বাঁকুড়া, বরিশাল হোক আর বার্লিন কি বের্ণ হোক, ভাষা বা শব্দ ব্যবহারের পবিত্রতা রক্ষার দায়িত্ব সেই জনগণের ওপরে বর্তায় না। অস্ট্রিয়ান পাবকে বলে বাইসল। জার্মান তাকে চেনে সম্পূর্ণ অন্য নামে ( Kneipe) । আজকের ফরাসি ভাষায় উইক এন্ড বা বিজনেস অনায়াসে ঢুকে পড়েছে (বিশ বছর আগে একজন ফরাসি সি ই ও তাঁর বক্তৃতায় বিজনেস শব্দ ব্যবহার করায় ক্রুদ্ধ রাষ্ট্রপতি শাক শিরাক দ্রুতবেগে সে সভাস্থল পরিত্যাগ করেন)। জর্জ বারনারড শ বলেছিলেন ব্রিটেন এবং আমেরিকা এই দুটি দেশ একই ভাষার দ্বারা বিভক্ত (টু কান্ট্রিস ডিভাইডেড বাই এ কমন ল্যাঙ্গুয়েজ) । এই বিভাজনের ব্যাখ্যা আমেরিকার অভিবাসনের ইতিহাসে নিহিত। ১৫২০ সালে মে ফ্লাওয়ার জাহাজ যাদের নিয়ে আমেরিকার পূর্ব তটে পৌঁছুল, তাঁরা সবাই ইটন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা না করে থাকলেও মোটামুটি ইংরেজি বলতেন। পরের কয়েকশ বছর ইউরোপ থেকে যারা এলেন তাঁদের মধ্যে কেবল আইরিশদের মাতৃভাষা ছিল ইংরেজি (কেন যে আমেরিকার কথিত ইংরেজি আইরিশ উচ্চারণের উপর আধারিত হল জানি না। এঁদের বৃহত্তর দলটি আসতে শুরু করেন দেরীতে, আলু দুর্ভিক্ষের পরে, উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি)। ... ...
ঘটনার এমন উল্টো টানে আব্দুল আর দামোদর সমান হতবাক। আব্দুলের জন্য ব্যাপারটা আরও মর্মান্তিক। পুলিশে ধরে নিয়ে যাচ্ছে শুনে এলা ছুটতে ছুটতে হাজির। বাড়ি ভাড়া মার যাওয়ার ভয়ে নয়, আব্দুলের এই বিপদ যে তারও। ক’দিনেই এমন জমে গেছিল দু’জনের। এমন তুখোড় মেয়েটা এই ঘটনায় একদম বোবা হয়ে গেছে, চোখ ছলছল করে দাঁড়িয়ে আছে। জালে ঘেরা গাড়ির বাইরে দাঁড়ানো এলাকে আবদুল সান্ত্বনা দিতে ছাড়েনি, কিন্তু তাতে কি হয়? একবার যদি আব্দুলকে আবার ব্রিটিশ শিপে চড়িয়ে দেয়, এই দেশের কোনো বন্দরে এসে লাগতে লাগতে বছর ঘুরে যাবে। অন্য কোনো দেশেও তো পাঠাতে পারে। সেটা এলাও বোঝে, আব্দুলও জানে। জানলেও মন কি মানে? সেই থেকে এক কথা আব্দুলের মুখে, গোবিন্দদা একটা পথ তো বাতলাও। আমাকে যে বেথেলহেমে ফিরতেই হবে। ... ...
বিক্রমাদিত্য আর বেতালের গল্প কত পুরোনো ভাবো। ভারতীয় গল্প-সংস্কৃতি পুরোই হবেনা এই সিরিজটা বাদ দিলে। আমি খুঁজতে খুঁজতে, ধুলো, মাকড়্সার জাল হাতড়ে অনে-এ-এক দূরের এক দেশের উপকথার মধ্যে একটা গল্প খুঁজে পেলাম যার সাথে এই বিক্রম-বেতালের (পুরনো গান মনে আছে? বিক্রম বিক্রম বিক্রম, বেতাল তাল তাল?) বেবাক মিল! দেশটার নাম জর্জিয়া। হ্যাঁ, পূর্ব ইউরোপের সেই ককেশাস পাহাড় আর কালো সমুদ্দুরের দেশ। গল্পটা হলো 'রাজা আর আপেলের গল্প'। ... ...
