সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের সাহায্যার্থে অর্থবানের টাকার থলির বাঁধন আলগা করার আইনি নির্দেশ সব আব্রাহাম পন্থী ধর্মের অন্তর্ভুক্ত। ইহুদি ধর্মে প্রথমে ফসলের, পরে আয়ের কিছু শতাংশ (দশ অবধি) অভাবী মানুষের সেবায় উৎসর্গ করার আদেশ পাওয়া যায় – এর নাম জেদেকাহ (আক্ষরিক অর্থে ন্যায়)। সবাই সমান উপার্জনে সক্ষম নন বলে অর্জিত ধন ভাগ করে নেওয়াটা ন্যায় বলে বিবেচিত হয়। প্রাচীন সমাজে আপামর জনসাধারণের জন্য সরকারি দাতব্য চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না -রাজা রাজড়ারা কর আদায় করে যুদ্ধু বাধাতেন। জনসেবায় কুয়ো খোঁড়া বা রাস্তা বানানোর কাহিনি ইতিহাসে পাওয়া যায় বটে তবে সেটি সবসময় প্রয়োজন অনুযায়ী সাধিত হত কিনা তা বিতর্কের বিষয়। অতএব দরিদ্র জনগণের ভরসা স্বচ্ছল জনগণ। এই দানের সদিচ্ছা স্বচ্ছল জনগণের ওপরে ছেড়ে না দিয়ে একটা ধর্মীয় আদেশ সেই দান ব্যবস্থাটিকে কায়েম করে। ... ...
এক দিন কথায় কথায় শ্যামলদা বললেন, ‘চল যাই, গদাধর কর্মকারের সঙ্গে দেখা করে আসি৷’ মদ আছে, মাতলামো নেই, চরিত্রটা বেশ মনে ধরেছিল শ্যামলদার৷ পর দিন সাতসকালে গদাদার দোকানে হাজির হলাম শ্যামলদার ইচ্ছার কথা জানাতে৷ দেখি, চায়ের কাপে পাতি লেবু নিংড়ে রস বের করে এক চুমুকে রস মুখে পুড়ে পাড়া কাঁপিয়ে বললেন, ‘বোম বোলে’৷ শ্যামলদা তাঁর সাক্ষাৎপ্রার্থী হতে চাওয়ার হেতু শুনে বললেন, ‘কিন্তু আমি তো মদ ছেড়ে দিয়েছি৷’ বললাম, সে কী! কবে ছাড়লেন! বললেন, ‘দিনক্ষণ কি মনে থাকে৷ স্বপ্নে বাবা (মানে ত্রিনাথ ঠাকুর) কইল, অনেক খাইসস, আর না৷ এ বার ছাড়৷ ব্যাস, ছাইড়া দিলাম৷ নতুন নেশা লেবুর রস। রোজ সকালে একটা।’ বললাম, ‘আপনি যে বলেছিলেন, ডাক্তার বলেছেন, মদ ছাড়লেই বিপদ৷’ সহাস্যে বললেন, ‘ডাক্তার কি বাবার থিকাও বড় পণ্ডিত?’ ... ...
মালিক! মুখে অনেকটা হাসি এনে বলল, মালিক করে কখনও! আমাদের দেড় মাসের টাকা কিছুতেই দেবে না। একটা গোটা মাস আর দিন পনেরো কাজ করেছিলাম। শেষে অনেক ঝামেলা ঠামেলা করে খাওয়া দাওয়ার খরচ সব কেটে রেখে দিল। অনেক কম দিয়েছিল। আমাদের কয়জনেরটা যোগ দিলে প্রায় এক লাখের উপর টাকা মেরে দিল। বাসের ভাড়াও তো অনেক। বাস ভাড়া নিল এক লাখ পঁচাশি হাজার। কোথা থেকে জোগাড় করব অতো টাকা! সবার টাকা মিলিয়েও তো অত টাকা নেই। বাড়িতে সব ফোন করলাম। আমার বৌ ধার করে টাকা পাঠালো। এই উত্তম মণ্ডলের বৌ কানেরটা বন্দক দিয়ে টাকা পাঠালো। মধুর বাড়ি থেকে সুদে টাকা ধার নিল। সব ঠিকাদারের একাউন্টে দিল। সে আমাদের টাকা দিল। আমার বৌকে অবশ্য সুদ দিতে হয়নি। এমনিই টাকা ধার পেয়েছিল। কপাল ভালো বলেন দিদি! ... ...
