেই সৌমিত্র দিনের বেলা আলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে বারান্দায় - মাথার কাছের জানলার পর্দায় মস্ত ফুটো - বর্ষার জল ঢুকছে, সৌমিত্রর কাটা কাটা নাক মুখ, ট্রামে বসে আছে- জানলার বাইরে কলকাতা, কপালে একগুছি চুল, তারপর জানলার ওপারে ডুম জ্বলা ঘরে একটি মেয়েকে দেখে বাঁশি দিয়ে জানলার পাল্লা বন্ধ করে দিচ্ছে সৌমিত্র, আধশোয়া হয়ে বাঁশি বাজাচ্ছে, হা হা করে অকারণ হাসছে - ঢেউ খেলানো চুল সৌমিত্রর, মোহন অঙ্গুলি, টিকোলো নাক, চিবুকের ভাঁজ, ডান গালের নিচের দিকে একটা তিল- পটে আঁকা ঠাকুর দেবতার মত মুখ- "দীর্ঘজীবী হও বাবা, দীর্ঘজীবী হও " কে যেন বলছিল। ... ...
সে রাতে বহু লোকেরই ভৌগোলিক অবস্থান গুলিয়ে যেতে থাকে। অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ এ ওর ঘাড়ে চড়ে এক রাতে মফস্সলে মহাপৃথিবীর জন্ম হয়। ... ...
গাড়ির আলোয় যতটা দেখা যাচ্ছিল, তার বাইরে কুয়াশা। প্রদীপ আর বিজন টর্চ জ্বেলে আশে পাশে দেখছিল। এদিক ওদিক কুয়াশা ফুঁড়ে ঝোপঝাড় বেরিয়েছে। ফণিমনসার মত কাঁটা গাছ। সেইখানে অন্ধকারের একটা স্তূপ পড়ে আছে যেন। বিজনের বুক কেঁপে উঠল। ... ...
বি ... ...
ভোট আসে ভোট যায়, রাজনীতি তার অরাজনৈতিক রূপে আমাদের কাছে ধরা দেয়। রাজনৈতিক ভাষ্য কুকথায় নিমজ্জিত হয়, প্রতিশোধের আগুন জ্বলে ওঠে। সেই আগুনে নেতারা গা গরম করে আর আমরা 'ভবিষ্যতের' মুখাগ্নি করি।এই আমাদের বাৎসরিক কাজ...কিন্তু কেন? ... ...
বছর তিরিশ আগে এক তরুণ ডাক্তার গিয়ে পড়েছিলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার এক প্রত্যন্ত গ্রাম বেল্পুকুরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যা এক আশ্চর্য নেই-রাজ্য। এরপর কীভাবে তিনি ভোল পাল্টালেন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেই কথাই তিনি লিখেছেন একটি ছোট্ট বইতে। বইটি আমাকে প্রভাবিত করেছে গভীরভাবে। বইটি পড়ার সূত্রে আসা কিছু ভাবনা ভাগ করে নিলাম পাঠকদের সঙ্গে। ... ...
আমার মতে, যিনি ফ্যান আবিষ্কার করেছিলেন তিনি পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক। যেকোনো মুহূর্তে খুলে মাথায় পড়তে পারে জেনেও নিচে আরামে শুয়ে থাকতে পারা, শুধুমাত্র আরামের জন্য - এ জিনিস পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দর্শন। ... ...
ভোটের বাদ্যির চোটে তার দ্বিরাগমনের পদধ্বনি কানে আসেনি। তাই পণ্ডিত মশাই যখন নিদ্রামগ্ন, ঠিক এই সময়েই পাগলা দাশু চিনে পটকায় আগুন দিয়ে ফেললো, একটু আনন্দের জন্য। সহপাঠীদের বিন্দু মাত্র বিশ্বাস নেই কিন্তু তাদের টাইট দিতে হবে তাকে...তারপর? ... ...
আমরা সবাই, অর্থাৎ লেখক, শিল্প, স্থাপত্যবিদ, আর্কিটেক্ট এবং প্যারিস শহরের সৌন্দর্য্য ভালোবাসা লোকেরা একযোগে প্রতিবাদ করছি এই সিদ্ধান্তের যা এই শহরের সৌন্দর্য্যের প্রতি এবং তার থেকেও বড় কথা ফরাসীদের সৌন্দর্য বোধের, যা আমাদের অত্যন্ত গর্বের এক বিষয় তার প্রতি এক প্রবল আঘাত হানতে চলেছে। কি ভাবে যে আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় এই শহরের বুকে, একদম মধ্যভাগে বলতে গেলে – এই একদম ফালতু এবং দৈত্যাকার আইফেল টাওয়ার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল – তা আমরা অনেক চিন্তা করেও বুঝতে পারছি না। আমার কি আমাদের প্রিয় প্যারিস শহরের শত শত বছরের এলিগ্যান্ট এবং মনোহর স্থাপত্য দিয়ে গর্ব করা ভুলে গেলাম যে এমন এক অদ্ভুত কারখানার কালো চিমনির মত টাওয়ার শহরের মাঝখানে খাড়া করতে হবে? এই কাঠামো শুধু হাস্যকরই নয়, এক বর্বরোচিত প্রচেষ্টা যা আমাদের ফরাসী সংস্কৃতির প্রতি অবমাননা – এবং এই প্ল্যান কার্যকরী হলে সুন্দরী প্যারিসের বুকে আমরা আগামী কুড়ি বছর ধরে এক কুৎসিত নাট-বল্টু লাগানো ধাতব টাওয়ারের কালো ছায়া দেখতে চলেছি – এ যেন এক সুন্দর ক্যানভাসকে জেনেশুনে কালিমালিপ্ত করা ... ...
