তিনি লিখছেন, 'মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী / আর হাতে রণতূর্য'। সত্যই তাই । প্রেম প্রকৃতি বিক্ষোভ বিদ্রোহ বিপ্লব এসেছে তাঁর লেখায়। আবার একই সঙ্গে এসেছে বৈপরীত্যমূলকভাবে ঈশ্বরে অনাস্থা ও আস্থা । কেউ বলতে পারেন, ঈশ্বর নয়, ঈশ্বরের নামে করে খাওয়া ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তাঁর এই জেহাদ। 'গ্রাম উঠে আসে নাগরিক স্থাপত্য নিয়ে তাঁর লেখায়। খনি অঞ্চলের মানুষ। খনন করেন মানুষের মন, রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, দল—শ্রমিকের উদ্যমে, কৃষকের আবেগে, বুদ্ধিজীবীর পাণ্ডিত্যে, আবহমান বাংলা কবিতার সুরে। ... ...
শালপ্রাংশু চেহারার নানাজি এসে আমার ছোট্ট খাট্টো চেহারার নানিকে এসে বহু ডাকলেন, সম্মান থাকবে না। এমন করো না, সালমা। চিরকাল বলেন অমুকের মা। মানে বড়মেয়ের মা বলে ডাকেন। আজ স্ত্রীকে সন্তান হওয়ার আগের ডাকে ডাকলেন। দরজা ঈষৎ ফাঁক করে সালমা উত্তর দিলেন, ওঁদের ভালো করে খাইয়ে ফেরৎ পাঠাও। ওই ছেলের সঙ্গে আমার সোনার মেয়ের বিয়ে দেবুনি। অনড় স্ত্রী। কন্যা। বড় আদরের মেয়ে। সুন্দরী। বিদূষী। ভালো ছড়া লেখে। এমন মেয়েকে ওই পাত্রের হাতে দিতে তাঁরও মন চায় না। দেখতে কালো। কিন্তু পয়সা আছে। পড়ালেখা জানে। ভালো পরিবার। কিন্তু মা মেয়ে অনড়। ... ...
আমাদের গ্রামে হিন্দু মুসলমান সবার প্রধান আনন্দ ছিল মাঘ মাসের ওলাইচণ্ডী পূজার মেলায়। দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা, লক্ষ্মী পূজা আছে-- আছে ইদ বকরিদ মহরম--- কিন্তু মাঘ মাসের মেলাই আসল মিলবার জায়গা। সেটা হলেই সবচেয়ে বেশি আনন্দ। আত্মীয় স্বজন কুটুম আসার এই তো আসল সময়। দুর্গাপূজার সময় অনেকের ঘরেই অভাব। ইদ বকরিদ ধান ঝাড়ার সময় কবার আর হয়? পৌষ মাসে ধান কাটা শেষ। মাঘ মাসের ১৯ তারিখ মেলা। হাতে পয়সাও ম্যালা। ফলে আনন্দের অর্থই আলাদা। কাঠের নাগরদোলা, পাঁপড় চপ বেগুনি পেঁয়াজি ঘুগনি, জিভে গজা পান্তুয়া লেডিকেনির দোকান বসে মেলায়। দুর্গাপূজা বা ইদে তো সেসব অনুপস্থিত। বাঁশি কেনা, ঘড়ি কেনা, টিকটক কেনা, লাট্টু কেনা, রঙিন চশমা-- সেতো ইদ বকরিদ দুর্গাপূজায় সবার সম্ভব নয়। ... ...
একদিন রয়টারে খবর এলো (মে ১৯৮৯) - ম্যাকডোনালডকে বেজিঙ্গে দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে আমাদের অর্থলগ্নির কোন সুযোগ নেই। এ সামান্য টাকা তাদের শিকাগো অফিস দেবে। শোনা গেলো অনুমতি পেতে বছর খানেক সময় লেগেছে (দোকান খুলতে আরও ছ মাস)। পরের মাসে এই খবরকে ছাপিয়ে গেলো একটি আশ্চর্য ছবি – একটা গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে একজন একটি ট্যাঙ্কের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে – স্থান তিয়ানানমেন স্কোয়ার (স্বর্গীয় শান্তির দ্বার)। তারপরে আর কোন খবর নেই টেলিভিশনে। ... ...