গ্রীষ্মের রাতে নদীর দিক থেকে হাওয়া বাতাস খেলে যায় শহরের বুকে। মল থেকে বেরিয়ে তিনবারের চেষ্টায় সিগারেট ধরালো পঙ্কজ। পার্কিংএর দিকে হাঁটল। গাড়ির দরজা খুলতে যাবে, যেন হাওয়া ফুঁড়ে বেরিয়ে এল এক মূর্তি- ফাটা জুতো, মলিন জামা প্যান্ট, গোঁফ দাড়ি, লম্বা চুল- মুখ থেকে ভকভক করে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে, একহাত পঙ্কজের দিকে এগিয়ে দিয়েছে, অন্যহাত পিছনে। পঙ্কজের হৃদয়ের বরফ আতঙ্কের উত্তাপে গলতে শুরু করেই আবার জমাট বেঁধে গেল। পার্কিং লটের আলোয় লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে তার মনে হল, যে নিরানন্দ জগত থেকে আগত একমাত্র মানুষ মনে হচ্ছিল নিজেকে , এ লোক সেই জগতেরই কেউ। এই আলোয়, এই নিয়ন সাইনের নিচে যাকে মানায় না। পঙ্কজের সামনে দাঁড়িয়ে হাত পাতল সেই লোক। ... ...
২০২১ সালের গ্রীষ্মে স্যান হুয়ানের গভর্নর রিকার্ডো রোসেলোর কিছু চ্যাট মেসেজ কেন্দ্র করে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ফাঁস হওয়া ঐ মেসেজগুলি রোসেলো এবং তাঁর ঘনিষ্ট বৃত্তের মধ্যে বিনিময় হয়েছিলো। সেগুলো থেকে জানা যাচ্ছে হারিকেন মারিয়ায় যাঁদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাঁদের প্রতি রোসেলো অ্যান্ড কোম্পানি খুবই উদাসীন মনোভাব পোষণ করে। এছাড়াও ঐ মেসেজগুলিতে নানা আপত্তিকর মন্তব্য এবং দূর্নীতির স্বীকারোক্তি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি নিয়ে অসন্তুষ্ট মানুষ এর পরেই রাস্তায় নেমে আসে। জালিয়াতির অভিযোগে রোসেলোর দুজন শীর্ষ আমলা গ্রেপ্তার হওয়ার পর, জুন মাস নাগাদ, ব্যাপার খুবই ঘোরালো হয়ে ওঠে। পুলিশ প্রতিবাদকারীদের হঠাতে গিয়ে বলপ্রয়োগ করে, ফলে আরো বেশি প্রতিবাদ, পুরো দ্বীপ জুড়ে অন্দোলন ইত্যাদি হয়। বিদেশ থেকে নামকরা কয়েকজন শিল্পী আসেন প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিতে (তাঁদের একজন রিকি মার্টিন )। ... ...
