মেঘনাদ সাহা। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জগতে স্মরণীয় নাম। কঠোর দারিদ্র ও ‘নিচু’ জাত হওয়ার অভিশাপ— এ দুয়ের সঙ্গে লড়াই করে বিজ্ঞানচর্চার শীর্ষ পরিসরে পৌঁছনর জীবনকাহিনি সমসাময়িক বঙ্গীয় সমাজের এক অনবদ্য দলিলও বটে। ঝরঝরে ভাষায় লেখা একটি বই। পড়লেন বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক সুমিত্রা চৌধুরী ... ...
যে-কোনো রূপে সাংস্কৃতিক শ্রেষ্ঠত্বের দাবির নেপথ্যে থাকে ‘অন্য’-কে চিহ্নিত করে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার দুরভিসন্ধি, সে বিষয়ে নিরন্তর চেতাবনি সুকুমারী ভট্টাচার্যের লেখালিখি। চতুর্বর্ণ ব্যবস্থায় সামাজিক সুস্থিতি এবং সহাবস্থান ছিল, কিংবা এই উপমহাদেশে ইসলামের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব কায়েমের আগে সমাজে নারীর মর্যাদা ছিল অতি উচ্চ— ইত্যাকার ভ্রান্ত ধারণা নস্যাৎ করেন তিনি। দেখিয়েছিলেন বৈদিক যুগে শূদ্র ও অবর্ণদের প্রতি ব্রাহ্মণ্য নিষ্ঠুরতা, নারীকে কার্যত এক হস্তান্তরযোগ্য সামগ্রী করে রাখার প্রয়াশ। তাঁর রচনা শুধু বৌদ্ধিক চর্চার জন্য নয়, জীবনযাপনের জন্যও অপরিহার্য। লিখছেন ইতিহাসকার রণবীর চক্রবর্তী ... ...
সংস্কৃত প্রথম প্রেম। ইতিহাস দ্বিতীয়। ১৯৩০-এর দশকে খ্রিশ্চান মহিলাদের পক্ষে সংস্কৃত শেখা ছিল এক দুরূহ লড়াই। জিতেছিলেন। প্রথাগত পড়াশোনা ইংরেজি ও সংস্কৃততে। বল নাচের ক্লাস বয়কট করে চেয়েছিলেন উদয়শঙ্করের নৃত্যশৈলীর তালিম। হয়নি। বিপ্লবীদের গোপনে সাহায্য। বাড়িতে লুকিয়ে কমিউনিস্ট কর্মীদের আশ্রয়। এবং নিজের লেখালিখির কথা। স্কুলজীবন থেকে শেষ বয়স—স্মৃতিচারণ। আলাপে ইতিহাসের অধ্যাপক কুমকুম রায় ... ...
নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী জয়ে কেঁদেছিলেন। বিপুল পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষণার পাশাপাশি সহজ ভাষ্যে সাধারণের পাঠযোগ্য লেখালিখি করেছেন প্রচুর। মগ্ন থাকতেন রবীন্দ্রনাথে। সমাজসচেতন বামপন্থী। তবু যা শিক্ষণীয়, নিঃসংকোচে নিতেন ভিন্ন মতের মানুষের কাছ থেকেও। স্মৃতিচারণে কন্যা ইতিহাসবিদ তনিকা সরকার। আলাপে ইতিহাসকার রণবীর চক্রবর্তী ... ...
মহাভারত মহাকাব্যের এই সার কথা। সে মহাগ্রন্থের এমনতর পাঠই শিখিয়েছিলেন সুকুমারী ভট্টাচার্য। এবং শিখিয়েছিলেন প্রাচীন নানা গ্রন্থ যথাযথ পাঠ করে সেগুলিকেই করে তোলা যায় কুসংস্কার ও মিথ্যার প্রবল প্রচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্র। লিখছেন তাঁর ছাত্রী ও সংস্কৃতের অধ্যাপক বিজয়া গোস্বামী ... ...
ঋগ্বেদে কবি নেম ভার্গব ঘোষণা করেছেন, ইন্দ্র নেই, কারণ কেউ তাঁকে দেখেনি। চার্বাক দর্শন বস্তুজগৎকেই একমাত্র অস্তিত্ব বলে মনে করেছে। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ বলে, যতদিন জীবন আছে যজ্ঞ ক’রে যাওয়া উচিত, কারণ মৃত্যুর পর মানুষের কী হয় তা অজ্ঞাত। ‘বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য’ গ্রন্থে সুকুমারী ভট্টাচার্য তুলে ধরেছেন বৈদিক সাহিত্যে প্রশ্ন, সংশয়, অবিশ্বাসের উত্তরাধিকার। লিখছেন ইতিহাসের অধ্যাপক কণাদ সিংহ ... ...
