মা ছিলেন এবার স্বাবলম্বী । চার হাতে মশারির চাট্টে খুঁট, বাকি ছয়ে ছখানা সিলিন্ডার । পালমশাই অস্ত্র ধরাতে গেলে খেঁকিয়ে উঠেছেন - পেয়েছিস কী আমাকে ? দীপক চ্যাটার্জি ? ... ...
বেলগাছটির অবস্থান ঈশান কোণে। রুয়েছিলেন দীননাথ। সেটা পঞ্চাশ সালের ঘটনা। তখনও আইয়ুব খানের পয়দা হয়নি। চাঁদে আমেরিকা পৌঁছায়নি। চীন আর রাশিয়া নামক দুটি দেশে একই বৃষ্টির ফোঁটা পড়ত। সোহরাওয়ার্দ্দী বড় নেতা। দীননাথ বিয়ে করেছে তার মায়ের অনুরোধে। কৃষ্ণলীলা পালাগান করার ফলে দীননাথের ধারণা ছিল—বিয়ে করার কোনো মানেই হয় না। স্ত্রী হৈমবালাকে বাড়ি আনার পরে একদিন মধ্য রাতে বলেছিল, রাধাকৃষ্ণর প্রেম—নিকষিত হেম। তুমি আমাকে কৃষ্ণজ্ঞানে ধ্যান করিও। তবুও সে বছরই হৈমবালা তাকে বিস্মিত করে গর্ভধারণ করে। একটি পুত্র সন্তানের জননী হয়। তারও বছর দেড়েক পরে আরেকটি পুত্র তার কোলজুড়ে আসে। তাদের নাম রাখে—সুবোল সখা ও সুদামা সখা। এরপরই একদিন দীননাথ গোলারগাতীর বাবুরাম পাগলের আশ্রম থেকে সুফলদায়ী বেলগাছের চারাটি রুয়ে জলদান করল। আর সেদিন ভোররাতেই হৈমবালাকে জাগ্রত করে বলল, তাইলে হৈমবালা আমারে বিদেয় দেও। এ সংসারে থাকার দায় আমার মিটে গেছে। হৈমবালার দুপাশে দুপুত্র সুবোল সখা আর সুদামা সখা তখনও মাই মুখে দিয়ে ঘুমোচ্ছে। উঠতে গেলে ডুকরে উঠেছে। ওঠা যাবে না। যেমন করে প্রতি ভোর রাতেই বলে, সে রকম করে বলল, তুমি গেলে আমাগো কী উপোয় হইবে গোসাই ... ...
ভয়ার্ত না হলে মায়ের খনখনে গলার আওয়াজ কোনোদিন ভাঙেও না ফাঁটেও না। বামহাতের উল্টো পিঠ দিয়ে পাছার ঢাল থেকে ঘষটে লুঙ্গিটা কোমরের খাদ পর্যন্ত উঠিয়ে চেপে ধরে ডান হাত দিয়ে ক্যারমের রেড খাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কানে এলো মায়ের এই চিৎকার- কু...মিকই...ই...ইর... রন... জকও...ওকও...ওন... শি...লাকআ...আ...আ... চিৎকারে মায়ের গলা একবার উপরে উঠে ফেটে যাচ্ছে তো আরেকবার ধাক্কা খেয়ে একবারে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না কী বলে না বলে। কিন্তু এর মধ্যেও তার চিৎকার থেকে আমার আর আমার বোন শিলার নামটা যেমন ঠিক অনুমান করতে পারছি তেমনি তার খনখনে গলা ভেঙে যাওয়া থেকে বুঝতে পারছি কিছু একটা বিপদ ঘটেছে। আমি যেহেতু এখানে বস্তির ক্লাবঘরে দোস্তদের সাথে মশকরা মারছি সেহেতু বিপদটা নিশ্চিত শিলার শিলার এখন শেষ পোয়াতিবেলা। স্বামীর ঘরে দেখাশোনার কেউ নাই বলে বাচ্চা বিয়াতে সে মায়ের কাছে চলে এসেছে। আমি ক্যারমের স্ট্রাইক ফেলে বাড়ির দিকে দৌড় লাগালাম। এইটারে আমরা বাড়ি বললেও বাড়িওয়ালা এইগুলারে বলে ঘর; আর পত্রিকাওয়ালারা বলে ছাপড়া। নদীর ঢালে বাঁশের মাচান বেঁধে খুপরি খুপরি বস্তি। ... ...
