গরীব মানুষকে ত্রাণ দেবার সময়ে বারবার বাজারপন্থী অর্থনীতিবিদ বা ব্যবসায়ীরা যে কথাটা বলে আসেন তা হল “বিনামূল্যে” কিছু পাওয়া যায় না। সেই একই বাজারের যুক্তি কিন্তু একথাও বলে যে সস্তায় যেমন ভালো মানের জিনিস পাওয়া যায়না, তেমন ভালো মানের শ্রমও পাওয়া যায়না। শ্রমিককে কাজে ফিরিয়ে আনবার একমাত্র উপায় হল কাজের পরিবেশ ও জীবনযাত্রার মানের উন্নতি এবং অধিকতর মজুরির সংস্থান – জোর জবরদস্তি নয়। ভারতের মত দেশে যেখানে প্রায় ৯০% শ্রমিকই কাজ করেন অসংগঠিত ক্ষেত্রে এবং যাদের কোনরকম কাজের নিরাপত্তা বা অবসরকালীন সুবিধা ইত্যাদি কিছুই নেই, তাদের জন্য সরকারের দ্বারা প্রবর্তিত সুরক্ষাবলয় যথেষ্ট শক্তিশালী হতেই হবে এই বিপর্যয় কেটে গেলে তাদের কাজে আবার ফিরিয়ে আনায় উৎসাহিত করতে। ... ...
আস্তে আস্তে পিতৃতান্ত্রিকতা শব্দটার সঙ্গে পরিচয় হল। বুঝলাম, রবি ঠাকুর থেকে শুরু করে কবি সাহিত্যিকরা যতই মিলনের রোম্যান্টিকতার ছবি আঁকুন না কেন, বিয়ে নামক মিলনের সমাজ-স্বীকৃত পথটি আদতে পিতৃতন্ত্রের মেয়েদের তাঁবে নিয়ে আসার অন্যতম রাস্তা। আর সেই বিয়েতে পাওয়া সম্পত্তিটিকে চিহ্নিত করে দেওয়ার ইচ্ছে থেকেই আদতে শাঁখা-সিঁদুরের জন্ম। এই বোঝার ঢেউ এসেছিল আমাদের আগের প্রজন্মেই, আমাদের প্রজন্মে বোঝাটা একটু বেশি জোরদার হল। অনেকেই বর্জন করলেন বিবাহের চিহ্ন। অনেকে নিলেন মধ্য পন্থা – কিছু বর্জন, কিছু রেখে দেওয়া, নিজের ইচ্ছা মত। একের দেখাদেখি আরও অনেকে। ... ...
বাংলায় টিকাকারের কাজ করতেন ‘নীচু’ ব্রাহ্মণ, মালাকার/মালি, কুম্ভকার, শঙ্খকার, তাঁতি, নাপিত ইত্যাদিরা। এদের অধিকাংশই কাছেপিঠের শহর-গ্রাম থেকে আসতেন। বাংলার বাইরে আবার এসব জাতের মানুষ ছাড়াও অন্যান্য জাতের লোকেরা টিকাকার ছিলেন, যেমন কুনবি, সিন্দুরিয়া, আর রোজা। রোজা বা ওঝাদের সাধারণ কাজ ছিল ঝাড়ফুঁক। তাই টিকাকরণ একদিকে লোকধর্মের অনুসঙ্গ হিসাবে ছিল, অন্যদিকে প্রান্তিক মানুষের অপদেবতায় বিশ্বাস ইত্যাদির সাথে ঠাঁই করে নিয়েছিল বলে মনে হয়। আরও উল্লেখ্য হল, বাংলার বাইরে অন্তত টিকাকারদের মধ্যে মুসলমান ছিলেন, আবার গোয়ার মতো জায়গায় ক্যাথলিক পাদ্রিরাও ছিলেন। এরা শীতলা মন্ত্র জপ করতেন কিনা তা অবশ্য জানতে পারিনি। ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্রীয় বিধান বা আয়ুর্বেদ থেকে উৎপন্ন হয়ে টিকার প্রথাটি লোকধর্মে মিশেছিল, নাকি লোকধর্ম থেকে ব্রাহ্মণত্ব অর্জন করেছিল, নাকি উভয় দিক থেকেই একত্রে এসেছিল, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের সাহায্যে তার বিচার করা কার্যত অসম্ভব। ... ...
