আমাদের প্রথম ওজু-অভিজ্ঞতা কিন্তু ওজুর নামকরা ছবি গুলির মধ্যে থেকে হয়নি। কোন উৎসব মনে নেই, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব হতে পারে আবার স্বতন্ত্র কোনো প্রদর্শনীও হতে পারে। এক দশকের একটু বেশি আগে হবে, সন্ধ্যা-বাসর, যতদূর মনে পড়ছে বিকেল চারটে বা সন্ধ্যা ছটার প্রদর্শনী, নন্দন দুই (তখন আলাদা আলাদা চেয়ার পাতা থাকত, এখনকার মত ফিক্স সুইঙ্গিং চেয়ার নয়)। ওজুর নামের সাথে পরিচিতি তখনও পর্যন্ত উপরের ঐ সত্যজিতের বক্তব্যটি। ... ...
দীর্ঘ এগারো বছর ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে আজও সুবিচার অধরা। একটি নিরস্ত্র, আত্ম-নিরাপত্তাহীনা কিশোরীর মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়নি। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিএসএফের বিশেষ আদালত অভিযুক্ত জওয়ানকে নির্দোষ বলে রায় দিয়েছে। ২০১৫ সালে সেই রায়ের পুনর্বিবেচনা মামলায় সেই একই আদালত অভিযুক্ত জওয়ানকে পুনরায় নির্দোষ ঘোষণা করেছে। ফেলানি ও তার বাবা অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল এবং একই কায়দায় তারা আবার স্বদেশে ফিরতে চেয়েছিল। সেটা নিশ্চিতভাবে বেআইনি কাজ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধই বটে। কিন্তু এ হেন অপরাধের শাস্তি কি মৃত্যু হতে পারে? আর এই মৃত্যুদণ্ড তো বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালত-স্বীকৃত নয়! সীমান্তরক্ষীবাহিনীর কি কোনো নিরস্ত্র অনুপ্রবেশকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অধিকার আছে? ... ...
কত র্যাপিং কাগজ ব্যবহার করি আমরা? যে পরিমাণ র্যাপিং পেপার উপহারের গায়ে আটকে দেওয়া হয়, তার সিংহভাগই যে ঠাঁই পায় ময়লার ভ্যাটে—তা আঁচ করার জন্য বেশি মাথা ঘামানোর দরকার নেই। কয়েকটি পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিলেই উত্তর মেলে। পশ্চিমি দেশগুলোতে উপহার আদানপ্রদানের সেরা সময় হল বড়দিন। মার্কিন মুলুকে শুধুমাত্র বড়দিনের মরসুমে যে পরিমাণ র্যাপিং কাগজ ব্যবহার করা হয়, তার পরিমাণ নাকি চার মিলিয়ন টন। অন্য তথ্য বলে, ইংল্যান্ডে এই উৎসবের মরসুমে ব্যবহৃত র্যাপিং কাগজগুলোকে পরপর মেলে ধরলে যে দৈর্ঘ্য হয়, তা দু’লক্ষ মাইলকেও ছাপিয়ে যায় হেলায়। গ্রহের সবকটি দেশ এবং তাদের উৎসবপক্ষে ব্যবহার করা র্যাপিং কাগজের যদি হিসেব নিতে বসা যায়, তাহলে চোখে ঝিলমিল লেগে যায়। ... ...
স্তালিনের কথা একটু পালটে নিয়ে আমাদের কি তবে বলতে হবে, বুর্জোয়া শ্রেণি গণতান্ত্রিক সমাজবাদের পতাকাকে ধুলায় ফেলে দিয়েছে, নিপীড়িত মানুষের দায়িত্ব হল তাকে আবার সসম্মানে প্রতিষ্ঠিত করা? গ্যাব্রিয়েল বরিচ দেবদূত কিনা জানি না, কিন্তু আজ থেকে প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে প্রাসাদ অভ্যুত্থানে যে সালভাদোর আয়েন্দেকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল, তাঁর পুনরুত্থানের ঋত্বিক তো বটেই। হ্যাঁ, চিলি বামদিকে মোড় নিচ্ছে। ... ...