আই প্রোটেকশন কপালের ওপর ঠেলে তোলা, চোখ অ্যান্ড্রয়েডের স্ক্রীনে। হাই স্টুলে বসে টেক্সট পাঠাচ্ছিল টিনা। বাঁ পা নাচাচ্ছিল । ওর সামনে রিয়াকটর, অ্যাসিড ডোসিম্যাট। রিয়াকটারে মেটাল ওর আর জল। লিচিং চলছিল। টিনা অপারেটর। আট নম্বর টেক্সটটা পাঠানোর পর কম্পিউটারে চোখ যেতে খেয়াল হল টার্গেট পিএইচ সেট করা হয় নি । লগ শীট পড়েই দেখে নি । অনেক বেশি অ্যাসিড চলে গেছে রিয়াকটরে। আনামারিয়া প্রচন্ড ঝাড়বে । এই স্টেজে এত বেশি অ্যাসিড যাওয়া মানে টেস্ট ইজ কিলড। আনামারিয়াকে তো জবাবদিহি করতে হবে ওর বসের কাছে। বসকে ক্লায়েন্টের কাছে। জি এমএর কাছে। ডোসিম্যাটের রীডিং মুছে দিয়ে রিসেট করল টিনা, চোখ বুজে মনের মধ্যে একটা সংখ্যা খুঁজল। তারপর সেটাই বসিয়ে দিল লগশীটে। ধুলো আর জলই তো আফটার অল। তারপর আবার খুটখাট শুরু করল মোবাইলে। এই সময়ে হাঁফাতে হাঁফাতে ল্যাবে ঢুকল আনামারিয়া। গলার সঙ্গে লেগে থাকা ক্রশ। সটান রিয়াকটারের সামনে এসে দাঁড়াল। বাঁদিকে সামান্য হেলে হাঁটে আনামারিয়া; কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ডোসিম্যাটের দিকে। ভুরু কোঁচকালো। ওর কোঁচকানো ভুরু শুঁয়োপোকার মত দেখায়। টিনার দিকে ফিরে বলল, এক ঘন্টা হয়ে গেছে রিয়াকশনের আর মাত্র এইটুকু অ্যাসিড গেছে? ... ...
রাতের ঝাউয়ের বন ঘেঁষে বালিয়াড়ির পাদদেশে ধিকধিক বনফায়ার, ওদের পাঁচটা মুখে আগুনের লাল লেগেছিলো- এখন আর পাঁচটা মুখ নেই, বিয়ারের তোবড়ানো ক্যান হাতে গোড়ালি ভেজানো ঢেউয়ে আমি-এ সমুদ্র এমত বেহায়া- তেমনই ওরাও পাঁচজন বন্ফায়ারের হা-হা:-- পাঁচ কেন, ওরা চার, দুজোড়া কপোত-কপোতিনী, আমি তো ব্রাত্য ঐ দলে, অথচও লোক চাই, দর্শক; নিজেদের প্রেমগুলো নিয়ে দর্শক না দেখলে ফ্যান্টাসি মেটেনা ওদের। ওরাও সমুদ্রের মত ঐ সমুদ্র, চাঁদের রিফ্লেকশন জলে ফসফস বলে ভুল হতে থাকে, হাওয়ায় পেট ফাঁপে ছেঁড়া ক্যারিব্যাগ যেন জেলিফিশ এই সমুদ্র, চাঁদের আলোর পথ করে দেয় মানুষের কাছে, আমার কাছেও লুনাটিক স্পৃহা সব সেই পথ ধরে হেঁটে গিয়ে অতলে তলিয়ে মরে যায়, মরে, তবু বেঁচে ওঠে তবু এই সমুদ্রের ধারে কাঠের আগুন থেকে হাওয়া বেয়ে ছিটকিয়ে যায় জ্বলন্ত জৈবযৌগ, ব্রেনের পাকগৃহ ঘিরে জৈব রিঅ্যাকশন হয়ে চলে, এসে পড়ে অসহ্য অতীত। এমনই সমুদ্র তার গাঢ় সব দুপুরের বেলাভূমি, স্নানের গোপন আর সেই সব কথা যেগুলো উহ্য রেখে সরে গিয়েছিলো আমার এইখান থেকে, আর কিছু ভাবিনা, আর কোনও স্বপ্ন দেখিনা, আর কোনও কান্না রাখিনি আগুনে ... ...
