জলে ঝাঁপাচ্ছে যে শিশুর দল, তাদের কেউ প্রশ্ন করে তার পরিচয় কী? সে বসনিয়াক না সার্ব না ক্রোয়াট? জিজ্ঞাসে কোনজন? পথের দু-পাশ সবুজে ভরে আছে। আকাশ কী উজ্জ্বল! বিশ বছর আগে এই রাস্তায় দেখা গেছে ট্যাঙ্কের সারি, জ্বলন্ত বাড়ির আড়ালে আড়ালে স্নাইপারের ছায়া, কখনো আকাশে সারবিয়ান বোমারু বিমান, কোনো বাড়ির উঠোনে বসে সেই বিমানের দিকে বন্দুক তাক করছে এক যুবক। সারি সারি দেহকে একই সঙ্গে গোর দেওয়া হচ্ছে, কোথাও ক্যাথলিক কোথাও অর্থোডক্স ক্রসের নিচে। দু-হাত দূরে মুসলিম মাজার। এই সেদিন। ... ...
বৈশাখ মাসের ভারতীতে নজরুল ইসলাম লিখল বিদ্রোহী বাণী নামে এক কবিতা। লোকের মুখে মুখে এই কবিতা প্রচার হয়ে এমন আবেগের সৃষ্টি করল যে সত্যাগ্রহের উদ্বোধনের দিন মাঠে আর লোক ধরে না। আন্দোলনের উদ্বোধনের দিন সকাল থেকেই মন্দির-সংলগ্ন বিশাল মাঠে জনসমাগম। আর সেই সমাগমকে ঘিরে আছে সত্য ও তার দলবল। কর্তৃপক্ষের সঙ্কেত পেলেই শুরু হবে নিধনযজ্ঞ। নির্দিষ্ট সময়ে কাজির দিকে তাকিয়ে দেশবন্ধু বললেন, সত্যাগ্রহ শুরু হোক কাজির উদ্বোধন সঙ্গীত দিয়ে। দৃপ্ত কণ্ঠে কাজি গান ধরে।লাঠিয়ালরা প্রস্তুত। সঙ্কেতমাত্র ঝাঁপিয়ে পড়বে। মন্দিরের পাশেই এই গান! এ কি ভাবা যায়! এই মঞ্চেরই এক কোণে দাঁড়িয়ে সত্য নিজে, নীরব। অনেকগুলো চোখ তার দিকে। গান শেষ হলে সে বলে, কাজি, আর একবার গাও। ... ...
মুর্শিদাবাদ বাসীদের যেখানে বিশ্বাসঘাতক কিম্বা বিশ্বাসঘাতকের জেলার মানুষ হিসাবে গণ্য করা হয় সেখানে মীরজাফরের বংশধরদের কী অবস্থা হয়? তাঁরা কী তবে নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখেন? পূর্ব পুরুষদের কর্মকাণ্ডের জন্য লজ্জা পান? নাকি তাঁদের পূর্ব পুরুষদের গায়ে লেগে থাকা 'বিশ্বাসঘাতক' তকমার বিরোধিতা করেন নিজস্ব যুক্তি দিয়ে? চলুন কেল্লায় বসবাসকারী নিজামত পরিবারের কিছু প্রবীণ সদস্যদের কাছ থেকে এই বিষয়ে জানা যাক। ... ...
বিংশ শতাব্দীর শুরু ও শেষ এইখানে। সারায়েভোতে। গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপের পিস্তলের গুলি—দুটি নয়, বহু কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। খুন কা বদলা খুনের খেলা শুরু হল — চলবে গোটা শতাব্দী জুড়ে। ইতিহাসে গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপের স্থান বার বার পরিবর্তিত হয়েছে—কারো চোখে তিনি সন্ত্রাসবাদী, কখনো বা জাতীয়তাবাদের পুরোধা। বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এই সহিংস প্রতিবাদ যে ঘটনাচক্রের সূচনা করল, তা হয়তো বদলে দিয়েছে বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের ভবিষ্যতকে। ... ...