আমরা জানি ৫৫% ভোট পেয়ে গ্যাব্রিয়েল বোরিক, ছাত্র আন্দোলনের বহু ব্যারিকেড পেরিয়ে, পুলিশি দমনপীড়নের মোকাবিলা করে, নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ৪৬ লক্ষ ভোট পেয়েছেন যা তাঁর যে কোনও পূর্বসুরিদের চেয়ে বেশি। বোরিক দেশে গণতন্ত্র রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি নিও লিব্যারাল অর্থনীতির প্রবল বিরোধী। “চিলি নিও লিব্যারিলজমের জন্মভূমি ছিল, এখানেই সেটার কবর খোঁড়া হবে,” তিনি ডাক দিয়েছেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পেনশন এবং কর সংস্কার করতে তিনি বদ্ধপরিকর। তিনি সামাজিক ন্যায়ের আওয়াজ তুলেছেন। তাঁর সরকারে মহিলা, মূলবাসী এবং এলজিবিটিকিউদের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তাঁর দল বামপন্থী; তিনি মার্কসবাদী কিনা, তার কোনও ইঙ্গিত এখন অবধি পাওয়া যায়নি। তিনি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণ করার পক্ষপাতী। ... ...
ঘৃণায় উস্কানি দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে তাদেরই মঞ্চ, দেখেও দেখেননি ফেসবুকের কর্তাব্যক্তিরা। ফ্রান্সিস হাউগেন মুখ খোলার পরে এ কথাটা প্রথম সামনে এল, এমনটা কিন্তু নয়। এমনকী হাউগেন আরও যেসব অভিযোগ এনেছেন, যেমন ফেসবুক যে মুনাফাকেই অগ্রাধিকার দেয়, নরেন্দ্র মোদী-সহ দেশবিদেশের দক্ষিণপন্থীদের নানা ভাবে সাহায্য করে এবং পক্ষান্তরে মুসলিম ভীতিকে চাড়িয়ে দেয়- এ বিষয়েও ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা একপ্রকার ছিলই। তথাপি হাউগেনের আন্তঃতথ্য যাচাই এবং ফাঁস করে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বহু কারণে। এই উন্মোচনের জেরেই হয়তো মার্কিন প্রশাসন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কংগ্লোমারেট ফেসবুক তথা মেটা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে কিছু কঠোর বিধিনিষেধ আনতে পারে। ... ...
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার Technical Advisory Group on SARS-CoV-2 Virus Evolution (TAG-VE) গত ২৬ নভেম্বর সার্স-কোভ-২-এর যে নতুন প্রজাতি “ওমিক্রন” (গ্রিক অ্যালফাবেট অনুযায়ী নামকরণে ইংরেজির O) আফ্রিকায় উদ্বেগ বাড়িয়েছে তাকে VOC (Variant of Concern) বলে অভিহিত করেছে। আমরা, ভারতের পৃথিবীর সমস্ত সাধারণ মানুষ, ঘরপোড়া গরু। তাই সিঁদুরে মেঘে ডরাই। আমরা এখনো স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরতে পারিনি। যতই “নিউ নর্ম্যাল”-এর মতো আদুরে নামে ডেকে একে স্বাভাবিক বানানোর চেষ্টা হোক না কেন, আমাদের এ জীবন পূর্নত অ-স্বাভাবিক। এজন্য এই মারণান্তক ভাইরাসের (২০১৯-এর নভেম্বরের শেষ থেকে যার নমুনা মিলছিল চিনের য়ুহান প্রদেশে) দাপট ২ বছর পার করলেও নতুন নতুন চেহারায়, নব নব অবতার রূপে হাজির হচ্ছে এই ভাইরাস। আমরা চাপা আতঙ্কে বাস করছি – আবার কোন প্রিয়জনকে হারাতে যেন না হয়। ... ...
