শঙ্খ ঘোষ বিশ্বসাহিত্যের তন্নিষ্ঠ পাঠক। তাঁর একটা কাজ, সৃষ্টিশীল কাজ, শিশুদের জন্য লেখালিখিও। ১৯৯৪ সালে বাংলার বিশিষ্ট ‘অনুষ্টুপ’ পত্রিকা তাঁর উপর একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। তাতে ছিল তাঁর লেখালিখি নিয়ে বাংলার বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের লেখা। অনুষ্টুপের এই সংখ্যায় ওঁর নিকটতম বন্ধু অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেছিলেন শঙ্খবাবুর নানা গুণের কথা। তার মধ্যে একটা ছিল কর্তব্যবোধ। ... ...
আশ্চর্য এক বিদেশি পথে আগন্তুক, কিন্তু পথ হারানোর কোনো ভয় নেই, আমি এই কবিতাগুলিকে ছুটতে দিই আমার আগে আগে এবং একটি মাত্রার জন্যও তাদের অনুসরণ করা ছাড়ি না, চলি যেখানে তারা আমাকে নিয়ে যায়। একটি ধীর পদক্ষেপের পর আর-একটি ধীর পদক্ষেপে ‘পার্কস্ট্রিট থেকে গড়িয়ায় / আর তার মুক্তদেশে সোনালি সপ্তর্ষিরেখা রেখে’! চলে যাই গ্রামে গ্রামান্তরে, শহরে শহরে, ময়দানে, সেইসব জায়গায় যেখানে কোনোদিনই যাইনি। গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছে সওয়ার হয়ে আমি চলি, তিলমাত্র ভয় নেই যে পৌঁছাব না হয়তো। ... ...
দুটো ছবি আমার মনের মধ্যে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় কেবলই: সারা দুনিয়া থেকে আসা পিকচার পোস্টকার্ড খচিত দেয়াল থেকে দেয়ালে ঠাসা বইয়ের আলমারি ঘেরা তাঁর ‘বই’ঠকখানায়(!) কথপোকথন চলছে রবীন্দ্রসংগীত ঘিরে, শুনছি মন্ত্রমুগ্ধের মতো, দেখছি তাঁর অনুপম শরীরী ভাষার নানা ভঙ্গিমা—এই এক ছবি; আর-এক ছবি—স্থিতি, গতি, লয়—এই তিনের ধারণার রকমফেরে কবি ও সুপণ্ডিত শঙ্খ ঘোষ রবীন্দ্রনাথ পাঠের যে পথরেখা তৈরি করেছেন, তা থেকে উৎসারিত কাব্যরস নিয়ে নাগাড়ে বলে চলেছেন প্রবাল দাশগুপ্ত। ... ...
বাস্তবের অন্তরালবর্তী হাজার অনুভূতির আবিষ্কার-পুনরাবিষ্কার কিংবা পরীক্ষণ-পুনর্নিরীক্ষণই হয়তো শঙ্খ ঘোষের কবিতার সহজ সংজ্ঞা। তাঁর নীচু গলার প্রায় প্রতিটি উৎসারণে যেন ধ্বনিত হয়েছে পাস্কেল-কথিত সেই অন্তহীন মহাশূন্যের আবহমান নীরবতা। তাঁর কবিতাময় উচ্চমানের গাম্ভীর্য, সন্দেহ নেই: কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ক্রীড়া-র অনায়াস ও স্বচ্ছন্দ প্রয়োগের দৃষ্টান্তগুলি এইরকমের— অনুভূতির সঙ্গে অনুভূতির খেলা, শব্দের সঙ্গে শব্দের এবং অনুপ্রাস আর অন্ত্যমিলের নিরবচ্ছিন্ন অন্বেষণের অভেদ তুলে আনে এক অনন্য সৃষ্টিশীলতা ... ...
‘খবর’ শীর্ষক কবিতায় যে দৃশ্যপট চোখে পড়ে, তা এমন— সব জায়গায় কাঁপিয়ে ঢোকে খবর। আধা খোলা দরজা ঠেলে ভেতরে কে ঢোকে? না, খবর। জানালার ধার ধরে ফোঁটা ফোঁটা ঝরে পড়ে কে? না, খবর। এদিক-ওদিক, যে দিকে হেলান দিলে চেপে ধরে কে? না, খবর। ঘরে বাইরে সর্বত্র খবরের রাজ। ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলে স্তূপের মতো উপরে চেপে বসে খবর। রুদ্ধ হয়ে যায় নিশ্বাস। মৃত শরীরের উপর খবর নাচে আহ্লাদে, নেচে চলে। গভীর শ্লেষ থেকে নিমেষেই পরিহাস তুলে আনেন শঙ্খদা অনায়াসে, যেমন ‘কোমা’ থেকে চেতনায় ফিরে আসে চেতনাহত। ... ...
