আজ ঈদ। হত্যামুখর দিন। - এই রকমটা কবিতাতে লিখছিলেন মাহবুব কবির। সামনে রোজার ঈদ, কোরবানির না। কিন্তু কি এক কারণে আমারে এখন কোরবানি দেয়া হইতেছে, আমি নিজেও কিয়ার না। ... ...
মোষের স্বপ্ন ভঙ্গের সাথে সাথে শুরু হয় মোষ-খাদকের স্বপ্ন। আর এর মাঝে থাকে কসাইখানা, স্থির আথচ কি ভবহ অস্থিরতাই না রাখে পেটে ।আবধারিত সত্যের সামনে কিছুই করার থাকে না সেখানে। হয়তো মোষেদের ফেলে আসা অতীত আথবা নির্ধারিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে কোন-কোন মোষ চিৎকারে-চিৎকারে অস্বীকার করে ভবিতব্য। কিন্তু তাতে কিছুই আসে যায়না। ... ...
ভিডিও ক্লিপটিতে ব্যবহৃত আর্মি বুটের তৈরি একটা গোলাকার কাঠামো দেখানো হয়েছে যার মধ্যে গরু জবাই করা হয়। জিনিসটা ওপর থেকে ঝোলানো থাকে, আর তার নিচ থেকে একটা গরু ঐ গোলটার মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দেয়। অন্যদের মতে ওপর থেকে দুটো ছাগলকে ঝুলিয়ে তাদের মাথা ওর মধ্যে ঢোকানো যেতে পারে। গরুর চামড়া দিয়ে এই ছাগলগুলো তৈরি হয়। ... ...
ও আমার সেই ছোটোবেলার বন্ধু। আমরা একসাথেই বড়ো হচ্ছিলাম। আমি দুই তিন চার ক্লাস পেরোচ্ছিলাম আর ও দোতলা, তিনতলা, চারতলা। আমরাও থাকতাম চারতলায়। তো চারতলায় যখন ও ও চলে এলো, তখন তো আমায় আর পায় কে! কে আবার ? বন্ধু ! বাড়ালে হাত বন্ধু পাওয়া যায়... হ্যাঁ, যায় বই কী ! ... ...
কিছু গপ্পো পাকা ঢ্প, কিছু কাঁচা, বাকিটা পরিসংখ্যান। বাঘের গপ্পো খানিকটা করে তিনটেই। আর সব ঢপের গপ্পোই যেহেতু এক একটা ছোটখাটো শিকার - (যেমন ভূত প্রেত ও জাতিস্মরদের আখ্যান) - তাই ফুটনোটে একটা টোপের মত প্রশ্ন বাঁধা থাকবেই থাকবে, যার নকল উদ্দেশ্য শ্রোতা/পাঠকের সন্দিগ্ধ মনের পুষ্টিকরণ হলেও, আসলটা হল বিশ্বাসের বঁড়শিতে গেঁথে অতীতের ক্রুজে তুলে নিয়ে আসা। বেঘো গপ্পের ক্ষেত্রে প্রশ্ন-টা হল:--- ছালটা এখন কোথায়? এটা জানা জরুরি। ... ...
হুঁ, আমরা শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে গিয়েছিলুম | শ্রীলঙ্কা আসলে ঠিক বিদেশ বিদেশ লাগে না | এয়ার্পোর্টে নেমে সময়টা পর্য্যন্ত ঘড়িতে বদলাতে হয় না| রাস্তার অধিকাংশ বাসও টাটা কিম্বা লেল্যান্ড | এমনকী, সন্ধ্যের রাস্তায় কুপির আলোতে বিক্রী হচ্ছে তেলেভাজা | ... ...
কথাটা কখনও কাউকে বলিনি, কেমন একটু অদ্ভুত লাগত। এরকমটা মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই, মনে হলে যেন লজ্জাই পেতাম, তবু মনে হত। গরু, বিশেষ করে গাভীর চোখের দিকে তাকালেই মনে হত মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি, এখনও মনে হয়। শান্ত সজল কাজল আঁখি, দৃষ্টিতে অপত্য স্নেহ, ঠিক আমার মায়ের মত। এদিকে গরুদের নাম করে চারিদিকে যা হ্যাটা দেওয়া হয়। সেই গরুর চোখ দেখে মায়ের চোখের কথা মনে হওয়া, লোকে শুনলে কি ভাববে! ... ...
মেয়েরা শার্ট পরে না। ঘোষণাটা দিলেন আমার দাদী জোবায়দা খাতুন চৌধুরানী। সে এক ঈদের সময়। নতুন জামা আসছে আসছে করছে, নেহাত আব্বার অফিস থেকে ফিরতে মেলা রাত হয়ে যায় বলে বন্দর বাজারে গিয়ে কেনাটা হয়ে উঠছে না, তবে আব্বা বলেছে, ধরে নাও কেনা হয়ে গেছে আর আমিও তাই ধরেই নিয়েছি। যদিও প্রতিদিনই অপেক্ষায় থাকি, এই কেনা হয়ে গিয়েছে ধরে নিয়ে রাখা জামা-কাপড়-জুতোগুলো আসলেই কেনা হবে কবে। ... ...
