উত্তর, মধ্য ও পূর্বভারতে খিচুড়ির পূর্বজর সন্ধানে ঘোরাফেরার পর এবার এবার উঁকিঝুকি বিন্ধ্যাচলের ওপারে। প্রাচীন কালে। আর ওমনি প্রবেশ এক পরমাশ্চর্য দুনিয়ায় — সঙ্গম সাহিত্যে। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
রাজগৃহ। পরিব্রাজনরত গোতম এসে পৌঁছেছেন। বেণুবনে যেখানে কাঠবিড়ালিদের খাওয়ার জায়গা সেইখানে উপবিষ্ট হলেন সন্ন্যাসীসমাগমে। সহসা তাঁর উদরে বায়ু-বিকার দেখা দিল। সন্ন্যাসী আনন্দ দ্রুত সেই রোগের উপশমের লক্ষ্যে এক পথ্য প্রস্তুত করে পরিবেশন করলেন বুদ্ধকে। ভীষণ অসন্তুষ্ট হলেন প্রভু। কিন্তু আমরা পেয়ে গেলাম খিচুড়ির এক সুনির্দিষ্ট পূর্বজ। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
ভাষাতত্ত্বের কম্পাস নিয়ে খিচুড়ির পূর্বজর খোঁজ করতে গিয়ে আমাদের পথ আটকে গিয়েছে কৃসর বা কৃসরা-য়। তার চাল আর তিলের পাক। আজকের খিচুড়ির ইভ কে, সে খোঁজ করতে হলে, খেলা ঘুরিয়ে হাতে নিতে হবে রসনাতত্ত্বের কম্পাস। আর তাতেই খুলে যাবে চাল-ডালের প্রথম পাকের আশ্চর্য এক দুনিয়া। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
অনেক হয়েছে ভায়া ন্যাকা-নস্টালজিয়া। ‘মায়ের রান্না’, মনে পড়তেই সে কী কান্না। আহা পিসির হাতের সেই চ্যবনপ্রাশ-ভাতে! তার চেয়ে বরং ছেড়ে সব ঢং রেঁধেই ফেলুন তুখোড় ‘পটাটাস মাতাদোর’। কিংবা ছেড়ে আজেবাজে কথা, রাঁধুন ‘চিকেন বনলতা’। ভয় নেই, বলেছি তো সেই কবেই, পড়বে না মোটে ঢিঢি—মিছে ঘাবড়াচ্ছেন, রেসিপি বাতলাচ্ছেন স্বয়ং ডিডি ... ...
মনুর ধর্মশাস্ত্র সহ নানা শাস্ত্রে খাদ্যকে একটি বিশেষ আর্থসামাজিক ব্যবস্থা কায়েম রাখার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের যে নির্দেশ রয়েছে খিচুড়ির ইতিহাস খুঁজতে বসলেই মেলে পুরাণগুলোতেও ঠিক সেই চতুর কৌশল। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
হো সারি দুনিয়া হিলে-লা! সোনপুর! সবাই জানে দুনিয়ার বৃহত্তম পশুমেলার কথা। কিন্তু যাঁরা নভেম্বরের বিহারি কড়ক-ঠণ্ড্-এ সে মেলা থেকে শুধু জানোয়ার দেখেই ফিরে এলেন, হায়, তাঁদের অনাস্বাদিতই রয়ে গেল খাঁটি দহি-চুড়ার সাথে ফুলকপির ডালনা ও খাট্টা আচারের বিচিত্র কম্বো, ঘি-জবজবে লিট্টি, বটের পাখির কষা, মিয়া মিঠাই, হরিহরনাথের মহাপ্রসাদ ক্ষীর, ফারা-পুলি আর তিন-পেগ-রাম-রসিক চোখে নৌটঙ্কির তিরছি নজরিয়ার এক আশ্চর্য রঙিন দুনিয়ার সাংস্কৃতিক আস্বাদ। দামু মুখোপাধ্যায় ... ...