খাপরার চালের প্লাস্টারহীন বাড়িটায় ঢুকে অবাক হল নজরুল। দরজা পেরিয়ে একটা উঠোন গোছের। ঝকঝক তকতক করছে উঠোনটা। উঠোনে দাঁড়িয়ে সোজা তাকালে একটা খোলা বারান্দা। সামনে, বাঁয়ে, ডাইনে। বারান্দায় বেশ কয়েকটা তোলা-উনুন। আর বারান্দার শেষে অনেকগুলো দরজা। খোলা কোনোটা, কোনোটা ভেজানো, আধ-খোলা কোনোটা বা। কোনও কোনও দরজার পাশের দেওয়ালে এমনকি হাতে-আঁকা আলপনা গোছের ছবিও দেখতে পাওয়া যায়। নজরুল বুঝল, একই সদর দরজা দিয়ে ঢুকে বারান্দা পেরিয়ে প্রত্যেকটা দরজা এক-একটা পরিবারের আলাদা আলাদা ঘরের। খোলা দরজা দিয়ে একটা ঘরের ভেতর চোখ গেল নজরুলের। মেঝেতে বঁটি পেতে সবজি কুটছে একটা মেয়ে। ... ...
কিছু ঠিকই, কিন্তু সেই কিছুটা কী? খুলেই দেখা যাক, বলতে বলতে বাটিটা তুলে নিয়ে চাপা দেওয়া থালাটা সরিয়ে দেয় নজরুল। এক বাটি আলুর দম, কড়া মশলায় বেশ লালচে দেখাচ্ছে। দে গোরুর গা ধুইয়ে – উচ্ছ্বসিত নজরুলের চিৎকৃত কণ্ঠস্বর শোনা যায়, মাহ্মুদের দোকান থেকে রুটি নিয়ে আয় শৈলজা, রাত্তিরের ডিনারটা জমে যাবে। তারপর মোহিতলালের দিকে ফিরে বলে, স্যার, ক’খানা রুটি আপনার জন্যে? ... ...
আমরা কি অপরাধী? এমনটা গোয়েন্দা সিনেমাতে দেখেছি। যন্ত্রের মত মানুষেরা এসে মানুষের পরীক্ষা নিচ্ছে। কোনো শব্দ নেই। কোনো কথা নেই। পাখিরা ডাকে না সেখানে। আকাশ স্তব্ধ হয়ে থাকে। দুঃস্বপ্নের মত। ষোল বছর বয়েসে সন্ধেবেলা বিনা বাতিতে বাইসাইকেল চালিয়ে বরানগরের স্কুল থেকে পাইকপাড়া ফেরার পথে চিড়িয়া মোড়ে পুলিশ আমাকে ধরে। অতি স্নেহের সঙ্গে, “এ ববুয়া, বতিয়া বিনা সাইকিল চলাতে হো?” – এই বলে সাইকেলটি বাজেয়াপ্ত করে থানায় জমা করে। সেটি যে থানার জিম্মায় রইল, সেই মর্মে স্বাক্ষরিত একটি চিরকুট হাতে নিয়ে দমদম রোড ধরে হেঁটে বাড়ি ফিরি। পরের দিন শিয়ালদা কোর্টে দশ টাকা জরিমানা দিয়ে সাইকেল ফেরত পেয়েছি। সে পুলিশকে দেখে ভয় হয়নি। এখানে হল। কোনো অপরাধ না করেও। চিড়িয়া মোড় থানার পুলিশের মুখটা মানুষের বলে মনে হয়েছিল। ... ...
তা এই নাটক নিয়ে লেগে গেল গণ্ডগোল। তখন সিপিএমের পরিচালন সমিতি পরাজিত। কংগ্রেস ও আর এস এস জোট জিতেছে। স্কুল চালান কার্যত আর এস এস নেতা জগজ্জ্যোতি মিত্র। তিনি ১৯৮৩তেই পুরস্কার হিসেবে বাছাই করতেন-- 'তাজমহল কি হিন্দু মন্দির' গোছের বই। বাংলায় প্রথম হলে এই বই বাঁধা পুরস্কার। তা জগজ্জ্যোতি বাবু বললেন এই নাটক রাষ্ট্রবিরোধী। করা যাবে না। সৌম্য সৌমেন ওরা কংগ্রেসি পরিবারের ছেলে। ওঁরা জেদ ধরল, এই নাটকই হবে। নাটকটা খারাপ কিনা বলুন। সৌমেন সৌম্য দুজনের বাবাই পরিচালন সমিতির সদস্য। তাঁরা পড়লেন ফাঁপড়ে। ছেলে বড় না কমিটি? শেষে প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু চক্রবর্তী আসরে নামলেন। বললেন, নাটক হবে। তবে কিছু অংশ বাদ দিতে হবে। উনি বললেন, তুই এইগুলো কেটে দে। অমলেন্দুবাবুর বাংলা ক্লাস আমরা দুই পিরিয়ড ধরে করতাম। ছুটি হয়ে গেছে কখন। আমরা উঠছি না। উনিও থামতেন না। আমি বললাম, স্যার, আপনি কেটে দিন। বললেন, কী সমস্যায় ফেললি। ... ...