শহর থেকে অল্প দূরেই যে একটি চমৎকার হ্রদ রয়েছে, এ আমি অনেকদিন অবধি জানতাম না। হারুণের মুখে প্রথম যখন এর কথা শুনি, তখন থেকেই জায়গাটির প্রতি আমার এক অদম্য আকর্ষণ জন্মায়। ও সেখানে না-যাওয়া অবধি য্যানো কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। তখন বসন্তকাল। যদিও শহরে তা নামমাত্র। কাজের চাপ তেমন না থাকায় আমরা প্রায় প্রতি সন্ধ্যাতেই (রোববার বাদে) সদর স্ট্রিটের এই ছোটো পানশালায় জমায়েত হই। আমরা বলতে আমি, হারুণ, অরূপ আর মাস্টার। পানশালাটির নাম ‘সলিটেয়ার’। ও সেখানকার ওয়েটাররাও আমাদের চিনে ফেলেছিলো। ঘন্টাদুয়েক গল্পগুজব করে আমরা যে যার বাড়ি ফিরতাম। তো এখানেই একদিন হারুণ হ্রদটির কথা আমাকে বলে। সে এও জানায় যে, শহর থেকে ওই হ্রদের দূরত্ব মাত্রই মাইল কুড়ি। কিন্তু নিকটে হলেও, ঘন সবুজ গাছপালায় ঘেরা, অনুচ্চ টিলাবেষ্টিত অধিত্যকাটির সৌন্দর্য না কি প্রায় অপার্থিব। সে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। তার এই কথায় বাকি সবাই সায় দ্যায়। আমি বলি যে, তাদের সৌভাগ্যে আমি ঈর্ষান্বিত। আগে জানলে আমিও নিশ্চয় এতদিনে হ্রদটি দেখে আসতুম ... ...
প্রবলেমটা হচ্ছে মাঝেমাঝেই আমি আমার থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছি। যা করা উচিত নয় তাই করছি। অফিসে সমস্যা হচ্ছে।আর যে সমস্যাটা হচ্ছে তা হল আমি সবসময়ই কোনও না কোনও স্বপ্নের মধ্যে থাকছি। এটা হয়তো কেউ বুঝতে পারছে না,কিন্তু আমি তো বুঝতে পারছি। আর কিছুতেই আমি এই ড্রিম থেকে বেরতে পারছি না। যখন একলা বাড়িতে থাকছি, তখন বুঝতে পারছি যে আমি তার সঙ্গেই থাকছি যাকে নিয়ে আমার সারা দিন কাটছে। আর সত্যি কথা বলতে কী স্ত্রীর সঙ্গে না থাকাটা আমার কাছে কোনও ব্যাপারই নয়। আমি যেমন তাকে ভালোবাসি তেমনই আমি ভালোবাসি আরেকজনকেও। কিন্তু তাকে ছাড়াও দিব্যি রাতগুলো কেটে যাচ্ছে আমার। ... ...
ঢং করিয়া একটা বাজিল. পার্ক স্ট্রিট এর একটি নিশিনিলয় হইতে এক সুদীর্ঘ ছায়া বাহির হইল. সেই ছায়া র এক হস্তে একটি সবুজ শিশি ও অন্য হস্তে প্রলয়্নাথ বিশী র সদ্য কর্তিত মুন্ড. কিন্তু দয়াময় ভগবান এর অপূর্ব লীলাখেলায় সেই কর্তিত মুন্ড হইতে উষ্ণ শোনিতের পরিবর্তে "টপ টপ" শব্দে ঝরিতেছে প্রগাড় পীতবর্ণ হিসি. গোয়েন্দা কৃষ্ণকমল একটি সুউচ্চ গৃহের বাতায়ন হইতে সেই চলন্ত ছায়ার উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখিতেছিলেন. তাঁহার সুদৃশ্য মুখমন্ডল টি ঋষি কাপুর এর মুখোশে ঢাকা. চলন্ত ছায়া রাস্তা পার হইয়া একটি পুরাতন কালো রং এর মোটরগাড়ি র দিকে ধাবিত হইল. উত্তেজিত কৃষ্ণকমল পকেট হইতে একটি মিশি র কৌটা বাহির করিলেন. দেখিতে উহা নিরীহ একটি ইস্পাত এর কৌটা হইলে ও উহাতে কৃষ্ণকমল এর স্নাইপার খানি ভাঁজ করিয়া রাখা আছে. কৌটা খানি উপুর করিয়া কৃষ্ণকমল হাত এর উপর ধরিতে স্নাইপার খানি পাতলা রুমাল এর ন্যায় বাহির হইয়া আসিল. তিনি বাম হস্তে উহার অগ্রভাগ ধরিয়া একখানি প্রবল ঝটকা দিলেন...ততক্ষনাত পুরা স্নাইপার খানি কৃষ্ণকমল এর হাতে র উপর খুলিয়া আসিল ... ...
