আমার পাশে যে বসে ছিল তাকে বললাম, “এ তো গামা গাছের ডগাগুলো কেটে দিয়ে গেছে মনে হচ্ছে! সাদা প্লেটে চিজ ছড়িয়ে দিলেই কি গরুর খাবার মানুষের হয়ে যায় নাকি!” পাশের জন বলল “হোয়াট ইজ গামা?” তাকে অনেক কষ্টে আমার বিখ্যাত ইংরাজিতে বোঝালাম, যে এর সাথে ভাস্কো-দা-গামা-র কোন সম্পর্ক নেই। বাড়ির গরুতে খাওয়ার জন্য আমরা জমিতে গামা (বাংলায় অনেক জায়গায় একে গমা বা গ্যামা বলা হয়) চাষ করতাম। এমনি সবুজ লকলকে ডাঁটির মত গাছ জমি থেকে কেটে এনে বাড়িতে খড় কাটার বঁটিতে ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে কুচাও। আমাকে বলা হল এগুলোকে নাকি ‘অ্যাসপারাগস’ বলে! গামা গাছের ডাঁটির বিজ্ঞান সম্মত নাম যে অ্যাসপারাগস, সেটা কে আর জানত! ... ...
ঠাকুমা আর মানিক কাকুর কথার মাঝেই আমি দেবদারু বাগানের নীচে এসে দাঁড়িয়েছি। হাতে গামছায় বাঁধা খাবার আর গায়ে চাদর জড়িয়ে সাদা কুয়াশার ভেতর ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে আছে তাঁতিরা। সেই ছায়া থেকে আমি খুঁজে খুঁজে বের করি কলিম তাঁতি, মকবুল তাঁতি, পরেশ তাঁতি, নিবারণ তাঁতি, মান্নান ড্রাম মাস্টার সবাইকে। আজ অন্যদিনের মতো এগিয়ে গিয়ে আমি ওদের সাথে গল্প জুড়ি না। আমি পা বাড়াই গোলেনূর দাদির বাড়ির দিকে। সে বাড়ির উঠোনে এখনো নিঃস্তব্ধতা। শুধু গোলেনূর দাদির বড়ঘরের টিনের বেড়ায় ঝুলানো কবুতরের খোপ থেকে ভেসে আসছে ডানা ঝাপটানোর শব্দ। ... ...
আমাদের বাঙলার রাজা লক্ষণ সেনের (শুনেছি বখতিয়ার খিলজি যখন বাঙলা আক্রমণ করেন, তখন লক্ষণ সেন নাকি বসে ভাত খাচ্ছিলেন – আক্রমণের খবর শুনে হাত না আঁচিয়েই ঘোড়ায় চড়ে পিছনের দরজা দিয়ে হাওয়া!) মত এই খেমাই রাজাদেরও প্রধান এবং প্রিয় খাদ্য ছিল ভাত – সাথে মেকং এবং টোনলে-স্যাপ নদীর মাছ, গেঁড়ি-গুগলি-শামুক-ঝিনুক, একদম টাটকা ধরা। ট্রাডিশ্যানাল খেমাই ক্যুজিনের প্রধান ডিশগুলি ছিল – স্যুপ, স্যালাড, একটা মাছের কোর্স, একটা মাংসের ডিশ, শাকসবজি এবং ভাত। মুখে জল আনা নানা রকমের সস বানাতে ছিল এরা প্রসিদ্ধ – আর খাবারে নানাবিধ মশলা এবং সুগন্ধি ইনফিউজ করার চেষ্টা করত। আর একটা কথা, কাম্বোডিয়ার রান্না বান্নায় রসুন কিন্তু বেশ দিল খুলে ব্যবহার করা হয়। শেষ পাতের মিষ্টি বলতে তা ছিল ফলমূল এবং নারকেল থেকে বানানো। সব মিলিয়ে বেশ জমকালো ব্যাপার। ... ...
