‘বউদি অত টাকা পাবে কোথায়—।’ ‘বউদি আর পাবে কোথায়!’ মানিক হাসে, ‘বউদির অনেক কাজের বাড়ির বাবু ধরা আছে। তাদের কাছ থেকে পাঁচ দশ করে কালেক্ট করবে। মাসে মাসে আমি দিলে তাদের শোধ করে দেবে। আর সুদটা বউদির পকেটে ঢুকবে। প্ল্যান আমার ছকা ছিল। ওই হারামির বাচ্চা বাবু সাহা সব লাগিয়ে দিল মল্লিক ঠিকেদারকে। নইলে আমার সব প্ল্যান পাক্কা।’ মানিক আবারও হাসল। ‘আমাকে চুরির বদনাম দিয়ে বাড়ি চলে এল—থানায় গেল না। চুরির মাল খুঁজল না। শুধু হল্লা, নে সাহস থাকে আমাকে পুলিসে দে। দু দুটো টুলু পাম্প, আচ্ছা আমিও ছাড়ব না। ওরা ভয় পেয়ে গেছে রূপা বুঝেছে—আমি যদি ঠিকেদারি লাইনে নামি ওরা আমার সঙ্গে পারবে না।’ রূপার মনে হল, মানিক ঠিক কথাই বলেছে, সত্যি সত্যি চুরি হলে ওরা থানা পুলিশ করত না—ছেড়ে দিত? কেউ ছেড়ে দেয়? ... ...
কৌশিক বাজারীর চারটি কবিতা ... ...
ছাদের এককোণে দাঁড়িয়ে ছিল সে। চোখের সামনে আকাশ ধীরে ধীরে বেগুনি হয়ে ওঠে। আলতা রঙের পোঁচ পড়ে তার উপর। শুধু জনারণ্যে কিছু ঘুড়ি, পাখিদের প্রতিনিধি। গঠন নয়, ঘুড়ি চেনা যায় তার উড্ডয়ন-কৌশলে। উদ্বাস্তু কলোনি থেকে চাক চাক ধোঁয়া, যেন নোয়াঠাকুমার আর্তি, খুঁজে নেয় আলপথ—ফরিদপুর। তাদের গতিপথ বিভ্রান্ত সরল, অর্থাৎ বক্র। গুলের আঁচ ওঠা উনুন—খানিক উপরে বুড়ির দু'টো চোখ আর ফুলে ওঠা টিকোলো নাক এক প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে, যা আকারে ক্রমশ বড় হতে থাকে। মাথার ভিতর শৃঙ্খলিত ধ্বনি, রঙ আর হঠাতই কালো হয়ে ওঠে আকাশ। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যা কিছু, সব সত্যি। সবচেয়ে বড় সত্য এই রাত, তার বেদনা, যা কেবল অনুবাদে সাবলীল... কুকুরেরা জেনে গেছে সব। সন্ধ্যার আজান আর মিলিটারি রুট মার্চ পরপর শুনে নমনীয় করে তোলে নিজেদের। স্থির হয়। সঙ্গম স্থগিত রাখে আজ। ... ...
মানসের গলায় কী কিছু উত্তেজনা ! তার হাতের সংকেতে মাথা ডাইনে বাঁয়ে ঘোরায় রিণি। সত্যি বাঁ দিকে বিশাল বেনাবনের কতো কিলোমিটার ভেতরে কে জানে দেখা যাচ্ছে এক ভৌতিক উচ্চতা। যেন এই রোদের আঁচে দূরবর্তী নদীর দিক থেকে ছুটে আসা উষ্ণ বাতাসে লি লি করে কাঁপছে সেই মন্দিরের চূড়ো। রিণি আর তার মাঝখানের প্রান্তর জুড়ে শক্ত মোটা বেনাঘাস। সে শুনতেই ঘাস,দেখতে সরু বাঁশের মতোই গুল্ম,শক্ত আর ছুঁচলো। ভেদ করে যাওয়া এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। ইয়াকুব বলল,বাগালরা গরু চরাবার অসুবিধের জন্য প্রায়ই নাকি শুকনো বেনাঘাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তা হলে অবশ্য অতটা দুর্ভেদ্য হবে না। ... ...
