ছেলেগুলো আসলে গণ্ডগোল করার মতলবেই এসেছিলো। বললো, চব্বিশ ঘন্টা সময় দিচ্ছি, তার মধ্যে না হলে আগুন জ্বালিয়ে দেবো। এখানকার এস-ডি-পি-ও কে চিনতাম আমি, ডি-এস-পি কেও চিনি, খবর দিলে হয়তো সাহায্য পেতাম, কিন্তু সে রাস্তায় যাইনি। সেদিন গেলাম না কলকাতায়। একজন মিস্ত্রীকে চিনতাম, যে আমাদের টয়লেট অনেকগুলো তৈরি করেছে। খোঁজ করে করে তাকে ধরলাম, সেপটিক চেম্বার সারাবার ব্যবস্থাটা হলো। বান্দোয়ানের হাসপাতালে গেলাম, কোনই ব্যবস্থা করা গেলো না। মিস্ত্রী বললো, কাউকে দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করিয়ে যদি ঢাকাঢুকি দিয়ে কোথাও রেখে দিতে পারি, ও পরের দিন সেগুলো সরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করে দেবে। তারপর কী করলাম জানেন? গোটা কয়েক ড্রাম কিনে বান্দোয়ান থেকে ফিরলাম। ... ...
রাত সাড়ে এগারোটা। প্রচণ্ড জোর আওয়াজ আসছে নিচ থেকে। বিল্ডিং-এর একেবারে নিচে লোহার মেইন গেট। ওই গেটে প্রচণ্ড ধাক্কা মারছে কারা যেন! ঝন ঝন - খট খট - ধড়াম ধড়াম। নানারকমের আওয়াজ হয়ে চলেছে গেটে। সঙ্গে চিৎকার। শোনা যাচ্ছে না ভালো মত। কী যেন বলে চলেছে উগ্র চিৎকারে। হলঘরের ভেতর আর কোনও কথার শব্দ নেই। যা শব্দ, এখন কেবল বিল্ডিং-এর নিচ থেকে। মেইন দরজার বাইরে কি কথাবার্তা চলছে - কান পেতে শুনছে ওরা। কথাগুলো ফার্সিতে। হুমকি দিয়ে চলেছে। বোঝা যাচ্ছে, ওরা সেই কোম্পানির মালিকপক্ষের লোক। ওদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। ওদের সেই ফার্সি কথাগুলো বাংলা করলে হয়, সব কটাকে মেরে ফেলব। পুঁতে দেব এখানেই। কেউ ফিরতে পারবে না দেশে। দরজা খোল…। কথাগুলো হয়ে চলেছে অনেকগুলো কন্ঠস্বরে। এবার সঙ্গে অন্য একটা আওয়াজ। বুকের ভেতরগুলো কেঁপে উঠলো। ফাঁকা ফায়ারিং হচ্ছে নীচে। কেউ নামছে না ওরা নিচে। গেট ভেতর থেকে লক করা। ওরা বুঝতে পারছে লক একবার খুলে দিলে আর উপায় নেই। আজ রাতেই মরতে হবে সবার। কেউ খোলেনি লক। কিন্তু ওই লোহার গেট কতক্ষণই বা বন্ধ করে রাখা যাবে? ভেঙে ফেলার চান্স আছে। বেরোতে তো হবেই কখনও না কখনও। বেরোলে যে কী হবে সেটা আর ভাবতে পারছে না ওরা। বাইরে চলল চিৎকার। ... ...
বড় অদ্ভুত এই সময়। একদিকে দ্রুত শিল্পের বিকাশ ঘটছে, দেশ বিদেশ থেকে মানুষ এসে জড়ো হচ্ছে আমেরিকায়। আবার পাশাপাশি কালোদের উপর নিপীড়ন বাড়ছে, এশিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে সব নিয়মকানুন। বাবনানের চিকনদার আলেফ আলি আর পাঁচকড়ি মণ্ডল, সিলেটের গোবিন্দ সারেং কি আক্রাম, বেদান্ত সোসাইটি গড়ে তুলতে আসা অভেদানন্দ - এমনি আরও অনেকের জীবন জড়িয়ে যাবে অনেক রঙের মানুষের দেশ আমেরিকার এক উথালপাথাল সময়ে, বুনবে নানা রঙের নকশিকাঁথা। ... ...
