দোকানগুলো অবধি নেমে এসেছে রাস্তায়। সরু রাস্তা আরও সরু হয়েছে। এবং সেখানে পিলপিল করছে লোক। রোগামোটালম্বাসরু। লাইন দিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে দিয়ে নানা রোমহর্ষক কায়দায় এঁকেবেঁকে অটো চলেছে। আমাদের ছোটো অটো চলে আঁকেবাঁকে। অফিস টাইমে তাতে টার্জান থাকে। বাসরা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। নড়েওনা চড়েওনা। কন্ডাক্টররা চিল্লাচ্ছে, রিক্সারা ভেঁপু বাজাচ্ছে, গাড়িরা তেড়ে হর্ন দিচ্ছে, আর বাকিরা শাপশাপান্ত করছে। রাস্তার হরেকরকম দেশি-বিদেশী গাড়ির ভিড়। সিগনালের বালাই নেই। একেকটা মোড়ে জনা ছয়েক করে পুলিশ আর হোমগার্ড আকাশের দিকে লাঠি উঁচিয়ে আছে। গাড়িরা খানিকটা সার দিয়ে চলেই যেখানে খুশি নাক গুঁজে দিচ্ছে। উল্টো দিকের রাস্তা থেকে তখন আরেকগুচ্ছ গাড়ি এসে হাজির হচ্ছে। সবাই মিলে হর্ন দিচ্ছে, খিস্তি করছে, আর যেখানে সেখানে নাক গুঁজে জটটা আরও খোলতাই করে তুলছে। ... ...
-- উনি কি জানতেন যে বিংশ শতাব্দীতে রণজিৎ গুহ- গায়ত্রী স্পিভাক চক্রবর্তিরা মিলে একটা অন্যরকমের ইতিহাস, ধোপা-নাপিত-কামার-কুমোরের ইতিহাস লেখার জন্যে গজল্লা করবেন? তবে এইটা লিখেছেন যে জ্যেঠা রাজকৃষ্ণ অত্যন্ত ধার্মিক ও ""নামে রুচি,জীবে দয়া, ভক্তি ভগবানে'' গোছের লোক ছিলেন। খরা-বন্যা-মহামারীর সময় প্রজাদের জন্যে ধানের গোলা খুলে দিতেন, যে যা চাইত ধার দিতেন, হিসেব রাখতেন না। দিয়ে খুশি হতেন। একেবারে টিমন অফ এথেন্স! ফলটাও হাতে হাতে পেলেন। লোকে ধার শোধ করতে ভুলে গেল। আস্তে আস্তে ওনার তালুকদারীর নৌকোয় ফুটো হতে লাগল। ফলে দশবছর বয়সে পিতৃহীন গগনচন্দ্রকে ইংরেজি স্কুলে পড়ার জন্যে দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে রেঁধে বেড়ে খেয়ে থাকার শর্তে নওয়া-যশোদল যেতে হল। সেখানে আবার স্কুলে স্ট্রাইক ও হয়েছিল, ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে, স্কুল বন্ধ হল, তার ব্যাপক গল্প আছে। হে-হে, বংশের ধারা যাবে কোথায়? আম্মো না নাকতলা স্কুলে ১৯৬৬তে স্ট্রাইক করিয়েছিলাম। --ঢের হয়েছে। এবার একটা চুটকি গল্প বলে শেষ কর, খালি প্যারাবলের মত শেষে কোন মর্যালিস্ট লেকচার দিও না। ... ...
একদিন বঙ্কা পড়াশোনা শেষ করে খুব ক্লান্ত হয়ে ছাদে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল, অ্যাকসিডেন্টালি বা ইনসিডেন্টালি তার মুখটা ছিল পাকিস্তান বর্ডারের দিকে ফেরানো। উইংয়ের ছেলেরা এর থেকে দল বেঁধে সহজ পাটিগণিত সমাধান করে ফেলে এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে মাথায় রেখে সেদিন সারারাত ছাদ থেকে তারস্বরে, পাকিস্তান বর্ডারের দিকে মুখ করে আমরা গেয়েছিলাম, একটাই লাইন : আন তবে বীণা, আ-আ-আ-আ-আ-আ-আ, আন তবে বীণা, আ-আ-আ-আ-আ-আ-আ ... সে যে কী অপূর্ব শুনতে হয়েছিল, কী বলব। ... ...
