পার্মাফ্রস্ট বলে প্রকৃতিতে একটা ব্যাপার আছে যা স্থলভাগের প্রায় ২৪% এলাকা জুড়ে এর অবস্থান করে । পার্মাফ্রস্ট মানে মাটির নিচে সহস্র-অযুত বছর ধরে জমে থাকা চিরবরফ অঞ্চল। এই হিম-মৃত্তিকাই ধারণ করে আছে মানব সভ্যতার আদিম অস্তিত্বকে। এর বুকেই দাফন আছে বরফ-যুগের প্রাণীদের হাড়-কঙ্কাল, এমনকি কিছু গাছপালার অংশও। এগুলি এতটাই গভীর এবং পুরু বরফের স্তর যে, সাইবেরিয় অঞ্চলের বাসিন্দারা মাটি খুঁড়ে ঘর বানিয়ে তাতে শার্কের মত বৃহৎ প্রানীর মাংস অব্দি সংরক্ষণ করে বছরের পর বছর ধরে । বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এই বরফও নাকি এখন দ্রুত গলে যাচ্ছে । কেননা, বিশ্ব-উষ্ণায়ণের জেরে এই সব অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ছে লাগামছাড়া হারে। ২৩ জুন, ২০২০ জানা গেল যে, রাশিয়ার মস্কো থেকে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উত্তর মেরুবৃত্তের অন্যতম শীতলতম এলাকা ভেরখোয়ানস্ক শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস । এখানে সচরাচর লোকজন বছরের বেশরভাগ সময়ে মাইনাস ৫০ ডিগ্রির তাপমাত্রায় জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত । বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অংশে অনেক দ্রুত বরফ গলে যাচ্ছে, তাও ধীরে ধীরে নয়, প্রায় রাতারাতি। ... ...
প্রতিটি কোশের মধ্যে আয়ন চ্যানেল (ion channel) নামক একটি ফাঁপা অংশ থাকে এবং charged particles বা আয়ন ওই চ্যানেলের মধ্য দিয়েই যাতায়াত করে। এই চ্যানেলের মধ্যে কিছু সূক্ষ্ম দরজা থাকে, যা নিয়ন্ত্রণ করে ওই পথে কতটা আয়ন কোন্ গতিতে ও কোন্দিকে যাবে। কোশগুলি আবার অন্যান্য কোশের সঙ্গেও তথ্য আদানপ্রদান করে গ্যাপ জাংশান (gap junction)-এর মাধ্যমে। লেভিনের উদ্দেশ্য ছিল একটি মাইক্রোস্কোপিক যন্ত্র কেনিউরোটক্সিনের মতো কাজ করিয়ে যে-কোনো চ্যানেলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করা, যার ফলে যে-কোনো কোশের বিভাজন, অঙ্গগঠন, আকার ও অবস্থান নির্ধারণ করতে পারা যাবে ইচ্ছেমতো। মানে খুব সহজ ভাষায়—একটা ত্রিভুজাকৃতির ব্যাং বা আমাদের বিখ্যাত প্রবাদ অনুযায়ী ‘সাপের পাঁচ পা’ গঠন করাও সম্ভব হতে পারে! ... ...
নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকারকে সরাসরি লঙ্ঘন করছে এই মুখ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া। শুধু তাই নয় মানুষের মনে ঢুকিয়ে দিচ্ছে অজানা ভয়। সন্দেহ তালিকায় না থাকার আপ্রাণ চেষ্টা স্বরূপ সে ক্রমশ গুটিয়ে নেবে তার স্বাভাবিক অভিব্যাক্তিটুকুও। ভুলতে বসবে সংবিধান তাঁকে দিয়েছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমবেত হবার অধিকার, মিছিল-মিটিং করার অধিকার। শিরদাঁড়া বেয়ে এক অজানা ভয় নেমে আসবে, নিয়ন্ত্রণ করবে তাঁর সমস্ত গতিবিধি, ঘুম ভেঙে ওঠা থেকে রাতে শুতে যাওয়া পর্যন্ত। সামগ্রিক এই ভয়ের চর্চায় কি গণতন্ত্রের মূল ভিতটাই প্রশ্ন চিহ্নের মুখে পড়ে যাচ্ছে না? ... ...