৮ মার্চ, ১৯৬৭: ক্রিস মার্কে SLON (Service de lancement des oeuvres nouvelles)-এর প্রথম প্রজেক্ট Loin du Vietnam (1967)-এর সম্পাদনা করছেন। Godard, Ivens, William Klein, Claude Lelouch, Alain Resnais এবং Agnès Varda এঁদের সকলের নিজস্ব নির্মাণ দিয়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদ রয়েছে এতে। মার্কেরা একে বলছেন cinéma ouvrier। কোনোরকম ব্যক্তিগত নেতৃত্ব ও অথরশিপকে বাদ দিয়েই হবে নতুন সিনেমার নির্মাণ। এমন সময়ে Rhodiaceta থেকে চিঠি হাজির René Berchoud-এর। রেনে-রা তিন হাজার শ্রমিক ওখানে Rhône-Poulenc-এর মালিকানায় থাকা কারখানাটিতে ধর্মঘট করেছেন এবং দখল করে নিয়েছেন সেটা। একমাসের দীর্ঘ্য ধর্মঘট হয়েছে ২৫ শে ফেব্রুয়ারী থেকে। ১৯৩৬ সালের পরে সেই প্রথম কোনো কারখানা মজুররা দখল করে রাখলো। মালিক কোম্পানিটি সে আমলের ফ্রান্সের অন্যতম বড় কোম্পানি। ... ...
“শুনেছি নাকি চাঁদের বুড়ির পোস্টটা নাকি খালি হয়েছে। তুমি চরকা কাটতে জানো ?” আপাতভাবে অলীক এই সংলাপগুলি ১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ওম দর ব দর’-এর অন্তর্ভুক্ত। এই চলচ্চিত্রটিকে ভারতের ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’ (Avante - Garde) সিনেমার একটি পথপ্রদর্শক হিসেবে গণ্য করা হয়। ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’ শব্দটি চলচ্চিত্র জগতে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষামূলক গোত্রের সিনেমার পরিচায়ক । মূল আলোচনায় ঢোকার আগে ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’ সিনেমা সম্বন্ধে দু’চার কথা বলা দরকার। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে ম্যান রে (Man Ray), দুচ্যাম্প (Duchamp), রেনে ক্ল্যার (Rene Clair) প্রভৃতি পরিচালকদের হাত ধরে ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’-এর সূচনা। এরপর ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিভাধর পরিচালক লুই বুনুয়েল (Lui Bunuel) এবং চিত্রশিল্পী সাল্ভাদর দালি (Salvador Dali) মিলে সৃষ্টি করলেন ‘অ্যাঁ শিয়েঁ অ্যাঁদালু’(Un Chien Andalou) নামে এক আশ্চর্য ছবি, যা ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’-এর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই পরীক্ষা- নিরীক্ষার আঁচ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ল। নানান দেশের পরিচালকেরা নিজগুণে ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’-কে আরও সমৃদ্ধ করে তুললেন। ভারতবর্ষেও এর প্রভাব অনুভূত হতে লাগলো ১৯৬০-এর দশকের গোড়া থেকেই। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল যে, ১৯৪৮ সালে উদয়শঙ্করের ‘কল্পনা’ ছবিটিতে প্রচুর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ রয়েছে, তবে এটিকে ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’ এর শ্রেণিভুক্ত করা যায় কিনা, সেই নিয়ে বির্তক আছে। সাধারণভাবে ভারতের প্রথম দৃষ্টান্তমূলক ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’ সিনেমা বলতে ‘ওম দর ব দর’-এর কথাই মাথায় আসে। বস্তুত,এটিই ভারতবর্ষের প্রথম ‘অ্যাভঁ গ্যর্দ’ ফিল্ম, যেটি দেশে ও বিদেশে সমানভাবে বন্দিত হয়েছে। ১৯৮৯ সালে কমল স্বরুপ এই ফিল্ম-এর জন্য ফিল্মফেয়ার-এ জু্রিস চয়েস পুরস্কার পান। আজ, এই সিনেমা মুক্তি পাবার প্রায় ২৫ বছর পরেও, সিনেমাপ্রেমী মানুষদের মধ্যে এটি নিয়ে সমান উদ্যমে আলোচনা হয়। ... ...