বলার কী আছে? মোদ্দাকথাটা হল অন্নই ব্রহ্ম, আর কতবার বলবো? যুগে যুগে বিভিন্ন জনগোষ্ঠি অন্নের অনটন হওয়ায় এক বাসস্থান ছেড়ে নতুন জনপদের সন্ধানে ঘটিবাটি-বোঁচকাবুঁচকি বেঁধে বেরিয়ে পড়েছে। আবার নতুন করে আস্তানা গেড়েছে হয় কোন নদীর তীরে, নয় কোন পাহাড়ের নীচে। তোমাদের খানদানের ব্যাপারটাও ঠিক তাই। তোমারা আদতে বাঙাল নও। ছিলে রাঢ় বাংলার ইন্দ্র। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় অন্নচিন্তা চমৎকারা হলে লং মার্চ করে গঙ্গা পেরিয়ে গারোপাহাড়ের নীচে ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগ সাবডিভিসনের মেঘনা নদীর পাড়ে আঠারবাড়িয়া গ্রামে জঙ্গল সাফ করে বাঘ মেরে বসতি স্থাপন করলে। ইন্দ্র থেকে ক্রমশ: রায় হলে। ছিরু পাল থেকে শ্রীহরি ঘোষ:))))) ... ...
কলেজের তরফে কোনও প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না। কিন্তু ভার্সন শোনা যায় কিছু কিছু। সে জলপাইগুড়ি শহরেরই এক লোকাল মেয়ের প্রেমে পড়েছিল। ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজের ছেলে লোকাল মেয়েকে "তুললে' সেটা শহরের এক ধরণের অপমান হয়ে দাঁড়ায়, কারণ আর যাই হোক, আমরা ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজের ছেলেরা, আসলে কলকাতা বা তদ্সন্নিহিত অঞ্চল থেকে আসা একদল বহিরাগত গুণ্ডা অ্যান্টিসোশ্যাল প্রকৃতির ছেলে ছাড়া তো কিছু নয় টাউনের লোকেদের কাছে! সেই ছেলেদের কারুর প্রেমে পড়বে জলপাইগুড়ি টাউনের মেয়ে, এটা কী করে মেনে নেয় টাউনের এলিজিবল ব্যাচেলরের দল? শোনা যায়, অর্ঘ্যও টার্গেট হয়েছিল সেইভাবেই। মেয়েটিরও দেখা করতে আসার ছিল তিস্তার পাড়েই, তাকে কোনওভাবে ঘরে আটকে অন্যরা আসে, এবং একা অর্ঘ্যকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয় বর্ষার ভরা তিস্তার জলে। কোনও সাক্ষী ছিল না, কোনও প্রত্যক্ষদর্শী নেই, কেস উঠেছিল, কিন্তু টেঁকে নি। কেবল মনে সন্দেহটা রয়ে গেছে। জলপাইগুড়ির বর্ষার কথা মনে পড়লেই এখনও অর্ঘ্যকে মনে পড়ে। ... ...
তার পরের ঘটনাগুলো ম্যাজিকের মত ঘটল। দেড়শো ছেলে একসাথে নেমে এল নিচে, প্রথমে হস্টেলের কোলাপসিবল গেট বন্ধ করে তালা মারা হল। তারপর ম্যাজিকের মত সকলের হাতে চলে এল অØষন। জিনিসগুলো এক্স্যাক্টলি আমাদের ঘরেই ছিল, কেউ জানতাম না, কী করে যে সেই মুহুর্তেই জেনে ফেললাম তাও মনে পড়ছে না, কেবল মনে আছে আমার ঘরেই লকারের মাথা থেকে বেরোল একটা হকিস্টিক, একটা চেন। আমি হকিস্টিকটা নিলাম, রুমমেট কে-কে নিল চেন। প্রায় পুরো হস্টেল এই রকম চেন রড হকিস্টিক ইত্যাদি জিনিস নিয়ে নিচে মেন গেটের সামনে লবিতে পজিশন নিল, কেবল মাষন একজন ফোর্থ ডান ব্ল্যাক বেল্টের মোকাবিলা করার প্রচেষ্টায়। ... ...
