হুররে! এই তো লিভিংস্টোন! নিশ্চয়ই লিভিংস্টোন! আর কেউ হতেই পারে না; তবে কিনা - অন্য কেউ হতেও তো পারে - পশ্চিম উপকূলের থেকে আগত কেউ - বা হয়তো তিনি বেকার! উঁহু; বেকারের মুখে তো সাদা দাড়ি নেই। কিন্তু এবার আমাদের দ্রুত এগোতে হবে, পাছে আমরা আসছি শুনে তিনি আবার পালিয়ে যান। ... ...
গোটা সকালটা ফেরিঘাটে ক্যানোর মালিকদের সঙ্গে ফালতু কথায় নষ্ট হল। অবশেষে বেলা পাঁচটায় আমরা মালাগারাজি নদীর বাম তীরে ইহাতা দ্বীপের সামনে পৌছালাম। কিয়ালার পশ্চিমে, দেড় ঘণ্টা দূরে ইহাতা দ্বীপ। ফেরি পারাপারের জন্য শেষমেষ রফা হল আট গজ কাপড় ও চার ফান্ডো সামি-সামি বা লাল পুঁতি, তখনই সেটা দিয়ে দেওয়া হল। এই ছোট, বেঢপ, টলমলে ক্যানোতে মালপত্র-সহ চারজন নদী পার করতে পারে। যাত্রী আর মালপত্র বোঝাই নৌকাগুলোর মাঝিরা যখন তাদের নৌকা নিয়ে রওনা হল, তখন তাদের অন্যদিকেই থেমে থাকার নির্দেশ দেওয়া হল, আর আমাকে অবাক করে, আরও দাবি জানানো হল। মাঝিরা দেখেছিল, যে এর মধ্যে দু’টি ফান্ডো মাপে খাটো, তাই আরও দুটো ফান্ডো অবশ্যই দিতে হবে, আর নাহলে নদী পারাপারের চুক্তি বাতিল। অগত্যা আরও দুটো ফান্ডো দিতে হল, তবে কিনা প্রভূত প্রতিবাদ, বাকবিতন্ডার পরে – এই দেশের যা নিয়ম। ... ...
পাথুরে জলখাত ধরে নিচে নামছি তো নামছি। গোটা জায়গাটাই নুড়ি পাথরের ভরা। শেষে আমরা এসে পৌঁছলাম একটা শুষ্ক, পাথুরে উপত্যকায়। আমাদের চারদিকে হাজার ফুট উঁচু সব পাহাড়ের রাজত্ব। যে গিরিখাতটা ধরে আমরা চলছি, সেটা চারদিকে পাক খেতে খেতে নামছে, ধীরে ধীরে আরও চওড়া হচ্ছে আর শেষে এটা ছড়ানো সমভূমিতে পরিণত হয়েছে, তার ঢাল পশ্চিমে। রাস্তাটা, খাত ছেড়ে, উত্তরদিকে একটি নিচু গিরীষিরায় গিয়ে পৌঁছেছে। সেখান থেকে একটা পরিত্যক্ত জনবসতি দেখা যায়। ... ...
শিবিরে পৌঁছানোর সামান্য আগে আমি একটা চিতাবাঘের দিকে গুলি ছুঁড়লাম, কিন্তু মারতে পারলাম না, ব্যাটা ছুটে পালাল। রাতভর এমটাম্বু নদীর কাছে সিংহেরা গর্জন করতে থাকল। ঘন জঙ্গলের গহীন গোধূলিবৎ-ছায়ায় আমরা হাঁটতে থাকলাম।লম্বা পথ হাঁটায় বনের ছায়া আমাদের প্রখর তপনতাপ থেকে রক্ষা করেছিল। পরের দিন আমরা শিবিরে পৌঁছালাম। উজিজি থেকে আগত একদল আরব এই শিবিরটা সদ্যই তৈরি করেছে। তারা এই রাস্তা ধরে উন্যানয়েম্বের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। এতটা আসার পর মিরাম্বো আর আরবদের মধ্যে যুদ্ধের খবরে শঙ্কিত হয়ে তারা ফিরে যায়। আমাদের পথ ছিল রুগুফু নদীর ডানধার ধরে। একটা চওড়া মন্থর জলস্রোত, মাটাটা নলিকা ও প্যাপিরাসের ঝোপে আটকা-পড়া জলধারা । সর্বত্র মোষদের পায়ের ছাপ আর গাদা গাদা নাদা পড়ে আছে। যা সব চিহ্ন তাতে কাছাকাছি যে গন্ডারও রয়েছে তা পরিষ্কার। নদীর কাছেই একটা ঘন গাছের ঝোপড়ার মধ্যে একদল দাড়িওয়ালা, সিংহ সদৃশ বানরের দেখা পেলাম। ... ...
স্পষ্ট সূর্যের আলোয় আবার বেরিয়ে আসার পরে, শিকারের সন্ধানে আরও খানিকটা হাঁটলাম। এই সময়ে দেখলাম, এমটাম্বু উপত্যকার বাঁদিক ঘেঁষা এই জঙ্গলে একটা বিশাল, লালচে রঙের, অতি ভয়ঙ্কর দাঁতওলা বুনো শুয়োর চড়ে বেড়াচ্ছে। কালুলুকে একটি গাছের আড়ালে মাটিতে শুয়ে থাকতে বললাম, আর আমার সোলার হ্যাট-টা কাছের আরেকটা গাছের পিছনে রেখে দিলাম... ... ...
