উৎসবের দেশ জাপানের পাঁচটি ঋতু-কেন্দ্রিক উৎসবের অন্যতম দুটি হল পুতুল-কেন্দ্রিক। পুতুল উৎসবের একটি ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত “হিনা মাৎসুরি”। এর অন্য নাম “বালিকা-উৎসব”। অন্যটি হল ৫ই মে অনুষ্ঠেয় “তানগো-নো-সেক্কু” বা “বালক-উৎসব”। জাপানের অন্যান্য উৎসবের মত এই পুতুল উৎসব দুটিরও শুরু বহুযুগ আগেই। তবে নিঃসন্দেহেই বলা যেতে পারে যে, নানা পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের পথ পেরিয়ে বর্তমানের উৎসব অন্যরূপে প্রতীয়মান। ... ...
১৮৫০-এর লণ্ডন। তার একদিকে বর্ণিল সন্ধ্যার মায়াবী হাতছানি, আর একদিকে ঘিঞ্জি গলিতে আবর্জনার মধ্যে পিলসুজের তলার মানুষের লড়াই। এর-ই মধ্যে বারেবারে হাজার-হাজার মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কলেরার দৈত্য। রোগের কারণ অজানা, মনে করা হত দূষিত বাতাস বা মায়াজমা থেকেই কলেরা ছড়ায়, যদিও মায়াজমা ঠিক কি জিনিস তা অবশ্য কেউ-ই জানতেন না। ঠিক সেই সময়েই লন্ডনের এক তরুণ ডাক্তারবাবু, জন স্নো, ঝাঁপিয়ে পড়লেন কলেরার মোকাবিলায়, দীর্ঘদিনের চেষ্টায় প্রমাণ করলেন মায়াজমা নয়, দূষিত জল-ই এই রোগের বাহক। আজকের যদুবাবুর টিউশনিতে সেই জন স্নো-র গল্প, এক মহামারির দানবের চোখে চোখ রেখে সত্যি খোঁজার রূপকথা। ... ...
১৪ কোটি রেশনের ব্যাগে তাঁর ছবি ছাপা হচ্ছে, ৫ কোটি পোস্টকার্ডে লেখা হচ্ছে ‘ধন্যবাদ’। তারপর দেশের নানান প্রান্তের বিভিন্ন বুথের অন্তর্গত পোস্ট অফিস থেকে সেই পোস্টকার্ড ঠিক সময়মত যাতে তাঁর কাছে পৌঁছয়, তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে, তাঁর দল এবং সরকারের পক্ষ থেকে। দেশের ৭১টি গঙ্গা-সংলগ্ন ঘাট পরিষ্কারের কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে, কারণ তিনি ৭১ বছরে পদার্পণ করবেন। তিনি যে সে মানুষ নন, তিনি আমাদের প্রধান সেবক নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি। ... ...
জুলাইয়ের মাঝামাঝি আমাদের ফ্ল্যাটে এক ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি এসেছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম স্কুল খোলার দরকার আছে কিনা? তিনি বলেছিলেন “স্যার, এটা কোনো প্রশ্ন হল? বাচ্চা দুটো বরবাদ হয়ে যাচ্ছে”। SCHOOL এর গবেষকের একই প্রশ্নের উত্তরে প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলা অবাক হয়ে বলেন “ইয়ে পুছনে-ওয়ালি বাত হ্যায়? বাচ্চা কা জিন্দেগি তো খতম হো রহা হ্যায়”। পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় শহরের এক অসহায় বস্তিবাসী বাবার আকুতির সাথে বিহার/ঝাড়খণ্ডের এক প্রান্তিক পরিবারের মায়ের হাহাকার কি আমাদের বাধ্য করবে না খান দশেক “পুছনে-ওয়ালা বাত” সব ফোরামে তোলার জন্য? ... ...