এই অগাস্টের পনেরো তারিখ আরো একটা দেশে একটা বিশেষ দিন। সে হলো চীন। এদিন ওখানে মস্ত উৎসব হবে। চাঁদের উৎসব। চাঁদের উদ্দেশ্যে নাচগান হবে। নানা রকম ভালো খাবার সাজিয়ে দেওয়া হবে। তার মধ্যে সবচেয়ে স্পেশ্যাল হলো 'মুনকেক'। এই উৎসবকে ওঁরা বলেন ‘মাঝ-শরতের চাঁদনী পরব’। ঠিক যে অগাস্ট মাসের পনেরো তারিখেই তা নয়। তবে আট নম্বর মাসের মাঝের দিনে ঠিকই। চীনের চাঁদ-সুর্য্যের ক্যালেন্ডার মেনে ঐ সময়ে যে পূর্ণিমা পড়ে সেইদিনেই চাঁদের পরব হবে। সেটা সেপ্টেম্বর মাসেও পড়তে পারে, কিম্বা অক্টোবরেও। কিন্তু এসব তারিখের কচকচানি নিয়ে কী হবে? আসল হলো এই উৎসবের পেছনে যে গল্পটা আছে সেটা । চীনে মাইথোলজির গল্প। বলছি। ... ...
"যে অংশটুকু বাকি ছিল এই কাহিনির, লিখে গেলাম। এই কাহিনিকে মরে যেতে দিও না। আলো হাতে, প্রেম বুকে নিয়ে, চোখে স্বপ্ন নিয়ে, হৃদয়ে সাহস নিয়ে আমরা সবসময় মানুষের পাশে পাশেই থেকেছি। তাপিতকে শান্ত কর। ভ্রান্তকে পথ দেখাও আলমিত্রা। তোমার কাছে এসে যেন লোকে শান্তি পায়। মাছি হয়ো না, মৌমাছি হও। তুমি স্বেচ্ছায় আমার পথ বেছে নিয়েছ। আমি চলে যাবার পর থেকেই শুরু হোক তোমার পথ চলা। শেবার রানির বাকি কাহিনি লিখে গেলাম। রানির মত হও। একাকী, সাহসী, ব্যতিক্রমী, নির্জন । " ... ...
হিব্রু পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ার উর শহরে বাস করতেন আব্রাম এবং সেরাই। গোরু ভেড়া চড়িয়ে কাটে নিঃসন্তান জীবন। স্থানীয় রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী আব্রাম বিশ্বাস করেন নানান দেব দেবতায়। একদিন ঈশ্বর প্রকট হলেন আব্রামের কাছে। বললেন ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। আমাকে মান্য করো। আব্রামকে নির্দেশ দিলেন- তোমার পৈত্রিক দেশ ত্যাগ করে চলো কানান অভিমুখে (আজকের ইজরায়েল, সিরিয়া – হাঁটা পথে বারো দিন) সেখানে বংশ প্রতিষ্ঠা করো। তোমার নাম হবে আব্রাহাম, বহু সন্তানের জনক।সেরাই হবে সারা (অভিজাত মহিলা / সুখী) । কানান তোমার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসভূমি। ... ...
গা ছমছম করছিল ওদের। যেখানে সেখানে মনে হচ্ছে তখন - এই সেই ডেরা নয়তো! মানুষ দেখলে মনে হচ্ছে - এরা সেই ইরানের চাবাহারের টেররিস্ট নয়তো! এই বুঝি তুলে নিয়ে চলে যাবে ওই হলঘর থেকে। আট মাসে কোম্পানির আসল মালিকের দেখা পেয়েছিল মাত্র দু’দিন। এসেছিল ওয়ার্কশপে। সাথে লোকলস্কর নিয়ে। তার নিজস্ব শিপ আছে। গুডস এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট করে। বাস আছে অনেকগুলো। ট্রান্সপোর্টের বিজনেস আছে। সঙ্গে গোল্ডের কোম্পানি। নানা দেশ থেকে প্রচুর লেবারকে নিয়ে গিয়ে পুষতে পারে সে। ওই ইরানের মালিকটির ক্ষমতা যে কতটা হতে পারে, কী কী করে ফেলতে পারে সে, পশ্চিমবঙ্গের চাল-ডাল-তেল-নুন-চিনির মাসকাবারি মালের হিসেব দেখে বড় হয়ে ওঠা ছেলেদের সে কথা ভেবেই পা-হাত ঠান্ডা হয়ে আসছিল। হাত দিয়ে তাও গলছিল সোনা। ... ...
