গায়ত্রী দীপালি এখন পশ্চিম বাংলার কোথাও আছে। ওর দু’ভাই ওকালতি আর পলিটিক্স নিয়ে বাংলাদেশেই থাকে। বুলু, টুলু, অঞ্জলিরাও নব্বই সালের দিকে চলে গেছে। খুব কম বেড়াতে আসে। বাংলাদেশে এ এক পরিচিত দৃশ্য। সবাই জানে, প্রতিটি হিন্দু পরিবারেরই একটি খুঁটি আছে ভারতে। রাতে গল্প করছে, চা খাচ্ছে যে বন্ধুদের সঙ্গে, তারা সকালে জানতে পারে বন্ধুটি পরিবারসহ চলে গেছে ইন্ডিয়া। ওদের বাড়িটি গোপনে বিক্রি করে গেছে কোনো মুসলমান পরিবারের কাছে। কিন্তু কবে থেকে এ দৃশ্যের আরম্ভায়ন? ... ...
মস্কোর বয়েস ন’শ’ বছর। মাত্তর ১৮ শতকে জার পিটার দি গ্রেট এই ভুঁইফোড় শহরটির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম নাম সাঙট-পিটার-বুর্খ (ডাচ)। জার্মান প্রভাবে সেটি হয়ে দাঁড়ায় সাঙট পেটার্সবুর্গ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান শব্দ ব্যবহার জনবিরোধী বিবেচিত হল। নাম বদলে পেত্রগ্রাদ – পিটারের গড়! এই সময় ব্রিটেনেও দু’টি নামের পরিবর্তন হয় একই কারণে। লর্ড বাটেনবের্গ (ফ্রাঙ্কফুর্টের অনতিদূরের গ্রাম) হলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন (বের্গ = পাহাড় = মাউন্ট: বাটেন হল ব্যাটেন)। ব্রিটিশ রাজপরিবারের পরিচয় হাউস অফ হানোভার (জার্মান শহর, যেখান থেকে রাজা জর্জকে খুঁজে এনে সিংহাসনে বসানো হয় ১৮ শতাব্দীতে – পরবর্তী ছয় রাজার ধমনিতে ছিল জার্মান রাজরক্ত, প্রত্যেকে জার্মান বলেছেন) বদলে হাউস অফ উইনডসর। সহজ ব্যবস্থা। জার্মানির সঙ্গে যখন লড়াই চলছে, পিতৃপুরুষের নাম বদলে ইংরেজ সাজাটাই তো বাঞ্ছনীয়। ... ...
শান্তার কবিতার বই বেরোল দু’বছর পর। তখন কবিতা আর সায়নে যাপন যুগপৎ চলছে। বেদনা ও আকুতি প্রতিদিন চোখ ধুয়ে দিয়েছে তার। যাকে দেখতে চায় আর খোলা আকাশের নীচে গায়ে গা লাগিয়ে সময় কাবার করে দিতে চায় অজস্র কথায় – তাকে দেখা হয় না। শূন্যে মিলিয়ে গেছে যেন! নীরব ছটফটানিতে সে চুরমার হয়। সান্ত্বনা বলতে পত্র-পত্রিকায় পেয়ে যাওয়া সায়নদীপের লেখাগুলো। একদিকে একটা সর্বগ্রাসী প্রেম সে অন্তরে লালন করেছে। অন্যদিকে প্রতিটি সামাজিক, দেশজ, বৈদেশিক আর প্রাকৃতিক ঘটনার অভিঘাতে ছটফট করেছে একা। ... ...
সৌম্য জিজ্ঞেস করলো, “কেন একথা বলছেন বলুন তো?” - কারণ খুঁজে বের করা তো আপনার কাজ। তবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক যে কতটা ‘মধুর’ ছিল, সেটা আপনি বাড়ির কাজের লোকদের জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন। - তাই বুঝি? দু’জনের মধ্যে এই তিক্ততার কোনো বিশেষ কারণ ছিল কি? - বিশেষ আর কী? নিজের ওরিয়েন্টেশন লুকিয়ে বিয়ে করা, এটাই কি যথেষ্ট কারণ নয়? আপনার বন্ধু ছিলেন, এখন আর পৃথিবীতে নেই, তবুও বলছি, কাজটা কিন্তু তুহিনবাবু ঠিক করেননি। আর এই সবের পর যদি স্ত্রী অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলেন, তাকে কি দোষ দেওয়া যায়? আরে বাবা, বাড়িতে হাঁড়ি না চড়লে মানুষ তো খাবার বাইরে থেকে অর্ডার করবেই, তাই না? ... ...