জেল থেকে বেরিয়ে অবধি কাজির মনে পড়ছে দুলির কথা। সমস্তিপুর থেকে কুমিল্লায় ফিরেই গ্রেপ্তার হয়েছিল ও। সে সময় মাসিমাকে ও বলে এসেছিল, ছাড়া যখনই পাব, চলে আসব আমি, সে যতদিনেই হোক না কেন। কাগজ-পত্রে জানতে পারবেন সবই। দুলিকে বলবেন, ওর জন্যে আমি অপেক্ষা করে থাকব। দুলি অপেক্ষা করে আছে, ওকে যেতেই হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ... ...
এখন ২০২২ শেষ হয়ে ২০২৩। মাল্টিন্যাশনাল ফোনের কোম্পানি ফোনে কথা বলার ফ্রিডম প্ল্যানের বড় বড় ফ্লেক্স হোর্ডিং করে। শহর মুড়ে দেয় ফ্রিডম প্ল্যানের বিজ্ঞাপনে। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ঘোষণা করে। সেই ডিজিটাল ইন্ডিয়া থেকে লেবার হয়ে চলে যায় অসংখ্য মানুষ দেশ ছেড়ে। কী কাজে যাচ্ছে—বেশিরভাগের জানা থাকে না। যাদের কথা বলা নিষেধ হয়। যাদের বাড়ি ফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। যাদের ইচ্ছেমতো মারা যায়। ইচ্ছেমতো শাস্তি দেওয়া যায়। দেশ থেকে যাদের খোঁজ রাখা হয় না। ভোটার লিস্টে নাম থাকা এই মানুষগুলোর নামের পাশে ভোট পড়ে যায়। ... ...
এ প্রসঙ্গে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার শেষ নবাব নবাব নাজিম মনসুর আলি খান ফেরাদুন জার বংশধর নাফিসুন নিসা নাসির (নাফিসা) এর বিয়ের খাওয়া দাওয়ার কথা আজও ভুলতে পারিনি। আগেই বলেছি এক সময় নিজামত পরিবারে বিরিয়ানির কোনো অস্তিত্ব ছিলনা তবে আজকাল নিজামত পরিবারে বিরিয়ানির খুব রমরমা শুরু হয়েছে। নাফিসার বিয়েতেও মূল খাবার হিসেবে বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়েছিল, সেই বিরিয়ানির স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে। সেবার খেতে বসে প্রথমেই দেওয়া হয়েছিল ঘিয়ে ভাজা পরোটা ও চিকেন রেজালা, ওহ সে কি অপূর্ব স্বাদ। ... ...
মনে হল, হঠাৎ কী যেন একটা মজার প্রসঙ্গ এসে পড়ল এই ভাঙাচোরা উঁচুনীচু ভাগীরথীর পলি দিয়ে গড়া পাড়াটাতে। চারিদিকে বাকি দর্শকেরাও হাসতে শুরু করল। পুরুষ-মহিলা কন্ঠে নানারকম হাসি। হঠাৎ মনে হল ষাট-বাষট্টির আনিকুল যেন বাচ্চা একটা ছেলে। যেন আনিকুলের টিফিন টাইমে ইস্কুল পালানো বা রাগী স্যারের টিউশন থেকে প্রেম করতে পালানোর মতো বেশ একটা মজার ব্যাপার নিয়ে এক্ষুনি কথা হচ্ছে। ছেলেটা খিক খিক আওয়াজ করে হাসতে হাসতেই বলে চলেছে, পালাতে নিয়েছিল তো কয়বার! পেরেছে নাকি! পেরেছে নাকি! ... ...
সারি মস্ত আবার তৈরি হয়েছে – কিন্তু সে কি পারে মানুষকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে আনতে? তিন বছরের গৃহযুদ্ধ বিনষ্ট করেছে পাঁচশো বছরের সহাবস্থান। ক্রোয়াট ও বসনিয়াক ছেলেমেয়েরা একই স্কুলে যায়, কিন্তু আগের মতো এক ঘরে একই ক্লাসে বসে না: সিলেবাস এক, ভাষা এক। কিন্তু ক্রোয়াট ও বসনিয়াক ছেলে মেয়েদের স্কুলে ঢোকার গেট আলাদা – মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। ক্লাসরুম আলাদা। এক নতুন বৈষম্য। ... ...