টেবিলে আমার স্ত্রী সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা স্বরে জিজ্ঞেস করল, “শ্রাবন্তী কে?” আমি অবাক হয়ে গেলাম এই প্রশ্নে। আমিও জিজ্ঞেস করলাম, “শ্রাবন্তী কে?” এবং এরপরেই আমার মনে পড়ল শ্রাবন্তী কে। এ নিয়ে আমাদের কথা কাটাকাটি হতে লাগল। আমি আমার বউকে বোঝাতে পারছিলাম না যে শ্রাবন্তী আমার লেখার একটা চরিত্র। লেখার ড্রাফট দেখিয়েও আমি তাকে বিশ্বাস করাতে পারলাম না। সে বলল, অনেকবার সে বেইজমেন্টে এসে দেখেছে আমি এই মেয়ের সাথে কথা বলছি। তার কথা মিথ্যে নয়। আমি এরকম অনেক কথা বলেছি ওই মেয়ের সাথে। এবং সৎ ভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, ওই মেয়ের প্রতি আমার বড়ো রকম দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। কারণ সে ঠিক আমার মনের মতো। এটা কি আমার লেখার চরিত্র সেই জন্যে? কেবল লেখার চরিত্র হলে সে কীভাবে উঠে আসবে? এইভাবে হাসবে, আর আমার পাশে বসে আমারই লেখা নিয়ে এমন সব কথা বলবে যা আমি নিজেও কখনও ভাবিনি? এসব নিয়ে আমি নিজেও দ্বিধায় ছিলাম। এর মধ্যে শুরু হল বউয়ের সাথে ঝামেলা। ... ...
আমাদের ছেলেবলায় যখন দূর থেকে দেখতাম দুটি ছেলে আসছে তখন কথা না বলেই তাদের শিক্ষা দীক্ষা টের পাওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায় ছিলো ছোটো ঢিল ছুঁড়ে মারলেই যে উঃ বলতো সে পাতি বাংলা মিডিয়াম, আর আউচ বললে জানতাম এ তো কোনো সেন্ট মার্কা স্কুলের ছেলে। ৭১' বাংলাদেশ থেকে প্রচুর ছেলে পিলে এসেছিলো এপাড় বাংলায়। একটা বড় গ্রুপের সাথে আলাপ হয়েছিলো। নাম বলতেই সহাস্যে ঝুঁকে পড়ে হ্যান্ড শেক করে জিগালেন 'আপনি কেমন আছেন'? আমি তার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হই, বলি পেট কামড়াচ্ছিলো, ভুটভাট, তো এখন ভালো আছি। তার মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। ওম্মা, দ্বিতীয় ও তৃতীয়্জনও একই কায়দায় আলাপ করার পর টের পেয়েছিলাম উটি আসলে হাঊ ড্যু উ ড্যুর বাংলা সংস্করণ। এখন বোধহয় তাও নেই। উদাসীন হাই আওয়াজ ওঠে দু পক্ষেই। নমস্কার আর কে কবে করে? ... ...
পুজোর গামছার প্রধান দুই সমস্যা ছিল তাদের দৈর্ঘ্য এবং ঘনত্বের। সবচেয়ে নিকৃষ্টমানের গামছা সাপ্লাই করা হত পুজোর সময় ব্রাহ্মণদের প্রণামীতে। সেই গামছা প্রায় মসলিনকেও হার মানিয়ে দেয়, অনেকে ভয়ে ভাঁজই খুলত না গামছার, এই যদি ফেঁসে যায়! তবে পুজোতে গামছা এক সিম্বলিক জিনিস ছিল প্রায় – ডাঁই করে রাখা গামছার উপরের কয়েকটায় কিছু সিঁদুর এবং ফুল-গঙ্গা জল পড়ত। তাদের তলার গুলো পুজো শেষ হয়ে গেলে ব্রাক্ষণ ঠাকুর নিজে গিয়ে বিক্রী করে দিয়ে আসত আমরা যেই দোকান থেকে কিনেছি। পরের বছর আবার সেই গামছা আমরা কিনতাম। ... ...