এই যন্ত্রণা হওয়ার একটা ইতিহাস আছে। খিদে যন্ত্রণা ও অপমানের ইতিহাস। ১৯৮২। মাধ্যমিক দিয়েছি। ম্যালেরিয়া নিয়েই। পরীক্ষা ছিল ২ মার্চ। এক অমানবিক অবৈজ্ঞানিক অমার্কসিয় সিদ্ধান্ত ছিল তখন ২৩ কিলোমিটার দূরে পরীক্ষা দিতে যাওয়া। আমাদের স্কুল থেকে আমাদের বাড়ি ছয় কিলোমিটার। স্কুল থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র আরো ১৭ কিলোমিটার। বাসে তখন লাগতো ঘন্টাখানেক। এখন বোধহয় চল্লিশ পঞ্চাশ মিনিট। রাস্তা ঝরঝরে। বাস লঝঝরে। প্রায়ই চাকা পাংচার হয়ে যায়। তাতে আরো আধঘন্টা। দিনে দুটো করে পরীক্ষা। ... ...
এই দেখুন, শহুরে হাওয়া লেগেছে, গ্রীষ্ম গ্রীষ্ম করছি। আরে ওর আসল আদি অকৃত্রিম নাম তো, গরমকাল। ছুটির নাম গরমের ছুটি। সামার জানতাম সামার ভ্যাকেশন নাগরিক ব্যাপার। কলকাতায় শুনছি। গরমকালে চৈত মাস পড়তে না পড়তে শুরু হয়ে যায় সকালের ইশকুল। সকালের না মন্নিং স্কুল। পোশাকি নাম মর্নিং তো জানে না, তার আর আর নাই। মন্নিং স্কুল ভারি মজা। ছটায় স্কুল। টিফিন আধ ঘন্টা নয়, পনের মিনিট। আর ওই পনের মিনিটেই কত মজা। আধঘন্টা টিফিন মানে বাড়িতে ভাত খেতে আসা। বাড়ির কাছেই স্কুল। প্রাথমিক বিদ্যালয় আমাদের পূর্বপুরুষদের দেওয়া জায়গায়। পুকুরের এপার ওপার। দু মিনিটও নয়। মন্নিং ইশকুলে টিফিন নিয়ে যাই সবাই। টিফিন মানে মুড়ি গুড়/ বাতাসা বা চিনি। মাঝেমধ্যে আলুভাজা জিরে দিয়ে। কখনো বেসনের বড়া। ও জল দিয়ে মেখে খেতে কী মজা। ... ...
আটের দশকের একটি ঘটনা মনে পড়ে। লেবাননে তখন গৃহ যুদ্ধ চলছে। ইউনি লিভারের মাইক ডার্বিশায়ারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনারা যে লেবাননে সাবান শ্যাম্পু বেচছেন তার টাকা ডলারে বা পাউনডে ফেরত পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত নন? যে সব দেশে মাল বিক্রির ঝুঁকি নিয়ে আপনারা চিন্তিত সে তালিকায় লেবাননের নাম দেখি না! মাইক হেসে বললেন আমরা সে দেশে কোন ব্যাঙ্ক নয়, সরাসরি একটি লেবানিজ পরিবারের সঙ্গে বাণিজ্য করি। যুদ্ধ হোক আর শান্তি বারি বর্ষিত হোক, তারা ঠিক দাম মিটিয়ে দেবে। শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম। ইউনি লিভারের মতো কর্পোরেট ব্যাপারী মনে করেন লেবাননের একটি পারিবারিক সংস্থা তাঁদের আস্থার যোগ্য। সবাই তাহলে একই ম্যানেজমেন্ট মন্ত্রে বিশ্বাসী নন। একই ইস্কুলে এম বি এ করেন নি। ... ...