চন্দননগরের এক ব্যস্ত চিকিৎসক। সামনের ফ্ল্যাটে ‘করোনা বেরিয়েছে’। ক্লাবের ছেলেরা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে এসে বলল, ডাক্তারবাবু, চেম্বার বন্ধ করে দিন—রোগীদের বিপদ, আপনিও সপরিবারে থাকেন। ডাক্তারবাবু বুঝতে পারছিলেন না এটা কি হুমকি, নাকি সত্যিই শুভাকাঙ্ক্ষী এরা। শুভাকাঙ্ক্ষী বলেই মনে হল যখন, তখন বুঝিয়ে বললেন। বাজারে বাসে দোকানে না-জানা করোনা রোগীর কাছ থেকেই বিপদ, কারণ আমাদের দেশে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হয় না, সবাই মাস্ক ঠিকমতো পরতে জানেন না। সামনের ফ্ল্যাটে করোনা হয়েছে সেটা তাঁরা জানেন ও ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আলাদা আছেন, বাড়ির বাইরে করোনা-আক্রান্ত বেরচ্ছেন না। ক্লাবের ছেলেরা বুঝল। তারপর ডাক্তারবাবু বললেন, একটা কাজ করবেন? ওদের বাড়িতে নিয়মিত রান্না করা খাবার পৌঁছে দেবেন? ... ...
করোনা ভাইরাস এর অতিমারী বিলেতে একটু বেশি মাত্রায় সমস্যা সৃষ্টি করছে। সেই সঙ্গে আর একটা ব্যাপার দেখা গেছে, কৃষ্ণাঙ্গ, এশিয়ান (মানে উপমহাদেশীয়, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রী লঙ্কা), এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মানুষেরা এই নতুন রোগটিতে আক্রান্ত হলে, তাঁদের মৃত্যুর সম্ভাবনা শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে বেশি। এই ব্যাপারে স্বভাবতই এই গোষ্ঠীর লোকেদের মধ্যে খানিকটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে, সেই সঙ্গে অনেক রকম "তত্ত্বের" পর্যালোচনাও আরম্ভ হয়েছে। ... ...
ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটের ফিল্টার অপশন না হয় সরল, কিন্তু কী হবে বাংলায় বিপুল বিক্রিত, দ্রুত বিক্রিত, সেরা বিক্রিত খবরের কাগজগুলোর ক্ষেত্রে। সেখানে তো ফি রবিবার বর্ণবৈষম্যের বিজ্ঞাপনে পাতা রঙিন হয়ে ওঠে। যেমন ২১ জুন, ২০২০ আনন্দবাজার পত্রিকার ইত্যাদি ট্যাবলয়েডে ‘পাত্রী চাই’ বিভাগে একটি বিজ্ঞাপনে লেখা হচ্ছে পূর্ববঙ্গ কায়স্থ দেবারী গণ...সুদর্শন কল্যাণীর... ডাক্তার পাত্র শিক্ষিত পরিবারের রুচিশীলা ফরসা স্লিম সুন্দরী MSC/MBBS/MD স্ববর্ণ পাত্রী কাম্য। অর্থাৎ একজন ডাক্তার (শিক্ষিত সমাজের একজন বলে যাঁকে মানা হয়) তাঁর জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভিন্ন জাত/ধর্ম তো ছেড়েই দিন স্বগোত্র-গণের বেড়াজাল থেকে বেরোতে পারছেন না। ... ...