উচ্চৈঃস্বরে হাসলেন বিবেকানন্দ। তাঁর স্বচ্ছ ধারালো চোখে কোন ছায়া ঘনাল না, কণ্ঠস্বর তেমনি ভাবগম্ভীর এবং দৃঢ়। আপনার শরীর নিয়ে আমার কোন কৌতূহল ছিল না, জানতে চেয়েছিলাম এই পোশাক আপনি কোথায় পেলেন। সারার চোখ এবার আনন্দে চকচক করে উঠল। আমি অনেক খুঁজে এই পোশাকের প্রতিটা উপকরণ সংগ্রহ করেছি। প্যারিস আর লন্ডনের বিভিন্ন মিউজিয়ামে গিয়ে হিন্দু নারীর পোশাক দেখেছি, রাজদরবারের নর্তকীর সাজ সজ্জার ছবি দেখেছি। তারপর এই পোশাকের কথা ভেবেছি। তবে এর প্রতিটা উপকরণ সংগ্রহ করতে আমাকে অনেক কসরত করতে হয়েছে। ইস্ট ইন্ডিয়া গিয়েছিলেন বুঝি? ... ...
ক্লাস ফোর-এ বসেই পাশের ঘর থেকে প্রতুলবাবুর কণ্ঠস্বর শোনা যায়। ক্লাস টূ আর ক্লাস থ্রী একসাথে বসিয়ে পড়াচ্ছেন তিনি। শোনা যায় ছেলেমেয়েদের সমবেত কণ্ঠস্বরও। তারা মুখস্থ করছে কিছু একটা। সম্ভবত ইংরিজির পাঠ। এ-এন-টি অ্যান্ট, অ্যান্ট মানে পিঁপড়ে, তারপরেই এ-জি-ই এজ, এজ মানে বয়স, এবং পরেরটাই এ-ডবল এস অ্যাস, অ্যাস মানে গাধা। ছেলেমেয়েরা কী শিখছে বোঝা যায় না, কিন্তু ছাত্রশিক্ষকের সমবেত পরিশ্রমকে শ্রদ্ধা না কোরে পারা যায় না ! নিলীন স্থির করে এবার মেদনীপুর ফিরে গিয়ে ও নিজে যে স্কুলে পড়েছিলো সেখানকার শিক্ষকদের সাথে একটু আলোচনা করবে। ... ...
মিনিট দশেক পর এক জেলে এসে হাজির হল, দা হাতে। ঋষভের খুব হতভম্ব লাগছিল- মাছের জায়গায় মানুষ দেখে জেলে কী ভাববে, আর কিছু জিজ্ঞেস করলে ঋষভই বা কী উত্তর দেবে। তবে সে কিছু জিজ্ঞেস করল না, ঋষভ শুধু চোখমুখ দিয়ে আকুতি করল। দা হাতে নিয়ে জেলে কিছুক্ষণ ঋষভকে দেখল। দা দেখে ঋষভের ভয় লাগছিল। জেলে আর ঋষভ একে অপরের ভাষা বিশেষ বুঝবে না, তাই প্রশ্নোত্তরের বিশেষ সুযোগ নেই। জেলে বিশেষ প্রশ্ন না করেই জাল ছাড়িয়ে দিল। তার জালে মাছের বদলে মানুষ ধরা পড়লে তারও বিশেষ লাভ নেই- ছাড়িয়ে দিলেই তার পক্ষে কাজের কাজ। ঋষভ অনাবৃত দেহে বুক হাত দিয়ে চেপে বেরিয়ে এল। সংকোচ হচ্ছিল। জেলে মুচকি হেসে তার পিঠের ঝোলা থেকে কী একটা বের করে ঋষভের গায়ে ছুঁড়ে দিল। ঋষভেরই শার্ট। ... ...
