সেন্টিমেন্ট নিয়ে এঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই। বাঙালির সংস্কৃতি স্থানবিশেষের উপর নির্ভরশীল নয়, বলে এঁরা মাইক ফোঁকেন। ময়দানপ্রেমীদের পিছনে ছুরি মেরে অবলীলায় সল্টলেকে দৌড় দেন, এবং অলৌকিক ক্ষমতাবলে এমন একটি বইমেলার উদ্বোধন করে দেন, যেখানে একটিও বই নেই। এছাড়াও, বইহীন বইমেলায় প্রবেশ করতে হলে যে কোনো টিকিট লাগবেনা তা বুক ঠুকে জানিয়ে জনসাধারণকে কৃতার্থ করেন। ... ...
অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা এই প্রবন্ধের বিষয়বস্তু নয়। এইটুকু হোমো-স্যাপিয়েন্সত্ব এখনো অবশিষ্ট আছে যে ওদের নিয়ে ক্যাওড়ামো করলে পাব্লিক ভালোভাবে নেবেনা। তাই বৈধই সই। তাছাড়া যেসব ব্যতিক্রমী পাঠকবর্গ (লিঙ্গ নির্বিশেষে) সমস্তরকমের হ-য-ব-র-ল লেখা পড়ার আগে মনোযোগ দিয়ে শিরোনামটি পড়ে নেন এই ডিস্ক্লেমার তাদের জন্যও নয়। এ হলো বৈধ অনুপ্রবেশের ব্যতিক্রমী গপ্পো। আর এই উত্তর-আধুনিক, উত্তর-ঔপনিবেশিক আর উত্তর-গুরুচন্ডা৯ যুগেও অনুপ্রবেশ আর বৈধ শব্দদুটি পাশাপাশি কি করে সহবাস করে সেই নিষ্পাপ ভাবনায় যারা আবিল হচ্ছেন, তাদের প্রভূত সহানুভূতি আর একচিমটে তিতিক্ষা ফ্রীতে দিয়ে আসুন যাওয়া যাক পরের প্যারায়। ... ...
রিচার্ড লেয়ার্ড "হ্যাপিনেস" নামের একটা চোদ্দ অধ্যায়ের বই লিখে পেঙ্গুইন থেকে ছাপিয়েছেন বলে নয়, অনির্বাণ চাটুজ্জে সে বইয়ের রিভিউ লিখে এ সংখ্যার গায়েগতরে দেশ-টার দাম তিরিশ টাকা করার পথে সাহায্য করেছেন বলেও নয়, লেখাটায় উন্নয়ন আর জি.ডি.পি.র সঙ্গে সুখে থাকার গুরুচণ্ডা৯য় অসমীকরণের রাজনৈতিক ফোড়ন রিক্যাপিচুলেটেড বলেও নয়, "ব্রেন ফিজিওলজী", "ইলেকট্রোএনসেফ্যালোগ্রাম" আর "ব্রেন স্ক্যান" বিজ্ঞানস্ট্যাম্পগুলো মাঠে নেমেই কী-বোর্ড চুলকে দিল। অর্থনৈতিক গবেষণার প্যারামিটার নেওয়া হচ্ছে মানুষের ভালো থাকার বোধটিকে, এবং তা স্রেফ ডিক্লারেশন নির্ভর নয় আর, হাই ফাই যন্ত্রপাতি প্রমাণিত। অর্থাৎ প্রশ্নাতীত একটি থিওরাইজেশনের পথ তৈরি হচ্ছে। ... ...