লুলু হোয়াইট সাদা হয়েও সাদা নয়, অক্টারুন। সাত ভাগ দুধে, এক চামচ কফি মেশানো সৌন্দর্য নিয়ে লুলুর দাম আকাশছোঁয়া। তার মেহগনি হল বিখ্যাত অক্টারুন আর ক্রেওল সুন্দরীদের জন্য। তাই না এমন চকমিলান জায়গার পত্তন করতে পেরেছে! খিলানওয়ালা চারতলা প্রাসাদ। সেখানে পনেরো-বিশখানা ঘর আছে অতিথি আপ্যায়নের। কোনো ঘর পারস্যের কার্পেটে মোড়া, কোথাও জাপানের ছবিতে চিত্রবিচিত্র, আবার কোনো ঘর খোদ প্যারিস থেকে আনা আসবাবে ঠাট বাড়িয়েছে। প্রতিটা ঘরের সঙ্গে একেকটা গা ধোওয়ার জায়গা – যেখানে জলকেলি করতে করতে নারীসঙ্গের সুখ পেতেও কোনো অসুবিধা নেই। শ্বেত মার্বেলের প্রশস্ত সিঁড়ির দু’ ধারে পুষ্পকুঞ্জ – যেখানে অতিথির অপেক্ষায় লুলু হোয়াইটের অক্টারুনদের নিজস্ব পরিচারিকারা বসে থাকে। যাদের অক্টারুন বা ক্রেওল সুন্দরী-অবধি পৌঁছানোর হিম্মত নেই, তারা পরিচারিকাদের সঙ্গেই বিশ্রম্ভালাপ করে যায় খানিক। ... ...
চকচক করে উঠেছিল আমিনার চোখ, আশা আর আনন্দে চোখের কোলে টলটল করছিল দুটো মুক্তোদানা। ডান হাতে খামচে ধরেছিল মনিরুদ্দির পেটি। একটা খপর এনে দাও আমায়। আজ থে তুমি আমার ভাইজান হলে, আলেফের খপর তোমাকে আনতেই হবে ফের। কি কুক্ষণে মনিরুদ্দি সেদিন ব্যাপারি বুদ্ধি খেলিয়ে ভাইজান হবার সুবাদে কম পয়সায় মাল খরিদ করেছিল। তখন কি জানত ওয়াহিদ বক্স কোনো খবর আনতে পারবে না। মোদ্দা কথা হল, ওয়াহিদ নিজে তো যায়নি, এরকম বছর বছর লোক যায়। তার মধ্যে থাকবে কোনো এক আলেফ। কিন্তু যদি দশজনা যায়, ফেরে মুরুব্বি গোছের দু’জন। ক’মাস বাদে তারা আবার সঙ্গীসাথী জুটিয়ে পেটি নিয়ে সফরে রওয়ানা হয়ে যায়। আর সবার যাওয়ার জায়গা – সে-ও কি এক? বুঝিয়েছিল ওয়াহিদ বক্স। কেউ যায় লন্ডন, জোহানেসবার্গ, আবার এক দল যাবে নিউ ইয়র্ক, নিউ অরলিন, ভ্যাঙ্কুভার – এমনই হরেক বন্দর। কে আলেফ আলি, সে কোন দিকে গেছে, কে জানবে তার ঠিকানা? ... ...
হাজার বছর ধরে ইহুদি পেটানো, পোড়ানো এবং খ্যাদানো এক জনপ্রিয় ক্রীড়ায় পরিণত হয়েছে। যিশু খ্রিস্টকে ক্রুসে চড়ানোর অপরাধের কলঙ্ক ইহুদিদের মাথায় লাগানো রইল। তার ওপরে ইউরোপের গ্রামে গঞ্জে পাড়ায় পাড়ায় কেউ রটিয়ে দিলো ইহুদিরা খ্রিস্টান শিশুর রক্ত দিয়ে তাদের পুজো আচ্চা করছে (ব্লাড লাইবেল) অথবা তারাই ভয়ঙ্কর প্লেগের (ব্ল্যাক ডেথ) কারণ। আম জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠি সোঁটা নিয়ে ইহুদি হত্যায় লেগে গেলো। খুন কা বদলা খুন। নাৎসিরা কোনমতেই এই খেলাটির পেটেন্ট দাবি করতে পারে না। বরং ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার মত আরেকটি নতুন ক্রীড়া উদ্ভাবনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ইংল্যান্ডের প্রাপ্য। জাতি ধর্ম দিয়ে চিহ্নিত করে কি ভাবে একটা গোটা টিমকে রেড কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করা যায় সে খেলা দেখাল ইংরেজ। সিনাগগ বন্ধ হয়েছে, আত্ম পরিচিতির জন্য ইহুদিদের বিশেষ ব্যাজ পরা আবশ্যক (সাড়ে ছশো বছর বাদে নাৎসিরা এঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করবে)। ... ...