কিছু অনুগামী জুটলো। দেওয়াল পত্রিকা করলাম সবাই মিলে। শহরে 'কিশোর জগৎ' পত্রিকায় লিখছি। সাহিত্য সভায় যাচ্ছি। বিশ্বনাথবাবু কবিতা পড়ে খুব উৎসাহ দেন। কবি হতে খুব ইচ্ছে। বাড়ি ফিরি সাড়ে ছয় কিলোমিটার হেঁটে দামোদর উপত্যকা নিগমের ক্যানেল বা খালের বাঁধ ধরে। সাপের ভয় আছে, এবড়োখোবড়ো রাস্তা। ভাদ্র আশ্বিন কার্তিক মাসে আকাশ রাঙিয়ে দিতো, সূর্য ডোবার আগে। আকাশ দেখা নেশা হয়ে গেল। আকাশ দেখার লোভেই সন্ধ্যায় সাপের ভয় উপেক্ষা করে ক্যানেলের বাঁধ দিয়ে একা একা ফিরতাম। দলে মিশলে মেঘ কথা বলে না। ... ...
আলি আকবর বলল, আমি তো কবে থেকেই বলছি খবরের কাগজে চাকরি করে আপনি আপনার প্রতিভার অপচয় করছেন। ছেড়ে দিন ওসব চাকরি, আপনার উচিত সর্বক্ষণের সাহিত্যসেবী হওয়া। নজরুল পেট চাপড়িয়ে বলল, কিন্তু মধ্যপ্রদেশ কি রাজি হবে? আফজালুল বলল, ঠিক আছে, আমি আপনাকে একটা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আপনি যদি সাহিত্যের হোলটাইমার হন, আর আপনার যাবতীয় রচনা আমাকে দেন মোসলেম ভারত-এর জন্যে, আমি তাহলে আপনাকে প্রতি মাসে একশো টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। প্রমিস! আপনার প্রতিভার তুলনায় এ-টাকাটা কিছুই নয় আমি জানি, কিন্তু আপনার মধ্যপ্রদেশ মনে হয় শান্ত থাকবে এতে। ... ...
“সেইটা বলা খুব মুশকিল, বুঝলি। এটাই হল এই বিষটার মজা। সাঙ্ঘাতিক টক্সিক এই বিষটা কোনও পরীক্ষায় চট করে ধরা পড়ে না। আর কতক্ষণে কাজ করবে সেটা নির্ভর করে কীভাবে আর কতটা প্রয়োগ করা হয়েছে তার ওপর। তবে যেহেতু কয়েক ঘণ্টা আগেও পার্টিতে ও একেবারে স্বাভাবিক ছিল, তাই অনুমান করা যেতে পারে বেশ খানিকটাই শরীরে ঢুকেছে। তবে বেশ খানিকটা মানে আবার কয়েক গ্রাম ভাবিস না যেন। একটা আলপিনের মাথায় যতটুকু ধরে ততটা রাইসিনই একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলতে যথেষ্ট। ওই পরিমাণ বিষ যদি ইনজেক্ট করা হয়, তবে তিন থেকে ছ’ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে।” ... ...
কুঁদলি/কুঁদরি/তলি, নোনা এইসব ছিল প্রান্তিক মানুষ, কুড়ানিদের খাবার। এখানে ওখানে যারা অস্থায়ী সংসার পেতে থাকত। কয়েকজন বা একা। চট বা মাদুরে জড়ান সংসার পাতত, মাটির ছোট উনুন তুলে কদিন রেঁধে বেড়ে খেত, আবার চলে যেত। হাট থেকে কুড়ানো সবজি ফল, ছাঁট। এখান ওখান থেকে সংগ্রহ করা মেটে আলু, ডুমুর, ওল, নোনা, কচু, হরেক রকম শাক, গুগলি, কাঁকড়া এসব দিয়ে তাদের খাবার তৈরি হতো। ভাতে ভাত সেদ্ধ অথবা সব মিলিয়ে একটা ঝোল। ... ...