আজকাল আমি পারতপক্ষে ব্যুফে (বা বাফে, যেমন বলবেন)–তে খাওয়া দাওয়া এড়িয়ে চলি। এর প্রধান কারণ নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পারা। ভাবুন একবার, কেউ বলল - যাই খাও বা যতটা পরিমাণেই খাও না কেন, বিলের পরিমাণ একই! এই প্রলোভন জয় করা – আমি তো ক্ষুদ্র মনুষ্য, বড় বড় মহাপুরুষের মানসিক জোরে কুলায় না। বহু সচেতন পাবলিক দেখেছি, যারা, এমনিতে যাকে বলে পুষ্টি এবং ক্যালোরি, হিসেব করে খায় – কিন্তু ব্যুফে-তে গিয়ে অন্য মানুষ হয়ে ওঠে। আমারও প্রায় অনুরূপ অবস্থা, ভিতর থেকে একটা কম্পিটিটেটিভ মনোভাব চাড়া দিয়ে ওঠে। ও খাচ্ছে আর আমি পারব না! বা পয়সা যখন দিয়েছি, তখন খেয়ে শোধ তুলতে হবে – এই চক্করে পড়ে মাঝে মাঝে এত খেয়ে ফেলেছি যে শেষে টেবিল থেকে ওঠার অবস্থা থাকে না! ... ...
ছেলেটা অর্ডার নিতে এলে – পিৎজা এদের স্পেশালিটি কিনা জিজ্ঞেস করলে, হ্যাঁ বলল। আমার কি মনে হল - এও না সেই অন্য রেষ্টুরান্টের মত পিৎজার ইতিহাস ব্যাখ্যা করা শুরু করে! তাই সে-ই কিছু বলার আগেই আমি বললাম – আমি জানি পিৎজা বলে আধুনিক কালে আমরা যে জিনিসটিকে চিনি তার জন্ম হয় ১৮৮৯ সালে ইতালির নেপলস্-এ। একসময়ে নেপলস্-এর বাজারে যা পরিচিত ছিল ‘পিৎজা আলা মোজারেল্লা’ নামে, সেই পিৎজা খেয়েই রাণী মার্গারিটা কুপোকাত – বিশাল ভালোবেসে ফেলে ডিক্লেয়ার করে দিলেন, যে এটাই তাঁর সবথেকে প্রিয় পিৎজা। ব্যাস, সেই থেকে এই পিৎজার নাম হয়ে গেল ‘পিৎজা মার্গারিটা’ সেই ওয়েটার দেখি আমার কান্ড দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে – ... ...
সভ্যতার বহু অর্জনই দারিদ্রের দান। পরিমিত সম্বলকে বাঁচিয়ে গুছিয়ে কালকের দিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মানুষ কালাতিপাত করেছে এযাবৎ ইতিহাস জুড়ে। আর তার মধ্যে দিয়েই বিকশিত হয়েছে তার সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারা। মানুষের ইতিহাসের সেরকমই এক উপাদান পান্তাভাত। উপনিষদের ঋষি ব্রহ্মের অন্নরূপে আরাধনার মন্ত্র দর্শন করেছিলেন, সূর্যের আহ্নিক গতির পর্যায় অতিক্রম করে ব্রহ্মের সেই তেজ বিচ্ছুরিত হয়েছে হাঁড়িতে তুলে রাখা পান্তায়, তার আমানি জলে। আধুনিক বিশ্বের দরবারে পান্তাকে পেশ করে সেই ইতিহাসের এক ঝাঁকি দর্শন করিয়েছেন মাস্টার শেফ কিশোয়ার চৌধুরী। এই পর্বে খানিক অবগাহন করা গেল পান্তার পাতিলে। ... ...
আমি আগে বাঙাল, পরে বাঙালি। আজীবন ইস্টব্যাংগল, আমরণ লালহলুদ। শবাসনে ক্যান্ডিক্রাশ খেলতে খেলতে বাঙালদের জেদ, পরিশ্রম, স্ট্রাগলের গৌরবের আঁচ পোহাই।... ইলিশ না ভালোবেসে যতখানি বাঙাল হওয়া সম্ভব। আশৈশব পান্তা না ছুঁয়ে বড় হলে যতখানি বাঙাল হওয়া সম্ভব। আমি শুঁটকির ওমে বেড়ে উঠেছি, কচুর কন্দ, ডাঁটা, লতি, পাতার পাহাড়ে চাপা পড়ে গেছি, জেনেছি যে পৃথিবীতে একমাত্র বিষাক্ত না হলে সমস্ত ঘাসপাতা বেটে খাওয়া যায় - খালি পান্তা আমার সিলেবাস থেকে বাদ পড়ে গেছে। অথচ পড়ার কথা ছিল না। পড়তে থাকুন... ... ...