খিচুড়ির পূর্বজ কৃসর-র খোঁজে ভরতমুনির রুদ্ধশ্বাস নাট্যশাস্ত্র পার করে এবার পার করতে হবে মনুর ধর্মশাস্ত্র—মনুষ্য রসনাকে একদিকে ভয় অন্যদিকে লোভ দেখিয়ে শৃঙ্খল-বদ্ধ করার সে রোমহর্ষক প্রয়াস। খাবার রইল না কেবলই পেট-ভরানোর বস্তু, তা হয়ে গেল একটা বিশেষ আর্থসামাজিক ব্যবস্থা কায়েম রাখার অন্যতম হাতিয়ার। সেই খাদ্যাস্ত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে কৃসর। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
জানা গেছে খিচুড়ির এক পূর্বজর নাম কৃসর। ভরতমুনির নিদানে নাট্যমঞ্চ নির্মাণে সে খানার আছে বেশ জরুরি ভূমিকা। কিন্তু মুশকিল হল, এ খাদ্যের সঙ্গে যে আজকের খিচুড়ির কোনোই মিল নেই! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
পহেলে দর্শনধারী, পিছে গুণবিচারী—এই মত নিয়ে চললে ফসকে যাবে ভূভারতের নানা সেরা খানা। চেহারা উপেক্ষা করিয়া ছাই ঘাঁটাঘাঁটি করিতে পারিলে, পাইলেও পাইতে পারেন রসনার বেমিসাল শিহরণ। যেমন লখনউয়ের ইদ্রিস বিরিয়ানি। বিষাণ বসু ... ...
শরৎ চাটুজ্জের শ্রীকান্ত রেঙ্গুনের রাস্তায়, খুঁজছেন, বাঙালি কিধার হ্যায়? দেখে শেষে ল্যাজ খান, বাঙালিকে চিনে যান। বাঙালির নয়, ছি-ছি, মৎসের ল্যাজা সেটি, হাতে থলি বাজারের, তাতেই প্রমাণ ঢের—বাঙালিকে দুনিয়ায়, মাছ দিয়ে চেনা যায়। এইবার যদি চাও, চিংড়ি-পুলাও তাও রেঁধে ফেল, ভয় কী?, এই নাও রেসিপি, পড়বে না আর ঢিঢি, হেঁশেলে যে হুঁশিয়ার স্বয়ং হাজির ডিডি ... ...
কোনো এক বিশেষ ব্যক্তির নামাঙ্কিত চার শতাধিক বছর প্রাচীন খিচুড়ি—যেমন উদাহরণ আর দ্বিতীয়টি নেই—আসলে কী, সেরহস্যের কিছুটা সমাধান হল। এবার শুরু এ খানা কত প্রাচীন এই মহাখোঁজ। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
বাংলা রন্ধনশিল্পের যুগপুরুষ বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে ‘পরিমিত’ লঙ্কা নিয়ে সুপ্রাচীন খিচুড়ি প্রবেশ করল বঙ্গীয় রেনেসাঁস-এর যুগে। কিন্তু বঙ্গীয় রেনেসাঁসের কালে রসনা-বিলাসের শ্রেষ্ঠ ফসলে নেই জাহাঙ্গিরি খিচুড়ি বলে কিচ্ছুটি। ঊনবিংশ শতকের শেষে ডুব মেরে একশো বছর পরে এক বঙ্গীয় জমিদারি হেঁশেল ফের ভেসে উঠল সেলিম বাদশার নামাঙ্কিত এই আশ্চর্য খানা। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
জাহাঙ্গিরি খিচড়ি বাংলায় প্রবেশ করে বিপ্লবের মুখোমুখি হল! তাতে এই প্রথম চাল পড়ল। দম পড়ল। এবং খুব সাবধানে আধুনিক রান্নার প্রথম অধ্যায়ে আলতো করে পা রাখায় ‘পরিমিত লঙ্কা’ পড়ল। আর আমরা জানলাম ‘খেচরান্ন’ এক ছোকরা শব্দ—অর্বাচিন সংস্কৃত, যার সঙ্গে খেচর বা পাখির কোনো সম্পর্ক নেই! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
চলছে খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। আগের কিস্তিতে দেখেছিলাম খাঁটি ভারতীয় খিচুড়িতে কীভাবে আফগানিস্তান পার করে এসে মিশেছিল ইরানি ‘শোলে’। এ কিস্তিতে আমরা সেই জাহাঙ্গিরি খিচড়ি আর বাজরা খিচড়ির রহস্যভেদের তাগিদে নেতি নেতি করতে করতে হাজির হব ইরান ফিরতি দিল্লি হয়ে সোজা বর্ধমান! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
বাংলা লিখিত সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের যুগ থেকে কোম্পানি-রাজের পত্তন পর্যন্ত রচিত নানা বাংলা গাথা চর্ব্যচোষ্যলেহ্যপেয়র রঙিন বিবরণে ভরপুর। উঠে আসে বাঙালির রসনা-সংস্কৃতির বিবর্তনের ছবি। এই শেষ কিস্তিতে রইল বাঙালির ‘টিফিন’ আর শেষপাতে ‘অম্বল’ ও পিঠে-পায়েস-মেঠাইয়ের মেলা। লিখছেন ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় ... ...