পরমাণু বিদ্যুৎশিল্পের এখন হতচকিত অবস্থা। চিন, ভারত, আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশে যে পরমাণু বিদ্যুতের প্রসার নিয়ে কথা হয় তার আসল কারণ এইসব দেশ হয় পরমাণু অস্ত্রধারী, অথবা তা হতে চায় .... তেজস্ক্রিয় বিকিরণের বিপদ, দুর্ঘটনার সম্ভাবনা, তেজস্ক্রিয় বর্জ্যপদার্থের সমস্যা, চুল্লির ডিকমিশনিং নিয়ে রাষ্ট্রের দুশ্চিন্তা তেমন নেই। এসব দুশ্চিন্তা প্রতিবাদীদের এবং তার জন্য পরমাণু রাষ্ট্রের মত বদল হয় না। খরচ বেশি, প্রযুক্তিগত প্রতিকূলতা বেশি এবং নবায়নযোগ্য শক্তি সস্তা – এই তিন কারণেই পরমাণু বিদ্যুতের প্রসার বন্ধ হয়ে গেছে .... বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার প্রায় কিছুই কমেনি .... অন্য বছরের মত এ বছরও বিশ্বে ঘন ঘন তাপপ্রবাহ,ঝড়, বন্যা, দাবানল ও অন্য্যান্য বিপর্যয় ঘটেই চলেছে। এ বছর জার্মানি ও বেলজিয়ামের বন্যায় দুশ’র বেশি মানুষ মারা গেছে – যা কয়েক বছর আগেও ভাবা যেত না। ... ...
এই মদ্যপান নিয়ে বাঙালির নৈতিক দ্বন্দ্বের ইতিহাস বড় পুরাতন। মূলধারার সাথে অস্ফুট লোকাচারের পার্থক্য তো ছিলই; কিন্তু মূল সুর ছিল সহাবস্থানের। কথিত আছে, একবার শাক্ত সাধক কমলাকান্তকে মদ্যপান করতে দেখলে, বর্ধমানরাজ তেজচন্দ্র তিরস্কার করেন। প্রত্যুত্তরে মাতৃভক্ত কমলাকান্ত মদ্যকে দুগ্ধে পরিণত করে সেই দুধে দেবীপ্রতিমার পূজা করেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রতিভূ তেজচন্দ্রের কাছে যা অনৈতিক, সাধক কমলাকান্তের কাছে তা নয়। ভারতীয় লোকাচারের ঊর্ধ্বে থাকা সাধক সামাজিক নিয়মনীতির অধীন নন। কমলাকান্তের মতই, সাধক রামপ্রসাদও মদ্যপান করতেন। পণ্ডিতসমাজের প্রধান কুমারহট্ট এ নিয়ে তাঁকে তিরস্কার করলে, রামপ্রসাদ বলতেন, “সুরাপান করিনা আমি / সুধা খাই জয় কালী বলে”। কিন্তু সব প্রেমিক যেমন দেবদাস নয়, সকল মদ্যপই রামপ্রসাদ নয়। শাক্তমতে গুহ্যসাধন-ক্রিয়ায় মদ্যপানের যে রীতি, তা প্রাত্যহিক জীবনের অঙ্গ না হওয়াটিই স্বাভাবিক। কিন্তু ‘প্রাত্যহিক জীবন’ তো কোন সমসত্ত্ব ধারণা নয়, বরং তা স্থান-কাল-পাত্রভেদে ভিন্ন। একদিকে প্রাক-ঔপনিবেশিক বঙ্গীয় উচ্চবর্গ যেমন পারতপক্ষে মদ্যপান এড়িয়ে চলেছে, মঙ্গলকাব্যের অন্ত্যজ শ্রেণি অবশ্য শুঁড়িখানায় ক্রমাগত ভিড় জমিয়ে গেছে। তাই মদের বিচারেই বাঙালি অনেক আগেই ‘আমরা-ওরা’-র ব্যবধান তৈরি করে ফেলেছে। ... ...
একটি ক্লাস সেরে টিচার্স রুমে ঢুকে দেখি টেবিলের ওপর বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন। জানা গেল ছাত্রছাত্রীদের থেকে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একজন দিদিমনি সেই মোবাইলগুলি ঘাঁটছেন আর প্রবল আক্রোশে গজগজ করছেন। দিদিমনি যারপরনাই সুন্দরী, রূপসজ্জা-পটিয়সী, নানা আছিলায় সেলফি তোলা আর ফেসবুকে পোস্ট করা তার সর্বক্ষণের বিলাসিতা। ছেলেরা ফেসবুক থেকে তার প্রোফাইল থাকা ছবিগুলো ডাউনলোড করেছে দেদার। জানতে চাইলাম, মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে – ভাল কথা, তাই বলে তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ঘাঁটা হবে কেন? দিদিমনি হাঁ হাঁ করে উঠলেন, ‘ওরা ফেসবুক থেকে আমার প্রোফাইল পিকচার নামিয়েছে’। ... ...
