রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনগুলোর লক্ষ্য কী? মোটা দাগে ৪টি লক্ষ্য : এক. আরাকানে রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, দুই. রোহিঙ্গাদের আবাসভূমি হিসেবে আরাকানকে স্বাধীন করা, তিন. বাংলাদেশের কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু অংশ ও আরাকান নিয়ে একটি স্বাধীন ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। চার. আরাকানে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্যে যেসব সংগঠন কাজ করছে সেগুলো হচ্ছে―রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), হরকাতুল ইয়াকিন, আকামুল মুজাহিদিন আরাকান, ফেইথ মুভমেন্ট অব আরাকান, রোহিঙ্গা আজাদি ফোর্স, জমিয়তে ইত্তেহাদুল রোহিঙ্গা, জমিয়তে ইত্তেহাদুল ইসলাম, আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন, বার্মা আরাকান অর্গানাইজেশন ইউকে, ভয়েস অব রোহিঙ্গা ইউনাইটেড, রোহিঙ্গা রিফিউজি হিউম্যান রাইটস, আরাকান পিপলস ফ্রিডম পার্টি, অ্যাসেম্বলি অব রোহিঙ্গা অ্যাসোসিয়েশন, আরাকান রোহিঙ্গা স্টুডেন্ট ডেমোক্রেসি অ্যাসোসিয়েশন, আরাকান ইউনাইটেড ফোর্স, আরাকান আর্মি (এএ), আরাকান লিবারেশন ফ্রন্ট (এএলপি), আরাকান পিপলস আর্মি, আরাকান রোহিঙ্গা ফোর্স, সাওতুল্লাজিন, ইত্তেহাদুল ইসলাম প্রভৃতি। ... ...
আরবীয় ইসলাম বঙ্গে এসে বঙ্গীয় সংস্কৃতির সঙ্গে নানা বিষয়ে আপোষ করতে বাধ্য হয়। এই আপোষের কথা সবাই জানেন। তবু ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই। খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি যখন ভারতে ইসলাম প্রচারে এলেন তখন ভারতবাসী নিম্নবর্ণের হিন্দুদের পোশাক ছিল ধুতি ও নেংটি। খাজা ও তার সঙ্গীদের পোষাক ছিল পায়জামা ও আলখাল্লা। খাজার এক শিষ্য একদিন খাজাকে বললেন, ‘হুজুর, হিন্দুরা তো অনৈসলামিক পোশাক ধুতি-নেংটি পরে। আপনি এদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে দিন।’ . খাজাসাহেব শিষ্যের কথা পাত্তা তো দিলেনই না, উল্টো তিনি নিজেই ধুতি পরা ধরলেন। পায়জামা-আলখাল্লা দেখে এতদিন খাজাসাহেবকে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা ঠিক ওভাবে গ্রহণ করতে পারছিল না। তিনি যখন ধুতি পরা ধরলেন তারা ভাবল, আরে, খাজাসাহেব তো আমাদেরই লোক! এই যে তিনি আমাদের মতো ধুতি পরছেন! তখন নিম্নবর্ণের হিন্দুরা তার অনুরাগী হতে লাগল। তার হাতে বয়েত নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে লাগল। পরবর্তীকালে খাজাসাহেব তার সেই শিষ্যকে বললেন, আমি যদি প্রথমেই এদের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করতাম তারা আমার কথা শুনত না। কিন্তু এখন আমি যা বলি তা-ই শুনবে। . বঙ্গীয় সংস্কৃতির সঙ্গে আরবীয় ইসলামের আপোষ বা সমন্বয়টা ছিল ঠিক এরকম। কিন্তু রোহিঙ্গাদের মধ্যে এই সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের মনোভাবটা নেই। হ্যাঁ, একটা অংশের ছিল। ... ...