বাবার কাছে শুনলাম অনেক নার্স দিদি দু'মাস বাড়ি যেতে পারেননি। নিজের পরিবারকে এক ঝলক না দেখে যারা দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবার মত রোগীদের সেবা করছেন তাদের কুর্নিশ জানাই। আমাদের কাউন্সিলর স্যার এবং তার পুরো টিমকে অনেক ধন্যবাদ নিয়মিত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌছোনো ও পাড়া স্যানিটাইজ করার জন্য। সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ সেই সকল পরিবারকে যারা আমাদের জন্য ২১ দিন স্বেচ্ছাবন্দী ছিলেন। অনেকের অনেক অসুবিধা হয়েছে জানি, তবু সবাই সহমর্মিতা দেখিয়ে আমাদের পাশে ছিলেন ও নিয়মিত বাবার খোজ নিয়েছেন। ... ...
এখনও ট্রমা থেকে বেরোতে পারিনি আমি। অতজন অসুস্থ মানুষ একসঙ্গে.... দাদুকে নিয়ে অত রাত্রে বেরোনো, মাথার ওপর কেউ নেই কেউ নেই ভাবনা, সেই সময় বেশ কিছু কাছের মানুষের অসহযোগিতা - এগুলো মনে পড়ে যায়। এখনও মাঝে মাঝেই ঘুম ভেঙে যায়, ভাবি এই বুঝি বাবার জ্বর এল। এই বুঝি কারোর কিছু হল। তারপর ভাবি, নাহ্ সব তো কবেই মিটে গেছে! শুধু বাইরের কিছু মানুষ আমাদের অসুস্থ বানিয়ে শোকেসে তুলে রেখেছে। যদি এইরকম দুর্ব্যবহার সবাই করতে থাকেন, কি হবে তাহলে ভাবুন! যে মানুষ আজ দুর্ব্যবহার করছেন, তাঁকেও যদি কেউ তা ফিরিয়ে দেয়, বাঁচা যাবে তো? তাই পাড়ায় কারোর করোনা হলে প্লিজ পাশে গিয়ে দাঁড়ান। ... ...
হলওয়েল লিখেছেন, কেবল দক্ষ ব্রাহ্মণেরা টিকা দেবার কাজ করতেন। সাধারণত তাঁরা এলাহাবাদ, বারাণসী, বৃন্দাবন প্রভৃতি সুদূর হিন্দু পবিত্রভূমি থেকে আসতেন। টিকা দেবার পুরো সময়টাতে তাঁরা ‘অথর্ব বেদ’-এর মন্ত্র পড়তেন। হলওয়েল সাহেবের উদ্দিষ্ট পাঠকরা ছিলেন ব্রিটিশ ডাক্তাররা, বিশেষ করে রয়্যাল সোসাইটির সদস্যরা। হলওয়েল যখন লিখছিলেন তখন একই ভ্যারিওলেশন পদ্ধতি তুরস্ক থেকে ইংল্যান্ডে ঢুকেছে, তার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে ইংরেজ ডাক্তারদের সন্দেহ ছিল। ভ্যারিওলেশন হিন্দু সমাজের মাথা অর্থাৎ ব্রাহ্মণদের কাজ, বেদমন্ত্র পাঠের সঙ্গে করা হত, এমন বললে ইংরেজ ডাক্তারদের কাছে এটি বেশি গ্রহণযোগ্য হত। ভারত সম্পর্কে যেসব ইংরেজ ডাক্তার খবর রাখতেন, তাদের কাছে ব্রাহ্মণদের পরিচয় ছিল সুপ্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার প্রতিনিধি হিসাবে। আসলে কিন্তু ভ্যারিয়েলেশন কেবল ব্রাহ্মণদের একচেটিয়া ছিল না, আর পদ্ধতিটি সবসময় একই রকম থাকত না। ... ...
সেই গৌড় কালকে চেম্বার শেষের পর বলে ফেলল, ‘ডাক্তারবাবু, চারিদিকের ঘটনা দেখতে দেখতে কদিন ধরে ভগবানের উপর আমার ভরসা হচ্ছে না। বাচ্চা কোলে নিয়ে শ্রমিকেরা রৌদ্রের মধ্যে হাঁটছে, সেটাকি ভগবানের চোখে পড়েনা? ভগবান থাকলে এতগুলো গরীব মানুষের ঘর আম্ফানে ভেঙে যায়? অথচ দেখেন, যে নেতাগুলো এই অকালেও গরীবের পেটে লাথি মারছে তাদের কিছুই হয় না। দিব্যি আছে।’ ... ...