বিদ্যা ভারতী নিজেদের “বিশ্বের সর্ব বৃহৎ শিক্ষা সংগঠন” হিসাবে দাবী করে থাকে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে “একটা জাতীয় শিক্ষা পদ্ধতি নির্মাণ করা যেটা নারী পুরুষের একটা তরুণ প্রজন্ম গড়ে তুলবে যারা হিন্দুত্বর প্রতি দায়বদ্ধ, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এবং যারা প্রাণবন্ত ও শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক ভাবে পরিপূর্ণ উন্নত………” ... ...
আসলে প্রশ্নটি ওঠার জায়গা ও রয়েছে অনেক। একটি প্রতিবেদনে জানা যায় রিফিউজি দলের দৌড়বিদদের মধ্যে ছয়জন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে চাননি কারণ দলের মধ্যের প্রাতিষ্ঠানিক চরিত্র তাঁদের যথাযথ স্বাধীনতা দিচ্ছেন না। বিতর্কের শুরু হয়দক্ষিণ সুদান থেকে বাস্তু-চ্যুত দৌড়বিদ দমিনিক লোকিনয়োমো লোবালু সুইস দৌড় প্রতিযোগিতায় জেতার পর পুরস্কারের অর্থমূল্য না পাওয়া নিয়ে। ... ... কথাটিকে একটু সাজিয়ে নিলেই হয় যে বাস্তু-চ্যুতদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এটাই যথেষ্ট তাই তাদের অনুযোগের অধিকার থাকে কি করে! অর্থাৎ হয় প্রদত্ত ব্যবস্থা গ্রহণ কর বা কাকুমার উদ্বাস্তু শিবিরে ফেরত যাও। 'Savior's Complex' কেবলমাত্র শ্বেতাঙ্গদের রয়েছে তাই নয়, বরং তা কেনিয়া পরিচালিত গোটা রিফিউজি দলের বিষয়টির সাথেও জড়িয়ে রয়েছে। অত্যাচারী যেমন অত্যাচারিতের মতের অপেক্ষা করে না; রক্ষাকর্তাও অনুগ্রহপ্রার্থীর মতের আশায় থাকে না। ... ...
কয়েকবছর হল, জীবনের দুটো নিয়ন্ত্রককে আমরা বরণ করে নিয়েছি বেশ। প্রথমটা ছোট্ট একটা স্ক্রিন বসানো রবারের ব্যান্ড। কব্জিতে তা এঁটে রাখতে হয় চব্বিশ ঘণ্টা। হ্যাঁ, স্নান করার সময়ও খোলা নিষ্প্রয়োজন। পোশাকি নাম ফিটনেস ট্র্যাকার। আপনার চলন, শয়ন, স্বপন-বপন সব কিছু সেই ১৫ গ্রামের ছোট্ট ডিভাইস মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করবে। স্মার্ট ফোনের লেজুড় হয়ে কল, এসএমএস, হোয়্যাটসঅ্যাপের নোটিফিকেশন তো পাঠাবেই, ডায়ালের তলায় রাখা ইনফ্রারেড আলো আপনার অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপবে, হৃৎস্পন্দন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবে। ... ...
যাঁরা ব্রহ্মচারীর মতো জীবন যাপন করেন, তাঁদের উপাধি হয় ব্রহ্মচারী। একটি কম সমর্থিত মত হল, যে কেশবচন্দ্র ভারতী শ্রীচৈতন্যদেবকে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা দেন। তাঁর বড়দাদা গোপালচন্দ্র ভারতী দীক্ষার পরে নিজেদের মুখোপাধ্যায় উপাধি ত্যাগ করে ব্রহ্মচারী উপাধি গ্রহণ করেন। এদের নবম বা দশম বংশধর হচ্ছেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। এক অনন্যসাধারণ মেধার অধিকারী এই মানুষটির গ্র্যাজুয়েশন ১৮৯৩ সালে হুগলি মহসিন কলেজ থেকে – অংক এবং কেমিস্ট্রি নিয়ে ডাবল অনার্স, Thysetes মেডেল পান। এরপরে ১৮৯৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কেমিস্ট্রিতে এমএ পাশ, সাথে গ্রিফিথ মেমোরিয়াল প্রাইজ। একই সময়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। এলএমএস ডিগ্রি পান ১৮৯৯ সালে। ১৯০০ সালে এমবি ডিগ্রি – মেডিসিন এবং সার্জারি দু’টিতেই প্রথম হয়ে গুডিভ এবং ম্যাকলিওডস মেডেল পান। ১৯০২ সালে এমডি পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপরে ১৯০৪ সালে পিএইচডি অর্জন। বিষয় ছিল “Studies on Haemolysis”। তাঁর পিএইচডির থিসিসের সংক্ষিপ্ত এবং উন্নত চেহারার নতুন গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় বায়োকেমিক্যাল জার্নাল-এ ১৯০৯ সালে “Some Observations on the Haemolysis of Blood by Hyposmotic and Hyperosmotic Solutions of Sodium Chloride” শিরোনামে। এছাড়াও ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন থেকে Mente মেডেল এবং এশিয়াটিক সোসাইটির উইলিয়াম জোন্স মেডেল লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে প্রায় সম্পূর্ণ জীবন কেটেছে গবেষণার নির্ভুল লক্ষ্যে। প্রায় ১৫০টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে নেচার, ল্যান্সেট, ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, বায়োকেমিক্যাল জার্নাল, ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল গেজেট-এর মতো জার্নালগুলোতে। ... ...
