করোনা অতিমারীকে অবৈধভাবে শ্রমিক আটকে রাখার একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ট্রেনে সোশাল ডিস্ট্যান্সিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গ্রামে পৌঁছলে চোদ্দ দিন আইসোলেশনের ব্যবস্থা ছিল। বরং শ্রমিককে কাজের জায়গায় যে ভাবে রাখা হয়,খুপরি ঘরে গাদাগাদি করে অনেকজন,বা ঘিঞ্জি বস্তিতে ,তাতেই করোনা বেশি ছড়াবার কথা। রাতারাতি তার জন্য বিল্ডার স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা ,রোগ প্রতিহত করবার মতো ব্যবস্থা করে দেবে এটা ভাবাও বাতুলতা।শ্রমিক নিজেও এই ভয়টি পাচ্ছে। একে তো তার অন্নাভাব। কেরালা ছাড়া কোন রাজ্যই পরিযায়ীদের জন্য সন্তোষজনক ব্যবস্থা করে উঠতে পারেনি। উপরন্তু মৃত্যুভয়। দেশগাঁও থেকে বহুদূরে,আপনজনের মুখ না দেখে দূর নির্বাসনে মরতে কারই বা মন চায় ! তাই ঘড়ি মোবাইল বেচেও সে ট্রেনভাড়ার যোগাড় করেছে। কেউ সেটা বহন করলে ঠিক আছে, না করলেও কোনো পরোয়া নেই। এই ঐকান্তিক ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে কোন স্পর্ধায় তার চলাচলকে অপ্রয়োজনীয় ( unnecessary travel) বলা হচ্ছে ? ... ...
যারা জেলাশহর বা সদরে পরিবারের সঙ্গে বাস করে তাদের রোজ দীর্ঘ জার্ণি, এমনিতেওকাজের লম্বা সময়, ওষুধ পত্রের অপ্রতুলতা ছাড়াও অন্যন্য হাঙ্গামাও পোহাতে হয়। যেমন নিবিড় গ্রামে রোগী দেখতে যাবার সময় হাতির পথ জুড়ে দাঁড়ানো বা পাহাড়ি ঝোড়ায় হঠাত হরপা বান আসা। এ ছাড়া অশিক্ষা ও নানা কুসংস্কারের সঙ্গে লড়াই। এই সবটা এরা করে বর্তমান সময়ের নিরিখে অতি অল্প টাকার বিনিময়ে। যেমন আশাকর্মীরা প্রতিমাসে ফিক্সড স্যালারি পায় ৩৫০০ টাকা। তারপর কিছু ইন্সেন্টিভ আছে, যেমন গর্ভিণীকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে কেস প্রতি ৩০০ টাকা পায়। এ এন এম রা আরো কিছু বেশি পেলেও পরিশ্রমের তুলনায় কিছুই না। ... ...
এই মধ্যমগ্রামও যেন আগের শহর নয়। আজ বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তা পুরো শুনশান। চৌমাথা থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে একটাও গাড়ি চোখে পড়ল না। ওভারব্রিজের মাঝামাঝি প্রতিদিনই দাঁড়াই। প্লাটফর্মের প্রত্যেকটা সিগন্যাল লাল হয়ে আছে। এই সময় যে হাজার হাজার লোক স্টেশনে ভিড় করে থাকত, আপ ট্রেন একগাদা ক্লান্ত লোককে কলকাতা থেকে বয়ে এনে প্লাটফর্মে উগড়ে দিত, তারা কোথায় গেল? তারা আর আদৌ কোনও দিন প্লাটফর্মে ভিড় করবে তো?সবকিছু বদলে গেছে, ভেবেছিলাম হাসপাতালও বদলে গেছে। অনেকদিন হাসপাতাল ভাঙচুরের খবর নেই, ডাক্তারের মাথা ফাটছে না। বিষ্ঠা মাখতে হচ্ছে না। স্বাস্থ্য কর্মীদের কয়েক জায়গায় পাড়া ছাড়া করা হয়েছে, মাঝ রাতে সিস্টারকে ভাড়া বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অসংখ্য মানুষ সেই সব ঘটনার সমালোচনা করে স্বাস্থ্য কর্মীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। ... ...