আসলে কীভাবে শুরু করবো সেটা নিয়ে গড়িমসি হয়ে গেল বহুদিন। কিভাবে লিখলে লেখাটা চলবে...লোকে পড়বে...বলবে ভালো...তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য মাল মশলা মজুত করা নেই হাতে। তথ্য সন্ধানমূলক লেখার যে ব্যাপ্তি আশা করা যেত সেটাও পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। পড়া হয় না অনেক দিন অনেক কিছু...ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে সব... ছড়িয়ে ছিটিয়ে সমকাল...আর কোথাও যেন সেঁধিয়ে থাকার মন্ত্রনা কানে এসে ফিস- ফিস, গুণ- গুণ করে। এলোমেলো পাতা উড়ে আসে...মোবাইলের রিং টোন...এস এম এসের বিপ বিপ...সূড়ঙ্গের অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে গন্ধ...মিলেমিশে একাকার কাব্যিক উত্থানের গলা টিপে ধরে। জলের তোড় এগিয়ে আসে...অন্ধকারের মধ্যে ঠাহর করা যায় না...কিন্তু জলের তোড় এগিয়ে আসে...। ... ...
ঠিক এই জায়গাটাকেই দর্শককূল বা পাঠককূল মনে করে থাকেন অ্যারোগেন্স বলে। অ্যারোগেন্সটা কিন্তু এমনি এমনি আসেনা। সেসব কথায় পরে আসছি। আপাতত বলা যাক যে, এই আমাদের গোষ্ঠীটার ভেতর আবার দুটো স্পষ্ট ভাগ রয়েছে। আমরা মোটামুটিভাবে বন্ধু হলেও আমাদের চিন্তাভাবনার পদ্ধতি আমাদের দুটো আলাদা কাজ করতে ঠেলে দেয়। আমরা যারা এই গোষ্ঠীর এবং মেইনস্ট্রীম সিনেমা নিয়ে খুশি নই, ক্যামেরার পিছনে দাঁড়িয়ে কিছু করতে চাই; একদল মনে করি লোকে না দেখলে কাজ করে কি হবে, আরেকদলের মতানুযায়ী যে করে হোক কাজটা শুরু করা দরকার, তারপর লোকে নিশ্চয়ই দেখবে, না দেখে যাবে কোথায়! ঠিক এই পার্থক্যটাই আমাদের একসাথে কাজ করতে দেয়না, যদিও উদ্দেশ্য আসলে একই। আমি দ্বিতীয় দলের লোক হলেও প্রথম দল সম্পর্কে আগে বলে নেওয়া যাক। এরা বিশ্বাস করে আভাঁ-গার্দ এবং মেইনস্ট্রীম ফিল্ম এর মধ্যে আদানপ্রদানটা খুবই জরুরী। সেটা আমরাও যে করিনা তা নয়, তবে এদের ওই লোকে না দেখলে কিছুই হলো না জাতীয় মনোভাব থেকে এরা একটা কি দুটো শর্ট ফিল্ম বানানোর পরপরই ইন্ডাস্ট্রিতে ঢোকার পথ খুঁজতে শুরু করে। কেউ স্ক্রিপ্ট রাইটার তো কেউ এডি (সহকারী পরিচালক) হয়ে ঢুকেও পড়ে। আসল উদ্দেশ্য দশ কি পনেরো বছর ধরে আটঘাটগুলো জেনে নেওয়া, তারপর নিজে ছবি বানানো শুরু করা। কেউ পারে কেউ পারেনা। এরপর কোনোদিন দেখা হলে আলোচনার বিষয় হয়ে যায় তমুকের ক্যামেরাম্যান কেন