এই লেখাটি (দেশবিদেশের অন্ত্যেষ্টি শিল্প) বুলবুলভাজা বিভাগে ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছে ... ...
বহুদিন ধরে জনৈক "হরিদাস পাল" হয়ে - "ধর্মাধর্ম" রচনা করেছিলাম এই গুরুচণ্ডা৯-তে - এখন গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশন প্রকাশ করেছে "ধর্মাধর্ম" গ্রন্থ - লেখার সময় আপনাদের যেমন সহযোগিতা পেয়েছিলাম, আশা করব এখন গ্রন্থ হিসেবেও এটি একই রকম সাড়া পাবে। ... ...
তিন-চারদিন পরের কথা। রাস্তার নারকীয় জ্যাম আমার অফিস টাইমের আয়ু আধা ঘন্টা কমিয়ে দিয়ে মেজাজকে সপ্তমে তুলে রেখেছিল। এই সময়টুকুতে কতটুকু এগিয়ে যেতে পারতাম দিনের কাজে, যতবারই ভাবছিলাম, আমার স্নায়ুদেশ ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিল। কোন কাজে মন বসছিল না। নিতান্ত অনিচ্ছায় সেদিনের স্থিতিপত্র হাতে তুলে নিতেই চোখ চলে গেল ঋণের ফিগারে। বেড়েই চলেছে, প্রতিদিনই একটু একটু করে বাড়ে, মনে হয়, দুনিয়ার শেষদিন পর্যন্ত বেড়ে চলবে, কারণ যত না ঋণ শোধ হয়, তার থেকে অনেক অনেক বেশী ঋণ অশোধিত থাকে এই পৃথিবীতে। প্রায় মগ্ন হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু একটা ছায়া সংকেত আমায় চোখ তুলতে বাধ্য করল, দেখি দুলাল একটা ফাইল হাতে দাঁড়িয়ে, সেই আগের মত, কিছুটা বাঁকানো, ঝুঁকে পড়া দেহ, আর চোখ তেমনি আবডালে রাখা। ... ...
আন্তর্জালে ভুয়ো খবর আর ভুলভাল হাস্যকর অবান্তর কথাবার্তার প্রবাহ নিরন্তরই চলে, চলতেই থাকে। তার বেশিরভাগই চোখে পড়েনা, এবং যা চোখে পড়ে তারও প্রায় সবটাই নীরবে উপেক্ষা করা ছাড়া গত্যন্তর থাকেনা। কারণ, প্রথমত, যেসব বিচিত্র ব্যাপার নিয়ে কথা হয় তার সব কিছু বিস্তারিত ভাবে জানা থাকেনা, আর জানা থাকলেও তার পেছনে পড়ে থাকতে গেলে নাওয়া খাওয়া ভুলতে হয়। কিন্তু, মাঝে মাঝে সত্যিই কিছু না বলে আর পারা যায়না, এবং এখন বোধহয় সেই মুহূর্ত আবার এসেছে। গত বছরখানেক যাবৎ কোভিড আর তার ভ্যাকসিন নিয়ে ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের নির্বোধ ও কুৎসিত শোরগোলে কান পাতাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সত্যি, এ আর বাস্তবিকই নেওয়া যাচ্ছে না! ... ...
বুড়োবুড়ির স্মৃতি ... ...