দেশভাগের পর দখলি জমিতে কলোনি স্থাপনের সময়ই স্কুলের জন্য চারটি জায়গা চিহ্নিত করা ছিল৷ নিজেদের ঘর-বাড়ি তৈরির পাশাপাশি এর-ওর কাছ থেকে পাওয়া দানের টাকায় চলে স্কুল তৈরির কাজ৷ ‘বহিরাগত’ শিবপ্রসাদ নাগ কলোনি আর স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের সেই লড়াইয়ের কথা মনে রাখতেন৷ পয়সার অভাবে কারও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে, মানতে পারতেন না৷ তবু ম্যানেজিং কমিটির সদস্যেরা, তাঁরা আবার কলোনিরই মানুষ, রোজগার বাড়াতে নিয়ম করলেন, মাইনে এবং পরীক্ষার ফি বকেয়া যাদের, তাদের মার্কশিট দেওয়া হবে না৷ চাপের মুখে হেড স্যার সে নিয়ম মানলেন৷ ফলে বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন দেখা গেল সব ক্লাসেই অর্ধেকের বেশিরভাগ ছাত্র অনুপস্থিত৷ ... ...
দুপুরে দুজনে বাবাবুদানগিরি ঘুরতে গেল। সেযুগে য়েমেনের আরবরাই একমাত্র কফি চাষ করত, ওরাই একমাত্র কফি রপ্তানি করত। ওখান থেকে পৃথিবীর কোনও প্রান্তে কফি বীজ নিয়ে আসা যেত না। ধরা পড়ে গেলে কঠিন শাস্তি। বাবা বুদান নামে এক সুফী সাধক মক্কা থেকে হজ করে ফেরার সময় লুকিয়ে কিছু কফির বীজ লুকিয়ে নিয়ে আসার ধৃষ্টতা করে আর এই পাহাড়ে পোঁতে। সেই থেকে ভারতবর্ষে প্রথম কফি চাষ শুরু। সারথি এইসব গল্প ঋষভকে বলছিল পাহাড়ের ঘাসে শুয়ে দূর-দূরান্তের উপত্যকাগুলো দেখাতে দেখাতে। ... ...
আমাদের আরো একটি প্রোগ্রাম হল “কম্যুনিটি হেল্থ প্রমোটার”। রেফিউজি হতে হবে। সিটিজেন হলেও রেফিউজি হিসেবে এ দেশে এসেছে এমন মহিলা ইংরেজী পড়তে লিখতে আর বলতে পারলে এই প্রোগ্রামে ঢোকা যায়। ১৮ বছর হতে হবে। ওদেরকে বেসিক ট্রেনিং দেওয়া হয় আর অনেক সাপোর্টিভ কাগজপত্র। মূল উদ্দেশ্য হল কম্যুনিটিকে স্বাস্থ্য সচেতনতার উপকারিতা নিয়ে বলা আর পরামর্শ দেওয়া। এই প্রোগ্রাম আমার হাত দিয়েই শুরু। কঠিন কাজ - কারণ, প্রথমত: ট্রেনিং এর জন্য উপযুক্ত স্পিকার খুঁজে বার করা, ওদের রেজ্যুমে জমা দিয়ে আ্যাপ্রুভ করা, এবং স্পিকাররা কোন সান্মানিক পাবে না। পুরোটাই স্বেচ্ছায় নিজের মূল্যবান সময় কম্যুনিটিকে উৎসর্গ করা। দ্বিতীয়ত: কারা কারা এই প্রোগ্রামের জন্য এলিজেবল। তৃতীয়ত: প্রত্যেক ভাষার একজনকে খুঁজে বের করে রাজী করানো- অনেক কাজ। যথারীতি কোন রোহিঙ্গা মহিলা পেলাম না। ... ...
