অনীতার কথা এইবেলা বলে নেওয়া ভালো কেননা, অনীতা প্রেমে পড়েছে। সেটা খুব বড় কোনো ব্যাপার নয়, আকছার পৃথিবীর প্রতিটি কোণেই চৌদ্দ থেকে চব্বিশ বয়সী একগাদা মেয়ে কিশোরী মায় উদ্ভিন্নযৌবনা পর্যন্ত প্রেমে পড়ছে, শুধু পড়ছে না, বলা ভালো ধপাধপ আছাড় খাচ্ছে। প্রেমের মতো এমন একটা সঘন স-আবেগ তদুপরি সলজ্জ ব্যাপারের সাথে আছাড় খাওয়ার মতো অমন আনকুথ ক্রিয়াশীলতার কথা ভাবতেই কেমন যেন তেতো অনুভূতি হয় মুখের মধ্যে ওর, কিন্তু ব্যাপার টা ঠিক ঐ রকমই আনকুথ বলা যায় একেবারে বিশ্রী রকমের আনকুথ হয়ে গ্যাছে। কারণ অনীতা, আমাদের সুন্দরী ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া চোখে হাফ কাট রিডিং গ্লাস দেওয়া, লেয়ার কাট চুল, স্মুথ হেয়ার সিল্কি শাইনিং স্কিন অনীতা, টম ক্রুজ লুক আর রালফ লরেন পোলো টি শার্ট বিশেষজ্ঞ অনীতা, সর্বোপরি শোভা দে আর সিডনী শেলডন গোগ্রাসে গিলে খাওয়া অনীতা হঠাৎ করে আছাড় খেয়েছে, থুক্কু, মন প্রাণ সবই সঁপে বসে আছে এই দর্জিকে! ... ...
শুভ যোগ বলুন আর ত্রহ্যস্পর্শ মাইনাস ওয়ান, এমন কেলোর কীর্তি এর আগে হয়েছে কি? নারীদিবস আর দোল এবার পিঠোপিঠি। ওদিকে গালে রঙ কত জমেছে কে জানে, আমাদের লেখা জমে গেছে বিস্তর। টেকনিকাল টিমের হুড়কোয় এতদিন চুপচাপ থাকলেও এই মওকা আর ছাড়া গেলনা। জমে যাওয়া জিনিসপত্তর থেকে তুলে নিয়ে কিছু ছড়ানো-ছেটানো লেখা তোড়ায় বেঁধে হাজির করা হল এবারের স্পেশাল বুলবুলভাজায়। নতুন ভার্সানে নতুন গুরু এলে নতুন বুলবুলভাজা আবার বেরোবে। কিন্তু তার আগেই, এই সুযোগ, আর ছাড়াছাড়ি নেই। কত বাড়ি দেখা হল। এখনও তো বেশি বড় হইনি। যখন মায়ের মতন হব তখন আরো কত বাড়ি দেখব। কত ভাল কত খারাপ। মায়ের মতন বড় হওয় অব্দি কি বাড়িতে বাড়িতে কাজ করতেই থাকব? না আমি ভাবি যে বাবাকে বলব আমকে বিয়ে দিও না, আমাকে তোমার পার্টিতে নিয়ে নাও। দাদা আছে, আমিও থাকব। আমাকে ঐ চক্চকে সানাইএর মত বাঁশিগুলো বাজাতে দেবে। আমি তো বাজাতে পারি। যখন বাবা থাকে না, আমি একএকদিন বাজাই। জামাইদাদাও এগুলোই বাজায়। ওরা যা বাজাতে বলে সব বাজাতে পারি। আমি তো আর দাদার মতন নেশা খাব না, দুটো পয়সা পেলে ঘরেই আনব। বলব বাবাকে। ... ...
সেই সময়গুলোতে রানুর একটা বিশাল বিশাল জানালা ঘেরা ঘরে থাকতে ইচ্ছে করে। চারিদিক থেকে হাওয়া দেবে, জাহাজের মত। জাহাজে সে কোনোদিন চড়েনি বা দেখেনি, শুধু বইয়ে পড়েছে। তবু অনেক হাওয়ার কথা ভাবলে কেন জানিনা তার জাহাজের কথাই মনে হয়। ... ...