লক্ষ্য করে দেখবেন, ইদানীং বঙ্গীয় মধ্যবিত্ত সমাজের (মধ্যবিত্ত বোল্ড এবং আন্ডারলাইন সমেত) যাবতীয় তক্কোবাজির শুরু হয় আবেগ দিয়ে, তারপর ঢোকে সি পি এমাদি, এবং শেষে নির্জলা খেউড়। সিঙ্গুর-নন্দীগেরাম, সি এ বি নির্বাচন থেকে বইমেলা- সবেতেই মোটামুটি একই প্যাটার্ন দেখা যাচ্ছে। বলতেই পারেন যে "তুমি কোতাকার কোন হনু এলে বাওয়া যে গাছের ডালে ন্যাজ ঝুলিয়ে জ্ঞান মারাচ্চো?" আম্মো আলাদা কিছু নই। সেই আবেগ, সি পি এমাদি এবং খেউড়। তবে জিনগত মর্ষকামিতার জন্য খালি আয়নায় তাকাই আর দেখি নৈনিতালের একটা ভ্যাদভেদে পুরোনো আলু। তো এই আলুকিত সমাজের জ্ঞানীজনেরাই যখন এই সব বাচালতা পড়ে থাকেন, অতএব নিজেদের নিয়ে চর্বিতচর্বণ করাই ভালো। আপাতত: মিডিয়ার এই চর্বিতচর্বণের ফোকাল পয়েন্ট হল বইমেলা। ... ...
২০০৭ সাল। মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকায়, কচ্ছ থেকে ইটানগরে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে। কোনও খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন বেরলো না, টিভি রেডিওর কোনও চ্যানেলেই সম্প্রচারিত হল না সেই খবর, তবু এক কী আশ্চর্য ইথার তরঙ্গে অসমুদ্রহিমচলের তাবৎ যুবাকূলের কর্ণপটহে প্রবেশ করিল সেই বার্তা। আকূল করিল প্রাণ। পনেরো থেকে পঞ্চান্ন সমস্ত ভারতীয় যুবকের দল এক নিমেষে চার্জড হয়ে গেল। দীর্ঘ দু মাসের উপোসের দিন শেষ। শালা, ভাগ্যিস মাঝের ফেব্রুয়ারি মাসটা আঠাশ দিনের ছিল! ... ...
মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করার অহঙ্কারে অন্যজীবকে হেয় করাই যেন আমাদের জন্মগত অধিকার। বিশেষত: বাঁদরদের ওপর আমাদের আক্রোশ যেন একটু বেশীই। কথায় কথায় রেগে গেলেই আমারা একে অপরকে "বাঁদর" বলে আখ্যা দিই। "বাঁদরামো ঘুচিয়ে দেব" বলে গাল পাড়ি। সত্যি কথা বলতে কী, রাগ হবে নাই বা কেন? এ ধরাধামের সবচেয়ে উন্নততম জীব আমরা। সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রভৃতি শাখায় আমাদের পান্ডিত্য অপরিসীম! আর আমাদের পূর্বপুরুষ কী না ওরকম একটি ইতর প্রাণী! তবে আজ এই শ্লাঘাকে কিন্তু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা। ল্যাজ খসিয়ে মাতব্বরি মারার দিন শেষ। আগে আমাদের শরীরে ছেড়ে গিয়েছিল "অ্যাপেনডিক্স' নামক ক্ষুদ্র ও আপাত নিরীহ একটি অঙ্গকে এখন শুনছি এইচ.আই.ভি ভাইরাসটিও নাকী তাদের দান। গেরোটা এখানেই। সময় সুযোগ পেলে অ্যাপেনডিক্সকে কেটে বাদ দেওয়া যায়। তাতে প্রাণনাশের ঝুঁকি কম, কিন্তু একবার এইচ.আই.ভি ভাইরাস শরীরে ঢুকলে আর নিস্তার নেই। মরিবেই মরিবে। ... ...