কিন্তু আজকে খেলার মাঠে দারোগাবাবুকে তো দেখছি না,ওই ছোঁড়াটা দৌড়ুচ্ছে , পেছনে ওর বাপ। ব্যাপারটা কি? ------- আর বলিস না। দারোগাবাবুর নালিশ শুনে বাপ তো ছেলেকে আচ্ছা করে কড়কে দিল। কিন্তু ছেলেটা এক্কেবারে যাকে বলে রেকটাম-রাইপ। আজ খেলার মাঠে বন্ধুদের তোল্লাই খেয়ে নিজের বাপকেই জিগ্যেস করেছে-- ' বাবা, আইজ ক্লাসে মাস্টারে জিগাইসে স্বাধীনতা সংগ্রামী ত্রয়ীর নাম। আমি দুইটা কইসি,--" লাল' আর" পাল '। আরেকটা নাম কি যেন? কী ""গঙ্গাধর তিলক''? ------ তারপর? ------- তারপর আর কী ! বাপের তেলেভাজার দোকান, তাড়াহুড়ো করে ছেড়ে এসেছে, স্কুলের মাঠে এবারে নতুন প্লেয়ার শ্যাম থাপার খেলা দেখবে বলে।। রেগে গিয়ে বলেছে-- বানচোইৎ! জাননা কী গঙ্গাধর? ''বাল""! তারপর কী হচ্চে দেখতেই পাচ্ছিস। না, রঞ্জন কিছুই দেখছে না। ওর কানে বাজছে ওই দু-অক্ষরের শব্দটি। কালকেই ওর দলের একটি ছেলে বলেছে--- এইসব বালের নাটক করে কী হবে? পাড়াতেও এরকম কিছু টিপ্পনী কানে এসেছে। কী হবে? ও নিজেও জানেনা কী হবে। খালি জানে ওকে নাটক করতেই হবে। আজ নয়তো কাল। ... ...
শিলাবৃষ্টি ছিল তরাইয়ের শীতকালে উপরি পাওনা। এ শিল আবার আমাদের দক্ষিণবঙ্গের মত মিহি শিল নয়, যে ছাতা মাথায় কুড়োতে বেরিয়ে পড়লাম। রীতিমতো তাগড়া তাগড়া শিল, মাথায় পড়লে আর বেঁচে ফিরতে হবে না। বরফের বড় বড় চাঙড় পুরো। সেকেন্ড ইয়ারেই বোধ হয় দেখেছিলাম শ্রেষ্ঠ শিলাবৃষ্টি। আধঘন্টার মধ্যে হস্টেলের সামনে বিশাল ফাঁকা সবুজ ক্যাম্পাস পুরো সাদা হয়ে গেল। শিলের সাইজ দেখে কেউ বেরোতে সাহস পায় নি। একজন বোধ হয় বেরিয়েছিল, প্রথম শিলের আঘাতেই তার ছাতা ছিঁড়ে ফুটো হয়ে গেল। ... ...
ওই পূর্ব পাকিস্তান থেকে রিফিউজি হয়ে এসে তিনকামরার দাদুর দস্তানায় মাথা গোঁজা পার্কসার্কাসের ভাড়াবাড়িতে বাইশজনের এজমালি সংসার। তাতে এই ভদ্রলোক প্রত্যেক ঋতুতে তোদের ফল খাওয়ায়নি? অন্তত: প্রত্যেক ফল একবার করে? আর তোরা ,অর্বাচীন অপোগন্ডের দল! ইংরেজি গ্রামারের শৌখিন, প্রতিদিন কবিতা পড়ার মত করে স্টেটস্ম্যানের এডিটোরিয়াল পড়া, ফেবার অ্যান্ড ফেবারের নিয়মিত বই কেনা, টি এস এলিয়ট ভক্ত এই ভদ্রলোককে নিয়ে মুচকি মুচকি হাসতিস্, পেটি বুর্জোয়া টেস্ট, তাই না? আসলে ওনার ভালোবাসার ক্ষমতা ছিল বিশাল। ভালবেসে ক্ষতি স্বীকার করতেও উনি কুন্ঠিত হতেন না। তোরা ভালবাসিস শুধু নিজেকে। ... ...