এর মধ্যে নতুন উপদ্রব করোনা সেন্টার এবং মানুষের আতঙ্কে বিকারগ্রস্ত আচরণ। বাড়ির পাশের হস্পিটাল সামান্য জ্বর কাশি হলেও পাঠিয়ে দিচ্ছে করোনা সেন্টারে। সেখানে সুস্থ স্বাভাবিক কোনো মেন্টেনেন্স নেই। যে কেউ, যার সরকারি হস্পিটালের অভিজ্ঞতা আছে, সে আন্দাজ করতে পারবে সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার কিরকম হতে পারে। শুধু অব্যবস্থা তো নয়, সাথে জড়িয়ে আছে ভয়। যে ভর্তি তারও মানসিক অবস্থার অবনতি হবে। যারা কাজ করছে ওই সেন্টারে, তারাও ঢাল তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দার হয়ে দুরুদুরু বুকে কতটাই বা পরিষেবা দেবে। এরপর আশে পাশের মানুষজন যদি শোনে কোভিড সেন্টারে গেছে, রোগী এবং তার পরিবারের করোনা হোক না হোক, বাড়িতে-এলাকায় স্বাভাবিক ভাবে থাকা যে আর হবেনা এটা নিশ্চিত। যদি বাড়ি বয়ে একদল আতঙ্কগ্রস্ত কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকজন মারতেও আসে, মৃত্যুর আগে যে প্রশাসন এসে পৌঁছাবে না এ গ্যারান্টি দেওয়াই যায়। পৌঁছালেও সেটা ওই ১-২% ব্যতিক্রম লিস্টে। ফলে বাবা এবং বাবার মতো বহু মানুষ যে কোনো ধরনের অসুখই অত্যন্ত যত্নে লুকিয়ে রাখছে। এমনকি নিজের বাড়ির লোকের থেকেও। ... ...
ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট তৈরি করার সময়ে আন্দাজ পেয়েছিলাম এটা সরকারি সদিচ্ছা এবং অর্থ জোগাড় করে ফেললেই তক্ষুনি করে ফেলা যায় না। এমবিবিএস ডিগ্রি থাকলেই যে এটা সামলাতে পারবেন যে-কোনো ডাক্তার এমন নয় ব্যাপারটা। এখানে কাজ করতে হলে পাস করার পর অন্তত বছর দুয়েক ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা চাই তাঁর, বয়স হতে হবে পঞ্চাশের নীচে, কারণ শারীরিক পরিশ্রমও প্রচুর একাজে, সবকটা ইন্দ্রিয় সজাগ রেখে কাজ করতে হয়। প্রয়োজনে রোগীকে অজ্ঞান করে, তাঁর ফুসফুসে টিউব ঢুকিয়ে, ভেন্টিলেট করার দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে এই চিকিৎসকের। সামান্য এদিক-ওদিক হলেই প্রাণসংশয় হবে রোগীর। অতএব এ কাজ ডাক্তার মাত্রেই করতে পারবেন, এমন নয়। ... ...
একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে – যদি ৭০% থেকে ৯০% জনসংখ্যার সংক্রমণ ঘটে (১০.০৪.২০২০-তে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাব্লিক হেলথের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী) তাহলে আমরা হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করেছি এমনটা ভাবতে পারি। যদি এ পরিমাপ ৪০-৫০%-ও হয় তাহলেও এরকম একটা পরিসংখ্যানে পৌঁছুনো কার্যত অসম্ভব। নিউ ইয়র্কের মতো করোনা-বিধ্বস্ত শহরে যেখানে মৃত্যু হয়েছে ২৪,২৯৯ জনের (সমগ্র ভা্রতের চেয়ে অনেক বেশি) সেখানে শহরের সমগ্র জনসংখ্যার মাত্র ১২.৩ থেকে ১২.৭% আক্রান্ত হয়েছে। ফলে ওখানেও হার্ড ইমিউনিটির কোন ভরসা বৈজ্ঞানিকেরা দেখতে পাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে ভারতবর্ষ উজার হয়ে গেলেও শেষ অবধি হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে কিনা সন্দেহ আছে। ... ...