কাজিদা, গান্ধীজী আর গুরুদেবের জোড়াসাঁকোর বাড়ির আলোচনার কথা তুমি তো জানই, গান্ধী তখন তাঁর অসহযোগিতার উপযোগিতা রবীন্দ্রনাথকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। অনেক কম বয়েসে জমিদারি চালাবার কাজ নিয়ে কবি যখন শিলাইদহে যান তখনই তিনি আমাদের দেশের গ্রামীণ দুর্দশার কারণ সম্যক বুঝেছিলেন। সেই কারণটাই তিনি বুঝিয়েছিলেন এল্ম্হার্স্ট সাহেবকে: এক, গ্রামের মানুষ এখন হারিয়েছে তার আত্মবিশ্বাস, সে নিজেই বিশ্বাস করে না যে তার বর্তমান দুর্দশার পরিবর্তন সম্ভব; আর দুই, তাদের বর্তমান অবক্ষয় রুখে দিয়ে প্রগতির পথে তাদের ফিরিয়ে আনতে হলে ফাঁকা রাজনৈতিক শ্লোগানে কাজ হবে না; দুর্দশার প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণার সাহায্যে দুর্দশার মূল কারণ নির্ধারণ করে একমাত্র প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির প্রয়োগই এই দুর্দশা বদলাতে পারে। ... ...
জল নয়। জল নয়। খটখটে রোদে চকচক করে ওঠা বালি ওখানে। সেই গল্পের মত। ওরকম জলের মত দেখতে লাগে। কাছে গিয়ে দেখা যায় বালি। বলে মরীচিকা। ঠা-ঠা-পোড়া রোদে গা-হাত-পা-সারা শরীর যেন জ্বলে জ্বলে উঠছে। এই কোথায় গেল! করকর করা চোখ দুটো গুনছে এবার। উনষাট, ষাট, একষট্টি, বাষট্টি… না একটা নেই তো। চারিদিকে যতদূর বালির ঢেউয়ের দিকে চোখ যায়, খোঁজার চেষ্টা করছে। তারপর ঝাপসা। আটষট্টি, ঊনসত্তর… না মিলছে না। কোনও একটা নাম ধরে চ্যাঁচাচ্ছে। আলম ইকবাল বা ইমরান…। ডাকছে। বারবার। মুখের ভেতর শুকনো জিভটা নড়ে নড়ে উঠছে। শুকনো গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোতে চাইছে না। বা-আ-বু…ল আ-বু…ল। না, সাড়া নেই। ... ...
ক্রোয়েশিয়ান চৌকির পুলিস কিঞ্চিৎ কৌতূহলী। আমার চেহারার সঙ্গে আমার পাসপোর্টের রঙ, গাড়ির নম্বর প্লেট এবং পার্শ্ববর্তিনীর মুখ কোনটাই মেলে না, প্রায় কখনোই। চার দশক কেটে গেছে, পুলিশের বিস্ময় আমাকে আর বিস্মিত করে না। এখন কেবল পরবর্তী সংলাপের অপেক্ষা। পরিচ্ছন্ন ইংরেজিতে জানতে চাইলেন ঠিক কোথায় যাচ্ছি—মস্তার? বললাম, মস্তার যাবো, তবে মেজুগরিয়ে হয়ে। রোদিকাকে দেখিয়ে বললাম ইনি যে অত্যন্ত ধর্মপ্রাণা মহিলা, একবার মা মেরির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান! ... ...