কলেজে পরীক্ষা হত, ঐ যেমন বললাম, বছরে দুবার মাত্র। মোটামুটি ক্লাস ফলো করলে আর পরীক্ষার আগে একমাস থেকে দেড়মাস ঘষলেই পরীক্ষার জন্য তৈরি হওয়া যেত। পরীক্ষা যে হেতু ছাত্রজীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, উত্তরণের একেকটা সিঁড়ির মতন, ফলে এই পরীক্ষার আগে অনেক ছাত্রই মনে মনে বা প্রকাশ্যে অনেক রকম সংস্কার মেনে চলে। ছোটখাটো বা বড়সড়। আমাদের ইয়ারের এক ছেলে প্রতি পরীক্ষায় একটা প্রায় ছিঁড়ে আসা জামাপ্যন্টের সেট পরে পরীক্ষা দিত। একবার বাড়ি থেকে আসার সময়ে সে সেই সেত নিয়ে আসতে ভুলে গেছিল বলে তাকে বাড়ির লোক কুরিয়ার করে সেই জামাপ্যান্ট পাঠিয়েছিল। সেটাই নাকি তার লাকি জামা প্যান্ট। সেটা না পরলে নাকি পরীক্ষা ভালো হয় না। ... ...
হেই লাইগ্যা তাইন, মানে ফকিরচন্দ্র একটা উঁচা টিলা দেইখ্যা তার উপর বাড়ি বানাইলেন। আটচালা বাড়ি। মাঝখানে ঊঠান। চাইরদিগে টানাবারান্দা আর তার গায়ে গায়ে ঘর। হেইডা করতে গিয়া বাঘ-সাপ-খাটাশ কিছু মাইর্যা কিছু তাড়াইয়া জঙ্গল সাফ করলেন। এইডা ছিল তাঁর প্রথম বছর। পরের বছর বাড়ির সামনে বিশাল পুষ্কুনি কাটাইলেন। লোকে কইতো দীঘি। সেই দীঘি পারাপার করা কঠিন ছিল। সারা বছ্ছর গভীর কালোজল। মাইয়ামাইনষে বুকে কলস লইয়া চেষ্টা করতো, কিন্তু পারাপার হইতো মা। সেই দীঘি আজও আছে। খালি তার মইধ্যে আইজ বাবর আলি মুন্সীর হাঁসেরা সাঁতার কাটে। যাউকগিয়া, তিনি উদ্যোগীপুরুষ ছিলেন। কয় বছরের মইধ্যে পাটের চাষ আর অন্য কৃষিকার্য কইর্যা সম্পত্তি বাড়াইলেন। আঠরবাড়িয়া-বাজিতপুর-ময়মনসিংহ সদরে বাড়ি করলেন। ... ...
ফর্ম ভর্তি হয়ে চলে এলে হস্টেলে কাজে নেমে পড়ত শিল্পীরা। আমিও এই শিল্পকর্মে নিযুক্ত থেকেছি অনেকদিন। শিল্পটা আর কিছুই না, একটা দেশলাই কাঠির ডগায় অল্প একটু তুলো লাগিয়ে, সেই তুলো জিওলিনে ভিজিয়ে সুক্ষ্ম হাতে যাওয়া এবং আসার তারিখদুটোকে মুছে দেওয়া। সবুজ কালি উঠে গিয়ে জায়গা দুটো ক্লোরিনের কল্যাণে একেবারে কোরা কাগজ হয়ে যেত। এইবার নিজেদের সবুজ কালিতে, সেই ভদ্রলোকের হাতের লেখার স্টাইলে নিজেদের পছন্দমত ডেট বসানো হত। সাধারণত পুজোর ছুটি পড়ত মহালয়ার দিন থেকে, থাকত ভাইফোঁটা পর্যন্ত। আমরা সেটাকে বাড়িয়ে নিতাম আগে পিছে এক থেকে দু সপ্তাহ মতন। মোটামুটি মহালয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই হস্টেল ফাঁকা হয়ে যেত, আবার ভর্তি হত ভাইফোঁটার পরের সোমবার। অনিচ্ছুক হবার কারুর উপায়ও ছিল না, কারণ মেজরিটি চলে যাবার ফলে মেস টেসও বন্ধ হয়ে যেত। বাইরে একদিন দু দিন খাওয়া যেত, কিন্তু দীর্ঘদিন বাইরে খাওয়া ছাত্রদের পক্ষে বেশ অসুবিধাজনক ছিল। ফলে, সেই বিশেষ দিনটিতে প্রায় দেড়শো দুশো ছাত্র একসাথে ট্রেনে চড়ত। ... ...