সাত তলার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে দুড়দাড় করে লিফ্টের দিকে এগোতে এগোতে আকাশ দেখার চেষ্টা করি আমি -- আর রোজের মতো আরও একবার বুঝতে পারি কার্পেটে মোড়া এই করিডোরে কোথাও এমন ফাঁক নেই, জানলা তো দূর অস্ত, যেখান দিয়ে একফালি আকাশ দেখা যায়! অথচ দেশে থাকতে পুজো মানেই তো আগে আকাশের দিকে চোখ রাখা- ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমীর হিসেবে আকাশের রং গাঢ় বা হাল্কা হওয়ার হিসেব কষে নেওয়া- শরতের আকাশের "নীলত্ব" আর বাঙালির "পুজোত্ব"কে এক করে দেওয়ার সে অভ্যেস বিলেতের এই এত বছরের বসবাসের অভ্যেসেও অনভ্যাস হয়ে ওঠে না কোন তাগিদে? ভাবতে ভাবতে পেন্টন রাইসের রাস্তা বেয়ে কিংস ক্রসের মোড়ে চলে এসেছি। কখন, টের পাই নি। টের পেতে চাইও নি বোধহয়! বৃষ্টিভেজা, মেঘকালো লন্ডনের সকালে সকালের কোনো রংই লাগে নি ... ...
কাঁকলাড়ু, পটলের মিষ্টি, আরসে, খোশবাস, গুলিচপ, শিব বোঁদে, তামাকভোগ, মায়েস, মাছঢাক, সিদ্ধির কচুরি ... ...
কড়ে আঙুলে গুনে গেঁথে রাখি কয়টা পুজো দেখলাম। স্কুলে সব্বাই জিগ্যেস করবে তো "কটা ঠাকুর দেখলি রে"? অথচ, কোনোবারই সংখ্যা দশ ছাড়ায় না। অথচ, অন্যেরা কত কত ঠাকুর দেখে। চারদিনই দেখে। কলকাতায় থাকতাম সময়ে তো একদিন বাবা নিয়ে বেরোত। তাও প্রায় দিনেদিনেই। সন্ধ্যের পর থেকে তো বাবা যাবে 'বনফুলে'। বিজয়ার দিন বাবা নিয়ে যেত আউট্রাম ঘাটে, আর অল্প একটু অন্ধকার হতেই ফেরত। সেখানেও মাত্র ২-৩ টে ঠাকুরই দেখা হত। অত তাড়াতাড়ি শুধু বাড়ীর ঠাকুরই দুই একখান আসে তো। ... ...
খুব ছোটো ছিলাম যখন, বাবার চাকরির সূত্রে গ্রামে মফস্সলে থাকতে হত সারাটা বছর। কেবলমাত্র পুজোর সময়ে সপরিবারে আসা হত হুগলিতে। আমাদের আসল বাড়ি, লোকে যাকে বলে "দেশের বাড়ি"। দুর্গাপুজো মনেই ব্যান্ডেল ঘোলাকলের পাশে সর্বপল্লী সার্বজনীন দুর্গোৎসব। বাবাদের যৌবনের প্রতিষ্ঠা করা পুজো। ... ...
লতার গলায় চারিদিক আমোদিত। ভালো করে তুমি চেয়ে দেখো ..... দেখো তো চিনতে পারো কি না...। বেশ সময়টা। ভর দুপুর, মৃদু-মন্দ বাতাস। ভীড়-ভাট্টা কম।একদিকের রোয়াকে সব ছেলেরা আর উল্টোদিকের মন্ডপের সামনের চেয়ারে বসে আমরা এক দঙ্গল। দুদল দুদিকে কিন্তু কথা ঠিক চলেছে , চোখে চোখে কথা , হাসিতে হাসিতে কথা। এইদিকের মিঠুর মুখ লজ্জানত হল তো ওদিকের রাজীবদার বাঁদিকের চোখ ঝট করে একবার বন্ধ হয়েই খুলে গেল। "দ্যাখ দ্যাখ তোর প্রেমিক আমাকে চোখ মারছে"। ... ...
শেষ কবে কলকাতার পুজো দেখেছি? বছর কুড়ি আগে বোধহয়। পুজো দেখার গপ্পো সকলে জানে, আর সকলের মতনই ছোটবেলায় কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো, মণ্ডপে যাওয়া - পারোলিনের পুজোর সঙ্গে আমার ছোটবেলার পুজোর কোন তফাৎ প্রায় নেইই। আরো পরে পুজো আর টানতো না - ভিড়, শব্দ, আলো থেকে দূরে নিজের দশ ফুট বাই দশ ফুটের রাজ্যে একটা বই, বা বেহালা, বা টেপরেকর্ডার - এই নিয়ে সময় কাটতো। লাল চশমা পরা আমি পুজো থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করতুম। রাস্তায় যেতে-আসতে যেটুকু চোখে পড়ে সেটুকু ছাড়া বাকিটা পুজো না-দেখা বললেই চলে। তারপর শুরু যাযাবরের জীবন, এঘাট সেঘাটের জল খাওয়া, লাল চশমার ওপর বাস্তবের প্রলেপ পড়া - তখন পুজোর মানে পুজা-অর্চনা থেকে বদলে হয় নিছক আড্ডা - শুন্য আর এক, এই দুটো সংখ্যার বাইরে একটা গেট-টুগেদার... ... ...