তবে ডিনার পর্বের এখনও বাকি আছে। অর্ডার নিয়ে সুন্দরী ওয়েট্রেস চলে যাবার পর আবার শুরু হল আলাপ। বিষয় থেকে বিষয়ে ভাসছি যেন বানের জলে কলার ভেলার মতন। এরই মধ্যে কিঞ্চিৎ পানীয়। এ বিষয়ে ভাষার অবতার বোধগম্যতা সমস্যা হয়নি অবশ্য। এবং তারপর অপূর্ব ক্রিম ও গাজরের স্যুপ। যদি অভয় দেন তো বলি, ইউরোপীয় কন্টিনেন্টালস্যুপ এখনও চিনে স্যুপকে দশ উইকেটে ইনিংসে হারাবে। তা চিনেরা সারা পৃথিবী যতই তাদের খাবারে ছেয়ে ফেলুন না কেন। তারপর একসময় প্রধান পদটিও এসে গেল। অবশ্য মাছ বাদে তাতে আছে চটকে মাখা আলু সেদ্ধ আর একজামবাটি সালাদ, যার অনেকগুলো পাতা যে খাদ্য আগে জানতাম না। সেদ্ধ মাছটি একাই যদিও কাফি ছিল। ট্রাউট জাতীয় কোনো মাছ, বিঘৎ খানেক সাইজ। ইন নদীতে প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায় এমনটাই শুনলাম। অস্ট্রিয়ান জার্মান নামটাও শুনেছিলাম, কিন্তু ওইটুকু মাছের অত বড়ো খটোমটো জার্মান নাম মনে রাখার মতো এলেম আমার নেই। ... ...
সময় যত গড়িয়েছে সাইরাকিউজ রণক্ষেত্র ছেড়ে ততই পিছিয়ে চলেছে এথেন্স বাহিনীও। আর কিছুদূর যেতে পারলেই নিশ্চিন্ত হবেন তাঁরা। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল এতক্ষণ, এক্কেবারে পরিকল্পনা আনুযায়ী, নিখুঁত। হঠাৎ, চাঁদের আলোটা যেন কেমন কমে যেতে লাগল। অবাক বিস্ময়ে এথেন্স বাহিনী আকাশে চেয়ে দেখে—চাঁদের অনেকটা অংশই নেই, পুরো গায়েব। কিন্তু তা কী করে সম্ভব? আজ তো পূর্ণিমা। আকাশে তো পুরো চাঁদই থাকার কথা। সন্ধ্যায় তো পুরো চাঁদই দেখেছিল তাঁরা। তাহলে, ব্যাপারটা কী হল? আর যত সময় যাচ্ছে ততই ক্ষয় পেতে থাকছে চাঁদ। চারিদিকে অমাবস্যার আঁধার নেমে আসছে যেন! সবাই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। সৈন্যদল মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল। সেনাপতি নিসিয়াসের নেতৃত্বে বসল জরুরি মন্ত্রণা সভা। এদিকে ক্ষয়তে ক্ষয়তে ক্রমেই অদৃশ্য হলেন চন্দ্রদেব। ... ...
কথা শুরু হয় রূপকলা কেন্দ্রের সঙ্গে, যার অধিকর্তা তখন আইএএস অনিতা অগ্নিহোত্রী। ইসরো এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে মউ সাইন হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষে সই করেন এম এন রায় ও অনিতা অগ্নিহোত্রী। ইসরোর পক্ষে ডিরেক্টার মি ভাটিয়া। আজ থেকে পনেরো বছর আগের, পনেরো কোটি টাকার প্রজেক্ট। ইসরো আর্থস্টেশন থেকে স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইডথ ফ্রি দিয়েছিল। এমওপিআর এবং ডিএফআইডি প্রজেক্টের টাকায় পশ্চিমবঙ্গেও রমরমিয়ে শুরু হয়েছিল এডুস্যাট গ্রামস্যাট প্রজেক্ট। একটা সময়ে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সারা ভারতের এডুস্যাট নেটওয়ার্কের বেস্ট ইউটিলাইজেশন স্টেট। যেখানে রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে, প্রতিটি ব্লক প্রাইমারি হেল্থ সেন্টারে, ব্রডকাস্টিং মোডে শিক্ষাদান সম্পূর্ণ হতে পারে। ... ...