ইচ্ছা থাকার পরও কোনদিন ইউনিট ছেড়ে বেড়িয়ে গিয়ে নিজের ছবিটা করে উঠতে পারলোনা, অথবা অমুক পরিচালক আদতে কতটা সৎ কিংবা এই যে বড় বড় প্রোডিউসার-ডিস্ট্রিবিউটর-হলমালিকদের আঁতাত, ইত্যাদি। দেখা না হলেও চলে, তবু এইসব সাক্ষাৎ এবং পরস্পর পরস্পরকে আমরা মনে রেখে দিই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রিতে চলে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় দুটো কারণ হল ১) একটা কমন ক্রাইসিস, যে, ছবিও করতে হবে আবার খেয়ে-পরে বাঁচতেও হবে আর ২) আত্মবিশ্বাসের অভাব। নিজেকে নিজে পুরোপুরি বিশ্বাস না করতে পারলে অন্য কেউও তোমায় বিশ্বাস করতে পারে না এবং এতে তাদেরকে দোষ দেওয়ারও কিছু থাকে না। এই বিশ্বাসের অভাবই কি সেই ভয়ের জন্ম দেয়না যে দর্শক আমায় রিজেক্ট করতে পারে? আর সেই ভয়ই কি একটা সময়ের পর নিজস্ব সাফল্যের ফর্মুলা অনুযায়ী ছবি করতে বাধ্য করে না? এইভাবেই তো সত্যা-র সাফল্যের পর পাঁচ তৈরী করার কথা ভাবে একটা লোক অথবা ওম্যানিয়া আর চি-চা লেদারের সাফল্যের পর বোঝাই যায় যে ড্রিমাম ওয়েকাপ্পাম দর্শক ভালই ‘খাবে’। মাথার ভেতর কোথাও বোধহয় ওই বিশ্বাসের অভাব বা ওই ভয়টা ‘মশলা’টা মেশাতে শিখিয়ে দেয়। হলই বা নিজস্ব মশলা, মশলাই তো। তাছাড়া কম বয়সে কেই বা বিপ্লব করেনি বলতো! শয়তানের ভেতর মোরাভিয়া ঢুকে যায়, জনি গদ্দারের মধ্যে জেম্স্ হ্যাডলী চেজ। যাই হোক! ... ...
... ...
আমাদের কুচোরা পুজোর শতেক ব্যস্ততার মাঝেও বানিয়ে দিয়েছে গুরুর পুজো প্যান্ডেল। আসুন, বসুন, পেসাদ খান। দুগগি দেখুন। ... ...
এবচর সাবোন মাসের শেষে, তেমন বিষ্টির দ্যাকা নেই, কোলকাতা ডেঙ্গি জ্বরে কাঁপচে, রোদে চাঁদি ফাটিয়ে দিচ্চে, এমন সময় কাগজের স্টলগুলো পুজো সংখ্যার বোইতে ছেয়ে গ্যালো। বুজলুম মা আসচেন, মানে তাকে ঘেঁটি ধোরে আনার উজ্জুগ চলচে। আগে আমাদের যকোন বয়েস কম ছিলো, তকোন পিত্তিপোক্ষের তপ্পণের পর দেবীপোক্ষের শুরুতে এরা সব একে একে দেকা দিতো, আজকাল ভুবনবাজারের হুজুগে সবার আগে পুঁজির বাজার দখলের পুজো, এমনকি বোধয় সিদ্ধিদাতা গণেশেরও আগে। তাই পুজোসংখ্যাওলাদের একোন হোয়েচে - কী ছাপলুম, তার চেয়ে বড়ো কতা, কে কার আগে সেজেগুজে গলির মোড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে পারলুম কি পারলুম না। চাড্ডি খোদ্দের ধোরতে পারলে ঘরের কড়ি ঘরে ঢোকে। ... ...