বিকেলে পাশের পাড়ায় মানে আমার বরের বাড়ির পাড়া থেকে খবর এলো, সেখানে নাকি লোকের মোবাইলে মোবাইলে আমার বরের করোনা রিপোর্ট ঘুরছে। সবাই ওকে নিয়েই আলোচনা করছে। আসলে ওই পাড়ায় আমার শ্বশুরবাড়ি, ওখানে আমার অসুস্থ শাশুড়ি থাকেন আমার ভাসুরের পরিবারের সাথে। আর আমরা শাশুড়ি অসুস্থ বলে ওনাকে এই খবরটা আমরা দিইনি। কিন্তু লোকে যেভাবে বলাবলি শুরু করলো তাতে আমরা তখন বাড়ি বসে চিন্তায় অস্থির। তারমধ্যে আমার ফ্ল্যাটের লোক আর পাড়ার লোকের থেকে তো বাজে বাজে মন্তব্য শুনছিলামই অবিরাম। ... ...
রেমডেসিভির নিয়ে প্রথম ট্রায়াল রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে (১০.০৪.২০২০) “Compassionate Use of Remdesivir for Patients with Severe Covid-19” শিরোনামে। এরপরে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র বেরোয় ল্যান্সেটে (২৯.০৪.২০২০) “Remdesivir in adults with severe COVID-19: a randomized, double-blind, placebo-controlled, multicentre trial” শিরোনামে। লক্ষ্য করার বিষয় এ ট্রায়ালটি “randomized, double-blind, placebo-controlled, multicentre” চরিত্রের – যেমনটা সঠিক বৈজ্ঞানিক ট্রায়ালের ক্ষেত্রে হবার কথা। রেমডেসিভির-এর বর্তমান আবিষ্কর্তা Gilead Sciences কোম্পানি এবং NIH স্বাভাবিকভাবেই এই ওষুধের ট্রায়াল দিয়েছে। কিন্তু এদের ট্রায়ালগুলো open-label, double-blind নয়। ফলে বিজ্ঞানের বিচারে বিশ্বাসযোগ্যতা কম। ... ...
জানেন কতজনের সঙ্গে আলাপ হয় কত বড়ো গুণীজন তাঁরা সবার কনট্যাক্ট আমি রেখে দিই। সময় এলে ঠিক কাজে লেগে যায়। এরম করে অন্তত দুটি ফুটবলারের জীবন আমি বাঁচাতে সাহায্য করেছি আমার চেনা পরিচিত দুই ডাক্তারের সাহায্যে। এই আপনার সঙ্গে আলাপ হলো আজ তেমনি কোথাও কোনও অনুষ্ঠানে তাঁদের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, কার্ড দিয়েছিলেন রেখে দিয়েছিলাম। ঠিক সময়ে কাজে লেগে গেলো। ফুটবলে আপনার পায়ে বল এলে আপনাকে ঠিক টাইমিং এ পারফেক্ট কন্ট্যাক্টে বা টাচে বল পাস করতে হবে দলের সহ খেলোয়াড়কে, আফটার অল ইটস আ টিম গেম... লাইফ ইস অলসো আ টিম গেইম... শ্রদ্ধায় প্রণাম করতে গিয়েছিলাম, হাঁ হাঁ করে উঠে দাঁড়িয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এরপর সেদিনের কলাম চেক করতে হবে ওঁকে, তাই আর বিরক্ত না করে বেরিয়ে এসেছিলাম। ... ...