এই সামগ্রিক পরিকল্পনা সফল করার জন্য NCERT-র বিভিন্ন কমিটি বদলে দেওয়া হয়, প্রতিথযশা ঐতিহাসিকদের পদচ্যুত করা হয়। কিন্তু নতুন পাঠক্রম অনুযায়ী কারা বই লিখবেন, কারাই বা পর্যালোচনা করবেন? শেষ পর্যন্ত এসব বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি, যদিও NCERT-র তৎকালীন অধিকর্তা জানিয়ে রাখেন, নতুন বইগুলোর বিষয়বস্তু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করছে কি না, ধর্মবিশেষজ্ঞদের দিয়ে পর্যালোচনা করা হবে! সেইসময়ের শিক্ষা তথা মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মুরলী মনোহর যোশী এতে যোগ করেন, ধর্ম-সংক্রান্ত যে-কোনো বিষয় ধর্মের প্রধানদের অনুমোদন সাপেক্ষেই পাঠ্যবইয়ে ঢোকানো যাবে [Mukherjee, Mridula and Mukherjee, Aditya, 2001]! অর্থাৎ যুক্তি, তথ্য, ঐতিহাসিক সত্য, বিজ্ঞানমনস্কতা দিয়ে আর জ্ঞানচর্চা করা যাবে না, জ্ঞানচর্চা পরিচালিত হবে ধর্মগুরুদের নির্দেশে। ... ...
আমার এক স্কুলের বন্ধু, তার স্ত্রী, বাবা ও মা জ্বর নিয়ে দেখাতে এসেছিলেন। তাদের অন্তত একজনকে কোভিড – ১৯ পরীক্ষা করাতে বলেছিলাম। চারজনই করিয়েছে এবং চারজনই পজিটিভ। ওরা স্বামী- স্ত্রী ভালো আছে। কিন্তু বাবা মায়ের জ্বর, কাশি কমেছে না। লোকাল কাউন্সিলরকে জানিয়েছে। ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে চুপচাপ বসে আছে। ফোনে স্বাস্থ্যদপ্তরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। সবচেয়ে মুশকিলে পড়েছে ওদের চার বছরের মেয়েকে নিয়ে। সে সম্পূর্ণ সুস্থ। ঘরে চারজন করোনা রোগীর সাথে থাকছে। তাকে কোথাও পাঠিয়ে দেওয়ারও উপায় নেই। ... ...
নবাবের শহরে সব কিছু মাপমতো। এধার ওধার হবার কোনো জো নেই। বাজপায়ীর মালিক নিজে এসে বলেন, শুধু আলুর সবজি কেন? মটর লাও, মটর। মাখোমাখো সুসিদ্ধ মটরের রসা আর সেই দেবভোগ্য কচুরি ফিরদৌসকে ভুলিয়ে দেবে, গ্যারান্টি! তেলতেলে, চুপচুপে, মশল্লায় বিজবিজে, কোনোটাই নয়। আরাম করে চোখ বুজে খেতে হয়। সেখান থেকে চটপট আবার আমিনাবাদ। আবার আমিনাবাদে কেন? কেন আবার? ফিরদৌসকে খুঁজতে বেরিয়েছি, আর মাথায় দোপাল্লি টোপি উঠবে না। তা হয় না। তবে কিনা আমিনাবাদ ভারী ঘিঞ্জি বাজার। বাজারের ভেতরে গাড়ি ঢোকে না। পায়ে হেঁটে টোপির দোকানের ঢুকি। নবাবদের শহর বলে কথা। এক জমানায় ফ্যাশন আর ইস্টাইলে রাজধানী দিল্লিকে টক্কর দিত! একবার চারকোনা টুপি চালু হল। তার নাম চৌঘশিয়া। তারপর পাঁচকোনা। মাথায় টুপি পরানোর জন্য কম মেহনত করেনি এই শহর। ... ...