পত্রিকার নাম ধূমকেতু, তার সম্পাদককে বলা হল সারথি। উনিশশো বাইশের এগারই আগস্ট বেরল প্রথম সংখ্যা ধূমকেতু, রবীন্দ্রনাথের একটি বাণী তার শিরোভূষণ। এর এক বছর আগে, উনিশশো একুশের সেপ্টেম্বরে, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে এক বহুল প্রচারিত আলোচনায় রবীন্দ্রনাথকে অসহযোগ আন্দোলন, বিদেশী বস্ত্র বয়কট এবং চরকাস্ত্র প্রয়োগে স্বরাজের ভাবনায় নিজের মতে আনতে ব্যর্থ হয়েছিলেন গান্ধী। এক বছর পর নজরুলের এই প্রয়াসকে প্রাণ-ভরে আশীর্বাদ জানালেন কবি! ... ...
বিগত তিরিশ বছরে নানান দেশের নানান ব্যাঙ্কিং প্যানেলে বহু জ্ঞানীগুণীর সঙ্গে একাসনে বসে ঘণ্টাখানেক বাক্যালাপ করে পাঁচজনের সঙ্গে আমিও ফিরিতে হাততালি কুড়িয়েছি। এইসব প্যানেল আমারই মত অন্যান্য ব্যাঙ্কের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিঙের ফিরিওলা, কর্পোরেট প্রধান, সরকারি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মাঝারি প্রবক্তা, খবরের কাগজের প্রতিনিধি (যাঁরা প্রশ্ন করেন কেতাবি, উত্তরের অর্থ অর্ধেক বোঝেন কিনা সন্দেহ) এমনি সব মানুষদের নিয়ে তৈরি হয়। নির্ধারিত অনুষ্ঠানের আগেই আমরা কনফারেন্স কল (জুম কল আসতে দেরি আছে) করে ঠিক করে নিই প্রশ্নাবলী কী হবে, কে কী বলবে। শ্রোতারা ভাবেন – চার-পাঁচ জন নারী পুরুষ একত্র বসে কোনো অর্থনৈতিক সমস্যা বা বিষয়ের ওপরে কোনো গভীর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ দ্বারা মহতী সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছেন। ... ...
ভালো লাগে না কাজির, সে স্বভাবতই খোলামেলা চরিত্রের মানুষ, এই-যে দুলির সঙ্গে এমন একটা ঘনিষ্ঠতার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল সে, সেটাকে যে যথাসাধ্য গোপন করার চেষ্টা করতে হচ্ছে, এ তার ভালো লাগে না। কিন্তু গোপন না করেই বা কী উপায়? দুলি তো একেবারেই ছেলেমানুষ; নিজের ভালো যদি নিজে সে বুঝত! কাজির মতো একজন ছন্নছাড়া বিষয়আশয়হীন গৃহহীন অর্থসংস্থানহীন মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অর্থ যদি সে বুঝত! বোঝে না, তাই কাজির দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। কিন্তু কাজির যে চিৎকার করে সারা পৃথিবীকে জানাতে ইচ্ছে করছে! ছন্নছাড়া হতে পারি, কিন্তু আমার মতো ভাগ্যবান কে আছে! ... ...
আরতুরোস বললে, ‘দেখতে থাক। পাঁচ মিনিটের বেশি যদি লাগে, হোটেলে ফিরে গিয়ে আমার পয়সায় বিয়ার খাওয়াব। কৌতূহল বেড়ে গেল। বিয়ারের জন্য নয়। সপরিবারে পরায়া গাড়িতে কারো লিফট পাওয়া অসম্ভব মনে হচ্ছিল। তিরিশ বছর আগে জার্মানিতে হাত দেখিয়ে লিফট জোগাড় করার ভীষণ চল ছিল। নিজে করেছি। তবে সেটা অটোবানে। শহরে নয় -সেখানে সরকারি পরিবহন ব্যবস্থা আছে, আমেরিকার মতন নয়। কথ্য জার্মানে বলা হয়, বুড়ো আঙ্গুল (প্যার দাউমেন) দেখিয়ে সফর করা। নিরাপত্তা পরিস্থিতির অনিশ্চয়তার কারণে হয়তো জার্মানিতে এই যানযাত্রার পদ্ধতি প্রায় বিলীন এখন। ... ...