আরে, এখানেই শেষ নয়। বেয়াল্লিশের মন্বন্তরের সময় গান্ধীজি করলেন 'ভারত ছোড়ো' আন্দোলন। কিন্তু কমিউনিস্টরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক পিতৃভুমি(!) রক্ষার লড়াইয়ে মিত্রশক্তি অর্থাৎ বৃটিশের সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের ডাক দিল। বুভুক্ষু মানুষের জন্যে লঙ্গর পরিচালন তখন তাদের মুখ্য কর্মসূচী হয়ে দাঁড়াল। সলিল কুমার থাকতেন জ্যোতি সিনেমার কাছে ধর্মতলায় একটি মেসে। সেখানে বোর্ডারদের টাইমপাস রাজনৈতিক বিতর্কে কমিউনিস্টদের অবস্থানকে দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা বলে চড়া গলায় চেঁচিয়ে ছিলেন। কাছেই ছিল 'ইস্কাস্' বা 'ইন্দো-সোভিয়েত কালচারাল সোসইটি''র অফিস। কমরেড ভুপেশ তখন সেইখানেই থাকতেন। শুনে বল্লেন - ওনাকে এখানে ডেকে আন, বুঝিয়ে দেব। ... ...
ফার্স্ট ইয়ারের জনতার প্রথম আলাপচারিতায় অবশ্যম্ভাবী টপিক মূলত দুটো, কার কেমন র্যাগিং হল, আর কে কে কেমন প্রেম করে টরে, এবং তারই ল্যাজ ধরে কে প্রেমে কতদূর পর্যন্ত এগিয়েছে। বর্ষাকালেই প্রেম আর ভূতের গপ্পো ভালো জমে। আমাদের ইনটেক হয়েছিল আগস্ট মাসে, তখন বাংলায় শ্রাবণ মাস, তরাই ভেসে যাচ্ছে বৃষ্টিতে। প্রকৃতি এত সবুজ আর এত নীল আকাশ, আমরা প্রায় কেউই এর আগে দেখি নি। সন্ধ্যে বেলায় লোড শেডিং, ক্যাম্পাসের ব্যাকআপ জেনারেটর খারাপ, কাঁপা কাঁপা মোমবাতির আলোয় ঘিরে বসে জমতে থাকল আঠেরো ঊনিশ বছর বয়েসী একদল ছেলের আড্ডা। বিষয় প্রেম। ... ...
ঠাকুর্দা গগনচন্দ্র কথা রেখে ছিলেন। সারাজীবন নিষ্ঠাবান হিন্দু রইলেন। ওকালতিতে ও তালুকদারিতে সফল হলেও "পঞ্চাশোর্ধ্বেবনং ব্রজেৎ'' এই আপ্তবাক্য স্মরণ করে ছেলে সতীশচন্দ্রের হাতে সংসারের ভার সঁপে দিয়ে বৃন্দাবনে কুটির নির্মাণ করে রইলেন। দুবেলা মাধুকরীবৃত্তি করে ( গোদা বাংলায় "ভিক্ষে দাও গো ব্রজবাসী'' বলে) আহার করলেন। বারো বছর পরে দেশের বাড়িতে ফিরে এসে বাইরের দিকে একটা ঘর বানিয়ে শেষ জীবনটা কাটিয়ে দিলেন। ... ...