অষ্টম শতাব্দীতে আমাদের দেশের চরক সংহিতায় বর্ণিত শল্যবিদ্যা আরবি ভাষায় অনূদিত হয়ে ক্রমে ইতালি অবধি পৌঁছয়। সেই বিদ্যার চর্চা করেই আবার ষোড়শ শতকে ইতালির শল্য চিকিৎসক গ্যাসপার তাগলিয়াকোজি বা তালিয়াকোতিয়াস নাসিকা পুনর্গঠনের পথিকৃৎ হয়ে ওঠেন। সিফিলিস-আক্রান্ত রোগীরা জীবনে নতুন আশার আলো দেখতে পান। তালিয়াকোতিয়াসের খ্যাতি, পসার ও জনপ্রিয়তা এমন তুঙ্গে ওঠে যে তিনি পরিচিতি পান "লাভ ডক্টর" হিসেবে। "ট্যাটলার"-এ স্টিল নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে গিয়ে তাঁর কথাই উল্লেখ করেছেন। ... ...
ধর্মনিরপেক্ষতার গুরুত্ব অনেক দিন ধরেই কমছিল। আয়া সোফিয়ার মসজিদীকরণ সেই ভাবনায় সীলমোহর দিল। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে কি এমন ঘটছে যার জন্য মানুষ আবার মধ্যযুগে ফিরে যেতে চাইছে? সাম্য, উদারতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি যে ঝোঁক বিংশ শতকের আধুনিক রাষ্ট্রগঠনে দেখা যাচ্ছিল তার থেকে এত তাড়াতাড়ি মানুষ মুখ ঘুরিয়ে নিতে চাইছে কেন? আধুনিক রাষ্ট্রনির্মানের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা, বহুত্ববাদ ও জাতীয়তাবাদের আদর্শ অনুপাত কী হওয়া উচিৎ? রাষ্ট্র এবং প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকে আলাদা করে দেওয়ার গুরুত্ব আধুনিক রাষ্ট্রগুলো বুঝেছে। সুফলও পেয়েছে। কিন্তু বহুত্ববাদে আঘাত না দিয়ে কিভাবে ব্যবহারিক জীবনে ধর্ম বর্জনের চর্চা চলবে সেটা এখনও আয়ত্ত্ব করা যায়নি। ... ...
`আজকের অতিমারির সময়ে ১৯৩০-এর দশক থেকে গৃহীত ড্রপলেট এবং এরোসল সংক্রান্ত ধারণার জগতে করোনা ভাইরাসের Airborne Transmission-এর তত্ত্ব একটি প্যারাডাইম শিফট, যা ভবিষ্যতে আরও অনেক বিষয়কে ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অতীতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অতি সাধারণ একটি অভ্যাসের পরিবর্তন এরকম প্যারাডাইম শিফট ঘটিয়েছিল অস্ট্রিয়ার চিকিৎসক-বিজ্ঞানী Ignaz Philipp Semmelweis-এর প্রবর্তন করা সার্জারির আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বাধ্যতামূলক অভ্যেস। তাঁর প্রবর্তিত অতি সামান্য (যেখানে কোন বড়ো প্রযুক্তির চেকনাই নেই) এই নতুন পদ্ধতি জন্মের পরে মায়েদের মৃত্যুর হার লক্ষ্যণীয়ভাবে কমিয়ে দিল। তাঁকে বলা হত “saviour of mothers”। ... ...