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের গোড়াপত্তনের প্রারম্ভ্রে বাঙালি জাতি সাময়িকভাবে এক বিভাজনের রাজনীতির শিকার হয় যা অবিভক্ত বাংলার ভৌগোলিক মানচিত্রকে আপামার জনসাধারণের মানসচিত্তে পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গ রূপে দ্বিখণ্ডিত করে দিয়েছিল। ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ প্রশাসনিকভাবে ১৯১১ তে রদ হলেও তা বাঙালি জাতিকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে সামাজিক সীমারেখা দিয়ে ধর্মীয় (হিন্দু বাঙালি এবং মুসলমান বাঙালি) ও প্রাদেশিক (পূর্ববঙ্গনিবাসী 'বাঙাল' এবং পশ্চিমবঙ্গবাসী 'ঘটি') পরিচিতিতে ভাগ করে দেয়। অতএব বাঙালি জাতি ১৯১০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে একদিকে ছিল বঙ্গভঙ্গের ক্ষতের সামাজিক অস্থিরতায় দোদুল্যমান এবং অন্যদিকে হয়ে উঠেছিল ফুটবলকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদী আবেগে বিচ্ছুরিত। এই পটভূমিকায় পয়লা অগাস্ট ১৯২০তে ইস্টবেঙ্গলের আত্মপ্রকাশ সমগ্র বাঙালির কাছে এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ। সেই ইতিহাসে শুধু ফুটবল ছিল না, ছিল ফুটবলের প্রতিযোগিতাকে হাতিয়ার করে নব্য শুরু হওয়া সংকীর্ণমনা আন্তর্দেশীয় প্রাদেশিকতা ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার ঘৃণ্য রাজনৈতিক অভিসন্ধিকে পরাস্ত করার শপথ। তাই বলাবাহুল্য যে ইস্টবেঙ্গলে যাত্রা শুরুই হয়েছিল লড়াইয়ের আহ্বানের মধ্যে দিয়ে। ... ...
এ কোন সরকারী সংকলন নয়, নিতান্তই উড়ু উড়ু বসন্তপবনে জীবনের কিছু ধন জমিয়ে রাখা। অনেক লেখাই চোখ এড়িয়ে গেল, নতুন সাইটে সার্চের গোলযোগের ওপর একটুখানি দায় চাপানো যায়। যা হাতের কাছে পাওয়া গেল। পাঠকের সন্ধানে কোন চোখ এড়িয়ে যাওয়া লেখা থাকলে এখানে দিয়ে দিন, বা নিজের মত আরেকটা পিডিএফ বানিয়ে ফেলুন। ... ...
ঈদ উৎসবের বিবিধ উপকরণের মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হলো ঈদ সংখ্যার সাহিত্য সম্ভার। ঈদ আর ঈদ উপলক্ষ্যে তৈরি সেমাই, পায়েশ, কোর্মা পোলাও আর অন্যান্য আনন্দ সকল ফুরিয়ে গেলেও ওমর খৈয়ামের উপমার আল ধরে অনন্ত যৌবনের তীব্র সম্ভাবনা নিয়ে সাহিত্য প্রিয় পাঠকের জন্য ঈদের আনন্দ যূথবদ্ধ করে নিয়ে আসে ঈদ সংখ্যা সাহিত্যসম্ভার। সারা বছর অপেক্ষায় থাকা লেখক পাঠকের কাছে ঈদের সাহিত্য সংখ্যা ভীষণ আরাধ্যের বস্তুবিশেষ। এক সময় ঘরে ঘরে এই উৎসব কেন্দ্রিক সাহিত্যের প্রথম পাঠক হবার লড়াই চলতো রীতিমত চর দখলের কায়দায়। তখনকার ঈদ সংখ্যার কারিগরিমান যেমনই থাকুক না কেন গুণগত মান আজকের চেয়ে অনেকগুণ বেশিই ছিল বলে মনে করেন প্রাচীন- বোদ্ধা পাঠক শ্রেণী। আজকের বহু খ্যাতনামা সাহিত্যিক তাঁদের সোনার কলমে সৃষ্টি করেছিলেন কত সব স্বর্ণালী সাহিত্য। তাঁদের মধ্যে শওকত আলী, শওকত ওসমান, সৈয়দ শামসুল হক, রাবেয়া খাতুন, রিজিয়া রহমান, হুমায়ূন আহমেদ, সেলিনা হোসেন, প্রমুখেরা উল্লেখযোগ্য। ঈদকে ঘিরে শিল্প সাহিত্য বর্তমানেও সংস্কৃতির একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত। ... ...
