সোনা রোদ্দুরে আবিল দুপুর পশমিনা শালে ঝোল কলঙ্ক, কিন্তু কেমন স্মৃতিভারাতুর, ভাঁড়ের ছ্যাঁদায় কাছা কোঁচা ময়। বে'বাড়ির ভোজে আঁচাবো কোথায়, অম্বল সুধা, ধূমপানে মন? যত্নে প্রত্ন খুঁড়ে দেখাবেন সঙ্গে আছেন ডিডি মহাশয়। ... ...
আজকে 'সাম' নামে এক সিরিয়ান রেষ্টুরান্টের খাবারের কথা, এও সেই আমষ্টারডাম শহরে। সাম হল গিয়ে সিরিয়ার রাজধানী দামাসকাস শহরের ডাক নাম। তো সেই থেকেই এরা খুলে বসেছে পুরানো স্মৃতি ভরা নাম নিয়ে রেষ্টুরান্টে। কালে কালে এরা এত বেশী নাম করে ফেলে যে তিনটি ব্রাঞ্চ খুলে ফেলে এদিক ওদিক। আগে থেকে বুক না করে গেলে টেবিল পাবার চান্স প্রায় নেই। আমি এখানে অনেকবার একা একা খেতে গেছি - বলেছে টেবিল নেই, আমি নেগোশিয়েট করেছি - আপনাদের পরের রিজার্ভেশন কটায়? রাত আটটার রিজার্ভেশনের ওরা আসার আগেই আমি খেয়ে হাওয়া হয়ে যাব এখান থেকে। দয়া করা আমাকে কোনের দিকে টেবিলে অ্যাডজাষ্ট করে দিয়েছে অনেক বার। ... ...
এটা রিসোত্তোর রেসিপির বা ইতিহাস লেখার রচনা নয়, তাই সেই সব বিষয়ে ঢুকছি না। তবে যেটা বলার, রান্নার টেকনিক ছাড়াও আর যেটা প্রধান পার্থক্য করে দেয় রিসোত্তো কোয়ালিটির তা হল যে চাল ব্যবহার করা হয় তা। রিসোত্তোর ছবি দেখেই ‘আমাদের গোবিন্দভোগ চাল দিয়ে এই জিনিস আরো ভালো হত’ এমন হল্লা মাচাবেন না প্লিজ। সব জিনিসের একটা স্থান-কাল-পাত্র আছে! অবশ্য আপনি নিজের নিজের সিগনেচার ডিস “রিসোত্তো উইথ এ গোবিন্দভোগ টুইস্ট” বানাতে চাইলে কিছু বলার নেই! যদি পারফেকশন আনতে পারেন, কে জানে হয়ত পায়েস ছেড়ে গোবিন্দভোগ গ্লোবাল স্কেলে পৌঁছে যাবে পাতে পাতে! এখানে জাস্ট এটুকু বলে রাখি এই মুহূর্তে রিসোত্তো বানাবার সবচেয়ে জনপ্রিয় চালু চাল তিনটি – কারনারোলি, আরবোরিও এবং ভিয়ালোনে ন্যানো। আর একটা ছোট্ট টিপস -এই চাল দিয়ে রিসোত্তো রান্নার আগে প্লিজ চাল ধোবেন না বারে বারে! একবারে না ধুলেই ভালো হয়। ... ...
আপ রুচি খানা? কে বলে মশাই? সব্বার আগে দরকার ভাই এটিকেট জানা। বিলেতে খানা খেতে খেতে কদাচ যেন না ওঠে বিশ্রী ঢেকুর। নাইজেরিয়ায় আবার খাবার নিমন্ত্রনে ব্যাঘ্র গর্জনে ঢেকুরই দস্তুর। বিলেতে চা বা স্যুপ পানে, সুড়ুৎ শব্দটুকু হওয়া মানে মহাসব্বোনাস। ওদিকে জাপানে, যাবতীয় পানে শোনা যাবে এমন হুসহাস, যেন শত অ্যানাকোন্ডায় ফেলছে নিশ্বাস। ইত্যাকার এটিকেট জেনে পাও গুড ম্যানার্স সার্টিফিকেট। দুনিয়ার কোনও দেশে নিমন্ত্রনে খেতে বসে পড়বে না ঢিঢি। শিক্ষা দিতে ইত্যাকার আচার, যথারীতি হেঁশেলে হুঁশিয়ার রয়েছেন ডিডি ... ...
এশিয়ান পাম সিভেট। এক প্রকার ভাম বিড়াল। তাকে বাধ্য করা হয় কফি ফল খেতে। সেই কফি খেয়ে সে করে মলত্যাগ। সেই মল থেকে বেছে নেওয়া কফি বীজ প্রসেস করে তৈয়ার হয় দুনিয়ার সব থেকে দামি কফি—কোপি লুয়াক। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে। পরিবেশবিদরা চান এই নিষ্ঠুরতা বন্ধ হোক। চেখে দেখলেন ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় ... ...
