ভালো লেখা যে পাঠকের চোখে পড়বেই, কখনোই তাকে উপেক্ষা করে চাপা দিয়ে রাখা যাবে না – তার প্রমাণ বহুদিন ধরে নিজের লেখালেখির জগতে নীরবে কাজ করে যাওয়া প্রতিভা, যাঁকে আবিষ্কার করতে আমাদের বাঙালি পাঠকের বেশ দেরি হয়েছে। দেরিতে হলেও, প্রতিভা has arrived – এ কথা তো অনস্বীকার্য। ইতিমধ্যেই গল্প বাদ দিয়েও, আমি তাঁর প্রচুর নন-ফিকশন নিবন্ধ পড়েছি নেট দুনিয়ার এদিকে ওদিকে, কোথাও কোথাও বিষয়ের প্রচণ্ড অভিঘাতে স্তব্ধ হয়েছি। গুরুচণ্ডালির পাতায় তাঁর এই বইয়ের অধিকাংশ নিবন্ধ আগে পড়া ছিল, তথাপি তারা আবার আক্রান্ত করল আমাকে, পাঠক হিসেবে। বৃক্ষহত্যা, জল নষ্ট করা, নদীখনন/ নদী হনন, বে-আইনি খাদানে মাইনিং, নিলামে তোলা কয়লা ব্লক, পরিবেশ দূষণ, আলোক দূষণ, অতিমারী, অতিমারীতে মেয়েদের অবস্থা, অতিমারীর লকডাউন ও তাতে প্রশাসনের ভূমিকা, পরিযায়ী শ্রমিকদের চূড়ান্ত দুরবস্থা। নানা বিষয়ে লিখিত ১৯টি লিখন এখানে এক মলাটে। ... ...
লক ডাউন ও বইমেলা মিলিয়ে শক্তি দত্তরায়ের দুইখানা বই প্রকাশিত হয়েছে খবর পেয়ে একটু চেষ্টা করে দুটিই সংগ্রহ করা গেল। বইদুটি হল ‘পিরবতীর নাকছাবি ও অন্যান্য’ প্রকাশক নান্দীমুখ প্রকাশনী এবং '৪৬ হরিগঙ্গা বসাক রোড' প্রকাশক গুরুচন্ডা৯। প্রথম বইটি হার্ড বাউন্ড, চোদ্দটি ছোট গল্প নিয়ে। অধিকাংশ দুই কি তিন পাতার ক্ষীণতনু গল্প, দুই একটি সাত কি আট পাতার। গল্পগুলি একবসায় পড়ে ফেলা যায় বটে, কিন্তু তারপর এক একটি গল্পের গুরুভার চেপে বসে মনের উপরে, হাঁসফাঁস লাগে যেন। রয়েসয়ে পড়লেই ভাল হতো মনে হয়। ... ...
শব্দখেলায় সোমনাথের পটুত্ব আরও নানা কবিতায় ছাপ রেখে গেছে। ‘মাধব মথুরা মত যাও’ -তে শুধু অনুপ্রাসের চমৎকার ব্যবহারে চমৎকৃত হই না, অবাক দেখি ব্রজবুলির মধ্যে অবলীলায় জায়গা করে নিচ্ছে স্টেশন, গাড়ি, স্টিমার শব্দগুলি। বেখাপ্পা তো নয়ই, বরং অন্য শব্দ বসানো যাবে না এমন অমোঘ। শব্দ বার বার এই পদগুলিতে ব্রহ্ম হয়ে এসেছে, কারণ যে শব্দ, সেইই মাধব! ... ...
এবারে আসি বই প্রসঙ্গে। সবগুলো গল্পই পড়েছি। তিন চারটে গল্প দু-বার করে পড়তে হয়েছে অনুধাবন করার জন্য। তবুও সম্যকভাবে রসাস্বাদন যে করতে পেরেছি সেটি জোর দিয়ে বলা যায় না। তবে কাহিনীগুলি পড়ে বেশ ভাল লেগেছে। মনে হল এগুলি তিনি গভীরভাবেই গবেষণা ও ক্ষেত্র সমীক্ষা করেই রচনা করেছেন। দেশের ভিন্ন ভিন্ন মানুষের, নানা জনপদের, বিবিধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের, রকমারি যাপিত জীবনের অসম্ভব নিখুঁত নির্মাণ করেছেন দক্ষ প্রকৌশলীর মত। ... ...