শঙ্খ ঘোষের কবিতা পড়া এক গভীর কৌতূহলোদ্দীপক, আশ্চর্য অভিজ্ঞতা। আমি মূলের ভাষা বা তার নান্দনিকতা নিয়ে কিছু বলতে তো পারি না, শুধু এটুকু বলতে পারি, তরজমায় যে কবিকে পাই তিনি গভীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, সূক্ষ্ম সংবেদনশীল, গভীর আবেগময়, নির্ভুল পর্যবেক্ষণকারী এবং পরিশীলিত ভাবনার মানুষ। তিনি কবিতা-শিল্পটিকে করায়ত্ত করেছেন ন্যূনতম শব্দ খরচ করে সর্বাধিক সম্ভব ভাবপ্রকাশের পারদর্শিতায়। তাঁর কবিতার কথোপকথনের ভঙ্গিমা এবং বিবিধ উত্তর তুলে ধরা আমাকে প্লেটো-র ‘রিপাবলিক’, এবং পারসিক কাব্যের ‘কথোপকথন’ (ডায়ালগ) গোত্রের কবিতার কথা মনে করায়। আমার কাছে তিনি বিপুল পড়াশোনা করা একজন কবি, যাঁর এক চক্ষু নিবদ্ধ বিশ্বসাহিত্যের উপর। ... ...
শঙ্খ ঘোষ একজন সংবেদনশীল কবি, যাঁর আঙুলে সমাজের নাড়িস্পন্দন নির্ভুল ভাবে অনুভূত হয়। তাঁর দৃষ্টি সামাজিক প্রেক্ষাপটে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি এবং ট্র্যাজেডির ওপর কেন্দ্রীভূত। এবং তিনি তাদের ওপর শব্দের পোশাক সযত্নে পরিয়ে দেন। ... ...
পবিত্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন ষাটের দশকের শেষে আমদের পক্ষে এক হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা, যাঁর সঙ্গে মিশতে শুরু করলে কবিতার অতলে না তলিয়ে গিয়ে আর উপায় নেই। তিনি যে কবিতা লেখার পাশাপাশি অবিরত প্রবন্ধ লিখেছেন তা খানিকটা তিরিশের দশকের বুদ্ধদেব ও সুধীন দত্তদের ভ্রমণসূচির কথা মনে রেখেই। তিনি চেয়েছিলেন ‘কবিতা’ পত্রিকার মতো, ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার মতো তাঁর সম্পাদিত ‘কবিপত্র’ হয়ে উঠবে সফল ও অসফল, খ্যাত ও অখ্যাত নানা কবির আবাসস্থল। স্মৃতিচারণে সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ... ...
ইব্লিসের আত্মদর্শন। ছয় দশক আগে প্রথম প্রকাশে বাংলা কবিতামহলকে চমকিত করেছিল। সার্থক দীর্ঘ কবিতার অনেক উদাহরণ বাংলা কবিতায় থাকলেও সে কবিতাটি তার প্রকরণগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই এখনও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক৷ আমরা ইব্লিসের পাঠকরা এই কবিতায় মহাকাব্যিক সেই প্রবণতার সন্ধান পাই যা আধুনিক উপন্যাসের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য৷ লিখছেন রাজীব সিংহ ... ...
ক্লাউস ডেমুজ। জার্মানির সাহিত্যিক। আধুনিক মরমিয়া কবি। প্রায়শই উপেক্ষিত। শান্ত, সমাহিত স্বর। তাঁর কবিতা পড়লেন ও জার্মান থেকে তরজমা করলেন কবি হিন্দোল ভট্টাচার্য ... ...
সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি ভিন্ন স্বাদের বইয়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। লিখেছেন নবকুমার ... ...
কল্পিত গালগল্প নয়। বর্ণে বর্ণে সত্য একটি ‘নিম্ন বর্ণের’ পরিবারের তিন প্রজন্মের আত্মমর্যাদা ও সামাজিক অধিকার অর্জনের মর্মস্পর্শী ইতিহাস। যার শুরু সেই গ্রামের কথা দিয়ে যেখানে তেমনই ছিল ‘উচ্চ-নীচ’ জাতের বাড়ির বিন্যাস—নির্মম বর্ণাশ্রমে লালিত নিষ্ঠুর ব্রাহ্মণ্যবাদী আধিপত্যের অজস্র প্রতীকের একটি প্রতীক। ঝরঝরে বাংলা অনুবাদে ভারতীয় সমাজের এক বিপুল অংশের আয়না-ছবি। পড়লেন সাহিত্যিক তৃষ্ণা বসাক ... ...
