১৯৯৫ সালের বইমেলায়, নির্ঝঞ্ঝাটে বই দেখার জন্য একটি অপেক্ষাকৃত ফাঁকা দোকানের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে "থীমা"তে যে বইটির প্রচ্ছদ দেখে থমকে দাঁড়িয়েছিলাম, তার নাম "থোড় বড়ি খাড়া"। লেখক কল্যানী দত্ত। কমলা রঙের হার্ড কভারে সাদাকালো ছবি আঁকা, ১৩১ পৃষ্ঠার কৃশকায় বইটির প্রতিটি পাতায় যত্নের ছাপ। প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ পূর্ণেন্দু পত্রী। এমন নয়নশোভন বই বাঙ্লায় খুব যে বেশী দেখা যায় তা নয়। ... ...
কার্লোস ফুয়েন্তেসের নাম আমি প্রথম শুনি এখানেই। The Crystal Frontier এর আলোচনা পড়ে আগ্রহী হই ফুয়েন্তেস সম্বন্ধে। আর ঠিক সেইসময়ই একদিন "বার্নস অ্যান্ড নোবলস" এ গিয়ে দেখি ফুয়েন্তেসের ২-৩ টি বই অসম্ভব কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ঝাঁপিয়ে পড়ে যে বইগুলি কিনলাম, এই Inez বইটি তার অন্যতম। দুইখানা ঠাসবুনোট লাভ স্টোরি একসাথে বুনে তৈরী এই উপন্যাসটি। যা এক কিশোরীর বিনুনীর মত ঝলমলিয়ে দুলে ওঠে, ডগায় বাঁধা অস্বছ কিন্তু স্বপ্রভ কৃস্ট্যালের দ্যুতিতে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে। ... ...
বইয়ের প্রচ্ছদে "হিশেব"- বানান এভাবেই দেয়া আছে। লেখকের নাম যখন হুমায়ুন আজাদ, এ বানান তখন আর অবাক করেনা আমাকে। হুমায়ুন আহমেদ আর হুমায়ুন আজাদ দু'জন ভিন্ন মানুষ। প্রথমবার নাম শুনে অনেকেই দু'জনকে গুলিয়ে ফেলেন, সে জন্যেই এটা বললাম। আমার পড়া হুমায়ুন আজাদের প্রথম বই - "সব কিছু ভেঙ্গে পড়ে"। মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে লেখা বই। সব রকম সম্পর্ক। বাবা-মা'র সাথে, ভাই বা বোনের সাথে, স্বামী-স্ত্রী বা পুত্র-কন্যাদের সাথে। সে বইয়ের মূল চরিত্রে ছিলেন একজন প্রকৌশলী, যিনি সড়ক বানান, আর ব্রীজ। মানে সেতু। ব্রীজ বানাতে বানাতে একসময় মানুষের সম্পর্কগুলোকেও তিনি ব্রীজ বলে ভাবা শুরু করেন। একসময় দেখা যায়, এ সম্পর্কগুলো তার বানানো ব্রীজগুলোর মতই কী অসহায়ভাবে ভেঙ্গে পড়ছে! বই পড়ে যে কখোনো যন্ত্রনা পাওয়া যায়, হুমায়ুন আজাদের বই পড়ার আগে আমার এই ধারনাই ছিলো না। অসম্ভব যন্ত্রনা দেয় তাঁর বই,অথবা বলা ভাল - পীড়া দেয়। নিজেকে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করায়। চারপাশের সোজা সরল জগতের ধারনা এক লহমায় উড়িয়ে দিয়ে তিনি যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখান, কেমন করে আমাদের চারপাশের সব কিছু ভেঙ্গে পড়ছে। ... ...
মিহির সেনগুপ্তর লেখা বিষাদবৃক্ষ গতবছর আনন্দ পুরস্কার পেয়েছে; বইটির প্রকাশক সুবর্ণরেখা, দেড়শো টাকা দাম। মলাটে লেখা আছে, "বিষাদবৃক্ষ একখানি শক্তিশালী এবং বিষাদময় আত্মস্মৃতি যা এই উপমহাদেশের এক ভয়াবহ সময়ের প্রতিবিম্বিত দর্পণমাত্র।" অবতরণিকাতে মিহির লিখছেন, "যাঁরা পঞ্চাশের ছিন্নমূল কাফেলা, তাঁদের জীবনভর দু:খ সংগ্রাম, হারিয়ে ফুরিয়ে যাওয়ার কথা নিয়ে নির্মাণ হয়েছে কত লেখা, ছবি, ছায়াছবি। আজও উপমহাদেশ জুড়ে বন্ধ হয়নি তার হাহাকারি চর্চা, রোমন্থন। কেউ সামগ্রিকতায়, কেউ নৈবক্তিক খন্ডিত গন্ডিতে অব্যাহত রেখে চলেছেন সেই দু:স্বপ্নের ব্রতকথা। .... স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম যারা ... যাদের অভিভাবকদের এপারে কোনও সহায়-সম্পত ছিল না চলে এসে স্থায়ী হয়ে, থিতু হয়ে বসার মত, তারা সেদিন কীভাবে তথাকার স্বাধীনভূমিতে বেড়ে উঠেছিল বা কতটা নাগরিক অধিকার লাভ করেছিল, এ গ্রন্থ তারই একটি আলেখ্য রচনার প্রচেষ্টা। ... ...