আমরা আখের খেতে লুকিয়ে ছিলাম ওরা আমার কাকাকে মারল, আমার মামাকে জিন্দা জ্বালিয়ে দিল আমি আখ জড়িয়ে পড়ে ছিলাম ওরা ভাবল আমি মরে গেছি, ওরা বহেনা জমনাকে উঠিয়ে নিয়ে গেল --- বাদমে হমনে ভাগা--- ভাগতা হুয়া এক বুডঢা দাদাজি’নে মুঝে কান্ধোমে ব্যায়ঠাকে রফুজি ক্যাম্প রাখকে আয়া। বলে আর কাঁদে – কাঁদে আর বলে একই কথা ঘুরেফিরে আর শক্ত করে ধরে থাকে কোমরের কাছে প্যান্টটাকে। অমরিন্দরের চোখ আরো তীক্ষ্ণ হয় – প্যান্ট উনি খোলাবেনই। এবার ঘোমটার মধ্য থেকেই সরলার ঈষৎ কঠিন কণ্ঠ শোনা যায়। অমরিন্দরের উপস্থিতিতে মাথার ঘোমটা নেমে এসেছে থুতনি পর্যন্ত, তিনি সিংজিকে বাড়ি যেতে বলেন। ছেলেটিকে দিয়ে তিনি খাবার শর্তে কাজ করিয়েছেন, এই ভর দুপুরবেলা সে তাঁর অতিথি, তাকে না খাইয়ে তিনি কোথাও যেতে দেবেন না। আর ছেলেটি বাচ্চা হলেও ছেলে বটে, চার চারটি মেয়ের সামনে তার প্যান্ট খোলার মত অসভ্য ব্যপার তাঁর বাড়ির চৌহদ্দিতে তিনি হতে দেবেন না। থমকে যান সিংজি, কী যেন বলতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত নত হয়ে অভিবাদন করে বেরিয়ে যান তিনি। সরলা এগিয়ে গিয়ে সদর দরজা বন্ধ করে হুড়কোটা তুলে দেন। জামুকে হাত ধারে বসিয়ে দেন থালার সামনে --- ছেলেটা সব সাপটে মেখে নেয় একসাথে --- খায় গবগবিয়ে --- যেন কত দিন মাস খায় নি বুঝি বা। ... ...
দ্যাখো, বাঙালিরা জাতি হিসেবে সত্যিই ভীরু প্রকৃতির। ওদের দলের সভাপতি তপন ঘোষকে আমি খুব ভালো করে চিনি। কয়েক বছর আগে, গঙ্গাসাগরে এক মাড়ওয়ারি সোসাইটির গেস্টহাউসে থাকাকালীন, হিন্দু সংহতির কয়েকজন সদস্যের সাথে স্থানীয় মুসলমানদের খুব ঝগড়াঝাঁটি হয়। মুসলমানরা ওদের আক্রমণ করে। সঙ্ঘের লোকেরা তখন তাদের বাঁচায়। কিন্তু সঙ্ঘেরও কিছু নিজস্ব সীমাবদ্ধতা আছে, সঙ্ঘ সব কিছুতে জড়াতে পারে না। এমনিতে হিন্দু সংহতির মত দলগুলোর দরকার আছে ঠিকই। ওদেরকে (মুসলমানদের) ধরে পেটানো খুবই দরকার। একবার তপনদা আমাকে অনুরোধ করেছিল কয়েকজন হিন্দু সংহতি সদস্যকে আশ্রয় দেবার জন্য। কিন্তু আমি ওদের তাড়িয়ে দিয়েছিলাম, কারণ আমি শুনতে পেয়েছিলাম ওরা সঙ্ঘের নামে খারাপ খারাপ কথা বলছে। ... ...