অনেক কারণেই ভারত আমেরিকার সঙ্গে তুলনীয় নয়। আমাদের জনসংখ্যার ৬ শতাংশের বয়স ৬৫ র ওপরে, গড় ২৮ শতাংশ ভারতীয়ের বয়স ২৯, জনসংখ্যার ২৮ শতাংশর বয়স ১৪র নীচে। আমেরিকায় মাথাপিছু ১১ হাজার ডলার খরচা হয় স্বাস্থ্য খাতে, আমাদের এখানে ৭৫ ডলার, অতএব ওদের সঙ্গে আমাদের একরাস্তায় হাঁটা বোধহয় অনুচিত হবে।এমনিতেও দক্ষিণ এসিয়ার করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটাও আমাদের জনসংখ্যার অনুপাতে কমই ঠেকছে। সবকটা সার্ক দেশ মিলেও সারা বিশ্বের করোনা আক্রান্তের ১ শতাংশের সামান্য বেশি। করোনা মৃত্যুর নিরিখে প্রায় ০.৫ শতাংশ। এ সব জনসংখ্যায় অল্পবয়সীদের অনুপাত বেশি বলে নাকি আমাদের মারী নিয়ে ঘর করার অভ্যাস থেকে, আমি জানি না।প্রতি ১০ লক্ষে এখনো অবধি দুশোর কিছু বেশি টেস্ট করা হচ্ছে ভারতে। ইউরোপ বা পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে তুলনায় দাঁড়ায় না ব্যাপারটা। জার্মানি তে দশলক্ষ পিছু ১৫৭৩০ জনের টেস্ট হচ্ছে, ইটালিতে ১৪,১১৪, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১০৫৬৪।যতই চেঁচাই টেস্টিং ওই পর্যায়ে পৌঁছতে পৌঁছতে রোগের চেয়ে চিকিৎসা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে দেশবাসীর জন্যে। ... ...
ঋণ অনাদায়ী হয়, যখন ঋণীরা ঋণ থেকে পাওয়া পুঁজিটি নিয়ে ফাটকা খেলেন বা তা অন্য ব্যবসায়ে লাগিয়ে দেন। আমাদের দেশের পশ্চিম প্রান্তে একটি রাজ্য রয়েছে। যেখান থেকে আসা বণিকরা সরকার নির্বিশেষে এদেশের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন। অতীতে সব বৃহৎ অর্থনৈতিক কেলেংকারিই তাঁদের মগজের জোরে হয়েছিলো। এই তালিকাতেও তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফাটকাবাজি তাঁদের রক্তে রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলিকে তাঁরা এককথায় কিনে রাখেন। প্রতি নির্বাচনের সময় যেসব লক্ষকোটি টাকা বেআইনি হাতবদল হয়, তার রাশটি তাঁদের হাতেই থাকে। যে দলই সরকারে আসুন না কেন, এই সব বণিক তাঁদের থেকে শাইলকের ভাগের মাংস উঁচু সুদসহ উসুল করে নেন। ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণও সেই ভাগের মাংস। ... ...