গলাভাত জিনিসটা শুনলেই কেমন রুগীর পথ্য মনে হয় না? অবশ্য রুগীর পথ্য হলেই খেতে বিস্বাদ হবে তা নয়! তেমন করে রাঁধতে পারলে দূর্বাঘাসই ভালো খেতে হয়, তা গলাভাত তো অনেক ওপরের জিনিস! গলাভাত নিয়ে আমার এক সময়ে বেশ আগ্রহ জেগেছিল। বাণী বসুর ‘মৈত্রেয় জাতকে’ বারবার পড়েছি ‘কাঁজি’ খাবার কথা। যদিও জিনিসটাকে খুব রোমাঞ্চকর কিছু বলে লেখা হয়নি, তবু আমার মনে টিকটিক করলো, যে ব্যাপারটা কী একবার দেখতে হবে। ইচ্ছেটা সে সময়ে নানা কারণে শিকেয় তুলে রাখতে হয়েছিল। পরে, যখন ‘ফুডি’ ও ‘শেফি’ পরিমণ্ডলে বেশ সড়গড় হয়েছি, তখন চীনে-খাবারের মধ্যেও শুনলাম ‘কনজি’। অমনি আমার তুলে রাখা শখ ডানা-ঝটপটিয়ে শিকে থেকে নেমে এল। ... ...
এতদিনে পান্তাভাত কি ও কয় প্রকার, কতখানি স্বাস্থ্যকর, কতটা জিভে জল আনা, কোথায় কোথায় কি কি নামে ডাকা হয় কি কি দিয়ে খাওয়া হয় - সব আপনি মোটামুটি জেনে গেছেন। ভেবে কি একটু অবাক লাগছে, যে এতই পুষ্টিকর ও উপাদেয় আদ্যন্ত দেশী খাদ্যটিকে চিনে-জেনে নিতে অস্ট্রেলিয়ার মাস্টারি দরকার হল কেন? প্রশ্নটা সহজ, কিন্তু উত্তরটা কিঞ্চিৎ জটিল, ধাপে ধাপে পৌঁছতে হবে। ... ...
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে সাম্প্রতিক কালে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এমনই এক আয়োজন, 'মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া সিজ়ন ১৩'। আমাদের ভারতবর্ষের মতোই এখানেও অনুষ্ঠানটির মোটামুটি ভাবে একই ফরম্যাট - শেফের ডিগ্রী বা 'স্কিল সেট' না থাকা সাধারণ ঘরোয়া রাঁধুনেরা তাঁদের রন্ধন প্রতিভা দেখাতেই মূলতঃ উপস্থিত হন এখানে। প্রায় ছয়মাস ধরে চলা এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববরেণ্য শেফেদের কাছ থেকে এরপর নানা কসরত শিখে এবং তাঁদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে নিজেদের প্রতিভায় শান দিতে দিতে একসময় এঁদের মধ্যে কেবলমাত্র একজন বিচারকদের বিচারে শ্রেষ্ঠ হয়ে 'মাস্টারশেফ' শিরোপা ও দু লাখ পঞ্চাশ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার নিয়ে বাড়ি ফেরেন। ... ...
মাথা বিশাল গরম – ব্রেড কোথায়, পাগলের মত খুঁজছি, ক্রসো দেয়নি? সেই খেয়েই পেট ভরাতে হবে। শেষে দেখি হাসপাতালে সদ্যোজাত বাচ্চাকে যেমন কাপড়ে জড়িয়ে রাখে তেমন ভাবে তিন-চার পিস ব্রেড রাখা। সেই খেয়ে পেট ভরাচ্ছি এমন সময় ট্রলি ফিরিয়ে নেবার জন্য মাসুদ এল – তাকে দেখে আরো মাথা খারাপ হয়ে গেল – বেশ রাগি মুখে বললাম, “বাঙালি হয়ে আরেক বাঙালির মুখের খাবার কেড়ে নিতে লজ্জা করে না?” ... ...
ঠাকুমা কলতলা থেকে এসেই স্টোভের আঁচ বাড়িয়ে দিল। পুঁইয়ের কচি ডগাগুলো হাত দিয়ে ভেঙে নেয় ঠাকুমা। লোহার কড়াইয়ে সেই পুঁইয়ের পাতাডগা, হলুদ, লবণ আর কাঁচামরিচ ফেলে ঠাকুমা তাতে ঢেলে দিল অনেকটা সর্ষের তেল। আলতো নয়, বেশ জোর দিয়েই ঠাকুমা তা মাখাতেই পুঁইয়ের পাতাডগা সব এলিয়ে পড়ল। ঠাকুমা এবার তার উপরে শুইয়ে দিল কতগুলো ইলিশমাছের চাকা। হাত-ধোয়া জল জড়িয়ে গেল মাছগুলোর গায়ে। ... ...