ফেসবুক। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তম সামাজিক মাধ্যমগুলির অন্যতম। ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাহিত্যিক, শৈল্পিক, বাণিজ্যিক—এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যা প্রতিনিয়ত এই প্ল্যাটফর্মটিতে চর্চিত নয়। প্রশ্ন হল, ফেসবুক কি নেহাতই নিরপেক্ষ একটি মাধ্যম? নাকি পর্দার আড়ালে চলে গভীর সামাজিক-রাজনৈতিক খেলা? এ নিয়েই একটি সাম্প্রতিক বই। পড়লেন সৌরভ চট্টোপাধ্যায় ... ...
দুই লেখক। দুটি সংকলন। একটি আখ্যান সিরিজ। একটি গল্পসমগ্র। উঠে আসে সমাজ ও সামাজিক ধ্বস্ততার ছবি। যাপনের অনুপুঙ্খতায় শহুরে, আধা-শহুরে মধ্যবিত্ত জীবন। পড়লেন সাত্যকি হালদার ... ...
বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানচর্চার বিষয়ে বাঙলা ভাষায় বই বিরল। তেমনই একটি বই। তেইশ জন বাঙালি বিজ্ঞানীর জীবন ও তাঁদের ক্রিয়াকাণ্ড নিয়ে তেতাল্লিশটি প্রবন্ধের সংকলন। পড়লেন অর্পণ পাল ... ...
এ তনু ভরিয়া — দর্শন আপাদমস্তক। লেখক অরিন্দম চক্রবর্তী। দেহকে আরও ভালোভাবে বুঝে নেওয়ার তাগিদে তার দার্শনিক বিচার-বিশ্লেষণ। দার্শনিক প্রশ্ন তোলা ও তার উত্তরে দার্শনিক যুক্তিবিন্যাসই বইটির অবলম্বন। পড়লেন দর্শনের অধ্যাপক অমিতা চট্টোপাধ্যায় ... ...
গোরা। রবীন্দ্রনাথের এ উপন্যাস প্রকাশিত ১৯১০ সালে। ইতিহাসের নিরিখে বঙ্গভঙ্গ রোধ আন্দোলনের সময়ে। যদিও কাহিনির প্রেক্ষিত ১৮৮০-র দশক। ১৮৫৭-র ভারতীয় মহাবিদ্রোহের আড়াই দশকের মধ্যে। প্রকাশের ১১০ বছর, কাহিনির প্রেক্ষিতের প্রায় দেড়শো বছর পরে একুশ শতকের ভারতে এ উপন্যাসের প্রাসঙ্গিকতা অমলিন। লিখছেন রাহুল দাশগুপ্ত ... ...
১৯৬৯। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ‘শঙ্খ স্যার’-কে প্রথম দূর থেকে মুগ্ধ হয়ে দেখা। পরবর্তী বহু দশকে নানা উপলক্ষে চেনা-জানার সুযোগ। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনকালে বেশ কাছের মানুষ হয়ে ওঠা। তবু থেকে গিয়েছে কিছু খটকাও। স্মৃতিচারণে মীরাতুন নাহার ... ...
দেলিরিও। ইংরেজি তরজমায় ‘ডিলিরিয়াম’। বাংলায় অর্থ ‘প্রলাপবিকার’। লেখক লাউরা রেস্ত্রেপো। প্রথমজীবনে স্কুলশিক্ষক। পরে সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। এ উপন্যাসে মেলে নারকো-টেররিস্ট পাবলো এস্কোবার কীভাবে একটি দেশের সর্বনাশ করেছিল তার ছবি। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের মতে, সাংবাদিকতা, তদন্ত এবং সাহিত্যগুণ তিনটির সম্মিলন ঘটিয়েছেন লেখক এই উপন্যাসে। পড়লেন জয়া চৌধুরী ... ...
কমলা দাস। ছদ্মনাম মাধবীকুট্টি। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর কমলা সুরইয়া। লিখেছেন মালয়ালম্ ও ইংরেজিতে। তাঁর আত্মজীবনী। অনাবৃত—কলকাতার শৈশব, মালাবারের বাড়ি, বম্বের যাপন, সমকাম, শরীরী প্রেম, যৌনতা, বিষাক্ত দাম্পত্য...। বাংলা তরজমায় পড়লেন তৃষ্ণা বসাক ... ...