সবথেকে খারাপ লাগত যেটা, সেটা হচ্ছে এদের বেশির ভাগেরই বাংলা আর বাঙালিদের সম্বন্ধে একটা নিচু দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে চলা। এদের কাছে বাংলায় কথা বলা যে-কোনও লোকই বাংলাদেশি, যারা সঙ্ঘের জয়যাত্রাকে রুখে দেবার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে অবিরাম। আমি একবার শুনেছিলাম আশুতোষ ঝা নামে এক নামী ল কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রকে ভোপালের বাসিন্দা জনৈক ময়াঙ্ক জৈন টাস্ক দিচ্ছে, হয় অন্তত ৫০ জন বাংলাদেশিকে পিটিয়ে এসো, নয় তো সঙ্ঘ ছেড়ে দাও। এঁদের অনেকেই খোলাখুলি অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে রাখতে উৎসাহ দিতেন, যাতে কিনা দরকার পড়লে মুসলমানদের আর রাজ্যের পুলিশদের সাথে টক্কর দেওয়া যায়। আমার ভাগ্য ভালো বলতে হবে, আমি কিছু সিনিয়র সঙ্ঘ সদস্যের সুনজরে পড়ে গেছিলাম। প্রশান্ত ভাট থেকে ডক্টর বিজয় পি ভাটকর, প্রায় যতজন সিনিয়র সঙ্ঘ ইন্টেলেকচুয়ালকে আমি জানতাম, প্রত্যেকেই হিন্দুত্বের ওপর আমার কাজকর্মের খুব প্রশংসা করেছিলেন। ... ...
রাইটার্সের সামান্য কেরাণী প্রমদাকান্ত, বড় দুই মেয়ের বিয়ের ভাবনাতেই কাহিল হয়ে থাকেন, আবার একটা মেয়ে৷ একটাও কি পাশে দাঁড়াবার মত কেউ জন্মাতে নেই! আর এই তো দেশের অবস্থা! যখন তখন স্বদেশী আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে! আরে তোরা পারবি ঐ শক্তিশালী ইংরেজদের সাথে? আর সত্যি তো ইংরেজরা না দেখলে এই দেশটার কি হাল ছিল সে তো জানাই আছে৷ এইসব ভাবনার মধ্যে মানদার চাঁছাছোলা গলা ভেসে আসে ‘অ রুনু মায়ের কাছে একটু বোস দিকি, আমি খুকীটারে একটু পোস্কার করে নিই’৷ জলের স্পর্শে নবজাতিকা তীক্ষ্ণকন্ঠে কেঁদে ওঠে আর মানদার গজগজ চলতে থাকে ‘থাক থাক আর কাঁদে না – ঐ তো মেয়ের ঢিপি – তার আবার অত আদিখ্যেতা কিসের’? সাড়ে ছ বছরের রুনু ঠিক বুঝে যায় এই বোনটা একেবারেই অবাঞ্ছিত৷ ৩ বছরের ঝুনু অতশত বোঝে না, বোনকে দেখতে চায়, হাত বাড়াতে যায় – মানদার ঝঙ্কারে ভয় পেয়ে সেও বোধহয় নিজের মত করে বুঝেই যায় যে বোনটা এমনকি তার চেয়েও বেশিঅনাকাঙ্খিত৷ সরলাবালার জ্ঞান আছে কিনা বোঝা যায় না, চুপচাপ পড়ে থাকেন৷শুধু অনিলাবালা বলতে থাকেন ভগবান যা দেন তাই হাত পেতে নিতে হয়৷ অশ্রদ্ধা করতে নেই৷ তবে বাড়িতে জামাই আছে, তাই গলা তেমন চড়ে না৷ ... ...