কাজী উত্তর দেবার আগেই উঠে দাঁড়ান ডঃ শহীদুল্লাহ্, বলেন, আমার এবার যাবার সময় হল। যাবার আগে একটা কথা তোমাকে বলি কাজী। আমার মনে হয় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এখন তোমার পরিচয় হওয়া দরকার। সুধাকান্তবাবু বলেছেন রবীন্দ্রনাথ নিজেও তোমার সঙ্গে পরিচিত হতে চান। কবে যে ওঁকে পাওয়া যাবে আমি ঠিক জানি না। শুনেছি, বিদেশ থেকে কয়েকদিন আগে ফিরেছেন। ইদানীং প্রায়ই বিদেশে যাচ্ছেন, কাজেই এর পরের বিদেশ যাত্রার আগেই ধরতে হবে। আমি যোগাযোগ করছি, এক-দেড় মাসের মধ্যেই ধরতে চাই। জোড়াসাঁকোয় নয়, চেষ্টা করব শান্তিনিকেতনে গিয়ে দেখা করতে, সেখানে উনি অনেক খোলামেলা। তুমি আমার সঙ্গে আসবে তো? ... ...
আমরা গ্রামে হালিমের নাম পর্যন্ত শুনিনি। হালিমের নাম শুনলাম ১৯৯১-এ বাংলাদেশ নির্বাচনের সময় ঢাকা গিয়ে।তখন সাংবাদিক। একুশের বইমেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা হালিমের স্টল দিত। সুন্দর সব বাংলা নাম। একটা স্টলের নাম মনে আছে--পৌষালী। আর মনে পড়ছে, কলমিলতা। আমি রোজ সন্ধ্যায় বইমেলা যেতাম্বই দেখতে আর হালিম খেতে। সঙ্গে বাড়তি আকর্ষণ ছিল,ঝকঝকে ছেলেমেয়েরা আবৃত্তি করতো। ক্যাসেটের দোকান দিত। সাগর লোহানি তখন বেশ জবরদস্ত আবৃত্তিকার্রর। বন্ধু আনিসের সৌজন্যে আলাপ এঁদের সঙ্গে। ... ...
সেই আঠেরোশো পঞ্চাশ-টঞ্চাশ থেকে আমাদের এই বাংলার গ্রাম থেকে – আর বাংলাই বা বলি কেন – বিহার উড়িষ্যা বা এমনকি যুক্তপ্রদেশ থেকেও দলে দলে গরীব মানুষ কাজের সন্ধানে আসছে এই কলকাতা সহরে। এদের মধ্যে হিন্দু মুসলমান দু' দলই আছে। মুসলমানই বেশি বলে আমার মনে হয়, কারণ তারাই অপেক্ষাকৃত বেশি গরীব। কলকাতায় এরা সব থাকে কোথায়? প্রথম-প্রথম ফুটপাতে, আর তারপর নানা বস্তিতে। আমি শুনেছি ভদ্রলোকদের চাপে আঠেরোশো ছিয়াত্তর-টিয়াত্তরে কলকাতার কর্পোরেশন নানারকমের নাগরিক সুখ-সুবিধের ব্যাপারে সহরবাসী মানুষদের একটা অধিকার দিয়েছে। কী অধিকার? একটা কর্পোরেশন পরিচালক সমিতি, যার আসল নাম কাউন্সিল, তার সভ্য হওয়া। তার মানে কাউন্সিলর হবার অধিকার। এবং অবশ্যই, ভোট দিয়ে সেই কাউন্সিলার নির্বাচন করা। এই ভোটের অধিকার কিন্তু আছে মাত্র তিন ধরণের লোকের। ... ...
ডানজিগে জার্মান অধিবাসনের ইতিহাস হাজার বছরের বেশি পুরোনো। হের রিখটারের পূর্বপুরুষ ছিলেন সেখানকার বাসিন্দা। ১৯৪৫ সালে ছিন্নমূল রিখটার পরিবার কিশোর মাক্সিমিলিয়ানকে নিয়ে হেঁটে জার্মানি এসেছেন। মাক্সিমিলিয়ান কখনো ফিরে যাননি ডানজিগে। লৌহ যবনিকার সময় সেটা শক্ত ছিল। হের রিখটার ডানজিগকে ভুলেই গিয়েছিলেন বা মনে রাখতে চাননি। ড্রেসনার ব্যাঙ্কের এটিএম কার্ড সামলানোর ব্যাপারে আমার দক্ষতার অভাবে তাঁর একটা সূত্র যোগ হয়ে গেল ডানজিগের সঙ্গে। আমাদের সংক্ষিপ্ত সংলাপের পরে তাঁর মন নিশ্চয় চলে গিয়েছিল ডানজিগের অলিতে গলিতে। ঠিক যেভাবে আজ এপার বাংলার অনেক অশীতিপর মানুষের মন চলে যায় বিক্রমপুরের গ্রামে। ... ...