হইচইয়ের 'মন্দার' নামক এই সিরিজ দেখতে বসে, সমকালীনতা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশই থাকেনা একদম প্রাথমিক কিছু দৃশ্যের পর। দেখা যায় সমুদ্রতীর, দেখা যায় মোটরসাইকেল। দেখা যায় পোলানস্কিসুলভ 'আধুনিক' হিংস্রতা। সিরিজের একদম শুরুতে সমুদ্রতীরে ডাইনি এবং তার চেলা যখন মাছকে গেঁথে ফেলে বর্শায়, সেই দৃশ্যের সঙ্গে পোলানস্কির প্রথম দৃশ্যের অদ্ভুত মিল। আলোর তফাতটুকু বাদ দিলে স্কটল্যান্ড এবং বঙ্গের সমুদ্রতীর একদম এক হয়ে যায় মরা মাছ আর মরা সৈনিকের ছটফটানিতে। ডাইনিদের পদচারণা এবং আচার-অনুষ্ঠানে। পোলানস্কির সিনেমায় ঘোড়সওয়াররা টগবগিয়ে আসে সৈকতে। মন্দারে ঘোড়া নেই, তার জায়গায় আছে মোটর সাইকেল। ধূধূ সমুদ্রসৈকত দিয়ে মন্দার মোটরসাইকেল চালিয়ে যায় পিছনে একজন আরোহীকে নিয়ে। ... ...
মাঝরাতে শিশু কন্যাকে নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে যখন একটু মাথা গোঁজার নিরাপদ আশ্রয় দরকার, যখন গার্হস্থ্য হিংসার ফলে বাড়ি ছেড়েছে প্রমানিত হলে রাষ্ট্রের অনেক পরিষেবা পাওয়া সহজ হয়ে যায়- পাওয়া যায় উপার্জনের রাস্তা , মাথা গোঁজার জায়গা এবং পেট ভরানোর খাবার-তখনও মেয়েটি সমানে বলতে থাকে যে, সে কিন্তু গার্হস্থ্য হিংসার শিকার নয়, তার মেয়ের বাবা তাকে মারেনি, ভয়ানক গাল মন্দ করেনি, পরকীয়ায় লিপ্ত নয় । শুধু সে নেশা করে ফিরে চেঁচিয়ে ওঠে, দরজায় ঘুসি মেরে দরজায় গর্ত করে দেয় আর কিছু বাসন কোসন ছুঁড়ে ফেলে ভাঙে। পরের দিন আবার ঠিক হয়ে যায়। সে আসলে মেয়েকে খুবই ভালবাসে, তাকেও বাসে। ... ...
দেওচা-পচামিতে যেন এক অঘোষিত কার্ফু জাড়ি করা হয়েছে। লকডাউনে ত্রাণ দেওয়ার অছিলায় কিছু পোষা ‘বুদ্ধিজীবী’ অবশ্য নেমেছিল মাঠে। বলাবাহুল্য শাসক দল ও প্রশাসন ‘কোভিড বিধি’ ভঙ্গের অজুহাতে আটকায়নি তাদের। অথচ সমীক্ষক দল হোক বা অন্যদের প্রবেশ ছিল ‘নিষিদ্ধ’। প্রতিবাদীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি চলছে নির্দেশ অনুসারে। জীবন আর কতটা দুর্বিষহ করলে থামবে রাষ্ট্র? জানতে চাইছেন তাঁরা। ভয় দেখিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের বশে আনতে পারেনি সরকার। শাসক দলের গুন্ডারা পথে নেমেছে বহুদিন। তা সত্ত্বেও বশ্যতা মানেনি সাঁওতালরা। তাঁদের জীবন-জীবিকা-সংস্কৃতির ওপর আঘাত তাঁরা চাননা, জানালো ছোট্ট জমায়েত। পাথর খাদানের ধুলো আমরা খেয়েছি, আর ধুলো খাবোনা, বললেন অনিল সোরেন (নাম পরিবর্তিত)। প্রতিরোধে সাঁওতাল। ... ...
মোদী ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের এ এক অসীম লজ্জা ও অপমানের প্রহর। কারণ কৃষকের দাবি যে মূহুর্তে মেনে নেওয়া হল, সেই মুহূর্তেই এই চরম প্রতিক্রিয়াশীল সরকারকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার ইষ্টমন্ত্র – নয়া উদারবাদের বিরুদ্ধে যেতে হল। তাকে প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিতে হল, সে কার পক্ষে – আন্তর্জাতিক বৃহৎ ব্যবসার, নাকি দেশীয় মার-খাওয়া কৃষকের। আপাতত বাধ্য হয়ে সে কৃষকের – ভবিষ্যতের কোনো ষড়যন্ত্র যদি না পাশা উলটে দেয়। ... ...