২২ জুন, দ্রৌপদী মুর্মুর এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার খবর আসে। তার ঠিক ১০ দিন পরে, মধ্যপ্রদেশের গুনা জেলা থেকে খবর এলো যে সাহারিয়া উপজাতি সম্প্রদায়ের ৩৮ বছর বয়সি এক মহিলা, রামপ্যারিকে, জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তাঁর পরিবারকে মধ্যপ্রদেশ সরকারের তরফ থেকে ৬ বিঘা জমি দেয়া হয়েছিল। ওঁর সঙ্গে কাগজপত্রও ছিল। কিন্তু জমি দখল করে বসেছিল আদিবাসী নন এমন সমাজের মানুষেরা। জবরদখল করার পরে তারা আবার সেখানে কৃষিকাজও করছিল। উপরন্তু, রামপ্যারির পরিবারকে হুমকিও দিচ্ছিল ওরা। এই ঘটনার ঠিক এক সপ্তা আগে, রামপ্যারি ও তাঁর স্বামী অর্জুন, পুলিশকে এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানায় এবং তাঁদের কাছে সুরক্ষাও চায়। কিন্তু, কিছুই করা হয়নি। রামপ্যারি যখন মাঠে গিয়ে আপত্তি জানান, তখন তারা সেখানেই ওঁর গায়ে ডিজেল ছিটিয়ে ওঁকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার ভিডিও-ও পাওয়া যায়। এইবারে আমি ভাবতে বসলাম, যদি দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হন তাহলে কি রামপ্যারি ও তাঁর পরিবার ন্যায় বিচার পাবেন? ... ...
উদয়পুরে কানহাইয়া লাল খুনের ঘটনায় হতবাক গোটা দেশ। হওয়ার কথাই। যে-কোনো হত্যাকাণ্ডই ভয়ংকর, কিন্তু এই ঘটনা শুধু একটা হত্যা নয়। যে পরিকল্পিত ও নৃশংস পদ্ধতিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে তা বর্বরতার নমুনা। শুধু তাই নয়, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল না। এই হত্যাকাণ্ড ছিল নিখাদ গোঁড়ামির ফল। কানহাইয়া লালের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নূপুর শর্মাকে (যিনি নবী মোহাম্মদকে অপমান করেছিলেন) সমর্থন করে কথা বলা হয়েছে বলে রিয়াজ আখতারি এবং গৌস মোহাম্মদের রাগ ছিল। ... ...
যাইহোক, ও তো স্বরূপ। সেই কথায় ফিরে আসি। এ হল আমাদের স্বরূপ। স্বরূপ বাজারে হাঁসের ডিমের দাম পায়নি। বাজারের স্বরূপ তার জানা নেই। জানার কথা নয়। এই না জানা তার খুব ক্ষতি করলেও অপরাধ তার একার নয়। স্বরূপের হাঁস মরে গেছে, সাদা মাছ সব মরে গেছে বন্যায়। কই স্বরূপকে দেখে আপনাদের তা মনে হচ্ছে? শ্রমের রঙ সাদা হয় কিনা জানিনা। কালো ধলো সবতো বলে জেনেটিক। কিন্তু এত বেশি মানুষ এত কম মানুষের হাতে অত্যাচারিত শোষিত যে শ্রমজীবী মানুষকে আমরা অনেকে হয়তো কালো বা বাদামী রঙে দেখতে ভালোবাসি। ... ...
চটের সিনেমা হলে রিল ঘোরার একটা আওয়াজ হতো। মাঝে মাঝে কেটে যেত। সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে পর্দায় তার ছবি দেখা যেত। লোকে হাঁই হাঁই করে উঠতো। ছেলেমেয়েদের বসার জায়গা ছিল আলাদা। একসঙ্গে বসতে দিত না। লোকে চোঙা ফুঁকতে আসতো, মহিলাদের বসিবার ও সাইকেল রাখিবার সুবন্দোবস্ত আছে। আপনারা সবাই যাবে। যাবে। যাবেন নয়। টেনে টেনে সুর করে বলতো। আর রঙিন কাগজের লিফলেট ছড়াতো। আমরা বাচ্চারা সেই সাইকেলের পিছন পিছন ছুটতাম। আর পরে নকল করে বলতাম, আপনারা স বা ই যা বে এ এ এ। বাড়ি বাড়ি এসে সিজন টিকিট বেচে যেতেন চেনা উদ্যোক্তারা। গোলাপি ও সাদা রঙের কার্ড হতো। তলায় দিনের খোপকাটা থাকত। গেটে কেটে নিয়ে ঢুকতে দিত। বিদ্যুৎ নয় ডায়নামো বা জেনারেটরের সাহায্যে সিনেমা চলত। একদিকে সিনেমার রিল চলার আওয়াজ অন্যদিকে জেনারেটরের আওয়াজ। ঘ্যারঘ্যার। তাতে কী, কেঁদে ভাসিয়ে দিতাম নায়ক নায়িকার দুঃখে। ... ...