তিনতলার ঘরে মস্ত বড় পালঙ্কের এক কোনায় বসে যুঁই আপনমনে সরু সরু দুটো কাঁটা আর খুব শক্ত আর সরু একলাছি সুতো দিয়ে নক্সা বুনছিল; একে বলে কুরুশের কাজ, নতুন শিখেছে ও নমিতা, ছোটমাসীমার দেওরের মেয়ের কাছে, বেশ দিব্বি ছোট ছোট কয়েকটা কাপডিশ বসাবার নকশাদার ঢাকনি বানিয়েও ফেলেছে। পুর্ববঙ্গে থাকতে ওরা জানত শুধু উলবোনা, চটের আসন বোনা আর টুকটাক রুমালে সুতো দিয়ে নকশা করা। ছোটমাসীমার নিজের চারটিই ছেলে কিন্তু তাঁর দেওর ভাসুরদের বেশ ক’টি মেয়ে, সকলের সাথেই যুঁইয়ের বেশ ভাব হয়ে গেছে এই কয়দিনে। মাঝে একবার খবর পেয়ে সাঁতরাগাছি থেকে সেজমাসীমা তাঁর বড়ছেলেকে নিয়ে এসে দেখে গেছেন যুঁইকে। কিন্তু তাঁকে কেমন অচেনা লাগে ওর, কিরকম অদ্ভুত ভাষায় কথা বলেন উনি। ছোটমাসীমাদের ভাষাও যুঁইদের থেকে খানিকটা আলাদা, কিন্তু তাও অনেকটাই মিল আছে, কিন্তু সেজমাসীমার ভাষা, উচ্চারণ সব কেমন আলাদা হয়ে গেছে। সেজমাসীমা আসবেন তাই দিদিমণিও এসেছিলেন খড়দা থেকে। দিদিমণি বলেন ‘তুই অ্যাক্করে এদেশী হইয়া গেছস শেফালী, তর কথাবার্তা আর আমরার দ্যাশের নাই’ সেজমাসীমা দিব্বি হেসে কেমন করে বলেন ‘যা বোলোচো মা। অ্যাগদম তোমার জামাইয়ের ভাষায় কতা কইচি।’ ... ...
এইসময় তো বাবার ব্যাঙ্কে অনেক কাজ থাকে, চেয়ার থেকে ওঠার সময়ই থাকে না , এইসময় হঠাৎ বাবা বাড়ী এল কেন --- এইসব ভাবতে ভাবতেই যুঁইয়ের স্নান সারা হয়, গোয়ালঘরের পাশ দিয়ে ঘুরে অন্দরের ঘরে এসে ঢুকে চুল আঁচড়ায়, কাজল দিয়ে কপালে একটা টিপ পরে ছোট্ট – আধা অন্ধকার ঘরের দেরাজ আয়নায় নিজেকে দেখে একবার এপাশ ফিরে, একবার ওপাশ ফিরে। মা ঘরে ঢোকে বাচ্চুকে কোলে নিয়ে, ওকে দেখেই চাপা গলায় একবার বাইরের বৈঠকখানার ভেতরদিকের দাওয়ায় আসতে বলে। যুঁই ভারী অবাক হয়, বাইরের লোক থাকলে বৈঠকখানার দিকে ওর যাওয়া মানা তো, মা’কে প্রশ্ন করার সাহস ওর নেই, যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মা’র চোখ পড়ে ওর কপালের টিপের দিকে, চাপা গলায় প্রায় ধমকে মা ওকে টিপটা মুছে বাইরে যেতে বলে। যুঁইয়ের চোখে জল আসে – কোথাও তো একটু বাইরে যায় না কতদিন হল, ইস্কুলে যাওয়াও বন্ধ, বাড়ীর মধ্যে একটা ছোট্ট মুসুর দানার মত টিপ – তাও মুছতে হবে! মা ততক্ষণে অধৈর্য্য হয়ে এগিয়ে এসে নিজের আঁচল দিয়ে ঘষে ঘষে মুছে দেয় টিপটা – একটু পিছিয়ে গিয়ে দেখে নেয় কপালে টিপের কোনও চিহ্ন থেকে গেল কিনা – বাচ্চু হাত বাড়ায় যুঁইয়ের কোলে আসবে – মা হাত টেনে নিয়ে শক্ত করে বাচ্চুকে কোলে চেপে ধরে হাঁটা দেয়। যুঁই কেমন আবছামত বুঝতে পারে কোথাও একটা কিছু গোলমাল হয়েছে, বড় গোলমাল। ... ...