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বনগাঁয়, উদ্বাস্তু-শিবিরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কলেরার প্রাদুর্ভাব। স্যালাইনের জোগান যথেষ্ট না হওয়ায় মুত্যু-মিছিল। একসময় দেখা গেল, মোট আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার ৩০%। বনগাঁ উদ্বাস্তু-শিবিরে এইসময় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পাঠানো হল ডা. দিলীপ মহলানবিশকে.... কলেরার জীবাণু দূষিত জল আর খাবার দিয়ে শরীরে ঢোকে আর বংশবৃদ্ধি করে এক বিষাক্ত রাসায়নিক তৈরি করে, যার প্রভাবে রোগী উদরাময়ে আক্রান্ত হয়। কলেরার জীবাণুর আবিষ্কারক জার্মান বিজ্ঞানী ডা রবার্ট কখ (১৮৪৩-১৯১০) পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন, এই পদার্থ আমাদের অন্ত্র থেকে শোষিত হয়ে রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। ডা. শম্ভুনাথ দে অত্যন্ত সরল এক পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রমাণ করেন, কলেরার জীবাণু-নিঃসৃত বিষাক্ত পদার্থ জীবাণু-কোষের বাইরে চলে আসে এবং রোগের যাবতীয় লক্ষণ সৃষ্টি করে আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে থেকেই.... আমার ক্ষোভের সীমা ছিল না, যখন ব্যক্তিগত আগ্রহে তাঁর অবদান সম্বন্ধে বইপত্র ঘাঁটতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, যে-শহরে আমার বাড়ি, সেই শহরেরই এক কোণে তিনি থাকতেন- দুই গেঁয়ো যোগীর গল্প .... ... ...
নারী অধিকার”, “গণতন্ত্র”, “জাতির গঠন” এগুলি আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর লক্ষ্য ছিল, এসব কথা আফগানিস্তানে ঠাট্টারই নামান্তর! আমেরিকা আফগানিস্তানে এসেছিল এই অঞ্চলের স্থিতি বিঘ্নিত করে একে সন্ত্রাসবাদের মুক্ত-ভূমিতে পরিণত করার মাধ্যমে এর আশেপাশে আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলির, বিশেষত চিন এবং রাশিয়াকে ঘিরে ধরার পাশাপাশি এই অঞ্চলের স্থানীয় অর্থনীতিকে ছিবড়ে করে শুষে নেবার লক্ষ্য নিয়ে। অবশ্যই এরকম ভাবার কোন কারণ নেই যে মার্কিন সরকার নিজেদের বাহিনীর এরকম লজ্জাজনক অপসারণ চেয়েছিল, যার ফলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আবার মার্কিন বাহিনীকে ফিরে আসতে হল বিমানবন্দরগুলি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যাতে তাদের আমলা এবং অন্যান্য কর্মীদের নিরাপদে বার করে নিয়ে যাওয়া যায়। আমরা বিশ্বাস করি, আমেরিকা আফগানিস্তান ছেড়ে গেছে তাদের তৈরি পশুদের (তালিবান) কাছে পরাজিত হয়ে নয়, ফিরেছে তাদের নিজস্ব দুর্বলতার কারণে। এই অপসারণের দুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে বলে আমরা মনে করি। ... ...