ক্লিক করে পড়তে থাকুন নারীদিবসের বিশেষ লেখাগুলি। ... ...
রামু দীপালি রেখা রহিম তৌফিক বুদ্ধুরাম সবাই জানে অন্ধকার থাকতে খেয়ে নিয়ে সারাদিন উপোস থাকতে হয়। সারাদিন উপোসটা অবশ্য এদের অনেকের জন্য আলাদা কিছু না। সন্ধ্যার সময় পেট ভরে খেতে হয় তারপর একদিন আসে চাঁদের দিন, সেদিন ঈদ। নামাজ পড়তে হয়। আকাশে একফালি চাঁদের ওপর সুন্দর তারাটি জাগে সেদিন ঈদ। কোলাকুলি করতে হয়।বন্ধুদের কিছু দিতে হয়। মনিপুরী বস্তির গোরাচাঁদ আর ললিতা জানে চাঁদের রাতেই রাসপূর্নিমা নাচের উৎসব কিন্তু সেই চাঁদ বড় আর গোল । সে উপোস হলো কি হলো না, কিন্তু সন্ধ্যায় ইফতার হোলো। একদিন ঘরঘর থেকে লুকিয়ে চুরিয়ে আনা মুড়ি, কজন এনেছিলো জমানো পয়সায় কেনা তেলেভাজা। একদিন খাওয়া দাওয়া হোলো কলা আর জাম। আর একদিন মিষ্টি আলু পুড়িয়ে খুব ভালো ইফতার হোলো। আজ চাঁদের উৎসব। ... ...
গভীরে ক্ষতটা আমরা দেখি, যারা দুই সম্প্রদায়ের মানুষদের অন্দরমহলের বাইরে থেকে গেছি। পূজা ও ঈদের মাঝে আমরা কোথাও খুঁজে পাইনি নিজেদের।যে একফালি চাঁদ এত আনন্দের তাকে ছুঁতে পারিনি আবার বিসর্জনের সময় দুর্গামাকেও সাথ দেওয়া হয়নি একবার।উৎসবে অবগাহন অধরা থেকে গেছে।মানুষ হওয়ার বোধহয় এটাই ট্রাজেডি।তাকে হিন্দু নয় মুসলিম হতেই হয়।মুসলিম জন্মায় না।মুসলিম হয় বিশ্বাসে।সে বিশ্বাসের আবার ৫ স্তম্ভ।তা চর্চার বাইরে আমি।তাই চাঁদ রাত আমার কাছে এক গল্পমাত্র ।আর আমি যদি বলি সিন্ধুর তীরের হিন্দু আমি, কে দেবে আমায় দুর্গা ঠাকুর পছন্দ করে মণ্ডপে আনতে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সেই সরস্বতীদেবীকে তো হোষ্টেল সুপার আনতে দিতে বাদ সেধেছিলেন।জানিয়ে দিয়েছিলেন এক অহিন্দুর কখনো ঠাকুর চয়েস করার কাজ করতে পারে না!আমার মত অনেকের উৎসবের চেনা পথ তাই নির্জন,ব্যতিক্রমী।তবু আনন্দ জাগে………… ... ...