ট্রপিকাল থেকে ছাড়া পেয়েছি প্রায় দু’মাস। এখনও দুই সপ্তাহান্তে একবার যেতে হয় হাসপাতালের আউটডোরে। লাইন দিতে হয়। টিকিট কাটতে হয়। অপেক্ষায় থাকতে হয়, কখন খিটখিটে দিদিটা নাম ধরে ডাকবে। কোন ডাক্তার যে দেখবে, ভগা জানে। কমবয়সী ডাক্তারগুলো হেসে কথা বলে, আমার সঙ্গে নয় সবার সঙ্গে। মৃদু কথা বলে। কেন? এখনও তালেবর হ’য়ে ওঠেনি তাই ? আমাকে ওরা পরীক্ষা করে, তারপর বসিয়ে রাখে ডাক্তার সাহার জন্য। তিনি এলে আবার পরীক্ষা করেন। ওষুধ লিখে দেন। সে ওষুধের জন্য ফার্মাসীতে দীর্ঘ লাইন দিতে হয়। তারপর উইণ্ডোতে পৌঁছালে ভোরিকোনাজল আছে কি না সেটা দেখতে স্টোরে পাঠানো হয়। থাকলে পেয়ে যাই। নৈলে পরদিন লাইন। একদিন তো অধৈর্য হয়ে বেরিয়ে যাবার মুখে ডাক্তার সাহার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ‘দাঁড়ান, দাঁড়ান, কোথায় যাচ্ছেন’ বলে রাস্তার পাশে একটা হাফ ওয়ালে বসেই পেট টিপে, স্টেথো লাগিয়ে, অজস্র প্রশ্ন করে তবে ছাড়লেন। লাইনে দাঁড়ানো অসংখ্য রুগী সাক্ষী রইলেন এই অপূর্ব চিকিৎসার। ... ...
ভর্তি হলাম কারমাইকেল স্কুল অব ট্রপিকাল ডিজিসেস। আর উপায়ান্তরও ছিল না। অ্যাপোলো সব টাকা খেয়ে নিল যে। অ্যাসপারজিলোসিস এর চিকিৎসার দুটো মাত্র পদ্ধতি। এক ইন্টারভেনাস লাইপোজোমাল এফ-বি, আর একটা ভোরিকনোজল। যেহেতু আমি লিভারের পেশেন্ট, ঠিক হলো যে লাইপাজোমাল দেওয়া হবে। কাজ হলো মিরাকলের মত। গত আট মাসের মধ্যে আমি প্রথম অনুভব করলাম মাথা ব্যথা ছাড়াও মানুষের ঘুম হয়। যে ঘুমের ওষুধ এবং এনার্জী বুষ্টআপের ওষুধ এতদিন কাজ করে নি তারাও কাজ করতে শুরু করেছে। ... ...
আলোচনায় ফিরি। মধ্যবিত্ত মানুষ এত সুযোগ সুবিধা থাকা সত্বেও সরকারি হাসপাতালের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলেন কেন? আমি কেন এড়িয়ে চলতাম? আমার কারণগুলিকে এইভাবে চিহ্নিত করতে পারি। ১. আমাদের চিকিৎসা অভ্যাস। প্রাথমিকভাবে পাড়ার পরিচিত ডাক্তারের কাছে যাওয়া। তিনি সারাতে না পারলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের খোঁজ করা। মানে নিজস্ব পরিচিতি সুত্রে যিনি বিশেষজ্ঞ। এবার তিনি কোথায় কোথায় বসেন খোঁজ করা। নিজের সুবিধা এবং সামর্থ অনুযায়ী অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে তাঁকে দেখানো। সরকারি সিস্টেমে এটা সম্ভব নয়। ওপিডিতে যে ডাক্তার থাকে তাকেই দেখাতে হয়। তাঁর মনে হলে তবে সেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ছাড়পত্র পেলেন। ... ...