দ্যাখেন তো ওই বিষন্ন গ্লিসারিন জবজবে টিভি সিরিয়াল আর স্টেনগানের প্রদর্শণী কিছু ধ্বজামার্কা সিনেমা। কেন, কার্গিল ধামাকায় মিডিয়া যখন ধূপধুনো জ্বেলে "ওং মিলিটারায় নমস্তুতে" জপছিল তখন তো মশাই আপনি করজোড়ে নতজানু, পঞ্চপ্রদীপ জ্বেলে আরতি করতেও বাকি রাখেননি। স্কুলের কচিমাত্রেই তখন অনিবার্য স্লোগান : ভারতীয় সেনা, দেশপ্রেম আর বন্দেমাতরম। এই ক'বছরেই সব ভুলে সাফ! ক'টা পুলিশ ঠেঙিয়েছে বলে ছি ছি করছেন? আরে ছো:। পুলিশ কি একটা মানুষ হল? সহবতের একটা ক্র্যাশ কোর্স কলকাতা পুলিশে জন্যে যে অবিলম্বে দরকার সে কথা ভেবেছেন? বর্ষবরণের রাত। ... ...
দেওয়ালীর হইহুল্লোড় শেষ হতে না হতেই, "মস্ত্' পাবলিক বছরশেষের মস্তির যোগাড়যন্তর শুরু করে দেয়। প্লেনের টিকিট, হোটেল বুকিং, পার্টির খবরাখবর; হ্যাপা কি কম নাকি! আর "আজকাল সস্তার টিকিট পেয়ে যত অ্যারাগ্যারা লোকও প্লেনে চাপে মশাই"। আগে থেকে ভাল ডীল দেখে বুক না না করলে, শেষে একগাদা গচ্চা যাবে। কটা ছুটি বাঁচল বছরশেষে নেবার জন্য, কটা সামনের বছরে ক্যারী ফরোয়ার্ড করানো যাবে, কটা সিকলীভ, কটা ক্যাজুয়াল, কার সাথে কাকে নেওয়া যাবে; এইসব হিসাবনিকাশও পাশাপাশি কষে ফেলতে হয়। ... ...
নেপালের আকাশে নাকি এখন লাল তারা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। স্বৈরাচারী রাজা পিছু হঠেছেন। ক্ষমতাচ্যুত হলেন বলে। এখন একদা বিপ্লবীদের হাতে গণতন্ত্রের বিজয়পতাকা। দীর্ঘদিনের বিরাট লড়াইয়ের শেষে এসেছে বিজয়। বিজয়ী বীররা তাই নামিয়ে রেখেছেন অস্ত্র। সেই অস্ত্রের পরিমান এতই বেশি, যে, ভারত থেকে পাঠানো হয়েছে অস্ত্র রাখার কন্টেনার। সেখানে অস্ত্রশস্ত্র জমা রাখার পর তালা বন্ধ করে একটি চাবি নিয়েছেন প্রচন্ড। অন্য ডুপ্লিকেট চাবিটি ঠিক কার কাছে জমা আছে, সেটা এই মূহুর্তে জানা না গেলেও, এই আনন্দের মূহুর্তে আমরা আর সেসব নিয়ে মাথা ঘামাবোনা। আজ আনন্দের দিন। আজ বহুদিন পরে বিজয় এসেছে ফিরে। আজ আমরা, অর্থাৎ আমি আর আমার চিরপুরাতন পাড়াতুতো প্রেমিকা খেঁদি , হলইবা রিমেক, শাহরুক খানকে দেখব মন দিয়ে। ... ...
পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নের উপদ্রব বেড়েছে আর বিহারে নাকি ডাকাতের। বিশেষ করে ব্যাঙ্ক ডাকাতের। বিহার পুলিশের বড়োকর্তারা এই নিয়ে একাধিক গম্ভীর মিটিং এবং তৎসহ প্রচুর চা, বিড়ি, সরকারি পেট্রোল এবং টিএ বিল খরচার পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, যে, আসলে দোষটা মোবাইল ফোনের। কেন মোবাইল ফোন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা দক্ষিণমেরুর পেঙ্গুইনদের এ ব্যাপারে কেন দায়ী করা হচ্ছেনা, সে নিয়ে বিশদ তথ্য না পাওয়া গেলেও, সংবাদে প্রকাশ, ব্যাঙ্কে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, যে, ডাকাতরা ডাকাতির কাজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। যুক্তি মারকাটারি সন্দেহ নেই। ... ...