ফলে আমার কাছে সে সময়ের খেলার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের, যাঁরা নিজেরা এই ত্রয়ীর সঙ্গে বা বিপক্ষে খেলেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা ছিল না। আমার খোঁজ ছিল চুনী, পিকে বলরামের খেলার বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য নিয়ে। কথা বলেছি, চন্দন পাল চৌধুরী (৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত খেলেছেন—এভিনিউ সম্মিলনী, স্পোর্টিং ইউনিয়ান, জর্জ টেলিগ্রাফ, ভ্রাতৃ সংঘের মতো ক্লাবে। মূলত মাঝমাঠের খেলোয়াড়, প্রয়োজনে ইনসাইডেও খেলেছেন), কানাই সরকার (৬০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে ৭০ দশকের প্রথম দিকে খেলেছেন, এরিয়ান্স ও তিন প্রধানেই। ভারতীয় দলেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। গোলকিপার), অরুময় নৈগম (৬০-এর দশকে মোহনবাগান ও ভারতীয় দলে নিয়মিত খেলেছেন। উইঙ্গার) সুকুমার সমাজপতি (মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও ভারতীয় দলের নিয়মিত সদস্য, পরে ধারাভাষ্যকার হিসেবেও খুব জনপ্রিয় ছিলেন। উইঙ্গার)—এঁদের মতো ব্যক্তিত্বের সঙ্গে। এ ছাড়া সুনীল ভট্টাচার্য (৬০-এর দশকের শেষ দিক থেকে ৭০-এর দশকে ইস্টবেঙ্গল ও ভারতীয় দলে নিয়মিত খেলেছেন। ডিফেন্ডার) ও নভি কাপাডিয়া-র (ক্রীড়া সাংবাদিক) স্মৃতিচারণ থেকে সমৃদ্ধ হয়েছি। ... ...
খেলার শেষে সবাই মুরি যাচ্ছেন বাসে করে। মুরি থেকে ট্রেন। দু ঘন্টার জার্নি। পিকে চুনী একই বাসে। সময় কম, বাস চলছে জোরে, ট্রেন ধরতে হবে তো। হঠাৎ চোখ ধাঁধিয়ে গেল ড্রাইভারের, উল্টোদিকে বোধহয় একটা বাস বা লরি কিছু ছিল, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদের দিকে ছুটছে বাস। বাসে রয়েছেন বসে আগামী দিনের দুই সুপারস্টার, প্রদীপ আর সুবিমল। পিকে আর চুনী। আঠারো মাসের ছোটো বড়। মোটামুটি নাম হয়ে গেছে দুজনেরই। সবাই ধরে নিয়েছে এরা কলকাতা মাঠ কাঁপাবে আর কিছুদিন পরেই। বাস ছুটতে ছুটতে ধাক্কা খেল বড় পাথরে। কাত হয়ে সামলে গেল। ভাগ্যিস গেল। না হলে? ... ...
অরুণাচলের অন্যান্য ব্যাঘ্র সংরক্ষণ এলাকায় যত বাঘ আছে তার চেয়ে ঢের বেশি আছে দিবাং ভ্যালিতে। অরণ্যের প্রতি ভালবাসা এতো গভীর যে ইদু মিশমি সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের সমাধিতে রাখা থাকে বিভিন্ন শস্য ও বৃক্ষের বীজ সম্বলিত একটি বটুয়া। মৃত্যুর পরেও যেখানে সে যাবে, সেখানেই গড়ে উঠবে গহীন অরণ্য। গত ২০ শে এপ্রিল ২০২০ করোনা অতিমারিতে ব্যস্ত সাধারণকে অন্ধকারে রেখে একটি ভিডিও কনফারেন্সের পর সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে এই স্বর্গে বন কেটে গড়ে উঠবে বিশাল এক হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্ট, দেশের বিশালতমগুলির মধ্যে একটি। এই প্রজেক্টের অঙ্গ হিসেবে সরকারি আস্তিনে লুকোনো তাসের মধ্যে রয়েছে দুটি বিশাল বাঁধ, দীর্ঘ সুড়ঙ্গ, ভূগর্ভস্থ পাওয়ারহাউস, ৫০ কিমি ব্যাপ্ত রাস্তাঘাট। এসব করতে কিছু গাছ কাটা তো অবশ্যম্ভাবী। এই "কিছু"র সংখ্যা হলো ২.৮ লাখ গাছ, যাদের অনেকেরই গুঁড়ির ব্যাস ৮ মিটারেরও বেশি। ... ...