নেতাজী খাচ্ছেন লুচি আলুর দম, জলখাবার। কিশোরী ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে ঘেমে যাচ্ছে, লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে -- না জানি কী অখাদ্য হল আজ এই দেবতার ভোগ! ... ...
তিনু ছেলেটাকে নিয়ে ওদের সমস্তপুর গ্রামে এল। তারপর নিজের বাড়িতে গিয়ে বলল "ও আমার বন্ধু, ওর কোনো থাকার জায়গা নেই। ও কি আমাদের বাড়িতে থাকতে পারে?'' তিনুর মা তো আগে ছেলেটাকে দেখে নি, তাই ""না'' বলল না। তিনুর মা বলল ""হ্যাঁ পারে, কিন্তু আমাদের বাড়িতে থাকতে গেলে ওকে আমাকে কাজে সাহায্য করতে হবে''। ছেলেটা বলল ""হ্যাঁ, আমি তোমাকে সব কাজে সাহয্য করব। আমাকে প্লিজ থাকতে দাও। আমার নাম থিমু।'' তিনুর মা বলল "ঠিক আছে।'' পরের দিন তিনুর মা ঘুম থেকে ওঠার আগেই থিমু সব রান্না শেষ করে রেখেছিল। তিনুর মা ঘুম থেকে উঠে বলল, "এত তাড়াতাড়ি রান্না হয়ে গেল! তাহলে তুমি এবার বাসন ধুয়ে দাও।'' থিমু সেটাও খুব তাড়াতাড়ি করে ফেলল। ... ...
একটি মেয়ে খুব সুন্দর স্কুটার চালাত। সে আকাশের পাখিদের দেখত আর ভাবত সেও যদি উড়তে পারে। সে মাঝে মাঝে-ই দেখত একটি ছোট্টো পরী উড়ে এসে গাছের ডালে বসে তার স্কুটার চালানো দেখত। আর উড়ে উড়ে সঙ্গে যেতো। এই পরীটা ম্যাজিক জানত। সে তার ম্যাজিক ওয়্যান্ড সব সময় সঙ্গে রাখত। ... ...
খোকার গরীব দাদুর আর কিছুই ছিল না। এই একটি মাত্র সম্বল- ছাতিম পাতা। পঞ্চাশ বছর আগে এনেছিলেন ভুবনডাঙ্গা থেকে। কুড়িয়েই এনেছিলেন। বাঁকা অক্ষরে নাম লিখে দিয়েছিলেন কবি ঠাকুর- রবি ঠাকুর। ... ...
আমার বাবা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিরকালই খুব সাবধানী। তার ফলে, সাইকেল চড়া থেকে সাঁতার- সবই আমি শিখেছি নির্ধারিত বয়েসের চেয়ে অনেক দেরিতে। পৃথিবীর ইতিহাসে আমিই সম্ভবত: একমাত্র মানুষ, যে ভারত মহাসাগরের জল মগে করে মাথায় ঢেলে স্নান করেছে। এহেন আমি মামাবাড়ি যাওয়াটাকে স্বাভাবিকভাবেই বহুবিধ অ্যাডভেঞ্চারের ছাড়পত্র পাওয়া বলে ধরে নিতাম। দাদুভাইয়ের প্রশ্রয়ে এবং উৎসাহে যেসব জিনিস জীবনে প্রথমবার করেছি তার মধ্যে ছিল সত্যিকারের খেলনা স্টিম ইঞ্জিন তৈরী করা, অন্ধকার ঘরে লন্ঠন জ্বেলে শ্যাডোগ্রাফি, মাটি দিয়ে ব্লক বানিয়ে খেলনা ছাপাখানা, নিজের হাতে তুবড়ি জ্বালানো। এমনকি একবার বাঁশ আর কাঠ দিয়ে নিজের হাতে বানিয়েছিলাম আস্ত একটা ঘর যার মধ্যে আমি নিজে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারতাম। বাবাকে নিজের হাতে চিঠি লেখাও ওই মামাবাড়ি থেকেই প্রথম। ... ...
এরপর একদিন পেঁচা কাকের জন্য একটা সাদা জামা বানাতে শুরু করল। কিন্তু জামাটা কাককে পরাতে গেলেই সে বড্ড লাফাত। এমনই একদিন কাককে জামাটা পরিয়ে দেখা হচ্চিল ফিট করেছে কিনা। যথারীতি কাক লাফাচ্ছিল। কাকের এই তিড়িং বিড়িং পেঁচার মোটেই পছন্দ ছিলনা। তাই সে চোখ পাকিয়ে বলল, "খবরদার! আমি কিন্তু লম্ফ হাতে উড়ছি। লাফাস না!' ... ...