বাবা ঠিক করলেন একটা সংগঠন করবেন। যেখানে কেউ মারা গেলে ২০ টাকা করে সংগঠনে নাম লেখান পরিবারগুলো চাঁদা দেবে। সবার এক চাঁদা। বড়লোক বলে বেশি দিতে পারবে না। এ থেকেই মাছ ভাত ডাল তরকারি হবে। সবার ক্ষেত্রে এক নিয়ম গরিব ধনী সবাই। মুখে মার্কসবাদী কথা বলা আর বাস্তব জীবনে তা পালন করা কঠিন। ... ...
মুর্শিদাবাদের কেল্লা নিজামতের ভেতরে ছোট ছোট নানান দর্শনীয় বিষয় ছিল যার অধিকাংশই আজ নষ্ট হয়ে গেছে, বিশেষ করে কেল্লার ভেতরের যেসব দৃষ্টি নন্দন বাগান ছিল আজ সেসব গভীর জঙ্গলে ঢাকা পরে আছে, যেমন আজ সেদিনের কেল্লার ‘মহল সেরা’ এলাকায় গেলে দেখা যাবে একটি বিরাট অঞ্চল জঙ্গলে পরিণত হয়েছে অথচ নবাবী আমলে এই এলাকাতেই ছিল দেশ বিদেশের দামি সুগন্ধি ফুলের বাগান, আজও অবশ্য সেই জঙ্গলের ভেতরে নবাবী আমলের কিছু ফুলের গাছ দেখা যায়। ... ...
আমাদের গ্রামে বা আশপাশের গ্রামে খুন জখম হতো না। তা বলে কি, হাতাহাতি হতো না? সে-ও বলার মত নয়। তবে তেড়ে যাওয়া, কুঁদে কুঁদে ছুটে আসা ছিল। ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ ছিল। মারপিটের উপক্রম হতো। বউ বেটিরা টেনে ধরত। ... ...
ঝড় বয়ে যাওয়ার পরে নিবিড় হতে সময় নেয়। রাস্তা বহুক্ষণ থরথর করে দোলে, কাঠের বাড়িরা ঠকঠক করে কেঁপে আতঙ্ক বজায় রাখে অনেক সময় ধরে। রাস্তার ধুলোর ঝড় ধীরে ধীরে থিতু হয়। এমনকি পথের পশুপাখিও গা ঝাড়া দেয় না ততক্ষণ। ওরা এই অবস্থায় পড়ে রইল, সেও কত মুহূর্ত, কত পল। হামলার শেষ প্রতিধ্বনি মিলিয়ে যেতেই আলেফ ঝটকা দিয়ে উঠে দাঁড়াল। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে। যেকোনো মুহূর্তে এমনই আরেকটা দল এসে যাবে, এরপর পালাবার উপায় না-ও হতে পারে। ... ...
খবর শুনে মা কাঁদল না, তবে পরের দিন আমাদের বস্তিতে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হল। পেট পুরে খেল ওই দুজন লোক, তারপর চলে গেল। আমি ততদিনে সেকেণ্ড ক্লাশ, মানে ক্লাশ নাইন-এ উঠেছি। মা আমাকে বলল, আমাকে যুদ্ধে যেতে হবে। আর যেতে হবে মেসপটমা না কী বলে, সেই আরব দেশেই। শুধু আমাকে বলেই ক্ষান্ত হল না মা, বস্তির সবাই জানল পিংলাকে তার মা যুদ্ধে পাঠাবে। আমাদেরই বস্তির মাতব্বর গোছের একজন শুধু মাকে সাবধান করে দিল, এখনই কিছু কোরো না, কেউ যদি বলে দু পয়সা খরচ করলেই সে তোমার ছেলেকে যুদ্ধে পাঠাবার ব্যবস্থা করে দেবে, বিশ্বাস কোরো না তাকে। আঠের বছর অন্তত বয়েস না হলে যুদ্ধে নেয় না। আর তা ছাড়া সাহেবরা সব দেশের ছেলেদের নেয়, কিন্তু বাঙালিদের নেয় না যুদ্ধে। বাঙালিদের জন্যে শুধু ইশকুল আপিস আর কোর্টের কাজ, সাহেবরা বাঙালির হাতে বন্দুক দেবে না। ... ...