বছর আট নয় আগে সদ্য বীরভূম থেকে আসা এক ছাত্র কলেজে কলেজ সুলভ মুক্তির স্বাদ পায়নি। কেবল বছরের বিশেষ একটা সময়ে নিজের আদলে মুক্তির খোলা মাঠে দৌড়ে যেত হাফ সোয়েটারে। সে বড় সুখের সময় ছিল যখন বছরের ঐ কটা দিন প্রথম অর্ধের পর কলেজ ছুটি হয়ে যেত ছেলেটির নিজস্ব নিয়মে। রোদ্দুর মেখে ভাঁজ করা নিদাঘ ডানা মেলে দেওয়া ছিল নিপাট সারল্যে। ছিল তখনও পর্যন্ত কোলকাতার রাস্তাঘাত সম্পর্কে অবহিত না থাকা জনিত ভয় এবং কলেজ গেট থেকে বের হতেই বাস থেকে ""বইমেলা, বইমেলা, ময়দান, বইমেলা'' চিৎকারে সেই ভয় নামক কুয়াশার পাতলা হতে হতে মিলিয়ে যাওয়া - অপূর্ব সে আলো। বাস ঢুকছে, দেখা যাচ্ছে বইয়ের স্টল, প্যাভিলিয়ন, জমতে থাকা মাথা, তৎক্ষণাৎ নেমে পড়া সেই জমিনেই - টিকিটের লাইন - দ্রুত পায়ে ঢুকে পড়া আকাঙ্খিত মরুদ্যানে, সম্মোহিত প্রাণ। ... ...
বাংলায় চুরি ক্রমশ: বাড়ছে-- মরুদ্যান শুকিয়ে গেল বলে। হপ্তা দুই আগে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর গোঁফচুরি হয়ে গেল। একটি বন্ধুত্বের সাইটে ছবি-টবি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর একটি "ফেক' প্রোফাইল বানিয়েছিলেন জনৈক যুবক, তাই নিয়ে মিডিয়ার হুল্লোড় যেন যৌবনের জলতরঙ্গ, রুধিবে কার পিতৃদেব। মুখ্যমন্ত্রীর আইডেন্টিটি চুরি হয়ে যাচ্ছে, সম্মানহানি হচ্ছে, রাজ্যের ভাবমূর্তি ম্লান হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি থেকে শুরু করে থেকে শুরু করে কোনো কোনো গপ্পের গোরু "ইহা একটি চক্রান্ত' পর্যন্ত পৌঁছে গেল। তাও কপাল ভালো, এর মধ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কালো হাত কেউ দেখতে পাননি। (অবশ্য দেখতে পেলেও নির্ঘাত চেপে গেছেন, এই শিল্পায়নের বাজারে মার্কিন বহুজাতিক নিয়ে প্রশ্ন তোলার বুকের পাটা আর কোন বাপের ব্যাটার আছে?) ... ...
আলপটকা বৃষ্টি হয়ে স্টার থিয়েটারে, অধুনা সিনেমা, দুফোঁটা জল ঢুকেছে বলে কত কথা! নাকি, সেখানে তখন মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দিচ্ছিলেন। হাতিবাগানে তো আর প্রখর বর্ষাকালেও জল জমে না! গোমুখ্যু ইঞ্জিনিয়ার আর আকাট রাজমিস্ত্রির হাতে পড়েই নেথাৎ, আহা, অমন ঐতিহ্যঘৃতগন্ধী বিল্ডিংটা মবলগ চুলকে গেল গা! সাংস্কৃতিক শীর্ষনেতৃত্বের জমানায় তাই প্রকৃত কালপ্রিট ঢুঁড়ে, দামড়ে সিধে করার প্রেসকপি নোটিস গেছে বলে শোনা যায়। এসব শাক সরিয়ে শহর কলকাতার জলনিকাশী ব্যবস্থার কানকো উল্টে যাঁরা লাল না কালচে বিচারের বেহায়া আঁতলামো মারাচ্ছেন, তাদের জন্যে চালুনি ছাড়া অন্য কোনো নাম বরাদ্দ নেই। ... ...