উপন্যাস-এর নামটা আমাকে বুঝতেই দেয়নি ভিতরের খনিজের উপস্থিতি। প্রচ্ছদে যুবতীর ছবি দেখে মনে হয় কোনো রগরগে রবিবাসরীয়ের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছি। বুঝিনি এই অতি সংক্ষিপ্ত উপন্যাসের প্রতিটি লাইন এক বিরল জীবনদর্শনের মুখোমুখি করে দেবে আমাকে। এক অন্য ধরণের সত্যানুসন্ধান, সাধারণ খুনের মামলার প্রেক্ষাপটে যা এক যুবক যুবতীর উৎকেন্দ্রিক আরণ্যক ভালোবাসা থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে। তেলেগুতে এনক্রিপ্টেড, বাংলায় লেখা, সিডিতে সংরক্ষিত ডায়রি লেখনে বন্দী হয়ে থাকে সেই জীবনকাহিনী। আর কংকাল প্রেমিক-এর জীবন ও মৃত্যু রহস্য উন্মোচিত হয় নোংরা পরির হাতে। ... ...
শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়ের ‘বৃত্তরৈখিক’ উপন্যাসটি, এক অর্থে, সেই প্রাচীন প্যারাবলের আধুনিক রূপ। এই ধারাবাহিক উপন্যাস ৫৮টি পর্বে বিধৃত। ছোটখাট এপিকের মত এই উপন্যাসটির কালখণ্ডের বিস্তারও কয়েক দশক ধরে। প্রাক-স্বাধীনতা থেকে নব্বইয়ের দশক। দুটো এলাকার মধ্যে পাঠক ঘোরাফেরা করবেন—রাঢ়বাংলায় ঝাড়খণ্ডের সীমান্তের আদিবাসীবহুল এলাকার বনভূমি, সেখানকার বান্দোয়ান ব্লকের একটি অবহেলিত বনগ্রাম খুশিঝোরা, এবং মহানগর কোলকাতা। ... ...
ফরিশতা ও মেয়েরা! কোথা থেকে যে শুরু করি বুঝে উঠতে পারছিনা। বইটি ঘরে ফেরত আসার পর আবার একবার গোটা বইয়ের তেরোটি গল্প তাড়িয়ে তাড়িয়ে পড়লাম। দ্বিতীয় বারের পড়ায়ও ততটাই নতুন লাগলো যা কিনা প্রথমবার লেগেছিল। বরং বেশ কিছু বিষয় আরো আরো স্পষ্ট হয়ে ধরা দিলো। চারপাশের নতুন নতুন অধরা বিষয়গুলো তাঁর গল্পে স্থান পেয়েছে। ... ...
ছোট ছেলে নিজের জীবন নিজেই গড়ে নেয়, মুক্তিযূদ্ধের নয় মাসের বেশ খানিকটা সময় ভারতে থাকলেও কলকাতায় যাবার কথা ভুলেও ভাবে নি। তীব্র অভিমানেই হয়ত বা ‘কলকাতা’ নামই তার মুখে কেউ শোনে নি কোনোদিন। কিন্তু তারই বড় ছেলে বাবা জ্যাঠা ঠাকুর্দার অতীত বাসস্থান খুঁজতে স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে ঘুরেফিরে আসেন প্রতি বছর। আমিও চিনি এমন এক মহিলাকে, যিনি জন্মভূমি থেকে উচ্ছিন্ন হবার তীব্র অভিমানে কোনোদিন আর সেখানে যেতে চান নি, জানতে চান নি সেখানকার কোনো খবর। এই ছেঁড়া দেশের এপার ওপারের গল্পগুলোয় কি মিল কি মিল! ... ...