খাই খাই কর কেন? এসো বোসো আহারে। দুই শো বছর পরে খাবে যা-যা বাহারে, এসো ভায়া ট্রাই করো, আজই খাও তাহারে। আরশোলা-চচ্চড়ি, গুবরের কালিয়া, মশক-পুডিং খেও সেলফি-টি তুলিয়া। আরও দু-শতক পরে, জেনে রেখো নির্ভুল, খানা মানে খাবে শুধু ক্ষুধাহরা ক্যাপসুল! কী হবে রেসিপি তার, ভারী শখ জানবার? এখানে লিখলে যদি ‘গুল’ বলে পড়ে ঢিঢি? দক্ষিণে পাড়ি দাও, কানে কানে জেনে নাও, হেঁশেলেতে যথারীতি হুঁশিয়ার আছেন ডিডি ... ...
ফারচা, আকুরি, সাল্লি, পপেতা পর ইডু, লগান্যু কাস্টার্ড… শুধু ধানশাক নামটা মাথায় নিয়ে এখানে হাজির হলে আর সব খানার আগে মোক্ষম ভ্যাবাচাকা খেতে হবে। কারণ কলকাতায় পারসি খানার এক বিরল ঠিকানা কিড স্ট্রিটে এমএলএ হস্টেলের ঠিক উলটোদিকে ২০ ফুট বাই ১০ ফুট! নাম তার ‘মনচারজি’জ’। দীপঙ্কর দাশগুপ্ত ... ...
সপ্তদশ শতক। শাহ জাহান বাদশার হেঁশেল। মুঘলাই খিচুড়ির রোশনাই। আর তারই মধ্যে একটির নাম খিচড়ি দাউদখানি! সে নাম যেমন রহস্যময়, তেমনই বিচিত্র সে খানা—বলছে খিচড়ি, কিন্তু চাল নেই! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
খাওয়ার আগে গালি খাওয়াবে, আছে এমনও রেস্তোরাঁ এ ভবে। কিংবা খাবেন পলিটিকাল খানা? সে হদিশও দিব্যি জানা। রান্না ছাড়ুন, এ কিস্তিতে ঘুরেই আসুন, তেমন নানা খানাঘরে, আর দেরি না করে। হলেন নাকি রেডি? পথ দেখাতে তৈরি আছেন দেখুন স্বয়ং ডিডি ... ...
দক্ষিণ ইওরোপের আইবেরিয়ান উপদ্বীপের দেশ। প্রাচীন রোম সাম্রাজ্য, মধ্যযুগীয় মুসলমান শাসন, প্রাক-আধুনিক ঔপনিবেশিক শক্তি, আধুনিক কালে দীর্ঘ স্বৈরতন্ত্র ও পরে গণতন্ত্রের মিশ্রণে বিচিত্র রঙিন সংস্কৃতি। ঠিক পর্যটক হয়ে সাইট-সিয়িং নয়। কখনও শিক্ষার্থী, পরে তরজমাকার হয়ে এদেশের নানা শহরের অন্দরমহলে উঁকি-ঝুঁকির অভিজ্ঞতা। এ কিস্তিতে কুইম্ব্রার কাফে, রেস্তোরাঁয় খাস পোর্তুগিজ খানা-পিনা। ঋতা রায় ... ...
ষোড়শ শতক। বাধার বিন্ধ্যাচল টপকে মধ্যযুগীয় দক্ষিণি খিচুড়ির খোঁজ। এক আশ্চর্য কুকবুক সুপশাস্ত্র। কন্নড় ভাষায় রচিত। রচনাকার তৃতীয় মঙ্গরস। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সেরা সময়ের খানদানি খানাদানার সাক্ষী সে কুকবুক। আর আমরা যাকে খিচুড়ি বলে চিনি, কন্নড়ে তাই হুগ্গি! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
ষোড়শ শতক। বাধার বিন্ধ্যাচল টপকে মধ্যযুগীয় দক্ষিণি খিচুড়ির খোঁজ। এক আশ্চর্য কুকবুক সুপশাস্ত্র। কন্নড় ভাষায় রচিত। রচনাকার তৃতীয় মঙ্গরস। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সেরা সময়ের খানদানি খানাদানার সাক্ষী সে কুকবুক। আর আমরা যাকে খিচুড়ি বলে চিনি, কন্নড়ে তাই হুগ্গি! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
সংস্কৃত ‘পর্ণ’ শব্দটি থেকে এসছে পান। এই পান মঙ্গলকারী ও সৌভাগ্যের প্রতীক। একবার নাকি অশ্বমেধ যজ্ঞের সময় পানের জন্য দুনিয়া তোলপাড় করেন পঞ্চপাণ্ডব। হস্তীনাপুর ছাড়িয়ে নানাদিকে খোঁজ পড়ে যায়। কিন্তু কোথাও পান নেই! খুঁজতে খুঁজতে সন্ধানীরা পৌঁছান পাতালপুরীতে। সাপের রানির ঘরে। তখন বাসুকী তাঁদের উপহার দেন হাতের কনিষ্ঠ আঙুল। সেই আঙুল মাটিতে পুঁতলে জন্মায় পানের বল্লরী। সেগাছের ফুল নেই, ফল নেই। কেবল কচি সবুজ পাতা। সংস্কৃতে তাই পানের আর-এক নাম ‘নাগ বল্লরী’। ... ...