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মুরমানসকের ভূমিকা বিশাল। জার্মানদের রাশিয়া আক্রমণের পর এই বন্দর দিয়েই মিত্র শক্তি সাহায্য পাঠাতে থাকেন। লেনিনগ্রাদ ও স্টালিনগ্রাদের মত মুরমানসক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি হিরো সিটি বা বীর শহর নামে পরিচিত। শহরের প্রায় চুড়োয় একটি বিশাল মূর্তি আছে, তার নাম আলইশা। সেটি সেই সংগ্রামের স্মারক। নিচের কোলা উপসাগরে বরফ ভেঙে সমুদ্রপথ পরিষ্কার করার প্রথম আণবিক শক্তি চালিত জাহাজ “লেনিন” বন্দরে নোঙর করা আছে। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে অনেক বরফের দেয়াল খনন করে ১৯৮৯ সালে লেনিন এখানে বিশ্রান্তি গ্রহণ করেছে। এতটা উত্তরে এলে সারা দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন মনে হয়! সেটি হয়তো সঠিক নয়। আলইশা স্ট্যাচুর পদতলে দাঁড়িয়ে কল্পনাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলে মনে মনে হয়তো অনেক দূরে চলে যাওয়া যায় – এই তো সামনে কোলা উপসাগর, সেটি গিয়ে মিশেছে বারেনট সাগরে। সেখান থেকে একটু বাঁয়ে ঘুরলেই কানাডার সমুদ্রপথ। বছরে অন্তত পাঁচ মাস খোলা থাকে। এর নাম সুমেরু সেতু। মালবাহী জাহাজ যেতে পারে চার হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ম্যানিটোবার চার্চিল বন্দরে। আর খাড়া উত্তরে গেলে মাত্র দেড় হাজার কিলোমিটার দূরত্বে উত্তর মেরু। পা আরেকটু বাড়ালেই তো খাঁটি উত্তর বা ট্রু নর্থ! ... ...
এখন পাড়ার ঠানদি বলিলেন, “ও হিদে! তোর খোকা হয়েছে।” শুনিয়া তাহার মুখ লজ্জায় রাঙা হইল।অথচ তাঁহার একান্ত ইচ্ছা একবার দৌড়িয়া গিয়া পুত্র ও স্ত্রীর মুখদর্শন করিয়া আসেন।রমনীরা তখন হাসিয়া উঠিয়াছে।তাহাতে তাহার লজ্জা অধিক বৃদ্ধি পাইল।সরিয়া যাইতে চাহিলেন।কিন্তু বাদ সাধিলেন তাঁহার মা।তিনি প্রসব পরবর্তী নিয়ম ও কর্মগুলি সমাধা করিতে ব্যস্ত ছিলেন।পুত্রকে ডাকিলেন, “হৃদয়, পরিস্কার হাতে একটা তাজা বাঁশের গা থেকে চোঁচ কেটে নিয়ে আয়।বাচ্ছার নাড়ি কাটতে হবে।” ... ...
মানসের কাছ থেকে যতটুকু জানা গেল, তা হল এই, যে শনিবার রাত ১১টা নাগাদ তুহিন আর ঋক পার্টিতে পৌঁছয়। তারপর যথারীতি হাই-হ্যালো, নাচ, ড্রিংক্স এসব চলছিল। সবাই বেশ ভাল মুডেই ছিল। কথা নেই, বার্তা নেই – কোথা থেকে ওই আমন শর্মা নামে ছেলেটা এসে তুহিনকে চুমু খেতেই পুরো সিচুয়েশন পাল্টে গেল। ঋক তো রেগে টং। তারপর খানিক কথা কাটাকাটির পর তুহিন আর ঋক দু’জন পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে যায়। নাহ্, কোথায় গেছিল সেটা মানস জানে না। পার্টিতে তুহিনের হাতে গ্লাস ছিল, সে ব্যপারে মানস নিশ্চিত। কিন্তু কী খেয়েছে, কার থেকে খেয়েছে – তা মানস জানে না। ... ...