টিভিতে সিরিয়াল দেখা বন্ধ রেখে এক দুই তিন করে ছায়াপিণ্ডরা সব পাশের বাড়ির ছাদে উঠে আসছিল। অন্ধকারে লাল বিন্দু দেখতে পেল বিপ্লব- সিগারেট ধরিয়ে মজা দেখছে সুধীন। এই সময় বাড়ির সামনে বলাইএর রিক্সা এসে দাঁড়িয়েছিল।মিঠুকে নামিয়ে দিয়ে ফিরে যাচ্ছিল বলাই। টেনে টেনে প্যাডেল করছিল। কমজোরি আলোয় এ'পাড়ার প্যাঁচালো গলি আবার তার সমস্ত রহস্যময় বাঁক নিয়ে উপস্থিত। অসম্পূর্ণ এক্কাগাড়ির মত লাগছিল বলাইএর রিক্সাকে। ভৌ ভৌ করল কালু। রিক্সার পিছনে দৌড়োলো খানিকক্ষণ। ছন্দা দ্রুত নামছিল সিঁড়ি বেয়ে - দরজা খুলে দেবে। বিপ্লব ওর পিছনে। মিঠু ঘরে ঢুকে ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলল সোফায়- সকালের পারফিউমের গন্ধ উবে গিয়ে অদ্ভূত গন্ধ বেরোচ্ছে গা থেকে- অচেনা আর অস্বস্তিকর। ... ...
এখন সূর্য পাটে বসছিল। স্মিতা বিকেল থেকেই পুকুরের পাশে বসে আছে। বাবলুদারা এখনও ফেরে নি। একটা মানুষের পুড়ে যেতে কতক্ষণ লাগে স্মিতা জানে না। অস্থিরতা কমাতে সে জলের কাছে বসেছিল। রোদ কমে আসায় জলের রঙ ঘন সবুজ এখন।পাখির ছানা টুই টুই টুই টুই করে ডাকছিল- সকালের সে কী না কে বলবে? ভাঙাচোরা ইঁটের গাঁথনির ওপর কালো পিঁপড়ের সারি- স্মিতা যেখানে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে এ যাত্রার শুরু বা শেষ কিছুই দেখা যায় না, যেন এক অনন্ত ক্যারাভ্যান। স্মিতার পায়ের কাছে দু চারটে ফাটা নিমফল- পিঁপড়ের সারি নিমফলের পাশ কাটাতে সামান্য বেঁকে যাচ্ছিল যেখানে, স্মিতার চটি পরা পায়ের পাতা তার খুব কাছে। স্মিতা ওর পায়ের পাতা পিঁপড়ের লাইনের একদম ওপরে নিয়ে আসছিল, সরিয়ে নিচ্ছিল পর মুহূর্তে- অনিত্যতাকে স্পর্শ করতে চাইছিল এইভাবে, সম্ভবত। ... ...
সন্ন্যাসী এক পা এগিয়ে এসে তার কাঁধে হাত রাখলেন। যেন কি অপরিসীম শক্তি তার শরীরে প্রবেশ করল। নিজেকে গুটিয়ে রেখো না। তোমার গায়ের যে কালো রঙের চামড়াটা, সেটা ঠিক আমার পরনের কমলা রঙের পোশাকের মত। আবরণ মাত্র। আসল লোকটা ভিতরে আছে – সেখানে আমাদের সবার যিনি ঈশ্বর, তিনি কোন ফারাক রাখেননি ব্রাদার। সাহস অবলম্বন কর, সদর্পে বল আমি মানুষ। পড়ে থাকা ঝাড়ুটা তুলে হাতে ধরিয়ে দিলেন। তুমি যে কাজই কর না কেন, সব কাজের মধ্যেই ঈশ্বর আছেন। অন্য সব কোট-প্যান্ট পরা লোকের মতই, তোমারও আমার সামনে এসে কথা বলার সমান অধিকার। ডিওয়েনের সেদিন মনে হয়েছিল, যেন শুধু তার জন্যে একটা মন্ত্র উচ্চারণ করলেন সন্ন্যাসী। উনি চলে যাচ্ছিলেন, কি মনে করে আবার ফেরত এলেন। স্মিত হেসে নিজের মাথার কমলা রঙের কাপড়টা খুলে তার হাতে দিলেন, এটা তোমার কাছে রাখো ভাই। ... ...