আকাশ থেকে মনসুনের মেঘ সরলো তো বুভুক্ষু বাঙালী ঝাঁপিয়ে পড়লো পুজো নিয়ে। শারদীয়া পত্রিকা এখন সরতে সরতে বর্ষাকালেই বার হয়। একই নামের লেখক লেখিকা,একই অপকাশিত পত্রাবলী ও আঁকা ছবি। একটি ফরম্যাট মাত্র। তাও ও কিনতে হয়। কিনে খুব রাগতে হয়। "কিস্যু হসসে না" বলতে হয় কিন্তু বর্ষাকালের শারদীয়াগুলি কিনতে হয়। কিনতেই হয়।এটি পুজার নামতা। অত্যাচারী ও অত্যাচারিত, দু পক্ষেই মিলে জুলে এ খেলাটি খেলে চলেন প্রতি বছর। ... ...
তা হলে, শ্রীরাম কি শরতে যুদ্ধ করেন নি? এই নিয়েও নানা প্রশ্ন আছে৷ কারণ, বিন্ধ্যের দক্ষিণে এই পুজো করলেও তার আগে অযোধ্যায় দুর্গাপুজোর উল্লেখ কোনও রামায়ণে নেই৷ বাল্মিকী রামায়নে অকালবোধনই নেই৷ এমন কি, বনবাসের আগে বা পরেও কখনও তিনি অযোদ্ধায় দুর্গা পুজো করেছেন বলে কোনো উল্লেখ নেই। ... ...
প্যাঁচা বলতে বুঝি লক্ষীর বাহন, ম্যালেরিয়ার যেমন মশা। তাই পরীক্ষার হলে মারি মাছি, শপিং মলে ফালতু ঘুরি অ্যাজ ইফ ধোবি কা কুত্তা। পাখি সলিড দেখলে এস এম এসে ফ্ল্যার্ট করি, হাতের মধ্যে পেলে আরশোলা দেখিয়ে ফ্ল্যাট করে ফ্ল্যাটে আনি। প্যান্ডেলে স্পার্ক পেলে হই তীর্থের কাক। ক্যালানি হাওয়া বুঝলেই ডাক। কাজেই ইহ দুনিয়ার কোনটা যে কার বাহন বলাটা চাপের। ধর্ম টু জিরাফ সব মালই ট্রান্সফারেবেল। আমাদের ভোকাবুল্যরি চিড়িয়াখানা অবধি। তবে সবই চান্স পেলে। বাসর রাতের বিড়ালই হোক আর উটকো মালের ঘড়ে চাপাই হোক। আদতে, কথার পিঠে কথা সাজাই, আমরা এখন একলা থাকি। ... ...
"সব সত্যি। মহিষাসুর সত্যি, হনুমান সত্যি, ক্যাপ্টেন স্পার্ক সত্যি, টারজান সত্যি, অরণ্যদেব সত্যি, ..." এমনকি ধরো মা দুগগার শাড়ীতে অসংখ্য চুমকি, বিসর্জনের পর সেগুলৈ যে কোজাগরীর আকাশে তারা হয়ে ফোটে - তাও তো সত্যিই। ভারী ইচ্ছে হয় একবার হাতে ছুঁয়ে দেখি কতটা সত্যি। ভাসানের আগে ছুঁলে দোষ নেই - সেটা আমি জানি। অনেকেই সে সময় টুকটাক পকেটে পোরে মহিষাসুরের বাজুবন্ধ কিংবা গণেশের উত্তরীয় থেকে খসে পড়া একফালি জরির পাড়। ... ...
শূয়োরের মাংসের নাম শুনলে আমার দেশের বাড়ির কথা মনে পড়ে যায়। ছোটবেলাটা প্রায় শুধু শূয়োর খেয়ে বড় হয়েছি। মাসির হাতের রান্না, মামীর হাতের রান্না এবং দিদিমার হাতের রান্না, তবে বেশিরভাগটাই দিদিমার হাতের রান্না খেয়েছি ছোটবেলায় এবং ওনার কাছেই বড় হয়েছি। ছোটবেলায় অবশ্য আমার মা কে জানতাম না। কারণ আমার মা আমায় ছোটবেলাতেই দেশে রেখে কলকাতায় চলে এসেছিলেন, তারপর দিদিমা এবং মাসিদের কাছে মানুষ হয়েছি। ... ...