আগুন জ্বললো পরের দিন, সম্পূর্ণ নতুন আবহে। এমনটা কাজি দেখেনি আগে; দোলের আগের দিন, সন্ধ্যে পেরিয়ে তখন রাত অনেকটাই। পরের দিন পূর্ণিমা, আজই আকাশ ভেসে যাচ্ছে আলোর বন্যায়। নানারকমের কাঠকুটো যোগাড় করে গ্রামের ছেলেরা এসে জমিদারবাবুর প্রাঙ্গনে আগুন জ্বালাল। ছেলের দল বলল নেড়াপোড়া, কিরণশঙ্কর বললেন চাঁচর। তারপর বললেন, ওদের নেড়াপোড়া কথাটাও কিন্তু বেশ যুক্তিযুক্ত। ধানকাটা হয়ে গেছে, পিঠেপায়েসের উৎসবও শেষ। এখন নতুন করে জমিতে কাজ শুরু হবে, তার আগে ক্ষেতে পড়ে-থাকা শস্যস্তম্ব, মানে, শস্য কেটে নেবার পর ক্ষেতে পড়ে থাকে যেটুকু, যাকে গ্রাম্য ভাষায় নেড়া বলে, তা পোড়ানো হবে। ... ...
আমরা কেউ অবশ্য পুরোপুরি সফল হই না! তাহলে পৃথিবীর চেহারাটা বদলে যেত। তবে একই জিনিসকে আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে জানার ও শোনার বিশেষ মূল্য আছে। আন্তর্জাতিক ঋণ প্রায় ৯৫% ইংরেজি আইনের আওতায় (ইংলিশ ল) পড়ে – (আমেরিকান ল বলে কিছু নেই)। তবু ঋণ গ্রহীতার দেশের আইনকানুনের খবর রাখতে হয়েছে। তার পূর্ণ দায়িত্ব আমার নয়। ... ...
গতকাল, কাজি বলে, ঘুম আসছিল না কাল রাতে; তারপর হঠাৎ কেমন মনে হল, একটা কবিতা লিখতে হবে। ওদিকে মুজফ্ফর তখন গভীর ঘুমে। আমি উঠে ভয়ে ভয়ে আলোটা জ্বালালুম, পাছে ওর ঘুম ভাঙিয়ে দিই। দেখলুম ও ঘুমিয়েই চলেছে, আলো বুঝতেও পারছে না। তখন লিখতে শুরু করলুম, পেনসিল দিয়ে। কেমন যে একটা তোলপাড় হচ্ছিল মনের মধ্যে বোঝাতে পারব না আপনাকে। মনে হচ্ছিল, দোয়াত-কলম দিয়ে পারব না লিখতে, কালি শুকিয়ে যাওয়া, দোয়াতে আবার কলম ডোবানো, এসব করতে পারব না, করার সময় হবে না। পেনসিল দিয়ে কিন্তু ঝর ঝর করে লেখাটা হয়ে গেল অবিনাশদা। লেখাটা দেখুন, বিশেষ কিছু কাটাকুটি নেই, যেন আমার মাথার মধ্যে ছিলই কবিতাটা। শুরু করতেই নিজেই নিজেকে যেন টেনে নিয়ে গেল। লেখা শেষ হতে, মুজফ্ফরকে ঘুম ভাঙিয়ে টেনে তুললুম। কাউকে একটা শোনাতেই হবে। ... ...
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পনেরো টুকরো হয়েছে। একদা এই পনেরোটি রিপাবলিকের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ছিল রাশিয়ান। কালিনিনগ্রাদে যখন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা বাজে, পুবে দিওমেদ দ্বীপে তখন পরের দিনের ভোর সাড়ে পাঁচটা – সর্বত্র ভাষা এক। লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া থেকে কাজাখ অবদি সবার নিজস্ব ভাষা আছে, ছিল। তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় রাশিয়ান। নইলে রাজ্য শাসন অসম্ভব। যেমন আমাদের শাসকরা চাপিয়েছিলেন ইংরেজি, সেটিকে আমরা আঁকড়ে ধরেছি। বাইরের জগতের পাসপোর্ট এটি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রাঁসোয়া দুপ্লে রবার্ট ক্লাইভকে হারাতে পারলে ফরাসি আমাদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হত! ... ...