টেবিল টেনিস ভারতবর্ষের অন্যতম জনপ্রিয় ইন্ডোর স্পোর্টস। মোটামুটি একটু জায়গা আর মাথার উপর ছাদ থাকলেই, ক্লাব, অফিস, কলেজ, স্কুল, রিক্রিয়েশন রুম এমন কি পাড়ার ফাঁকা জায়গাতেও একটা টেবিল টেনিস বোর্ড গজিয়ে যায়। বাংলা, কেরালা, তামিল নাড়ু বা মহারাষ্ট্র হলে অবশ্য ক্যারম সে জায়গা নিয়ে নেবে। কিন্তু টেবিল টেনিসের জন্য রাজ্যের নামের দরকার পড়ে না। তবুও বিশ্বের দরবারে টেবিল টেনিসে ভারতের সেরকম সাফল্য নেই বললেই চলে। ... ...
তীরে এসে তো আর প্রেস্টিজ ডোবাতে পারিনা, তাই মুখে হিন্দি শেখা ডাকাবুকো অভিনেতার মত হাঁ হাঁ কিঁউ নেহি টাইপের ভাব করে ভেসে পড়তে হলো। এই অঞ্চলটা প্রায় একইরকম তবে বৈচিত্র্য আরো বেশি। মিনিট কুড়ি ধরে সেখানেও কুস্তি করে তারপর একসময় মুক্তি পেলাম। বীরের মত জল থেকে উঠে এলাম, মুখের ভাবটা আরো ঘন্টা দুই জলে থাকতে পারলেই ভালো হতো। শুনলাম ৫০-৫৫ বছরের ঐ ভদ্রলোক, যিনি সপরিবারে স্নরকেলিং করতে এসেছেন, তিনি অগাধ সমুদ্রে সাঁতার দিয়ে একটা কচ্ছপের পেছনে ধাওয়া করেছিলেন। তারপর এতদূরে চলে যান (এবং কচ্ছপটা এতই দ্রুতগামী) যে তাঁর ভয় হতে থাকে ফিরতে পারবেন না। অতঃপর বুদ্ধিমানের মত ফিরে এসেছেন। বুঝলাম যে লড়াইটা আদপেই সংস্কৃত আর হিন্দির না, বস্তুত তারা হলো "অলসো র্যান" ক্যাটাগরি। আসল হিরো হলো হলিউড, সেখানে সবই সম্ভব। কচ্ছপটা জোর বেঁচে গেছে। ... ...
ফুটপাথ থেকে নেমে রাস্তায় পা রেখেছে দু সেকন্ড, রাস্তা পেরোবে; ডান দিক থেকে গোঁ গোঁ করে ছুটে এল কালো গাড়ি , প্রচন্ড স্পীডে টার্নিং নিতে কাত হয়ে গেল একদিকে, বিকট শব্দে ধাক্কা খেলো ফুটপাথে তারপর উল্টে গেল। চোখের নিমেষে রেলিংএ হাত রেখে রাস্তা থেকে পা তুলে নিয়েছিল প্রফুল্ল, মরচে ধরা রেলিংএ হাতের তালু রেখে শরীরের ভার ট্রান্সফার করেছিল চকিতে ,ঝাঁপ খেয়ে ফিরে এসেছিল ফুটপাথে। শরীর কাঁপছিল প্রফুল্লর- নাথু, কপিল ছুটে এসেছিল। গাড়ির দরজা ভেঙে গিয়ে ড্রাইভারের সীট থেকে পিছলে বেরিয়ে এসেছিল মৃত আরোহী। বিচূর্ণ শকট , থ্যাঁৎলানো মাথা , রক্তে ভেজা ফুটপাথ দেখতে ভীড় জমছিল এই সকালেই। "পাঁড় মাতাল শালা। মেয়েছেলে নিয়ে ফূর্তিতে বেরিয়েছিল" - দাঁতন করতে করতে কে যেন বলল। ... ...