গালিলেও গালিলেই। প্রথম নিখুঁত ঘড়ি, থার্মোমিটার, পতনশীল বস্তুর সঠিক নিয়ম আবিষ্কার, পৃথিবীর সূর্য প্রদক্ষিণ তত্ত্বের পক্ষে সওয়াল… । বিজ্ঞানের প্রগতিতে তাঁর অবদান বিপুল। আর এ সবকিছুর মূলে ছিল ধর্মান্ধতাকে অস্বীকার করে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসায় তাঁর অবিচল আস্থা। তবু ছিলেন রক্তমাংসের মানুষই। চার্চের সঙ্গে সংঘাতে আপাত-পিছু হটেও, ধর্মীয় বিশ্বাসের মূলস্তম্ভে আঘাত অব্যাহত রেখেছিলেন গোপনে। একটি নতুন জীবনীগ্রন্থ। পড়লেন বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের কর্মসচিব, পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ... ...
মালদহ। প্রাচীন গৌড়পুর, ষষ্ঠ শতকের গৌড় রাষ্ট্র, মধ্যযুগীয় সুলতানি আমল, অষ্টাদশ শতকে ঔপনিবেশিক ইংরেজ শাসন, স্বাধীনতা-আন্দোলন — সব মিলিয়ে এই জেলা এক দীর্ঘ রঙিন ইতিহাসের সাক্ষী। সেই ইতিহাস ও পাশাপাশি তার সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিবর্তনের আখ্যান দুই মলাটের মধ্যে। পড়লেন সৌরেন বন্দ্যেপাধ্যায় ... ...
তিনদিন পরেই প্রয়াত হলেন রমানাথ রায়। গভীর, শাণিত ও তির্যক তাঁর সৃষ্ট গল্প ও উপন্যাস। তথাকথিত বাস্তবতা ও ফ্যান্টাসির ভেদরেখাও লঙ্ঘিত হয় প্রায়শ। সহমর্মিতা তাঁর সাহিত্যের বড়ো সম্পদ। ১৯৬৬। ‘এই দশক’ পত্রিকা প্রকাশ দিয়ে শুরু হয় ‘শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন’। ছিলেন তার প্রথম পাঁচ পদাতিকের একজন। লিখছেন আকৈশোর বন্ধু ও এ আন্দোলনের সহস্রষ্টা শেখর বসু ... ...
গোগা। একটা গল্প। যা আসলে একটা আশ্চর্য উপন্যাস শুরু হওয়ার (অথবা শুরু না-হওয়ার) ঘোষণামাত্র। ইস্তেহার। প্যামফ্লেট। শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলনের মুখপত্র ‘এই দশক’ পত্রিকায় প্রকাশিত ১৯৭০ সালে। রচনা— রমানাথ রায়। নিবিড়পাঠে কবি ও গল্পকার সুদীপ বসু ... ...
কাহিনি, চরিত্র কিংবা স্থান-কাল-পাত্রের পরম্পরা, এসব বাদ দিয়ে গল্পকে করে তুলতে চেয়েছিলেন গল্পকারের স্বাধীন বিচরণক্ষেত্র। গোষ্ঠীবদ্ধ সাহিত্য আন্দোলনগুলি সময়ের নিয়মে যখন থেমে গেছে, গভীরতর অন্বেষণে রমানাথ রায় চলে গেছেন রূপান্তরের পথে। লিখছেন শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন-বিষয়ে গবেষক সৌম্যব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ... ...
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানব’। গোতম বুদ্ধ। তাঁর জীবন ও শিক্ষার মর্মের এক নিরন্তর যুক্তিবাদী খোঁজ। প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত একটি সাম্প্রতিক বই। পড়লেন পালিভাষার অধ্যাপক জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায় ... ...
মণিশংকর মুখোপাধ্যায় ওরফে শংকর। অসাধারণ প্রসাদগুণ তাঁর লেখনীতে। বিপুল তাঁর জনপ্রিয়তা। নিটোল গল্প বলেন। কখনো ঝুঁকি নেন না। নাগরিক সমাজের কয়েকটি স্তরকে খুব ভালোভাবে চেনেন। চারপাশের মানুষগুলিকে খুঁটিয়ে দেখার ক্ষমতা তাঁর আছে। তাঁরা কী পড়তে চান, তিনি তা জানেন। তাই পরিবেশন করেন। লিখেছেন রাহুল দাশগুপ্ত ... ...
সম্প্রতি প্রকাশিত তিনটি ভিন্ন স্বাদের বইয়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। লিখেছেন নবকুমার ... ...