মনোবিদরা বলেন, ধর্ষণে আর যাই হোক যৌন পরিতৃপ্তি ঘটে না। অর্থাৎ sexual pleasure ধর্ষণে পাওয়া যায় না। তাহলে ধর্ষণ কেন হয়। ... ...
আমরা গত এক বছরে জেনেছি যে কোভিড শুধু থুতু শ্লেষ্মা কফ ইত্যাদির বড় কণা থেকেই ছড়ায় না, সে অতি সূক্ষ্ম কণাবাহিত হয়ে বাতাসে বিশেষ করে বদ্ধ ঘরে, প্রায় কিছু না হলেও ঘন্টাতিনেক কাটিয়ে দেয়। ওই সময়ের মধ্যে সে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে, এবং সেই ব্যক্তি যদি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে বা পুরনো ইনফেকশনের প্রভাবে ইমিউন থাকেন তাহলে এক কথা, না হলে মানুষটি কোভিড পজিটিভ হবেন। অতএব বদ্ধ ঘর, ভিড় ঠাসা ঘর, যেখানে ঠিকমতন ভেন্টিলেশনের অভাব, জানলা দরজা বন্ধ, সেই রকম একটি জায়গায় কোভিড আক্রান্ত কোন মানুষ মাস্ক না পরে যদি চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা বলেন, ঝেড়ে কাশেন, তাহলে তাঁর চারপাশের অনেকেই আক্রান্ত হবেন, ও শুধু তাঁরাই নন, কোভিড যেহেতু ঘরে দীর্ঘক্ষণ ক্ষুদ্র কণাবাহিত হয়ে অবস্থান করতে পারে, সেই জন্য অন্যেরাও আক্রান্ত হবেন। এই ধরণের ঘটনাক্রম ও মানুষজনকে পরিভাষায় হাইপারস্প্রেডার বলে অভিহিত করা হয়। মূলত এঁদের মাধ্যমেই কোভিড দ্রুত ছড়ায়, কাজেই যে ভাবেই হোক, এই সুপারস্প্রেড ঘটনাগুলোকে যদি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তাহলে কোভিড নিয়ন্ত্রণ করা খুব সমস্যার নয়। এই নিয়ে এবারের আলোচনা। ... ...
মাস্ক পড়া-হাত ধোওয়া-দূরত্ব বজায় রাখা-বাড়িতে থাকা এর পরেও কিছু দায়িত্ব থেকে যায়। করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের পর স্বাস্থ্যব্যবস্থার যে অবস্থা হয়েছে, তার উন্নতি করতে হলে নাগরিকদের তরফে স্বাস্থ্যে সরকারি বরাদ্দ বাড়ানো, সরকারি পরিষেবার ক্যাপাসিটি বাড়ানো, পরিষেবাপ্রদানকারীদের সাহায্য এবং সর্বোপরি স্বাস্থ্যনীতিকে প্রাধান্য দেওয়ার দাবি তোলা এবং জনমত তৈরি করা প্রয়োজন, করোনার আগামী তরঙ্গ বা প্যান্ডেমিক মোকাবিলা করতে গেলে। ... ...
রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে একটি নভেলা ... ...
স্মরণজিৎ চক্রবর্তী লিখিত দোয়েল সাঁকো বইটির আলোচনা। ... ...
এই উপন্যাসের শুরু জানতে গেলে সময়ের স্রোতকে বলতে হবে একটু উল্টোবাগে চলো। আইন করে নীল চাষ বন্ধ হয়েছে সদ্য সদ্য। তার কিছু আগের থেকে এ উপন্যাসের কুশীলবদের পথচলা শুরু। সুন্দরবন লাগোয়া ভবানীপুর গ্রামে রামতনু মুখার্জ্জীর পারবারিক প্রথা পুত্রবধূর প্রথম রজঃপাত হবে শ্বশুরের ভিটেতে। কিন্তু রামতনুর পুত্র শেখরের স্ত্রী আন্নার বেলায় এ নিয়ম ব্যর্থ হয়। আন্নার ঠাকুরদা যদুপতি তিতুমীরের সাথে লড়াইয়ে শহীদ হয়েছিল। রামতনুর পরিবার শেখরকে ... ...