তিনি জানবেন না তার মজবুত বাড়ির ভিত টিমটি বার দিয়ে নয় কিছু মানুষের বুকের হাড় দিয়ে তৈরি। কিংবা একদিন ওই ধাপার মাঠেই গড়ে উঠবে বিলাসবহুল শপিং মল। আমরা যাব, ব্র্যান্ডেড জিন্স কিনব, মাল্টিপ্লেক্সে বান্ধবী অথবা বউয়ের হাত ধরে পপকর্ণ খেতে খেতে কোনো রিয়েলেস্টিক সিনেমা দেখব, আর ভাবব বিষাদে ডুবে যাব, আর ওই মাল্টিপ্লেক্সের ভিতের ভেতর শুয়ে থাকা মানুষগুলো হাসবে। অথবা ওই ধাপার মাঠ যেমন আছে তেমনিই পড়ে থাকবে। এখন যেমন ওই মাঠের যেখানে সেখানে কিছু নেশাড়িদের দেখতে পাওয়া যায় গাঁজা গাছ খুঁজতে, তেমনই ওই লাশের সারে উর্বর জমিতে নিজে নিজেই জন্মাবে কিছু গাঁজা গাছ। আমরা যেমন যেতাম একসময়, তেমনি কোনো তরুণ কবি ও লেখক ওখান থেকে তুলে আনবে ফুরফুরে সতেজ গাঁজা গাছের চারা, সেই গাছের পাতায় নেশা করবে। মৃত্যুর গন্ধ মাখা ওই তামাকে নেশা আরো বেশি হবে, তারপর নেশাতুর কলমে লিখবে... ... ...
"রিকশ নিয়ে না বেরিয়ে উপায় নেই। সরকার চাল দিচ্ছে, কিন্তু তাতে মাস চলবে না৷ তাই দু'বেলাই বেরচ্ছি। পুলিশ দেখতে পেলে কখনও কখনও হাওয়া খুলে দিচ্ছে, মারছে, আবার টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে হাওয়া ভরে নিচ্ছি।" সংক্রমণের বিষয়ে বললেন, "হলে হবে। কী আর করা যাবে! এমনিও তো বেঁচে থাকতে কষ্ট হচ্ছে, মরে গেলে যাব। অসুবিধা কী!" আরও বললেন, "খিদেতে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। আপনি তিনদিন না খেয়ে থাকলে এমনিই অসুখে পড়বেন। পেট ভরা থাকলে ভাইরাস কিছু করতে পারবে না। খালি পেটে থাকলে ভাইরাস আরও কাহিল করে দেবে। ঘরে থাকলে না খেতে পেয়ে এমনিই দুর্বল হয়ে যাব।" ... ...
জনগনের ভোটে ক্ষমতায় আসা নির্বাচিত সরকার কি সত্যি সত্যি নাগরিকের ভুখা পেটে ব্যথিত হয়? তবে বালিকা কিস্কুদের দেশ কোথায়? সারাবছর বালিকাদের খাবার জোটে না। অভাব যায় না। কেননা নির্দিষ্ট উপার্জন নেই। এদের মাথায় উপরে কেউ হাত রাখার নেই। এবারে এসেছে ভাইরাসের দাপট। নতুন পরিস্থতি। এখন প্রতিদিন সকাল হলেই ভয়। অভাব আর অবসাদ। বালিকা কিস্কুর জীবিকা বলতে সাঁওতালি নাচ প্রদর্শন। বছরের বাকি দিন বালিকা দিনমজুরি করে। মাঝে মাঝে জমিতে চাষের কাজে ডাক পায়। স্বামীও লেবার খাটে। তিন সন্তান ও শাশুড়ি নিয়ে এভাবেই চলে সংসার। শাশুড়ির ভাতাও বন্ধ । দুইবার পেয়েছে এক হাজার করে টাকা। বালিকা কিস্কুর বিদ্যালয়ের মুখ দেখা হয়নি। তবু নিজের ছেলেমেয়েদের নিয়ে বালিকা খুব সচেতন। ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে এবার। মেয়ে একাদশ শ্রেণি। অভাবের সংসারে এক নতুন পরিস্থিতি লকডাউন। বালিকা কিস্কু খুব সহজেই বলছে, “ভাইরাসের লেগে খাওয়া বন্ধ। দিনে আটা গুলে খাচ্ছি। রাতে ভাত।” ... ...