রাগ হচ্ছিল। ছোট ছোট গল্প বানানো আর এত বড় মিথ্যে বলা- দুটো আলাদা। এত বড় মিথ্যে! কে জানে ঋষভের কাছে যা বড় ব্যাপার, সারথির কাছে হয়তো নয়। হাজার হোক- আসার কোনো দায় তো ছিল না। অগ্রিম টাকাও সে দেয়নি- ট্রেনের টিকেটের কয়েকশো টাকা খরচ করেছিল মাত্র। ঋষভ নিজেও কোনো সত্যবাদী যুধিষ্ঠির নয়- আগে যাও বা ছিল- এখন হঠাৎ মিথ্যে বলতে শিখে গেছে। ... ...
গোলেনূর দাদীর বাড়ির পেছনে ঝোপ-জঙ্গল থেকে ঘুঘু পাখি থেমে থেমে ডেকে উঠছে। আর গোলেনূর দাদীর ছায়াঘেরা উঠোন একটু পরপর চঞ্চল হয়ে উঠছে রান্নার ছ্যাঁত ছ্যাঁত শব্দে। কড়াইয়ে এবার থেঁতলানো রসুন পড়লো। একটু নাড়তেই তা বাদামী হয়ে আসলো। এরপর অনেকটা পেঁয়াজ কুঁচি আর বুকচেরা কাঁচামরিচ যোগ হলো তাতে। গনগনে আঁচে তেতে থাকা কড়াইয়ে তা পড়তেই ঝাঁঝ ছড়িয়ে পড়লো উঠোনে। দমকে কেশে উঠলাম আমি। ... ...
সৌমেন বৈরাগীর গলায় উত্তেজনা। অসিত মাইতির কথার মাঝেই বলতে শুরু করে দিয়েছে। আমি ছিলাম দিদি। আমি… আমি… একদম ওই স্পটে গেছিলাম। আমি শুধু একলা না, এই সুন্দরবনের প্রায় একশ দেড়শ লোক তখন ওই বাগানের রাস্তায়। আমাদের আগেই ক’জন বেড় দিয়েছিল ওদের। আমি ছিলাম কয়েকজনের পিছনে। একজনে দেখতে পেয়ে গেছিল জঙ্গলের মধ্যে কি একটা বড় বস্তার মতো টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে ক্রেনের ড্রাইভার আর মালিকের লোক। দেখেই সেই লোকের সন্দেহ হয়। তাইতো চিৎকার দিয়ে ডাকে। আমরাও সেই ছুট মারি। ওখানে জমা হয়ে আমরাও বেড় দিয়ে দাঁড়াই। বের হতে দেইনি তক্ষুণি ওইখান থেকে। দেখি জানেন বস্তার মধ্যে একটা লাশ! জানেন সেইটা আমাদের এই বালিরই লোক। এই বিরাজনগরেরই। এই পাশের পাড়ারই মানুষ। অভিলাশা মণ্ডল। ওই মালিকের লোক ড্রাইভার অভিলাষার লাশ বস্তায় পুড়ে জঙ্গল দিয়ে গায়েব করে দিচ্ছিল। ... ...
ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলাম ধবধবে সাদা পোশাক ও টুপি পরা অল্পবয়সী এক ছেলে। বাক্স ধরতে এসেছে। আমি আর কথা বললাম না। এই ডিস্ট্রিবিউশন আমার জন্য, আমার গাড়ির জন্য খুব পরিশ্রমের। কয়েকটা স্টক পয়েন্ট ঠিক করা হয়। এরপর ক্লায়েন্টদের ঐ ঠিকানা শেয়ার করা হয় যাতে নিজেরা তুলে নেয়। আমার বাকি সহকর্মীদের ক্লায়েন্টরা অডি, বিএমডাব্লু, মার্সেডিজ চড়ে যায় ডোনেশন নিতে (ঐ আরেক মজার গল্প, পরে বলব)। আর আমার সদ্য এদেশে আসা অভাগা ক্লায়েন্টদের প্রায় কারো গাড়ি নেই। যাদের আছে, খুব মেজাজও আছে সঙ্গে। যাদের গাড়ি নেই, তাদের অনেক অনুনয় বিনয় করতে হয় গাড়ির সার্ভিস পেতে হলে। ... ...
কখনো কখনো আমার চিন্তাদের দেখতে পাই আমি। রোজ না। ওদের মেজাজ-মর্জি হলে তবেই। ব্যপারটা কোনো নিয়ম মেনে চলেনা। মেজাজ-মর্জি নিয়ম মেনে চলার ধার কখনোই ধারে নাকি? যখন দেখতে পাই তখন অদ্ভুত এক জগতে ঢুকে পড়তে হয়। আমি দেখি একজন চিন্তা ঠিক ধূপের ধোঁয়ার মত বইছে। অমনি নীলচে-গাঢ় সাদা রং। একটা পাতার আকৃতি নেয় যেন। পাতার কিনারার রেখা ছোটছোট অক্ষর দিয়ে আঁকা। কোন ভাষা তা পড়তে পারিনা আমি। কোনো চিন্তা সাইফার হুইলের মত । সমকেন্দ্রিক অনেকগুলো চাকতি। তামাটে চকচকে ধাতব রং। একেকটা চাকতিতে একেক রকম চিহ্ন আঁকা। কোনোটা সময়ের দিকে ঘোরে, কোনোটা তার উল্টোদিকে। ... ...
ইদিশ ভাষা অসম্ভব চাতুর্যের সঙ্গে এই শব্দটিকে মুক্তি দিয়েছে তার সঙ্কীর্ণতা থেকে। সেখানে মিশপখের ব্যুৎপত্তি ইহুদিয়ানার গণ্ডিকে অতিক্রম করে যায়- তাই মিশপখে আমাদের হিসেবে গুষ্ঠি! ইংরেজিতে ক্ল্যান। লক্ষ্যের ঐক্য থাকলে তার ভেতরে বন্ধু বর্গ পাড়া পড়শি যে কেউ ঢুকে পড়তে পারেন। বৃহত্তর পরিবার! যেমন ধরুন এই দুনিয়ার সব মোহন বাগান সমর্থক আমার আপন গুষ্ঠি, তারা সবাই আমার মিশপখে। গোরা ঘোষকে খুঁজে পেয়েছি নুরেমবেরগে, শিকাগোতে সিরাজুল ইসলামকে। আমরা সবাই এক ডালের পাখি, এক গোয়ালের গরু। একই দলের লোক। হাত ঘড়ির সময়টা আলাদা হলেও মনে পড়ে যায় খেলা শেষ হবার বিশ মিনিট আগে আমাদের সবুজ -মেরুন পতাকা নেমে যাবে (আমাদের কালে যেতো)। সেখানে সকলে এক মন এক প্রাণ। ... ...