প্রথমেই বলি এ লেখা খুব সামান্য লেখা। তাড়া হুড়োর লেখা। ফেসবুক পোস্টের চেয়ে সামান্য বড় কিন্তু নিবন্ধের চেয়ে অনেক বেশি অগোছাল আর তরল। তবু এই দু-চারদিনে যেটুকু লিখে উঠতে পারলাম। অবিশ্বাস্য ফাঁকা ভাবের ভেতরেও। পুরোনো একটি ছবিতে দেখছি শরৎকুমার পুরোপুরি কর্পোরেট বেশে। যে সময়ের ছবি, সে সময়ে কবি বললেই মনে আসে ধুতি ও শার্ট, ধুতি ও পাঞ্জাবি, ধুতি ও ফতুয়া। পাজামা পাঞ্জাবি। শরৎ সেখানে বিপ্রতীপ, স্মার্ট, পাশ্চাত্য পোশাকে অনায়াস। আমরা এও জেনেছি তখন, ততদিনে, যে, শরৎকুমার সওদাগরি আপিসের চাকুরে। অফিসার। তখন বাতাসে ভাসে যে যে পেশার কথা, তথাকথিতও সাহিত্যিক, কবির, তা ছিল মান্য অধ্যাপক বা শিক্ষকের পেশা। সেখানেও তিনি অপ্রতিম, অতুলনীয়। ... ...
অজিত যে শুধু গল্প-উপন্যাসই লিখেছে তা নয়। ওর গবেষণা মূলক কাজগুলোও স্বতন্ত্র আলোচনার দাবি রাখে এবং যে জন্য বিপদের মুখেও পড়তে হয়েছিল ওকে। মলয় রায় চৌধুরী অজিতের গদ্য নিয়ে বলেছিলেন, "অজিত রায়ের গদ্য অসাধারণ। জীবিতরা কেউ ওর ধারে-কাছে যায় না।" আমি বিশ্বাস করি। ... ...
মেঘমল্লার বাড়ির ওই ফ্ল্যাটটিতে, যে কোনো অজুহাতে, যাওয়া আমার চিরকালের মত ঘুচে গেল। মুছে গেল, সেখানে পৌঁছে তিরস্কার ও স্নেহসমেত, খাদ্য ও পানীয় সহকারে নানাবিধ গল্প শোনার সম্ভাবনাটুকুও। স্মৃতি রয়ে গেল। ... ...
স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্যকে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন, কোনও আন্দোলন অহিংস না সহিংস হবে – এই প্রশ্ন অবান্তর। হিংসা তো সর্বত্র, সর্বব্যাপী; রাষ্ট্র তো সামান্য অজুহাতে নিরীহ, অসহায় নাগরিকদের দমন-পীড়ন করে, গুলি চালায়, হত্যা করে। আসল ব্যাপারটা হল, ‘কীভাবে’ জিততে হবে। তিনি কৃষক আন্দোলনের উদাহরণ উত্থাপন করেন, কীভাবে তাঁরা সম্পূর্ণ অহিংস পন্থায় রাষ্ট্রকে নতজানু হতে বাধ্য করেছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কম্যুনিস্টরা কোনদিনও এসব নিয়ে ভাবেনি। তারা ভীষণ গোঁড়া, সংকীর্ণমনা, উদ্ভাবনী চিন্তাকে আমল দেয় না; বাস্তবে কোনও নতুন চিন্তাকে নেতৃত্ব বিপজ্জনক মনে করে এবং সেই ব্যক্তিকে দলে টার্গেট করে কোণঠাসা করে দেওয়া হয়। সাংগঠনিক ব্যবস্থা ‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা’র কথা ধরা যাক। তত্ত্বগতভাবে এর থেকে বেশি গণতান্ত্রিক কিছু হয় না, কিন্তু বাস্তবে নেতা এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা নিজেদের খুশি মত যে সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। ... ...