কালের নিয়মে একদিন বিয়ে করলাম। নতুন বৌকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি। রাস্তায় দেখা লালি পিসির সঙ্গে। হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন বাড়িতে। দেখলাম কাল্টুদের বেড়ার ঘর পাকা হয়েছে, ছাদ হয়েছে। আমাদের দুজনকে বসিয়ে প্লেটে করে দুটি সন্দেশ আর জল দিলেন। তাকের ওপরের কৌটো থেকে একটা দোমড়ানো ময়লা কুড়ি টাকার নোট বার করে দিলেন আমায় বৌয়ের হাতে। বললেন, "বৌমা, কিছু কিনে খেও"। বৌকে নিয়ে গেলাম একদিন ইমাম সাহেবের ডেরায়। আমার স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন। হাতে তুলে দিলেন একটি দশ টাকার নোট। চলে আসবার সময়ে বৃদ্ধ মানুষটার চোখের কোনাটা কি চিকচিক করছিল। ... ...
সময় হলে মৌলানাসায়েব নামাজ শুরু করবেন।নামাজে আমরা সবার জন্যে মঙ্গলকামনা করবো। আমাদের চলে যাওয়া সবার ভালো চাইবো। যে বৃদ্ধ মানুষটি ভয় পাচ্ছেন যে আগামী ঈদের নামাজে তিনি হয়ত থাকতে পারবেন না তিনি সবার কাছে কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা চাইবেন। আমরা তার দীর্ঘ জীবন চাইবো।মৌলানা প্রতিটি মানুষের মঙ্গল চাইবেন খোদাতলার কাছে।আপনি দেখবেন এইসময় আমাদের প্রবীণ মৌলানা মানুষটি কেঁদে ফেলেন।আমার মতন উদাসীন লোকেরও বুকের বাম দিকে কোথাও হাল্কা ব্যথা শুরু হয়। নামাজ শেষ। আসুন, এবার আমরা একে অপরের সাথে কোলাকুলি করি। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে। সমস্ত বৈরিতা দূর হোক। আমার-আপনার সবার কুশল হোক। এবার চলুন বাড়ির দিকে হাঁটি।আব্বার জন্য দাঁড়াতে হবেনা। উনি সবার শেষে ঈদগাহ থেকে বের হবেন। প্রত্যেকটি মানুষের সাথে আলিঙ্গন ক'রে। ... ...
কটা একটা করে বছর আব্বুলিশ বলতে যখন ব্যস্ত, আড়ম্বরের কাছে সরলতা কোটোয় বন্দী বোকা-জীবন তখন রকমফেরের পরখ পেতেই ঈদ সে যাপনমুখী। এখানে হলে সলমন থাকে, গুজরাটে - কেরালায় কাজ করা আজিজুল- মোক্তার এরা থাকে সপ্তাহ খানেকের ছুটির আনন্দে। এখানে মাঠে সার্কাস বসে, বিকেলে চপ-রোল-চাউমিন-জিলিপি-বাদামের মেলা থাকে। ঈদগাহ সাজানোর রঙিন কাগজী বেলাভূমিতে মিতায়ু সুর্মা উদ্বেল থাকে আনন্দে - তিতিক্ষায়। এখানে লালবাগে প্রেম থাকে ফুরফুরে, ইতিহাস মেখে উথালপাতাল অধুনা থাকে বেমিশাল....। আদতে তো একটাই দিন। সমস্ত কুশল সংবাদ, ভালবাসা, খুশি, মুহূর্ত সময় আগলে অহেতুক প্রশ্রয় দেওয়ার দিন...এমন গচ্ছিত মায়াদিন - ... ...
