…ঝটিকা হ্রদ-পাহাড়-অরণ্যের দেশ রাঙামাটি ভ্রমণ। আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে নিছকই ব্যক্তিগত অন্তর্দশন। ভেতরে অশান্ত পার্বত্যাঞ্চলের স্মৃতির ঢেউ তোলপাড়। ব্যাগপ্যাকে চণ্ডালের সদ্য প্রকাশিত বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ ‘পাহাড়ে বিপন্ন জনপদ (সাংবাদিকের জবানবন্দীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের অকথিত অধ্যায়)’, যেন গোটা পাঁচেক আর্জেস গ্রেনেড। সঙ্গ দেন কয়েক গুণীজন… ... ...
পৃথিবীর আরো নানাবিধ জিনিসের মত বাটিকের উৎপত্তি নিয়েও টানাবাহানা আছে – বিশেষ করে যখন আজকে যাকে বাটিক বলি তেমন ডিজাইনের কাপড় দেখা গেছে ভারত, চীন, মিশর থেকে শুরু করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নানা জায়গায়। এই সব জিনিস নিয়ে বিতর্ক শেষ হয় না – কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু! তবে মোটামুটি আজকাল যা স্বীকৃত তা হলে বাটিক পদ্ধতির উৎপত্তি হয়েছিল আজকের দিনের ইন্দোনেশীয়া দেশের জাভা দ্বীপে। বাটিক শব্দটির উৎপত্তি জাভা থাকে, মূল শব্দ ছিল ‘আমবাথিক’। জাভানীজ ভাষায় ‘আমবা’ মানে হচ্ছে চওড়া বা বৃহৎ এবং ‘থিক’ শব্দের অর্থ ‘বিন্দু’। এই ভাষাতেই বাথিকান শব্দের অর্থ আঁকা বা লেখা। কালের ক্রমে ইন্দোনেশীয়ার মূল স্রোতে যখন বাথিকা মিশে গেল তখন ‘থিক’ শব্দবন্ধ উচ্চারিত হতে লাগল ‘টি’ দিয়ে এবং সেই থেকেই আজকের বাটিক শব্দটি। ... ...
পাড়ার নিজস্ব পেপারওয়ালা, সব্জিওয়ালা, ঠাকুরমশাই ও নাপিত কাকু থাকত। পাড়ার এক ঘরের মাস্টারমশাই, বেশ ক ঘরের হয়ে যেতেও সময় নিত না। তখন মোবাইল নেই, এক বাড়িতে ফোন বাজলে অন্য বাড়িতে ছুটে যেতে হত। শোনাতে হত তাদেরকেও হাল সমাচার। ছাদের অ্যান্টেনাগুলো নিজেদের মধ্যে চুপিচুপি গল্প সেরে নিত। দড়িতে দড়িতে শুকোত লাল-নীল ছাপা শাড়ি... কাঁটা ঘুড়ি অনেকদিন ঝুলে থাকত ইলেক্ট্রিকের তারে...আর সার বেঁধে পাখিরা কখনও ওতে বসে তাদের মিটিং সারত... ... ...
ওনাকে ভারতের Commercial Art এর জনক বলে গিয়েছেন সত্যজিৎ রায়। মানুষটি ছিলেন স্বদেশীয়ানার "ফ্লেভারে" ভরপুর। Lipton Co. র কাজ হাতে নিয়েছিলেন এই শর্তে -- " আমি কিন্তু স্বদেশী চা বাগানের মালিকের বিজ্ঞাপনও বানাবো সাহেব ! ইচ্ছে হয় আমায় রাখো, নয়ত চল্লুম। " দেশের মানুষের জন্য বিজ্ঞাপন করতেন বিনা পারিশ্রমিকে। ... ...
শেষ বিকেলের আলোয় ডলি রাখাইনের ফর্সা কচিপানা মুখে লালচে আভা। কণ্ঠস্বর বাস্পরূদ্ধ, যেন অস্পষ্ট থেকে অস্পষ্ট হতে থাকে, আচ্ছা, বিপ্লব দা, আপনার তো ঢাকায় অনেক টাকার চাকরি! এ রকম একটা বাড়ি সস্তায় কিনতে পারেন? মানবিক লোকজন এসবের দখল নিলে রাখাইন মালিকটি দেশান্তরে গিয়েও অন্তত নিশ্চিন্ত যে, যাক, পূর্বপুরুষের ভিটেমাটির নিশানাটুকু তো টিকে থাকবে, সেটুকু তো আর একেবারে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে না! … ... ...