কেন দেখে সে? কারণ, ‘রূপ লাগি আঁখি ঝুরে’। ষোল’র স্বচ্ছ চোখে টলটল করে ভালবাসা। ভাব গোপন করার অভিজ্ঞতা-শাসন তখনও তার অনায়াস-আয়ত্ত নয়। সহজেই সে চোখের ভাষা পড়ে নিতে পারে উদ্দিষ্ট জন। একের মনে যে সুন্দরের তৃষ্ণা, তবে অপরজনের মনের সুরটি যদি অন্য তারে বাঁধা হয়? বেদনার অনিবার্যতা হেমন্তের আবছা হিমের মত জড়িয়ে থাকে সে সম্পর্কের গায়ে। অথচ মুর্শেদরা জানেন, বেসুর থাকে বলেই না আমাদের সাধনা জীবনে সুরকে ছোঁয়ার। বেসুরকে ছেঁটে দিলে সুরের সৌন্দর্যও ঝলক হারায়। তাই কখনো কখনো বেদনাকে আশ্রয় করেই লতিয়ে বাড়ে জীবন। আশায় আশায়। যেমনটা হয়েছিল মল্লারের। ... ...
"সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রিয় লেখক কবিদের বইয়ের নাম অক্লেশে ব্যবহার করতে পারেন। জীবনানন্দের 'কারুবাসনা' শঙ্খ ঘোষের 'দিনগুলি রাতগুলি'র মতো তাঁর দুটি উপন্যাসের নাম। এক সহবাসী সঞ্জয়ের মৃত্যু দিনে কথক বুনো এক কল্পিত তরুণী কস্তুরীকে দেখতে পান। পাঠক বোঝেন এ বিভ্রম। কিন্তু বুনোর বন্ধু সিদ্ধার্থ বোঝে না।" সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিনগুলি রাতগুলি, পড়লেন ইমানুল হক। ... ...
লেখক ইন্দ্রাণী দ্রষ্টা হয়ে দেখেন পরিস্থিতির চাপে অসহায় মানুষজন। এবং নির্মমভাবে ছেঁটে ফেলেন ‘সুখী গৃহকোণ, শোভে গ্রামোফোন’ সমাপ্তির সম্ভাবনাগুলোকে। কোন ইচ্ছাপূরণের চেষ্টা চোখে পড়ে না। হিংসা ঝলসে ওঠে নীল আকাশে অকস্মাৎ। না একটু ভুল হল। ইন্দ্রাণীর বিশ্বে হঠাৎ করে কিছুই ঘটেনা। বজ্রগর্ভ মেঘের প্রস্তুতি চলে সন্তর্পণে। সমতলের নীচে টেক্টোনিক প্লেটের নড়াচড়া সহজে চোখে পড়বে না। কিন্তু ঈশান কোণে জমতে থাকা মেঘ মনোযোগী পাঠকের রাডারে ধরা পড়বে। ... ...
এখন যখন আমরা পত্রিকার পাতায় পড়তে বাধ্য হই তিন দিনের সদ্যজাত শিশুকে ডাস্টবিন হতে তুলে বাঁচাল ক্ষুধার্ত কুকুর, তখন আমাদের মনে পড়ে যায় ৬১ বছর আগে লেখা হাসান আজিজুল হকের ‘শকুন’ নামের গল্পটির কথা। যদিও সেই গল্পে কাদু শেখের বিধবা বোনকে চিহ্নিত করা গিয়েছিল, চিহ্নিত করা গিয়েছিল শকুনদের, কিন্তু এই ২০২১ সালে যখন নগরের ডাস্টবিনে বা নালায় মাঝে মধ্যেই সদ্যজাত শিশুকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তখন সেই মা-দের আর চিহ্নিত করা যায় না। চিহ্নিত করা যায় না শকুনদেরও। এই ৬১ বছরের ব্যবধানে দেশটা ছেয়ে গেছে কাদু শেখের বিধবা বোন আর অসংখ্য শকুনে! কিন্তু হাসান আজিজুল হক আর নেই! ... ...
‘চাঁপাডাঙার বউ’ উপন্যাস ভাঙনের কাছাকাছি গিয়ে আবার এক হয়ে যাওয়ার কাহিনি। নয় বছর বয়সে বিয়ে হয়ে বাড়িতে এসেছিল ‘বড়বউ’। দেওর মহাতাপ তখন আট বছরের বালক। তাই তারা পরস্পরের বাল্যসঙ্গী। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক নিবিড় ভালোবাসা ও ভরসার সম্পর্কে পরিণত হয়েছিল। সেই ছিল ছোটবউ মানদার রাগের কারণ। গ্রামের পাঁচজনে বউদি-দেওর সম্পর্ক নিয়ে পাঁচ কথা বলতে শুরু করায় সেতাবেরও মনে সন্দেহ জাগে। একথা শুনে বড়বউ রাগ করে তার স্বামীকে বলত, ‘ইতর’। বলত, পটোয়ারি-জালিয়াতি বুদ্ধিতে এই সম্পর্কের হিসেব বোঝা যায় না। ... ...