ব্রিটিশ মেডিক্যাল অফিসার এবং ইঞ্জিনিয়াররা জ্বরের সংক্রমণ ছড়ানোর কারণ হিসেবে মূলত ধান খেতে জমে থাকা জল এবংপাড়া-গাঁয়ের নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকেই দায়ী করলেন। নিজেদের প্রশাসনিক দায়িত্ব এড়াতে মহামারীর জন্যে পরাধীন দেশকেই “land of dirt, disease, and sudden death” বলে দাগিয়ে দেওয়াটা ছিল সাধারণ রেওয়াজ। কিন্তু এই তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে “হিন্দু প্যাট্রিয়ট” কাগজে ১৮৭২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ১৮৭৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর অবধি মোট ১৪ টি নিবন্ধ লিখলেন ১৮৬৪ সালের এপিডেমিক কমিশনের ভারতীয় সদস্য রাজা দিগম্বর মিত্র। ১৮৫১ সালের ২৯ অক্টোবর কলকাতার কাসাইটোলায় (বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট) গঠিত ব্রিটিশ ইন্ডিয়া এসোসিয়েশনেরও প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। নীল চাষের সমস্যায় রায়তদের পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশদের কাছে সওয়াল করা, মহামারী, দুর্ভিক্ষ, বন্যা, সতীদাহ, শ্মশানঘাটের উন্নয়ন, খাজনার হারের ক্রমাগত বৃদ্ধি প্রভৃতি সামাজিক বিষয় নিয়ে আইনগত ভাবে ব্রিটিশদের মোকাবিলা করা ছিল সংগঠনের অন্যতম কর্তব্য। ... ...
যখন খবরের অভাব ঘটে তখন সাধারণ মানুষকেও সেলিব্রিটি করার চেষ্টা হয়। তবে তার জন্য সাধারণ মানুষদের বড় বেশি মূল্য দিতে হয়। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হলে সর্বভারতীয় খবর হয়। তবে তা দিন দুয়েকের জন্য। একজন অভিনেতার আত্মহত্যার ঘটনায় ঘন্টার পর ঘন্টা টিভিতে আলোচনা চলে। সঞ্চালক নিজেই রীতিমতো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে আঠাশ জন কৃষক আত্মহত্যা করলেও তাঁদের পরিবার ছাড়া কেউই চোখের জল ফেলেন না। ... ...
যদি মৃত্যুই মানুষের অমরত্বের সূচক হয়ে থাকে তবে জানিয়ে রাখা ভালো কোনো কোনো মানুষ জীবৎকালেই অমর হয়ে যান। যেমন বিষ্ণু দে হয়েছিলেন অনুজ প্রতীম অরুণ সেনের কলমে, তেমনি অরুণ সেন স্বয়ং তার সমকালীন বেশ কিছু বিশিষ্টজন ও তাঁর স্নেহভাজনদের মনে। ... ...
উনিশ শতকে নারীর লেখক হয়ে ওঠার যুদ্ধ বহুমাত্রিক অবদমনের গল্প, যার প্রারম্ভে আছে লেখিকার নির্বাসিত মননকল্পনার জিজ্ঞাসা আর অন্য পিঠে এর পরিণামে তার creative unity র ভেতর থেকে উঠে এসেছে বিবাহিত জীবনের ক্লীবত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিশোধস্পৃহা। ... ...
গরীব মানুষকে ত্রাণ দেবার সময়ে বারবার বাজারপন্থী অর্থনীতিবিদ বা ব্যবসায়ীরা যে কথাটা বলে আসেন তা হল “বিনামূল্যে” কিছু পাওয়া যায় না। সেই একই বাজারের যুক্তি কিন্তু একথাও বলে যে সস্তায় যেমন ভালো মানের জিনিস পাওয়া যায়না, তেমন ভালো মানের শ্রমও পাওয়া যায়না। শ্রমিককে কাজে ফিরিয়ে আনবার একমাত্র উপায় হল কাজের পরিবেশ ও জীবনযাত্রার মানের উন্নতি এবং অধিকতর মজুরির সংস্থান – জোর জবরদস্তি নয়। ভারতের মত দেশে যেখানে প্রায় ৯০% শ্রমিকই কাজ করেন অসংগঠিত ক্ষেত্রে এবং যাদের কোনরকম কাজের নিরাপত্তা বা অবসরকালীন সুবিধা ইত্যাদি কিছুই নেই, তাদের জন্য সরকারের দ্বারা প্রবর্তিত সুরক্ষাবলয় যথেষ্ট শক্তিশালী হতেই হবে এই বিপর্যয় কেটে গেলে তাদের কাজে আবার ফিরিয়ে আনায় উৎসাহিত করতে। ... ...