স্কুলজীবনে পুজোর সময় বেশি মজা হতো ফাংশান আর তার রিহার্সালে। সারা বছর তার জন্য পথ চেয়ে থাকতাম। সেবার আমার ক্লাস সেভেন। পুজোর ফাংশানের রিহাসালে ওকে প্রথম দেখি। পাড়ায় নতুন এসেছে তখন। আমরা সেক্টর এ,ওরা সেক্টর বি। ও ক্লাস ইলেভেন,শহরের নামকরা মিশনারী স্কুলে। ফাংশানটা সে বছর কেন যেন একটু বেশি জমজমাট। আমরা রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য, ওরা সুকুমার রায়ের ঝালাপালা। আমি বয়কাট, স্কার্ট-টপ, ও চশমা, জিন্স। ... ...
এখন আকাশ। কুচকুচে। ধ্যাৎ এটা শুক্লপক্ষ, ক্যালেন্ডার বলেছে। তো? আমি কুচকুচেই দেখতে পাই; তারা ছিটানো। আজি যত তারা ........ফুটকি ফুটকি ফুটকি। জ্বলজ্বলে। সবুজ। অগুন্তি, না অগুন্তি নয়, গোনা যায়। সফটওয়্যার আছে, আই পি ল্যাব। আই পি ল্যাব ভাইরাস গুনে চলে। টেন টু দি পাওয়ার এইট। সেভেন। এইট। সাইবারগোল্ড দিয়ে রং করা সবুজ ওরা সব, অ্যানোডিস্ক ফিল্টারকে কুচকুচে কালো দেখায়। আই পি ল্যাবের কখনো ভুল হয় না। মেথানলের গন্ধকে ও অকারণ আজে অগুরু ব'লে ভাবেনি। একটা প্যাঁচা ডাকছে কোথাও, চী-ঋ-ঋ-ঋ , আমারে কুড়ায়ে নেবে । আমার তোবড়ানো অলফ্যাক্ট্রি আবার ভুল বলতে থাকে ..... রূপশালী রূপশালী রুপশালী, ধুস। জানলায় আকাশ টোকা দেয়। শুক্লপক্ষই। নিরাচন্দের পর ছ দিন চলে গেছে। ... ...
শব্দ সরে সরে যায়। আলো-ও তেমনি করে সরে যায়। কখনো খুব তাড়াতাড়ি, কখনো ধীরে, অতি ধীরে। অমল ধবল পালে মন্দ মধুর হাওয়া। সব তরঙ্গের এই নিয়ম। সেই কি যেন লিখেছিলেন রেসনিক-হ্যালিডে সাহেব। ডপলার এফেক্ট। জীবনও ঠিক সেই ভাবে ছুটে চলে। পুরো জীবন জুড়েই যেন শুধু ডপলার এফেক্ট। ... ...
দুগ্গাপূজা নিয়ে অত বলাবলির বা কি আছে, অত আনন্দেরই বা কি আছে। সেসব বলবে পাল্লিনের মত কচিকাঁচারা। আমায় কেন, বৃদ্ধ মানুষ ! শুধু ছোটবেলায় একবার লাল জামা কিনে দেওয়া হয় নি বলে গড়িয়ে গড়িয়ে কেঁদেছিলাম। নালেঝোলে মেখে, মাটি চেটে , মেঝের শানে ঠাঁই ঠাঁই করে মাথা ঠুকে গুগলু বানিয়ে তবে ক্ষান্ত দিইছি। আর ক্যাপ ফোটানোর একটা ব্যাপার ছিল। ক্যাটকেটে কালো পিস্তলগুলো সব, নারকেল তেলের গন্ধমাখা। তায় আবার রোল ক্যাপগুলো কিছুতেই ফাটতে চাইত না। আর সেবার কে যেন একটা ঝিনচ্যাক রূপোলী পিস্তল কিনে দিল। দেবদূত-ফেবদূত কিছু একটা ভেবেছিলাম, লোকটাকে। ... ...
সকাল থেকে এই নিয়ে সতেরোবার রিং। এবারও নিঘ্ঘাত হসপিটাল থেকে। তিনমাস আগে থেকে বলে রেখেছি এই উইকেণ্ডের অন কলে আমি আর কোনমতেই নেই - তবু কারুর না কারুর বদহজম, কারুর ফলস লেবার আর ওয়াটার ব্রেক করলে তো কথাই নেই - হসপিটালে ছোটো রে তক্ষুনি। অন্য কাউকে পাঠিয়ে লাভ নেই, এক বছরের রুগি-ডাক্তারের সম্পক্ক। ... ...