ইনশেরিন হচ্ছে আয়ারল্যান্ডের ছোট একটা দ্বীপ। গল্পটা এই দ্বীপকে ঘিরেই। খুব সহজ সরল জীবন এখানে। নিরুত্তাপ নিশ্চল জীবন এখানে। এই দ্বীপেই বাস করে পদ্রেইচ সুলেভান ও তার বোন সিওভান সুলেভান। পদ্রেইচের তেমন কোন কাজ নাই, গরুর দুধ বিক্রি করে, বন্ধু কমের সাথে আড্ডা মারে বারে, মদ খায় বাড়ি ফিরে। পদ্রেইচের বুদ্ধি একটু কম, বলা চলে সহজ সরল ছেলে পদ্রেইচ, তার তুলনায় সিওভান বেশ সপ্রতিভ, বুদ্ধিমান, বইপত্র পড়ে, দিন দুনিয়ার খোঁজ খবর রাখে। গল্পটা শুরু হয় একদিন দুধ বিক্রি করে যখন পদ্রেইচ কমকে ডাকতে যায় তখন। কম পদ্রেইচের ডাকে সাড়া দেয় না। ঘরে থেকেও সাড়া না দেওয়ার কারণ খুঁজে পায় না পদ্রেইচ। উল্টো দেখে পিছন দরজা দিয়ে কম চলে যাচ্ছে দ্রুত পায়ে। পদ্রেইচ বারে গিয়ে খুঁজে পায় কমকে। কম কোন কথাই বলতে রাজি না পদ্রেইচের সাথে। কী দোষ করল, কোথায় ভুল হল জানতে চায় পদ্রেইচ। কিন্তু কম কথাই বলবে না। চাপাচাপির পরে কম বলে এক অদ্ভুত কথা, জানায় ওর বয়স হয়ে যাচ্ছে, জীবনের বাকি যে সময় টুকু আছে তা সে সংগীতের পিছনে দিতে চায়, এমন কিছু সুর সৃষ্টি করে যেতে চায় যা আজীবন মানুষ মনে রাখবে। মোজার্ট বেটোফেন মত কিংবদন্তীর সুরকার হতে চায় ও। এ জন্য পদ্রেইচের সাথে সময় নষ্ট করতে কম রাজি না! কম শর্ত দেয় এক অদ্ভুত শর্ত, যদি এরপরে কখনও কমের সাথে কথা বলে তাহলে সে তার নিজের একটা আঙুল কেটে ফেলবে! আবার কথা বললে আরেকটা আঙুল কাটবে। ... ...
এই বসুন্ধরা সিটির সামনেই আমার তিনজন বন্ধু এক সাথে ধরা খাইল। ভোর বেলা বাস থেকে নেমে মেসে ফিরছে। তিনারা হাজির। ওরা আলগোছে সব দিয়ে দিছে। একজনের ছিল সিটিসেল মোবাইল। সিটিসেল মোবাইল তখন অনেকেই ব্যবহার করত। সিটিসেল ছিল সিডিএম সেট, মানে হচ্ছে এই সেটের সিম থাকে না। কেউ সেট অফিসে ফোন করে বন্ধ করে দিলে, ওইটা আর চালানোর উপায় থাকে না। তাই ছিনতাইকারীরা ওই সেট খুব অপছন্দ করত। আমার যে বন্ধুর হাতে সিটিসেল মোবাইল ছিল তাকে এমন অপমান করছিল সেদিন যে ও পারলে ওইদের জন্য ওইদিনই সেট কিনে! সবার সেট নিলেও ওর সেট যে নাই নাই, এইটা বুঝাতে সময় লাগছে বেশ অনেকক্ষণ! ... ...
একটা অসমাপ্ত নকশা তৈরি হত, বদলেও যেত প্রতিদিন- এই সব হিসেব না মেলা সংখ্যাদের জ্যান্ত দেখাতো- আলাদা রং, আলাদা শেপ- যেন একটা বোর্ড গেমের ঘুঁটি সব- খেলার নিয়ম তৈরি হওয়ার অপেক্ষা করছে; মনে হত, আমাকেই এই গেমের রুল ঠিক করতে হবে- তার আগে নকশাটা চিনে নেওয়া খুব জরুরী । নকশা বা একটা গল্প -স্পাই বলেছিল। ... ...