উনি যা করেন দেশের ভালর জন্যেই করেন। বেশ সাহসী এবং আউট অফ দ্য বক্স ভাবনা চিন্তা করতে পারেন। কিন্তু একটু সময় দেবেন তো! আমার গিন্নি আমার পেনশনের টাকার থেকে কিছু সরিয়ে ওঁর শাড়ির ভাঁজে রাখেন, সব ৫০০ ও ১০০০ টাকায়। আমি টের পেয়েও টের না পাওয়ার ভান করি; সেগুলোর কী হবে? ব্যাঙ্কে চাকরি করেছি। যোগ দেবার একমাসের মধ্যে, মানে জানুয়ারি ১৯৭৮ সালে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ৫০০, ১০০০, ৫০০০ ও ১০০০০ টাকার নোট ব্যান করেছিল, কিন্তু সেগুলো বাজার থেকে তুলে নেওয়ার আগে সময় দিয়েছিল যাতে পাবলিকের অসুবিধে না হয়। এরকম রাত্তিরে মাত্র ৪ ঘন্টার সময় নয়, এ তো একেবারে ‘উঠল বাই, কটক যাই’ কেস! ব্যাপারটা বোঝার জন্য বিভিন্ন চ্যানেলে প্রধানমন্ত্রী মোদীজি, বিত্তমন্ত্রী অরুণ জেটলী ও বিত্ত সচিব শক্তিকান্ত দাসের বক্তব্য মন দিয়ে শুনে যা বুঝলাম, তা’হল এই: পড়তে থাকুন - নোটবন্দীর পর ৫ বছর.. ... ...
নোটবন্দীকরণের উদ্দেশ্য কী ছিল, দেশজুড়ে তার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াই বা কী ছিল, এসবই এখন ভারতবাসী মাত্রেই তো বটেই, পৃথিবীর প্রায় সকলেরই মোটামুটি জানা। তবু হয়তো আলোচনার কারণে সে সব চর্বিত চর্বণ দু’য়েকবার উঠে আসবে। এটিএমের সামনে সেইসব সুদীর্ঘ লাইন, লাইনে দাঁড়িয়ে মৃত্যু, নগদ টাকার হাহাকার, ছোট ব্যবসাদারদের আর্তনাদ, আরও অসংখ্য গল্প এখন এদেশের লোকগাথা হয়ে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু আজ আমরা মূলতঃ দেখব, পাঁচ বছর পর, নোটবন্দী আমাদের কী দিল না দিল, সেই ব্যালান্স শিটের হিসেব। ... ...
সীমান্তের কাঁটাতার থেকে দেশের ভেতরে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিএসএফ জওয়ানরা অনায়াসে, রাজ্য-সরকারের প্রশাসনের তোয়াক্কা না করেই, তাদের সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে যেকোনো সময়, যে কোনও স্থানে ঢুকে গ্রেফতার করতে, খানাতল্লাশি চালাতে এবং অভিযুক্তের যেকোনো জিনিস বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। গত ১১ই অক্টোবর গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্য পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে বিএসএফের কার্যক্ষমতার পরিসীমা ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেই সাথে অধুনা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখের পুরোটাই তাদের নজরদারীর আওতায় এসেছে। ... ...
এরপরে কৃষ্ণ যখন তার বন্ধুদের সাথে চায়ের দোকানে বা এমনি কথা বলছে, সেই ভাষ্যও খুব কনভিন্সিং – কেমন অবলীলায় তথাকথিত বাংলা স্ল্যাঙ ব্যবহার হচ্ছে, ঠিক এমনটা করেই তো আমরাও কথা বলেছি বা বলি! এতো আমাদের নিজেদেরই গল্প - নড়েচড়ে বসি! তারপর চাকুরীর ট্রান্সফার নিয়ে টাকা-পয়সা খাবার ব্যাপারটা গল্পে দেখা দিয়ে যায় – ওদিকে দেখি প্রাইভেট মাষ্টার-দের সাথে কেমন ব্যবহার করা হয়। এ সবই জীবনের বড় কাছাকাছি, বাস্তবেরও – ব্যাকগ্রাউন্ডে প্যানপ্যানে চেনা মেলোড্রামাটিক মিউজিক বা হিন্দী গান বাজে না। বরং শুরু হয় কীর্তন – সাত্যকির গলায়। এ জিনিস আগে দেখি নি, শুনি নি বাংলা সিরিজ বা সিরিয়ালে গানের এমন প্রয়োগও - প্রত্যাশা বাড়তে থাকে। ... ...