এই খালি আকাশই জাদু দেখায় নভেম্বরের মাঝ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এটা ক্যাম্পাসের উত্তর দিক। ঝকঝকে হেমন্তের ওয়েদারে আকাশের গায়ে ফুটে ওঠে হিমালয়, পুরো নীল রংয়ের। আর সেই হিমালয়ান রেঞ্জের মাথায় মুকুটের মত ঝকঝক করে তিনটে বরফে ঢাকা শৃঙ্গ : কাঞ্চনজঙ্ঘা, সান্দাকফু, ফালুট। লোকে পয়সা খরচা করে এদের দেখতে আসে কত দূর দূর থেকে, আমরা হস্টেলের ছাদে বসে, নিজের বেডে বসে দিনের পর দিন দেখেছি কাঞ্চনের রূপ, কখনও টকটকে লাল, কখনও আগুনের হল্কার রং, কখনও ধবধবে সাদা, কখনও বিষণ্ন নীল। তবে বছরে ঐ একটা সময়েই দেখা যেত, এক মাসের জন্য। তার পরেই কুয়াশায় ঢেকে যেত তরাই ডুয়ার্স। সে আরেক রূপ। ... ...
সুষমা মারা গেছেন। খবরটা পেয়ে উদাস হয়ে সিগ্রেট ধরাতেই গিন্নি বল্লেন - কি হয়েছেটা কি? আমি বল্লাম যে নিজের সময়ের আগে জন্মানো একজন এই দুনিয়াথেকে পাত্তাড়ি গোটালেন। তারপর এই সুষমাটি কে? আমার সঙ্গে কিসের সম্পর্ক? - এইসব বাঁধাগতের হাবিজাবি কথা উঠতেই আমি ঠাকুমার একটি ছড়া ঝাড়লাম,--- উনি আমার কি লাগেন? ঠাকুরবাড়ির গাই লাগেন। ... ...
জীবনে কোনওদিন কারুর গায়ে হাত তুলি নি, মারা বা মার খেতে দেখা কোনওটাই আমার পোষায় না। প্রায় সমবয়েসি কিছু ছেলেকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতেও আমার রুচিতে বেধেছে, সে দিক দিয়ে আমি সৌভাগ্যবান যে, আমাকে র্যাগ্ড হতে হয় নি। পরবর্তীকালেও সেই বিশেষ সময়গুলোতে আমি কলেজে বা নিজের রুমে স্বেচ্ছাবন্দী থাকতাম, এই ধরণের যৌনউল্লাস থেকে নিজেকে দূরেই রেখেছি। এবং এইসব করেছি বলে আমি নিজেকে খুব গুড বয় বা ভালো ছেলে বলে তুলে ধরতেও চাইছি না, কারণ এই রকম মানসিকতার আমি একাই ছিলাম না, আমি সৌভাগ্যবান যে পরবর্তীকালে আমাদের ইয়ারের বা সিনিয়র ইয়ারের অধিকাংশ ছেলেকেই আমি এই মানসিকতার দেখেছিলাম। এই ধরণের নোংরামো করে খুবই কম সংখ্যক কিছু ছেলে। ... ...
র্যাগিং নিয়ে অল্পবিস্তর চেঁচামেচি সব সময়েই হয়ে এসেছে, তবে সেই ১৯৯৫ সালে ব্যাপারটা খুব একটা উচ্চগ্রামে হত না। ফলে সিনিয়ররা, যারা মূলত র্যাগিং করত, তারা ব্যাপারটা বেশ খুল্লমখুল্লাই করত। প্রফেসররাও তাকিয়ে দেখতেন না, নাম-কা-ওয়াস্তে একটা অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটি বানিয়ে তাঁরা দায় সারতেন। সেই অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিতে থাকত কলেজের জি এস এবং আরও কিছু টপার গোত্রের ছেলে। ... ...
বাচ্চাটা যেখানে জন্মেছিলো সেই গভীর জঙ্গলে কোনো সেলফোনই কাজ করবেনা। কাজেই থাকলেও তাতে এসেমেস পাঠানো যেতনা। কিন্তু অন্যভাবে ভাবলেই তো হয়। শিশুমৃত্যুর হার নাকি খুব বেশি আমাদের দেশে? কই? এ বাচ্চাটা তো বেঁচেই আছে। হুররে, আমাদের নতুন একজন নাগরিক হলো। তাহলে এই খুশিতে আমরা কমনওয়েল্থ গেমসের হোস্ট হতে পারিনা? কিম্বা অলিম্পিক হলে তো আরো ভালো হয়। ... ...