একটা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পথ গিয়েছিল। এখানেই সেই সেবল হরিণটি দেখা গিয়েছিল। এই জঙ্গলে শিকারের ছড়াছড়ি। পশ্চিম-বায়ু কোণ বরাবর একটি দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা ব্যাপী পদযাত্রা আমাদের একটা নদীর কাছে নিয়ে এলো। নদীটি বয়ে গেছে একটা উঁচু শঙ্কু-আকৃতি পাহাড়ের গোড়া দিয়ে, এই পাহাড়ের ঢালে গজিয়েছে পালকের মতন বাঁশের ঘন বন। ... ...
শুরু হচ্ছে একাদশ অধ্যায়। এ অধ্যায়েও চলছে উকাওয়েন্ডি, উভিনযা ও উহহা-র মধ্য দিয়ে উজিজি যাত্রার বর্ণনা। ... ...
চলছে উজিজির পথে এগিয়ে চলার বর্ণনা। এ পর্বে গভীর জঙ্গল পার করে ম্রেরা নামের জনপদে শিবির ফেলার কাহিনি। ... ...
চলছে উজিজির পথে এগিয়ে চলার বর্ণনা। এ পর্বে গভীর অরণ্যের মধ্যে দিয়ে উটেন্ডে নামের এক গ্রামে পৌঁছনর কাহিনি। ... ...
"ওই যে জায়গাটা একটা দমবন্ধ করা সংঘর্ষের প্রায়-সাক্ষী হতে যাচ্ছিল, সেই জায়গাটা ছাড়ার প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পরে জিওয়ানিতে পৌঁছলাম। জিওয়ানি, বা হ্রদে কোন জল ছিল না, এক ফোঁটাও না, যতক্ষণ না আমার লোকেদের শুকনো জিভ তাদের মনে করিয়ে দেয় যে জলের জন্য মাটি খুঁড়তে তাদেরই এগিয়ে যেতে হবে ।" - চলছে উজিজির পথে এগিয়ে চলার বর্ণনা। এ পর্বে কাফেলার সদস্যদের কথা এবং এক নির্জলা হ্রদে পৌঁছনর কাহিনি। ... ...
৭ই অক্টোবর, শনিবার, শিবির গোটানো হল। মাংস-প্রেমী পেটুক এনগোয়ানাদের খুবই দুঃখ। তারা ভোরবেলা আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য বোম্বেকে ধরেছিল। ওখানে আরও একদিন থেকে যাওয়ার অনুরোধ জানানোর জন্য। সবসময়ই এরকম হয়। মাংস পাওয়া গেলে আর কাজ করতে ইচ্ছে করে না। ... ...
যেই ঝোপের একপাশে পৌঁছেছি, তখন দু'জন সন্দেহজনক চেহারার দেশিয় লোক ঝোপের অন্য পাশে এসে পৌঁছল- আমাদের দূরত্ব মাত্র কয়েক ফুট। যেই ঘুরেছি, অমনি তাদের মুখোমুখি। হঠাৎ উদয় হওয়া সাহেবের দিকে আদিবাসীরা এক ঝলক তাকাল, এক মুহূর্তে জন্য যেন ভয়ে পাথর হয়ে গেল, কিন্তু তারপর... ... ...
সর্দার একজন লম্বা শক্তপোক্ত লোক। তাকে ও তার দলবলকে বসার জন্য বললাম। তারা আমার দিকে, আমার মুখের দিকে, আমার জামাকাপড় ও বন্দুকের দিকে এমন খুশিভরা অবাক চোখে তাকাতে লাগল যে কী বলব! কিছুক্ষণ মন দিয়ে আমাকে দেখল, তারপর একে অপরের দিকে তাকাল, আর শেষে হো হো করে গলা ছেড়ে হেসে উঠল আর আঙ্গুল মটকাতে লাগল। ... ...
পয়লা অক্টোবর, দক্ষিণ-নৈর্ঋত কোণ বরাবর চার ঘণ্টা হাঁটার পর জিওয়ানি নামের একটা বড় জলাশয়ের কাছে পৌঁছলাম। একটা বিশালাকার ডুমুর গাছ (স্থানীয় ভাষায় এমকুয়ু), উন্যামওয়েজির বনের দৈত্যাকার গাছগুলোর মধ্যে একটা, তার ছায়ায় একটা পুরানো আধ-পোড়া বেড়া-ঘেরা থাকার জায়গা দেখলাম - এক ঘণ্টার মধ্যে সেটা একটা দুর্দান্ত শিবিরাবাসে রূপান্তরিত হল। ... ...
২৮ তারিখে আমরা উগান্ডা থেকে সোয়া তিন ঘণ্টা দূরে বেনটা নামের এক গ্রামে পৌঁছলাম। জঙ্গলের কোলে একটা ছোট সুরক্ষিত গ্রাম। উগান্ডার ভুট্টা ক্ষেতের মধ্য দিয়ে পথ চলেছে। ... ...
এ অধ্যায়ে চলছে উজিজির পথে রওনা হয়ে উগান্ডা গ্রামে পৌঁছনর বর্ণনা। ... ...
এ অধ্যায়ে চলছে উজিজির পথে যাত্রার বর্ণনা। ... ...
এ অধ্যায়ে শুরু হল উজিজির পথে যাত্রা। ... ...
"উন্যানয়েম্বেতে আছি প্রায় তিন মাস হল, এখনও এখানেই আছি, তবে আশা করছি তেইশ তারিখের আগেই এখান থেকে চলে যাব।" - এ অধ্যায়ে ফের শুরু হল উন্যানয়েম্বে ছেড়ে যাওয়ার তোড়জোড়। ... ...