সিন্ধুলিপি যেমন প্রায় দেড়শো বছর ধরে নানান পণ্ডিত গবেষকের কাছে একটি খুব শক্ত চ্যালেঞ্জিং সমস্যা হিসেবে আদৃত হয়েছে, তেমনই অনেক অত্যুৎসাহী পাঠোদ্ধারকের নানান অদ্ভুত পাঠোদ্ধারের দাবিতে লাঞ্ছিতও হয়েছে খুব বেশী। এই ভুলভাল পাঠোদ্ধার সম্পর্কে খুব মজার একটা উদাহরণ দিয়েছিলেন বিশ্ববিশ্রুত ভারততাত্বিক আসকো পারপোলা (Asko Parpola), তাঁর ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত "Deciphering the Indus script" নামের বিখ্যাত বইতে। পারপোলা দেখিয়েছেন যে, স্প্যানিশ মিশনারি পণ্ডিত ফাদার হেরাস (Enric Heras de Sicars ওরফে Henry Heras) তাঁর ১৯৫৩ সালে লেখা একটি বইতে সিন্ধুলিপির অদ্ভুত সব প্রোটো-দ্রাবিড়ীয় পাঠোদ্ধার ক'রে খুব বিখ্যাত হয়েছিলেন। এমনকি হেরাসের গবেষণার সম্মানার্থে ভারতীয় সিকিউরিটি প্রেস উনিশশো একাশি সালে হেরাসের ছবি আর মহেঞ্জোদারোয় পাওয়া একটি সিন্ধুলিপিযুক্ত সীলের ছবি পাশাপাশি রেখে প্রায় কুড়িলক্ষ ৩৫ পয়সার ডাকটিকিটও ছাপায়। এখন দেখা যাক ফাদার হেরাসের পাঠোদ্ধারের ধরণ ঠিক কিরকম ছিল! ... ...
আমরা খুঁজে পাই আমাদের চরিত্রদের, না তারা কোন অভিজাত শহরের উচ্চ মধ্যবিত্ত নয়, নয় কোন অলীক রূপকথার নায়ক নায়িকা কিংবা রহস্যময়ী কোন অতি-মানবী। আমরা দেখতে পাই তারা নেহাতই ছাপোষা জীবনের মালিক। ব্যক্তিগত কিছু কথাবার্তা চলে, দুটি চরিত্রের ভেতর আমরা দর্শক একটু একটু করে ঢুকি। ছবির এই অংশে ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং জয়া আহসান উভয়ের অভিনয় যথাযথ, চিত্রগ্রহণ ও মোটামুটি ভাবে সাবেকি, যেন অতি পরিচিত বিষয় আমরা দেখতে পাই অতি সহজে ভাবেই। ছবির আসন্ন ভবিষ্যতের জন্য, পরিচালকের লুকোনো তাসে ট্রাম্প করার প্রয়োজনে যে এ এক প্রস্তুতি চাল, তা দর্শক হিসাবে আমরা ধরতে পারিনা। এর কিছু মুহূর্ত পর আমরা যখন তাদের নতুন ভাবে আবিষ্কার করা শুরু করি, আমরা বুঝি যে সহজ সরল ভঙ্গির বহিঃ কাঠামোয় লেখক তথা পরিচালক আসলে হাঁটতে চান শহুরে মনস্তত্ত্বের জটিল সারণি ধরে। ... ...
আফগানরা স্বাধীনচেতা জাতি। ব্রিটিশরাও তাঁদের পুরোপুরি পদানত করতে পারেনি। তারা ব্রিটিশদের রক্ষাধীন ছিল, প্রটেক্টোরেট। গত চার দশকে মহাপরাক্রমশালী সোভিয়েত ইউনিয়ান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেউই তাঁদের কব্জা করতে পারেনি। দেশটা জ্ঞাতি ও উপজাতি রেষারেষি ও দ্বন্দ্বে বিদীর্ণ। দেশের বিভিন্ন পকেটে, দুর্গম অঞ্চলে যুদ্ধবাজ সামন্তসর্দারদের সার্বিক আধিপত্য, যেখানে ধর্মের চেয়েও নিজের ক্ল্যান বা উপজাতির প্রতি আনুগত্যই ছিল প্রধান। আশির দশক থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ানকে আটকানোর জন্য উগ্র ধর্মান্ধ সৌদি জঙ্গিদের মাধ্যমে আমেরিকানরা প্রথম এখানে ধর্মীয় মৌলবাদ রফতানি করে। আজকের তালিবানি উত্থান সেই নীতিরই বিষফল। এটা নিশ্চিত যে তালিবানিরা পালটাবে না। প্রতিদিন মধ্যযুগীয় বর্বরতার নতুন সব নমুনা প্রকাশ্যে আসছে। কিছু অসমসাহসী মহিলা এবং সামান্য কিছু জায়গায় সর্দারদের মিলিশিয়া প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। এটা চলবে, কারণ আফগানিস্তান এমন একটা দেশ যেখানে যুদ্ধ চিরন্তন। একটাই রাস্তা, আফগানদের তাঁদের নিজেদের মতো থাকতে দেওয়া হোক। হয়তো তাতে আফগানিস্তান আগামী দিনে সৌদি আরবের মতো একটা ‘সভ্য’, ‘আধুনিক’ (যেখানে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি পাওয়ার জন্য কয়েক দশক ধরে অপেক্ষা করতে হয়) মৌলবাদী দেশ হয়ে উঠতে পারবে। ইতিহাস বারবার শিক্ষা দিচ্ছে যে বহিরাগত শক্তি সেখানে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলে শুধুমাত্র হিতে বিপরীতই হবে। ... ...