ভাল ক্যামেরা হাতে নিয়ে “গ্রাম দেখাব” বলে শুট করতে গ্রামে চলে গেলে গ্রাম হয়তো ভালই দেখা যায়, কিন্তু সিনেমা তো ঠিক ফোটোগ্রাফির প্রদর্শনী নয়। নায়ককে "যাও বাবা, চোঙা ফুঁকে পাড়ার লোককে চাট্টি ভালোভালো কথা শুনিয়ে এস" বলে উপন্যাসের মাঠে খেলতে নামিয়ে দিলে যেমন ভালো সাহিত্য হয়না, তেমনই সিনেমা বা সিরিজ ভাল হতে গেলে ড্রোনে চড়ে ফোটোগ্রাফিক গ্রামদর্শনের চেয়ে অধিক কিছু প্রয়োজন। বস্তুত এ সিরিজে ড্রোনের ব্যবহার এত বেশি, যে, পরিচালককে নির্দ্বিধায় ড্রোনাচার্য আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু দৃশ্যশ্রাব্যের কুরুক্ষেত্রে, এমনকি "ভালো খেলিয়াও পরাস্ত" হতে গেলেও সঙ্গে কিছু কুশলী অস্ত্রচালনাও প্রয়োজন। ন্যূনতম যেটুকু দরকার, তা হল টান-টান, নির্মেদ চিত্রনাট্য। পরিচালনা এবং সম্পাদনার ক্ষেত্রে একাধারে দরকার মমত্ব এবং কঠোর ও নির্মম কুশলতা। ... ...
এক যে ছিলো মফঃস্বল। নাম তার ফুলকুমারী। এক ছোট্টো নদীর ধারে। চায়ের দোকান, বেকার ছেলে পুলে আর তাদের খিস্তিখামারীর খুনসুটি। যেমনটা হয় আর কি। বিরহী-ও একটা গ্রামের নাম। বাংলার গ্রাম। অনেক পথ পেরিয়ে, ধূ ধূ রাস্তা এসে শেষ হয় এক নদীতে। সে নদী পেরিয়ে আবারও তেপান্তর পার করে তবে গ্রাম বিরহী। আর তার টাঁড় জমির মাঝে এত্তোটুকুন বিরহী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই অবধি পড়ে একটা ছবি ভাবুন। দেখবেন নদীর ধারে গাছ গাছালিতে ভরা সবুজ ক্ষেতের মাঝে ভেসে থাকা মাটির ঘর জেগে উঠবে চেতনে আর সোঁদা মাটির গন্ধ পেতে থাকবেন। ... ...
এই অজানা, অনামী মুন্সি বা পণ্ডিতরাই অনুবাদে আসল ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই সমস্ত আইনের পুস্তিকাগুলো যে পণ্ডিতদের অনুবাদ, তার বড় প্রমাণ – সব পৃষ্ঠার ওপরে ‘শ্রীশ্রীদূর্গা সহায়’, ’শ্রীশ্রীহরি’ ইত্যাদি স্মরণিকা পাওয়া গেছে। কিন্তু নিজেদের অধিকারের বলে ইংরেজ ওপরওলারা অনুবাদের ধরণ, শব্দের ব্যবহার ঠিক করে দিতেন। আর সেখানেই সমস্যার জন্ম শুরু। হ্যালহেডের প্রভাব ও আধিপত্য এইসব ইংরেজ ‘অনুবাদক-অফিসার’দের ওপর প্রচণ্ড ছিল। আর এই হ্যালহেডই প্রথম থেকে প্রচলিত বাঙলা-আরবি-ফার্সি বাদ দিয়ে সংস্কৃত শব্দ ব্যবহারের পক্ষে ছিলেন। কঠোরভাবে নির্দেশ ছিল আরবি-ফার্সি চলিত (অসাধু) বাঙলা বাদ দিয়ে সংস্কৃত শব্দ ব্যবহারের জন্যে। ফলে, এই সময় থেকে এই অনুবাদগুলির মাধ্যমে আরবি-ফার্সি শব্দ বাদ পড়া শুরু হল এবং সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার বাড়তে লাগল। ... ...