বঙ্গীয় শিক্ষাব্যবস্থার নতি কোন অভিমূখে যাইতেছে, তাহা অধুনা প্রবর্তিত "গ্রেড" ব্যবস্থার ফলাফল হইতে অচিরেই নিরূপণ করা যাইবে। এমনিতেই "ছাত্রানামধ্যয়নং তপ:" - এই মূলমন্ত্রটি বর্তমান ছাত্রসমাজ সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হইয়াছে; তদুপরি উহাদিগের মন ভুলাইবার যাবতীয় সরঞ্জাম ইতোমধ্যেই সর্বত্র মজুদ। সর্বোপরি গোদের উপর বিষফোঁড়ার ন্যায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন, "গ্রেড" প্রথার প্রবর্তন। ... ...
ভবিষ্যতের ডানা থেকে খসে পড়া দু-একটা পালক কখনো কখনো বর্তমানের মায়াবী আলো-বাস্তবতায় ভাসতে ভাসতে অতীতে গিয়ে ল্যাণ্ড করে। ধুলোরোদ আর আবছায়ার মারাত্মক কম্বিনেশন থেকে তাকে চিনে নেওয়ার মতো রুস্তম মার্কেটে এখনো খুব একটা নেই। পুজোপ্যাণ্ডেলের নিয়ন-পাটাতনে ঝিনচ্যাক ছেলেমেয়েগুলো যখন ঘ্যামসে জানিয়ে দিচ্ছিল - ""নবনগর থেকে এসেছেন বিপুল প্রামানিক। আপনি হারিয়ে গেছেন। আপনার বাড়ির লোক আপনার জন্য ....'' তখন লাইনে দাঁড়ানো না-দাঁড়ানো ঝারিপ্রবণ তাবৎ বিস্ময়কুৎকুৎ বাঙালী পাব্লিকের গ্রে-ম্যটারে শুড়শুড়ি লেগেছিল কি? ... ...
শিশুকাল থেকে শুনে আসছি একপ্রকার পতঙ্গ শিকারী ফুল আছে। বিনয়ের সাথে আমরা বলতেই পারি,সত্যি কথা। এই অপরূপ মোহিনী ফুলটি, আহা, নাম তার মিডিয়া। ইমোশন রূপ পতঙ্গ, তা সে সস্তাই হোক বা তার তিন প্রকার রূপভেদই হোক, সুতোর টান অতীব নিঁখুত। পরতে পরতে সাজানো ক্রীম আর ক্যারামেল, মাঝে একটু বিরতি,- বুদ্ধিদীপ্ত অ্যালমন্ড। নেহাত গদগদ ভাব অসহ্য ঠেকলে একটু আধটু মরিচ মিশিয়ে দেওয়া - যা আমরা হামেশাই করে থাকি সঠিক অভিপ্রায় ব্যতিরেকেই। এই মিডিয়ার বহুরূপ। আমাদেরই মনন ও উৎকর্ষের খুপরি জরিপ করে তার এই দিন দুগনি রাত চৌনি শ্রীবৃদ্ধি। মৃত্যু নেই, জরা নেই। শুধু ফুলে ওঠা আছে, ফেঁপে ওঠা অমৃত বেলুন। এঁকে নমস্কার কর। ... ...