রুনু গুহ নিয়োগীর মেমোয়ের্স। ছোটোবেলা, প্রথম প্রেম ... এ সব নিয়ে খুব আদিখ্যেতা করেন নি। প্রায় প্রথম পাতা থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তার কর্ম জীবন নিয়ে। প্রথম দুটো খন্ডে কয়েকটা ইন্টেরেস্টিং প্রতারনার ঘটনা, এ ছাড়া প্রায় সবটাই নকশাল আন্দোলন নিয়ে। অনন্ত সিং-এর কাজ কারবার নিয়ে অনেক লিখেছেন, বার বারই প্রকাশ করেছেন ঐ দলের শৃংখলা বোধ আর বুদ্ধিমত্তার। সততার আর সাহসের। এ যেন দুই পেশাদারের লড়াই, যুদ্ধ শেষে পরাজিতকে মনের থেকে বাহবা দেওয়া। ... ...
সিল্ক রোড নিয়ে ভালোবাসার শুরু বেশ ছোটবেলায়। এবং মধ্য এশিয়া,আফগানিস্তান। স্বপ্নে গোবি-তাকলামাকানের বরফঢাকা প্রান্তর। তারপর তো দেশে-বিদেশে হাতে পেলাম-সেই ঘোর লাগা rugged terrain। গৌতম ঘোষের তথ্যচিত্র। ডিসকভারি-ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের কল্যাণে মাঝেমধ্যে মঙ্গোলিয়া-ইউরেশিয়ান স্তেপ। বিলেতে এসে সম্প্রতি হাতে পেলাম সান শুয়ানের বই, যার কথা লিখেছি আগে। আগ্রহ আর একটু বাড়লো, মনে হলো আর একটু পড়ি। তাই হাত বাড়ালাম স্বেন হেদিনের দিকে। সিল্ক রোড নিয়ে সম্ভবত: সবচেয়ে বিখ্যাত বইটির দিকে। ... ...
হিউয়েন সাং তাঁর দীর্ঘ পথপরিক্রমা শেষ করেছিলেন আঠারো বছরে, যেখানে এই এপিক জার্নির সময়কাল ৬ মাস, তাও শান এড়িয়ে গেছেন তালিবান-শাসিত আফগানিস্তান। ভিসা পান নি উজবেকিস্তানের। সর্বমোট পেরিয়েছেন চীন তুর্কীস্তান, তাকলামাকান মরুভূমির কিয়দংশ সহ কিরঘিজস্তান, পাকিস্তান ও অবশেষে ভারত-বিহারের পাটনা, রাজগীর নালন্দা, কুশীনগর (লুম্বিনী বাদ, পোস্ট ইলেকশন থমথমে বিহারে, কার্ফিউকবলিত বিহারে কি করেই বা ভরসা পান মহাকাব্যিক যাত্রায় বেরোনো অবলা চীনা মহিলা, এ তো আর মহাপ্রস্থানের পথে যাত্রা নয়!), বারানসী, কাঞ্চী। মালবে যান নি; কেন কে জানে, গরম পড়েছিলো হয়তো, কিম্বা প্রবল ধূলো। ... ...
বিপুল দাসের তিরিশখানি ছোট গল্পের সঙ্কলন 'শঙ্খপুরীর রাজকন্যা' আনন্দ পাবলিশার্স থেকে সদ্য প্রকাশিত (জুন,২০০৫), দেড়শো টাকা দাম। সূচিপত্র চোখ বুলিয়ে আকৃষ্ট হবেন পাঠক গল্পের নামকরণে। 'রক্তচন্দন ও কালোমহিষ', 'হেমামালিনীর হিরো', 'মস্তকপ্রধান কাঁকড়া', 'চক্রবৎ সুধীর', 'কলনবিদ্যা ও শিল্পের জন্ম', 'মিউচুয়াল হয় না'-বিভিন্ন গল্পের নাম। ... ...