মন্দিরে মসজিদে না থাকুন, ঈশ্বর আছেন আমাদের মননে, চিন্তায়, দৃষ্টিতে, অনুভবে। সে উপলব্ধি আমাদের অন্তরে আসে অহরহ। তিনি আছেন, শরতের নির্মল আকাশ ও সোনালী রোদ্দুরে। তীব্র গ্রীষ্মের পর ঘন বর্ষার প্রভাতে। শীতের শুকনো-ঝরাপাতা বওয়া হিমেল হাওয়ায়। বসন্তের পলাশ-রাঙা অরণ্যের অভিলাষে। সমুদ্রের ব্যাপ্তিতে, পর্বতের মহিমায়। প্রতিটি শিশুর দৃষ্টি ও হাসিতে। নিরন্ন মানুষের ক্ষুন্নিবৃত্তিতে। মায়ের মমতায়, পিতার হাত ধরে উৎসবের মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানোয়। ভ্রাতৃ দ্বিতীয়ায় কপালে দিদি বা বোনের অনামিকার স্পর্শে, প্রিয়ার মুখ চুম্বনে। ... ...
হ্যারল্ড ক্রিক এক সকালে জানতে পেরেছিল, যে, তার জীবনটা তার নিজের নয়—এক লেখিকার গল্পের সে মুখ্য চরিত্র। মহিলার আবার বদনাম আছে—নিজের সব মুখ্য চরিত্রকেই তিনি গল্পের শেষে টুক করে মেরে ফেলেন। সক্কাল সক্কাল নিজের জীবনের ধারাবিবরণী শুনতে শুরু করা হ্যারল্ডের সঙ্গে অবশেষে একদিন দেখা হয় তার জীবনের লেখিকার... হ্যারল্ডের মত নেপথ্য-কথকের কণ্ঠস্বর আমরা শুনতে পাইনে ঠিকই, কিন্তু কোনো কোনো ধূসর মুহূর্তে সকলেই নিশ্চয়ই ভেবে আকুল হয়েছি: নিজেদের জীবনের—যার ওপর মালিকানা ঘোষণা করতে আমাদের একটুও সমস্যা হয় না—তার কতটুকু আমার নিজের লেখা? ... ...
আমার মনে হচ্ছিল, অনীক আর আমার সমস্যাটা যেন কিছুটা বুঝতে পারছি- আবছা আবছা- যেন একটা মাকড়শার জালের মতো, গাছের দুটো ডালের মাঝখানে আঠালো সুতোর একটা নকশা হচ্ছিল আস্তে আস্তে । আরো মনে হচ্ছিল, স্বপ্নার নদী পেরোনোর ঐ মোমেন্টটার মত আমরাও একটা মুহূর্তর সন্ধানে আছি- দ্য স্বপ্না মোমেন্ট- আমি আর অনীক, দুজনেই। মুহূর্তটা এসে গেলেই আমরা আর একসঙ্গে থাকতেই পারব না। ... ...
কিউবায় মোট পনেরোটি প্রভিন্স আর একটি যাকে ওরা বলে স্পেশাল মিউনিসিপ্যালিটি। আমরা যেখানে গেছিলাম সেই প্রভিন্সের নাম ভিলাক্লারা। আর যে শহরের এয়ারপোর্টে নামলাম বা উঠলাম , সেটা সান্টাক্লারা। এইটুকু ইনফরমেশন অবশ্য যাবার আগেই জানতাম। আর তার সাথে যেটা আমার শিকড়গত বামপন্থা জানিয়ে রেখেছিলো, যে এই সেই সান্টাক্লারা, গেরিলা যুদ্ধের তীর্থক্ষেত্র। চে'র মাত্র সাড়ে তিনশ গেরিলা বাহিনী হারিয়ে দিয়েছিলো আমেরিকান মদতপুষ্ট পাঁচ হাজার সেনা , ট্যাংক , কামান বন্দুক আর সবচেয়ে বড়ো কথা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা-কে। রক্তপা ... ...
কেন মহিলা কবিদের উপেক্ষা করা হয় ? ... ...