সময়টা ১৯৪০ সালের আশেপাশে – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তখন জাপানের অবস্থা ভালো নয়, নানা দিকে পিছু হটছে জাপানী ইম্পিরিয়াল বাহিনী। সাধারণ লোকেরাও বুঝতে পারছে যে এই যুদ্ধে জাপানের পরাজয় প্রায় আসন্ন। কিন্তু তখনও সম্রাট এবং তার বাহিনী শেষ কামড় দিতে লড়ে যাচ্ছে। নিত্য নতুন সৈন্য নিয়োগ হচ্ছে – প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে যুবক সম্প্রাদয় নিযুক্ত হচ্ছে যুদ্ধে যাবার জন্য। পরিবার জানাচ্ছে সেই সব তরতাজা যুবকদের বিদায় – মুখে বলছে সবাই, কারো বাবা-মা, কারো প্রিয়তমা, কারো ভাই, কারো স্ত্রী – “শপথ করো আবার দেখা হবে” – কিন্তু প্রায় সকলেরই চোখের কোণের জল টের পাচ্ছে যে এই শপথ রক্ষার প্রায় কোন উপায়ই নেই! সেদিনের দেখাই শেষ দেখা! ঠিক এমন ভাবেই বিদায় জানাচ্ছিলেন মাসাকি তাকাওকা তাঁর ছাত্রদের। মাসুকি তখন ইহিমে পার্বত্য এলাকার এক ছোট্ট গ্রামের কৃষি বিদ্যালয়ে পড়াতেন। সেই বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ছিল এক বিরাট চেরী গাছ। মাসাকি জানতেন আসল সত্যি – কিন্তু তবুও প্রত্যেক ছাত্রের হাতে হাত রেখে অঙ্গীকার করছিলেন যে আবার দেখা হবে স্কুল প্রাঙ্গণে ফুল ফুটে ভরে ওঠা চেরী গাছের তলায়। যুদ্ধের পর যেন তারা সবাই আবার স্কুল প্রাঙ্গণের চেরী গাছের তলায় ফিরে আসে। ... ...
সলিল চৌধুরীর গানের যন্ত্রানুষঙ্গের বিবর্তন ... ...
বিউলির ডালভাদ্রের যে এমন নাভিশ্বাসের গরম আছে ইন্দুবালা আগে কখনও জানতেন না। কিম্বা ঠাহর করতে পারেননি তেমন। বিয়ের পর ছেনু মিত্তির লেনে এসে বুঝতে পেরেছিলেন শহুরে দমবন্ধ করা পরিবেশ কাকে বলে। গায়ে গায়ে ঠেকানো বাড়ি। চৌকো খোলা ছাদ। বাড়ির ভেতর থেকে একটুস খানি আকাশ। করপোরেশান কলের ছিরছিরে জল। শ্যাওলা ওঠা স্যাঁতসেঁতে দেওয়াল। বড় সোঁদা সোঁদা গন্ধ। আশে পাশে কোন নদী নেই। পুকুর নেই। তার বদলে বাড়ির সামনে আছে মুখ হাঁ করা বড় বড় নালা। তার দুর্গন্ধ। হুল ফোটানো মশা। গা ঘিনঘিনে মাছি। আর সন্ধ্যে হলেই টিমটিমে ... ...
১৯২৩ সালে বোম্বে ফিরে গিয়ে মেয়েটি, একটা প্রাইভেট ডেন্টাল ক্লিনিক খুলে ফেলল। কোলবাদেবীর আবদুল রহমান স্ট্রিটে। অবশ্যই দাদার আর্থিক সাহায্যে। স্বপ্ন, পর্দার আড়ালে থাকা মুসলিম মেয়েদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। বেশ বড় ক্লিনিক, তিনটে ডেন্টাল চেয়ার ওলা। চেম্বারের নিজস্ব কর্মীও ছিল। বোধহয় ইনিই এশিয়ার প্রথম মহিলা প্র্যাকটিসিং ডেন্টিস্ট। আর সেই সঙ্গে ধোবি তালাও এর মিউনিসিপ্যাল ক্লিনিকে স্কুলের মেয়েদের দাঁতের চিকিৎসাও চলল স্বেচ্ছাশ্রম হিসেবে। ... ...