নিঝুম রাতের বেলা হেঁটে হেঁটে ফেরা। বোম্বে বাজারে ফেরার রাস্তায় ওই অন্য রাজ্যে কাজে যাওয়া বাঙালি ছেলে দেখলে চুরি-ছিনতাই-গালাগাল ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। আর এই সোনার কারিগরদের আর একটা প্রাপ্তি প্রায় কমন। সামান্য কিছু ভুলভ্রান্তি বা এধার ওধার দেখলেই পিঠে পড়বে মার। অবাঙালি শেঠ মালিকদের হাতে বা লাঠিতে পেটানি। সঙ্গে অবাঙালি মুখের অন্য ভাষার গালাগাল। ওই টাইট রুটিনে সোনার কাজের কারিগরি শিখতে শিখতে মইনুদ্দিন হয়ে উঠল পাকা কারিগর। ওর হাতদুটো ওই সোনালি ধাতুতে কারুকার্য তুলতে হয়ে উঠল পারদর্শী। মইনুদ্দিনের পড়াশোনার বুদ্ধিটা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের স্ট্যাম্পমারা রেজাল্টের ছাপা কাগজে ছাপ না ফেললেও বারবার সে বুদ্ধি ছাপ ফেলেছে ওর লেবার জীবনে। ... ...
এই লাইনের মানে কী হলো? – জলধর বলে, ধারমুর শেখানো করম পুজো আমরা এখন সবাই মানি; মানি, তাই বাঁচি মাথা উঁচু করে। অনেক দিন আগে, তা প্রায় একশো বছর হবে, আমাদের পূর্ব পুরুষরা নিজেদের ভাষা প্রায় ভুলতে বসেছিলেন। তখন ইংরেজ আমল, আমাদেরই জঙ্গলের জমি কেটে খনি বানিয়ে ওরা আমাদের বাপ-দাদাদের তখন কুলি বানাচ্ছে, হাজার মাইল দূরে ওদের চা-বাগানে ধরে নিয়ে যাচ্ছে কুলির কাজ করার জন্যে, আর আমাদের বাপ-দাদারাও নিজেদের ভাষা ভুলে ওদের ভাষাই শেখার চেষ্টা করছেন। সেই সময়ে জন্ম নিলেন এক আশ্চর্য মানুষ যিনি অনুভব করলেন মাতৃভাষা মানুষের কাছে কত বড়ো সম্পদ। ... ...
এই কথায় ঝর্নার জলের মত স্রোতস্বিনী আমিনা থমকে দাঁড়াল যেন কোন জিন পরী ওকে হঠাৎ পাথরের মূর্তি বানিয়ে দিয়েছে, তার আর নড়াচড়ার তাকত নেই, যেন শুধু আমিনা না তার চারপাশের পৃথিবীটাই ওমনি চলতে চলতে দাঁড়িয়ে পড়েছে। ওইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অস্ফুটে বলল আমিনা যার অর্ধেক কথা নোনা বাতাস চুরি করে নিয়ে গেল, আর বাকি আধখানা সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে গেল। তারপর আমিনা ধীর গতিতে নিজের দুই হাতের পাঞ্জা এক করে নিজের মুখের উপর পান পাতার মত ছড়িয়ে দিল। পরক্ষণেই এক দমকা হাওয়ার মত কোথায় চলে গেল আমিনা, আলেফ আর দেখতে পেলো না। ... ...
সভা বসেছে। শেবার রানি এসেছে। অপরূপ মুক্তোর সাজ তার কালো দেহে। স্নাত, দীপ্র, গভীর। রাজা সলোমন সব সময়েই সুন্দর থাকেন। রানি অনুমতি নিয়ে শুরু করল তার প্রশ্নবাণ। শুরু হল শেবার রানির পরখপর্ব। এতদিন ধরে সে অপেক্ষা করেছে এই সময়ের জন্যেই। ধাঁধাঁ, হেঁয়ালি বা রানির যাচাই সবই জীবনকে ঘিরে। সম্পর্ককে ঘিরে। যাপন, বিবাহ, প্রেম। ঠিক রাজনৈতিক ছিল না সেই সব প্রশ্ন। বা অর্থনৈতিক। জীবনকে ঘিরেই ছিল তার প্রশ্ন ও প্রত্যাশা। ... ...