অনেকের মতই গামছা দিয়ে চুল বাঁধা কিংবা লুকিয়ে লুকিয়ে দুপুরবেলা মা ঘুমোলে মায়ের সিঁদুর কৌটো আর লিপস্টিক নিয়ে সাজগোজ করাটা ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। আজ বুঝি ট্রাকচালকদের দিনের পর দিন ট্রাক নিয়ে এক রাজ্যথেকে আর এক রাজ্য যাতায়াতে ওটাই ছিল ওদের কাছে ঘরবাড়ি , তাই রকমারি রং বেরঙের জিনিসের সাথে ঝকঝকে ঝান্ডী ( সিন্হেটিক কাপড়ের ওপর সোনালী রুপোলী লেস বসানেো পতাকা বা ঝান্ডা যা লরি বা ট্রাকের সামনে ইঞ্জিন বা বনেটের দুপাশে লাগানো হয়) গুলোর ওপর ছিল আমার সবচেয়ে বেশি আকর্ষন। ওগুলো বানানোর জন্য বড়বাজার থেকে থান কাপড় আসত আমাদের বাড়ীতে। আর সে গুলো বানানোর আগে সেই সব লাল নীল সবুজ হলুদ কাপড়ের টুকরো হয়ে উঠত আমার ছেলেবেলার সাজগোজ।কখনও বা শাড়ি কখনও বা ধুতির মত । আমি সেগুলো পড়ে বেশ কয়েকদিন বাড়ীময় ঘুরে বেড়িয়ে তার গুস্টির তুষ্টি হলে সেগুলো চলে যেত দর্জির কাছে ওই ঝান্ডী তৈরী হতে। শাড়ীর ওপর টান টা বোধয় হয় আমার সে সময়েরই গায়েখড়ি। ... ...
এবারের বিষয়বস্তু দুদফা মাস্ক পরা ও আরো কয়েকটি বিষয় নিয়ে এই লেখা ... ...
করোনাভাইরাস হাওয়ায় যে ভাসমান খুব ক্ষুদ্র কণিকা দিয়ে ছড়ায়, এ নিয়ে প্রথম থেকেই বহু বৈজ্ঞানিক বলে এসেছেন, তবুও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য দেশজ স্বাস্থ্য এজেনসির চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রথম দিকে বলতেন যে করোনা "মূলত" বড় ড্রপলেট দিয়েই ছড়ায়, এবং দু-মিটার বা ছ'ফুটের দূরত্ব বজায় রাখা, ইত্যাদি অধিক প্রয়োজনীয়। সম্প্রতি একটি লেখাকে কেন্দ্র করে করোনার হাওয়ায় ভাসমান হওয়া নিয়ে কয়েকটি বক্তব্য বেরিয়েছে, তাই নিয়ে কয়েকটি বিষয়ের অবতারণা। এক, বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা ("বিস্বাস") এর বক্তব্য ছিল যে যেহেতু করোনা ভাইরাস এর প্রাথমিক সংক্রমণ ক্ষমতা কম (আর_শূন্য = ২ দশমিক ৫ এর কাছাকাছি), অতএব হাম বা সমগোত্রীয় জীবাণুর মত সে নয়, কাজেই সে যে হাওয়ায় ছড়ায়, এমনটা না ভাবলেও চলবে। এ ধারণা নানা কারণে অমূলক | এছাড়াও প্রাণী গবেষণা, হাসপাতালে কোভিড সংক্রমণ, নিউজিল্যাণ্ডের মতন দেশে যেখানে সাধারণভাবে জনসমাজে কোভিড নিয়ন্ত্রিত, সেখানে হোটেলে কোয়ারানটাইনড হওয়া লোকের মধ্যে সংক্রমণের আধিক্য, মেলা/কনসার্ট থেকে ছড়ানো, ইত্যাদি নানান সূত্র ধরে বলা যায় যে কোভিড কিন্তু হাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। কি করে এবং কি করা উচিৎ সেই বিষয়গুলো এই লেখাটিতে কিছুটা লেখা হয়েছে। ... ...
অনেকদূরের ইতিহাসের গল্প যেন ঝাপসা পর্দার ওপারের অপসৃয়মাণ ছবির মতন, এই কেউ একটু পর্দাটা তুলে ধরলো আর অমনি হাজার-হাজার ঝালর, চৌকি, পাইক-বরকন্দাজ, রাজারাণীর এক অদ্ভুত জগতের একটা টুকরো ঠিক চোখের সামনে। তখন মনে হবে যেন আসলেতে কিছুই অতীত নয়, সময় যেন বিশাল একটা মানচিত্র, এই মুহূর্তটুকু যেন তাতে একটা নিকোনো ঠাকুরদালান, নাটক হবে বলে সেজেগুজে উঠেছে সকাল থেকে। সেই বিস্তীর্ণ রঙ্গমঞ্চে আজকের নাটকঃ ক্যারেনসেবিসের যুদ্ধ। ... ...