... এই লাইনে এ লেখার সমালোচনা হওয়া খুবই সম্ভব ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। হয়নি, সেটাই এই লেখার উপজীব্য। হয়নি, কারণ, একটা বড় অংশের লোক, যাঁরা হইচই করছেন, তাঁরা উপন্যাস এবং গল্প, কোনোটাই পড়েননি। কী পড়েছেন? না, ফেসবুক আর আনন্দবাজারের চিঠি। কনিষ্কর অভিযোগ, শ্রীজাতর উত্তর। হয় প্রোফাইলে গিয়ে পড়েছেন, কিংবা তাও নয়, স্ক্রিনশট পেয়েছেন, হাতের গোড়ায়, এবং চোখ বুলিয়ে উদ্ধার করেছেন। এরকমও লোকজন গর্ব করে বলছেন, যে, দু’পক্ষের বক্তব্যই পড়লাম, অমুকেরটা আমার বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। অতএব অমুক চোর (অথবা নয়)। এ যেন, “জানলার বাইরে কি বৃষ্টি পড়ছে?” – এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি বলছেন, “গুগল আর ইয়াহু দু’জনেরই বক্তব্য পড়লাম। আমার জানলার বাইরে বৃষ্টি পড়ছে কিনা, এ ব্যাপারে ইয়াহুর বক্তব্যই অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে হল”। ... ...
আসলে, মেধা-যুক্তি-বিতর্কের সঙ্গে কায়েমি স্বার্থ কোনওদিনই পেরে ওঠে না। তখন, সব কালে, একটি পথই অনুসৃত হয়। চরিত্রহনন আর কুৎসা রটনা। একেবারে, এক জিনিস ঘটেছিল খ্রীস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের গ্রীক দার্শনিক এপিকিউরিয়াসের সঙ্গে। মূলতঃ লুক্রেশিয়াসের রচনা থেকে তাঁর দর্শন রেনেসাঁসের সময় ইওরোপ জানতে পারে। এবং পরম শক্তিশালী, জ্ঞানবিপণির চাবিকাঠির রক্ষক চার্চ, তাঁর দর্শন - যার সঙ্গে যাবজ্ জীবং সুখং জীবেৎ - এর আশ্চর্য মিল - কে অসংযত বেলেল্লাপনার সমার্থক বলে দেগে দেয়। ইংরিজিতে এপিকিউরিয়ান বলতে লাগামছাড়া ইহসুখবাদী (হেডনিস্ট) এক মানুষকে বোঝানো হয় আজও। ... ...
কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের (২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ – ১৫ নভেম্বর ২০২১) সাহিত্যকর্মের হিসাব দিতে গেলে আমরা সাধারণত তিনটি উপন্যাসের নাম বলি – ‘আগুনপাখি’ (২০০৬), ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’ (২০১৩) এবং ‘শামুক’ (২০১৫) । এর মধ্যে ‘আগুনপাখি’ সর্বাধিক আলোচিত, ‘শামুক’ প্রায় অনালোচিত। আপাতদৃষ্টিতে ‘আগুনপাখি’ তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস হলেও ‘শামুক’ লেখা হয়েছে ১৯৫৭ সালে এবং এক সময়ের বহুল আলোচিত পত্রিকা ‘পূর্বমেঘ’-এ ১৯৬২ সালে সেটির তিন কিস্তি প্রকাশিতও হয়েছিল, কিন্তু পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় কেবল ২০১৫ সালে। এসব তথ্য নিয়ে কথা বলার সময় যে সত্যটিকে উপেক্ষা করা হয় সেটি হচ্ছে, হাসান আজিজুল হকের পুস্তকাকারে প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস হচ্ছে ‘লাল ঘোড়া আমি’। ... ...