আমার চণ্ডাল রাগ খপ করে চেপে ধরলো সেই হাত -কিন্তু শক্তিতে দুর্বল ধরে রাখতে পারলোনা বেশিক্ষণ । আমার নিজের ওপরই রাগ হতে থাকলো ,নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা হল । কিন্তু এইভাবে হেরে যেতে আমি পারবোনা । একটা ঘিনঘিনে ভাব ,অদ্ভুত ভয় নিয়ে কি করে কাটাবো সারাদিন ? এর একটা বিচার দরকার । আমার মনের একদিকে তখন ভয় আমি যদি চ্যাঁচামেচি করি আমার ১৫০টাকার চাকরি তক্ষুনি যাবে । আবার সেই সুন্দরবনের খুদ কুড়োর পান্তা খাওয়া ,আবার বোনের স্কুলের মাইনে বন্ধ হওয়া ,মাঠে মাঠে গোবর কুড়ানো । কিন্তু আমার মনের অন্যদিক তখন চণ্ডাল রাগে ফুটছে,'সাটার পাটা’ যদি না ফেলে দিয়েছি আমি শালা বড় মাতব্বরের মেয়ে নই । কিন্তু কী করি -ফাঁদ তো পাততে পারি ? দিদিমা নাতি বিষয়ে অন্ধ ,সে যে একটি লোভী ,ভীতু ,শুয়োরের বাচ্চা সে বিষয়ে দিদিমা আমার মত এক কাজের মেয়ের কথা বিশ্বাস করবে কেন ? দাদুকে গিয়ে ধরলাম। ... ...
পরবর্ত্তী সময় “জেন্ডার কনস্ট্রাক্ট” নিয়ে তো অনেক পড়াশোনা করেছি, কিন্তু তখন তো বয়স মাত্র'চার'। কিন্তু ওই বয়সেই এই বোধটুকু তৈরী হয়েছিল যে ছেলেদের এত কোমল হ'তে নেই - এত মায়া মমতা, এত' দয়া দাক্ষিণ্য কি 'ছেলে'দের হ'লে চলে? তাদের ত' হ'তে হবে খাপছাড়া, বেমানান, ডানপিটে, মিটিমিটি, বদমাইশ। তবেই না ছেলে, ব্যাটাচ্ছেলে!! আর এ দেখ - সবকিছুই কেমন মানানসই, বড় সুন্দর, বড় নরম, "ভালো' এবং আদুরে টাইপ!! পাল্টে দাও, পাল্টে দাও একে !! ... ...
আমার ওয়ার্ডের সামনের টানা বারান্দা দিয়ে নিচে দেখা যায় স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিন এর আউটডোর। কারমাইকেল হাসপাতাল। কাতারে কাতারে লোক লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার ওয়ার্ডের পিছনের টানা বারান্দা দিয়ে একটু দূরে দেখা যায় কলকাতা মেডিকাল কলেজ এর আউটডোর। কাতারে কাতারে লোক লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে। কত লোক? তিন হাজার বা পাঁচ হাজার, বা দশ হাজার? আমার কোনও আন্দাজ নেই। “এখানে স্কিনের দিন সবচেয়ে বড় লাইন পড়ে। এইডস আর থ্যালাসেমিয়ার দিন কম। ডেঙ্গুর সময় তো দাঁড়াবার জায়গা পাবেন না।” সব ইনফরমেশন আমাকে জোগায় রুগীর আত্মীয়েরা, ওয়ার্ড অ্যাটেনডেন্টরা এমনকি নার্সেরাও। দু টাকার টিকিট, ডাক্তার লিখে দিলে ওষুধও ফ্রী। সারাটা দিন হয়তো এখানেই কাটবে, কিন্তু তাতে কী? পাড়ার ডাক্তারও ভিজিট একশো টাকা করে দিয়েছে। ওষুধের দাম আকাশছোঁয়া। চুলকুনি হলেও খরচ আছে তিনশো টাকা। জ্বরজারি হলেতো কথাই নেই। টেস্টের খরচ আছে কম করে পাঁচশো টাকা। তার চেয়ে একটা দিন নষ্ট হলে কী আর লোকসান। ... ...