"আমরা সমাজটাকে চারটে ভাগে ভাগ করেছি।'' মার্ক্স এঙ্গেলস কি অপর গোলার্ধ কাঁপানো কোনো দেড়েল অর্থনীতিবিদ বা সমাজতাত্বিক নয়, এ ঘোষণা একটি প্রাইভেট সংস্থার প্যানেল রিসার্চ ফিল্ড সার্ভেয়ারের। ভারতবর্ষের জনসংখ্যার, একশ কোটি জনসংখ্যার, চারটি "SEC" অর্থাৎ "Social Economical Class"A, B, C, এবং D । অমর্ত্য সেন বিগলিত হবেন, মনমোহন সিং উৎফুল্ল ও আবুল কালাম মশাই আত্মহারা হয়ে পড়তে পারেন এমন সহজ সাধারণ আর্থসামাজিক পরিকাঠামো বিভাজনে এবং আমাদের দাবি ব্যপারটাকে অবিলম্বে পাঠক্রমের অন্তর্ভূক্ত করা হোক। ... ...
টালিগঞ্জের নায়করা অফিস টাইমে মেট্রোরেলে চড়ে বিক্ষোভ দেখাতে গেছেন, তাঁদের জন্য মেট্রোরেলের চাট্টি কামরা বে আইনী ভাবে সংরক্ষিত ছিল, যাত্রীরা সেখানে উঠতে গেলে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি বলে যাঁরা বাজার গরম করার চেষ্টা করছেন, তাঁরা চক্রান্তকারী। জনমানসে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করাই তাঁদের একমাত্র কাজ। তাঁরা ভুলে গেছেন, নায়করা হলেন জাতির মুখ। ফিল্মে রোমান্স এবং অ্যাকশন করে তাঁরা জগৎ উদ্ধার করেন। একাই একশ জনের মহড়া নেন, পিটিয়ে দেশের শত্রুদের প্যান্টুল খুলে দেন, সোজা কথা? সত্যি কথা বলতে কি, তাজমহল, শচীন তেন্ডুলকার আর বলিউড ছাড়া দেশে আছেটা কি? পার্লামেন্ট আর রাষ্ট্রপতিভবন? ছো:। ... ...
বাপ-পরদাদা যখন মাতৃগর্ভে তারও আগে থেকে, আমরা আছি দাদা। সেই কবে সেকেন্দার কাকু যখন হেলেদুলে এসেছিল, আমরা লাইন দিয়ে পিছন পেতে দিয়েছি। ক্যাঁত শব্দে সীলমোহর প্রাপ্তি এবং হাতে হাতে শোধ - যেমন চলাও তেমনি চলি, যেমন বলাও তেমনি বলি। অথচ শালা ঐ বিশ্বাসঘাতক পুরু! হতচ্ছাড়া শুধু লাইনে এল না তা নয়, বলে বসলে কিনা, ""ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ তো দেখনি! আমার মাটিতে গাড়ু হাতে বসতে এলে আমিও ক্যাঁতাব!'' অত:পর,-""গওয়া হ্যায়, চাঁদ তারে গওয়া হায়'' এবং কাকু শেষ অব্দি "বাপি বাড়ি যা' কেস হয়ে ফুটে গেল। কিন্তু আমরা তো আর ফুল নই যে ফুটে উঠে দোলে দোদুল দোলে। ... ...
তবে যে শুনিয়াছিলাম পুলিশ হইল শান্তিরক্ষক? তবে যে শুনিয়াছিলাম উহাদের কাজ সুকঠিন? তবে যে শুনিয়াছিলাম উহাদের অস্ত্র ব্যবহারের নির্দিষ্ট বিধি আছে? ইহাও শুনিয়াছিলাম যে সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হইলেই আত্মরক্ষার্থে আক্রমনকারীকে আঘাত করিতে পারে, কিন্তু শান্তিরক্ষকদের, এমনকি আক্রান্ত হইলেও, আত্মরক্ষার্থে অস্ত্র ব্যবহারের নিয়ম নাই? ভুল শুনিয়াছিলাম সন্দেহ নাই। কিভাবে জানিলাম? পুলিশকর্তার বাণী শ্রবণ করিয়া। সংবাদে প্রকাশ লবণ হ্রদ উপনগরীতে একদল উন্মত্ত আন্দোলনকারী বিদ্যুৎ বিভাগের হেডাপিস আক্রমণ করিলে শান্তিরক্ষকরা গুলি চালায়। ... ...