জলধর বলে একদিন, সবই তো হচ্ছে জয়িদি, কিন্তু টীচারের কী হবে ! স্কুলে এখন এতোগুলো বাচ্চার জন্যে রান্না করতে হয় রোজ, তাছাড়া গেস্ট হাউজের ঘরগুলোও তো প্রায়ই ভর্তি থাকে আজকাল। বান্দোয়ান থেকে নিমাই নামের একজনকে নিয়ে এসেছে জলধর, সে রঘুনাথকে সাহায্য করে। তাছাড়াও লকি-শুকি। এমনকী প্রতুলবাবুও এগিয়ে আসেন সাহায্য করতে, কাজেই অসুবিধে হয় না। পুকুরপাড়ে লাউ কেন, এখন কুমড়ো আর বেগুনও হচ্ছে, গাছপালা যা লাগানো হয়েছিলো সবই বাড়ছে তরতর কোরে ! গেটের উল্টো দিকে লকিশুকিদের জমিতে তৈরি গোয়ালে এখন আরও কয়েকটা গোরু, এমনকী মোষও দুটো! সবই হচ্ছে জয়িদি, স্কুলের টীচারের কী হবে? ... ...
তার দৌড় ছিল খিদিরপুরের জাহাজঘাটা অবধি। একটা বড় বাক্স ভরে গেলেই একদিন নৌকায় করে হুগলি নদী পেরিয়ে পৌঁছে যাও কলিঙ্গা বাজার। খিদিরপুর। কলিন লেন, টার লেনে জাহাজে মাল চড়ানোর জন্য বসে আছে চিকনদারি কাজের ব্যবসাদার। মাল পাঠাবে নিউ অরলিন, চার্লেস্তান, সাভানা আর কীসব খটমটো নামের সব জায়গায়। আলেফ সেসব হদিশ জানত না তখন। কে বিক্রি করে কাকে তাও না। আলেফের চাচা মোকসাদ আলি আগে এই কাজ করত, তারপরে চলে গেল ওই দেশে। তার কাছেই শুনেছে সে নাকি বসেছে এখন নিউ ইয়র্কের ডকে। মাল পৌঁছালে চলে যায় তার কাছে কি তার মত আরও সব লোকজন যে যেখানে আছে। চাচা যে এরপর তাকেও সঙ্গে নিতে চাইবে তখনো খবর ছিল না আলেফের। ... ...
ঋষভের মনে হয়েছিল ঐদিন ও হেরে গিয়েছিল, আর রেশমী জিতেছিল। কারণ ঋষভের একটা গর্ব ছিল, যে দক্ষতা নিয়ে ও দুটো আলাদা আলাদা জগৎকে সামলায়- সেটা নিয়ে। ও যেভাবে কাছের মানুষের ছোট ছোট জিনিসগুলোর যত্ন নেয়, তা আর কেউ পারবে না- সেটা নিয়ে। গর্ব ছিল যেভাবে ঠান্ডা মাথায় বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলায় সেই নিয়ে। গর্বের জায়গাটা ভেঙে যাওয়া একটা চুড়ান্ত গ্লানি আর হতাশার বিষয়। রেশমী ঐ গর্বের জায়গাটাই ভেঙে দিল। ঋষভ একবার ভেবেছিল বলবে "ভালো তো অন্য কাউকে বাসিনি, সমস্ত লোভ লিপ্সা বাড়ির বাইরেই রেখে এসেছি", কিন্তু সেটা আর বলা হয়নি! ... ...
খোলা উনুনে এবার ঠাকুমা দুধের হাঁড়ি বসিয়েছে। তাতে মিশিয়ে দিয়েছে ঝোলাগুড়। দুধ ফুটছে। সেদ্ধ আতপ চালের মণ্ড ঠাকুমা খুব ভালভাবে মেখে নিলো আর তা থেকে বানালো ছোট ছোট লেচি। লেচিগুলোর মধ্যে গুঁজে দিলো অনেকটা করে পাটালি গুড়। হাতের তালুতে ঘুরিয়ে নাড়ুর মতো গোল হলেই লেচিগুলো দুধের হাঁড়িতে পড়তে শুরু করলো। ডালিম গাছের মাথায় দিনের শেষ রোদের আয়েশি আড্ডা জমেছে। তুলসীতলায় জ্বলে উঠেছে প্রদীপ। ঘটে সিঁদুর গোলায় আঁকা হয়েছে পুতুল। ... ...