লুইস সেপুলভেদা। ঔপন্যাসিক, চলচ্চিত্র নির্দেশক, চিত্রনাট্যকার, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী। স্বদেশ চিলে। ১৯৭৩ সালে ক্ষমতাসীন আউগুস্তো পিনোশে সরকার প্রথমে কারারুদ্ধ ও পরে নির্বাসিত করে। কিছুকাল একুয়াদরবাসী। সান্দিনিস্তা বিপ্লবে সক্রিয় অংশগ্রহণ। পরে জার্মানির হামবুর্গ শহরে পাকাপাকি বসবাস। কোভিড-আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ২০২০-র ১৬ এপ্রিল। তাঁর বিখ্যাত নভেলা ‘দ্য ওল্ড ম্যান হু রিড্স লাভ স্টোরিজ’ পড়লেন ঋতা রায় ... ...
প্রয়াত হলেন প্রদীপ চৌধুরী। হাংরি আন্দোলনের পুরোধা এই কবি তাত্ত্বিক ভাবে কবিতাকে বুঝতে চেয়েছিলেন। শিক্ষিত ও মুখরোচক শব্দের প্রতি তাঁর কোনো আনুগত্য নেই। নান্দনিকতার অজুহাতে কবিতায় যা কিছু বর্জন করা হয়, তাদেরই নিজের কবিতায় স্থান করে দিতে চেয়েছেন। লিখছেন রাহুল দাশগুপ্ত ... ...
নিজের সঙ্গে কথা বলেন কবিরা অনেকসময়ই। ম্যানিফেস্টো লেখেন। কবিরা যে ম্যানিফেস্টো লিখে নিয়ে তারপর কবিতা লিখতে বসেন তা আদৌ নয়, কবিতা লিখতে লিখতে হয়তো কোনো ম্যানিফেস্টোর প্রয়োজন বোধ করেন। এমন মুহূর্ত আসে যখন নিজের সঙ্গে একটা কড়ার করে নিতে হয়। তার আগে পরে যা আছে তা যে সাধনধন নয়, তা নয়। তবু নিজের সঙ্গে নিজের সাধনা নিয়ে কথা বলতে হতে পারে। আপন মনে কথা, সত্তো ভোচে। কবি শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণদিনে তাঁর তেমনই একটি কবিতা স্মরণে অমিয় দেব ... ...
‘আমার সমসময়ই মনে হত, আমাদের তাৎক্ষণিক চাহিদায় বা নিতান্তই সঙ্গসুখলোভে আমরা ওঁর যে সময়টা গ্রাস করে নিই, সেই নষ্ট সময়েই তো তৈরি হতে পারত অনন্ত সম্পদ—কিছু লেখায় রূপ নিত, কিছু ওঁর অপারসক্রিয় ভাবনায় মথিত হত— যা থেকে যেত কত কালের আস্বাদনের জন্য। তাঁর বাড়ির সপ্তাহান্তিক বিখ্যাত আড্ডায় আমি কখনও যাইনি, ওই ভাবনা থেকেই।’ শরণাপন্ন হয়েছেন অবশ্য সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনে। তেমনই দুই অভিজ্ঞতার কথা লিখলেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় ... ...
মন দিয়ে শুনছেন যে শ্রোতা তিনি হয়তো এই কবিতায় দুটি বিসংবাদী সুর শুনে চমকে উঠছেন! আজ্ঞার সুর যে এখানে বড়ো বেশি প্রকট এবং সুতীব্র, আবার কাতর কণ্ঠের কোমল সুরও। পরস্পরবিরোধী সুর সব, কবি শঙ্খ ঘোষের এমনই কাব্যরীতি যে এই দুই অতি ভিন্ন সুরের মেলবন্ধনেই তিনি রচনা করে চলেছেন এক অনবদ্য রাগিণী— যেন পাঠকের কাছে পেশ করছেন কোনো সিম্ফনি। ... ...
কবি সেই ভারতের দিকে আমাদের দৃষ্টি টানেন যা ‘মানচিত্রে ভেসে উঠে পেয়ে গেছে তবু কিছু মান’, আর সেই দেশেই যদি এখনও মানুষ ‘গাঁয়ে বসে খুঁটে খায় খুদকুঁড়ো’ তার কারণ হতেই হবে ‘রক্তে তো ইংরেজি নেই’! এই স্যাটায়ারের স্বর মৃদু, কিন্তু যথেষ্ট ধারালো— উঠে আসে কীভাবে আমাদের ভোগ করা যাবতীয় সুযোগসুবিধার মূলে রয়েছে কোনো ঔপনিবেশিক মনোভাব। ... ...