চলছে খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। আগের কিস্তিতে দেখেছিলাম খাঁটি ভারতীয় খিচুড়িতে কীভাবে এসে ভিড়েছিল ‘শোলে’, খিচুড়ির আফগানি চলন। এ কিস্তিতে আমরা এই শোলে-ধারার খোঁজে আফগানিস্তান পার করে পৌঁছে যাব ইরানে! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
পটোলেতে ফুলকপি ব্যাকরণ মানি না। নেই যে দাঁতের তেজ হেরিটেজ জানি না—‘কচি পাঁটা’ হাড়সার, কেনই বা খাব আর, রেওয়াজি-চর্বিওলা খোজা পাঁঠা থাকাতেও?! বাঙালির আলু চাই বিরিয়ানি পাকাতেও। নস্টালজিয়া থাক, নবীনেরা হরগিজ, আলুপোস্তয় দেবে পারমেসিয়ান চিজ! ডিমান্ড ও সাপ্লাই হেঁশেলেতে দিল ধুম, বাঙালি বছরভর খেতে পেল মাশরুম! প্রাণ চায়? রেঁধে যান পড়বে না মোটে ঢিঢি, হেঁশেলে যে হুঁশিয়ার হাজির আছেন ডিডি। ... ...
চলছে খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। যে ‘বাজরাখিচড়ি’ ওরফে ‘লাদরা’-র এমন নাম রটাল ডাকসাইটে কেতাব জাহাঙ্গিরনামা, কী সেখানা? আদৌ যাবে কি জানা? এ প্রশ্ন ধাওয়া করেই আমরা ঢুকে পড়েছি মুঘল বাদশাদের মহাহেঁশেলে, যেখানে একবার ঢুকলে বার হওয়া কঠিন! আর সেখানেই আমরা দেখব, কীভাবে আগমার্কা ভারতীয় খিচড়িতে এসে মিশে গেল আফগান ধারা। নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
হ্যাঁ, তেমনটাই কয়ে গিয়েছেন স্বয়ং আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য। কাজেই হে বাঙালিগণ প্রস্তুত হন। আরও দিন চারেক, এখনও আছে সময়! চটপট পড়ে ফেলুন সটীক বানারসি নির্মাণবিধি, থুড়ি রেসিপি সহ, এই ভাংময় কিস্সা। সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়। ... ...
বাংলা লিখিত সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের যুগ থেকে কোম্পানি-রাজের পত্তন পর্যন্ত রচিত নানা বাংলা গাথা চর্ব্যচোষ্যলেহ্যপেয়র রঙিন বিবরণে ভরপুর। উঠে আসে বাঙালির রসনা-সংস্কৃতির বিবর্তনের ছবি। এ কিস্তি জুড়ে রইল ‘মিট’-এর ছড়াছড়ি, এমনই ছড়াছড়ি যে আজকের যুগে রীতিমতো চোখ ছানাবড়া হয়। ছাগল তো বটেই, সঙ্গে শুয়োর, হরিণ, হাঁস, বেজি, শজারু আবার শামুক, কচ্ছপ আর তার ডিমও! লিখছেন ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। ... ...