দানিশ বারবার বলেন, জীবন বিপন্ন করে তিনি ছবি তুলতে চান না। এমনকি আহত হওয়ার বিনিময়েও একটা ভালো ছবি তুলতে চান না। বলেন, একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাংবাদিক জানেন কীভাবে কনফ্লিক্ট জোন কভার করতে হয় নিজেকে বাঁচিয়ে। বন্দুক তাক করা উগ্র হিন্দুত্ববাদীর সামনে অনভিজ্ঞ সাংবাদিকরা ভুল করে চলে গেলে তিনি তাদের সরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন, অসাধারণ এবং আর এস এস সন্ত্রাসের মুখ হয়ে ওঠা সেই ছবিটি তোলার থেকেও অক্ষত থাকা ও রাখাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বলেছেন, তিনি সবসময় নিজেকে ভয় পেতে শেখান, নইলে কখন এমন কিছু করে ফেলবেন যাতে শারীরীক ক্ষতি হবে। বলেছেন, তিনি যে অতিমানব নন, এটা নিজেকে ভুলতে দেননি কোনদিন। তাহলে কি ধরে নেব যে গড়পড়তা স্বার্থপর সংসারী মানুষের থেকে দানিশ সিদ্দিকি আলাদা কেউ নন? কিন্তু তাহলে দানিশের কর্মজীবনের প্রধান অ্যাসাইনমেন্টগুলো হিসেবে আঁটানো যাবেনা, যার মধ্যে মোসুলের যুদ্ধ, রোহিঙ্গা ক্রাইসিস, দিল্লির মব লিঞ্চিং, শ্রীলংকার বিস্ফোরণ এবং আফগানিস্তানের তালিবান আর আফগান সেনা সংঘর্ষ আছে। ... ...
ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে আছে উৎপল, আর কোদাল হাতে স্কুলের আটটা বাচ্চা লেগে যায় মাটি কাটার কাজে। আটটার মধ্যে তিনটে নেহাৎই দুবলা, ওদের দিয়ে মাটি কাটানো যাবে না। ওরা শুধু কাটা মাটি সরিয়ে সরিয়ে রাখবে। আর মেয়ে তিনটে পুকুর থেকে জল নিয়ে এসে মাঝে মাঝে মাটিতে ঢেলে মাটি নরম রাখবে। ঘন্টায় ঘন্টায় ছুটি, তখন প্রাণ ভরে জল খাওয়া, সঙ্গে মুড়কি আর বাতাসা। তিন ঘন্টার পর গরম ফেনা ভাত আর আলুভাতে। তারপর আবার কাজ, কিন্তু ঘন্টায় ঘন্টায় জল খাওয়ার ছুটিটা থাকেই। দুপুরে ভাতের সাথে ডাল থাকে, সঙ্গে একটা সবজিও। সন্ধ্যের আগেই কাজ শেষ। চানটান সেরে জামাকাপড় বদলিয়ে বাচ্চারা বসে ডাইনিং হলের মেঝেতে খেজুর পাতার চাটাই বিছিয়ে। পাশে একটা চেয়ার পেতে বসে জয়ি, এখন লেখাপড়ার সময়। লেখাপড়া কিন্তু এগোয় না বেশি দূর, ক্লান্ত বাচ্চারা ঢুলতে থাকে একটু পরেই। ... ...
ভোগান্তি হয়েছিল অবিদুল্লাহেরও। ওর চোখ টেনে কী যে দেখেছে, জামার উপর চক দিয়ে দাগ টেনে দিল। ওকে টেনে একদিকে নিয়ে গেল আরও কীসব পরীক্ষা করতে। এইসব প্রশ্ন, তত্ত্বতালাশ পেরিয়ে জার্মান কসাই, ইহুদি দর্জি, জাপানি সুসি কারিগর, নরওয়ের চাষি, পোলান্ডের সিগার কারখানার কর্মী সবাই নেমে গেল। তারা কেউ যাবে পেনসেলভেনিয়া, কেউ মিশিগান, কারো রাস্তা ভার্জিনিয়ার দিকে। রয়ে গেল শুধু বারো জন চিকনের ব্যাপারি। আর দুজন চিনা। চিনাদের ব্যাপারটা আরও গোলমেলে, চাইনিজ এক্সক্লুসান অ্যাক্টে ওদের এই দেশে ঢোকাই এখন মুশকিল। তার উপর ওদের কথাও কেউ সহজে বুঝতে পারে না। ... ...