কাকদ্বীপ থেকে হাওড়ার গ্রামের বাড়িতে ঈদ কাটাতে এসে ঈদের দিন আব্বার কাছ থেকে আমি আর মেজো দশটাকা করে পেতাম। নামাজ শেষে ঈমাম সাহেবের সাথে হাত মেলানোর সময় তা দিয়ে দিতে হতো। কিছু টাকাপয়সা মানে দু চারটাকা জমিয়ে রাখতাম আলমগির-বাসুনদের জন্য। আলমগির-বাসুন সাড়ে আটটার জামাতে নামাজ পড়ে নিতো ভাঙা মসজিদতলায়। আমাদের মসজিদে জামাত শুরু হতো নটায়। নামাজ শেষ করে বড়দের সালাম করে, বন্ধুদের সাথে কোলাকুলির পর দেখতাম আলমগির-বাসুন ঘুগনির পশরা নিয়ে বসে থাকতো মসজিদের গেটের সামনে। ছোট কলাপাতায় একটাকার ঘুগনি। তালপাতার পাতা কেটে বানানো চামচে তুলে খেতে হতো। ক্ষীর, লাচ্ছা-সিমুইয়ের জয়জয়কারের মাঝে হাতে হাতে ঘুরতো আলমগির আর বাসুনের ঘুগনি। যেন আলুকুচির মধ্যে গলে যাওয়া মটরের চিত্রনাট্যে সেলিম-জাভেদের জুটি। অজ পাড়াগাঁয়ে ঘুগনিটুকুই যেন ঈদের উপরি পাওনা। ঘিরে ধরা বাচ্চাকাচ্চার ভিড়, হইচই। আধঘণ্টায় ফুরিয়ে যেতো সব। ... ...
শিল্পী ছিল সুজয়ের বোন। সুজয় তখন যুবা করত। যুব কংগ্রেস। পাড়ার বিরাট মস্তান আর শিল্পীর পিছনে পরে গ্যালো আমাদের রমেন। রমেনরা তখন সর্দারপাড়ার দিকে বস্তিতে থাকে। উদ্বাস্তু বাড়ির দুর্দশা যেরকম হয়– বাবা মারা গ্যাছেন, ভাইগুলো ইস্কুলেও বোধহয় যায় না, তিনটে বোন আর রমেন নাকি প্রেমে পড়ে গেল! সুজয়ের বাবা রমেনদের বস্তিতে এসে চোটপাট করে গেলেন। সেই বস্তি আবার তখন কমিউনিস্ট পার্টির বেস, উলটে সব রুখে দাঁড়াল। এরপর সুজয় কেসটা হাতে নেয়। সেদিন আমরা ফিরছিলাম ময়দানে খেলা দেখে। লিগ ম্যাচ, ফোকটে টিকিট জোগাড় করে দিয়েছিল কেউ। মেন লাইনের ট্রেনে বেলঘড়িয়া নেমে হেঁটে ফিরতাম আমরা। দু তিনদিন আগে খুব বৃষ্টি হয়েছিল। বড় রাস্তায় বোধ হয় জল জমে থাকত, তাই নিমতা বাজারের থেকে ভেতরের পথ দিয়ে ফিরছিলাম। ব্যাপারটা যে পার্টির ঝামেলায় চলে গ্যাছে সেই ধারণাটাই ছিল না আমার। ... ...
সিনেমা আর মোচ্ছব, সবই প্লাস্টিক আর্ট। টাইম-স্পেস টোটাল নড়বড়ে। কখন কী ঘটে যাবে কিচ্ছু বলা যাচ্ছেনা। সবই মাতালের কম্মো। পুজোর সিজনেই নাকি বসন্ত এসে গেছে, আর এই জমানায় ব্রিজ টপকালে তো সারা বছরই নবান্ন। ওদিকে নাকি মদ বন্ধ করার চক্রান্ত চলছে বাংলাদেশে, আর এদিকে গাঁজামদ বন্ধ হওয়ায় এমন কলরব, যে, সরকার নড়ে বসছে। দেয়ালে দেয়ালে প্রজাপতিরা ছবি আঁকছে, ভরদুপুরে ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে গিটার। একে নাকি বলে মাল-টি পারপাস। ওদিকে মাল-আলা একটু তাড়াতাড়িই নোবেল প্রাইজ পেলে কী হবে, আমরা যথারীতি ঢিমে তালে। উৎসব টুৎসব মিটতে চলল, এতদিনে উৎসব স্পেশাল। অবশ্য টাইম-স্পেস দিয়ে হবে টা কী, সবই তো নড়বড়ে, কখন কী ঘটে যাবে কিচ্ছু বোঝাই যাচ্ছেনা, বলা তো দূরস্থান। ... ...