জেনার যেভাবে গো-বসন্ত আর গুটিবসন্ত বীজাণু মানুষের দেহে ইচ্ছেমত প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন, আজকের দিনে এইভাবে সরাসরি মানুষের ওপর পরীক্ষা করা যায় না। কিন্তু সেসময় এরকম পরীক্ষা চলত । আর তখন চিকিৎসাশাস্ত্র এতোই অনুমাননির্ভর ছিল, মানুষের ওপর করা পরীক্ষার এতোই অভাব ছিল যে এক-দুজন মানুষের রোগ ঠেকানো গেলে সেটাকেই একটা বেশ বড়সড় প্রমাণ বলে ভাবা হত। তাই জেনার-এর টিকার এমন হাতেগরম ফল সাধারণভাবে অগ্রাহ্য হবার কারণ ছিল না। কিন্তু ইংল্যান্ডের ডাক্তার সমাজ এই টিকা আবিষ্কারকে চট করে মেনে নিতে পারলেন না, বরং তাদের একটা বড় অংশ একে উড়িয়ে দিতে চাইলেন। ... ...
নার্স দিদিরা পৃথিবীর অন্যতম নিয়ম শৃঙ্খলে আবদ্ধ ক্যাডার। এনারা যেভাবে মুখ বুজে বিনা প্রতিবাদে হায়ারার্কি মেনে চলেন তা শেখবার মতো। প্রথম দিকে সেটা আমার কিছুটা বিরক্তিকরই লাগত। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম, চরম হট্টগোলের সরকারি হাসপাতালগুলি টিকিয়ে রেখেছে তাঁদের এই অসাধারণ শৃঙ্খলা। তাছাড়া সম্ভবত এই ক্যাডারের সকলেই মহিলা হওয়ায় এনাদের মধ্যে করাপশন প্রায় দেখাই যায়না। নার্স দিদিদের কাছে শিখেছি অনেক কিছু। এনারা অনেকেই অত্যন্ত ভালো ছাত্রী। আজকাল তো উচ্চমাধ্যমিকে ৮০% এর বেশি নম্বর না পেলে জি এন এম নার্সিং এ সুযোগ পাওয়াই মুশকিল। ... ...
এ যেন এক মৃত্যুমিছিল চলছে – করোনার মৃত্যুমিছিল। ১৩.০৬.২০২০-তে worldometer-এর তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে আক্রান্তের সংখ্যা ৭,৭৬৫,৮৭৮ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪২৮,৭৫৩ জনের, সেরে উঠেছে ৩,৯৯৮,৭৫১ জন। এর মধ্যে খোদ আমেরিকাতেই মৃত ১,১৬,৮৩১ জন। সংক্রমণের হারে ভারত এখন ৪র্থ স্থানে – সংক্রমিতের সংখ্যা ৩১০,১৩১, মৃত্যু ঘটেছে ৮,৮৯৫ জনের, সেরে উঠেছে ১৫৪,৬৯৬। কিন্তু ভারতে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ এখনো ঊর্ধমুখী বা এক্সপোনেনশিয়াল। তাহলে আমাদের মুক্তির উপায় কি? এখানেই আসবে আমাদের ইমিউন সিস্টেম নিয়ে প্রাথমিক কিছু কথাবার্তার প্রসঙ্গ। ... ...
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বলতেন 'দেবশিল্পী'। সলিল চৌধুরী বলতেন, 'হেমন্তদা বা লতা যখন আমার গানের শিল্পী, তখন কল্পনা আমার দিগন্ত ছাড়িয়ে যায়। Sky is my limit.' আকাশই তাঁর সীমা হতে পারে। আকাশ পেরিয়ে ঐ পারেও রয়েছে তাঁর রাজপাট। বাঙালি হয়ে জন্মাবার সুবাদে যেসব ওয়রিশন ফাঁকতালে পেয়ে গেছি, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে একটি সেরা অহংকার। নীল ধ্রুবতারা। সব প্রশ্ন থেমে যায় সেদিকে তাকিয়ে। তাকিয়ে থাকাটাই আমাদের প্রাপ্তি । অমলিন উজ্জ্বল উদ্ধার। ... ...