আমি মহা উৎসাহে বলতে শুরু করলাম – “আরে তোমার মনে নেই – ওই যে কুমড়ো পাইকের গৌরাঙ্গ কাকু গো! চোট খেয়ে দাগি হয়ে যাওয়া কুমড়োগুলো যেগুলো কেউ কিনতে চাইত না আর ঠাকুমা বসে বসে চুন লাগাতো – সেই কুমড়ো একমাত্র কিনত গৌরাঙ্গ-কাকু। আজ বুঝতে পারলাম সেই পচা কুমড়ো নির্ঘাত বিদেশে পাচার করত এমন স্যুপ বানাবার জন্য”। “এই রোমান্টিক সেট-আপে ডিনার করতে এসে তোমার পচা কুমড়োর কথা মনে আসছে! ধন্য চাষা মাইরি”। ... ...
হায় সেই কাছাখোলা বাঙালি- শেষ পাতে সাবানের সুপে কাত/ বিপ্লব ও আইসক্রিম হাতে হাত - ভুসুকু খাইলি ফিস ওরলি। কিচাইনে এক ঋতু অবসান - ফিরিঙ্গি নালে ঝোলে চণ্ডাল / ডিডি ভনে বেমালুম ইতিহাস/ বিরতিতে কাঁটা বেছে বেছে খান ... ...
বাংলার মঙ্গলকাব্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুগের সাহিত্য, লোকাচার, প্রবাদ-প্রবচনে নানা ভাবে আমরা পান্তাভাতের উল্লেখ পাই। সাহিত্য ছাড়াও সপ্তদশ শতকের নথিপত্রেও এর হদিস রয়েছে। আর তা থেকে সমসাময়িক আর্থ-সামাজিক চিত্রটি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ প্রচলিত প্রবাদে আমরা এটাকে গরিবের খাবার বলেই জানি। কিন্তু পান্তাভাত যে কেবল সর্বহারা শ্রেণীর বেঁচে থাকার রসদ তা নয়। মুঘল আমলে সম্রাটের প্রাসাদের মুক্তাঙ্গনে যে গান বাজনার আসর বসত, তাতে হাজির থাকতেন অভিজাত শ্রেণীর নাগরিকেরা। তাঁদের আপ্যায়নের জন্যে ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে বিশেষ করে থাকত পান্তাভাত। ... ...
ইউটিউবের বদান্যতায় যে বাঙালির এখন ঘরে ঘরে শেফ, বিভুঁইয়ের মাস্টারশেফের ঝাঁকে ঝাঁকে প্রতিযোগীদের ড্রিবলিং করে টিকে থাকা শীর্ষ তিনের একমাত্র মহিলাটির জটিল-কুটিল খাবারের বদলে এই 'সাধারণ' রান্নাটি ফাইনাল ডিশ হিসেবে পরিবেশনায় তাঁরা কিঞ্চিৎ পাজল্ড। এমনিতেই ক্লান্তিকর মানিমেকিং সর্বস্ব মধ্যবিত্ত মিডিওকার বাঙালি, আঁতেল প্রমাণান্তে, এট্টু গাঁয়ের ছোঁয়া পেলেই আহা উহু করতে করতে গায়ের ক্যামাফ্লোজখানা নালেঝোলে ভিজিয়ে ফেলেন; তাঁরা গালভরা নাম দেন 'ফোক', তাপ্পর ফোকি (রি নয়, সেটার সহমর্মী কোনভাবেই নন বলেই বাহুল্য) সেজে নববর্ষে পান্তা ইলিশ খান, মাঝেমাঝে মাটির দেওয়ালে সাজা রেঁস্তোরায় কচুভর্তা খেয়ে ভাবসমাধি যান। অতএব, এই পান্তাকে অ্যান্টিক্লাস স্ট্রাগলের মর্যাদা না বাঙালির নেকু স্মৃতিরোমন্থনের সোৎসাহ পৌষপার্বণ বলা হবে সে সিদ্ধান্তে আসতে তাঁরা গলদঘর্ম হচ্ছেন, বৈকি। ... ...