উৎপল জানতো পলিথিনের ব্যাগে লাউয়ের বীজ থেকে চারা তৈরি করতে হয়, নিজের হাতে আগে করেনি কখনো। গোয়াল থেকে পচা গোবর নিয়ে এলো শুকি, মাটি আর বালির সাথে সেটা মিশিয়ে তৈরি হলো জমি, বীজ বপন করা হলো তাতে। জলধর বললো ব্যাগের নীচে ফুটো করে দাও দু-তিনটে, ওখান থেকে জল ঝরে যাবে। বীজ থেকে চারা, তারপর সুস্থ সবল চারাগুলোকে মাটিতে পুঁতলো ওরা। পুকুর-পাড়ের মাটি তো শুকিয়েই গিয়েছিলো এতদিনে, সেই মাটিকে একটু ঝুরঝুরে করে নেওয়া হলো, দেখতে দেখতে চারাগুলো বেড়ে উঠলো বেশ খানিকটা। এবার শুকির কাজ, চারাগুলোর গায়ে গায়ে কঞ্চি বেঁধে দেওয়া। চারা আর একটু বড়ো হলে কঞ্চির ওপর মাচা, মাস দুয়েকের মধ্যেই ফল ! ... ...
“কোথায় যান কাজ করতে? উত্তরে বললেন, লেবারি করতে যাই। সেকি এখানে নাকি! সে তো বিদেশ! রাজ্যের বর্ডার পেরিয়ে পেরিয়ে ওরা যখন পশ্চিমবঙ্গ থেকে দিল্লী মুম্বাই কেরালা ত্রিপুরা লেবার হয়ে চলে যায় সেই দুরের রাজ্যটা ওদের কথায় ‘বিদেশ’। “ - পশ্চিমবঙ্গের নানা জেলা থেকে দেশ বিদেশে লেবার হয়ে যাওয়া আসা আটকে পড়া বাঁচা মরার কথা নিয়েই শুরু হচ্ছে ধারাবাহিক ‘লেবারের বিদেশ যাত্রা’। ... ...
লোহিতসাগর বড় চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। ফিনিসিয় নাবিক, টায়ারের রাজা সকলের সাহায্যে রাজা সলোমনের বাণিজ্যের কী দাপট! শেবার তো সবই আছে পণ্য আছে, নৌকা আছে, পণ্যের বাজার আছে। কিন্তু এখন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে খোদ সলোমন। শেবার বণিকেরা দূর দূর দেশে আগের মত সহজে চলে যেতে পারছে না। না জলে, না স্থলে। তাদের মশলা তাদের রজন সুগন্ধি, নিজেদের দেশে নয়, দূর দূর দেশে এসব পণ্যের প্রবল চাহিদা! নিজেদের দেশে কে কিনবে এসব? তাদের স্বচ্ছন্দ বাণিজ্যে এক অদৃশ্য প্রাচীর তুলে দিয়েছেন সলোমন! দেশের সম্পদ সমৃদ্ধি বাড়বে কী করে যদি বাণিজ্য ঠিকমত না হয়? ... ...
ট্রেনের কামরা তখনও অন্ধকার৷ দর দর করে ঘামছেন কয়েকশো মানুষ৷ কিন্তু পিন ড্রপ সায়লেন্স৷ খিস্তি-খেউড়, ঠেলাঠেলি সব থেমে গিয়েছে৷ কামরা ভর্তি জনতা মন দিয়ে রেডিও-র স্থানীয় সংবাদ শুনছেন৷ সংবাদ পাঠক এ বার খবর পড়া থামিয়ে বলছেন, ‘এই কমপার্টমেন্টে, আপনাদের মধ্যে সরকারি কর্মচারী ক’জন? বড়জোর পাঁচ-দশ জন৷ বাকিরা! বাকিদের কী হবে? তাদের কী দোষ? তারাও কি সব সত্ মায়ের সন্তান?’ আরও বললেন, ‘তবে খেয়াল রাখবেন, সরকারি কর্মচারীর মাইনে বাড়লে দু’পয়সা আপনার পকেটেও আসবে৷ ওরা কিনলে তবে তো আপনি বেচবেন? এখন তো এ-কূল ও-কূল দু’কূল যাওয়ার জোগাড়৷ উনি (জ্যোতি বসু) বলে দিয়েছেন, দিতে পারব না৷ কেন্দ্র না দিলে দিতে পারব না৷ ... ...