গ্রামে কিছু মানুষ থাকতেন যাঁরা বই পড়তে পারতেন না, কিন্তু অঙ্কের ধাঁধা জানতেন আর বুদ্ধির খেলা বাঘবন্দীতে ছিলেন ওস্তাদ। আমি ফুটবল ক্রিকেট হাডুডু কবাডি নুনচিক বুড়ি বসন্তি ভলিবল একটু হকি --সব খেলতাম, কিন্তু বাঘবন্দি চাইনিজ চেকার দাবায় ওস্তাদ হয়ে উঠি। ক্যারাম তাসে সুবিধা করতে পারি নি। তা বাঘবন্দি খেলছি এক ওস্তাদ খেলুড়ের সঙ্গে। সংকল্প হারাতেই হবে। এমন সময় দেখি একটা সিংহের মতো দেখতে বিশাল কুকুর হেলতে দুলতে আমাদের খামারে হাজির। সোনালী ঝালর কেশর। বুকের কাছে বেশ চওড়া। কোমর সরু। এমন কুকুর কেবল সিনেমায় দেখেছি আগে। পরে বাস্তবেও এতো সুন্দর কুকুর দেখিনি। সংকর প্রজাতি। দেশি আর বিদেশি মিশেল। ... ...
বর্ধমান ছাড়াবার পর নজরুল গান ধরেছে আবার, এমন সময় কামরায় উঠল তিন-চারজন বাউলের একটা দল। শান্তিনিকেতনের পথে রেলের কামরায় এই বাউলরা প্রায়ই ওঠে, আর উঠেই গান গায়। সঙ্গে থাকে তাদের একতারা, আর কোন কোন সময় পায়ে ঘুঙুরও। বাউল, ভিক্ষে করাই এদের পেশা, যাত্রীসাধারণেরও সেটা জানা। ফলে, ঠিক ঠিক চাইতেও হয়না ভিক্ষে, গান শেষ হলে অনেক যাত্রী নিজেরাই ডেকে সাধ্যমতো যা পারে, দেয়। আজ এই বাউলরা উঠে নজরুলের গান শুনে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। একটু পর, তাদের মধ্যে একজন গানের সঙ্গে একতারায় মৃদু আওয়াজ তোলে, ঘুঙুরের শব্দে তালও রাখে কেউ। নজরুল চোখ মেলে হাসে, তারপর চোখ বুজে গাইতে থাকে আবারও। ... ...
লম্বা-চওড়া, জিম করা সুদর্শন তুহিনকে একবার দেখে চোখ ফেরানো শক্ত ছিল। সবথেকে আকর্ষণীয় ছিল ওর চোখ দুটো। ভাসা ভাসা স্বপ্নালু। আর হাসলে গালে টোল পড়ত। সব মিলিয়ে মনে হত, যেন বলিউডের কোনও রোম্যান্টিক হিরো। ওরকম চেহারা আর ওই রকম ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে যে কেউ অন্তত গোটা কতক প্রেম তো করতই। কিন্তু তুহিন ছিল লাজুক, একটু অন্তর্মুখী। সম্ভবত নিজের সেক্সুয়ালিটিকে অন্যদের, বিশেষত আগ্রহী মেয়েদের থেকে দূরে রাখতেই, নিজের চারপাশে একটা গণ্ডি টেনে রাখত তুহিন। তার জন্য কেউ কেউ ওকে অহংকারী ভাবলেও, সৌম্য অন্তত জানে, যে ও আদপেই ওরকম ছিল না। সৌম্যর সঙ্গে একটা সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক শুরুতেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল তুহিনের। তবে একে অন্যের ওরিয়েন্টেশনের ব্যপারে জানতে সময় লেগেছিল আরো অনেকদিন। ... ...
প্রতিবছর কেল্লা নিজামতের মধ্যে নানান উৎসব ও অনুষ্ঠান পালিত হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল পারসিক নববর্ষ বা নওরোজ। নবাবী আমল থেকেই মুর্শিদাবাদে রাজকীয় ভাবে নওরোজ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। এইদিন কেল্লার প্রতিটি বাড়ি সেজে উঠত। নওরোজের দিন সকাল থেকেই ইমামবাড়া আনন্দ মুখর হয়ে উঠত এবং সেখানে একটি বিরাট বড় দস্তরখওয়ান পেতে তার উপর নানান রকমের খাবার ও ফলমূল সাজিয়ে হজরত আলীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হত। ... ...