রাত হোয়ে গেল অথচ মেয়ে ভেড়ার পাল নিয়ে এখনো বাড়ি ফিরলোনা দেখে আমার বাবা মা কাকা কাকি এদিক ওদিক হ্যারিকেন নিয়ে খুঁজে বেড়াতে থাকলো – আমি তো তখন অনেক দুরে, অন্য এলাকার গম্ভীর মাঠের মাঝে নূতন কাটানো খালের একদম নিচের ঠাণ্ডা মাটিতে অঘোরে ঘুমাচ্ছি। ঘন অন্ধকারে, খালের ভেতরে মানুষ দেখবে কি করে? ওই খালের আসে পাশে নাকি মড়া বাচ্চাদের পুঁতে দেওয়া হত তাদেরই কেউ আমায় নিয়ে গেল নাতো? আমাদের এলাকার পেছন দিকে সেই গম্ভীর মাঠ, মাঠের এক কোনায় সেই নূতন কাটানো খাল, আর খালের ওপারে অন্য পাড়া। এপাড়া থেকে হাঁক পাড়া হচ্ছে কেউকি আমার মেয়ে, ভেড়ার পাল দেখেছো নাকি? মাঠ পেরিয়ে ও পাড়া থেকে উত্তর আসছে কই তেমন তো কিছু দেখিনি। আমি তখন অঘোর ঘুমে, আর আমাকে ঘিরে রয়েছে বড়মা আর বাকি সব ভেড়াদের পাল। সন্ধে হলে পোষা গরু ভেড়া ছাগলের দল নিজেরাই পথ চিনে ঘরে ফেরে, আমার ভেড়ার পাল’ও ফিরে যেতে পারত, আমি তো তাদের খোটায় বেঁধে ঘুমাতে যাইনি – কিন্তু ওই, বড়মার তো তার সন্তানের প্রতি দায়িত্ব আছে। তারা সবাই শেয়ালের ভয় ভেঙ্গে আমাকে গোল করে ঘিরে ধরে পাহারা দিচ্ছে ওই যে আমি বলেছিলাম ‘আমি একটু শুলাম তোমরা আমাকে ছেড়ে যেওনা’। ... ...
দশ বছর পরে এইবার সুরাট গেলাম প্লেনে করে। জীবনে প্রথমবার। আমেদাবাদ থেকে সুরাটে পৌঁছালাম সেই মাঝরাতেই প্রায়। আমাকে একজন নিয়ে গিয়েছিলেন নতুন কাজ শেখানোর ট্রেনিং দিতে। কখন পৌঁছালাম টেরই পেলাম না। উঠেছিলাম সেই সুরাট স্টেসানের কাছেই লিফট আছে এই রকম এক হোটেলে। সেখানে সকালের খাওয়াও ফ্রি। জানেন অনেকক্ষণ ধরে হেঁটে হেঁটে খুঁজে বেড়ালাম আমার সেই দশ বছর আগে একই শহরে একই এলাকায় ফুটপাথে রাত কাটানোর জায়গা টা। দেখলাম আমারই মত কত আলপনা এখনো ফুটপাথে শুয়ে আছে – কে জানে তারাও সুন্দরবন থেকে কিনা। ... ...
টিভি যাতে বেশি দেখতে না পারি এই বিষয়ে মালকিনের নজর ছিল অবাক করার মত ,পাঁচ মিনিট দেখতে না দেখতেই রান্না ঘরে অকারণে ডাক পড়ত আর আমার মেজাজ গরম হয়ে যেত , পরে রাগ করে টিভি দেখাই ছেড়ে দিলাম । তবে বিজয় দাদা ‘ কহোনা প্যার হ্যায় ‘ দেখিয়েছিল । বাড়িতে ভিডিও প্লেয়ার এলো , মেঝেতে শতরঞ্চি বিছানো হল আর কিছুক্ষণের মধ্যে ম্যাজিক । এই লোকটা মানুষ ? এই রকম রবারের মত শরীর ব্যাঁকায় কীভাবে । আমি প্রায় পাগলের মত গিলতে থাকলাম । আমি তখন হিন্দির সাথে সড়গড় কিন্তু গল্পে কোন আগ্রহ নেই যত আগ্রহ ওই পাগলের মত শরীর দোলানোতে । সিনেমা শেষ হল । ফিরে গেলাম রান্না ঘরের কোনে আমার বিছানায় ,কিন্তু ঋত্বিক রোশন আমার মাথায় কেমন যেন ঝড় তুলতে থাকলো । একা একা অন্ধকার রান্না ঘরে শুরু হল ঋত্বিক রোশনকে নকল করার চেষ্টা । নেশা ধরে গেল বলতে পারেন । সময় অসময়ে নেচে নিতাম -একদিন হঠাৎ বিজয় দাদা আমার নাচ দেখে হেসেই কুটোপাটি । আমি তো লজ্জায় লাল । পরের দিন বিজয় দাদা কেবল আমার জন্য আবার ভিডিও প্লেয়ার ভাড়া করে আনলেন । চুক্তি হল আমাকে ঋত্বিক রোশনের মত নেচে দেখাতে হবে । ... ...