বড়োলোকের বড়োই অহংকার, কারণ সে নাকি আসলে রাজা। বেশ, তাকে আমরা রাজামশাই বলেই না হয় ডাকবো। তো সেই রাজামশাই পুত্রশোকে অস্থির হয়ে কোনালকে এত্তেলা পাঠালেন - রে কোনাল! আমার ছেলে তোর কি ক্ষতি করেছিলো যে তোর ছেলেরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে মেরে ফেললো? আমি চাইলে এখনি এর বদলা নিতে পারি, কিন্তু সে বদলা নিলে তোর আর আমার তফাত রইবে না। আমি মনস্থ করেছি, তোকে এক কঠিন কাজ দেবো। সে কাজ করতে পারলে আমি তোর ছেলেদের প্রাণভিক্ষা দেবো। লগলানের রাজার আস্তাবলে যে বাদামী ঘোড়াটা আছে সেটা নিয়ে আয়, তোর ছেলেরা প্রাণে বেঁচে যাবে। ... ...
রূপকথার পুরো জগতটা জুড়েই রাজপুত্তুর কোটালপুত্তুরদের সাথে সমান জাঁকিয়ে আছে এই সব না-মানুষরা। সে আমাদের দেশের গল্পেই বলুন আর অন্য দেশের কাহিনীতেই বলুন। রূপকথার জাদু দুনিয়ায় জন্তু জানোয়ার, পাখিপক্ষীরা যে মানুষের মতই কথা বলতে পারবে তাতে আশ্চর্য্য হবার কিছু নেই। ভালুক এসে চাষীর সাথে ফসলের ভাগ নিয়ে ঝগড়া করবে, শেয়াল আর সারস এ ওর বাড়ি নেমন্তন্ন যাবে, খরগোশ আর কচ্ছপ দৌড়ের বাজি ধরবে এসব ওখানে হামেশাই হয়ে থাকে। কিন্তু আজ আমি সেই সব না-মানুষদের কথা বলব নানান দেশের রূপকথায় যারা এক্কেবারে মানুষের মত হয়েই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে আসুন দেখি আমাদের নিজেদের দেশের আঙিনায়। বাংলার রূপকথায় সেই যে ছিলো এক হীরেমন পাখি। এই হীরেমন দুনিয়ার সব প্রশ্নের উত্তর জানতো, তে¢ত্রশকোটি দেবদেবীর নাম বলতে পারতো। ... ...
একদিন একটা ভূত ছিল। ভূতটার অন্নপ্রাশন ছিল, মাংস আর খিচুড়ি রান্না করেছিল। ভূতের মা বলল, "তুঁই কিঁ চঁকলেঁট খেঁয়েঁছিঁস?' ভূত বলল, "হ্যাঁ, খেঁয়েঁছি।' ... ...
আঙুলের ছোঁয়া লাগছিল মুখে, কখনও চোখ, কখনও নাকের পাশে। আলগোছে। হাল্কা ছোঁয়া। অথচ শিরশির করছিল শরীর। সমস্ত শরীর। আঙুলের নখ ছুঁয়ে যাচ্ছিল কানের পাশের গাল। আলতো। চন্দনের ঘ্রাণ আসছিল। চোখ বুজে আসছিল কপালে ঈষৎ সূচালো কিছুর স্পর্শে । সে স্পর্শ যেন অবিচ্ছিন্ন তরঙ্গের মত কপালকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে। ও চোখ খুলতে চাইল। চোখের পাতা ভারি ঠেকল। সামনে দেখল হালকা কচি কলাপাতা রং, লাল পাড়ে ঘেরা। ... ...
বাতাসি জানে না আজ ফেব্রুয়ারি মাসের একুশ তারিখ। শীত সামান্য কমে আসার ফলে এখন সে তার ছেঁড়া পোশাকেও খুব ভোরে বেরোতে পারে। সে ঠিক করেছিল আজ নতুন বাড়িগুলোর পেছনের গলিতে যাবে। সে ঠিক জানে এখনও ওদের দলের কেউ ওখানে যায়নি। ... ...