জেট ল্যাগ হলে, বা জ্বরজারি হলে, মাঝরাতে অনেক সময় এরকম বাজে ভাবে ঘুম ভাঙে। এরকম বাজে একটা স্বপ্ন আসে, ঘাম দেয়। ঘুম ভাঙারপর মানুষ টের পায় না সে কোথায় আছে। ঋষভ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না যেখানে ওর ঘুম ভাঙল জায়গাটা কোথায়? ওর কলকাতার বাড়ি, না আমেরিকার বাড়ি, না কি হাম্পির হোটেল। হোটেলের খাট থেকে তো বাঁ দিক দিয়ে নামার কথা, এখানে তো মনে হচ্ছে উল্টোটা। স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবার পরেও যেন হাত-পা বাঁধা! ঋষভ শুনেছিল স্লিপ প্যারালাইসিস বলে একটা কিছু হয়- মানুষ ভাবে সে জেগে আছে- কিন্তু হাত-পা ঘুমন্ত মানুষের মত অচল! ... ...
সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেই উনচল্লিশটি বিধান বিস্তৃত হল। জেফ্রি আমাকে বোঝালেন সেটি খুবই সহজ ছিল। এই ধরো বিজলি/ইলেক্ট্রিসিটি। সুইচ টিপলে আলো বা অগ্নির উৎপাদন হল। প্রাথমিক উনচল্লিশটি বিধানে আগুন জ্বালানো মানা। তাই এটির বারণ। মোজেসের আমলে মোটর গাড়ি, বিজলি বাতি, হাওয়াই জাহাজ, স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, ফ্রিজ বা ওয়াশিং মেশিন ছিল না। সাবাথের রীতি নীতি অনুসারে বাতিল হল গাড়ি চালানো বা চড়া, বিজলি বাতি জ্বালানো বা নেভানো টেলিভিশন দেখা ফোন করা বা ধরা। বই পড়তে পারেন অবশ্যই। তবে আইপ্যাড বা স্মার্ট ফোনে নয়। তার সুইচ অন করাটা একটা কাজ! ... ...
সুদীপ্তরা খুশিঝোরা থেকে ফিরে যাওয়ার মাসখানেক পর একটা পত্রিকা এসে পৌঁছোয় জয়ির কাছে, পোস্ট অফিস মারফত। শিল্প-সাহিত্য-সমাজ বিষয়ক লিট্ল্ ম্যাগাজিন ঝলক, জয়ি কখনো সখনো এক-আধ কপি দেখে থাকতেও পারে, মনে করতে পারে না। এই সংখ্যা সুদীপ্ত রায়ের একটা প্রবন্ধ গোছের লেখা প্রকাশ করেছে, নাম মানুষের বর্জ্য গাছেদের ভোজ্য। চিত্রশিল্পী জয়মালিকা সেন পুরুলিয়ার এক প্রান্তে আদিবাসীদের শিল্প-সংস্কৃতি প্রসারের যে বিপুল কাজ করছেন তাঁর খুশিঝোরা সমিতির মাধ্যমে, তা যে শুধুমাত্র একজন ব্যতিক্রমী সৃষ্টিশীল মানুষের পক্ষেই সম্ভব এ কথা দৃঢ়তার সাথে বলেছে সুদীপ্ত। ... ...