খানা-সংস্কৃতি ভাই! ইদানীং ফ্যাশন ওইটাই! শুধু খেলে হাঁসফাঁস করে হবেনি কো, জানতে হবে ইতিহাস, ঝাড়তে হবে দেরিদা-ফুকো! কিন্তু যদি উলতো গাই? এ বাজারে এট্টু অপোসংস্কিতি ফলাই! রাখুন ও সব লবচবানি, রাঁধুন মাটন কেওরামি! কে বলে তাতে পড়বে ঢিঢি? রেসিপি দাতা স্বয়ং ডিডি ... ...
পঞ্চদশ ষোড়শ শতকের এক আশ্চর্য কুকবুক সুপশাস্ত্র। খিচুড়ির খোঁজে সেখানে আমাদের প্রবেশ করতেই হবে। কিন্তু তার আগে একটু সাঁতার ঘোর রহস্যময় সংস্কৃত শব্দ ‘সুপ’-এর সরোবরে। সত্যে ডুব দিয়ে কিছু মিথ ভাঙা দরকার। আর সেই সন্তরণেই আমরা পেয়ে যাই ভোজ কী হওয়া উচিত বাল্মীকি রামায়ণে তার আশ্চর্য সংজ্ঞা। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
এখানে খিচুড়ি থেকে দু-দণ্ড সরে ঘিয়াৎশাহি সুলতানের হেঁশেলের ‘ভাত’ নিয়ে একটু চর্চা করার লোভ কিছুতেই সামলাতে পারছি না। এ কেতাবে যেসব বৈচিত্র্যময় ‘ভাতের’ কথা আছে তা ভেতো বাঙালিকে পদে পদে অপ্রস্তুত করবে! যেমন, চিনি মেশানো গোলাপজল কিংবা গোলাপ-গন্ধী চিনি (গুলশকর) দেওয়া ভাত, জংলি আঞ্জির দেওয়া ভাত, তালমিছরি দেওয়া ভাত, ‘দুটি সোনার মোহরের মাপে চাকা চাকা করে কাটা দশটি কলা আর দুই শের কিশমিশ দেওয়া ভাত’, সেঁকা ছোলা আর সেঁকা তিল দেওয়া ভাত, দুঘ কিংবা রস কিংবা সুগন্ধি জল কিংবা কুমড়োর রস মেশানো ভাত, সেঁকা তিল, মেথি, এলাচ, লবঙ্গ, লেবুর রস, নুন, ঘি এবং ঘিয়ে ভাজা হিং দেওয়া ভাত, দুঘ আর রসুন দেওয়া ভাত, বড়ি, মাংস আর লেবু দেওয়া ভাত, টক কমলার রস, কুমড়োর রস, লেবুর রস, মিষ্টি কমলার রস, পোমেলোর (সদাফল) রস কিংবা কামরাঙার রস মেশানো আলাদা আলাদা কিসিমের ভাত… ... ...
পিয়ারডোবা— বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর সংলগ্ন একরত্তি গঞ্জ। পরিমলদা-র দোকান— একরত্তি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। অর্ধশতক পার। সিগনেচার মিষ্টি— ল্যাংচা। বিশেষণ — পরমান্ন। নির্মাণ-রহস্য — অভিজ্ঞ শিল্পীর হাতের জাদু এবং দুধ, ঘি ও ছানা সম্পূর্ণ নিজস্ব। লুকো-ছাপার বদমাইশি নেই। যে-কোনও দিন গিয়ে দেখা যায় সেই শিল্পনির্মাণ। গন্ধ-বর্ণ-স্বাদের তীব্র উৎসব। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
ইসলামি শাসনকালের রন্ধনপ্রণালীর যেসব তাক-লাগানো কেতাব আমাদের হাতে এসেছে, তার মধ্যে ‘নিমতনামা’ সংকলনটি বেমিসাল। আর তাতে হরেক আজগুবি খানার সঙ্গে পেয়ে গেলাম নানা কিসিমের খিচড়ি, এবং তার সহচরদের। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
ইসলামি শাসনকালে প্রাচীন হিন্দু বিজ্ঞানশাস্ত্রের চর্চা গলা টিপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এই হিন্দুত্ববাদী প্রচারের গালে একটি বিরাশি সিক্কার চড় ভাবপ্রকাশ নিঘণ্টু। মুঘল আমলে রচিত এ কেতাবকেই পণ্ডিত ও গবেষকেরা মনে করেন ‘আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মেটেরিয়া মেডিকা’। আর তাতেই রয়েছে আধুনিক খিচুড়ির প্রথম রেসিপি। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
বৃষ্টি এখানে কম। এখানে বিশ্বচরাচর নিঝুম করে শুরু হয় স্নোফল। কিন্তু কুছ পরোয়া নেহি। বরিষণমুখরিত দিনে যারে খাওয়া যায়, নিঃশব্দ তুষারপাতেও তারে পাওয়া যায়। ধুমায়িত খিচুড়ির কোনো জবাব নেই। মৌমিতা ভৌমিক ... ...