মুম্বাই এটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। মার্চের শেষ হপ্তাতেও পজিটিভ কেস পাওয়া যাচ্ছিল কেবল উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত এলাকাগুলিতে। হয় তারা বিদেশ প্রত্যাগত বা বিদেশ থেকে আসা কারো সংস্পর্শদোষে দুষ্ট। কিন্তু এই একমাস বাদে ছবিটা সম্পূর্ণ পালটে গেছে। পশ এলাকা গুলিতে রোগী ক্রমশ কম, গরীব বেশি পজিটিভ। এখন ধারাভিতে ৩৪৪, কিন্তু বড়মানুষদের ওয়ার্ডগুলি থেকে মাত্র ৬৫ টি কেস রিপোর্টেড হয়েছে। বস্তিগুলির ঘর ছোট, গাদাগাদি বেশি, জল কম, কমন টয়লেট। করোনার মহা স্ফূর্তি। পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে BMC পুলিশকে বেছে বেছে বস্তিগুলিকে সিল করে দিতে বলেছে। আমি /আপনি হলে বাড়ি ফেরবার জন্য মরিয়া হয়ে পড়তাম না ? বসে থাকতাম কবে রাজ্য কেন্দ্রের নির্দেশে নোডাল অথরিটি গড়ে আটকে পড়াদের লিস্ট বানাবে, সেইজন্য ? ... ...
মৌসুমি ভৌমিক একা একাই গেয়ে যান বৃষ্টির গান আর আমি জানলা দিয়ে দূরে, বহুদুরে, আলো-অন্ধকারে, মধ্যরাতের নিঃসঙ্গ বার্চ কিংবা ওক গাছগুলির দিকে তাকাতে তাকাতে মনে করতে চেষ্টা করছিলাম- ‘রাত্তিরে, বুনোহাঁস যখন আকাশে ওড়ে’ লাইনটি কবে কখন কার লেখায় পড়েছিলাম! অথচ আমার এখন মুস্তাফা সিরাজের ‘অলীক মানুষ’ নিয়ে ভাবার কথা, কিন্তু আমি কবেকার পড়া গল্পের লাইন নিয়ে ভাবছি! আর এদিকে মৌসুমী ভৌমিক গেয়ে চলেছেন বৃষ্টির গান। অথচ আমি সারাদিন ধরে ভাবছিলাম জীবন খুলে সব বনুয়া পাখি উড়িয়ে দেব আর কবি হুইটম্যানের মতো মাঝরাতে তাদের দেশান্তর দেখব…হঠাৎ লকডাউন হয়ে যাওয়ায় সব কিছু যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। চার দেয়ালে থমকে গেছে সব কথা। ... ...
তরমুজওয়ালা ভীত হয়ে বললেন স্যার এই ফসল নষ্ট হলে বাঁচবো কী করে ? পুলিশ টাকা আদায় করে ছাড়ছে। তরমুজওয়ালার ছিল ৩৮০ টাকা। ২০০ টাকা নিয়ে ছাড়ল। যা হয়ে থাকে তাইই হচ্ছে অনেক জায়গায়। এই অভিযোগ শুনেছি অনেক। সত্য মিথ্যা যাচাই করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। তাঁদের বাইরে এইসব দুর্নীতিপরায়নরা আছেন। মহামারি, যুদ্ধ, বন্যার সময়ে, আপৎকালীন অবস্থায় দু’রকমই ঘটে থাকে। ভালো এবং মন্দ। বাংলাদেশে তো ত্রাণের চালচুরি নিয়ে কত সংবাদ বেরিয়ে আসছে। গরিব মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না। আমাদের এখানেও এই অভিযোগ কম নয়। এই উপমহাদেশে তা ঘটেই থাকে। এদেশে ওদেশে। কিন্তু আরো মর্মান্তিক ঘটনার কথা ভেসে এল। মানুষের আতঙ্ক কতদূর রক্তের ভিতরে প্রবেশ করলে এমন হতে পারে। বাংলাদেশে এমন ঘটেছে। এদেশেও তা ঘটতে আরম্ভ করেছে। ... ...
কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিশেষত কম টেস্টিং এবং আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা গোপন করার মত বেশ কিছু সিরিয়াস অভিযোগ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতি। এই প্রসঙ্গে 'জনস্বাস্থ্য অভিযান' এর একটি রিপোর্ট আমাদের হাতে আসে। যদিও এই রিপোর্টটি ১৯শে এপ্রিল অব্দি প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বানানো, এবং এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে হয়ত রিপোর্টের কিছু অংশ আর প্রাসঙ্গিক নয়, তবু বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে রিপোর্টটির অনুবাদ প্রকাশ করা হল। ... ...
মহামারীকে ঠেকানোর জন্য আমরা লক ডাউনকে অস্ত্র করেছি। কিন্তু সেই অস্ত্রের সত্যিকারের ব্যবহার আমরা আদৌ জানি তো? বহু গরীব মানুষের চোখের জলে ভেজা এই লকডাউন আমরা আদৌ কাজে লাগাচ্ছি কি? এসময়ে দরকার ছিল সন্দেহজনক রোগীদের প্রচুর টেস্ট করা এবং পজিটিভ রোগীদের আইসোলেটেড করা। টেস্টের সংখ্যা সমস্ত ভারতবর্ষে হতাশাজনক ভাবে কম। আর সবচেয়ে কম আমাদের পশ্চিমবঙ্গেই। এমন ভাবে চললে দ্বিতীয় দফা লকডাউনের শেষে ৩ই মে তারিখে আমরা একই অবস্থায় বা আরও খারাপ অবস্থায় থাকবো। তখন কি হবে? আরও কুড়ি দিন লক ডাউন বাড়বে? সেই কুড়ি দিন পরে কি হবে? একটা মহামারীর হাত থেকে বাঁচতে আমরা একটা মন্বন্তর সৃষ্টি করছি নাতো? ... ...
এমনকি মহামারী-জনিত সম্পূর্ণ অভূত পূর্ব সংকট পরিস্থিতিতেও পশ্চিমবংগে রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে এক্তিয়ার প্রশ্নে রাজনৈতিক কুনাট্য ঘটেছে , এবং ঘটে চলেছে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সমর্থক, স্থূল অর্থে আত্মপ্রচার এ আগ্রহী রাজ্যপালের কোন নিন্দাই যথেষ্ট না, এবং রাজ্য সরকার গুলোর ঘাড়ে সমস্ত কাজ ও নিন্দার ভার দেওয়ার পরিচিত কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাটিও নতুন না। একই সংগে রাজ্য সরকারের সং্ক্রমণ এর তথ্য সংক্রান্ত বিষয়ে অযাচিত নিয়ন্ত্রন অবিশ্বাস্য মুর্খামি মাত্র। কিন্তু এই প্রসংগে মেডিয়ার ভূমিকা বা সংবাদ গ্রাহক হিসেবে আমাদের ভূমিকাটিকে কি একটু আয়নার সামনে দাঁড় করানো উচিত? গণতন্ত্রে ক্ষমতার চাপান উতোর এর নাটকীয়তার বিবরণ এবং চর্চা কি আমাদের সত্যিই কোন কাজে লাগছে? ... ...