জানলার কাছে বসন্তের নরম রোদে সার দিয়ে সাজানো আছে কাঁচের বড় বড় বয়াম। মুখ গুলো ঢাকা আছে পরিষ্কার সাদা কাপড়ের ফেট্টিতে। বয়াম গুলোকে বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায় না তার মধ্যে কি রসদ লুকিয়ে আছে। কিন্তু যারা এই বাড়িতে রোজ ভাত খেতে আসে তারা ঠিক জানে। ভাতের পাতে লেবু, নু্ন, লঙ্কা দেওয়ার পাশাপাশি উড়ে বামুন ধনঞ্জয় একটু করে শালপাতায় ছুঁয়ে দিয়ে যায় বয়ামের সেই লুকোনো সম্পদ। কামরাঙা, কতবেল, জলপাই কিম্বা কোনদিন পাকা তেঁতুলের আচার। নতুন কাস্টমাররা অবাক হয়ে যায়। আর পুরোনো লোকেরা ভাবে আজ ... ...
আমাদের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল আমাদের দর্শক। নানা কারণে আমাদের সেই শক্তি এখন বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বাহিরেও আমাদের সমর্থকরা এখন সবচেয়ে অশিক্ষিত খারাপ সমর্থক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা আমাদের নিজেদের খেলোয়াড়দেরও ছাড় দেই না। ট্রল করতে করতে, মজা নিতে নিতে ক্রিকেটাররা যে মানুষ তা ভুলে যাই। ক্রিকেটারদের তো আছেই তাদের পরিবারকেও ছাড় দেই না। আমরা আশা করি আমরা যা ইচ্ছা বলব করব তারা খুব পেশাদার ভঙ্গিতে সব মেনে নিয়ে খেলে যাবে। না, আমরা এখন ওই পর্যায়ে যেতে পারি নাই। আমাদের ক্রিকেটের ইতিহাস খুব বেশিদিনের না। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের আগের প্রজন্মই তো এদেরকে শিখিয়েছে? ... ...
মনুষ্যচরিত্র ... ...
একজন মানুষ বাংলার দুর্ভিক্ষে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন, যাঁর বিচলিত হওয়ার বিশেষ কোনো কারণ ছিল না। কিম্বা এভাবেও বলা যেতে পারে, বিচলিত না হয়েও তিনি দিব্যি জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন। ইনি স্টেটসম্যান পত্রিকার তৎকালীন মুখ্য সম্পাদক ইয়ান স্টিফেন্স। আপাদমস্তক রক্ষণশীল ইংরেজ এই মানুষটি ভারতের স্বদেশী আন্দোলনের প্রতি আদৌ সহানুভূতিশীল ছিলেন না। গান্ধীর তিন সপ্তাহব্যাপী অনশনকে তিনি কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন; বলেছিলেন-প্রচারের আলোয় আসার উদ্দেশ্যে একজন রাজনীতিবিদের হীন প্রয়াস।এহেন স্ট ... ...
বাংলায় লেখা রান্নার বই ও তাদের সাংস্কৃতিক অবস্থান নিয়ে দু'চার কথা বলার চেষ্টা। ... ...
(সতর্কীকরণঃ এই পর্বে দুর্ভিক্ষের বীভৎসতার গ্রাফিক বিবরণ রয়েছে।) ১৯৪৩-এর মে মাস নাগাদ রংপুর, ময়মনসিংহ, বাখরগঞ্জ, চিটাগং, নোয়াখালি থেকে অনাহারে মৃত্যুর খবর আসতে থাকল। 'বিপ্লবী' পত্রিকার ২৩ শে মে সংখ্যায় মেদিনীপুরে ৫টি অনাহারে মৃত্যু আর ৮টি ধান লুঠের খবর বের হল।জানানো হল-প্রতিদিন ছ' থেকে সাতশো মানুষ তমলুক থেকে রেলে চাপছে ওড়িশায় গিয়ে সস্তায় চাল কিনবে বলে। বহু মানুষ তাদের ঘটিবাটি বেচে দিয়ে কলকাতার দিকে রওনা হয়ে যাচ্ছে-স্রেফ দুমুঠো খেতে পাবে এই আশায়। পাবনা থেকে খবর এল ... ...