এই বক্তিয়াররা আরেকটি কাজ খুঁজে পেলেন। দেখা গেলো রাজা বা আমলাদের সামনে সকল নাগরিক নিজেদের কেস ঠিক ভাবে উপস্থিত করতে পারছেন না। বাদী বা বিবাদী তো আর্ট অফ পাবলিক স্পিকিং শেখেন নি। আন্তিফন নামক গরগিয়াসের এক চেলা পরামর্শ দিলেন দুই বিবদমান পক্ষের প্রয়োজন এমন একজন মানুষের যিনি মোটামুটি লেখাপড়া জানেন এবং আদালতে দাঁড়িয়ে কোন পক্ষের যথাযথ বয়ান দিতে পারেন।এই মানুষটি হবেন একজন নিঃস্বার্থ বন্ধু মাত্র যাঁদের কাজ অশিক্ষিত বাদী বিবাদীদের সহায়তা করা। অন্য অর্থে বলা যেতে পারে ইতস্তত ভ্রমণরত বাগ্মীরা একটা কাজের কাজ খুঁজে পেলেন! গ্রিকরা সেটি মেনে নিলেন কিন্তু সাব্যস্ত হলো মামলায় এই সহায়তার জন্য কোন পারিশ্রমিক দেওয়া বা নেওয়া চলবে না। বন্ধু রূপে যদি তাঁরা বিচারকের সামনে অবতীর্ণ হন, টাকা পয়সার প্রশ্ন ওঠে কোথা থেকে। মামলা জিতে কোন পক্ষ যদি সেই বক্তাকে আগোরার কোন শুঁড়ি খানায় দু পাত্তর সুরা পান করায় সেটাকে অবশ্য উকিলের ফি বলে ধরা হবে না। ... ...
তোর হিন্দু ফকিরের কতা ক বরন’, ওদের চার্চে গেচিলি বুজি? সে কি আমাদের ফাদার ইমানুয়েলের মত? চার্চ না রে, ওই উৎসবে দেশ বিদেশের কত লোক এসেছিল ধর্মের কথা বলতে। চিন, জাপান, ইউরোপ। তেমনি এসেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া থেকে, ওরা হিন্দু। ইমারত গড়া হয়ে গেছে। আমার তখন কাজ জুটেছিল সাফসুতরো রাখার দলে। কাতারে কাতারে লোক আসছে তো। খাচ্ছে-দাচ্ছে মজা লুটছে। সবদিক তকতকে রাখতে হবে। আমি সারাদিন ঝাড়ুপোঁছা নিয়ে ঘুরে বেড়াই। আমার সেদিন কাজ জুটেছিল যেখানে, সেখানেই হচ্ছিল সমস্ত দেশের এক ধর্মসভা। ওই সারাদিন কচকচি আর কি। আমার ওতে কি কাজ। তবু ভাল লাগছিল শুধু সাদারা নয়, কালো, বাদামী, হলুদ সব রঙের লোকেরা কথা বলছে আর সাদারা সেসব কথা শুনছে। কিন্তু কি যে ছাতার মাথা বলছে আমি কি ছাই বুঝতাম কিছু, নিজের মনে সভাঘরের পাশ ঘেঁষে ঝাড়ু দিচ্ছি। এমন সময় এলো সেই হিন্দু ফকির। ... ...