আমি মনে মনে ভাবি কি লিখবো? সবজী ওয়ালার ধর্ম দেখে সবজী কেনার ঘটনা? কী লিখবো? এক ডাক্তার তার প্রিয় বন্ধুর শেষ কৃত্য করতে গিয়ে মার খাচ্ছেন? কী লিখবো? স্বাস্থ্য কর্মীদের বলা হচ্ছে বাড়ি ছেড়ে দিতে। কী লিখবো? ধর্ম দেখে রোগ ভাগ করা হচ্ছে? কী লিখবো? কাতারে কাতারে শ্রমিক চলেছেন বারোশো চোদ্দোশো মাইল হেঁটে। এক মা তার সন্তানের মৃতদেহ নিয়ে ছুটছেন। গ্রামের কাছে এসে মারা যাচ্ছে আর হাঁটতে না মারা ছোট্ট মেয়েটি। ডাক্তার সাজিয়া বাংলাদেশ থেকে জানাচ্ছেন “আমি জানি না আমার আড়াই বছরের সন্তানকে দেখতে পাবো কিনা ভাইয়া। ওরা বলছে শেষ পর্যায় না আসলে প্রটেকশান কিট দেবে না”। রবীশ কুমার প্রত্যেকদিন প্রাইম টাইমে আসছেন। আমার ভারতবর্ষের যে ছবি তুলে ধরছেন সোশ্যাল ডিসটেন্সের নামে, যে অসভ্যতা হচ্ছে, এই ভারত আমি আগে দেখিনি। আমার চারপাশের লোকজন অচেনা হয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেও কি? ... ...
লক ডাউন কাটানোর কোন "খুড়োর কল"নেই। চলেই যাচ্ছে,চলেই যাচ্ছে,চলেই যাচ্ছে। কাগজ কুঁচি, বালিশের তুলো, রাগ শহীদ মিনার। ... ...
তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এ-দেশেও সম্ভব নয়। বিকেলবেলা সেই খবরই এলো। সরকারী অনুদান প্রথমে সরাসরি ব্যাঙ্কে জমা পড়বে বলে ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু বহুসংখ্যক লোক একইসাথে সরকারী ওয়েবসাইটটি খোলার সঙ্গে সঙ্গে ওয়েবসাইটটিতে গোলমাল শুরু হয়েছিল। এর ফলে সরাসরি অফিস থেকে টাকা তুলতে সবাই চলে এলো। দীর্ঘ লাইন। টিভিতে দেখা গেল সব গায়ে গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোথায় গেল রাস্তায় দু’জন লোকের মাঝে সরকারী নির্দিষ্ট ১.৫ মিটার দূরত্ব? দেখে শিউরে উঠলাম। ... ...
ভাইরাসকে নিয়ে সহবাস করা মানবজাতিকে শিখে নিতে হবে। কোথাও herd immunity তথা গোষ্ঠী ইমিউনিটি তৈরি হবে, কোথাও হবেনা। এমনটাই স্বাভাবিক। হাতে গোণা কয়েকজন কর্পোরেটের এবং কয়েকটি দেশের লাভের, লোভের খিদে মেটাতে গিয়ে শিকার হচ্ছে সমগ্র মানবজাতি। ... ...
কোভিড-১৯ অতিমারী আমাদের সমাজের বহু বিভাজনকে আরও বেশি প্রকট করে দিয়েছে। অতিমারী একদিন বিদায় নিলেও তার ক্ষতচিহ্ন কিন্তু অত সহজে বিদায় নেবেনা। অনলাইন শিক্ষার সোনার পাথরবাটির সন্ধান ভারতবর্ষের ডিজিটাল ডিভাইডকেও একই ভাবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ... ...
ত্রানের অপ্রতুলতার প্রথম কারণটি নিয়ে নাড়াচাড়া করলে আবার কেন্দ্রীয় নীতির কথাতেই ফিরে যেতে হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে যে গণ বন্টন ব্যবস্থায় নাম নথিভুক্ত আছে এমন প্রত্যেকজন তিনমাস ধরে ৫ কেজি বাড়তি খাদ্যশস্য এবং ১ কেজি বাড়তি দানাশস্য বিনামূল্যে পাবে। কিন্তু ১০ কোটির বেশি মানুষের নাম গণবন্টন ব্যবস্থায় নথিভুক্ত নেই, কারণ সরকার ২০১১ সালের জনগণনাকেই ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি এক্টের ভিত্তিবর্ষ ধরবে ঠিক করে ফেলেছে। ... ...