আমি আলপনা,আলপনা মন্ডল,প্রথাগত অর্থে অশিক্ষিত। দাদার সংসারে ক্লাস ফোর এ ছাত্রবন্ধু কিনে দেয়নি বলে অভিমানে লেখা পড়া ছেড়ে ৯বছর বয়েসে কলকাতা পালিয়েছিলাম।আর পড়াশোনা হয়ে ওঠেনি , আমি আর কোনদিন ছাত্রবন্ধু কিনে উঠতে পারিনি। আমার কম্পিউটার নেই,চালাতেও পারিনা, আধুনিক ফোনও নেই (তবে জিও আছে) এমনকি আপনাদের এই সভায় আমার প্রথম পোস্ট টি লিখতেও কেউ আমাকে সাহায্য করছেন। তবে শিখে যাব,পারবই। গুরুচণ্ডা৯ নাম দেখে আগ্রহ জেগেছিল, কিন্তু গ্রুপে সবাই দেখলাম বামুন/কায়েত তবুও আমার মত চণ্ডাল -অশিক্ষিতা কে জায়গাবদল করবার আমার কথা বলবার সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ। আমাদের কথা কেউ মনেও রাখেনা। আমি এখনও নিজে কম্পিউটার চালাতে জানিনা, কম্পিউটারে কী করে টাইপ করতে হয় জানিনা। আধুনিক ফোন নেই তবে জিও আছে । আমি বলি,ব্যাঁকা ট্যারা করে রুল টানা কাগজে লিখি, কাটি, মুছি, কেউ আমাকে সাহায্য করেন,তিনি সাজান গোছান, আমাকে পড়ান, মতামত নেন তারপর পোস্ট করেন। এখনো আমি পুরোপুরি লেখিকা নই কিন্তু কথা আমার । আমার নিজের জীবনের । ... ...
গত কয়েক দশক ধরে বস্তারে যখন হু হু করে ঢুকে পড়তে লাগল গেরুয়া-ঝাণ্ডা হাতে শঙ্করাচার্য্যের চেলারা, লাল ঝাণ্ডা হাতে মাওয়ের চেলারা, এবং তার পর পর ভয়াল অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে ভারতরাষ্ট্রের সউর্দি চেলারা, তখন সেই প্রহার আর সইতে পারল না এই কৌম-কমনীয় যৌব-যাপন। চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলো শান্ত অরণ্যের বিটপীছায়ায় লালিত যৌবনের পাঠশালাগুলো। আর্য্য-হিন্দু সিদ্ধান্ত অথবা কালচারাল-রেভলিউশান-মণ্ডিত সিদ্ধান্ত – কোনোটাতেই যে এর স্থান নেই! গ্রামের গাইতা-প্যাটেলেরাও যে তাদের হাজার হাজার বছরের টোটেম হারিয়েছে পঞ্চায়েতের সরপঞ্চ-সচিবদের অশোকস্তম্ভিত শিলমোহরের সামনে। তাই এখন গ্রামকে গ্রাম অতীতসমৃদ্ধ যাপন-স্মৃতির হারিয়ে যাওয়াদের ব্যথা বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শূন্য ঘোটুল-প্রাঙ্গণ। ... ...