জামাইসুলভ তমুকবাবু পরপর এত পোলাও কালিয়া খেয়ে একেবারে গলদঘর্ম হয়ে গেছিলেন। তিনি সকাল থেকেই মুখিয়ে আছেন নতুন কিছু খাবেন। বিলেতে থেকে স্যুপ আর সেদ্ধ মাংস, স্যালাড খেয়ে অভ্যেস হয়েছে তাঁর। এইবার রাত্রিবেলা আসনপিঁড়ি করে তাঁকে খেতে বসানো হয়েছে। বাঙালি মাত্রেই জানেন যে পান্তা কখনো ডাইনিং টেবলে বসে খাওয়া যায়না। রাজস্থানের গাঁয়েঘরে একটা রীতি আছে। ঘোর গরমের দুপুরে শুধু কাঁচা পেঁয়াজ খেতে হয়। কিন্ত সেটা খেতে হবে ক্ষেতের পাশে বসে। দুইহাতের মধ্যে পেঁয়াজ নিয়ে এমনভাবে তাকে থ্যাঁৎলাতে হবে যে শুধু পেঁয়াজ আর রুটি মনে হবে অমৃত। কিন্ত ঐ পেঁয়াজ ঘরে বসে খেলে স্বাদ নেই। অবশ্যই থ্যাঁৎলানোর মারপ্যাঁচ আছে। ওমনি পান্তা রাখার ও মাখার জন্য হাত ও মারপ্যাঁচ জানা চাই। আর ফটফটে পরিষ্কার মেঝে চাই। ... ...
পখাল একটা বিরাট লেভেলার। রাজা প্রজা, ধনী নির্ধন, সাধু ভণ্ড, সৎ অসৎ, সাহসী দুর্বল, মন্ত্রী জনগণ সব্বাইকে এক পাল্লায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সেটা কী? নিঃশর্ত পখালপ্রীতি। এই একটিমাত্র বিষয় যেখানে কোন মতপার্থক্য চলবে না। রাজার ঘরে যে ধন আছে, টুনটুনির ঘরেও সেই ধন আছে! নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ, পখালরাজের চরণে। এমনকি স্বয়ং শ্রীজগন্নাথদেবও স্নেহ করেন তাকে। ... ...
খাবার গল্প করতে গিয়ে সৌন্দর্য্য বোধের কথা উঠছে কেন? এটাই মূল কারণ – যদি নামী কোন ফ্রেঞ্চ রেষ্টুরান্টে খেতে যান, তাহলে সেটা নিজেই টের পাবেন। ধরুণ – একটা বিশাল স্টাইলের সাদা প্লেট দেবে – কিন্তু মাঝখানে ১০ গ্রাম মাংস, দুটো বীনসের দানা, এককাছি সবুজ পাতা চেরা। আর সেই মাংসের অর্ডার নেবার সময় আপনাকে ওয়েটার/ওয়ের্টেস সেই চিকেনের (যদি চিকেন অর্ডার করেন) বাল্যকাহিনী শোনাবে! চিকেন এই খেত, বনেবাদাড়ে খেলে বেড়াতো, তার মামারবাড়ি ওখানে, জবাই করার আগে সে এই এই জায়গা ভ্রমণ করেছে ইত্যাদি। প্রথম দিকে ঘাবড়ে যেতাম – এখন আলতো করে বলে দিই, চিকেনের জীবনগাথা শোনায় আমার ইন্টারেষ্ট নেই! ... ...
সেবারে কুয়ালালামপুরের বুকিং বিনতাং এলাকার বিখ্যাত শপিং মলে ঘুরে বেড়াচ্ছি, ঘুরতে ঘুরতে বেশ ক্লান্ত – ভাবছি কোন একটা স্টলে বসে একটু কফি/জুস/শেক কিছু একটা খেয়ে নিলে বেশ হয়। তাই আশে পাশে চোখ রাখছি – হঠাৎ করে চোখে পড়ে গেল একটা দোকানের খাবারের অ্যাডে আমের ছবি দেওয়া! মানে রসে ভরে উঠেছে, একটা পাত্রে টুপটাপ করছে কাঁচা হলুদ বা কমলা যাই বলেন তেমন রঙের আম! ব্যাস আর কী ভাবতে হয়! টুক করে ঢুকে পড়লাম সেইখানে – চারদিক খোলা বসার অ্যারেঞ্জমেন্ট, শপিং মলের ভিতরে। ... ...