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশন বলপূর্বক উচ্ছেদকে মানবাধিকারের উপর জঘন্যতম আঘাত বলে অভিহিত করেছে। জবরদস্তি উচ্ছেদ শুধু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদকেই লঙ্ঘন করে না, এটি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিপত্র, নাগরিক ও রাজনৈতিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিপত্র, শিশু অধিকারের নীতি, নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্যের অবসানের নীতি, জাতিগত বৈষম্যের অবসানের নীতিসহ একাধিক নীতিকেও লঙ্ঘন করে।.... – এমনই বিপন্ন সময়ে প্রায় অলক্ষ্যে হরিয়ানা সরকার অকথ্য অত্যাচারে উচ্ছেদ করল খোরিগাঁও-এর লক্ষাধিক গরিব মানুষকে। সবচেয়ে বেদনাদায়ক ছিল – দরিদ্র মানুষের প্রতি দেশের শীর্ষ আদালতের চূড়ান্ত হৃদয়হীন এবং বৈষম্যমূলক আচরণ। জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে অল্পই জায়গা পেয়েছে এ হেন ব্যাপক রাষ্ট্রীয় উৎখাত। দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক বৃত্তেও তেমন গুরুত্ব পায়নি প্রান্তবাসী বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর উপর ঘটে যাওয়া রাষ্ট্রের এই নৃশংসতা। ... ...
ভারত সরকারের প্রাথমিক কর্তব্য এদেশের সমস্ত নাগরিককে সন্ত্রাস বিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে সুষ্ঠভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা। সেইসঙ্গে ভারতের সরকার ও বর্তমান শাসক দলের উচিত এই পরিপ্রেক্ষিতে সি এ এ আইনটিকে গভীরভাবে পুনর্বিবেচনা করা। এই আইন যখন মুসলিমদের শরণার্থী হিসেবে নাগরিকত্ব প্রার্থীর তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিল, তখনই এর প্রতিবাদ হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আফগানিস্তানের মুসলিমদের ভারত সহ বিভিন্ন দেশে তালিবানি সন্ত্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে আশ্রয় ও পুনর্বাসন কতটা প্রয়োজন। তালিবানকে দেখিয়ে সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে নিশানা করার ঘৃণ্য অপচেষ্টাও কোনও কোনও শিবির থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে। যদিও বাস্তবে যে বিশ্ব জনমত তালিবানি বর্বরতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে, তার মধ্যে মুসলিম সমাজের মানুষজন রয়েছেন বিরাট সংখ্যায়। এই ঘৃণা বিদ্বেষের রাজনীতিকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করা দরকার। তালিবানি শাসনের প্রত্যাবর্তন দেখিয়ে দিচ্ছে রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক তৈরির চরম ক্ষতিকর চেহারাটি কেমন হতে পারে। বিশ্বের যেখানেই আধুনিককালে রাষ্ট্র ও ধর্মের নৈকট্য সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে, সেখানেই গণতন্ত্র ও আধুনিকতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। ধর্ম ও বিশ্বাসকে ব্যক্তিগত পরিসরে আবদ্ধ রেখে রাষ্ট্রকে ধর্মমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা কতটা দরকারি – বর্তমান আফগানিস্তান তা আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দিচ্ছে। ... ...