এখন ঋত্বিককে সমকাল আপন করে নেয়নি, সে নেয়নি যেমন ভ্যান গঘকে নেয়নি, কাফকাকে নেয়নি, নেয়নি রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্তকে। তবে ঋত্বিকের ক্ষেত্রে এই প্রত্যাখ্যান যতটা না মানুষের তার চেয়ে বেশি সিস্টেমের, সমান্তরাল ছবি কিংবা বাম রাজনীতি শুধু নয়, অতিবাম কিংবা নিতান্ত সাধারণ গণসংগঠন কেউই তাঁকে বুঝে উঠতে পারল না। তবে যে বাম রাজনীতি ৫০ এর দশকের উদ্বাস্তু আন্দোলনের আয়নায় নিজেদের সাংগঠনিক ভিত্তিকে নতুনভাবে আবিষ্কার করল, তারা ঋত্বিক নামক এই ধারালো ছুরিটিকে কেন যে হাতে তুলে নিল না তা ভেবে আমার ধন্দ লাগে বৈকি। যদিও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বা সাদান হোসেন মানটোর মতন ঋত্বিকও কোন প্রতিষ্ঠানের বক্ষলগ্ন হতে পারেন না, কারণ ইতিহাসের কাছে তাঁদের পরিচিতি তাঁরা গণশিল্পী, মানুষের শিল্পী, সত্যের ও সময়ের রূপকার। সেই কারণেই কোমল গান্ধার চলচ্চিত্র না হয়ে হয়ে ওঠে কালের এক প্রবন্ধ। কুমারসম্ভবের অনুষঙ্গে ঋত্বিক যেন লিখতে বসেছিলেন তাঁর সমকাল, গণনাট্যের বিরোধ, দুই বাংলার বিরহ আর আমাদের শকুন্তলার আর্ত চোখে আনতে চেয়েছিলেন বন্ধনমুক্তির আকুল আবেদন। সুবর্ণরেখার অন্তিম হৃদস্পন্দন যেমন আমাদের লজ্জায় অবনত করে রাখে, আমাদের প্রজন্মকে উপহাস করে এই বলে যে দেশভাগ দ্যাখে নাই, দাঙ্গা দেখে নাই, মন্বন্তর দেখে নাই! ছুঁড়ে ফেলে দেয় ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশ যাত্রাকে আগুনের কোলে, উত্তর আধুনিকদের সাথে কোন রকম বাদানুবাদে টেবিল গরম না করেই। যেমন নিম্নবর্গীয় ইতিহাস চর্চার সুযোগ না পেয়েই তিনি লিখে ফেলেন দলিতের ভাষ্য যেখানে রাম জননী কৌশল্যা হয়ে ওঠেন এদেশের অন্ত্যজ জাতের এক রাণী, শ্রী রাম হয়ে ওঠেন বাগদি সন্তান তেমনি আবার কোমল গান্ধার তুলনামূলক নিকট কালের এক পর্যায় থেকে কিছু টুকরো শট সোজাসুজি আমাদের দিকে ছুঁড়ে মারে। ... ...
"সুকান্তর রানার কবিতাটি পড়ে সে চমকে উঠেছিল। কোনোদিন তো ভাবেনি, পিঠে চিঠির পাহাড় আর টাকার বোঝা নিয়ে ছুটে চলা ডাকহরকরার কথা? পিঠে বোঝা নিয়ে সারা রাত দৌড়ে যায় সে, মানুষের চিঠি, টাকা গ্রাম থেকে গ্রামে পৌঁছে দেয় সূর্য ওঠার আগেই। তাকে কি কেউ চিঠি লেখে? যৎসামান্য অর্থে দিন-গুজরান, অভাব যার নিত্যসঙ্গী, সেই রানার নিজেও কি কোনোদিন ভেবে দেখেছে তার দুঃখের কথা? না কি তার সব বোধ, অনুভূতি গেছে অসাড় হয়ে? এ কবিতা পড়ে সলিলের চোখ খুলে গিয়েছিল। তখন থেকেই গান বাঁধার ইচ্ছে, রানারের ছুটে চলার গান। " ... ...