ছোট্ট দুটো হলদে প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে এঘর থেকে ওঘর, ওঘর থেকে সেঘর। নদীর দিক থেকে হাওয়া আসছে। অশথ গাছের পাতায় আওয়াজ হচ্ছে ঝিরঝির ঝিরঝির। সামনের ঘাসছাড়া টুকরো মাঠটায় ধুলো উড়ে যাচ্ছে পাক খেয়ে। দোতলা বাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে ভূতের মত। ... ...
স্বপ্নের মতো অন্তর্লীন কোন বিষণ্ন পৃথিবীর অধিবাসে সক্রীড়ক ক্লান্ত সময়। সে এক অনাদি নগরী ছিল। নগরী নয়। নগরপল্লী। টিলার পর্য্যঙ্কে স্থাপিত সুভিক্ষ নগরী। ভোগের, ব্যসনের, দ্যূতক্রীড়া ও অত্যুজ্জ্বল পানোৎসবের রাজধনী যে সুভিক্ষ নগরী, তারই বহির্রেখার অন্ধকারভাগে তার অবস্থান। তাই নগরী নয়, নগরতলি। লোকে ডাকে ধরন্ত পল্লী। ... ...
একটা লুক একটা বাসকোর ভিতরে ঢুইকা মরার প্র্যাকটিস করবার নুইছিল। এই সিন দেইখা একটা বিড়ালের বাচ্চা আইগিয়া আইয়া তারে কইল, তুমি মরবার চাউ ক্যা? লুকটা একটু ভুদাই হইল এবং কইল, তুই জানলি ক্যামনে? বিড়াল কয়, তুমার প্যাট্টিস দেইখাই বুজছি। ... ...
একটা বেওয়ারিশ কুকুরছানা, খুব বেশি হলে হয় তো কয়েক দিন বয়েস হবে, পৃথিবী সম্বন্ধে একেবারে অনভিজ্ঞ, ভরা মার্কেটের মাঝে ছোট্ট শরীরটা নিয়ে রাস্তা পার হতে যাচ্ছিল, আর দু'পা চলামাত্র হুড়মুড়িয়ে তার ওপর এসে পড়ল একটা সওয়ারি-বোঝাই রিকশা। পেছনের একটা চাকা চলে গেল কুকুরটার ঠিক গলার ওপর দিয়ে। একটা ক্ষীণ আওয়াজ বেরলো কি বেরলো না তার ছোট্ট গলাটা থেকে, সাথে সাথে বেরিয়ে এল তাজা লাল রক্ত। ছোটো শরীরটা ছটফটাতে লাগল তাতাপোড়া পিচের রাস্তার ওপর। ... ...
নীলের বাড়াবাড়িই। বাড়াবাড়ি তো সবই। বড়বড়ও। এক্স এক্স এল। এক্স এস খুঁজে পাওয়া দায়। আর এদিকে সব এক্সেস। যেদিকে তাকাও। উপরে তাকাও তো এক্সেল কাচা এক্সট্রা হোয়াইট মেঘ। মুখ তুলে তাকাও তো এক্সট্রা হোয়াইটেনিং টুথপেস্টচর্চিত স্মাইল। সামনে তাকাও তো সুপার স্বচ্ছ দরজা। দরজা যে আদৌ আছে তা-ই বোঝা দায়। প্রথম কদিন তো দুর্যোধনবাবুর ইন্দ্রপ্রস্থ ভ্রমণসমদশা। ... ...
এই ঢাকা তখন সেই ঢাকা ছিলো না। ফুলবাড়িয়াতে ছিলো রেল স্টেশন। রিকশাই ছিলো সর্বত্র জনপ্রিয় বাহন। ইপিআরটিসি'র লাল দোতলা বাস বিআরটিসি হইয়াছে মাত্র। বাবার হাত ধরিয়া সেই দোতলা বাসে চাপিয়া মিরপুর-ফুলবাড়িয়া ভ্রমণ করিয়া জীবনকে মনে হইয়াছিলো সার্থক। রমনা পার্কের দোলনায় আবার কবে চড়িবো, সেই ভাবনায় ছোট্ট শিশু মন কতই না রঙিন স্বপ্ন আঁকিয়াছিলো। ... ...